ভবঘুরে মন - Vabaghure Mon

ভবঘুরে মন - Vabaghure Mon Exploration, Touring, Biking....

ভবঘুরে [০৮/০৪/২০২২ ]            কবি সুকুমার রায় এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা "গন্ধ বিচার"            সিংহাসনে বস্‌ল রাজ...
11/04/2023

ভবঘুরে
[০৮/০৪/২০২২ ]
কবি সুকুমার রায় এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা "গন্ধ বিচার"
সিংহাসনে বস্‌ল রাজা বাজল কাঁসর ঘন্টা,
ছট্ফটিয়ে উঠল কেঁপে মন্ত্রীবুড়োর মনটা।
বললে রাজা, 'মন্ত্রী, তোমার জামায় কেন গন্ধ?'
মন্ত্রী বলে, 'এসেন্স দিছি- গন্ধ ত নয় মন্দ!'
রাজা বলেন, 'মন্দ ভালো দেখুক শুঁকে বদ্যি,'
বদ্যি বলে, 'আমার নাকে বেজায় হল সর্দি।'
রাজা হাঁকেন , 'বোলাও তবে- রাম নারায়ণ পাত্র।'
পাত্র বলে, 'নস্যি নিলাম এক্ষনি এইমাত্র-
নস্যি দিয়ে বন্ধ যে নাক, গন্ধ কোথায় ঢুকবে?'
রাজা বলেন, 'কোটাল তবে এগিয়ে এস শুক্‌বে।'...
এই কবিতা টা আমরা সবাই কমবেশি জানি।।।কিন্তু গন্ধের ব্যাপারে এত বলছি কেনো? কোনো বস্তুর প্রতি আমাদের ধারণা ও অনুভূতি টা অনেক সময় তার গন্ধের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে,শুধু বস্তু বলি কেনো,সময় ,ঋতু, স্থান,এমন কি ব্যক্তির প্রতি অনুভব,বা স্মৃতি ও গন্ধের সাথে জড়িয়ে থাকে,যেমন রজনীন্ধার কথা মনে আসলে তাকে গন্ধ ছাড়া ভাবতে পারি কি? আবার প্রত্যেক ঋতুর তার একদম নিজস্ব গন্ধ আছে,যেমন গরম কলে আম মকুল এর গন্ধ,পাকা আমের গন্ধ,বর্ষার শুরুতে শুকনো মাটির উপর প্রথম পড়া বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ,বর্ষা শেষের কদম ফুলের গন্ধ, শরতের ভোরে শিউলি ফুলের গন্ধ, ,বা প্রথম ভালোবাসার গন্ধ।এই সব অনুভূতি কিন্তু গন্ধ ছাড়া পঙ্গু । গন্ধ নিয়ে এতো বাকবকিনির কারণ ? হটাৎ এক গরমের সকালে আমি আর আমার সমস্ত রাইডের সাথী বিশ্বজিৎ কে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম জঙ্গল মহল এক্সপ্লর করবো বলে,আর জানার আগ্রহে যে জঙ্গলে মহুয়ার গন্ধ কেমন হয় ?শুনছিলাম যে জঙ্গলের পশু পাখিরাও নাকি মাতাল হয়ে যায় সেই গন্ধে।
সেই বার স্থির করা হলো যাওয়া হবে মুকুটমনিপুর ।কিন্তু রাস্তা টা একটু অন্য রকম হবে,আমরা যাবো মেদিনিপুর, ভাদুতালা, পিরকাটা, শাঁখাভাঙা, গোয়ালতোড়,শালবনি,পিংবনি, সারেঙ্গে,হয়ে মুকুটমনিপুর। আর ফিরবো ঝিলমিল,বেলপাহরি, বাঁশ পাহাড়ি,বন্দয়ান,ঝাড়গ্রাম,লোধাসুলী হয়ে।একদিনের টুর হিসাবে রাস্তা অনেক প্রায় ৫০০ কিমি।
এই বার যেহেতু আমরা ২ জন যাচ্ছি তাই ঠিক করলাম ভোর ২:৩০ বদলে ভোর ৩.০০ তে দেওড়া তে মীট করবো।এই বার মিট করার অবশ্য দরকার ছিল না।কারণ বিশ্বজিৎ আমাকে আমার বাড়ি থেকে ভোর ৩.০০ তে তুলে নিলো।প্রথম স্টপ নিলাম মেদিনীপুর ঢোকার মুখে, কাঁশাই নদী পেরিয়েই । সকাল হতে তখনও অনেক বাকি।একটু চা বিস্কুট খেয়ে আবার যাত্রা শুরু।কিন্তু কিছুদূর গিয়ে ভাদুতোলা থেকে বামদিকে ঢুকেই হটাৎ সবকিছু বিবর্তিত হয়ে গেলো । সমস্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ যেনো এক ঝটকায় ওলোট পালোট হয়ে গেলো।আমরা বাইক থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম দুজনে।
যদিও পুরপুরি গরম পড়েছে এখানে । কিন্তু জঙ্গলের মাঝে দেখলাম তখনও ভোরের হালকা কুয়াশার মোড়া প্রকৃতি কে,আর গায়ে শিরশিরে ঠান্ডা বাতাস লাগতে শুরু করলো।রাস্তায় শুধু আমি আর বিশ্বজিৎ,না কোনো গাড়ি ঘোড়া ,না মানুষজন,,আমরা কিছুক্ষন হতবাক হয়ে রাস্তার মাঝে বসে পড়লাম।ভোরের ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে ব্যাক প্যাক গুলো সামনের দিকে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু,রাস্তা অনেক সময় নস্ট করা যাবে না।কিন্তু কিছু রাস্তা অতিক্রম করার পরও দেখলাম চারিদিক প্রচন্ড স্তব্ধ।মাঝে মাঝে ছোট্ট ছোট্ট জনপদ পড়ছে জঙ্গল এর মাঝে মাঝে কিন্তু সমস্ত দোকান পাট বন্ধ।
রাস্তার দুই দিকে নতুন পাতা ভরা সালের জঙ্গল।তার বুক চিরে চলে গেছে মসৃণ কালো পিছের রাস্তা।
গোয়ালতোড় এর সামনে একটা দোকান পেলাম চা এর ,তাও তার একটা জানালা খোলা।কিন্তু চা হচ্ছে, আমরা বাইক দাঁড় করিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া ডিম সেদ্ধ,চা মুড়ি খেলাম।এবং তখন জানতে পরলাম এই ভীষণ নীরবতার কারণ । পুরো জঙ্গল মহলে মাওয়া বাদি বন্ধ চলছে।শুনে মনে বেশ ভয় করতে লাগলো।কারণ আমাদের যাওয়া এবং আসার রাস্তা পুরোটাই জঙ্গল মহল এর বুক চিরে।শুধু তাই নয় মুকুটমনিপুর ও জঙ্গল মহলের মাঝে পড়ে।কিন্তু ফিরে আসবো বলে তো যাই নি। আন্তঃপর এগিয়ে যাওয়া স্থির হলো।
