27/09/2024
দূরে চারিদিকে পাহাড়ের পরিখা, যেন সেইখানে পৃথিবী শেষ হইয়া গিয়াছে। সেই পরিখার নিম্নে গাঢ় ছায়া, অল্প অন্ধকার বলিলেও বলাযখয়। তাহার পর জঙ্গল ষ। জঙ্গল নামিয়া কারণে স্পষ্ট হইয়াছে। জঙ্গলের মধ্যে দুই-একটি গ্রাম হইতে ধীরে ধীরে ধুম উঠিতেছে, কোনো গ্রাম হইতে হয়তো বিষন্নভাবে মাদল বাজিতেছে, তাহার পরে আমার তাঁবু, যেন একটি শ্বেত কপোতী, জঙ্গলের মধ্যে বসিয়া কী বাড়িতেছে। আমি অন্যমনস্কে এই সকল দেখিতাম; আর ভাবিতাম ' এই আমার দুনিয়া'।
"পালামৌ"
-সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
শতাব্দী পূর্বে সাহিত্যিক সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এইভাবেই নিজের লেখায় পালামু জঙ্গলের বর্ণনা দিয়েছেন। পালামু সহ ঝাড়খন্ডের সবুজে ভরা জায়গাগুলো আজ এতদিন পরেও পর্যটকদের কাছে সমান জনপ্রিয়। ঝাড়খণ্ড রাজ্য তৈরি হওয়ার অনেক আগে থেকেই পালামু, রাঁচি, হাজারিবাগ বিহারের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র রূপে খ্যাত। বাঙালি পর্যটকদেরও এই জায়গাগুলো নিয়ে নস্টালজিয়ার শেষ নেই। সত্যজিৎ রায় হোক বা বুদ্ধদেব গুহ, নিজেদের কাজকর্মে বারবার এই জায়গাগুলোর নাম ঘুরে ফিরে এসেছে । বর্তমান ঝাড়খন্ডের পাহাড় জঙ্গলের কোলে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যাওয়া মানে শরীর আর মনে অন্যধরণের এক শান্তি খুঁজে পাওয়া। আগামী বর্ষা বা শীতে রোজকার ব্যস্ত জীবন থেকে বেরিয়ে কটা দিন শান্তিতে কাটাতে চাইলে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন ঝাড়খণ্ড থেকে। ঘোরাঘুরির সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা ও তাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি যোগ করে বাড়তি আকর্ষণ। সঙ্গে রয়েছে আরণ্যক জীবনের হাতছানি। থাকার জন্য রয়েছে বেতলা, দলমা, মারোমার সহ বিভিন্ন জায়গায় বনদফতরের নিজস্ব পর্যটন আবাস। তার সঙ্গে বাড়তি আকর্ষন হিসেবে রয়েছে ট্রিহাউস। এছাড়া ঝাড়খণ্ড পর্যটন দফতরের নিজস্ব হোটেল রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি হোটেল ও রিসর্ট। সব জায়গায় রয়েছে খাওয়ার ব্যবস্থা। ঘোরার জন্য ঝাড়খণ্ডে বিভিন্ন সার্কিট রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে #রাঁচি_নেতারহাট_বেতলা_ম্যাকলাস্কিগঞ্জ, #ঘাটশিলা_গালুডি, #দলমা_চান্ডিল_জামশেদপুর, #দেওঘর_মধুপুর, #সারান্ডা_কিরিবুরু_মেঘাৎবুরু ইত্যাদি। আজকে থাকছে রাঁচি-নেতারহাট-বেতলা ও ম্যাকলাস্কিগঞ্জের প্যাকেজ।
চলুন আগে জেনে নি কোন কোন জায়গা আমাদের প্ল্যানে রয়েছে এবং সেখানে বিশেষ আকর্ষণ বলতে কি কি রয়েছে।
