ভবঘুরে মন - Vabaghure Mon

ভবঘুরে মন - Vabaghure Mon Exploration, Touring, Biking....

 #ভবঘুরে মন 02-12-2023নেতারহাট, ছোটনাগপুর মালভূমির রানি।"ইয়ে লাইফ বহুত ছটি হ্যায় দোস্ত, so go on and break the rules, ...
18/02/2024

#ভবঘুরে মন
02-12-2023
নেতারহাট, ছোটনাগপুর মালভূমির রানি।

"ইয়ে লাইফ বহুত ছটি হ্যায় দোস্ত, so go on and break the rules, forgive quickly....,kiss slowly....,love truly...., laugh uncontrollable....,and never regret anything.. that made you smile..." এটা কথা থেকে উধৃত বলুন তো?একটু চেষ্টা তো করে দেখুন!..এই কথা গুলো যখন মনে হয়, তখন হৃদয়ে এক অন্য অনুভূতির জন্ম হয়।আজও যখন সাইকেল চালিয়ে আমার প্রাইমারি স্কুলের সামনে দিয়ে যায় তখন চোখে পড়ে,সস্তার লজন্সে লাল হয়ে যাওয়া ছোট্ট ছোট্ট জিভ।।।বা কারেন্ট নুন,বা ভাস্কর লবণ খেয়ে কালো ছোপ ধরা দাঁত।।।কিন্তু তার ফাঁকে উজ্জ্বল এক হাঁসি।।তখন নিজের দিকে তাকাই।।।একটু ভয় ধরে যায় তখন ।।যেনো রামগরুড়ের ছানা মনে হয় নিজেকে।আর মনে হয় এই তো কদিন আগেই এই মাঠ দাপিয়ে খেলতাম আমরা,এখন সেখানেই আমাদের ছেলেমেয়েদের দেখি ।সময় আর জীবন যেনো চোখের পাতা ফেলতে না ফেলতেতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।তাই জীবনের স্বাদ টা কে চেটে পুটে উপভোগ করবো বলে,আবার বেরিয়ে পড়বো বলে ঠিক করলাম।।গন্তব্য পালামৌ, বেতলা,নেতার হাট,বা ছোট নাগরপুর মালভূমি,এই সমস্ত জায়গা সম্পর্কে আমরা অনেক ছোটবেলা থেকেই শুনেছি,পড়েছি,আর যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি।।পালামৌ এর নাম জেনেছিলাম প্রথম সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখা থেকে, বেতলা কে জেনেছি "আরণ্যের দিন রাত্রি "থেকে। নেতারহাট কে জেনেছি বিভিন্ন বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনী থেকে।কিন্ত জেনেছি মাত্র,,পাওয়া হয়ে উঠে নি।।তাই এগুলি কে একেবারেই নিজের করে পাওয়ার আসায় আবার সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লাম।।তবে বাইক রাইডিং এর প্ল্যানিং আজকের নয়,তিন মাস আগের।বিগত তিন মাস ধরে চলেছে আলোচনা, আর টুর প্ল্যানিং।কারণ এইবারের রাস্তা অনেক বেশি, এবং দুর্গম।বাড়ি থেকে রাঁচি হয়ে লোহারধাগা হয়ে লোধ জলপ্রপাত, এবং ওখান থেকে নেতারহাট,ওখানে কিছু দ্রষ্টব্য জিনিস দেখে হোটেল এ চেক ইন করবো।রাস্তা প্রায় ৬২০ কিলোমিটার।এটা আমদেরকে অতিক্রম করতে হবে প্রথম দিনে ,দ্বিতীয় দিনে যাব নেতার হাট থেকে পালামৌ এর জঙ্গল অতিক্রম করে যাবো বেতলা,ওখানে জঙ্গল সাফারি এবং অন্যতম কিছু দ্রষ্টব্য দেখে বিকেলের মধ্যে ফিরে আসবো নেতারহাটে, কয়েল ভিউ পয়েন্ট, পাইন গাছের জঙ্গল,দেখে যাবো মেগনলিয়া সানসেট পয়েন্ট এ।ওখানে সূর্যাস্ত দেখে হোটেল এ ফিরবো।রাস্তা প্রায় ৩০০ কিলোিটারের।এর পর তৃতীয় দিন অর্থাৎ শেষ দিন বাড়ি ফিরবো এবং রাস্তায় যে সমস্ত দ্রষ্টব্য জিনিস পড়ে দেখবো,,এবং রাঁচি তে এই দিনের সবচেয়ে উত্তজনা পূর্ণ জিনিস হবে সবার হৃদয়ের হিরো মাহি ,বা এমএসডি এর বাড়ি যাওয়া,আর যদি একবার সচক্ষে দেখা যায় ক্রিকেট এর ভগবান কে তাহলে তো আর কথায় নেই...., রাস্তা প্রায় ৬০০ কিলোিটারের।

