Boga Lake - বগা লেক

Boga Lake - বগা লেক Bagakain Lake or Baga Lake/ Boga Lake
বগা লেক বা বগা হ্রদ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার স্বাদু পানির একটি হ্রদ।
(17)

ড্রাগনের লেক বা বগালেকের অবস্থান বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কেওকারাডাং এর কোল ঘেঁষে। বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। রুমা বাজার থেকে দুইভাবে বগা লেকে যাওয়া যায়। আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী প্রিয় হন তো হেঁটে রওনা দিতে পারেন অথবা শুস্ক মৌসুমে যেতে পারেন চাঁন্দের গাড়ি করে। আপনি যে ভাবেই যান না কেন, রুমা বাজার থেকে বাধ্যতামুলক ভাবে সাথে অন্তত একজন গাইড নিতে হবে এবং রিপোর্ট করতে হ

বে রুমা আর্মি ক্যাম্পে।
গাইডকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে দিতে হবে। চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করলে আড়াই হাজার টাকা পড়বে।
বগালেক যাবার পথে
হাঁটা পথে ঝিরিপথ ধরে গেলে সময় লাগবে ৫ ঘন্টার মত। এই পথে আপনাকে পাড় হতে হবে অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়ি ধিরি। আর শুস্ক মৌসুমে চাঁন্দের গাড়িতে গেলে সময় লাগবে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত। পথে পরবে অনেক ছোট বড়ো টিলা। কোন কোন সময় চাঁন্দের গাড়ি এতটাই বাঁকা হয়ে উপরে উঠতে থাকে যে, তখন সামনে আকাশ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না। শুস্ক মৌসুমে সাঙ্গু নদীতে পানি না থাকা এক সময় চাঁন্দের গাড়ি সাঙ্গু নদী ও পাড় হবে। যাওয়ার পথে কখনো পড়বে বিশাল পাহাড়ি কলার আর নাম না জানা অনেক ফলের বাগান। বগা লেকের নিচ থেকে ট্রাকিং করে উপরে উঠতে আপনার সময় লাগবে ৪৫ মিনিটের মতন। প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে পাহাড়ের চূড়ায় এই লেক তৈরি হয়। এর আয়তন ১৫ একর। এই হ্রদটি তিনদিক থেকে পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত। এই শৃঙ্গগুলো আবার সর্বোচ্চ ৪৬ মিটার উঁচু বাঁশঝাড়ে আবৃত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫৭ মিটার ও ৬১০ মিটার উচ্চতার মধ্যবর্তী অবস্থানের একটি মালভূমিতে অবস্থিত।

বগালেক, গীর্জার প্রান্ত থেকে
বগালেকের প্রথম দর্শন আপনার সারা জীবনের মনে রাখা ঘটনা গুলোর মধ্যে একটি হবে। দূর থেকে গাঢ় নীল রং এর বগালেক এর পাশে যে গ্রামটিকে দেখতে পাবেন ওটি নাম বগা মুখ পাড়া। এটা বমদের গ্রাম। আর্মি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে সরু পথ ধরে আপনি চলে আসবেন বগালেক সমতলে। এখানে পৌছানোর পর আপনাকে বগা আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে।

বগালেক, মুরং গ্রামের প্রান্ত হতে
অদ্ভুদ সুন্দর এই নীল রঙ্গের লেকের সঠিক গভীরতা বের করা যায়নি। স্থানীয়ভাবে দুইশ' থেকে আড়াইশ' ফুট বলা হলেও সোনার মেশিনে ১৫১ ফুট পর্যন্ত গভীরতা পাওয়া গেছে। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ একটি লেক। এর আশেপাশে পানির কোন উৎসও নেই। তবে বগালেক যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগাছড়া (জ্বালা-মুখ) নামে পরিচিত। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এই লেকের পানি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ঘোলাটে হয়ে যায়। আর লেকের সাথে সাথে আসে পাশের নদীর পানিও ঘোলাটে রং ধারন করে। কারণ হিসেবে মনে করেন এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। এই প্রস্রবণ থেকে পানি বের হওয়ার সময় হ্রদের পানির রঙ বদলে যায়। প্রচুর বিশালকায় মাছে ভরা। প্রচুর জলজ লতাপাতা আর খাঁড়া পাথরের পাড়ের জন্য চমৎকার তাপমাত্রার এই পানিতে সাঁতার কাটার সময় একটু সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

