13/01/2020
।। এক কাপ চায়ে - মাকালু , লোৎসে ।।
প্রথম গার্লস গ্যাং trip ছায়াতালে শেষ করেই এক্কেবারে sandakphu তে ল্যান্ডিং করা টা ধৃষ্টতা মনে হয়নি তা নয় ।। কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিতে মন্দ লাগে না ।।
Ruksack ভর্তি করে স্বপ্ন নিয়ে মানেভানজন যখন পৌঁছলাম আকাশের কপালে ভাঁজ ।। মুড খুব খারাপ।। যেন facebook এ পরিচিত মেঘবালিকা টি হঠাৎ ই অচেনা , তাই আকাশ বাবু র মুড খারাপ।। যাক তাকে তার ভরসায় ছেড়ে আমরা স্নান, খাওয়া দাওয়া সেরে ভাবলাম গুটু গুটি পায়ে ইতি উতি উঁকি মারবো।।
কিন্ত বাধ সাধলো বৃষ্টি , ঝুপ ঝুপ করে পাইনের closet এ , ধূসর মানেভানজন তখন জল , কাদা , স্যাত স্যাতে মন খারাপের দস্তানা পড়েছে।। কি আর করা , একটি ঘরে বারোজন crazy souls আড্ডায় মনো নিবেশ করলাম।। শুরু হলো গান , গপ্পো ।। গল্পের গাড়ি ছুটছে , হাওয়ায় উড়ছে বিভিন্ন গল্প , নিজেদের জীবনের টুকরো টাকরা গপ্পো পড়ছে কথার মাধ্যমে ঘরের মেজেতে । । খুলছে মন , বারোটি মেয়ে , বেশির ভাগ ই একে ওপর কে চেনে না ওই হোটেল প্রধানের ঘরে একে অপরের পরম আত্মীয় হয় উঠছে একটু একটু করে ।।
বৃষ্টি র অল্পবিরাম হতেই মুহূর্ত ব্যয় না করে সিঙ্গালীলা র বুকে আশ্রয় নেওয়া পাইনের কাছে হাঁটা লাগলাম ।। ভেজা , নরম আবহাওয়া , পাতার শিরা বেয়ে বৃষ্টির জলের পরশ । । ওই নীচে দেখা যাচ্ছে সদ্য স্নাত , সবুজে মোড়া একটা ছোট্ট valley ।। ঘন সবুজের মাঝে আরো একবার নিজেদের প্রাণে জীবন সঞ্চার করলাম , যাকে বলে mouth to mouth respiration.
সময় যতই গুটি গুটি পায়ে এগোয় ততই বদলায় আকাশের মেজাজ । রাতের গভীরতা র সাথে বাড়তে থাকে বৃষ্টির দাপট ।। সারারাত বৃষ্টি চলে ।। সকালে সকলের মনে চাপা ভয় ,আদৌ উপরে যেতে পারবো তো ? যাওয়া কি ঠিক হবে ?? নানা রকম সংশয় ইতি উতি উঁকি দিচ্ছে সকলের মনে।। আমি ও dicey ।। নিচে গিয়ে ড্রাইভার , locals দের সাথে কথা বলে বুঝলাম , অতটা ভয় পাবার কোনো কারণ নেই ।। আমার গ্রুপ মেম্বার্স রাও অন হাই জোশ ।
ছুটলো ল্যান্ড রোভার সিঙ্গালীলা ন্যাশনাল পার্ক এর জঠরের মধ্যে দিয়ে ।। যত এগোয় ততো ই চমক লাগে ।। শ্যাওলা ধরা গাছ , কুয়াশার চাদরে ঢাকা , কেমন যেনো রহস্যের বলয়ে মোড়া ।। আরো একটু এগোতেই গুরাস এর সম্ভার, কোথাও লাল , কোথাও পিঙ্ক , জমাট সবুজের বুকের মধ্যে লাল গুরাস, ohhh just heavenly .. শুধু গুরাস কেনো , লাস্যময়ী ম্যাগনলিয়া পশার সাজিয়ে রেখেছে চারিদিকে ।। একবার চোখ বুজিয়ে ভাবুন হালকা - ঘন সবুজ বন , তার ই মাঝে কোথাও সাদা ম্যাগনলিয়া কোথাও বা লাল গুরাস, নৈসর্গিক ।। রহস্যময়ী কালাপখরি রাস্তায় পড়লো, ঘন মেঘের চাদর গায়ে।। কি মনে হলো তার কেজানে, হয়তো বারোজন পাগল মেয়ে দের দেখার লোভ সামলাতে না পেরে, চাদর খুলে দিল গা থেকে।। পরিষ্কার হলো আকাশ।। How's the Josh , বলে উঠলো ব্রজ, সবাই একসাথে বললাম HIGH..ON...