কিলোমিটার এর পর কিলোমিটার বিস্তৃত জঙ্গল।মাঝে মাঝে অনেক ছাড়া ছাড়া খুব ছোট ছোট আদিবাসী জনপদ। জায়গা গুলো অত্যন্ত নিরিবিলি নাম শুনলেই ভয়ের উদ্রেগ হয় মনে,ভাদুতালা, পিরকাটা, শাঁখাভাঙা,
গোয়ালতোড়,শালবনি,পিংবনি, সারেঙ্গে, ইত্যাদি ইত্যাদি।দেখলাম জনপদ গুলোর মধ্যে সিআরপিএফ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান আর্মি ব্যারিকেড করে সেমি অটোমেটিক মেশিনগান নিয়ে আতদ্র প্রহরায় রত।
পুর জঙ্গল মহুয়ার মিষ্টি গন্ধে ম ম করছে। আদিবাসী পাড়ার শিশু থেকে বুড়ো সবাই ছোট ছোট ঝুড়ি হতে রসে ভরা টইটুম্বুর মহুয়া কুড়োতে ব্যাস্ত।পথের ক্লান্তি দুর করার জন্য সারেঙের জঙ্গলে কিছুক্ষন বসে পড়লাম দুজনে।জঙ্গল থেকে আদিবাসীরা মাটির হাঁড়ি ভর্তি তালের তাড়ি আর নদী থেকে ছাকনি্‌জালে ধরা চুনো মাছ ভাজা নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে কোন ভবঘুরে প্রথিকের আসায়।
আমরাও একটু চেখে দেখলাম। ঠা ঠা গরম এ যেনো অমৃত লাগলো।কিন্তু বসা যাবে না বেশিক্ষণ।সামনে রাস্তা আরো দুরূহ।সারেঙ্গের কাছে কাঁশাই নদীর উপর ব্রিজ নেই ,তাই বাইক পার করতে হবে নদীর উপর দিয়েই।জল বেশি নেই।কিন্তু বালি ভর্তি।বাইকের চাকা গুলো বারবার স্কিড করছে।খুব সন্তর্পনে পার হলাম নদী।সকাল ৮ টা তে পৌঁছে গেলাম মুকুটমনিপুরে।
পর্যটক বলতে শুধু আমরা দুজন।কোনো দোকান খোলা নেই।একটা টিফিন করার দোকান খুলেছে সাবে,,,বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া মুড়ি, শশা, আর দোকানে অনেক অনুরোধ করে ভাজিয়ে নিলাম দুটো করে ডিম।তাই দিয়ে সকালের ক্ষুদা নিবৃত্তি হলো।প্রথমে দেখলাম সোনাঝুরীর জঙ্গল।শান্ত ,শীতল মোহময়ী তার রূপ।তার মাঝে ছোট ছোট গভমেন্ট ডিলাক্স কর্টেজ।মনে হবে যেনো রূপকথার কোনো দেশ।ওখান থেকে বেরিয়ে প্রথম গেলাম অম্বিকানগরে অম্বিকা মাতার দর্শন করতে,পূজা দেওয়া পর প্রথম চিন্তা হলো দুপুরে খাবো কোথায়?
সবই তো বন্ধ।এক স্থানীয় লোকের বাড়িতে মাংস ভাত এর অর্ডার দিয়ে চললাম মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্ট এর উদ্দেশ্যে।অপূর্ব সুন্দর তার সৌন্দর্য্য চোখ জুড়িয়ে যায় দেখে।বেশ কিছু টা মোহনার দিকে এগিয়ে গিয়ে এক নির্জন পাহাড়ের কোলে জঙ্গলে বাইক দাঁড় করানো হলো
এখানে পাহাড় টা ঢালু হয়ে মিশেছে লকের জালে।সারা পথের ক্লান্তি দুর হলো লকের জালে স্নান করে।প্রায় ঘন্টা খানেক স্নান করে খওয়ার জন্য পূর্বে বলে আশা বাড়িতে গেলাম ভাত খওয়ার জন্য।ঝাল ঝাল মাংস এবং দেশি চালের ভাত সঙ্গে আলুভাজা। খওয়া শেষ করেই বেরিয়ে পড়লাম বেলপাহাড়ির উদ্দেশ্যে।
বেলপাহাড়ির মূল আকর্ষণ হল তার অসাধারণ সুন্দর রাস্তা।আর বেশ কিছু ছোট ছোট জংলী ঝর্ণা।রাস্তা অসাধারণ সাপের মতো আঁকা বাঁকা রাস্তা পাথুরে টিলা আর জঙ্গলের বুক চিরে চলে গেছে বহু দূর,আর তার সঙ্গে সঙ্গ দিয়েছে দুদিকের সাল,মহুয়ার জঙ্গল।মনে হবে যেনো অন্য কোনো দেশে চলে এসেছি।প্রথম স্টপ নিলাম ঘাগরা জলপ্রপাতে।ছোট জলপ্রপাত,আপন মনে বয়ে চলেছে,তার সঙ্গ দিচ্ছে আদিবাসী কিছু কচি কাঁচার দল,কিছুটা সময় কাটিয়ে পৌঁছে গেলাম ঢাঙ্গীকুসুম এ।এরপর সোজা একটানা ঝিলিমিলি হয়ে পোঁছে গেলাম ঝাড়গ্রামে । তখন প্রায় বিকাল ৩.০০ টা বেজে। দুপর এর রোদ আর গরম আমাদের কে বেশ কাহিল করে দিয়েছে।কিন্তু ঝাড়গ্রাম এর ঘন সালের জঙ্গল তখন আমাদের কে পরম মমতায় ছায়ার আঁচল ঘিরে রেখেছে। একটা ছোট দোকান খোলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম,আমের লস্যি,দই,আর কোল্ড ড্রিংকস খেলাম পেট ভোরে,আর বোতলে ভোরে নিলাম খোওয়ার জল।কিছু টা রাইড করে পৌঁছালাম লোধাসূলির জঙ্গল।তারপর খড়গপুর।এবার সেই... চেনা রাস্তা আর সেই পথেই ফিরতে হবে বাড়ি।।একদিনের অ্যাডভেঞ্চার শেষ,,,ঘরের ছেলের ঘরে ফেরার পালা।।মনের মাঝে সোনাঝুরির জঙ্গল,নাকে ভেসে আসছে মহুয়া আর নাম না জানা ফুলের সুবাস।চোখে তখনও ভাসছে বেলপাহিড়ির জঙ্গলের মোহময় রাস্তা।।।হটাৎ একটা গান ভেসে আসলো।।
"চল যাব তোকে নিয়ে
এই নরকের অনেক দূরে,
এই মিথ্যে কথার মেকী শহরের সীমানা ছাড়িয়ে......"
(সমাপ্ত)