অবশেষে দিনটি চলে এলো,,,২রা ডিসেম্বর,,সবাই তাড়াতাড়ি খেয়ে শুতে গেলাম।।বুকের মাঝে ধুকপুকানি,কি জানি কাল কি হবে।রাস্তার কথা কিছু বলা যায় না।।।যদি কুয়াশা হয় তাহলে তো টাইম ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবে,আর রিস্ক ফ্যাক্টর ও বেড়ে যাবে।রাত্রি ২ টো তে বিশ্বজিৎ এর ফোন।।।,,"উঠে পড় রেডী হ,,দেরি করে লাভ নেই"।তার পর পুস্পেন্দু দার কল।।"কি রে রেডী তো"।আমি বললাম হুম।মাল পত্তর আগের দিন সন্ধ্যায় বাইক এ বাঁধা হয়ে রেডী ছিল।সুতরাং জ্যাকেট, রাইডিং গিয়ার, পরে বেরিয়ে গেলাম। দেওড়া তে সবাই মিট করবে ।এই বারের সফর সঙ্গী হচ্ছে আমি অনুপম,চন্দন,বিশ্বজিৎ,আর আমাদের প্রিয় দাদা পুস্পেন দা। পুষ্পেন্দু দা এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আমাদের সাথী।সবাই যথা সময়ে দেওড়া চলে এলাম।বড় বাবার মন্দিরে পুজো দিয়ে ভোর ৩.০০ টে তে যাত্রা শুরু করলাম সবাই।এই বার কিন্তু বিধি বাম হলো না, বরং সাথ দিল।খুব ঠাণ্ডা পেলাম না। আর কুয়াশা ও পেলাম না।একেবারে বাইক চালানোর জন্য আদর্শ পরিবেশ।সবাই ভাবলাম এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খড়গপুর এর চৌমাথা পেরিয়ে চা খাওয়ায় জন্য দাঁড়ানোর কথা।কিন্তু এখানে একটা সমস্যা হলো।দেখি ভোর রাতে প্রচুর ট্রাক এর লাইন।কিন্তু কারণ বুঝতে পারলাম না। আগত্যা বাইক ফুটপাত দিয়ে নিয়ে যেতে থাকলাম কোনো মতে।।সামনে গিয়ে দেখি বীভৎস দুর্ঘটনা হয়েছে দুটো ট্রাক এর মধ্যে।পুলিশ পুরো রাস্তা ঘিরে দিয়েছে। রাস্তায় ভর্তি হয়ে আছে ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো।তার উপর দিয়ে কোনো রকমে বাইক পার করিয়ে ফাঁকা রাস্তায় পড়লাম।যেহেতু ট্রাক বা অন্য গাড়ি পাস করতে পারছে না তাই সামনের রাস্তা পুরো ফাঁকা।তাই স্টপ না নিয়ে বেশ কিছু টা এগিয়ে যাবো ঠিক করলাম।স্টপ নিলাম লোধাসুলী,ঘাটসিলা পেরিয়া।চা দোকানে দাঁড়িয়ে গরম গরম চা,বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া ডিমসেদ্ধ, বিস্কুট,আর খাজুর দিয়ে টিফিন সারলাম।রাস্তা যেহেতু অনেক তাই বেশি স্টপ নেওয়া যাবে না। অপূর্ব দলমা পাহাড় এর উপত্যকা পেরিয়ে দ্বিতীয় স্টপ নিলাম টাটা নগর এ তখন সকলের আলো ফুটছে সবে।ঠাণ্ডা এইদিকের চেয়ে একটু বেশি। দোকানে লোকজন এর ভিড় নেই।একটু চা,কেক, আর ডিমসেদ্ধ দিয়ে টিফিন করলাম।একটু হাঁটা চলা করে কোমর টা একটু সড়গড় করে নেওয়া হলো। তারপর আবার পুর দমে যাত্রা শুরু।কারণ এখনো রাঁচি পৌঁছতে ১৫০ কিলোমিটার বাকি।সবাই প্রায় ননস্টপ গাড়ি চালিয়ে যখন রাঁচি পৌঁছলাম তখন প্রায় সকাল ১০ টা বাজে। শরীর অবসন্ন,ক্লান্ত।কিন্তু মনে আনন্দ পরিপূর্ণ কারণ আমরা প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছি সকল ১১ টার মধ্যে।বাকি আছে এর ১৫০ কিলোমিটার এর মত,রাঁচি রিং রোড ধোরে কিছু টা এগিয়ে আমরা বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে এক পাঞ্জাবি ধাবা তে দাড়ালাম।ধাবাতে দাঁড়ানোর একটাই কারণ আমরা প্রায় সারারাত ঘুমাই নি,,তার উপর একটানা বাইক চালানোর কষ্ট। সবারই শরীর আর বইছিল না,,আর ধাবার সুবিধা হলো ওখানে খাটিয়া থাকে,একটু কোমর সোজা করে গড়িয়ে নেওয়া যায়।আর দ্বিতীয় সুবিধা হলো গরম গরম সদ্য প্রস্তুত খাবার।তবে সরদার জির ধাবার খাবার,পরিষেবা , আতিথেয়তা আমাদের সারা জীবন মানে থাকবে।তন্দুরি রুটি, বটার দিয়ে তৈরি তরকা, চীজ গার্নিশ করা মিক্স ভেজ,এর বাড়ি থেকে আমার স্ত্রীর দেওয়া মিষ্টি দই।সবাই খুব পরিতৃপ্ত ভাবে খেলাম।কিন্তু বাঙালী তো একমুঠো ভাতের জন্য প্রাণ আঁকুপাঁকু করে,কিন্তু ভাত খাওয়া যাবে না কোনো মতে,আবার খুব পেট ভোরেও খাবার খাওয়া যাবে না,,,পাছে ক্লান্তি, আর শ্রান্তি তে চোখ লেগে যায়,,,অত্যন্ত সচেতন, আর সাবধানতার সঙ্গে এবং একত্রিত ভাবে ড্রাইভ করতে হবে সবাই কে।ধাবা তে আধা ঘণ্টা বিশ্রাম করে সবাই একটু রিফ্রেশ হয়ে যাত্রা শুরু করলাম লোহারধাগা এর পথে।ওখান থেকে যাবো লোধ্ জলপ্রপাত,লোহারধাগা অতিক্রম করার পর আশেপাশের দৃশ্যপট এর বিপুল পরিবর্তন শুরু হলো।চারিদিকে ছোট বড় পাহারের সারি,ছোট ছোট আদিবাসীদের জনপদ,রাস্তার দুই ধারে সারিবদ্ধ শাল, সেগুন,মহুয়া গাছ।সে এক অপূর্ব মনোরম দৃশ্য।লোধে পৌঁছলাম বিকাল ৩.০০ টে নাগাদ।অপূর্ব তার মন মাতানো রূপ।বহু উপর থেকে পৃথিবীর বুকে ধেয়ে আসছে সাদা ফেনিল জলধারা।এটাই ঝাড়খণ্ডের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত।কিন্তু বেশি সময় দিতে পারলাম না।ওখান থেকে নেতার হাট এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিমি।এবং শেষ ২৮ কিমি পুরোটাই পাহাড়ি পথ,আর আমরা কোনো ভাবেই চাই না ওই দুর্গম পথ সূর্যাস্তের পর পাড়ি দিতে।সুতরাং সবাই বেরোলাম নেতার হাট এর উদ্দেশে।কিছু টা যাওয়ার পার অনুভব করলাম।যেনো রাস্তাটা পুরোপুরি দার্জিলিং বা সিকিম এর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।সেই একই পাহাড় কেটে সর্পিল রাস্তা।রাস্তার ধারে পাইন গাছের জঙ্গল,রাস্তার গার্ড রেল এর উপর বসে থাকা হনুমান আর বাঁদর এর দল,,একমনে খেলায় ব্যস্ত,একই রকম ভাবে কানে তালা লাগা উচ্চতা জনিত কারণে।যত উচ্চতা বাড়ছিল তত ঠান্ড বাড়তে লাগলো,আরো ঘন হয়ে এলো পাইন গাছের জঙ্গল।দৃশ্য এতই মনোরম ,যে মনে হচ্ছে পাহাড়ের প্রতি বাঁকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলি।কিন্তু এত সময় নেই আমাদের হাতে।অবশেষে বিকাল ৪.০০ টে নাগাদ পৌঁছলাম হোটেলে।দারুন সুন্দর এই হোটেল সানরাইজ।পাইন আর নাশপাতি বাগানের মাঝে হোটেল টা এবং এর আরো দুটি সুবিধা আছে।এক বাইক বা চার চাকা রাখার জন্য বিরাট পার্কিং আর দ্বিতীয় টা হলো এটা একদম সানরাইজ পয়েন্ট এর সামনে অবস্থিত। পায়ে হেঁটে সূর্যোদয় দেখেতে যাওয়া যায়।