12/02/2024
দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা দয়ারাম রায় নাটোর রাজ্যের রাজা রাম জীবনের দেওয়ান ছিলেন। দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা দয়ারাম রায় (১৬৮০-১৭৬০) ১৭৩৪ সালে প্রায় ৪৩ একর জমির উপর দিঘাপতিয়া প্রাসাদের মূল অংশ ও এর সংলগ্ন কিছু ভবন নির্মাণ করেন। রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদানাথ রায়ের আমলে ১৮৯৭ সালের ১০ জুন নাটোরের ডোমপাড়া মাঠে তিনদিনব্যাপী বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের এক অধিবেশন আয়োজন করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এ অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন। তবে শেষ দিন ১৮৯৭ সালের ১২ জুন প্রায় ১৮ মিনিটব্যাপী এক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাজা প্রমোদনাথ রায় সম্পূর্ণ প্রাসাদ কমপ্লেক্সটি পুনর্নির্মাণ করেন। রাজা প্রমোদনাথ রায় চারদিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত রাজবাড়ির ভেতরে বিশেষ কারুকার্য খচিত মূল ভবনসহ ছোট-বড় মোট ১২টি ভবন নির্মাণ করেন। তিনি ১৮৯৭ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছর সময় ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও চিত্রকর আর দেশি মিস্ত্রিদের সহায়তায় সাড়ে ৪১ একর জমির উপর এই রাজবাড়িটি পুনর্নির্মাণ করেন। তিনি মোগল ও প্রাশ্চাত্য রীতির মিশ্রণে কারুকার্যময় নান্দনিক এই ভবনটিকে এক বিরল রাজ ভবন হিসেবে গড়ে তোলেন
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর দিঘাপতিয়া রাজা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর দিঘাপতিয়ার রাজ প্রাসাদটির রক্ষণাবেক্ষণে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা সমাধানে দিঘাপতিয়ার মহারাজাদের এই বাসস্থানকে ১৯৬৭ সালের ২৪শে জুলাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান গভর্নরের বাসভবন হিসেবে উদ্বোধন করেন। পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে এর নাম পরিবর্তন করে উত্তরা গণভবন ঘোষণা করেন। তিনি ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এই ভবনের মূল প্রাসাদের ভিতর মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করেন। সেই থেকে ভবনটি ‘উত্তরা গণভবনে'র প্রকৃত মর্যাদা লাভ করে।