ভবঘুরে [১৬.০৩.২০২৩ ]         যেখানে সময় থেমে যায়, সেখানে জীবন স্তব্ধ হয়,সেই জীবন আমরা চাই না। সময় আর জীবনের থেমে থাক...
16/03/2023

ভবঘুরে [১৬.০৩.২০২৩ ]
যেখানে সময় থেমে যায়, সেখানে জীবন স্তব্ধ হয়,সেই জীবন আমরা চাই না। সময় আর জীবনের থেমে থাকা আমাদের না -পসন্দ। জীবন আমাদের কাছে শাশ্বত ,বহমান, যেন স্রোতস্বিনী নদীর মতো। নদী যেমন তার প্রতি বাঁকে কত রহস্য লুকিয়ে রাখে,জীবন ও তেমন। নিশ্চল,আর নিস্তরঙ্গ জীবন এর স্বপ্ন কেই বা দেখতে চাই বলুন....
এখানে কবির একটা গান বার বার মনে পড়ে , ঠোঁটেও আসে"আমি চঞ্চল হে
আমি সুদূরেরও পিয়াসি,.....ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর,
তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি,
মোর ডানা নাই, আছি এক ঠাঁই
সে কথা যে যাই পাশরি,
আমি চঞ্চল হে
আমি সুদূরেরও পিয়াসি..."। তবে অসীম কে অনুভব করা এই সসীম, ক্ষুদ্র জীবের কম্মো নয়। তবে এইবার অসীম আর সুদূর কে অনুভব করার নেশায় সবাই আরো একবার বেরিয়ে পড়লাম। যাত্রাপথ খড়গপুর,ঘাটসিলা, টাটানগর,চান্ডিল,রাঁচি, হুড্রু,দশম ,হয়ে পাত্রাতু ভ্যালি। আর ফিরবো পুরুলিয়া ,বেলপাহারি হয়ে।এটা আমাদের এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে লম্বা জার্নি হবে...প্রায় ১০০০ কিমি।সময় মাত্র দু দিন।
২৪.০২.২০২৩. ভোর ২.৪৫ এ সবাই দেওড়া তে উপস্থিত হলাম...এইবারের সফর সঙ্গী চন্দন, বিশ্বজিৎ,গোপাল, শুভঙ্কর, পুস্পেন্দু দা,এবং আমি অনুপম... পাস্পেন্দু দা এই প্রথমবার আমাদের সফর সাথী হলো.একটা ভয় সবার মনেই ছিল "ভোর রাতে যদি কুয়াশা হয়, তা হলে মারাত্মক অসুবিধা হবে"পূর্ব আলোচনা অনুযায়ী আমাদের প্রথম স্টপ হবে খড়গপুর...কিন্তু পাঁশকুঁড়া ছাড়ার পর মনের ভয় টা বাস্তব এ রূপ নিলো,এত কুয়াশা যে বাইক এর স্পীড ৩০ কিমি/ ঘণ্টা তে নেমে এলো, আর বাইক এবং আরহী রীতিমত কুয়াশা স্নান করতে থাকলো,জ্যাকেট পত্র ভিজে চুপ চুপে হয়ে গেলো,তার উপর দোসর হলো ভোরের ঠান্ডা হাওয়া,কোনো রকমে খড়গপুর পৌঁছে একটা চা দোকানে দাঁড়ানো হলো,চা দোকানের আঁচে শুকিয়ে নেওয়া হলো জ্যাকেট।এরপর লোধাসুলি জঙ্গল অতিক্রম করে ঘাটসীলা ছাড়িয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় ধাবা দেখে দাঁড়ানো হলো ব্রেকফাস্ট এর জন্য। খাবার বলতে । লিট্টি আলুচোখা আর বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া ডিম সেদ্ধ, আর চা।যা হোক করে উদর পূর্তি করে আবার যাত্রা শুরু,গন্তব্য সুবৃহৎ চন্ডিল ড্যাম,প্রায় সকাল ৯:৩০ নাগাদ পৌঁছে গেলাম চান্ডিল ড্যাম এ। কোনো পর্যটক এর ভিড় নেই,প্রকৃতি কে একেবারে আপন করে পেলাম । আনন্দে পথের ক্লান্তি মুছে গেলো, চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা বিশাল ড্যাম,কিছু হাঁস আর পরিযায়ী পাখি খেলে বেড়াচ্ছে আপন খেয়ালে,কানে ভেসে আসছে পাখির কলতান,হাওয়া আর পাতার শব্দ, কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম,কিছু সেল্ফি তুলে আবার যাত্রা শুরু... জামশেদপুর, টাটা নগর,ডিমনা ছাড়িয়ে পৌঁছাতে হবে হুড্রু জলপ্রপাতে।
হুড্রু জলপ্রাত এ পৌঁছালাম সকাল ১১:৩০ নাগাদ,জল খুব একটা বেশি নেই, তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো তুলনা হয় না । কিছু স্থানীয় আদিবাসী মহিলারা পেয়ারা ,কুল,চানা ইত্যাদি বিক্রি করছে জলপ্রাত এর সামনে,আমরা কিছু পেয়ারা কিনলাম,তাই দিয়েই ক্ষুদা নিবৃত্ত করলাম সবাই,, খুব ঠান্ডা আর তাজা,সবাই পেট ভোরে খেলাম।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তীব্রতাও বাড়তে লাগলো,তাই সবাই মিলে ঠিক করা হলো রাঁচি শহরে না ঢুকে বাইপাস হয়ে চলে যাবো পাত্রাতু ভ্যালি । পাত্রাতু ভ্যালি পৌঁছালাম দুপুর ১:৩০ নাগাদ। হেয়ারপিন বাঁকে বাইক চালানোর অ্যাডভেঞ্চার সবাই খুব উপভোগ করলাম,কিন্তু সূর্য তখন মাথার ওপর,,তাই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হওয়ার জন্য হোটেল এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম সবাই ,হোটেল শিবম প্যালেস এ পৌঁছলাম দুপুর ২:৩০ নাগাদ।