হোটেলে চেক ইন করে একটু রিফ্রেশ হয়ে সবাই বেরিয়ে পড়লাম লোকাল সাইট সিন দেখতে।প্রথম গেলাম নেতার হাট স্কুল দেখতে। খুব ঐতিহাসিক এবং বিখ্যাত এই স্কুল।ঠাণ্ডা পাইন এর জঙ্গলে ঘেরা ব্রিটিশ দের তৈরি করা স্কুল।দারুন এর পরিবেশ, পাহাড় এর মধ্যে উপত্যকার মতো এর খেলার মাঠ,ইচ্ছা হচ্ছিল ব্যাট বল নিয়ে আবার ছোটবেলার মতো একবার খেলি।ওখান থেকে গেলাম চরলোট হাউস এ।তখন সন্ধ্যা নেমে আসছে পাহাড় জুড়ে।পাইন আর নাশপাতির জঙ্গল হাল্কা কুয়াশার চাদরে মুড়ে নিচ্ছে নিজেকে।পাখির দল বাসায় ফিরছে দল বেঁধে।আমরাও বেশ ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত।এখানে দার্জিলিং এর মতো ম্যাল নেই,কিন্ত ম্যাল এর মতো সন্ধ্যায় একটা ছোট বাজার বসে।সেখানে বেশ কিছু ফার্স্ট ফুড এর দোকান ,এবং টুকিটাকি কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়।সমস্ত হোটেল এর টুরিস্ট রা সন্ধ্যায় এখানে খাওয়া দাওয়া করতে,আর আড্ডা দিতে এখানে আসে।আমরাও একটা দোকান দেখে খেতে বসলাম। ম্যাগি আর ডিম ভাজা। হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা আর ধোঁয়া ওঠা ম্যাগি,দারুন লাগলো খেতে সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা।তারপর বাজার থেকে গোটা একটা মুরুগী কিনে সেটা ছাড়িয়ে দোকান থেকে কশে নিয়ে গেলাম হোটেলে সঙ্গে নিলাম রুটি আর স্যালাড।সারাদিন পর ভরপেট খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি শুতে চলে গেলাম সবাই।কারণ কাল আরো একটা লম্বা রাইড এ বেরোতে হবে আমাদের কে।সবাই ভোর ৪.০০ টে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে বাইক গুলো স্টার্ট দিয়ে গরম করে নেওয়া হলো।তারপর ব্রাশ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গেলাম সানরাইজ পয়েন্ট এ।সূর্য তখনও ওঠে নি, চারিদিক অন্ধকার,দারুন ঠান্ডায় জাকেট থেকে হাত বের করা দায়।আমরা গুটি গুটি পায়ে পৌঁছলাম সানরাইজ পয়েন্ট এ।দেখলাম কিছু লোক জমা হয়েছে আগেই,আর কিছু লোক আসছে।আমরা সবাই ব্যালকনি মতো পাহাড় এর খাঁজে দাঁড়িয়ে পড়লাম।ধীরে ধীরে আকাশ রঙতে লাগলো ।দিগন্তে শুরু হলো বিচিত্র রঙের খেলা।অবশেষে পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে দেখা দিল রাঙা সূর্য।অপূর্ব সূর্যোদয় দেখে তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে বাইক রেডি করলাম।আমাদেরকে যেতে হবে বেতলা জাতীয় উদ্যান , পালামৌ, বেতলা পৌঁছতে হবে সকাল ১০.০০ টা নাগাদ রাস্তা ১৫০ কিলোমিটার, অগত্যা ভোরের ঠাণ্ডাতেই বেরোতে হলো হোটেল থেকে।কিছুটা জঙ্গল আর পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে একটা ছোট্ট আদিবাসীদের পাড়াতে দাঁড়িয়ে পড়লাম দোকানের সামনে।একটু চা খাওযায় নেশায়। ছাগলের দুধের চা,আর ঘুঁটের আঁচে পোড়া লিট্টি,কি অপূর্ব তার স্বাদ,সবাই খেলাম পেট ভোরে।তারপর শুরু হলো যাত্রা।কিন্তু একটা ছোট সমস্যা দেখা দিল।দূরত্ব হিসাব করে মোটামুটি আমাদের বাইক এ তেল ভরা থাকে।।।কিন্তু পাহাড়ে উঠানামা যে বেশি তেল খেয়েছে বাইক, সেই হিসাব আমাদের ছিল না।আর একটা জিনিস আমরা জানতাম না যে, নেতারা হাট থেকে বেতলা যাওয়ার যে প্রায় ১৫০ কিলোমিটারে রাস্তা সেই রাস্তায় কোনো পেট্রোল পাম্প নেই।কিছুটা গিয়ে টেনসন হতে লাগলো যদি কোনো ভাবে পেট্রোল কম পড়ে যায়!!।।কিন্তু সেই সমস্যার সমাধান হলো কিছুটা এগিয়ে,..দেখি এক আদিবাসী কিশোরী দোকানে পেট্রোল বিক্রি করছে।আমরা সবাই দাঁড়িয়ে পেট্রোল নিলাম।মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে জানলাম সে ক্লাস ফাইভ এ পড়ে।এবং একমুখ হাঁসি নিয়ে তার স্কুল টিও সে তর্জনী নির্দেশে দেখিয়ে দিল,মাটির এক চেলে ছোট্ট একটা কামরার স্কুল,তার দেওয়াল রংবাহারি ছবিতে ভর্তি।তারপর বাইক ছুটে চললো বেতলা ন্যাশানাল পার্ক এর উদ্দেশে।সত্যি বলতে কি এইযা বত কাল যত বাইক রাইড করেছি তার বেস্ট এক্সপেরিয়েন্স হলো এই ১০০ কিলোমিটার এর রাইড এ।দুই দিকে বিস্তৃত এবং ঘন সবুজ জঙ্গল তার মাঝখান দিয়ে উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা,এবং কিছু দূর অন্তর পাহাড়ি ঝর্না নেমে এসেছে রাস্তার উপর দিয়ে।সেই নিবিড় বনানী আর পাখির কলতান।জনমানব শূন্য সেই জঙ্গল। আমাদের মাত্র তিনটি বাইক এর ইঞ্জিন এর শব্দ প্রাণের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে যেন।বেতলা পৌঁছলাম সকাল ৯ টা নাগাদ।এরপর একটা জিপসি ভাড়া করে জঙ্গল সাফারি।সাফারি শেষ করে বেরোলাম ২ ঘণ্টা পর।বাঘের দেখা না মিললেও জঙ্গলের সৌন্দর্য আমদের কে মুগ্ধ করলো।সাফারি শেষ করে আমরা গেলাম কমল দীঘি দেখতে।গভীর জঙ্গলের মাঝে সরু ,উঁচু নিচু , আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে প্রায় ৯ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে পৌঁছে গেলাম কমল দীঘি তে।গভীর জঙ্গল এর মাঝে এক সুদৃশ্য জলাশয় ,সঙ্গে বন্য প্রাণী দেখার একটা ওয়াচ টাওয়ার।বন্য প্রাণী রা ওই দীঘির জল খেতে আসে।বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ,কিছুটা রিফ্রেশ হয়ে সবাই বেরোলাম পুরোনো কেল্লা দেখার উদ্দেশ্যে,খুব বেশি রাস্তা নয় ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম পুরনো কেল্লায়।ভগ্নপ্রায় জীর্ণ অবস্থা,খুব সাবধানে পা ফেলে পৌঁছে গেলাম কেল্লার উপরে।কি অপূর্ব দৃশ্য চারিদিকের সবুজ পাহাড় ঘিরে রয়েছে, পাহাড়ের চূড়া গুলি একের পার এক মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সবচেয়ে আশ্চর্য লাগলো পাহাড় গুলোর উপর দিয়ে তৈরি করা সুউচ্চ প্রাচীর ,দেখে চীনের প্রাচীর এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল,আর মনে করিয়ে দিচ্ছিল অতীত এর গৌরবো জ্জ্বল অধ্যায়ের কথা।