বমদের গ্রাম
থাকা এবং খাবার জন্যে লারাম বম, সিয়াম বম (স্থানীয় স্কুল টিচার সিয়াম দিদি) সহ কয়েকটি দোকান আছে। প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে রাতে থাকার ও তিন বেলা খাবার ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। আছে একটি স্কুল ও একটি গির্জা। এখানে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের একটি অত্যাধুনিক রেস্ট হাউজ নির্মাণাধীন রয়েছে। মাঝে সাঝে গ্রামীনফোন মোবাইল নেটওয়ার্ক মিলবে গির্জার আর আর্মি ক্যাম্পের কোনায়।
১) বগালেক প্রথম দর্শন ২) বগালেক আর্মি ক্যাম্প ৩) সিয়াম দি'র কটেজ ৪) বমদের গ্রাম ৫) মুরংদের গ্রাম
বমদের গ্রামটা খুব একটা বড় নয়। হাতে সময় নিয়ে আপনি ঘুড়ে দেখতে পারেন পুরো গ্রাম। ছবি তোলার নেশা থাকলে সাথে ক্যামেরা নিন। তবে সাবধান, পাহাড়ি এলাকায় অবশ্য পালনীয় কিছু নিয়মের ভিতর একটি নিয়ম হলো “পাহাড়িদের বিশেষ করে মেয়েদের বিনা অনুমতিতে ছবি নেবেন না”। এই এলাকা এতই দুর্গম যে এইখানে অনেকে বাংলা বলতে পারে না। গোত্র বিশেষে এখনও অনেক গোত্রের মেয়েরা অল্প কাপড় পরিধান করে, কিন্তু খৃষ্টান মিশনারীদের উল্ল্যেখযোগ্য ভুমিকার কারনে শিক্ষার আলো এখানে পৌঁছাতে শুরু করেছে।

বগা লেকের জন্ম ইতিহাস নিয়ে স্থানীয় আদিবাসী গ্রামগুলোয় একটি মজার মিথ প্রচলিত আছে, সেইটি অনেকটি এই রকম - “অনেক অনেক দিন আগে একটি চোঙা আকৃতির পাহাড় ছিল। দুর্গম পাহাড়ে ঘন অরণ্য। পাহাড়ের কোলে বাস করত আদিবাসীর দল। ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা। পাহাড়ি গ্রাম থেকে প্রায়ই গবাদিপশু আর ছোট বাচ্চারা ওই চোঙ্গা আকৃতির পাহাড়টিতে হারিয়ে যেত। গ্রামের সাহসী পুরুষের দল কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে দেখতে পায়, সেই পাহাড়ের চূড়ার গর্তে এক ভয়ঙ্কর দর্শন বগা বাস করে। বম ভাষায় বগা মানে ড্রাগন। কয়েকজন মিলে ড্রাগনটিকে আক্রমণ করে হত্যা করে ফেলে। ফলে ড্রাগনের গুহা থেকে ভয়ঙ্কর গর্জনের সঙ্গে আগুন বেরিয়ে আসে। নিমিষেই পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম এক পাহাড়ি লেকের জন্ম হয়”
বগালেক, মুরং গ্রামের প্রান্ত হতে
বাংলাদেশের ভূ-তত্ত্ববিদগণের মতে বগাকাইন হ্রদ (বগা লেক) মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আবার ভূমিধ্বসের কারণেও এটি সৃষ্টি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
বমদের গ্রাম ছাড়াও লেকের উলটা দিকে পাহাড়ের নিচে আরেকটা গ্রাম আছে মুরংদের। বগালেক থেকে ২০ মিনিট নিচে পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে এই গ্রাম। শিক্ষার তুলনা করলে বমদের থেকে এরা অনেক পিছিয়ে। তবে ছবি তোলার আশা আপনার আপাতত এখানে বাদ দিতে হবে কারন মেয়েরা তো অনেক পরে, ছোট্ট ছেলে মেয়েরাও ক্যামেরার সামনে আসে না।
মুরংদের গ্রাম থেকে বগালেক ফিরার পথে উপরের দিকে উঠতে যেয়ে এবার আপনার সময় প্রায় ২০ মিনিট বেশী লাগবে।
মুরংদের গ্রাম

