Baitullah Hajj Umrah

Baitullah Hajj Umrah সহিহ শুদ্ধ হজ্জ ও ওমরাহ এর খেদমতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

03/08/2022

!!! উমরাহ এর সুখবর !!!

হজের পর আবারো চালু হলো সরাসরি আমাদের সার্বিক তত্ত্ববধানে “বাইতুল্লাহ হজ ওমরাহ সার্ভিস” এর প্রতি মাসের ওমরাহ প্রোগ্রাম আলহামদুলিল্লাহ।

ওমরাহর ভিসা,♥️
এই ওমরাহ ভিসার মেয়াদ তিন মাস (৯০ দিন) এবং গিয়ে অবস্থান করা যাবে তিন মাস (৯০ দিন) পর্যন্ত মক্কা মদীনাতে এবং সৌদি আরবের যে কোন জায়গায় যাওয়া যাবে এই ভিসা নিয়ে।

বিশেষ সুখবর : ৩ তারিখ রাত থেকে কাবা ঘরের চারিদিকের বেড়া তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন কাবা ঘর, হাজরে আসওয়াদ, মুলতাজাম, মুছল্লায়ে জিবরাইল, রুকনে ইয়ামানী, হাতিম, দরজার চৌকাঠ স্পর্শ করা যাবে ইচ্ছেমতো।

: আমাদের ওমরাহ প্রোগ্রাম সূচী :

সফরের সম্ভাব্য তারিখ :

১. প্রথম কাফেলা - আগামী ৭ আগস্ট ২০২২ রবিবার দুপুরে ৪৫ জন রওনা দিবো ইন শা আল্লাহ।

২. দ্বিতীয় কাফেলা - ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মাঝে ইন শা আল্লাহ (বুকিং চলছে, অল্প কয়েকটি আসন বাকী আছে)।

৩. তৃতীয় কাফেলা - ২৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বরের মাঝে ইন শা আল্লাহ (বুকিং চলছে সীমিত আসনে)

৪. চতুর্থ কাফেলা - ১৮ থেকে ২০ অক্টোবরের মাঝে ইন শা আল্লাহ (বুকিং চলছে সীমিত আসনে)

- উমরাহ বুকিং নিয়মাবলী -

 প্যাকেজ খরচ : ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা (ডলার / রিয়ালের রেট পরিবর্তনে প্যাকেজ রেট কম / বেশীও হতে পারে)
# প্রতি রুমে ৪ জনের অবস্থান। এক রুমে ১ / ২ / ৩ জন করে থাকলে চাইলে কিছুটা খরচ বাড়বে।
# খাওয়া খরচ ও অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচ প্যাকেজের বাইরে (আমরা খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়)।
# ৫ স্টার হোটেলে থাকতে চাইলে আলোচনা সাপেক্ষে প্যাকেজ নির্ধারিত হবে হোটেলের মান ও সুবিধা অনুযায়ী।

 বাচ্চাদের খরচ : ১২ বছরের উপরে একই খরচ এবং ছোট বাচ্চাদের খরচ বয়স ও টিকিট অনুসারে আলোচনা সাপেক্ষে।

 কতদিনের সফর : ১৩ থেকে ১৫ দিন (টিকিট প্রাপ্তিতে নির্ভর করবে)।

 প্যাকেজে যা থাকছে :
# বিমান টিকিট (বিমান বাংলাদেশ বা সাউদিয়া এয়ারলাইন্স সরাসরি ফ্লাইট)।
# ওমরাহ ভিসা # হোটেল রিজার্ভেশন # মেডিকেল ইনস্যুরেন্স।
# এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়া আসা - যাওয়া, মক্কা থেকে মাদীনা আসা - যাওয়ার ট্রান্সপোর্ট।
# মক্কা - মদীনাহ এর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে যিয়ারত করানো।
# জিদ্দা, তায়েফের বিভিন্ন স্থান, বদর, বীরে শিফা, বীরে রাওহায় যিয়ারতে যেতে চাইলে ব্যবস্থা করে দেওয়া।
# ফ্রি এক্সক্লুসিভ ওমরাহ প্রশিক্ষণ ২ দিন ব্যাপী।
# যাত্রার শুরু থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক ২১ বছরের অভিজ্ঞ গাইড এর তত্ত্বাবধান।

