26/01/2017
বান্দরবান ভ্রমণ
বান্দরবান জেলা আমার দেখা আমাদের দেশের সবচেয়ে সুন্দর যায়গা । যেখানে আপনি মাসের পর মাস থাকলেও দেখা শেষ হবে না । আমার দেখা অনেক ট্র্যাভেলর ১০/১১ বছর থেকে প্রতিনিয়ত বান্দরবন ট্র্যাকিং করছে এবং প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করছে নতুন নতুন যায়গা ।
তাই বান্দরবান ঘুরতে আপনি ২ধরনের প্লান করতে পারেন ।১। রিল্যাক্স ট্রিপ ও ২ । ট্র্যাকিং ।
ট্র্যাকিং করতে যেতে চাইলে সবচেয়ে ভাল হয় যাবার আগে গুগোল ম্যাপ দেখতে নেয়া কেননা অনেক ট্রেকারের সুবাদে প্রাই নতুন নতুন স্পট লিপিবদ্ধ হচ্ছে এইখানে ।
এই ২ধরনের প্লানেই আপনি অন্তত ২০/২৫ দিন সুধু বান্দরবনেই ঘুরতে পারেন ।
দেখার মত জায়গা:১। নীলগিরি ২। স্বর্ণ মন্দির ৩। মেঘলা ৪। শৈল প্রপাত ৫। নীলাচল ৬। মিলন ছড়ি ৭। চিম্বুক ৮। সাঙ্গু নদী ৯। তাজিলডং ১০। কেওক্রাডং ১১। সাকাহাপাং ১২। বগা লেক ১৩। মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স ১৪। প্রান্তিক লেক ১৫। ঋজুক জলপ্রপাত ১৬। নাফাকুম জলপ্রপাত ১৭।তিন্দু ১৮। রিমাক্রি ১৯।আমিয়াকুম ঝর্না ২০। সাতভাইকুম ২১।পদ্মমুখ ২২।আন্ধারমানিক ২৩। বড়মধক ২৪।আলিকদম ২৫।রাইখাংলেক ২৬। জাদিপাই ঝর্ণা ২৬। সিপ্পি ২৭। এছাড়াও বান্দরবনে ঝিরি রয়েছে অনেক ।
যেমন: চিংড়ি ঝিরি, পাতাং ঝিরি, রুমানা পাড়া ঝিরি পদ্মঝিরি আর অনেক নাম না জানা ঝিরি ।
যাতায়াত:ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম তারপর চট্টগ্রাম থেকে সোজা বান্দরবন; অথবা ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবন যাওয়া যায়।ঢাকা থেকে বান্দরবন সরাসরি: শ্যামলী এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বাস বান্দরবনের উদ্দেশ্যে ছাড়ে আরামবাগ/ফকিরাপুল/ কমলাপুর রেল ষ্টেশনের বিপরীত কাউন্টার থেকে।সেন্টমারটিন পরিবহণ এবং আর কিছু এসি বাস ছারে কলাবাগান থেকে । ঢাকা টু বান্দারবান এর সরাসরি বাস আছে অনেক গুলো তবে নন এসি’র মধ্যে শ্যামলীর সিট গুলো ভালোই কারণ পা রাখার যায়গা অনেক। এসি বাসের ভাড়া পরবে প্রায় ৯৫০ টাকা এবং নন এসি ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকা ।চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানঃ বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে পূরবী এবং পূর্বাণী নামক দুটি ডাইরেক্ট নন এসি বাস আছে।৩০ মিঃ পর পর বান্দরবনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতিঃ১০০ টাকা।
১ম দিন:বান্দারবন শহর ।
