21/03/2024
[] সূরা কাউসার []
যেদিন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)এর পুত্র কাসেম অথবা ইবরাহীম শৈশবে মারা গেলেন, সেদিন মক্কার কাফেররা ছিল উল্লাসিত! উনাকে নির্বংশ বলে উপহাস করতে লাগল। মক্কার কাফেররা এই বলে উপহাস করতো যে, রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর উনার নাম উচ্চারণ করার কেউ থাকবে না।
তখন তারা বলে বেড়াচ্ছিল- "মুহাম্মাদ (সাঃ) যদি স্রষ্টার প্রকৃত রাসূলই হয়, মুহাম্মাদ (সাঃ)কে যদি আল্লাহ ভালোবেসেই থাকেন, তাহলে তাকে নির্বংশ কেন রাখবেন? কেন তার পুত্র সন্তান বাঁচে না? মুহাম্মাদ (সাঃ) মারা গেলে তো তার বংশও সমাপ্ত। সাথে সাথে তার নাম উজ্জ্বল করার মত আর কেউ থাকবে না। আর দেখো আমাদের প্রত্যেকের কত যোদ্ধাবাজ পুত্রসন্তান.."
যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যায়, আরবে তাকে ‘আব্তার্’ বা নির্বংশ বলা হতো। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয়।(ইবনে-কাসীর)
এই সূরায় এইসব দোষারোপের জওয়াব দেয়া হয়েছে যে, শুধু পুত্রসন্তান না থাকার কারণে যারা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে নির্বংশ বলে, তারা উনার প্রকৃত মর্যাদা সম্পর্কে বে-খবর।
রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর উম্মত এত অধিকসংখ্যাক হবে যে, পূর্ববর্তী সকল নবীর উম্মতের সমষ্টি অপেক্ষাও বেশী হবে।
আসুন, সবচেয়ে ছোট এই সূরাটির অর্থ জেনে নেই-
(১) إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
“ইন্না আ’ত্বয়াইনা-কাল্ কাওসার্”
নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি।
হাউযে কাউসারঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদিন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) মসজিদে আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন। হঠাৎ তার মধ্যে তন্দ্রা অথবা এক প্রকার অচেতনতার ভাব দেখা দিল। অতঃপর তিনি হাসিমুখে মস্তক উত্তোলন করলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ ইয়া রাসুলাল্লহ্ আপনার হাসির কারণ কি? তিনি বললেনঃ এই মুহূর্তে আমার নিকট একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহ্সহ সূরা কাউসার পাঠ করলেন এবং বললেনঃ তোমরা জান, কাউসার কি? আমরা বললামঃ আল্লাহ্ তায়ালা ও তার রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এটা জান্নাতের একটি নহর। আমার পালনকর্তা আমাকে এটা দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অজস্র কল্যাণ আছে এবং এই হাউযে কেয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পানি পান করার পাত্র সংখ্যা আকাশের তারকাসম হবে। তখন কতক লোককে ফেরেশতাগন হাউয থেকে হটিয়ে দেবে। আমি বলবঃ পরওয়ারদেগার, সে তো আমার উম্মত। আল্লাহ্ তায়ালা বলবেনঃ আপনি জানেন না, আপনার পরে সে কি নতুন মত ও পথ অবলম্বন করেছিল। - (বোখারী, মুসলিম, আবু-দাউদ, নাসায়ী)
(২) فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“ফাছোয়াল্লি লিরব্বিকা ওয়ান্হার্”
অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানি করুন।
‘ন্হার’ শব্দের অর্থ উট কোরবানি করা। মাঝে মাঝে এ শব্দটি যেকোন কোরবানির অর্থেও ব্যবহৃত হয়। সূরার প্রথম আয়াতে কাফেরদের মিথ্যা ধারণার বিপরীতে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে কাউসার অর্থাৎ, ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণ, তাও অজস্র পরিমাণে দেয়ার সুসংবাদ শুনানোর পর এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ উনাকে দুটি বিষয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে – নামায ও কোরবানি। নামায শারীরিক এবাদতসমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ এবাদত এবং কোরবানি আর্থিক এবাদতসমূহের মধ্যে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য ও গুরুত্বের অধিকারী। কেননা, আল্লাহ্ তায়ালার নামে কোরবানি করা প্রতিমা পূজারীদের রীতিনীতির বিরুদ্ধে একটি জেহাদ বটে। অন্য এক আয়াতে নামাজের সাথে কোরবানির উল্লেখ আছে – ‘আপনি বলুন, আমার নামায, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্যে’। (সূরা আন্আম, ১৬২)
(৩) إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
“ইন্না শা নিয়াকা হুওয়াল্ আব্তার্”
যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।
যেসব কাফের রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে নির্বংশ বলে দোষারোপ করত, এ আয়াত তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে কাউসার অর্থাৎ, অজস্র কল্যাণ দান করেছেন। এর মধ্যে সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্যও অন্তর্ভুক্ত। উনার বংশগত সন্তান-সন্ততিও কম নয়। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর উম্মত পূর্ববর্তী সকল পয়গম্বরের উম্মত অপেক্ষা অধিক হবে। সুতরাং একদিকে শত্রুদের উক্তি নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে এবং অপরদিকে আরও বলা হয়েছে যে, যারা আপনাকে নির্বংশ বলে প্রকৃতপক্ষে তারাই নির্বংশ।
Dr. Tuhin Malik