সারাদিন আলোছায়ার খেলা শেষে আপনার সামনে বগালেক হাজির হবে আগুল ধরা সন্ধ্যা নিয়ে। লেকের পানিতে মৃদু ঢেউ এর খেলা আর পশ্চিম দিগন্তে গোধুলীর রক্তিম আভা।
সন্ধ্যা, বগালেক
ভাগ্য ভাল হলে ভরা পূর্নিমাতে বগালেককে আবিস্কার করবেন নতুন এক রুপে। বগালেকের পিছনের পাহাড়গুলো বগালেক থেকে উঁচু হওয়ায় চাঁদ উঠার অনেক পরে আলো পড়ে লেকের পানিতে। নিকোশ কালো অন্ধকার থেকে হঠাৎ করেই উজ্জল আভা। বগালেকের অবস্থান অনেক উপরে হওয়ায় চাঁদ অনেক বড় মনে হয়। গির্জা ছুঁয়ে চাঁদটা যখন আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকে তখন আবছায়া আলোয় গির্জার ক্রুশটা এক ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
রাতের বগালেক
বগালেকের সবচেয়ে সুন্দর হল রাত। সিয়াম দিদির হাতে রান্না করা রাতের খাবার শেষে কিছুক্ষন বগালেকের পাড়ে পাথরের উপর বসে থাকুন। রাতকে আরো গভীর হতে দিন। সবসময়ই পরামর্শ একা একা কোথাও না যাবার জন্য। সবাই ঘুমায়ে গেলেও আর্মি ক্যাম্পে রাতভর আর্মি টহল চলে। চারদিকে সবাই ঘুমিয়ে গেলে ছোট একটা দল নিয়ে আপনি গির্জার ডান দিকে সরু পথ ধরে পিছনের পাহাড়ের ঢালের বনের দিকে চলে যান। পুর্নিমা থাকলে চাদের আলোয় পথ দেখে চলুন। অল্প কিছুদূর যাবার পর আপনি একটি শুকনো ঝরনা দেখতে পাবেন। ছোট বড় পাথর পড়ে আছে বিছিন্ন ভাবে। যেকোন একটি পাথরের উপর কোন শব্দ না করে বসে থাকুন কিছুক্ষন। কিছুক্ষনের ভিতর সমস্ত বন জেগে যাবে। চোখ বন্ধ করে শুনুন সে শব্দ। নিশ্তব্ধতার ভিতরে ঝিঝি পোকার ডাক, নাম না জানা নিশাচর পাখির ডাক। অনুভব করুন, মনে হতে থাকবে শব্দগুলো ক্রমশ আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। এ রকম রাত বোধ হয় জীবনে একবার ই আসে।
পূর্নিমার চাঁদ, বগালেক
সকাল, সন্ধ্যা বা রাতে প্রতি বেলায়ই বগা লেক নতুন রূপে ধরা দেয়। বগালেক থেকে কেওকারাডাং খুব কাছেই। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার ভ্রমন তালিকায় যোগ করতে পারেন।
বগালেক, আর্মি ক্যাম্পের প্রান্ত হতে
পাহাড়ি এলাকায় যাবার পূর্বে অবশ্য পালনীয় কিছু নিয়ম
পাহাড়ে সবসময় আইন মেনে চলবেন, কখনও পাহাড়ি কালচারের প্রতি অসম্মানজনক কোনো আচরণ বা মন্তব্য করবেন না, বন্য জীবজন্তু বা পরিবেশের ক্ষতি করবেন না, পাহাড়িদের বিশেষ করে মেয়েদের বিনা অনুমতিতে ছবি নেবেন না এবং কোনো অবস্থাতেই গাইড ছাড়া একা কোথাও যাবে না।

Address

Naikhong
Bandarban
4660

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Boga Lake - বগা লেক posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category



You may also like