30/04/2024
আজকে আপনাদের কলকাতায় কমদামে শপিংকরার আইডিয়া দিব, আশা করি আপনাদের কেনাকাটা একটু হলেও সহজ হবে।
কলকাতায় কোথায় কেনাকাটা করবেন:
কেনাকাটা করতে কম বেশি সবাই পছন্দ করে। আর সেটা যদি হয় কলকাতা তাহলে তো কোথায়ই নেই।
এখানে কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যায়। তাইত বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর লোকজন ছুটে যায় কলকাতায়। রোজার ঈদের আগে এর সংখ্যা বাড়ে বহুগুন।
সব কিছু সস্তায় পাব এটা ভেবে আমিও যাই কলকাতা। কিন্তু যেয়ে দেখি ব্যাপারটা আসলে সেরকম নয়।
লোকমুখে যে গল্প শুনেছি তার সাথে বাস্তবতার মিল নেই অনেক ক্ষেত্রেই।
একটু খটকা লাগল? চলুন বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করি।
কলকাতার লোকজন একটু হিসাবি। এরা টাকা পয়সা খরচ করা থেকে জমাতে পছন্দ করে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের লোকজন পুরাই উল্টা।
আমরা কামে অকামে প্রচুর টাকা খরচ করি। আমাদের কাছে প্রচুর টাকা আছে, আমরা টাকা খরচ করতে জানি, আর এখানে খরচ করার জন্যই এসেছি এটা কলকাতার লোকজন বুঝে গেছে। তাই অনেক সময়ই উল্টা পাল্টা দাম চায়।
আমরা না জেনে, না বুঝে অনেক সময়ই তাদের খপ্পরে পরে যাই, আর বেশি টাকা দিয়ে আসি।
তাই প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে সঠিক ট্রিপ্স গুলো জেনে রাখা জরুরী।
আসুন জেনে নেই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তেমন কিছু দরকারি টিপস।
কলকাতা নিউ মার্কেটঃ
কলকাতা নিউ মার্কেট সম্বন্ধে নতুন করে বলার আর কিছু নেই। যারা শপিং ভালবাসে কলকাতায় এলে তারা সবাই এই এখানে একবার হলেও আসে। এমনকি বিদেশ থেকে আশা লোকজন ও এই ঐতিহ্যবাহী এলাকায় একবার হলেও আসে।
এখানে আপনে মোটামোটি যা চাইবেন তার সবই পাবেন। ছেলে মেয়েদের শৌখিন ও সুন্দর জামা থেকে শুরু করে জুতা, রুমাল, সুঁচ, শাড়ি ইত্যাদি সব কিছুই পাবেন এখানে। তবে এখানে টাউট লোকের অভাব নাই।
আপনে যদি সঠিক দাম না জানেন, আর বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ওরা বুজতে পারে তাহলে খবর আছে। অনেক বেশি আর উল্টাপাল্টা দাম হাঁকাবে। তাই একটু সাবধানে থাকবেন।
ট্রেজার আইল্যান্ডঃ
কম বাজেটে হালকা সাজে তাক লাগানো শাড়ী, হাতের কাজ করা জিনিস পাবেন এখানে। বাচ্চাদের পার্টি ড্রেস, ছেলেদের ভাল মানের পাঞ্জাবী এখানে কম দামে পাওয়া যায়।
এখানে এমন কিছু দোকান আছে যাদের পাঞ্জাবি আমাদের দেশের নামিদামি মার্কেটের দোকানে বিক্রি হয়, কয়েকগুন বেশি দামে।
আমি ১৮০০ রুপি দিয়ে যে পাঞ্জাবি নিয়েছিলাম ঢাকায় ওটা কম করে হলেও ৮০০০ – ১০,০০০ টাকা হবে।
মিলন /নিউ মিলনঃ
নিউ মার্কেটের কাছে ট্রেজার আইল্যান্ড এর বিপরীত পাশে এই দুই দোকানে আপনে ইন্ডিয়ান বিভিন্ন নামি দামি ব্রান্ডের মেয়েদের ভালমানের অরজিনাল থ্রী পিস্ জামা পাবেন।
এখানে একদমে সব কিছু বিক্রি হয়। তবে আপনে বললে তারা ৫-১০% ছাড় দিবে।