✅ রাঁচি: ঝাড়খণ্ডের রাজধানী এবং অন্যতম সেরা জায়গা হল #রাঁচি। জলপ্রপাতে ঘেরা এই শহরটিকে ভালোবেসে বলা হয় "সিটি অফ ওয়াটারফলস"। শহরের চারপাশে ঘিরে রয়েছে পাহাড়, জঙ্গল ও জলপ্রপাত। রাজ্যের যাবতীয় আধুনিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে এখানে।সমতলভূমি, মালভূমি ও পার্বত্য ভূমির সমন্বয় ও দেখা যায় এখানকার ভূমিরূপে। শহরে ভেতরে রয়েছে বেশ কিছু কৃত্রিম হ্রদ। তার মধ্যে অন্যতম হলো কাঁকে ও ধুরবা হ্রদ। হ্রদগুলিতে নৌচালনার সুবিধা রয়েছে। ধুরবা ড্যামের পাশে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা তৈরী ওয়াটার পার্ক। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও অসাধারণ। কাঁখে জলাধারের পাশেই উঁচু পাথুরে টিলার উপর সাজানো রয়েছে 'রক গার্ডেন'। 1908 সালে রাঁচিতে বেড়াতে এসেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। শহরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ‘মোরাবাদী পাহাড়’-এর উপর তিনি একটি বাড়ি তৈরি করেছিলেন। তারপর থেকেই সেই পাহাড়ের নাম হয়ে যায় 'টেগোর হিল'।এছাড়া শহরের ভেতরে রয়েছে বিখ্যাত কিছু মন্দির, পূজোর সময় যেগুলোতে ভক্তদের সমাগম ঘটে। সূর্য মন্দির, জগন্নাথ মন্দির,পাহাড়ি মন্দির, দেউড়ি মন্দির হলো রাঁচির কিছু বিখ্যাত মন্দির। শহরের পূর্ব দিকে রয়েছে বিরসা মুণ্ডা চিড়িয়াখানা।
#রাঁচি শহরের বাইরে আছে বেশ কিছু জলপ্রপাত। দশম, হুড্রু, সীতা, জোনহা জলপ্রপাত হলো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। রাঁচি শহর থেকে প্রায় 50 কিলোমিটার দূরে কাঞ্চি নদীকে ঘিরে রয়েছে দশম জলপ্রপাত। প্রায় দেড়শো ফিট উঁচু থেকে কাঞ্চির জল দশটি ধারায় বিভাজিত হয়ে পড়ছে সুবর্ণরেখার বুকে। জলের বুকে দেখা যায় রামধনুর সাতটি রং। পাহাড়, জঙ্গল মিলিয়ে দশম জলপ্রপাতের সৌন্দর্য অসাধারন। দুশো সিঁড়ি বেয়ে নেমে এখানে ভিউ পয়েন্ট পাওয়া যায়।
#রাঁচি থেকে উত্তর পূর্বে প্রায় 42 কিলোমিটার দূরে সুবর্ণরেখা নদীতে প্রায় 320 ফুট ওপর থেকে ঝরনা হয়ে নেমে এসেছে বিখ্যাত হুড্রু জলপ্রপাত। ঘোরানো পাথরের সিঁড়ি দিয়ে নদীতে নামা যায়। প্রায় সাতশো সিঁড়ি রয়েছে এখানে। এখানে যাওয়ার পথে পড়ে গেতলসুদ বাঁধ।
#রাঁচি শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে রয়েছে জোনহা জলপ্রপাত। স্থানীয় ভাবে এটি গৌতম ধারা নামে বেশি জনপ্রিয়। গৌতম বুদ্ধের নাম অনুসারেই এই জলপ্রপাতের নাম দেওয়া হয়েছে। প্রায় সাড়ে চারশো পাথুরে সিঁড়ি ভেঙে জলের কাছে যাওয়া যায়। বর্ষাকালে ঝর্নার উত্তাল গতি থাকে, ভিউ পয়েন্ট অব্দি জলের ঝাপটা গায়ে এসে লাগে। ছবি তোলার জন্যও এই জলপ্রপাতগুলি বেশ আদর্শ। এছাড়া আরো অনেক দর্শনীয় জায়গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রাঁচি শহরের এদিক ওদিক।
✅নেতারহাট- ঝাড়খন্ডের পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে #লাতেহার জেলা। জঙ্গল ও খনিজে ভরপুর এই জেলায় রয়েছে ঝাড়খন্ডের সবথেকে সুন্দর জায়গা, নেতারহাট। ভালোবেসে এই জায়গাকে বলা হয় ছোটোনাগপুরের রানি। নেতারহাটের চারপাশটা ঘুরে দেখলে বোঝা যায় কেন একে ছোটো নাগপুরের রাণী বলা হয়। একবার এলে বারবার আসতে ইচ্ছে করে। রাজধানী রাঁচি থেকে এর দূরত্ব প্রায় একশো ষাট কিলোমিটার। তিনদিন হোক বা পাঁচদিন অথবা এক সপ্তাহ, প্ল্যানে একটা বা দুটো দিন #নেতারহাট এর জন্য রাখতেই হবে। দেখার মধ্যে রয়েছে কোয়েল নদী ভিউ পয়েন্ট, পাইনের বন, ন্যাসপাতি বাগান, নেতারহাট রেসিডেন্সিয়াল স্কুল, ঘাঘরি ফল। দশ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ম্যাগনোলিয়া সানসেট পয়েন্ট, যা দীর্ঘ দিন ধরে বয়ে চলেছে এক অসম্পূর্ণ প্রেমের স্মৃতি। অসাধারণ সুন্দর এই জায়গা।