প্রাচীর মাঝে মাঝে ভেঙে হেলে গেছে,ভয়ে পা সিড়সিড় করতে লাগলো সবার,বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারলাম না ।অবশেষে সকাল ১২ টা নাগাদ বেতলা কে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম নেতার হাটের উদ্দেশ্যে।কারণ নেতার হাটের কিছু জায়গা তখনও আমাদের দেখা বাকি,রাস্তা ১৫০ কিলোমিটার, যতটা তাড়াতাড়ি পৌঁছব ততটা ভালো হবে।গভীর জঙ্গলের রাস্তা পেরিয়ে কোয়েল নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম সবাই।কারণ স্নান করতে হবে সবাই কে।নেতার হাট এর অপূর্ব নদী এই কোয়েল। শীতের সময় তাই পাহাড়ি নদীতে স্রোত নেই। খুব স্বচ্ছ আর পরিস্কার জল।সবাই স্নান সেরে ,পড়ে থাকা কিছু খাবারের সঠিক ব্যাবহার করে বেরিয়ে পড়লাম নেতার হাটের পাইন ফরেস্ট এবং কোয়েল ভিউ পয়েন্ট এর উদ্দশ্যে।ওখানে পৌঁছলাম প্রায় বিকাল ৪ টে নাগাদ।খুব সুন্দর আর ঘন পাইন এর জঙ্গল।সবচেয়ে অবাক করলো পাইন জঙ্গল এর অপূর্ব গন্ধ।মনে হবে যেনো পুরো জঙ্গল টায় কেউ সুগন্ধি ফ্লোর ক্লিনার ছড়িয়ে দিয়েছে।সবাই কিছু ফটো ক্লিক করে বেরিয়ে পড়লাম।কিন্তু পেটে প্রচন্ড খিদের জ্বালা,একে তো সারাদিন কোনো ভারী খাবার পেটে পড়ে নি,তার উপর ভোর থেকে বাইক চালানোর ধকল, পাহাড়ে ওঠার ধকল।পাইন এর জঙ্গলের পাশে একটা আদিবাসী কাকিমার দোকানে সবাই খাবো বলে ঠিক করলাম,খাবার বলতে ,ডিমের অমলেট ,ডিম সেদ্ধ,আর ম্যাগি,খুব তৃপ্তি ভরে খেলাম সবাই।সবচেয়ে ভালো লাগলো খাবার পরিবেশন করা দেখে,কারণ খাবার দেওয়া হয়েছে গাছের কাঁচা পাতায়।খাওয়া দাওয়া করতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নস্ট হলো,সূর্য তখন প্রায় অস্তাচলের পথে।সবাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম সানসেট পয়েন্ট এর উদ্দেশ্য।রাস্তা বেশি নয় কিন্তু প্রচুর গাড়ির ভিড়,কোনমতে পৌঁছলাম মগ্নোলিয়া সানসেট পয়েন্ট এ।কি অপূর্ব রঙের খেলা চলেছে তখন সারা আকাশ জুড়ে।লাল,গেরুয়া,সোনালী,আর নীলাভ রঙে রাঙিয়ে আছে সারা আকাশ।তার ই আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়েছে প্রেমিক যুগলের মুখে।তারই সামনে তাদের প্রিয় ঘোড়ার মূর্তি।তার পিঠে চড়তে ব্যস্ত কচি কাঁচার দল।গোধূলির লাল আভায় আর প্রচন্ড ঠাণ্ডা হাওয়ায় মনটা যেনো উদাস হয়ে গেলো।মনে মনে বললাম "বেঁচে থাক তোমাদের ভালোবাসা আর প্রেমের গল্প ,আবার যদি কোনো দিন ফিরে আসি,এখানেই যেনো দেখতে পাই তোমাদের" বন্ধুদের হাঁক ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম ।একটা তেলে ভাজা দোকান খুঁজে পেয়েছে.... ওখানে গরম গরম পেয়াঁজি আর ফুলুরি অর্ডার করেছে সকলে।দারুন লাগলো খেতে,আর সঙ্গে যোগ হলো গরম গরম ঘন দুধের চা।ওখানেই চেয়ার এ বসে সবাই একসাথে আড্ডা চললো ,চললো খুনসুটি।অবশেষে সন্ধ্যা নামলো পাহাড়ের বুক জুড়ে।পাইনএর জঙ্গলে ফিরে আসতে লাগলো পাখির দল।মন আমদের ও একটু বিষণ্ণ কারণ আমদের কেও হোটেলে ফিরতে হবে আর ভোরে লাগেজ পত্র বেঁধে বেরোতে হবে বাড়ির উদ্দেশে।হোটেলে পৌঁছে রিফ্রেশ হয়ে খাবারের অর্ডার দিলাম।যেহেতু কাল আবার ৬৫০ কিলোমিটারে রাইড তাই আজ নিরামিষ খাবার ঠিক হলো।মিক্স ভেজ,এর ফুলকফির তারকারি সঙ্গে রুটি আর স্যালাড।সবাই ভোর ৩.০০ টে অ্যালার্ম সেট করে শুয়ে পড়লাম সন্ধ্যা ৯ টা নাগাদ।ভোরে সবাই রিফ্রেশ হয়ে বাইক রেডী করে ভোর ৪ টে তে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।পাহাড় এর পাইন বানের তখনও ঘুম ভাঙ্গেনি ,মনে মনে বিদায় জানলাম তাদের ,ঠাণ্ডা ও বেশ। খুব সাবধানে বাইক নিয়ে নিচে নামতে থাকলাম পাহাড় থেকে,মাঝে মাঝে ঘন কুয়াশার আস্তরণ।ভোর ৫.৩০ টা নাগাদ আমরা পাহাড় থেকে নামা শেষ করলাম,আবার কিছু টা মালভূমির মতো চড়াই উতরাই রাস্তা,এখানে আর ভয় নেই।একটা মন্দিরের সামনে দোকান দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম চা খাবার উদ্দেশ্যে ।দেখি এক বয়স্ক দাদু কম্পিত হস্তে চা তৈরি করছে।সবাই দু কাপ করে চা খেলাম আর খেলাম দাদুর হতে বানানো গরম গরম লাড্ডু,যায় স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।এর পর রাঁচির উদ্দেশ্যে যাত্রা।রাঁচি পৌঁছলাম সকাল ৯ টা নাগাদ । মাহিন্দ্র সিং ধোনির বাড়ি খুঁজতে আমদের কিছু মাত্র কষ্ট হলো না,সবাই জানে মাহির বাড়ি "ভারা সিমালিয়া" প্রাসাদ সমান সেই বাড়ি,জোয়ান দের নিরাপত্তা বলয় দিয়ে ঘেরা,কিন্তু সবাই আমাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করলেন,কিন্তু এমএসডির দেখা পেলাম না।অগত্যা তার বাড়ির সামনে সবাই সেলফি আর গ্রুপ ফটো তুলে সবাই বেরিয়ে পড়লাম ।সামনে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে রুটি আর সবজি দিয়ে টিফিন করলাম সবাই।এবার টাটা নগর জামশেদপুর এর দিকে যাত্রা ।।টাটা নগর পৌঁছে তিনদিন পর প্রথম ভাত খেলাম সঙ্গে মাছের ঝোল। কিন্তু ভরপেট নয় কারণ, বাড়ি পর্য্যন্ত অনেক রাস্তা বাকি।বেহেরাগরা যখন পৌঁছলাম তখন বিকেল হয়ে গেছে।কিছুটা এগিয়ে একটা চা দোকানে দাঁড়ানো হলো।সবাই প্রয়োজনীয় ফোন সেরে নিল।সবাই বেশ শ্রান্ত। ক্লান্তিতে,কিন্তু বন্ধুদের খুনসুঁটি তখনও জারি...হাঁসির দমকে চা উছলে পড়ছে জামায়....অকারণে এ ওকে জড়িয়ে ধরছে... ভাগ করে মসলা মুড়ি খাচ্ছে সবাই....মনটা ভারী হয়ে গেলো ....আবার কবে বেরোব জানি না ।আবার ভালোও লাগলো...এই ভেবে যে এই অনলাইন এর দুনিয়ার আমদের অফ লাইন বন্ধুত্ব বেঁচে আছে,,,বেঁচে আছে তার আবেগ , উষ্ণতা,আর ভালোবাসা নিয়ে।এবার বাড়ি ফেরার পালা। একরাশ আনন্দ ,পাইন বনের সুবাস,পাহাড়ের হিমশীতল সুনিবিড় ছায়া,আকাশ ভরা বিচিত্র রঙের খেলা,আর বেতলার সুনিবিড় জঙ্গল,নেশা ধরানো রাস্তা, তখনও মনকে আবিষ্ট করে রয়েছে পুরো মাত্রায়।বাড়ি পৌঁছলাম সন্ধ্যা ৭.৩০ নাগাদ। এবার বিশ্রাম,আর মেয়ের পা বুকে নিয়ে শ্রান্তির ঘুম।
:- সমাপ্ত-:

