29/05/2020
শহিদ জামিল খুনের ৩২ বছর: জামায়াত টু এবিপি- যুদ্ধ এখন কক্ষচ্যুত
১৯৮১ সালের মার্চে শিবির ক্যাডাররা চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নির্বাচিত এজিএস ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে কলেজ ক্যাম্পাসেই কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। কিরিচের এলোপাথাড়ি কোপে মুমূর্ষু তবারক যখন ‘পানি পানি’ করে কাতরাচ্ছিলেন তখন এক শিবিরকর্মি তার মুখে প্রস্রাব করে দেয়। সেই থেকে শুরু। এরপর ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তিন বাস ভর্তি বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে শিবির ক্যাডাররা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এই সহিংস ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হলে শিবির কর্মিরা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে হত্যা করে। ১৯৮৬ সালে নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের প্রভাবশালী নেতা আব্দুল হামিদের ডান হাতের কবজি কেটে নেয়। কর্তিত হাতটি বর্ষার ফলায় গেঁথে তারা উল্লাস প্রকাশ করে প্রকাশ্যে। এরপর ১৯৮৮ সালের ৩১ মে রাজশাহী মেডিকেলে জামিল আক্তার রতন খুন। এর কিছুদিন পরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে তার নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই বছরেরই ১৭ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে হামলা চালিয়ে সিনেট সদস্য ও জাসদ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আইয়ূব আলী খান, সিনেট সদস্য ও জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল কবির বাদল এবং হল সংসদের ভিপি নওশাদের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সিলেটে জাসদ ছাত্রলীগের তিন নেতা মুনির-ই কিবরিয়া, তপন জ্যোতি দেব এবং এনামুল হক জুয়েলকে হত্যা করে। ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বিজয় মিছিলে হামলা চালিয়ে ছাত্র মৈত্রীর সহ সভাপতি ফারুকুজ্জামান ফারুককে জবাই করে। ২৪ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। ১৯৯২ সালের ১৯ জুন রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জাসদের মিছিলে হামলা চালিয়ে জাসদ নেতা মুকিমকে হত্যা করে। ১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের মিছিলে হামলা করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা বিশ্বজিৎ, সাধারণ ছাত্র নতুন এবং ছাত্র ইউনিয়নের তপনসহ ৫ জনকে হত্যা করে। একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলে হামলা চালিয়ে ছাত্র মৈত্রী নেতা জুবায়ের চৌধুরী রীমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করে। ১৯৯৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনের রাস্তায় ছাত্র মৈত্রী নেতা প্রদুৎ রুদ্র চৈতীর হাতের কব্জি কেটে নেয় এবং সারা শরীরে কুপিয়ে জখম করে। ১৯৯৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী চৌদ্দপাই নামক স্থানে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সকাল-সন্ধ্যা বাসের ভিতর হামলা চালিয়ে ছাত্র মৈত্রী নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমকে যাত্রীদের সামনেই কুপিয়ে ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মিদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ফরহাদের হাতের কবজি কেটে নেয় এবং অন্তত ২৫ জনের রগ কেটে দেয়। ১৯৯৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জাসাসের সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং ছাত্রদল নেতা ডুপ্লের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেও তাদের হত্যা-সন্ত্রাস-রগকাটা বন্ধ করা যায়নি। বরং সমানতালেই তা চলে। এমনকি ওই আমলে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মিকে মাইক্রোবাসের মধ্যেই ব্রাশফায়ার করে হত্যা করার ঘটনাটি তো বেশ আলোচিত। এর বাইরেও অসংখ্য হত্যা-সন্ত্রাস-রগকাটার বর্বর নজির স্থাপন করে তারা। শিবিরের হত্যা-সন্ত্রাসের আরো বিবরণ দিতে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠার লেখা যাবে।
৩১ মে শহিদ ডা. জামিল আক্তার রতনের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। দীর্ঘ ৩২ বছরে সংখ্যাগরিষ্ঠের বিস্মৃতির অতলে নিশ্চয় তলিয়ে ...