16/04/2024
: “৪ কোটি টাকার স্কলারশিপ?! HSC এর আগেই?! কিভাবে সম্ভব? বলো তো কিভাবে কি শুরু করলা?”
: বলছি -
আব্বু আম্মু ছোটবেলায় ছবি আঁকা শিখিয়েছিল যেনো সায়েন্স এর প্রাকটিক্যাল গুলোতে ছবি আঁকা নিয়ে কোনো ঝামেলা না হয়। ক্লাস ৩ এর কথা, ছবি আঁকার প্রতি আমার আগ্রহ ও উৎসাহ দেখে কাজল স্যার আমাকে একটা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শিল্পকলা একাডেমি তে নিয়ে যায়। আসে পাশে এত এত কম্পিটিটর দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কোনরকম সাহস যুগিয়ে আমার ড্রয়িং আঁকা শেষ করে প্রাইজ পাওয়ার কোনো আশা না রেখেই বসে ছিলাম এক পাশে। কিছুক্ষণ পর এক বিচারক এসে রেজাল্ট অ্যানাউন্স করতে তৈরি হচ্ছিল। চারপাশে অনেক ভিড় এবং প্রতি বিজয়ীর নাম বলার পর উল্লাস এবং হাততালির আওয়াজ। হঠাৎ আমার নাম ডাকলো ঐ বিচারক! খুবই অপ্রত্যাশিত ভাবে সেদিন সেকেন্ড হয়েছিলাম। ঐদিন থেকেই আমার এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস এর শুরু!
ক্লাস ৫ এ কুমিল্লার সেরা বিদ্যাপিঠ কুমিল্লা জিলা স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়। ছোটবেলা থেকেই গণিত এবং কম্পিউটার এর উপর অনেক ভালো লাগা কাজ করতো। সেই ভালো লাগা থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক, রাশেদা আপা এবং চারুকলার শিক্ষক সাইদুজ্জামান স্যার অনেক উৎসাহ দিতেন আমাকে। খুবই মজার ব্যাপার হলো, যখনই কোনো প্রতিযোগিতা (বিশেষ করে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা) এর নোটিশ ক্লাসে আসত, সব ক্লাসমেট এবং উপস্থিত টিচার আমার দিকে তাকায় থাকতো! এমনকি আমি কিছু বলার আগেই আমার নাম ঐ নোটিশ এর ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর তালিকার প্রথমে থাকতো! ক্লাস ১০ পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগীয় ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট, সেকেন্ড হয়ে নিজ জেলা এবং স্কুলকে রিপ্রেজেন্ট করার অনুভূতি লিখে বুঝানো সম্ভব নয়! সেই সময় তৎকালীন কুমিল্লার ডিসি, কামরুল স্যার ও আমাকে অনেক উৎসাহ জুগিয়েছেন, অনেক ভাবে সাহায্যও করেছেন।
উল্লেখযোগ্য কিছু কম্পিটিশন হলো - গুগল কোড ইন ২০১৯, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ (গণিত ও কম্পিউটার), ন্যাশনাল হাই স্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট, শেখ রাসেল পদক (ক্ষুদে প্রোগ্রামার), গ্লোকাল টীন হিরো ইত্যাদি! আমার উল্লেখযোগ্য ECA গুলো ছিল - বন্ধুদের নিয়ে স্কুল লাইফে তৈরি করা ননপ্রফিট ইয়ুথ অর্গানাইজেশন - অরুদ্ধ একাত্তর, সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ইনোভেটিভ প্রজেক্ট, গ্রাফিক ডিজাইনিং, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্কুল ক্লাবে কাজ করা ইত্যাদি।
৯-১০ এ উঠে বায়োলজি এবং কেমিস্ট্রি আমার একদমই ভালো লাগতো না। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল প্রোগ্রামার হবো, গুগলে জব করবো! সমাজ বললো তার আগে বুয়েট এ চান্স পেতে হবে, ভালো গণিত জানা লাগবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমি কোনোভাবেই এটা বুঝতে পারছিলাম না, প্রোগ্রামার হতে বা কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়তে হলে আমাকে বায়োলজি কিংবা কেমিস্ট্রি ভালো পারা লাগবে কেনো? আবার এইসব সাবজেক্ট এ নম্বর কম আসলে বুয়েট এ নাকি চান্স ও পাবো না! এইসব ভাবনার মাঝেই কয়েকজন সিনিয়র এর কথপোকথন শুনে বুঝতে পারলাম ওর বিদেশে পড়াশুনা নিয়ে কথা বলছে। সেই থেকে আমারও এই বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাটি শুরু! জানতে পারলাম, US admission process, বাংলাদেশের এডমিশন প্রসেস থেকে একদম আলাদা এবং আমি যেইসব এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস করেছি এতদিন, এইসব US এ অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় এডমিশন এর সময়।
অনেক অনলাইন গ্রুপে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছিলাম এবং ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের দীপ্র প্রত্যয় ভাইয়ার গাইডলাইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এই জার্নিতে। আমি অনেক ভাগ্যবান ছিলাম কারণ আমি গত এক বছরে অনেক মেন্টর পেয়েছিলাম যারা আমার সকল প্রশ্নের উত্তর দিত, স্পেশালি শুভ ভাইয়া, ফারহান ভাইয়া এবং সাবাবা আপু। অনেক বন্ধুও পেয়েছিলাম যাদের স্বপ্ন আমার স্বপ্নের মতই বড়!
আব্বু আম্মু সবসময়ই আমাকে এবং আমার স্বপ্নকে সাপোর্ট করতো, আমার উপর বিশ্বাস করতো! অ্যাপ্লিকেশনের ৬-৭ মাস আগে থেকে essay লেখা, LOR কালেক্ট করা, কমন অ্যাপ সাজানো, পোর্টফোলিও বানানো ইত্যাদি কাজে মাসের পর মাস নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। শুরুতে আব্বু আম্মুকে বুঝাতে একটু কষ্ট হয়েছিল সত্য, তবে আমার কিছু ক্লাসমেট এবং টিচারের কাছে আমি ছিলাম হাসির পাত্র। তাদের মতে "বাংলাদেশে এত বড় স্বপ্ন দেখা বোকামি", "বেশি বড় স্বপ্ন দেখা ভালো না", "কলেজের পর পরই বিদেশ যাওয়া যায় না", "HSC না দিয়েই?!", "তোমাকে দিয়ে হবে না", "বুয়েটেই ফোকাস করো, ওটা বড়!" - ইত্যাদি কথায় ওরা নিরুৎসাহিত করেছিল। এরপরেও আমি থেমে থাকি নি, নিজের উপর আত্মবিশ্বাসই আমার শক্তি ছিল।
আমি ৫০+ US ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করেছি। শুরুতে অল্প কয়েকটা জায়গা থেকে এক্সেপ্টেন্স আসলেও এফোর্ডেবল ছিল না। Acceptance থেকে রিজেকশনের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি ছিল কারণ আমি SAT optional ছিলাম আর EFC ও কম ছিল! অনেক অনেক রিজেকশনের পর, অবশেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬ টায় ফ্রাঙ্কলিন এন্ড মার্শাল কলেজ থেকে একটা লেটার পেলাম। এটা আমেরিকার finest liberal arts college গুলোর মধ্যে একটি। ঐ মুহুর্তে আমার মনে ব্যর্থ হবার ভয়, উৎসাহ, ইত্যাদি ইমোশন একসাথে কাজ করতেছিল, হাত কাপতেছিল রীতিমতো! কিন্তু অবশেষে, আমার মুখে হাসি ফুটলো! একসেপ্টেন্স লেটার না পড়েই আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আমি ফ্রাঙ্কলিন এন্ড মার্শাল কলেজ থেকে মেরিট স্কলারশিপ, লিডারশিপ স্কলারশিপ ও এইড মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার স্কলারশিপ পেয়েছি! এই কঠিন জার্নি অবশেষে শেষ হলো এবং সেই সকল সিনিয়র, মেন্টর, আমার কিছু বন্ধু এবং আব্বু আম্মুর প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ!
Name: Mohtashim Monowar
Franklin & Marshall College,
Class of 2028
#35 in National Liberal Arts Colleges,
#25 in Best Undergraduate Teaching