হোটেলে পৌঁছে, বাইক গুলো পার্ক করে,কোনরকমে হোটেলের বিছানা নিলাম,সবাই একে একে স্নান সম্পন্ন করলাম,বেশ ঠান্ডা জল,ফ্রেশ হবার পর সবাই দুপুরের খাবার খেতে বাইরে বেরোলাম। খাবার বলতে ভাত ,চিকেন। রান্না মোটামুটি ,তবে খিদে পেটে সবই অমৃত লাগলো।সবাই আলোচনা করে ঠিক করা হলো বিকেলে ঘুম থেকে উঠে পাত্রাতু লেকে বেড়াতে যাওয়া হবে, কিন্তু এত লং ড্রাইভ এর ক্লান্তি কাউকেই উঠতে দিল না।বিকেলে একটু বাজারে ঘুরাঘুরি করে , সন্ধ্যায় মাংস রুটি খেয়ে তাড়াতাড়ি বিছানা নিলাম...বেশ ঠান্ডা ওখানে,কম্বল মুড়ি দিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম...কারণ ভোরে উঠে আবার যাত্রা শুরু করতে হবে। ভোরে উঠে সবাই স্থির করলো, আগের দিন দুপুরে যেহেতু পাত্রাতু ভ্যালি ভাল করে ঘোরা হয় নি , তাই আজ খুব সকালে পাত্রাতু ভ্যালি দিয়ে যাত্রা শুরু হবে। যেমন কথা তেমন কাজ,সবাই বেরিয়ে পড়লাম প্রথম ভোরের মিষ্টি আলোয় সিক্ত পাত্রাতু ভ্যালিকে দেখবো বলে। কিন্তু একটা ঘটনা ঘটলো,, আমাদের বন্ধু চন্দন এর হেলমেট টা খুঁজে পাওয়া গেলো না...আমরা সবাই নিরুপায় হয়ে ভাবতে লাগলাম কিভাবে হেলমেট এর ব্যাবস্থা করা যায়। কারণ বাজার খুলতে তখনও ৩ ঘণ্টা বাকি,অবশেষে এক পেট্রোল পাম্পের সহৃদয় কর্মচারী তার নতুন হেলমেট টি আমাদের কে কিছু পয়সার বিনিময়ে দিলেন,,, আর সেই ফাঁকে পরিচয় হয়ে গেলো এক মিসুকে বাঙালি কাকুর সাথে,,,ওখানে চা বিস্কুট খেয়ে সবাই খুব খুশি হয়ে এগিয়ে চললাম পাত্রাতু ভ্যালির দিকে,,,সকালে সে এক অন্য রূপ ,,, ঠান্ডায় হাত কনকন করছে...আর তারই মধ্যে হাজির হয়েছে সমস্ত সুপার বাইকারের দল রাইড করার জন্য। আমরা খুব উপভোগ করলাম ,,,কিছু ছবিও তুললাম,,,কিন্তু দেরি করা যাবে না,,,কারণ এর পরের গন্তব্য লাল পলাশের দেশ পুরুলিয়া । রাস্তা অনেক ,অগত্যা বেরিয়ে পড়লাম পাত্রাতু ভ্যালি থেকে পুরুলিয়ার উদ্দশে,,,মনে মনে খুব উত্তজনা "পলাশের জঙ্গল তো সিনেমা,টিভি তে অনেক দেখেছি,কিন্তু এইবার সচক্ষে দেখবো",,,রাঁচি থেকে পুরুলিয়া যাওয়ার রাস্তার বর্ণনা কি এর করবো,,,সে এক অবর্ণনীয় সৌন্দর্য ,,,কোথাও দেখি রাস্তার দুই ধারে সমস্ত জঙ্গল এর নাম না জানা গাছ,,,কিন্তু তার পাতা সবুজ এর বদলে টকটকে লাল,,এই প্রথম বার সেই দৃশ্য দেখে চোখ ধাঁদিয়া যাওয়ার উপক্রম ,..আবার কখনো দেখি রাস্তার দুই ধারের পাহাড় জঙ্গল ভরে আছে আগুন রাঙা পলাশ এ..আর ভাবি সিনেমা টিভি চেয়ে এ ঢের ঢের বেশী সুন্দর,,,এই সৌন্দর্য কে লেন্স বন্দী করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়,,,সবাই শুধু অভিভূত ,আর অবাক হয়ে হ্যাঁ.... করে তাকিয়ে থাকি,, আর কিছু ছবিই তুলি।।।পুরুলিয়া পৌঁছে প্রথম বাইক দাঁড় করানো হয় চরীদা গ্রামে।এর আগেও আমি পুরুলিয়া এসেছি দুই বার কিন্তু এই প্রথম বার চরিদা তে এলাম,,প্রথম বার দেখলাম স্থানীয় অধিবাসী দের মুখোশ তৈরির কৌশল।কিছু কেনাকাটা করে পৌঁছে গেলাম বাঘমুন্ডি।ওখান থেকে অযোধ্যা পাহাড়। লোয়ার ড্যাম , আপার ড্যাম,মার্বেল লেক ঘুরে ,খয়রা বেড়া ড্যাম এ সবাই উপস্থিত হলাম স্নান করার জন্য। দুপুরের তীব্র দাবদাহ,,,তার মধ্যেই ঠান্ডা ,শীতল,স্বচ্ছ,লকের জলে স্নান করার যে কি অনুভূতি তা বোঝাতে পারবো না।সবাই স্নান সেরে সতেজ হয়ে স্থানীয় হোটেলে ভাত আর মাংস খেয়ে ,বেরিয়ে পড়লাম বেলপাহাড়ির উদ্দেশ্যে,,যখন বেলপাহাড়ি পৌঁছালাম সন্ধ্যা হব হব করছে,,,কিন্তু রাস্তার অ্যাডভেঞ্চার ,আর সৌন্দর্য আমাদের কে অভিভূত করলো, বেলপাহাড়িতে একটু রেস্ট নিয়ে চা আর বিস্কুট টিফিন করে বাড়ির পথে রওনা দিলাম। তবে পথে কিছু দুঃখের ঘটনাও ঘটলো,পুষ্পেন্দু দার মোবাইল হোল্ডার থেকে পড়ে স্ক্রীনটা ভেঙে গেলো,চন্দন এর বাইক অভার হিট হয়ে বন্ধ হলো কিছু ক্ষণ এর জন্য,,অবশ্য ৫ মিনিটের মধ্যে স্টার্ট নিয়ে স্ববিভিক হলো,শুভঙ্কর এর বাইকের হেড লাইট কেটে গেল। খড়গপুর বাইপাশে সবাই পৌঁছালাম রাত ৯.৩০ তে।এবার সোজা বাড়ির পথে রওয়ানা,,
মনরে মাঝে দুঃখ সুখের স্মৃতি মিশে একাকার,,,তাও যেনো সুখের স্মৃতি বহুগুণে ছাপিয়ে গেছে দুঃখ কে,,,মনের মাঝে আগুন রাঙা পলাশ,শিমুল,,,কানে ভাসছে পাহাড়ি ঝর্ণা আর পাখির কলতান,, আর বন্ধুদের খুনসুটি,,,,বারবার মনে হচ্ছে সেই গানটা
" বন্ধু চল.. রোদ্দুরে..
মন কেমন.. মাঠজুড়ে..
খেলবো আজ ওই ঘাসে
তোর টিমে তোর পাশে

