ভ্রমণ মানসিক চাপ কমানো এবং নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ভালো উপায়। ছুটির সময়টা বাড়ির বাইরে গিয়ে কাটান। দেখবেন আপনি দৈনন্দিন ঝামেলা থেকে দূরে থাকবেন। ছুটি শেষে যখন ঘরে ফিরবেন; তখন একটা সতেজ বোধ এবং অনুপ্রেরণা কাজ করবে।
##সামাজিক দক্ষতা
ভ্রমণে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়। আপনার পাশে বসা মানুষটির সঙ্গে আলাপ হতে পারে। এতে আপনার সামাজিক দক্ষতা বাড়বে। অনেকেই আবার নতুন পরিবেশে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। এমন সমস্যায় ভ্রমণ হতে পারে ভালো সমাধান।
#ধৈর্যশীলতা
ঘোরাঘুরি করতে গেলে আপনাকে আরো বেশি ধৈর্যশীল হতে হবে। চাওয়ামাত্রই সব হয়তো হাতের কাছে চলে আসবে না। কেননা বের হলেই দেখবেন, কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। খাবারের জন্য রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এসব পরিস্থিতি আপনাকে সামাল দিতে হবে।
#ইতিবাচক চিন্তা
ভ্রমণ আপনাকে লক্ষ্য অর্জনেও সাহায্য করবে। ভ্রমণ করলে আপনি কিছুটা ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী হবেন। মনে করুন, পাহাড়ে ওঠার লক্ষ্য অর্জন করলে আপনি হয়তো আবার একটি লক্ষ্য ঠিক করে নিবেন। এভাবে লক্ষ্য অর্জন আপনাকে দিতে পারে আত্মবিশ্বাস এবং সফলতা।
#মানসিকতা
বেড়াতে গেলে মানসিকতা বাড়ে। খারাপ আবহাওয়ায় তারিখ পরিবর্তন হতে পারে। তখন নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এসবই আপনাকে অনেক নমনীয় করে তুলবে। আরো বেশি মুক্তমন তৈরি করে দেবে। এসবই আপনার দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগবে।
#এবার_জানবো_ইসলামকি_বলে_ভ্রমণ_নিয়ে
মানবজীবন একটি অনন্ত ভ্রমণের অংশবিশেষ। মানুষ অনন্ত সফরের যাত্রী। এই ভ্রমণের সূচনা হলো আমলে আরওয়াহ বা রুহের জগৎ থেকে। এর দ্বিতীয় ধাপ হলো আলমে দুনিয়া তথা দুনিয়ার জীবন। তৃতীয় সোপান হলো আলমে বারজাখ বা অন্তর্বর্তীকালীন জীবন, যা মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত বিস্তৃত। এরপর আখিরাত বা পরকালের অনন্ত জীবন।
ভ্রমণের আরবি হলো সফর, ছায়ের, রেহলাত ইত্যাদি। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম হজ অর্থও ভ্রমণ এবং ওমরাহ অর্থও ভ্রমণ।
ভ্রমণ একটি আনন্দময় ইবাদত এবং জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার উৎস। সফর বা ভ্রমণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো পূর্ববর্তীদের কীর্তি ও পরিণতি সম্বন্ধে জানা ও শিক্ষা গ্রহণ করা। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল তা কি দেখে না? যারা মুত্তাকি তাদের জন্য পরলোকই শ্রেয়; তোমরা কি বোঝো না?’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ১০৯)।
এরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখত এদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল। পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে ও কীর্তিতে প্রবলতর। অতঃপর আল্লাহ তাদিগকে শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের অপরাধের জন্য এবং আল্লাহর শাস্তি হতে তাদিগকে রক্ষা করার কেউ ছিল না।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ২১)। ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না ও দেখে না তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারা যা করত তা তাদের কোনো কাজে আসেনি।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৮২)।
ভ্রমণ বা সফরের বিশেষ উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি-রহস্য অবলোকন করে জ্ঞানার্জন করা এবং তাঁর কুদরত ও শক্তির প্রতি অনুগত হওয়া। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে নির্দেশনা রয়েছে, ‘তারা দেশ ভ্রমণ করে না? তা হলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে হৃদয়।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৪৬)। বলো, ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো, কীভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃজন করবেন পরবর্তী সৃষ্টি। আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা-২৯ আনকাবুত, আয়াত: ২০)।