 হোটেলের মান : ২ / ৩ স্টার সমমানের হোটেল।

 হোটেলের দুরুত্ব : মদীনা - ৪৫০ থেকে ৬৫০ মিটার, মক্কা - ৪৫০ থেকে ৬০০ মিটার মাসজিদুল হারামের চত্বর থেকে।

 বুকিং দেওয়ার নিয়ম :

সেপ্টেম্বরের ২ টি ও অক্টোবর গ্রুপের জন্য সীমিত আসনে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বুকিং চলছে।

বুকিং দেওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজ -
১. পাসপোর্টের কপি।
২. ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকা জন প্রতি।
৩. কোভিড ১৯ টিকা দেওয়ার সার্টিফিকেট এর কপি।
৪. এক কপি ছবি (পাসপোর্ট সাইজ)
যোগাযোগ - 01621289156 (হোয়াটসএ্যাপ) বা ইনবক্সে ম্যাসেজ দিন।

ছবিতে পুরাতন কাবাঘরকাবা, কাবাঘর, কাবা শরীফ (আরবি: الكعبة al-Ka‘bah), আরও যে নামে পরিচিত একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত, যা সৌদ...
27/11/2021

ছবিতে পুরাতন কাবাঘর
কাবা, কাবাঘর, কাবা শরীফ (আরবি: الكعبة al-Ka‘bah), আরও যে নামে পরিচিত

একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত, যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে। মসজিদ আল-হারাম (আরবি: المسجد الحرام‎‎) ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান যা কাবাকে ঘিরে অবস্থিত।সৌদি আরবের মক্কা শহরে এর অবস্থান। মুসলিমরা নামাজের সময় কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। হজ্জ ও উমরার জন্যও মসজিদুল হারামে যেতে হয়। মসজিদ আল-হারামের ধারণক্ষমতা ৯,০০,০০০ মুসল্লি (হজ্জের সময় ৪০,০০,০০০ তে উন্নীত হয়)। মিনার রয়েছে ৯টি। প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ৮৯ মিটার (২৯২ ফুট)।

কুরআনে বর্ণিত রয়েছে যে, ইবরাহিম (আ) ও ইসমাইল (আ) দুজন একত্রে কাবা নির্মাণ করেন। ইবরাহিম (আ) কাবার পূর্ব কোণে হাজরে আসওয়াদ পাথর স্থাপন করেছিলেন যা হাদিস অনুযায়ী বেহেশত থেকে আগত। এই পাথর একসময় দুধের মত সাদা ছিল কিন্তু মানুষের গুনাহর কারণে এটি কালো হয়ে পড়ে। ইবরাহিম (আ) এর নির্মিত কাবার মধ্যে এই পাথরটিই একমাত্র আদি বস্তু হিসেবে টিকে রয়েছে। কাবা নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ইবরাহিম (আ) কে হজ্জের জন্য আহ্বান করতে আদেশ দেয়া হয়। কুরআনের সূরা হজ্জে উল্লেখ আছে

“আর মানুষের কাছে হজ্জ ঘোষণা করে দাও। ওরা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেটে ও ধাবমান উটের পিঠে চড়ে, আসবে দুরদূরান্তের পথ অতিক্রম করে।”
(সূরা হজ্জ, আয়াত ২৭)