রাতের বাস গুলি সকাল ৮টায় বান্দরবন শহরে নামিয়ে দেয় । এর পর অটো/রিক্সা নিয়ে সোজা হোটেলে । হোটেলে চেকইন দিয়ে ফ্রেশহয়ে চলে আসুন তাজিংডংএ । তাজিংডং নামে নতুন একটি রেস্টুরেন্ট হয়েছে থানার সাথেই ।খাবারের স্বাদ বেশ ভালো এবং পরিপাটি । কিছু হোটেলের ইনফরমেশন সংগ্রহে রাখতে পারেন১/ হোটেল ফোর স্টার : (বান্দরবন সদর)সিঙ্গেল ৩০০ টাকা, ডাবল- ৬০০, ট্রিপল ৯০০ টাকা, এসি ডাবল- ১২০০ টাকা।, এসি ট্রিপল ১৫০০ টাকা।Phone: 0361-63566, 0361-62466, 01813278731, 01553421089২/হোটেল থ্রি স্টার : এটি বান্দরবন বাস স্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ী এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়া হয়। এটি ৮/১০ জন থাকতে পারে ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। বুকিং ফোন: থ্রি স্টার এবং ফোর স্টার হোটেল মালিক একজন, মানিক চৌধুরী-০১৫৫৩৪২১০৮৯।৩/হোটেল প্লাজা বান্দরবন: (সদর)Single 400tk, Double 850tk, AC 1200tk.Booking Phone: 0361-63252হোটেল গ্রিন হিল: (বান্দরবন সদর) Hotel Green HillSingle 200tk, Double 350tk, Triple 500tkPhone: 0361-62514, Cell: 01820400877৩/হোটেল হিলপ্লেসঃ ২০০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে ভাল রুম পাওয়া যায় ।ফোন: ১৬৭৩৭১৮২৭১ ০১৮২৮৮৪০৮২৫ ০১৫৫৭১২৭০০৬।২য় দিন: # যারা ২দিন থাকতে চাচ্ছেন তাদের জন্য: জীপ ভারা নিয়ে নিলে ওরাই আপনাদের নীলগিরি সহ ৫/৬ টা প্লেস দেখাবে । জিপে করে নীলগিরি চিম্বুক হয়ে রুমা যাত্রা এ ক্ষেত্রে যেই হোটেলে রাত কাটবেন বলে ঠিক করেছেন ওদের বললেও “জিপ” ঠিক করে দেবে। পাঁজেরো টাইপের জিব । জিব ভারা ৩০০০/- থেকে ৪০০০/- পর্যন্ত হতে পারে । জিপে আসন সঙ্খ্যঃ ৭ জন প্রায়। এছাড়া শুধু নির্দিষ্ট কিছু যায়গার জন্য যেমন নীলাচল যেতে চাদেরগারিতে ১৫০০ টাকা নেবে । স্বর্ণমন্দির যেতে শহরথেকে অটোতে জনপ্রতি ২০টাকা আর মেঘলা যেতে ১০০ টাকা সিএনজি ভারা নিয়েথাকে। মেঘলা প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা এবং ক্যাবল কারে উঠার জন্য ৪০ টাকা জনপ্রতি টিকিট নিয়ে প্রবেশ করতে হবে । নীলাচল বিকেলবেলা গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারেন অসাধারণ পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিকেলে।
।
# যারা নীলগিরি রাত থাকতে চাচ্ছেন তাদের জন্যঃজিপে/চাঁদের গাড়িতে করে নীলগিরি যাত্রা । নীলগিরিতে সারাদিন এবং রাতে কটেজ অথবা তাঁবু ভারা নিয়ে থাকা ।তবে প্রথমেই আপনাকে বান্দরবনের সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার (সি,ও) এর কাছ থেকে থাকার অনুমতি নিতে হবে।যারা সাশ্রয় করতে চান, তারা কিন্তু অনায়াসে প্রতিটি কটেজে ১০-১৫ জন থাকতে পারবেন। কটেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিছানা ভাড়া নিয়ে।