এরা মোটামোটি কমই দাম রাখে। আর এখানে আসলে সফ্ট ড্রিঙ্কস ফ্রি। নিউ মার্কেটে প্রতারিত না হতে চাইলে এখানে একবার ঘুরে যেতে পারেন।
(ভারতীয় অভ্যন্তরীণ রেল/বিমান টিকিট/হোটেল বুকিং সর্বনিম্ন মূল্যে আমাদের থেকে ঘরে বসেই সংগ্রহ করতে পারবেন । CMC/Apollo/Fortis/Manipal/Narayana/Sankara Netralaya সহ ভারতীয় যে কোন হসপিটালের Appointment ও টিকিটের জন্য আমাদের পেজে যোগাযোগ করুন)
শ্রী লেদারঃ
শ্রী লেদার এ সস্তায় ভালমানের ব্যাগ, জুতা পাওয়া যায়। ইন্ডিয়ায় আসলে একবার হলেও এখানে ঘুরে যাবেন। বাচ্চা, ছেলে, মেয়েদের চামড়ার জুতা, স্যান্ডেল, হাত ব্যাগ, কাঁধ ব্যাগ, মানি ব্যাগ, লাগেজ, বেল্ট, মোজা, জ্যাকেট, ইত্যাদি সব কিছুই অনেক সস্তায় এখানে পাবেন। বিশাল বড় শোরুম। একবার ঢুকলেই মাথা নষ্ট। প্রচুর কালেকশন্। আমাদের বাটা, এপেক্স এখানে জিরো। আর দাম আমাদের দেশের থেকে কয়েকগুন কম। এক বাটা জুতার দাম দিয়ে কয়েক জোড়া কিনতে পারবেন।
বিগবাজারঃ
বিগবাজার একধরণে সুপার শপ। আমাদের দেশের স্বপ্ন, আগোরার মতো। তবে এখানে রান্নাবান্নার জিনিসপত্র ছাড়াও দরকারি প্রায় সব কিছুই পাওয়া যায়।
আর আকারে আসলেই অনেকেই বিগ। এক জায়গায় আপনে জামাকাপড়, ব্যাগ, প্যান্ট, খাবার আইটেম, কসমেটিকস ইত্যাদি সব কিছুই পাবেন। আর এখানে সব সময়ই বিভিন্ন অফার চলতে থাকে। ইন্ডিয়া আসলে একবার হলেও এখানে ঘুরে যাবেন। কলকাতা নিউ মার্কেটের কাছেই এর একটি আউটলেট রয়েছে।
গড়িয়াহাটঃ
মেয়েদের যেকোনো ধরণের সিল্ক, জামদানি, কাতান, সুতি ইত্যাদি নানা ধরণের শাড়ি সহ ভাল দামে ব্র্যান্ডেড ও সাধারণ জামাকাপড় পাবেন এখানে।
নিউ মার্কেট এর পরে যদি এমন কোনো জায়গা থাকে যেখানে খুব ভালো দামে ব্র্যান্ডেড ও সাধারণ জামাকাপড় কিনতে পাওয়া যায়, তাহলে এই গড়িয়াহাট মার্কেটই হল তার যোগ্য। দোকান বা ফুটপাথ যেকোনো জায়গায় কেনাকাটা করে মজা।
মেট্রো প্লাজাঃ
হো চি মিন সরণীর ওপর এই শপিং মলে ব্র্যান্ডেড পোশাক যেমন পাওয়া যায়, তেমনই পাবেন নন-ব্র্যান্ডেড । এছাড়া জুতো, ব্যাগ, নানা অ্যাক্সেসরিজ ও পাবেন।
শ্রীরাম আর্কেডঃ
কলকাতার প্রথম সারির শপিং মল এর মধ্যে এটি একটি। আধুনিক ডিজাইনের পোশাক যেটি চাইবেন, তাই এখানে পাবেন। ফিশ-নেট স্টকিংস ও নানা কাজের জামাও যেমন পাবেন তেমনি সাংঘাতিক সুন্দর ও তাক লাগানো লেহেঙ্গা ও শরারা পেয়ে যাবেন।
বড় বাজারঃ
পাইকারি দরে জিনিস কিনতে গেলে বড় বাজার সেরা। শহরের সবচেয়ে পুরোনো বাজার এটি। বাজার শুরু ঙয় অষ্টাদশ শতকে। প্রায় ৫০০ বিঘা জমির উপর বাজার গড়ে উঠেছিল। একেবারে সংলগ্ন আরেকটি ৪০০ বিঘা বাজার ছিল আবাসিক এলাকায়।
শেঠ, বসাক, সোনার বণিক, মল্লিক এবং তাদের সমমর্যাদার ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা শুরু করেন। তুলনামূলক কম স্বচ্ছলতার বণিকরাও ছিলেন এখানে।