কাবা ২১৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে নির্মিত হয় বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। ইসলাম অনুযায়ী কাবা পৃথিবীর প্রথম ইবাদতের স্থান। পি রাথমিকভাবে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলেও কালক্রমে কাবা পৌত্তলিকতার চর্চা শুরু হয়। মক্কা বিজয়ের আগে এখানে ৩৬০টি দেবদেবীর মূর্তি ছিল। মুহাম্মদ (সা) এর মক্কা বিজয়ের পর কাবার মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলা হয়। ফলে কাবায় পৌত্তলিকতার চর্চা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মসজিদুল হারামের নির্মাণ বিভিন্ন সময়ে সম্পাদিত হয়। ৬৯২ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদে প্রথম বড় আকারের সংস্কার সাধিত হয়। এর পূর্বে মসজিদ ছিল কাবাকে কেন্দ্র করে একটি খোলা স্থান। সংস্কারে ছাদসহ দেয়াল দিয়ে এলাকাটি ঘিরে দেয়া হয়। ৮ম শতাব্দীর শেষ নাগাদ মসজিদের পুরনো কাঠের স্তম্ভগুলোর বদলে মার্বেলের স্তম্ভ স্থাপন করা হয় এবং নামাজের স্থান বৃদ্ধিসহ মিনার যুক্ত করা হয়। ইসলামের প্রচার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে হাজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদে আরো সংস্কার করা হয়। ১৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় সেলিম প্রধান স্থপতি মিমার সিনানকে মসজিদ পুনর্নির্মাণের আদেশ দেন। এই পুনর্নির্মাণের সময় সমতল ছাদগুলোর বদলে ক্যালিগ্রাফি সম্বলিত গম্বুজ ও নতুন স্তম্ভ স্থাপন করা হয়। এগুলো বর্তমান মসজিদের সবচেয়ে পুরনো প্রত্ননিদর্শ‌ন। ১৬২১ ও ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কাবা ও মসজিদ আল হারামের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান চতুর্থ মুরাদের শাসনামলে কাবা পুনর্নির্মিত হয় এবং মসজিদ আল হারাম সংস্কার করা হয়। মসজিদ সংস্কারের সময় পাথরের নতুন খিলান নির্মিত হয় এবং তিনটি নতুন মিনার যুক্ত করা হয়। মেঝেতে মার্বেলের আচ্ছাদন নতুন করে স্থাপিত হয়। এরপর প্রায় তিনশত বছর মসজিদের রূপ অপরিবর্তিত ছিল।

সৌদি শাসন শুরু হওয়ার পর ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বড় আকারের সংস্কার সাধিত হয়। এসময় আরো চারটি মিনার যুক্ত করা হয়, ছাদ সংস্কার করা হয় এবং মেঝে পাথর ও মার্বেল দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়। সাফা ও মারওয়াকে এসময় মসজিদের দালানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংস্কারের সময় উসমানীয় যুগের অনেক অংশ বাদ দেয়া হয়েছিল। বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের শাসনামলে দ্বিতীয়বার সংস্কার করা হয়। এসময় নামাজের নতুন স্থান এবং বাইরে নামাজ পড়ার স্থান যুক্ত করা হয়। এই নতুন অংশে কিং ফাহাদ গেট দিয়ে প্রবেশ করা যায়। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৮৮ থেকে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তৃতীয় সৌদি সম্প্রসারণ সম্পন্ন হয়। এসময় আরো মিনার যুক্ত করা হয়। সেসাথে আরাফাত, মিনা, মুজদালিফাতেও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মিত হয়। তৃতীয় সম্প্রসারণে ১৮টি নতুন ফটক যুক্ত করা হয়, প্রায় ৫০০টি মার্বেল স্তম্ভ যুক্ত করা হয়, তাপ নিয়ন্ত্রিত মেঝে, এয়ার কন্ডিশন, চলন্ত সিড়ি ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যুক্ত হয়। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদ আল হারামের চতুর্থ সম্প্রসারণ কার্য‌ শুরু হয় যা ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ মসজিদের ধারণ ক্ষমতা ২০ লক্ষে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে বাদশাহ মারা যাওয়ার পর তার উত্তরসূরি সালমান বিন আবদুল আজিজ এই সম্প্রসারণ চালু রেখেছেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর সম্প্রসারণের সময় ব্যবহৃত একটি ক্রেন ঝড়ে ভেঙে পড়ায় ১১১ জন মারা যান। মসজিদুল হারাম ইসলামের প্রধানতম মসজিদ। এখানে অবস্থিত কাবার দিকে ফিরে মুসলিমদের নামাজ পড়তে হয়। হজ্জ ও উমরার সময়ও মসজিদুল হারামে উপস্থিত হতে হয়। কাবা মুসলিমদের কিবলা। যেকোনো নামাজ পড়ার সময় এর দিকে ফিরতে হয়। মুহাম্মদ (সা) নবুয়ত লাভের পর প্রথমে মসজিদুল আকসার দিকে ফিরে নামাজ পড়তে হত। হিজরতের পর কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী কাবাকে কিবলা হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। মসজিদে কিবলাতাইনে এ বিষয়ক কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছিল।