(বিছানাও অনেক সুলভ মূল্যে পাবেন)।সেই সাথে জেনারেটর চালানোর সময় সীমাও বাড়ানো যায় অতিরিক্ত এবং সামান্য টাকার বিনিময়ে।নীলগিরি হিল রিসোর্ট এ মোট ৫ টি কটেজ আছে । কটেজ ভারা পেতে পুরবে দায়িত্বে থাকা আর্মি পারছনের সাথে আগে যোগাযোগ করে নেয়া ভাল ।নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র বান্দরবন জেলা সদর থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায়। এ ছাড়া নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র রাত্রি যাপনের জন্য বান্দরবন সদর সেনা রিজিয়নে বুকিং দেয়া যায়। তাছাড়া নীলগিরি পর্যটনে গিয়ে সরাসরি বুকিং করা যায়। বান্দরবন জেলা সদর থেকে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটক দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসেন।সাধারণ পর্যটকের জন্য নীলগিরি কটেজ বুকিং ব্যবস্থাঃপেট্রো এভিয়েশন ৬৯/২, লেভেল-৪,রোড-৭/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা।
ফোন:- মেজর ফারুক-০১৭১৬৫৯৮২৬৬, ক্যাপ্টেন নাহিদ-০১৮১৯১৮৫০১৫, মনতোষ মজুমদারঃ ০১৭৩০০৪৩৬০৩ এবং হাসান সাহেদঃ ০১৭৩০০৪৩৬০৩।কটেজ ভাড়া:গিরি মারমেট: ৭৫০০ টাকা। (৮/১০ জন থাকতে পারবে)।মেঘদূত: ৬৫০০ টাকা। (৮/১০ জন থাকতে পারবে)।নীলাঙ্গনা: ৫৫০০ টাকা। (৪/৬ জন থাকতে পারবে ২ রুমে) কাপলরা ২৭৫০টাকায় ১ রুম ভাড়া পাবেন।এছারাতাবু ২০০০/- থেকে ৩৫০০০/-
৩য়দিনঃ থানচি ভ্রমনঃ
বান্দারবান থেকে সকাল ৮.৩০ ,১০.৩০ এবং দুপুর ২টায় ৩টি বাস ছেড়ে যায় থানচি’র উদ্দেশ্যে । ভারা ২০০ থেকে ২২০ টাকা পরবে ।অগ্রিম বুকিং করতে ফোন করতে পারেনবান্দারবান কাউন্টারঃ০01818443570 রুমা কাউণ্টারঃ01823836581 থানচি কাউন্টারঃ01818443566 । প্রায় ৭৯ কি,মি পাহাড়ি পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে প্রায় ৪.৩০ ঘণ্টা। সকাল সকাল রউনা হলে ১১ টার মধ্যে থানচি পোঁছান যায় । থানচি থেকে গাইড নিয়ে বিজিবি ক্যাম্প ও থানাতে রিপোর্ট করে আপনাকে নৌকা ভারা নিতে হবে তিন্দু অথবা রিমাক্রির উদ্দেশ্যে । তিন্দু অথবা রিমাক্রি উভয় জায়গায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে । নৌকাতে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা নিতে পারে ৫ জনের বেশী যায়গা ধরেনা এক নৌকায়। তিন্দু তে একরাত থাকতে চাইলে তিন্দু পর্যন্ত নৌকা নিতে পারেন । এর পর তিন্দু একরাত থেকে রিমাক্রি পর্যন্ত হেটে যেতে পারেন । এছাড়া সরাসরি রিমাক্রিতে আসতে পারেন রাতে থাকার জন্য উভয় স্থানেই ১০০ টাক জনপ্রতিতে কটেজ পেয়ে যাবেন । রিমাক্রি যেতে যেতে সন্ধ্যা বা রাত হয়ে-জাবে । পর দিন নাফা-কুম ঘুরতে যেতে পারেন । রিমাক্রি থেকে ২.৩০ মিনিট হাটার দ্রুত্বে রয়েছে নাফা-কুম ঝর্ণা । ঘুরে এসে সেইদিনই নৌকা নিয়ে থানচি আসতে পারেন । সেক্ষেত্রে একরাত থানচি তে থাকতে হতে পারে।