যখন সান্ডাকফু পৌঁছলাম , বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়েছে , Sherpa Chalet এ সব ব্যবস্থা আগে থেকেই করা ছিল।। ছোট্টো ম্যানেজার ডিকি , আমাদের ঘর দেখিয়ে দিল।। পরিপাটি ব্যবস্থা , well maintained room এন্ড washroom।। পুরো wooden decor, এই hostile যায়গায় এই ব্যবস্থা আশা করিনি ।। সকলেই তখন পেটের ডাকে সাড়া দিচ্ছে , রূপেশ বললো মৌমিতা ম্যাডাম আজ কা লাঞ্চ খিচরী আউর অমলেট ।। বেশ কথা।। ওই ঠান্ডায় , অমৃত ।। খাবার পর্ব শেষ করে চললো guitar এ সুর তুলে sanjoger নেপালি গান, তারপর শিগরি ঘিরে আগুনের সাথে আলাপ চারিতা আর কফি কাপে চুমুক।।। রাত যত এগোয় জমাট হয় পাহাড়ি পরিবেশ, থমকে যায় আকাশ ।। শুরু হয় দমকা হাওয়া আর snow fall. Rupesh এসে ডেকে নিয়ে যায় বাইরের বারান্দায় ।। প্রকৃতি আপন মনে তান্ডব চালাচ্ছে, আলোর ছটা নেচে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের খাঁজে , বিদ্যুতের দ্যুতি খান খান করে দিচ্ছে সামনের পাহাড়ের বুক ।। তার ই মাঝে দূরে দেখা যাচ্ছে একটা পাহাড় , গলায় তার হীরের নেকলেস ।। হাজার হাজার হীরে পাহাড়ের গায়ে চিক মিক করছে , ওটা দার্জিলিং ।।
প্রকৃতির লীলা খেলা , চললো সারারাত ।। কোনো এক অনিবার্য কারণে আমরা সবাই রাত টা জেগেছিলাম , তাই চাক্ষুস দেখলাম প্রাকৃতির মাতলামি , cerebellum অফ করে শুধুই পাগলের মতো তান্ডব চালালো সারারাত।। সান্ডাকফু গ্রাম টি পুরো ঢেকে যেতে দেখলাম বরফে।। আমি , পৌলামী আর শর্মিষ্ঠা দি মাঝরাতে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখলাম ।। আমাদের মধ্যে একজন অসুস্থ থাকায় , তাকে TOILET এ নিয়ে গেছি, অপেক্ষা ই বাইরে আমরা তিনজন , জানালার দিকে চেয়ে আছি মূগ্ধ হয় । ঝড় , বৃষ্টি থেমে গেছে ক্ষনিকের জন্য , দূরে দার্জিলিং ঝিক মিক করছে আর কালো কালো পাহাড় ঢেউ খেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে , হঠাৎ কালো ঢেউ এর মধ্যে থেকে কমলা- হলুদ রঙের আলোর ছটা , fraction of second seen and lapsed .. মহাজাগতিক রহস্যের বলয় আবৃত্ত তখন সামনের অনাবৃত সব পাহাড়ের দল ।। কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝছি না।। আবার 6 জোড়া চোখ দেখলো সেই রঙের নাচ পাহাড়ের খাঁজে রাল , মসৃন রাতের আড়ালে। ।অবাক চোখে দেখলাম , অনুভূতির জাগরণের আগেই হারিয়ে গেল সেই আলো পাহাড়ের বুকের ভিতর ।।
ভোর তখন 5:30 , কে যেন গায়ে হাত রেখে বললো , ওঠো ।। একলাফে বিছানা ছেড়ে জানলায় গিয়ে দাঁড়াতেই আমি পাগল হলাম ।। ছুটে গিয়ে সব কটা কে ডাকলাম, ওরে ওঠ ,যার জন্য আসা, সে যে রূপের ডালি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায় ।।
চোখে জল সকলের , সেই জলে কাঞ্চনজঙ্ঘা , মাকালু , লহোৎসের প্রতিচ্ছবি ।।
লজ্জিত- স্মিত কমলা রঙের সূর্য একটু একটু করে গায়ে এসে পড়ছে সেই বিখ্যাত পর্বতশ্রেণীর।।
তখন এক কাপ চায় - মাকালু , লহৎসের আর বাকিরা ।।।।।