ফুটকড়াই, অ্যান্টেনা, হাফ চিঠি, হাফ প্যাডেল
আয়না আর জলপরীর গল্প বল
বন্ধু চল..
সাপ লুডো, চিত্রহার, লোডশেডিং, শুকতারা
পাঁচসিকের দুঃখদের গল্প বল
বন্ধু চল..
বন্ধু চল... বলটা লে.
রাখবো হাত তোর কাঁধে
গল্পেরা অই ঘাসে
তোর টিমে তোর পাশে" ।।
( সমাপ্ত )

[ 02 Sep 2021 ] ( ভবঘুরে )(পর্ব - ২)               খুব সকাল সকাল বাইকে মালপত্তর বাঁধাছাঁদা করে যাত্রা শুরু হয়ে গেল। প্রথ...
28/06/2022

[ 02 Sep 2021 ] ( ভবঘুরে )
(পর্ব - ২)
খুব সকাল সকাল বাইকে মালপত্তর বাঁধাছাঁদা করে যাত্রা শুরু হয়ে গেল। প্রথমে গেলাম খেমকূট ড্যাম। দেখলাম লেকের জলে ডুবে থাকা প্রাচীন এক মন্দিরের চূড়া, লেকের জলে ফুটে রয়েছে সারি সারি লাল শালুক । আর অসাধারণ প্রাকৃতিক সুন্দর্য । ওখান থেকে বেরিয়ে আমরা সকালের টিফিন সেরে যাত্রা শুরু করলাম বলাসোরের উদ্দেশে, গন্তব্য চাঁদিপুর সি বিচ।
চাঁদিপুর পৌঁছলাম সকাল ১০:০০ টা নাগাদ।আশ্চর্য সুন্দর শান্ত স্নিগ্ধ এই চাঁদিপুর। এখানকার সাথে দীঘা ও পুরীর সমুদ্রের কোনো মিল নেই। এখানে ঢেউয়ের উচ্ছাস নেই, তার বদলে নিস্তরঙ্গ নিশ্চুপ সমুদ্র।ওই খনেই অবস্থিত D.R.D.O এর হেড অফিস । কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর আমরা গেলাম ইমামি জগন্নাথ মন্দিরে। যার ডাক নাম দ্বিতীয় পুরী। সুন্দর শান্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, শিল্পীর দক্ষ ও নিপুন হাতে তৈরি অপূর্ব সুন্দর সব ভাস্কর্য । কিন্তু প্রচন্ড রৌদ্রের জন্য বেশিক্ষন দাঁড়াতে পারলাম না। বলাসরের বাজারে বাড়ির জন্য কিছু কেনাকাটা সেরে যাত্রা করলাম সুপ্রাচীন মন্দির ক্ষীরচরা গোপীনাথের উদ্দেশে ।
লকডাউনের জন্য মন্দিরে ভিড় কম। এখানে বিখ্যাত প্রসাদ হলো মাটির ভাঁড়ে রাখা ক্ষীর। দুর্ভাগ্য বসত আমাদের সেই প্রসাদ পওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হলো। এবার বাড়ি ফেরার পালা। বালাসর থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারে এক ধবাতে ভাত খাওয়া। বাইক স্টার্ট দিলাম, রাস্তা অনেক ঠিক হলো আমি আর মান্না ড্রাইভ করবো পিলয়ন হবে গোপাল ও শুভঙ্কর । একটানা তিনশো কিলোমিটার বাইক চালিয়ে প্রথম স্টপ নিলাম ডেবরার কাছে। কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্টপ কোলাঘাটের শের-ই-পাঞ্জাব।
পূর্ব কথা অনুযায়ী গোপাল আমাদের সবাইকে কফি খাইয়ে কিছু সেলফি নিয়ে বাড়ি পৌঁছলাম সন্ধ্যায়।