সেই চল এখনও আছে। শাড়ি, জামা, ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্র, প্রসাধনী, ঘরের জিনিসপত্র, গয়না সবই এখানে পাবেন পাইকারি দরে। কলকাতা তো বটেই বাংলা এমনকি সংলগ্ন রাজ্যের ব্যবসায়ীরাও এখান থেকে পাইকারি দরে জিনি কিনে নিয়ে যান। বহু ছোটো-বড়, নামী-অনামী সংস্থার নিজেদের কাঁচামাল এখান থেকে কেনে।
সকাল ১০টা থেকে সন্ধে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এখানে ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। উৎসবের মরশুমে ভিড় আরও বাড়ে।
কলেজ স্ট্রিটঃ
সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা। যে কোনও বই চান কলেজস্ট্রিটে চলে যান। শুধু বইয়ের নাম, লেখকের নাম আর প্রকাশনা সংস্থার নামটি বলে দিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই সেই বই আপনার হাতে চলে আসবে।
দেশি হোক বা বিদেশি, সব প্রকাশনা সংস্থার বইই পেয়ে যাবেন এখান। আর সবচেয়ে বড় কথা বইয়ের দাম এতই সস্তা যে বিদেশি পর্যটকরা শুনে অবাক হয়ে যান। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বইয়ের বাজার। শুধু নতুন বই নয়, এখানে পেয়ে যাবেন পুরোনো বইও। মানে সেকেন্ড হ্যান্ড বই।
আর জেনে রাখা ভালো, এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের বাজার।
চাঁদনিচকঃ
নিউ মার্কেট থেকে খানিকটা হেঁটে গেলেই চাঁদনি চক মার্কেট। সস্তায় দারুণ সব জিনিস পাবেন এখানে। অনেকে বলেন নিউ মার্কেটের থেকেও চাঁদনির বাজারের জিনিসের দাম কম। আর এই বাজারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল নানা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি।
অনেকে মজা করে বলেন, বিশ্বের কোথাো নাকি এত যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় না। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ফ্যান, লাইট, এসি, ফ্রিজ সহ যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক জিনিস এবং তার যন্ত্রপাতি এখানে পেয়ে যাবেন নামমাত্র দামে।
এই বাজারও খোলে সকাল ১০টায়। বন্ধ হয় রাত ৮টায়। কিছু কিছু পণ্য বাংলাদেশের তুলনায় অবিশ্বাস্য দামে পাবেন ।
যেমন একটা হচ্ছে IPS/ইনভার্টার বাংলাদেশী দামের তুলনায় অর্ধেক মূল্যে পেয়েছিলাম ।
পরিশেষে একটি অনুরোধ রইলো।
আপনার পাসপোর্ট একান্তই আপনার নাহ এটি একটি দেশ ও জাতির সন্মান বহন করে।
আপনি যখন বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য দেশে যান, তখন আপনার মাধ্যমেই বাংলাদেশকে চিনে অন্য দেশের মানুষজন।
নিজেকে, নিজের দেশকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করুন। তাতে আপনার মর্যাদা বাড়বে, দেশের মর্যাদা বাড়বে।
মনে রাখবেন!
আপনার সন্তান আপনার শ্রেষ্ঠ সম্পদ সন্তানকে সময়দিন, পাশাপাশি মাদকের
কুফল সম্পর্কে এখনই সচেতন করুন।
লেখাটি ভালো লাগলে বা আপনার উপকারে আসলে দয়া করে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ
Thank you stay safe, stay with us…
ADMIN—-PINU SARKER