অদূরেই রয়েছে অঞ্জন গ্রাম। ধর্মীয় বিশ্বাস, এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামায়ণের বীর হনুমান। নেতারহাট থেকে প্রায় 65 কিলোমিটার দূরের জঙ্গল রয়েছে ঝাড়খন্ডের দ্বিতীয় উচ্চতম জলপ্রপাত লোধ জলপ্রপাত।
✅বেতলা: লাতেহার জেলাতেই রয়েছে ঝাড়খন্ডের অন্যতম আরেকটি আকর্ষণ বেতলা অভয়ারণ্য। নেতারহাট থেকে প্রায় একশো কিমি দূরে রয়েছে বেতলা। একটা দিন রাখতে হবে বেতলার জন্য। নেতারহাট থেকে বেতলা যাওয়ার পথে দেখা যায় মারোমার,কেচকি সঙ্গম, পালামু ফোর্ট। কেচকি সঙ্গমের কাছেই রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের "অরণ্যের দিনরাত্রি" খ্যাত সেই বিখ্যাত বাংলো। এছাড়া বেতলা ফরেস্টের ভেতরে সাফারির সুবিধাও রয়েছে। বাইসন, হরিণ, ময়ূর সহ বিভিন্ন প্রাণী রয়েছে জঙ্গলের ভেতরে। বেতলা ফরেস্টের ভেতরে থাকার জন্য বনদফতরের নিজস্ব আবাস ও ট্রিহাউস রয়েছে।
✅ ম্যাকলাস্কিগঞ্জ
ঝাড়খণ্ডের নিরিবিলি অ্যাংলো-সাহেবি পাড়া ম্যাকলাস্কিগঞ্জ, যাকে মিনি স্কটল্যান্ড ও বলা হয়ে থাকে। এখানকার আবহাওয়া ও ভূমিরূপের জন্যই তৎকালীন ব্রিটিশ সাহেবরা নিজেদের ছুটি কাটানোর ঠিকানা রূপে এই জায়গাকে বেছে নিয়েছিলেন। পরে কিছু অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবার এসে এখানে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। তবে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তারা অনেকেই ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়া চলে যান। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে বুদ্ধদেব গুহর লেখায় বার বার এসেছে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। এখানে রয়েছে সাহেবদের পুরোনো বাংলো বাড়ি, সবুজমোড়া জঙ্গল আর নিস্তব্ধতা। ম্যাকলাস্কিগঞ্জের পাশেই রয়েছে চট্টি নদী। বর্তমানে এই অঞ্চলে মূলত বসবাস করেন মুণ্ডা, ওঁরাও আদিবাসী মানুষরা। জঙ্গল ছাড়াও রযেছে ডেগাডেগি নদী এবং কুমারপাত্র নদী। কুমারপাত্র নদীর কাছে রয়েছে অপূর্ব কলোরাডো ভূমিরূপ। হেসালাং ওয়াচ টাওয়ার থেকে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের অপূর্ব ভিউ দেখা যায়। গাড়ি ভাড়া করে এই গঞ্জ ভালোমতো ঘুরে আসা যায়। এখানকার দুল্লি গ্রামটি পায়ে হেঁটে ঘুরে আসা যায়। মায়াপুর জঙ্গল ভেদ করে নাট্টা পাহাড় ঘুরে আসা যায়। এছাড়া রয়েছে জাগৃতি বিহার, সর্বধর্মস্থল, ক্রিশ্চিয়ান সিমেট্রি, সেভেন্থ ডে চার্চ। তবে এতকিছু এক্সপ্লোর করতে হলে ম্যাকলাস্কিগঞ্জেও একদিন থাকতেই হবে। অবশ্য গোটা ঝাড়খণ্ড ঘুরতে না চাইলে শুধু ম্যাকলাস্কিগঞ্জেই একটা পুরো উইকেন্ড কাটিয়ে দেওয়া যায়।