[02 Sep. 2021](ভবঘুরে),(পর্ব- ১)              "মানুষের আয়ু মানুষের জীবনের ভুল মাপকাঠি। দশ বছরের জীবন সে উপভোগ করছে দেড় ব...
18/04/2022

[02 Sep. 2021](ভবঘুরে),
(পর্ব- ১)
"মানুষের আয়ু মানুষের জীবনের ভুল মাপকাঠি। দশ বছরের জীবন সে উপভোগ করছে দেড় বছর।"___ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ( চাঁদের পাহাড়)
জীবন আমার কাছে এটা অনুভূতি । আমাদের সবার মধ্যে একটা adventure প্রিয় দামাল শিশু বাস করে, যে পাহাড়, নদী ,ঝর্ণা ,সমুদ্র পাওয়ার জন্য সবসময় আকুল হয়ে থাকে। আর সবগুলো যদি একসাথে পাওয়া যায় তো তাহলে আর কোথায় নেই--এ যেন হাতে চাঁদ পাওয়া।
এবারের ট্যুর প্ল্যানটা সেভাবেই ঠিক করা হয়েছিল। যাতে আমরা সমুদ্র, পাহাড়,নদী, জঙ্গলের স্বাদ এক সাথে অনুভব করতে পারি।
মান্নার (বিশ্বজিৎ) দোকানে বসে প্লান ফাইনাল করা হল। এবারের রাস্তা আগের থেকে অনেক বেশি,প্রায় ৮৫০কিমি। তাই নাইট স্টে করার পরিকল্পনা স্থির করা হল। প্লান অনুযায়ী আমরা প্রথমে যাব উড়িষ্যার বারিপদা। ওখানে সিমলিপাল রেঞ্জ এর পাহাড়, জঙ্গল, ঝর্না, এক্সপ্লোর করে পৌঁছব
ময়ূরভঞ্জ জেলায়। ওখানে নাইট স্টে করে পরের দিন সকালে বেরিয়ে যাবো বালাসর জেলা এক্সপ্লোর করার উদ্দেশে। এর পর বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরবো।
এবারের সফর সঙ্গী আমি অনুপম, বিশ্বজিৎ, গোপাল আর আমাদের বন্ধু আকাউন্টেন্ট শুভঙ্কর। শুভঙ্কর এই প্রথমবার আমাদের সঙ্গে যাবে।কথা অনুযায়ী শুভঙ্কর ভোর ৩:০০টে তে আমাকে বাড়ি থেকে pick করলো, আর গোপাল pick করলো বিশ্বজিৎ কে। যাত্রা শুরু হলো দেওরা থেকে ভোর ৪:০০ টেতে । ফার্স্ট স্টপ খড়গপুর, কিন্তূ ওরা দুজন বাইক দাঁড় করাল খারাগপুরের একটু আগে। এখানে একটু কোমর ছাড়িয়ে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু। লধাসুলি জঙ্গল তখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। ভোরের হালকা আলোয় তখনও আলমরা ভাঙছে সে। চা খাওয়ার জন্য জঙ্গলের মাঝে এক ছোট্ট অস্থায়ী দোকান দাঁড়িয়ে পড়লাম। বাড়ি থেকে নিয়ে আসা পকড়া আর ঘন দুধের চা। দুইধারা শালের জঙ্গল এ এক দারুন অনুভূতি। এরপর আবার চলা শুরু সকাল ৬:০০টা নাগাদ ফেক ঘাট ,গোপীবল্লভ পুর হয়ে পৌঁছালাম বারিপদা শহরে।শহর ঠিক নয়, মফস্বল বালাই ভালো।এখানে চা খেয়ে আমরা আবার চললাম প্রথম গন্তব্য সীতাকুন্ডু জলপ্রপাতের উদ্দেশে। বেশ খানিকটা জঙ্গল, পাহাড়, নদী অতিক্রম করে পৌঁছলাম সীতাকুন্ডুতে । কোনো পর্যটকের কোলাহল নেই, শান্ত নিস্তব্ধ পাহাড়, আর তার মাঝে ঝর্ণার শব্দ। পাহাড়ি নদী বয়ে যাবার কুলু কুলু ধ্বনি, বর্ষা শেষে ঘন সবুজ জঙ্গল --এ এক দারুন অভিজ্ঞতা।এখানে আমরা একটা বড় পাথরের টিলার উপর সকালের টিফিন টা সেরে নিই। এর পরের গন্তব্য দেবকুন্ডু।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই সময় সিমলিপাল রেঞ্জ বন্ধ থাকার কারণে আমরা দেবকুন্ডু যাওয়ার পারমিশন পেলাম না। সবার মনটা কিছুটা খারাপি হয়ে গেল।কি আর করা যাবে ,ওখান থেকে আবার চলা শুরু এক অল্প পরিচিত ড্যাম এর উদ্দেশে। যার নাম "রাইসা ড্যাম" কিন্তু আমাদের সমস্ত মন খারাপ এক মুহূর্তে ধূলিসাৎ করে দিল রাইসা ড্যাম এর অপার্থিব সুন্দর্য।
এই প্রথম বার দেখলাম লেকের পাড়ে এক অন্য রকম শব্দ করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাছ ধরার কৌশল। গরুর পালের গলায় বাঁধা ঘন্টা ও ঘুঙুরের সম্মিলিত আশ্চর্য ঘন্টাধ্বনি। লেকের জলে স্নান সেরে কিছু খওয়া দাওয়া করে আবার যাত্রা শুরু করলাম নীলগিরি রেঞ্জের দিকে। ওখানের মূল আকর্ষণ পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। আর ওখানেই হবে আমাদের রাত্রি নিবাস।
আমরা পঞ্চলিঙ্গেশ্বর পৌঁছলাম তখন বিকাল ৪:৩০ । থাকার ব্যাবস্থা হলো 'শকুন্তলা নিবাস' এ, যা আমাদের আগে থেকেই বুকিং করা ছিল। বেশ ভালো ব্যবস্থা থাকার। চারিদিকে পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা ছোট্ট কটেজ। শকুন্তলা নিবাসের মালিক বিকাশ বাবু বললো , 'তাড়াতাড়ি লাগেজপত্র রেখে পঞ্চলিঙ্গেশ্বর পাহাড়ে চড়া শুরু করে দিন, কারণ বিকাল ০৫:০০ টার পরে পাহাড়ে ওঠা বন্ধ হয়ে যাবে' কথামত আমরা হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম পঞ্চলিঙ্গেশ্বরের উদ্দেশে। রাস্তা বেশি নয় , ৫০০মিটার পর বাইক পার্কিংয়ে রেখে শুরু হলো পাহাড়ে হেঁটে ওঠার পালা। সারাদিনের পরিশ্রান্ত- বিষন্ন- ক্লান্ত শরীর। কিন্তু হার মানলে চলবেনা। বেশ কষ্ট করে পৌঁছলাম মন্দির প্রাঙ্গনে।
জায়গাটা বেশ সাজানো গোছানো, পূজা দেওয়া হল, দেখলাম ঝর্ণার জলে ধুয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির তৈরি শিবলিঙ্গ, আর পাহাড়ে ওপর থেকে অনেক দূর বিস্তৃত প্রকৃতির অপার্থিব সুন্দর্য। এবার হোটেলে ফেরার পালা। সন্ধ্যায় নিজে হাতে রান্না করলেন বিকাশ বাবু আমাদের জন্য। মেনু চিকেন কষা আর রুটি। অত্যান্ত সুন্দর ও সুস্বাদু রান্না । তাড়াতাড়ি খওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়লাম, কারণ ভোরে আবার বেরোতে হবে। অনেক গুলো জায়গা ঘোরা তখনও বাকি।
Continue.....