ভবঘুরে [০৮/০৪/২০২২ ]            কবি সুকুমার রায় এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা "গন্ধ বিচার"            সিংহাসনে বস্‌ল রাজ...
11/04/2023

ভবঘুরে
[০৮/০৪/২০২২ ]
কবি সুকুমার রায় এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা "গন্ধ বিচার"
সিংহাসনে বস্‌ল রাজা বাজল কাঁসর ঘন্টা,
ছট্ফটিয়ে উঠল কেঁপে মন্ত্রীবুড়োর মনটা।
বললে রাজা, 'মন্ত্রী, তোমার জামায় কেন গন্ধ?'
মন্ত্রী বলে, 'এসেন্স দিছি- গন্ধ ত নয় মন্দ!'
রাজা বলেন, 'মন্দ ভালো দেখুক শুঁকে বদ্যি,'
বদ্যি বলে, 'আমার নাকে বেজায় হল সর্দি।'
রাজা হাঁকেন , 'বোলাও তবে- রাম নারায়ণ পাত্র।'
পাত্র বলে, 'নস্যি নিলাম এক্ষনি এইমাত্র-
নস্যি দিয়ে বন্ধ যে নাক, গন্ধ কোথায় ঢুকবে?'
রাজা বলেন, 'কোটাল তবে এগিয়ে এস শুক্‌বে।'...
এই কবিতা টা আমরা সবাই কমবেশি জানি।।।কিন্তু গন্ধের ব্যাপারে এত বলছি কেনো? কোনো বস্তুর প্রতি আমাদের ধারণা ও অনুভূতি টা অনেক সময় তার গন্ধের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে,শুধু বস্তু বলি কেনো,সময় ,ঋতু, স্থান,এমন কি ব্যক্তির প্রতি অনুভব,বা স্মৃতি ও গন্ধের সাথে জড়িয়ে থাকে,যেমন রজনীন্ধার কথা মনে আসলে তাকে গন্ধ ছাড়া ভাবতে পারি কি? আবার প্রত্যেক ঋতুর তার একদম নিজস্ব গন্ধ আছে,যেমন গরম কলে আম মকুল এর গন্ধ,পাকা আমের গন্ধ,বর্ষার শুরুতে শুকনো মাটির উপর প্রথম পড়া বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ,বর্ষা শেষের কদম ফুলের গন্ধ, শরতের ভোরে শিউলি ফুলের গন্ধ, ,বা প্রথম ভালোবাসার গন্ধ।এই সব অনুভূতি কিন্তু গন্ধ ছাড়া পঙ্গু । গন্ধ নিয়ে এতো বাকবকিনির কারণ ? হটাৎ এক গরমের সকালে আমি আর আমার সমস্ত রাইডের সাথী বিশ্বজিৎ কে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম জঙ্গল মহল এক্সপ্লর করবো বলে,আর জানার আগ্রহে যে জঙ্গলে মহুয়ার গন্ধ কেমন হয় ?শুনছিলাম যে জঙ্গলের পশু পাখিরাও নাকি মাতাল হয়ে যায় সেই গন্ধে।
সেই বার স্থির করা হলো যাওয়া হবে মুকুটমনিপুর ।কিন্তু রাস্তা টা একটু অন্য রকম হবে,আমরা যাবো মেদিনিপুর, ভাদুতালা, পিরকাটা, শাঁখাভাঙা, গোয়ালতোড়,শালবনি,পিংবনি, সারেঙ্গে,হয়ে মুকুটমনিপুর। আর ফিরবো ঝিলমিল,বেলপাহরি, বাঁশ পাহাড়ি,বন্দয়ান,ঝাড়গ্রাম,লোধাসুলী হয়ে।একদিনের টুর হিসাবে রাস্তা অনেক প্রায় ৫০০ কিমি।
এই বার যেহেতু আমরা ২ জন যাচ্ছি তাই ঠিক করলাম ভোর ২:৩০ বদলে ভোর ৩.০০ তে দেওড়া তে মীট করবো।এই বার মিট করার অবশ্য দরকার ছিল না।কারণ বিশ্বজিৎ আমাকে আমার বাড়ি থেকে ভোর ৩.০০ তে তুলে নিলো।প্রথম স্টপ নিলাম মেদিনীপুর ঢোকার মুখে, কাঁশাই নদী পেরিয়েই । সকাল হতে তখনও অনেক বাকি।একটু চা বিস্কুট খেয়ে আবার যাত্রা শুরু।কিন্তু কিছুদূর গিয়ে ভাদুতোলা থেকে বামদিকে ঢুকেই হটাৎ সবকিছু বিবর্তিত হয়ে গেলো । সমস্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ যেনো এক ঝটকায় ওলোট পালোট হয়ে গেলো।আমরা বাইক থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম দুজনে।
যদিও পুরপুরি গরম পড়েছে এখানে । কিন্তু জঙ্গলের মাঝে দেখলাম তখনও ভোরের হালকা কুয়াশার মোড়া প্রকৃতি কে,আর গায়ে শিরশিরে ঠান্ডা বাতাস লাগতে শুরু করলো।রাস্তায় শুধু আমি আর বিশ্বজিৎ,না কোনো গাড়ি ঘোড়া ,না মানুষজন,,আমরা কিছুক্ষন হতবাক হয়ে রাস্তার মাঝে বসে পড়লাম।ভোরের ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে ব্যাক প্যাক গুলো সামনের দিকে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু,রাস্তা অনেক সময় নস্ট করা যাবে না।কিন্তু কিছু রাস্তা অতিক্রম করার পরও দেখলাম চারিদিক প্রচন্ড স্তব্ধ।মাঝে মাঝে ছোট্ট ছোট্ট জনপদ পড়ছে জঙ্গল এর মাঝে মাঝে কিন্তু সমস্ত দোকান পাট বন্ধ।
রাস্তার দুই দিকে নতুন পাতা ভরা সালের জঙ্গল।তার বুক চিরে চলে গেছে মসৃণ কালো পিছের রাস্তা।
গোয়ালতোড় এর সামনে একটা দোকান পেলাম চা এর ,তাও তার একটা জানালা খোলা।কিন্তু চা হচ্ছে, আমরা বাইক দাঁড় করিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া ডিম সেদ্ধ,চা মুড়ি খেলাম।এবং তখন জানতে পরলাম এই ভীষণ নীরবতার কারণ । পুরো জঙ্গল মহলে মাওয়া বাদি বন্ধ চলছে।শুনে মনে বেশ ভয় করতে লাগলো।কারণ আমাদের যাওয়া এবং আসার রাস্তা পুরোটাই জঙ্গল মহল এর বুক চিরে।শুধু তাই নয় মুকুটমনিপুর ও জঙ্গল মহলের মাঝে পড়ে।কিন্তু ফিরে আসবো বলে তো যাই নি। আন্তঃপর এগিয়ে যাওয়া স্থির হলো।
