20/10/2021
অফ সিজনে পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা একদিকে ভালো হয়েছে। কারণ অফ সিজনে যারা আসে তারা স্বাভাবিকভাবেই কম সেবা পায়।
ইলিশের ডিম দেওয়ার মৌসুম হওয়াতে সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। ফলে মাছের প্রচুর সংকট। এছাড়া বর্ষায় সেন্টমার্টিনের ডাব বাহিরে চলে যাওয়ায় ডাবেরও সংকট, ফলে দাম বেড়ে গেছে।
পর্যটকরা এইসময় আসে সবকিছু কম দামে পাওয়া আর রিলাক্সে সময় কাটানোর জন্য। এইবার পর্যটক বেশি আসার কারণে তাদের অভিযোগের শেষ নেই।
আর এই সময় আবহাওয়া খারাপ থাকে বলেই জাহাজ আসার অনুমতি পায় না। ফলে এ সময়টাকে 'অফ সিজন' বলা হয়।
কিন্তু কিছু পর্যটক জীবনে প্রথম অফ সিজনে আসার কারণে তাদের চাহিদা অন সিজনের মতোই। শুধু রুম ভাড়া কম হলেও খাবার দাবার ও যাতায়াত খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে হতাশ।
এছাড়া নতুন যোগ হয়েছে লোডশেডিং। আগে দ্বীপে কারেন্ট ছিলনা, ফলে অফ সিজন বা অন সিজন যেকোনো সময় পর্যটক আসার আগে সেটা মাথায় রেখে আসতো। ফলে লোডশেডিং এর বিষয়টি আসত না।
অফ সিজনে আসলে, মাঝেমধ্যে আবহাওয়া খারাপ হবে সেটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু এইবার যা হলো, অতিরিক্ত ও বিরক্তিকর।
আবহাওয়া খারাপ হলে দুই-তিন দিন থাকে, মাঝেমধ্যে একসপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। কিন্তু এইবার প্রথম দিনেই পর্যটকরা অধৈর্য হয়ে যায়।
কারণ দু-একদিন বেশি থাকতে হতে পারে সেটা তাদের জানা ছিলো না আর সেই প্রস্তুতিও ছিলো না। ফলে অনেকে যাবার জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে।
আর সামান্য বৃষ্টি ও হালকা বাতাসে তারা বিচলিত হয়ে পড়ে, অথচ এটা বর্ষা ও শরতের জন্য একদম নরমাল ব্যাপার।
আবহাওয়া খারাপ হলে, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দ্বীপের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্টক শেষ হয়ে যায়। অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিছু পণ্য বেশি দাম দিয়েও পাওয়া যায় না।
এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। কারণ দ্বীপে তো ঐসব পণ্য উৎপাদন হয় না, সব বাহির হতে আনতে হয়। যদি যোগাযোগ ব্যবস্থাই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে মালামাল আসবে কি করে?
এই বিষয়টি অনেকে বুঝতে পারেনি বা বুঝতে চায়নি। বরং বিপদে গলাকাটা হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছে।
এইদিকে দ্বীপের সাড়ে সাত হাজার মানুষের চাহিদার সাথে পর্যটকদের চাহিদা যোগ হওয়ায় দ্রুতই বাজারে প্রভাব পড়ে। কারণ অন্যসময় দুর্যোগের কারণে পর্যটক আটকা পড়লেও তখন সিজন থাকায় মালামালের মজুদ ভালোই থাকতো।
এইবার সবচেয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে, কিছু উশৃংখল পর্যটক। বৈরী আবহাওয়া দেখার পরও ট্রলার ছাড়ার জন্য কোস্ট গার্ডের উপর চাপ দেওয়া। তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে বাড়াবাড়ি, মিছিল ও উপর থেকে ঘনঘন ফোন দিয়ে ক্ষমতা দেখানো সত্যিই ফালতু কাজ হয়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া তার উপর ভাঙ্গা জেটি তবুও যাওয়ার জন্য উতলা হলে, এসময় না আসায় উত্তম। কারণ এখনকার আবহাওয়ার বিশ্বাস নাই। যেকোনো সময় ভালো বা খারাপ হতে পারে।
টাকা শেষ হয়ে গেলে বা সমস্যায় পড়লে সহযোগিতা করার জন্য সেন্টমার্টিনে মানুষের অভাব নেই। শুধু একটু বলতে হয় আরকি। কিন্তু অফিস থাকলে, অফিসের ছুটির শেষ হলে গেলে, পরিবারের সমস্যার কথা বললে কারো করার কিছু থাকে না। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্ভর করে প্রকৃতির উপর।