ইসলাম ধর্ম মতে কাবা কে সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে মনে করা হয়। এটি মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ পরেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিন করেন।

কাবা একটি বড় পাথরের কাজ করা কাঠামো যার আকৃতি প্রায় একটি ঘনক এর মত। কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকা'আব অর্থ ঘন থেকে। এটি কাছের পাহাড়ের গ্রানাইট দ্বারা তৈরি যা দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২৫সেঃমিঃ (১০ ইঞ্চি) মার্বেল পাথরের ভিত্তির উপর যা বাইরের দিকে ৩০সেঃমিঃ (১ ফুট) বাড়িয়ে আছে। কাঠামোতে জায়গার পরিমাণ প্রায় ১৩.১০ মিঃ (৪৩ ফুট) উচ্চতা, পাশাপাশি ১১.০৩ মিঃ X ১২.৬২ মিঃ। চারটি কোন কম্পাসের প্রায় চার বিন্দু বরাবর মুখ করা। কাবার পূর্ব কোনা হচ্ছে রুকন-আল- আসওয়াদ" (কাল পাথর অথবা "আল-হাজারুল-আসওয়াদ"), একটি উল্কাপিন্ডের অবশেষ; উত্তর কোনা হল "রুকন-আল-ইরাকী" (ইরাকী কোণ); পশ্চিমে রয়েছে "রুকন-আল-সামী" (পূর্ব-ভূমধ্য সাগরীয় কোণ) এবং দক্ষিণে "রুকন-আল-ইয়ামানী" ('ইয়েমেনী কোণ')। কাবা কালো সিল্কের উপরে স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি করা কাপড়ের গিলাফে আবৃত থাকে। কাপড়টি কিসওয়াহ নামে পরিচিত ; যা প্রতিবছর পরিবর্তন করা হয়। কালেমা শাহাদাত এ কাপড়ের মধ্যে সুতা দিয়ে লিখার কাঠামো তৈরি করা হয়। এর দুই তৃতীয়াংশ কোরানের বাণী স্বর্ণ দিয়ে এম্রোয়ডারি করা হয়।