✅ রাঁচি, নেতারহাট, বেতলা ও ম্যাকলাস্কিগঞ্জ নিয়ে মোটামুটি পাঁচ থেকে সাত দিনের একটা প্ল্যান হতে পারে। রাঁচির সমস্ত ফলস ও দর্শনীয় স্থানগুলোর সঙ্গে পুরো নেতারহাট, বেতলা ও ম্যাকলাস্কিগঞ্জ ঘুরে শেষ করা সম্ভব।
✅ আনুমানিক প্যাকেজ খরচ:
পাঁচদিন/চার রাতের জন্য
➡️ 9999/ মাথাপিছু, কমপক্ষে চারজনের জন্য।
➡️ 8999/ মাথাপিছু, কমপক্ষে ছয়জনের জন্য।
➡️ 8199/ মাথাপিছু, কমপক্ষে আটজনের জন্য।
পাঁচদিন/চার রাতের জন্য
➡️ 11999/ মাথাপিছু, কমপক্ষে চারজনের জন্য।
➡️ 10999/ মাথাপিছু, কমপক্ষে ছয়জনের জন্য।
➡️ 9999/ মাথাপিছু, কমপক্ষে আটজনের জন্য।
✅প্যাকেজে যা যা থাকে: রাঁচি স্টেশন থেকে পিক আপ ও স্টেশনে ড্রপ, প্যাকেজ অনুযায়ী স্ট্যান্ডার্ড অথবা সেমি ডিলাক্স হোটেলে থাকার ব্যবস্থা, প্রতিদিন ব্রেকফাস্ট ও ডিনার অথবা ব্রেকফাস্, লাঞ্চ ও ডিনার (প্যাকেজ অনুযায়ী), গ্রুপ অনুযায়ী সেডান অথবা এস.ইউ.ভি গাড়িতে সাইটসিন( পার্কিং ও টোল ইনক্লুড)।
❎প্যাকেজে যা যা থাকে না: ট্রেন/বাস/ প্লেনের টিকিট, প্যাকেজ পানীয়, অন্য কোনো পানীয়, কোনো জায়গায় এন্ট্রি ফি বা গেট পাস এবং প্যাকেজে না থাকা বাকি সবকিছু।
✅ বুকিং পলিসি: বুকিং এর সময় 50% এডভান্স পেমেন্ট। বাকি 50% প্রথমদিন হোটেলে চেক ইন করার পর।
✅ ক্যানসেলেশন পলিসি:
➡️এক মাস বা তার বেশি সময় থাকতে বুকিং ক্যানসেল করলে: প্যাকেজের 20% কাটা হবে।
➡️ 30-20 দিন সময় থাকলে: প্যাকেজের 30 % কাটা হবে।
➡️ 20-10 দিন সময় থাকলে: প্যাকেজের 40% কাটা হবে। অর্থাৎ বুকিং এমাউন্ট পুরোটাই কেটে নেওয়া হবে।
➡️ 10 দিন বা তার কম সময় থাকলে: 50% অর্থাৎ পুরো বুকিং এমাউন্ট কেটে নেওয়া হবে।
✅ বাচ্চাদের খরচ
➡️0-5 বছর বয়স হলে: কোনো খরচ লাগবে না।
➡️5-8 বছর: 50%
➡️ 8+ : পুরো খরচ লাগবে।
✅✅ ওপরের প্যাকেজ ছাড়াও ওপরে জায়গাগুলো নিয়ে কাস্টোমাইজ প্ল্যানের অপশন রয়েছে। অর্থাৎ আপনি চাইলেই রাঁচি বা নেতারহাট অথবা শুধু রাঁচি কিংবা শুধু নেতারহাট বা আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো প্ল্যান করতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনি দিনসংখ্যাও নিজের মতো করে বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে পারেন।
✅✅ ওপরের জায়গা গুলো ছাড়াও ঘাটশিলা, দেওঘর, উড়িষ্যা, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর, দীঘা-মন্দারমণি, দার্জিলিং অফবিট, সুন্দরবন, গোয়া, আন্দামান-নিকোবরের প্যাকেজ ও রয়েছে।
✅✅✅✅✅ বিশদে জানতে/বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন।
Wings of Wild Tourism Wings of Wild Tourism
Contact No- 7001064293
Whatsapp No- 070010 64293
Head Office: Raghabpur more, Purulia
Nera Reliance smart, WB 723101
Branch Office: Tagore hill road, Morabadi
Ranchi, Jharkhand, 834005
Branch Office: Sec V, Salt Lake City, Kolkata
West Bengal
E-Mail: [email protected]
Website: www.wingsofwild.in