01/08/2020
নিজামের শহর হায়দ্রাবাদ
মুসি নদীর তিরে তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দ্রাবাদ। ১৫৯১ খ্রিষ্টাব্দে গোলকন্ডার পঞ্চম নৃপতি কুতুব শাহ এই শহরটি পত্তন করেন। হায়দ্রাবাদকে ভালো করে দেখতে হলে এখানে কমকরে তিনদিন থাকতেই হবে। মুসি নদীর দক্ষিণপাড়ে সালার জং মিউজিয়াম। নিজামের প্রধানমন্ত্রী নবাব মির তুলুব আলি খাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগৃহীত মূল্যবান সব সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে। সালার জং থেকে বাজারমুখী পথে চারমিনার। কুতুব শাহ নির্মিত এই ঐতিহাসিক স্মারকটি চারটি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ১৮০ ফুট। চারমিনার থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে সামান্য দূরে মক্কা মসজিদ। কথিত আছে সুদুর মক্কা থেকে ইট এনে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল। হায়দ্রাবাদ আর সেকেন্দ্রাবাদ শহরের মাঝখানে হুসেনসাগর লেক। রাতের আলোকমালা লেকের পরিবেশকে মোহময় করে তোলে। সান্ধ্য ভ্রমণের আদর্শ পরিবেশ। লেকের ঠিক মাঝখানে বুদ্ধের মনোলিথিক স্ট্যাচু। লেকের বুকে বোটিং করা যায়। হুসেন সাগরের পাশেই লুম্বিনী পার্ক।
কিভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে সরাসরি সেকেন্দ্রাবাদ যায় ১২৭০৩ ফলকনামা এক্সপ্রেস (ছাড়ে সকাল ৭.২৫ পৌঁছায় পরদিন সকাল ৯.১৫)। ১৮৬৪৫ ইস্টকোস্ট এক্সপ্রেস (বেলা ১১.৪৫ পৌঁছায় পরদিন বিকাল ৫.১০)। এছাড়াও আকাশপথে দেড়ঘন্টার মধ্যে হায়দ্রাবাদে পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন
হায়দ্রাবাদে রাত্রিবাসের জন্য রয়েছে তেলেঙ্গনা পর্যটনের হারিথা তারামাটি বারাদরি রিসর্ট, ভাড়া ২০০৯-৩৫৪২ টাকা, যোগাযোগ- ৯৮৪৮৮২৭১০২। হোটেল ডেকান কমফোর্ট, ভাড়া ৮০০-১২০০ টাকা, যোগাযোগ- ৯০৩০০৪৪৪৭৪। হোটেল রাজধানী, ভাড়া ১৭০০-২৪০০ টাকা, যোগাযোগ- ৯২৯০৮২৬৬৩৯। হোটেল হেরিটেজ ইন, ভাড়া ১৮০০-৪০০০ টাকা, যোগাযোগ- ০৪০-৬৬৪৮৮৫৮৮। হোটেল মহাবীর, ভাড়া ৮২৫-১৭০০ টাকা, যোগাযোগ- ০৪০-২৭৫৬৮৬১১। হোটেল শিল্পী গ্র্যান্ড, ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা, যোগাযোগ- ৯৮৪৯৩৬৪৬৪৩।
গোলকোণ্ডা ফোর্ট
হায়দ্রাবাদ শহর থেকে ১১ কিমি পশ্চিমে গোলকোন্ডা ফোর্ট। কাকতীয় বংশের নৃপতি গণপতি এই ফোর্টটি তৈরি করেন। এর নির্মাণশৈলীতে অভিনবত্ব রয়েছে। এর প্রবেশমূল্য ১৫ টাকা। প্রত্যেকদিন সন্ধ্যায় এখানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয়। দুর্গের বানজারা গেট থেকে ১ কিমি উত্তরে ফলবাগিচায় ঘেরা ব্রাহিমবাগে সমাধিস্থ রয়েছেন ৭ জন কুতুবশাহী নৃপতি। হিন্দু-মুসলিম-পাঠান স্থাপত্যে নির্মিত এই কারুকার্যময় সমাধিগুলি অনবদ্য। গোলকোণ্ডা থেকে ৩ কিমি উত্তরে শিল্পরমম লাগোয়া চেরুভু লেক। লেকের পাড়ে তেলেঙ্গানা পর্যটন লেক রিসর্ট, রেস্তোরাঁ গড়েছে। দুর্গের মক্কা তোরণ দিয়ে বেরিয়ে ডান হাতে একটু এগোলেই ওসমান সাগর লেক। ইসা নদীর বন্যা থেকে বাঁচাতে ১৯০৮ সালে বাঁধ দিয়ে এই লেক তৈরি করা হয়। শহরের পানীয় জল আসছে এখান থেকে। লেকের ধারে বাগিচা, গলফ কোর্স, ওয়াটার স্পোর্টস সহ একাধিক পর্যটক মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা এই নেহেরু জুওলজিক্যাল পার্ক। প্রায় তিন হাজার ধরনের প্রজাতির পশুপাখী রয়েছে এখানে। এখানেই তৈরি হয় এশিয়ার প্রথম লায়ন সাফারি পার্ক।
হায়দ্রাবাদের খানাপিনা
হায়দ্রাবাদের প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নবাবী কৃষ্টির নানান খাবারের দোকান। হায়দ্রাবাদের কংগ্রেস কার্যালয় গান্ধী ভবনের পাশের রাস্তায় আদাব রেস্টুরেন্টে দম বিরিয়ানি আর দম চিকেন অবশ্যই খেয়ে দেখবেন। আবিদ রোডের রেনবো রেস্টুরেন্টে মটন বিরিয়ানি আর মিরচি কা সালামের সুনাম রয়েছে খাদ্যরসিক মহলে। এদের কাবাব, কুলচা আর হালিমও বেশ নামজাদা। চার মিনারের কাছে মদিনা আর শাদাব রেস্টুরেন্টেরও সুনাম রয়েছে বিরিয়ানি পরিবেশনে।
হায়দ্রাবাদের বিকিকিনি
নবাবী শহর হায়দ্রাবাদের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে বিকিকিনির নানান পসরা। হায়দ্রাবাদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে সংগ্রহ করতে পারেন হস্তশিল্পের নানান সম্ভার, রকমারি পুতুল, অ্যাশট্রে, চন্দন কাঠের খেলনা, হিমরু ব্রোকেড শাড়ী, বিদরির রকমারি সম্ভার প্রভৃতি। কেনাকাটার জন্য সুলতান বাজার, লাড বাজার, বসিরবাগ কিংবা আবিদ সার্কেলের দোকানগুলি আদরণীয় হবে। তেমনি এমজি রোডের বাজারের দোকান থেকে কিনতে পারেন মুক্তো ও নানান আভরণ।
রামোজি ফিল্ম সিটি
হায়দ্রাবাদ থেকে ৪০ কিমি দূরে হায়দ্রাবাদ ৪০ কিমি দূরে হায়দ্রাবাদ ভ্রমণের অন্যতম সেরা আকর্ষণ রামজি ফিল্ম সিটি। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫.৩০ পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য ১১৫০ টাকা। নিজেরদের উদ্যোগে গাড়ি করে যাওয়া যেতে পারে। আবার যারা কম খরচে যেতে চান তারা হায়দ্রাবাদের কোটি ওমেন্স কলেজ বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে করে যেতে পারেন। তেলেঙ্গনার বিভিন্ন শহর থেকেও বাস যাচ্ছে রামোজিতে। তেলেঙ্গনা পর্যটন ও রামোজি দর্শনের প্যাকেজ ট্যুর করায়।