বর্তমানে গিলাফ কালো রেশমী কাপড় নির্মিত, যার ওপর স্বর্ণ দিয়ে লেখা থাকে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ", "আল্লাহু জাল্লে জালালুহু", "সুবহানাল্লাহু ওয়া বেহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিম" এবং "ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান"। ১৪ মিটার দীর্ঘ এবং ৯৫ সেমি প্রস্থ ৪১ খণ্ড বস্ত্রখণ্ড জোড়া দিয়ে গিলাফ তৈরি করা হয়। চার কোণায় সুরা ইখলাস স্বর্ণসূত্রে বৃত্তাকারে উৎকীর্ণ করা হয়। রেশমী কাপড়টির নিচে মোটা সাধারণ কাপড়রের লাইনিং থাকে। একটি গিলাফে ব্যবহৃত রেশমী কাপড়ের ওজন ৬৭০ কিলোগ্রাম এবং স্বর্ণের ওজন ১৫ কিলোগ্রাম। বর্তমানে এটি তৈরীতে ১৭ মিলিয়ন সৌদী রিয়াল ব্যয় হয়। কাবা শরীফকে গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন কখন বা কার উদ্যোগে শুরু হয় সে সম্পর্কে মতভেদ আছে। একটি ঐতিহাসিক সূত্রানুযায়ী নবী হযরত ইসমাঈল (আ.) প্রথম পবিত্র কাবা শরীফকে গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন করেন। ভিন্ন আরেকটি বর্ণনায় আছে যে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ব পুরুষ আদনান ইবনে আইদ পবিত্র কাবা শরীফকে প্রথম গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদিত করেন। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুসারে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদই সম্ভবতঃ পবিত্র কাবা শরীফ গিলাফ আচ্ছাদনকারী প্রথম ব্যক্তি। ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইয়াসরিব শহরে (অর্থাৎ, মদীনা শহর) হিজরতের ২২০ বৎসর আগে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদ এই শহরটিতে (ইয়াসরিব) আক্রমণ করেন। তুব্বা আবু কবর আসাদ ইয়াসরিব ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় মক্কায় গিয়ে কাবা শরীফ তাওয়াফ করত: মাথা মুণ্ডন করেন। অত:পর তিনি এই শহরে কয়েকদিন অবস্থান করেন। মক্কায় অবস্থানকালে তিনি ঘুমের মধ্যে একদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি কাবা শরীফ গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন করছেন। এ স্বপ্ন দ্বারা প্রাণিত হয়ে অবিলম্বে "খাসাপ" দ্বারা কাবাঘরটি আচ্ছাদিত করেন। "খাসাপ" হচ্ছে তালগাছ জাতীয় গাছের পাতা ও আঁশের তৈরি এক ধরনের মোটা কাপড়। অনন্তর তিনি আবার স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি আরো উন্নতমানের কাপড় দ্বারা কাবা শরীফ আচ্ছাদন করছেন। অত:পর তিনি খাসাপের পরিবর্তে মামিজিয়ান, পাপিরাস (মিশর দেশীয় নলখাগড়া বিশেষ পাতা) দ্বারা কাবা ঘর আচ্ছাদন করেন। ইয়েমেনের মামিজ নামক একটি উপজাতীয় গোত্র এই কাপড় তৈরি করতো। এরপরও তৃতীয়বারের মতো তিনি স্বপ্নে আরো উন্নত মানের কাপড় দ্বারা কাবা আচ্ছাদনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তৃতীয় দফা স্বপ্নটির পর তিনি ইয়েমেনের লাল ডোরাকাটা কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবা ঢেকে দিয়েছিলেন। তুব্বা আবু কবর-এর রীতি অনুযায়ী মক্কার স্থানীয় লোকজন সুন্দর কাপড় বা গিলাফ দিয়ে পবিত্র কাবাঘর আচ্ছাদন করতে থাকে এবং তা নিয়মিত প্রথায় পরিণত হয়। বর্তমানে দামী কালো রং সিল্কের কাপড়ের তৈরি স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি মোটা গিলাফ দিয়ে কাবা শরীফ আচ্ছাদন করা হয়। কাপড়টি কিসওয়াহ নামে আখ্যায়িত। আব্বাসীয় খলিফা আল আব্বাস আল মাহদী ১৬০ হিজরীতে পবিত্র হজ্ব পালনকালে পবিত্র কাবা থেকে একটি ছাড়া সবগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এখনো এই ধারাই অব্যাহত রয়েছে। ৭ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের আগে মুহম্মদ (সা:) গিলাফ পরানো শুরু করেননি। অত:পর গিলাফ পরানোর সংস্কৃতি অব্যাহত থাকে। বাদশাহ বাইবার্স হচ্ছেন পবিত্র কাবায় গিলাফ পরিয়ে দেয়া প্রথম মিশরীয় শাসক। তারপর ইয়েমেনের বাদশা আল মুদাফ্ফার ৬৫৯ হিঃ কাবা শরীফে গিলাফ পরান। পরবর্তীতে মিসরের শাসকরা পর্যায়ক্রমে এ কাজ অব্যাহত রাখেন। বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদ মক্কা-মদীনার দুই পবিত্র মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১৩৪৬ হিজরিতে কাবা শরীফের গিলাফ তৈরির জন্য একটি বিশেষ কারখানা স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন। একই বৎসর মাঝামাঝি সময়ে প্রয়োজনীয় কাপড় তৈরি করে মক্কার দক্ষ শিল্পীর মাধ্যমে তা সুন্দর নকশায় সুসজ্জিত করে কাবা শরীফ আচ্ছাদিত করা হয়। ১৩৫৭ হিজরী পর্যন্ত এই কারখানাটি গিলাফ বা "কিসওয়াহ" তৈরি অব্যাহত রাখে। পরবর্তীতে ১৩৮১ হিজরীতে সৌদি হজ্জ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দক্ষ সৌদি কারিগর দ্বারা রেশমী ও সোনালী সুতা দিয়ে গিলাফ তৈরি করে কাবার গায়ে পরিধানের ব্যবস্থা করা হয়। ১৩৮২ হিজরীতে বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আব্দুল আজিজ নতুন ডিক্রিজারির মাধ্যমে নতুন করে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। খাঁটি প্রাকৃতিক রেশমী রং এর সাথে কালো রং-এর কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে কুরআনের কিছু আয়াত শোভা পায়। অক্ষরগুলো সোনালী আভায় উদ্ভাসিত। প্রতি বৎসর হজ্জের ঠিক আগে কাবা শরীফের গিলাফ সরিয়ে তা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। হাজীদের ইহরামের শ্বেতশুভ্রতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই সাদা গিলাফ পরানো হয়। হজ্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১০ জিলহজ্জ তারিখে নতুন গিলাফ পরানো হয়। প্রতিস্থাপতি গিলাফটি খণ্ড খণ্ড করে বিলিয়ে দেয়া হয়।

