13/10/2022
হাহা এই হইল হিন্দুত্ববাদী জমিদারবউ ইলা মিত্তিরের কাহানী।
হক সাব বহু ক্ষতি করছে বাংলাদেশের মানুষের
।।
আজ কমিউনিষ্ট ও তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলামিত্রের মৃত্যুবার্ষিকী ।২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন ।
সাতচল্লিশের পরপরই পাকিস্তান সরকার জমিদারি উচ্ছেদের পরিকল্পনা করে । এতে এদেশের হিন্দু জমিদারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে । ইলা মিত্র তেভাগা আন্দোলনের মাধ্যমে জমিদারি রক্ষার শেষ চেষ্টা করেছেন । জমিদারি উচ্ছেদ করে মুসলিম লীগ দুইশ বছরের শোষণের হাত থেকে বাঙালি কৃষকদের উদ্ধার করেছেন । এদেশের কমিউনিস্টরা ছিলেন জমিদারি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে;কারণ বেশিরভাগ কমিউনিস্ট ছিলেন জমিদার ও বুর্জোয়া ।
সাতচল্লিশের পাকিস্তান আন্দোলন ছিলো পূর্ব বাংলার কৃষকদের মুক্তির আন্দোলন । পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জমিদারি প্রথা বাতিল সহ কৃষকের উন্নতির জন্য তৎকালিন সরকার কাজ শুরু করেছিলেন । তাহলে জমিদার পত্নী ইলা মিত্রের তেভাগা আন্দোলনের উদ্দেশ্যে কি ছিল?
তেভাগা আন্দোলন, রানীমা খ্যাত ইলামিত্র পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে কেন গেল? নিজের জমিদারী রক্ষার জন্যই তো নাকি! বাংলার জমিদারী হারানো সব হিন্দু জমিদারেরা কম্যুনিস্ট হয়েছিল কেন? শ্রেনীস্বার্থ রক্ষার জন্য তারা সদ্যগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে বিশৃংখলা করতে তৎপর ছিল। গভীরভাবে দেখলে তেভাগা আন্দোলন ছিল আসলে জমিদারী রক্ষার আন্দোলন। ইলামিত্র তার জমিদারি রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে এই আন্দোলন করেছিল।
বর্তমানে শুধু ইলামিত্রকে আর তেভাগা আন্দোলনকে গ্লোরিফাই করা হয়। অথচ ইলামিত্রের স্বামী রমেন্দ্র মিত্রও এই তেভাগা আন্দোলনের নেতা ছিলেন। জমিদার রমেন মিত্র কি জন্য পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন আর স্বামী-স্ত্রী মিলে সহজ সরল সাঁওতালদের ক্ষেপিয়ে থানা দখল ও পুলিশ হত্যা করিয়েছিলেন। কোন জবাব আছে? আমাদেরকে এসব মতলবী ইতিহাসের পুন:পঠন পাঠন দরকার।
বদরুদ্দীন উমর তার পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালিন রাজনীতি বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডে কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন যা হুবহু মিলে যায়~তেভাগা আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল কৃষক সমিতির মাধ্যমে এর পিছনে ছিল কমিউনিস্ট পার্টির ইন্দন । আর কমিউনিস্ট পার্টির পিছনে ছিল জমিদারদের ইন্দন । আর এদের সবারই উদ্দেশ্যে ছিল সরকার উৎখাত করা ।
অধ্যাপক ডক্টর এবনে গোলাম সামাদ লিখেছেন:"তখন পাকিস্তান সবে হয়েছে। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি তখনো কার্যত চলেছিল ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে। তারা ১৯৫০ সালে অনুসরণ করতে চেয়েছিল রণদিবের অতি বিপ্লবী নীতিকে। এর ফলে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির হয় ভয়ঙ্কর ক্ষতি। তখন পাকিস্তান কেবল হয়েছে। মানুষের কাছে কমিউনিস্টরা চিহ্নিত হয় পাকিস্তানবিরোধী হিসেবে। মানুষ তাদের দেশদ্রোহী হিসেবে করতে থাকে ঘৃণা। রণদিবের নীতি অনুসরণ করে ইলামিত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে সাঁওতাল বিদ্রোহ ঘটান ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি। সাঁওতাল ভাগচাষিরা নাচোল থানা দখল করে। নাচোল থানা দখল করতে যেয়ে তারা হত্যা করে নাচোল থানার দারোগা ও তিনজন পুলিশকে। এরা হলেন- তফিজ উদ্দিন মোল্লা (দারোগা), তপেশচন্দ্র আচার্য, শাহাদত আলী ও নওয়াজেশ আলী। কিন্তু নাচোল থানা তারা দখল করে রাখতে পারে না। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা যায় অনেক সাঁওতাল। ইলামিত্র ভারতে পালাতে যেয়ে ধরা পড়েন তখনকার পূর্ব বাংলার সেনাবাহিনীর হাতে এবং হন চরম নির্যাতনের শিকার। তাকে দাঁড় করানো হয় বিচারের কাঠগড়ায়। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ইলামিত্র বলেন, তিনি দারোগা ও পুলিশকে খুন করেননি। সাঁওতালদের তিনি দারোগা ও পুলিশকে খুন করতে বলেননি। সাঁওতালরাই করেছে এটা। এর জন্য তিনি মোটেও দায়ী নন। ইলামিত্রের দু’জন উকিল বলেন, সাঁওতালরা অসভ্য, আদিম, বর্বর। তাদের পক্ষে সব কিছুই করা সম্ভব। ইলামিত্র ভদ্রঘরের অতি উচ্চশিক্ষিতা গৃহবধূ। তার পক্ষে এ রকম কিছু কল্পনাও করা যায় না। ইলামিত্রের ফাঁসি হয় না; হয় সারা জীবনের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড।
এরপর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে। ফজলুল হক হন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী। তিনি জেলে অসুস্থ ইলামিত্রকে চিকিৎসার জন্য যেতে দেন কলকাতায়। কিন্তু ইলামিত্র আর কলকাতা থেকে ফেরেন না। তিনি কলকাতায় রাজনীতি করতে শুরু করেন। পশ্চিম বাংলার বিধানসভায় বিধায়ক নির্বাচিত হন কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে। কিন্তু একপর্যায়ে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি পরিত্যাগ করে যতদূর জানি যোগ দেন কংগ্রেসে। তিনি থাকেন না আর কমিউনিস্ট। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে তিনি একবার এসেছিলেন নাচোলে। এ দেশের মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরা ও ভারতের কংগ্রেসের প্রতি অনুরক্তরা তাকে নাচোলে প্রদান করেন বিপুল সংবর্ধনা। রাজশাহী শহরেও তিনি করেছিলেন একটি বিশেষ জনসভা।
ইলামিত্রকে নিয়ে ২০০৯ সালে তৈরি করা হয় ‘নাচোলের রানী’ নামে একটি ছায়াছবি, যা পুরস্কৃত হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা। এভাবে চেষ্টা চলে ইলামিত্রকে একজন মহান বিপ্লবী নেত্রী হিসেবে ফুটিয়ে তোলার। এ সময় ভারতের কংগ্রেস সরকার চাচ্ছিল ইলামিত্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে। আর বোঝাতে চাচ্ছিল, হানাদার পাকিস্তান সরকার করেছিল ইলামিত্রের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন। জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিল পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব। অথচ পূর্ব বাংলার মানুষ ১৯৫০ সালে সবাই ছিল পাকিস্তানি আর ছিল ইলামিত্রবিরোধী। গোটা নাচোল থানার মুসলমানেরা ইলামিত্রের পক্ষে ছিলেন না। তখনকার রাজনৈতিক পরিমণ্ডল ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তাই তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় আর কোনো জায়গায় নাচোলের মতো কোনো থানা দখলের ঘটনা ঘটতে পারেনি"।
শেখ নজরুল
"এবনে গোলাম সামাদ রচনা সংগ্রহ" বইটি সংগ্রহ করতে যোগাযোগ:01746622848
তিন খন্ড একত্রে বইটির মূল্য ১৮০০ টাকা