যাতায়াতব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, যানবাহন ও পরিবহন আল্লাহর কুদরতেরই অংশ এবং তা-ও ভ্রমণের নিমিত্তে। কোরআনের ভাষায়, ‘তাদের ও যেসব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম, যেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং ওই সব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম এবং তাদিগকে বলেছিলাম, “তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ করো দিবস ও রজনীতে।”’ (সুরা-৩৪ সাবা, আয়াত: ১৮)।
ইসলামি আইনবিদদের মতে, সব মুসলমানের জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে সামর্থ্য অনুযায়ী সফর করা ও ভ্রমণ করা কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের পূর্বে বহু বিধান-ব্যবস্থা গত হয়েছে, সুতরাং তোমরা পৃথিবী ভ্রমণ করো এবং দেখো মিথ্যাশ্রয়ীদের কী পরিণাম!’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৭)। বলো, ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো, অতঃপর দেখো, যারা সত্যকে অস্বীকার করেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছিল!’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১১)। ‘সুতরাং পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছে?” (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৩৬)। ‘পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, অপরাধীদের পরিণাম কীরূপ হয়েছে।’ (সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৬৯)। ‘এরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখত এদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল। পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে ও কীর্তিতে প্রবলতর। অতঃপর আল্লাহ তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের অপরাধের জন্য এবং আল্লাহর শাস্তি হতে তাদিগকে রক্ষা করার কেউ ছিল না।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ২১)। ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছে’! তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪২)।
শীত, বসন্ত ও গ্রীষ্মকাল ভ্রমণের আদর্শ সময়। কোরআনের বর্ণনায়, ‘কুরাইশদের অনুরাগ, তাদের আসক্তি শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ। সুতরাং তাদের উচিত এই (কাবা) ঘরের প্রভুর ইবাদত করা। যিনি ক্ষুধায় তাদের অন্ন দিয়েছেন; ভয়ে দিয়েছেন নিরাপত্তা।’ (সুরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ১০৪)।
যেহেতু সফর একটি বিধিবদ্ধ ইবাদত, তাই সফরের রয়েছে বিশেষ কিছু বিধিবিধান। ইসলামি শরিয়তে ফিকহি পরিভাষায় সফর বলা হয়: আপন বাসস্থান থেকে বা কর্মস্থল থেকে আটচল্লিশ মাইল বা সত্তর কিলোমিটার দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মহল্লা বা গ্রাম থেকে বের হওয়া। গন্তব্যে পৌঁছার আগ পর্যন্ত সফর অবস্থা বহাল থাকে। সফর বা ভ্রমণকারীকে মুসাফির বলা হয়। গন্তব্য যদি নিজ বাড়ি বা কর্মক্ষেত্র হয়, তবে সেখানে পৌঁছার পর আর মুসাফির থাকবেন না। আর গন্তব্য যদি নিজ বাড়ি বা কর্মক্ষেত্র না হয় এবং সেখানে অন্তত ১৫ দিবস রজনী থাকার নিয়ত বা ইচ্ছা না থাকে, তাহলে সফর অবস্থা বহাল থাকবে।
সফরে দোয়া কবুল হয়। সফরকালীন চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ কছর, অর্থাৎ দুই রাকাত পড়তে হয় এবং সুন্নত নামাজ নফল পর্যায়ভুক্ত হয়। সফর অবস্থায় প্রয়োজনে ফরজ রোজা পরে রাখা যায়। সফর অবস্থায় ঈদের নামাজ ও জুমার নামাজ এবং কোরবানি ওয়াজিব হয় না। তবে সুযোগ থাকলে আদায় করা উত্তম।
তাই জীবনের কিছুটা অংশ থাক না রাখা ভ্রমনের জন্য ।