[04 Feb 2021](ভবঘুরে),বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরেবহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরেদেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,দেখিতে গিয়েছি সিন্ধ...
27/11/2021

[04 Feb 2021](ভবঘুরে),

বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (স্ফুলিঙ্গ হতে সংগৃহীত)
না আমি সিন্ধু, বিন্দু,বা শিশির এর কথা বলছি না।আমি বলছি আমাদের মত ছাপোষা ,দিন আনে দিন খায় মানুষের কথা ,যাদের সাধ আছে সাধ্য নেই।
Grand canyon , USA, Arizona , যেখানে যাওয়ার অর্থনৈতিক সংগতি এবং দুঃসাহস কোনোটাই আমাদের নেই, কিন্তু ছুঁয়ে দেখার স্বপ্নটা মনে থেকেই যায়।
এ বারের গল্পোটি শীতকালের,আর গন্তব্য ? আপনারা যারা ঘুরতে ভালোবাসেন তারা কিছুটা আন্দাজ করেছেন হয়তো, আমি বলছি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অফ্ বেঙ্গল , gangani র কথা।
আমাদের এক বন্ধু অভিজিৎ কোলের অনেক দিনের অভিযোগ "তোরা তো bike trip করিস কিন্তু আমাকে তো কখনো নিয়ে যাস নি,,,।" আর আমাদেরও ইচ্ছে ছিল শীতকালে একটা বইক ট্রিপ করার। January মাস এর মাঝামাঝি করে আমাদের এক বন্ধু অভিজিৎ এর বঙ্গে আগমন। অমনি ট্রিপ প্ল্যান শুরু।যেহেতু শীতটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে ,তাই ঠিক হল এইবার রাত্রি না,,, সকাল সকাল বের হতে হবে। কিন্তু বুঝলাম শীতে বাইক চালানোর কল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে ফারাক বিস্তর।৩০-৪০ কিমি চালানোর পরেই হাত বসে যাচ্ছে।যেটা বাইক চালানোর পক্ষে অত্যন্ত বিপদজনক।পরপর দুটি গ্লাবস ও দুটি জ্যাকেটেও ঠান্ডা বাগ মানছে না।কোনো রকমে খড়গপুর পৌঁছে দেখি এক চা দোকানে আঁচের উনুন জ্বলছে। অগত্যা দাঁড়ানো। ঠান্ডায় নি: সাড় হতে আগুনের তাপ পৌঁছাতে বেশ কিছুটা সময় নিলো,ঘট ঘট করে দু কাপ চা খেয়ে রেস্ট নিয়ে যাত্রা শুরু গন্তব্য গড়বেতা ।
এবার শালবনির জঙ্গল যেন এক অন্য রূপে ধরা দিল । শীতের শেষের সারি সারি পাতা ঝরা, নেড়া শালের গাছ সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে নতুন পাতার আশায়।মনে যেন অন্য এক অনুভূতি ,যা বিষাদের সৃষ্টি করে।পারে ভাবলাম এই পাতাঝরা আসলে নতুন পাতারই সূচনা। গড়বেতা থেকে বামদিকে সরু পিচ এর রাস্তা নেড়া জঙ্গলের বুক চিরে চলে গেছে Gangani।মাঝে মাঝে ছোট্ট ছোট্ট জনপদ।
কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি রাস্তার দুই দিকের জঙ্গলে আগুন লেগেছে,,,,প্রথম বার শুনলাম দাবানল এর ফট্ ফট্ শব্দ,দেখলাম হওয়ার ঘূর্ণিতে উড়ে আসা জ্বলন্ত শালের পাতা,অনুভব করলাম আগুনের হল্কা।মনে বেশ ভয়ের সঞ্চার করলো ,দূরে বাইক দাঁড় করিয়ে ভাবতে লাগলাম এর ভেতর দিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কিনা।উল্টো দিক দিয়ে গাড়ির আসা দেখে মনে সাহসের সঞ্চার হল।সেই জ্বলন্ত জঙ্গলের ভেতর দিয়ে বাইক চালানোর কথা ভাবলে এখনও শিহরিত হই। গণ গনি পৌঁছালাম সকাল ৯.৩০ নাগাদ।পর্যটক এর সংখ্যা খুব বেশি নয়,,,তবে তারা সব পিকনিক এ ব্যস্ত।অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলাম প্রকৃতির খামখেয়ালী পনায় সৃষ্টি ,অপূর্ব Gangani কে ,,,। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ অভিজিৎ বললো ,,"হ্যাঁ রে আমাদের ছেলে মেয়েরা এগুলো দেখতে পাবে ২০-৩০ বছর পর,!!,,,"।কারণ এগুলো পাথরের মতো শক্ত নয়,,,বরং বেলে পাথরের মত ঝুরঝুরে ,,,ভঙ্গুর ,, প্রকৃতির কোনো খামখেয়ালীতে যদি এটা নষ্ট হয়ে যায়!!!। পাশদিয়ে বয়ে চলেছে শীলাবতী নদীর ক্ষীণ স্রোত ,সারি সারি গরুর গাড়িতে চলছে নদী বক্ষের বলি সংগ্রহ এর কাজ।সামনে নদী তটের বালিতে খেলায় মত্ত কিছু স্হানীয় কচিকাঁচাদের দল।আমরা স্থির হয়ে বসে আছি তাল জঙ্গলের ছায়ায় ,,,দুপুরের চড়া রোদ মাথায় পড়তে পেটে ক্ষিদের কথাটা মনে পড়লো। বললাম বিষ্ণুপুর গিয়ে স্নান খাওয়া হবে।লালদীঘির কনকনে ঠাণ্ডা জলে স্নান সেরে,,,মন্দির নগরীর কিছু মন্দির দর্শন করলাম।স্টেশন চত্বরে ছোট এক হোটেলে ভাত খাওয়া সেরে বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুত হলাম আর বুকভরে নিলাম একরাশ মুক্ত বাতাস,মনভরে নিলাম ganganir অপূর্ব দৃশ্য ,শালগাছের শীতল ছায়া,মন্দির নগরীর অপূর্ব ভাস্কর্য,বন্ধুদের খুনসুটি আর সাহচর্য।।।।

[22/10/2018](Anupam)ভবঘুরে...          সময়টা বর্ষার শেষ August এর শেষ সপ্তাহ,কোরোনা তখনও বহুদূরে ।দুর্বিসহ লকডাউনের তিক্...
29/10/2021

[22/10/2018](Anupam)ভবঘুরে...
সময়টা বর্ষার শেষ August এর শেষ সপ্তাহ,কোরোনা তখনও বহুদূরে ।দুর্বিসহ লকডাউনের তিক্ত experience যে কি তখনো আমরা জানিনা।জীবন তখন তার নিজের ছন্দে বয়ে যাচ্ছে । সকালে উঠে তাড়াতাড়ি স্নান করে ভাত খেয়ে ৮:৫০এর সুপার বা তার আগে দিঘা লকালের যাত্রী আমরা সবাই। হটাৎ অফিস যাওয়ার পথে গল্প করতে করতে আমি আর বিশ্বজিৎ বললাম "অনেক জায়গায় তো ঘোরা হলো, আবার সামনে কথাও বাইক ট্রিপ করলে কেমন হয়"। যেইনা ভাবা ওমনি কাজ...। ঠিক হলো পরের দিন ভোর তিনটেতে দেওড়া ,যাচ্ছি বাঁকুড়া,বিষ্ণুপুর।
যাচ্ছি আমি,গোপাল আর বিশ্বজিৎ। রাত্রে তুমুল বৃষ্টি আর বজ্রপাত, ভাবছি জীবনের প্রথম বাইক ট্রিপটা মনেহয় বন্ধ হয়েগেল। রাত্রিতে ভালো ঘুম হলোনা। অবশেষে রাত্রি ২:৩০টা তে বিশ্বজিৎ এর কল "সব রেডি তো" ,আমি বললাম হ্যাঁ। ব্যস দেওড়া তে সবাই যখন এক হলাম সময় তখন ভোর তিনটে।
সেই বাইক ট্রিপ এর শুরু, এরপর বাইক নিয়ে অনেক জায়গায় গেছি। কিন্তু প্রথম বারের অনুভূতিই ছিলো অন্যরকম।এ যেন স্বপ্নকে প্রথমবার ছুঁয়ে দেখা। রাতের হাইওয়ে তে বাইক রাইড করার প্রথম অনুভূতি, ভোরের শালবনি আর তার নীরবতা, গোদাপিয়াশালের শালের জঙ্গল আর এলিফ্যান্ট করিডোর,রোড চন্দ্রোকনার ভোরের হাট আর সকালে ঐতিহাসিক মন্দির নগরীর প্রথম অভ্যর্থনা.......।

19/10/2021
19/10/2021
17/10/2021

Address

Deorah, Sasati, Shyampur
Howrah
711312

Telephone

+919830623705

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when ভবঘুরে মন - Vabaghure Mon posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to ভবঘুরে মন - Vabaghure Mon:

Videos

Share


Other Tourist Information Centers in Howrah

Show All