কিলোমিটার এর পর কিলোমিটার বিস্তৃত জঙ্গল।মাঝে মাঝে অনেক ছাড়া ছাড়া খুব ছোট ছোট আদিবাসী জনপদ। জায়গা গুলো অত্যন্ত নিরিবিলি নাম শুনলেই ভয়ের উদ্রেগ হয় মনে,ভাদুতালা, পিরকাটা, শাঁখাভাঙা,
গোয়ালতোড়,শালবনি,পিংবনি, সারেঙ্গে, ইত্যাদি ইত্যাদি।দেখলাম জনপদ গুলোর মধ্যে সিআরপিএফ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান আর্মি ব্যারিকেড করে সেমি অটোমেটিক মেশিনগান নিয়ে আতদ্র প্রহরায় রত।
পুর জঙ্গল মহুয়ার মিষ্টি গন্ধে ম ম করছে। আদিবাসী পাড়ার শিশু থেকে বুড়ো সবাই ছোট ছোট ঝুড়ি হতে রসে ভরা টইটুম্বুর মহুয়া কুড়োতে ব্যাস্ত।পথের ক্লান্তি দুর করার জন্য সারেঙের জঙ্গলে কিছুক্ষন বসে পড়লাম দুজনে।জঙ্গল থেকে আদিবাসীরা মাটির হাঁড়ি ভর্তি তালের তাড়ি আর নদী থেকে ছাকনি্‌জালে ধরা চুনো মাছ ভাজা নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে কোন ভবঘুরে প্রথিকের আসায়।
আমরাও একটু চেখে দেখলাম। ঠা ঠা গরম এ যেনো অমৃত লাগলো।কিন্তু বসা যাবে না বেশিক্ষণ।সামনে রাস্তা আরো দুরূহ।সারেঙ্গের কাছে কাঁশাই নদীর উপর ব্রিজ নেই ,তাই বাইক পার করতে হবে নদীর উপর দিয়েই।জল বেশি নেই।কিন্তু বালি ভর্তি।বাইকের চাকা গুলো বারবার স্কিড করছে।খুব সন্তর্পনে পার হলাম নদী।সকাল ৮ টা তে পৌঁছে গেলাম মুকুটমনিপুরে।
পর্যটক বলতে শুধু আমরা দুজন।কোনো দোকান খোলা নেই।একটা টিফিন করার দোকান খুলেছে সাবে,,,বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া মুড়ি, শশা, আর দোকানে অনেক অনুরোধ করে ভাজিয়ে নিলাম দুটো করে ডিম।তাই দিয়ে সকালের ক্ষুদা নিবৃত্তি হলো।প্রথমে দেখলাম সোনাঝুরীর জঙ্গল।শান্ত ,শীতল মোহময়ী তার রূপ।তার মাঝে ছোট ছোট গভমেন্ট ডিলাক্স কর্টেজ।মনে হবে যেনো রূপকথার কোনো দেশ।ওখান থেকে বেরিয়ে প্রথম গেলাম অম্বিকানগরে অম্বিকা মাতার দর্শন করতে,পূজা দেওয়া পর প্রথম চিন্তা হলো দুপুরে খাবো কোথায়?
সবই তো বন্ধ।এক স্থানীয় লোকের বাড়িতে মাংস ভাত এর অর্ডার দিয়ে চললাম মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্ট এর উদ্দেশ্যে।অপূর্ব সুন্দর তার সৌন্দর্য্য চোখ জুড়িয়ে যায় দেখে।বেশ কিছু টা মোহনার দিকে এগিয়ে গিয়ে এক নির্জন পাহাড়ের কোলে জঙ্গলে বাইক দাঁড় করানো হলো
এখানে পাহাড় টা ঢালু হয়ে মিশেছে লকের জালে।সারা পথের ক্লান্তি দুর হলো লকের জালে স্নান করে।প্রায় ঘন্টা খানেক স্নান করে খওয়ার জন্য পূর্বে বলে আশা বাড়িতে গেলাম ভাত খওয়ার জন্য।ঝাল ঝাল মাংস এবং দেশি চালের ভাত সঙ্গে আলুভাজা। খওয়া শেষ করেই বেরিয়ে পড়লাম বেলপাহাড়ির উদ্দেশ্যে।
বেলপাহাড়ির মূল আকর্ষণ হল তার অসাধারণ সুন্দর রাস্তা।আর বেশ কিছু ছোট ছোট জংলী ঝর্ণা।রাস্তা অসাধারণ সাপের মতো আঁকা বাঁকা রাস্তা পাথুরে টিলা আর জঙ্গলের বুক চিরে চলে গেছে বহু দূর,আর তার সঙ্গে সঙ্গ দিয়েছে দুদিকের সাল,মহুয়ার জঙ্গল।মনে হবে যেনো অন্য কোনো দেশে চলে এসেছি।প্রথম স্টপ নিলাম ঘাগরা জলপ্রপাতে।ছোট জলপ্রপাত,আপন মনে বয়ে চলেছে,তার সঙ্গ দিচ্ছে আদিবাসী কিছু কচি কাঁচার দল,কিছুটা সময় কাটিয়ে পৌঁছে গেলাম ঢাঙ্গীকুসুম এ।এরপর সোজা একটানা ঝিলিমিলি হয়ে পোঁছে গেলাম ঝাড়গ্রামে । তখন প্রায় বিকাল ৩.০০ টা বেজে। দুপর এর রোদ আর গরম আমাদের কে বেশ কাহিল করে দিয়েছে।কিন্তু ঝাড়গ্রাম এর ঘন সালের জঙ্গল তখন আমাদের কে পরম মমতায় ছায়ার আঁচল ঘিরে রেখেছে। একটা ছোট দোকান খোলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম,আমের লস্যি,দই,আর কোল্ড ড্রিংকস খেলাম পেট ভোরে,আর বোতলে ভোরে নিলাম খোওয়ার জল।কিছু টা রাইড করে পৌঁছালাম লোধাসূলির জঙ্গল।তারপর খড়গপুর।এবার সেই... চেনা রাস্তা আর সেই পথেই ফিরতে হবে বাড়ি।।একদিনের অ্যাডভেঞ্চার শেষ,,,ঘরের ছেলের ঘরে ফেরার পালা।।মনের মাঝে সোনাঝুরির জঙ্গল,নাকে ভেসে আসছে মহুয়া আর নাম না জানা ফুলের সুবাস।চোখে তখনও ভাসছে বেলপাহিড়ির জঙ্গলের মোহময় রাস্তা।।।হটাৎ একটা গান ভেসে আসলো।।
"চল যাব তোকে নিয়ে
এই নরকের অনেক দূরে,
এই মিথ্যে কথার মেকী শহরের সীমানা ছাড়িয়ে......"
(সমাপ্ত)