তাওয়াফ হল কাবা ঘরের চারপাশে ৭ বার প্রদক্ষিণ করা, ঘড়ির বিপরীতমুখী ( Counter clock-wise direction) হয়ে । কাবার চারদিকে একত্রে ঘুরে মুসলমানেরা এক আল্লাহ্‌র একাত্মতা প্রকাশ করার জ্বলন্ত উদাহরন ।তাওয়াফ শুরুর পূর্বে হজরে আসওয়াদে চুমু দেয়া নিয়ম। তবে ভিড়ের কারণে এর কাছে যাওয়া সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।

হাজরে আসওয়াদ (আরবি: ‫الحجر الأسود‬‎‎ al-Ḥajar al-Aswad বাংলা:কালো পাথর) হল একটি কালো রঙের প্রাচীন পাথর যা কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মাতাফ থেকে দেড় মিটার (চার ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী এই পাথর আদম ও হাওয়ার সময় থেকে পৃথিবীতে রয়েছে। প্রাক ইসলামি পৌত্তলিক সমাজেও এই পাথরকে সম্মান করা হত। ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী, রাসুল মুহাম্মদ (সা) ৬০৫ সালে এটি কাবার দেয়ালে স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে এটি একটি রূপার ফ্রেমে আটকানো অবস্থায় কাবার সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এর রং গাঢ় কালো এবং লক্ষাধিক হাজির স্পর্শের কারণে এটি মসৃণ আকার লাভ করেছে। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী এটি আদম ও হাওয়ার সময় বেহেশত থেকে পৃথিবীতে এসে পড়ে। এটিকে একটি উল্কা বলা হলেও এর সত্যতা নিশ্চিত না। হজ্জ বা উমরার অংশ হিসেবে মুসলিমরা তাওয়াফ করে থাকেন। এর শুরুতে হাজরে আসওয়াদ চুমু দেয়া রীতি রয়েছে। ফ্রেমে মুখ ঢুকিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করতে হয়। এর পাশে ২৪ ঘণ্টা উপস্থিত থাকে সৌদি পুলিশ। তারা খেয়াল রাখে, ফ্রেমে মাথা ঢোকাতে বা চুম্বন করতে কারও যেন কষ্ট না হয়। তবে চুমো দেয়া সম্ভব না হলে হাত ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা হয়।

ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর সময়ে পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদকে আগের জায়গায় কে বসাবেন—এ নিয়ে কুরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজের গায়ের চাদর খুলে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরতে বলেন এবং দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটান। এই পবিত্র পাথরের দৈর্ঘ্য ৮ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৭ ইঞ্চি। বর্তমানে এটি আট টুকরো। আগে হাজরে আসওয়াদ ছিল আস্ত একটি পাথর। হজরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগলে হাজরে আসওয়াদ কয়েক টুকরা হয়ে যায়। আবদুল্লাহ বিন জোবায়ের পরে ভাঙা টুকরাগুলো রুপার ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেন। ফ্রেম সংস্করণের সময় চুনার ভেতর কয়েকটি টুকরা ঢুকে যায়। বর্তমানে হাজরে আসওয়াদের আটটি টুকরা দেখা যায়। বড় টুকরাটি খেজুরের সমান।