রিমাক্রি থেকে যারা ট্র্যাকিং পছন্দ করেন তারা নাফা-কুম>জিনাপারা>থুইসাপাড়া> নতুনপারা>আমিয়াকুম>সাতভাইকুম>নতুনপাড়া>হরিচন্দ্রপাড়া>পদ্মঝিরি> পদ্মমুখ সর্বমোট ২ রাত তিনদিন ভ্রমন করে থানচি আসতে পারেন । পদ্মমুখ থেকে থানচি নৌকা ভারা ১৫০০ টাকা নিতে পারে ।আবার বড়মধক/ আলিকদম ও আপনি সময় নিয়ে এখানথেকে ট্র্যাকিং করে গুরে আসতে পারেন । থানচিতে আমাদের গাইড করেছিল জাহিদ ভাই উনার রান্নার হাত ভালোই ।নতুন পাড়াতে গিয়ে তার মিষ্টি কুমড়া দিয়ে মুরগীর রান্নার স্বাদ অসাধারণ ছিল । উনার মোবাইল নাম্বার : 01837832544 ।
৭ম দিন:গন্তব্য বগা লেক।
বগা লেক যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে রুমা বাজার যেতে হবে। বান্দারবান থেকে সরাসরি রুমা যেতে পারবেন। যাবার জন্য একটা বাস স্ট্যান্ড আছে, ব্যাটারি চালিত আঁটোতে রুমা বাস স্ট্যান্ডের জনপ্রতি ভাড়া নিবে ১৫/-সকাল ৮:৩০ , ১০:০০ / দুপুর ১২ , ২:৫০ এই চারটা শিফটে বাস চলে । বাস টিকিট ১৮০/২০০ জন প্রতি এবং প্রায় ৩ ঘণ্টা লাগে রুমা যেতে । রুমাতে গিয়ে গাইড নিয়ে নেবেন ।গাইডএর কাছে সবকিছু তৈরি থাকে অই আপনাকে আর্মি ক্যাম্পে ও থানায় রিপোর্ট করা একটি চাঁদের গাড়ী ঠিকরা এইগুলা করে দেবে। গাড়ী রিজার্ভ – ২৫০০ আর জন প্রতি । গাড়ী’র ব্যবস্থা গাইড ই করে দিবে। শীতকালে গাড়ি একদম বগা লেক পর্যন্ত যায় বৃষ্টি হলে গাড়ি কমলা বাজার নামিয়ে দেবে এখানথেকে ৩০/৪০ মিনিট ট্র্যাকিং করে বাগালেকে আসতে হবে । ।বাগালেকে গিয়ে আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হয় । এখন বাগালেকে বেশকিছু রিসোর্ট আছে মাত্র ১০০ টাকা জন প্রতি খরচে রাত্রি যাপন করতে পারবেন ।খাবার খরচও খুব বেশী না ৩ বেলার জন্য ২২০ টাকা লাগতে পারে ।ট্র্যাকিং প্লান থাকলে এখান থেকে রাইখাংলেক/পুকুরপাড়া , তিনমাথা , কিউকারাডাং ,জাদিপাই ইত্যাদি ঘুরে আসতে পারবেন । যাবার আগে গুগোল ম্যাপ দেখতে পারেন কেননা অনেক ট্রাকারদের সুবাদে প্রাই নতুন নতুন স্পট লিপিবদ্ধ হচ্ছে ।জাদিপাই থেকে রাইখাং ও তিনমাথা একসাথে দেখতে প্রায় ৬দিন লাগতে পারে ।শুধু জাদিপাই যেতে ২দিন আর পুকুরপারা রুটে ৩ দিন লাগতে পারে । হাটার রাস্তা তাই পুরাপুরি নিজের উপর নির্ভর করছে বিষয়টা । ৮ম দিন: ১১ টা পর্যন্ত বগা থেকে আবার রুমাবাজার । থানা ও আরমিক্যাম্পে পুনরায় রিপোর্টকরা । বাসে বা চাদের গাড়িকরে বান্দারবান ফেরা এবং রাতের বাসে ঢাকা।