ভবঘুরে [১৬.০৩.২০২৩ ]         যেখানে সময় থেমে যায়, সেখানে জীবন স্তব্ধ হয়,সেই জীবন আমরা চাই না। সময় আর জীবনের থেমে থাক...
16/03/2023

ভবঘুরে [১৬.০৩.২০২৩ ]
যেখানে সময় থেমে যায়, সেখানে জীবন স্তব্ধ হয়,সেই জীবন আমরা চাই না। সময় আর জীবনের থেমে থাকা আমাদের না -পসন্দ। জীবন আমাদের কাছে শাশ্বত ,বহমান, যেন স্রোতস্বিনী নদীর মতো। নদী যেমন তার প্রতি বাঁকে কত রহস্য লুকিয়ে রাখে,জীবন ও তেমন। নিশ্চল,আর নিস্তরঙ্গ জীবন এর স্বপ্ন কেই বা দেখতে চাই বলুন....
এখানে কবির একটা গান বার বার মনে পড়ে , ঠোঁটেও আসে"আমি চঞ্চল হে
আমি সুদূরেরও পিয়াসি,.....ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর,
তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি,
মোর ডানা নাই, আছি এক ঠাঁই
সে কথা যে যাই পাশরি,
আমি চঞ্চল হে
আমি সুদূরেরও পিয়াসি..."। তবে অসীম কে অনুভব করা এই সসীম, ক্ষুদ্র জীবের কম্মো নয়। তবে এইবার অসীম আর সুদূর কে অনুভব করার নেশায় সবাই আরো একবার বেরিয়ে পড়লাম। যাত্রাপথ খড়গপুর,ঘাটসিলা, টাটানগর,চান্ডিল,রাঁচি, হুড্রু,দশম ,হয়ে পাত্রাতু ভ্যালি। আর ফিরবো পুরুলিয়া ,বেলপাহারি হয়ে।এটা আমাদের এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে লম্বা জার্নি হবে...প্রায় ১০০০ কিমি।সময় মাত্র দু দিন।
২৪.০২.২০২৩. ভোর ২.৪৫ এ সবাই দেওড়া তে উপস্থিত হলাম...এইবারের সফর সঙ্গী চন্দন, বিশ্বজিৎ,গোপাল, শুভঙ্কর, পুস্পেন্দু দা,এবং আমি অনুপম... পাস্পেন্দু দা এই প্রথমবার আমাদের সফর সাথী হলো.একটা ভয় সবার মনেই ছিল "ভোর রাতে যদি কুয়াশা হয়, তা হলে মারাত্মক অসুবিধা হবে"পূর্ব আলোচনা অনুযায়ী আমাদের প্রথম স্টপ হবে খড়গপুর...কিন্তু পাঁশকুঁড়া ছাড়ার পর মনের ভয় টা বাস্তব এ রূপ নিলো,এত কুয়াশা যে বাইক এর স্পীড ৩০ কিমি/ ঘণ্টা তে নেমে এলো, আর বাইক এবং আরহী রীতিমত কুয়াশা স্নান করতে থাকলো,জ্যাকেট পত্র ভিজে চুপ চুপে হয়ে গেলো,তার উপর দোসর হলো ভোরের ঠান্ডা হাওয়া,কোনো রকমে খড়গপুর পৌঁছে একটা চা দোকানে দাঁড়ানো হলো,চা দোকানের আঁচে শুকিয়ে নেওয়া হলো জ্যাকেট।এরপর লোধাসুলি জঙ্গল অতিক্রম করে ঘাটসীলা ছাড়িয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় ধাবা দেখে দাঁড়ানো হলো ব্রেকফাস্ট এর জন্য। খাবার বলতে । লিট্টি আলুচোখা আর বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া ডিম সেদ্ধ, আর চা।যা হোক করে উদর পূর্তি করে আবার যাত্রা শুরু,গন্তব্য সুবৃহৎ চন্ডিল ড্যাম,প্রায় সকাল ৯:৩০ নাগাদ পৌঁছে গেলাম চান্ডিল ড্যাম এ। কোনো পর্যটক এর ভিড় নেই,প্রকৃতি কে একেবারে আপন করে পেলাম । আনন্দে পথের ক্লান্তি মুছে গেলো, চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা বিশাল ড্যাম,কিছু হাঁস আর পরিযায়ী পাখি খেলে বেড়াচ্ছে আপন খেয়ালে,কানে ভেসে আসছে পাখির কলতান,হাওয়া আর পাতার শব্দ, কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম,কিছু সেল্ফি তুলে আবার যাত্রা শুরু... জামশেদপুর, টাটা নগর,ডিমনা ছাড়িয়ে পৌঁছাতে হবে হুড্রু জলপ্রপাতে।
হুড্রু জলপ্রাত এ পৌঁছালাম সকাল ১১:৩০ নাগাদ,জল খুব একটা বেশি নেই, তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো তুলনা হয় না । কিছু স্থানীয় আদিবাসী মহিলারা পেয়ারা ,কুল,চানা ইত্যাদি বিক্রি করছে জলপ্রাত এর সামনে,আমরা কিছু পেয়ারা কিনলাম,তাই দিয়েই ক্ষুদা নিবৃত্ত করলাম সবাই,, খুব ঠান্ডা আর তাজা,সবাই পেট ভোরে খেলাম।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তীব্রতাও বাড়তে লাগলো,তাই সবাই মিলে ঠিক করা হলো রাঁচি শহরে না ঢুকে বাইপাস হয়ে চলে যাবো পাত্রাতু ভ্যালি । পাত্রাতু ভ্যালি পৌঁছালাম দুপুর ১:৩০ নাগাদ। হেয়ারপিন বাঁকে বাইক চালানোর অ্যাডভেঞ্চার সবাই খুব উপভোগ করলাম,কিন্তু সূর্য তখন মাথার ওপর,,তাই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হওয়ার জন্য হোটেল এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম সবাই ,হোটেল শিবম প্যালেস এ পৌঁছলাম দুপুর ২:৩০ নাগাদ।
হোটেলে পৌঁছে, বাইক গুলো পার্ক করে,কোনরকমে হোটেলের বিছানা নিলাম,সবাই একে একে স্নান সম্পন্ন করলাম,বেশ ঠান্ডা জল,ফ্রেশ হবার পর সবাই দুপুরের খাবার খেতে বাইরে বেরোলাম। খাবার বলতে ভাত ,চিকেন। রান্না মোটামুটি ,তবে খিদে পেটে সবই অমৃত লাগলো।সবাই আলোচনা করে ঠিক করা হলো বিকেলে ঘুম থেকে উঠে পাত্রাতু লেকে বেড়াতে যাওয়া হবে, কিন্তু এত লং ড্রাইভ এর ক্লান্তি কাউকেই উঠতে দিল না।বিকেলে একটু বাজারে ঘুরাঘুরি করে , সন্ধ্যায় মাংস রুটি খেয়ে তাড়াতাড়ি বিছানা নিলাম...বেশ ঠান্ডা ওখানে,কম্বল মুড়ি দিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম...কারণ ভোরে উঠে আবার যাত্রা শুরু করতে হবে। ভোরে উঠে সবাই স্থির করলো, আগের দিন দুপুরে যেহেতু পাত্রাতু ভ্যালি ভাল করে ঘোরা হয় নি , তাই আজ খুব সকালে পাত্রাতু ভ্যালি দিয়ে যাত্রা শুরু হবে। যেমন কথা তেমন কাজ,সবাই বেরিয়ে পড়লাম প্রথম ভোরের মিষ্টি আলোয় সিক্ত পাত্রাতু ভ্যালিকে দেখবো বলে। কিন্তু একটা ঘটনা ঘটলো,, আমাদের বন্ধু চন্দন এর হেলমেট টা খুঁজে পাওয়া গেলো না...আমরা সবাই নিরুপায় হয়ে ভাবতে লাগলাম কিভাবে হেলমেট এর ব্যাবস্থা করা যায়। কারণ বাজার খুলতে তখনও ৩ ঘণ্টা বাকি,অবশেষে এক পেট্রোল পাম্পের সহৃদয় কর্মচারী তার নতুন হেলমেট টি আমাদের কে কিছু পয়সার বিনিময়ে দিলেন,,, আর সেই ফাঁকে পরিচয় হয়ে গেলো এক মিসুকে বাঙালি কাকুর সাথে,,,ওখানে চা বিস্কুট খেয়ে সবাই খুব খুশি হয়ে এগিয়ে চললাম পাত্রাতু ভ্যালির দিকে,,,সকালে সে এক অন্য রূপ ,,, ঠান্ডায় হাত কনকন করছে...আর তারই মধ্যে হাজির হয়েছে সমস্ত সুপার বাইকারের দল রাইড করার জন্য। আমরা খুব উপভোগ করলাম ,,,কিছু ছবিও তুললাম,,,কিন্তু দেরি করা যাবে না,,,কারণ এর পরের গন্তব্য লাল পলাশের দেশ পুরুলিয়া । রাস্তা অনেক ,অগত্যা বেরিয়ে পড়লাম পাত্রাতু ভ্যালি থেকে পুরুলিয়ার উদ্দশে,,,মনে মনে খুব উত্তজনা "পলাশের জঙ্গল তো সিনেমা,টিভি তে অনেক দেখেছি,কিন্তু এইবার সচক্ষে দেখবো",,,রাঁচি থেকে পুরুলিয়া যাওয়ার রাস্তার বর্ণনা কি এর করবো,,,সে এক অবর্ণনীয় সৌন্দর্য ,,,কোথাও দেখি রাস্তার দুই ধারে সমস্ত জঙ্গল এর নাম না জানা গাছ,,,কিন্তু তার পাতা সবুজ এর বদলে টকটকে লাল,,এই প্রথম বার সেই দৃশ্য দেখে চোখ ধাঁদিয়া যাওয়ার উপক্রম ,..আবার কখনো দেখি রাস্তার দুই ধারের পাহাড় জঙ্গল ভরে আছে আগুন রাঙা পলাশ এ..আর ভাবি সিনেমা টিভি চেয়ে এ ঢের ঢের বেশী সুন্দর,,,এই সৌন্দর্য কে লেন্স বন্দী করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়,,,সবাই শুধু অভিভূত ,আর অবাক হয়ে হ্যাঁ.... করে তাকিয়ে থাকি,, আর কিছু ছবিই তুলি।।।পুরুলিয়া পৌঁছে প্রথম বাইক দাঁড় করানো হয় চরীদা গ্রামে।এর আগেও আমি পুরুলিয়া এসেছি দুই বার কিন্তু এই প্রথম বার চরিদা তে এলাম,,প্রথম বার দেখলাম স্থানীয় অধিবাসী দের মুখোশ তৈরির কৌশল।কিছু কেনাকাটা করে পৌঁছে গেলাম বাঘমুন্ডি।ওখান থেকে অযোধ্যা পাহাড়। লোয়ার ড্যাম , আপার ড্যাম,মার্বেল লেক ঘুরে ,খয়রা বেড়া ড্যাম এ সবাই উপস্থিত হলাম স্নান করার জন্য। দুপুরের তীব্র দাবদাহ,,,তার মধ্যেই ঠান্ডা ,শীতল,স্বচ্ছ,লকের জলে স্নান করার যে কি অনুভূতি তা বোঝাতে পারবো না।সবাই স্নান সেরে সতেজ হয়ে স্থানীয় হোটেলে ভাত আর মাংস খেয়ে ,বেরিয়ে পড়লাম বেলপাহাড়ির উদ্দেশ্যে,,যখন বেলপাহাড়ি পৌঁছালাম সন্ধ্যা হব হব করছে,,,কিন্তু রাস্তার অ্যাডভেঞ্চার ,আর সৌন্দর্য আমাদের কে অভিভূত করলো, বেলপাহাড়িতে একটু রেস্ট নিয়ে চা আর বিস্কুট টিফিন করে বাড়ির পথে রওনা দিলাম। তবে পথে কিছু দুঃখের ঘটনাও ঘটলো,পুষ্পেন্দু দার মোবাইল হোল্ডার থেকে পড়ে স্ক্রীনটা ভেঙে গেলো,চন্দন এর বাইক অভার হিট হয়ে বন্ধ হলো কিছু ক্ষণ এর জন্য,,অবশ্য ৫ মিনিটের মধ্যে স্টার্ট নিয়ে স্ববিভিক হলো,শুভঙ্কর এর বাইকের হেড লাইট কেটে গেল। খড়গপুর বাইপাশে সবাই পৌঁছালাম রাত ৯.৩০ তে।এবার সোজা বাড়ির পথে রওয়ানা,,
মনরে মাঝে দুঃখ সুখের স্মৃতি মিশে একাকার,,,তাও যেনো সুখের স্মৃতি বহুগুণে ছাপিয়ে গেছে দুঃখ কে,,,মনের মাঝে আগুন রাঙা পলাশ,শিমুল,,,কানে ভাসছে পাহাড়ি ঝর্ণা আর পাখির কলতান,, আর বন্ধুদের খুনসুটি,,,,বারবার মনে হচ্ছে সেই গানটা
" বন্ধু চল.. রোদ্দুরে..
মন কেমন.. মাঠজুড়ে..
খেলবো আজ ওই ঘাসে
তোর টিমে তোর পাশে