কাবার ইতিহাস:
পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা আল-ইমরানের ৯৬ আয়াতে বলেন, “নিশ্চই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদত রূপে নিরূপিত হয়েছে, তা ঐ ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত”।
কাবাঘরটি আল্লাহ তায়ালার আরশে মুয়াল্লাহ’র ছায়াতলে সোজাসুজি বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে স্থাপন করেন। হযরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) উভয়ই আল্লাহ তায়ালার কাছে ইবাদতের জন্য একটি মসজিদের পার্থনা করেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া কবুল করেন এবং বাইতুল মামুরের আকৃতিতে পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করেন। এখানে হযরত আদম (আঃ) সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে থাকেন (শোয়াব-উল-ঈমান, হাদিসগ্রন্থ) এর অনেক তফসিরবিদের মতে, মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান আল্লাহ তায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন”।

হফসিরবিদ মজাহিদ কলেন, “আলস্নাহ রাব্বুল আলামিন মুয়াল্লাহ’র স্থানকে সমগ্র ভুপৃষ্ঠ থেকে দু’হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন”। মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে হযরত আবুযর গিফারী হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসূল (সঃ) তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, “বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এরপরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণে ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়।”
হযরত আদম (আঃ) কাবাঘর আল্লাহ তায়ালার আদেশে পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আল্লাহ তায়ালার বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতো,আল্লাহ তায়ালার কাছে হাজিরা দিতো এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিত। “লাব্বাইক আল্লা হুম্মা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা, লাকাওয়ালা মুলক, লাশারিকা, লাকা লাব্বাইক”।

এভাবে চলতে চলতে দিন গত হতে থাকলো। এরপর হযরত শীস (আঃ) কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করলেন। দিন দিন এবাদতকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। এরপর কাবা শরীফ নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন হযরত ইব্রাহীম (আ;)। হযরত ইব্রাহীম (আ·) হযরত ইসমাইল (আ·) কে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুননির্মাণ করেন। হযরত ইব্রাহীম (আ·) কাবাঘর সংস্কার করে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ কর।’ আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজ্বের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের রহমত কর। নিশ্চই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক!

তাদের মধ্যে থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করলেন। যিনি তাদের কাছে তোমাদের আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চই তুমি মহাপরাক্রমশালী”। আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর বংশ হতে হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-কে শেষ নবী ও রাসূল হিসাবে আল্লাহ পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। এরপর কয়েকশ’ বছর গত হলো। পবিত্র কাবাঘর সংস্কার করলো আমালিকা সম্প্রদায়। তারপর আরো শ’ শ’ বছর কিংবা হাজার হাজার বছর পরে কাবাঘর সংস্কার করলো মক্কার জুরহাস সম্প্রদায়। আরবের অর্থাৎ মক্কায় যে সকল গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিপত্তি ছিল, তাদের দায়িত্ব থাকতো কাবা শরীফ দেখাশুনার। এ দায়িত্ব পালনকে তারা সম্মানিত ও গর্বের মনে করতো। শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হলো। কাবা শরীফ ও কাবাঘরকে সংস্কার করলেন মোযার সম্প্রদায়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নবুয়্যত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। এ কোরাইশ বংশেই মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খ্রীঃ · জন্মগ্রহণ করেন। কোরাইশরা কাবা শরীফ সংস্কারের পর হাযরে আসওয়াত স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়।
সকলের সম্মতিক্রমে আল্লাহর রাসূল কাবাগৃহে হাযরে আসওয়াদ কাবা শরীফে স্থাপন করেন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জীবিত অবস্থায় ৬৪ হিজরীতে আব্দুলস্নাহ ইবনে জোবায়ের (রাঃ) কাবা শরীফ সংস্কার করেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরীতে কাবা শরীফ সংস্কার করেন। সুদীর্ঘ ১৪শ’ বছরে কাবাগৃহে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি। শুধুমাত্র কাবাঘরের চারপাশে অবস্থিত মসজিদে হারামের পরিবর্ধন, সংস্কার বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। কাবাঘরের রক্ষণাবক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরীফের মোতোয়াল্লির দায়িত্বে থাকেন। ভৌগলিক দিক দিয়ে মক্কা ও আরব উপদ্বীপ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। মক্কানগরী পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় মহান আল্লাহর কাবাঘর মক্কাতেই স্থাপন করেন। পবিত্র হজ্ব পালন করতে লাখ লাখ মুসলমান মক্কা শরীফে গমন করেন। জিলহজ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে মূল হজ্ব অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আযহার দিন। এ দিন কোরবানী দিতে হয়। যা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর স্মৃতি বহন করে চলছে হাজার হাজার বছর ধরে। যমযম কূপ ও ঠিক তেমনি হযরত ইসমাইল (আঃ) ও তার মা বিবি হাজেরা (আঃ)-এর স্মৃতি বহন করে চলছে। এ যমযম কূপ মহান আল্লাহর কুদরতের অপূর্ব মহিমার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। হজ্ব মুসলমানদের ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র কাবাঘর হেফাজতের মালিক মহান আল্লাহ্ নিজে।