ফুটকড়াই, অ্যান্টেনা, হাফ চিঠি, হাফ প্যাডেল
আয়না আর জলপরীর গল্প বল
বন্ধু চল..
সাপ লুডো, চিত্রহার, লোডশেডিং, শুকতারা
পাঁচসিকের দুঃখদের গল্প বল
বন্ধু চল..
বন্ধু চল... বলটা লে.
রাখবো হাত তোর কাঁধে
গল্পেরা অই ঘাসে
তোর টিমে তোর পাশে" ।।
( সমাপ্ত )

[ 02 Sep 2021 ] ( ভবঘুরে )(পর্ব - ২)               খুব সকাল সকাল বাইকে মালপত্তর বাঁধাছাঁদা করে যাত্রা শুরু হয়ে গেল। প্রথ...
28/06/2022

[ 02 Sep 2021 ] ( ভবঘুরে )
(পর্ব - ২)
খুব সকাল সকাল বাইকে মালপত্তর বাঁধাছাঁদা করে যাত্রা শুরু হয়ে গেল। প্রথমে গেলাম খেমকূট ড্যাম। দেখলাম লেকের জলে ডুবে থাকা প্রাচীন এক মন্দিরের চূড়া, লেকের জলে ফুটে রয়েছে সারি সারি লাল শালুক । আর অসাধারণ প্রাকৃতিক সুন্দর্য । ওখান থেকে বেরিয়ে আমরা সকালের টিফিন সেরে যাত্রা শুরু করলাম বলাসোরের উদ্দেশে, গন্তব্য চাঁদিপুর সি বিচ।
চাঁদিপুর পৌঁছলাম সকাল ১০:০০ টা নাগাদ।আশ্চর্য সুন্দর শান্ত স্নিগ্ধ এই চাঁদিপুর। এখানকার সাথে দীঘা ও পুরীর সমুদ্রের কোনো মিল নেই। এখানে ঢেউয়ের উচ্ছাস নেই, তার বদলে নিস্তরঙ্গ নিশ্চুপ সমুদ্র।ওই খনেই অবস্থিত D.R.D.O এর হেড অফিস । কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর আমরা গেলাম ইমামি জগন্নাথ মন্দিরে। যার ডাক নাম দ্বিতীয় পুরী। সুন্দর শান্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, শিল্পীর দক্ষ ও নিপুন হাতে তৈরি অপূর্ব সুন্দর সব ভাস্কর্য । কিন্তু প্রচন্ড রৌদ্রের জন্য বেশিক্ষন দাঁড়াতে পারলাম না। বলাসরের বাজারে বাড়ির জন্য কিছু কেনাকাটা সেরে যাত্রা করলাম সুপ্রাচীন মন্দির ক্ষীরচরা গোপীনাথের উদ্দেশে ।
লকডাউনের জন্য মন্দিরে ভিড় কম। এখানে বিখ্যাত প্রসাদ হলো মাটির ভাঁড়ে রাখা ক্ষীর। দুর্ভাগ্য বসত আমাদের সেই প্রসাদ পওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হলো। এবার বাড়ি ফেরার পালা। বালাসর থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারে এক ধবাতে ভাত খাওয়া। বাইক স্টার্ট দিলাম, রাস্তা অনেক ঠিক হলো আমি আর মান্না ড্রাইভ করবো পিলয়ন হবে গোপাল ও শুভঙ্কর । একটানা তিনশো কিলোমিটার বাইক চালিয়ে প্রথম স্টপ নিলাম ডেবরার কাছে। কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্টপ কোলাঘাটের শের-ই-পাঞ্জাব।
পূর্ব কথা অনুযায়ী গোপাল আমাদের সবাইকে কফি খাইয়ে কিছু সেলফি নিয়ে বাড়ি পৌঁছলাম সন্ধ্যায়।

Address

Deorah, Sasati, Shyampur
Howrah
711312

Telephone

+919830623705

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when ভবঘুরে মন - Vabaghure Mon posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to ভবঘুরে মন - Vabaghure Mon:

Videos

Share


Other Tourist Information Centers in Howrah

Show All