হজ্জ ও উমরার আহকাম  সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর:উমরার রুকন কয়টি ও কি কি? ১টি। সেটি হলো কাবাঘর তাওয়াফ করা। আর উমরার শর্ত হলো ...
18/10/2021

হজ্জ ও উমরার আহকাম সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর:

উমরার রুকন কয়টি ও কি কি?
১টি। সেটি হলো কাবাঘর তাওয়াফ করা। আর উমরার শর্ত হলো ইহরাম বাঁধা।[১] তবে কেউ কেউ বলেছেন উমরার রুকন তিনটি। যথা :
(১) ইহরাম বাঁধা।
(২) তাওয়াফ করা
(৩) সাঈ করা।
উল্লেখ্য যে, এ রুকনগুলোই উমরার ফরয।
উমরার ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?
৩টি, সেগুলো হল :
(১) ইহরামের কাপড় পরে উমরার নিয়ত করার কাজটি মীকাত পার হওয়ার আগেই করা।
(২) ‘সাফা ও মারওয়া’ এ দু’টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাঈ করা। কিছু আলেম একে রুকন অর্থাৎ ফরয বলেছেন।
(৩) চুল কাটা (মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা)।
উমরা করার হুকুম কি?
হানাফী ও মালেকী মাযহাবে উমরা করা সুন্নাত। আর শাফী ও হাম্বলী মাযহাবে উমরা করা ফরয। অর্থাৎ যার উপর হজ্জ ফরয তার উপর উমরাও ফরয।
উমরার মৌসুম কখন?
উমরা বৎসরের যেকোন মাস, যে কোন দিন ও যে কোন রাতে করা যায়। তবে ইমাম আবু হানীফার মতে আরাফাতের দিন, কুরবানীর দিন এবং আইয়ামে তাশরীকের তিন দিন উমরা করা মাকরূহ।
হজ্জের রুকন কয়টি ও কি কি?
৩টি, যথা :
(১) ইহরাম বাঁধা (অর্থাৎ ইহরামের কাপড় পরে হজ্জের নিয়ত করা।)
(২) ৯ই যিলহজ্জে আরাফাতে অবস্থান করা।
(৩) তাওয়াফ : তাওয়াফে ইফাদা অর্থাৎ তাওয়াফে যিয়ারাহ করা।
উল্লেখ্য যে, হজ্জের রুকনগুলোই মূলতঃ হজ্জের ফরয। এর কোন একটি রুকন ছুটে গেলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।

হজ্জ ও উমরার মীকাত মীকাত কি? কাবা শরীফ গমনকারীদেরকে কাবা হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, যে স্থ...
16/10/2021

হজ্জ ও উমরার মীকাত

মীকাত কি?
কাবা শরীফ গমনকারীদেরকে কাবা হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, যে স্থানগুলো নবীজির হাদীস দ্বারা নির্ধারিত আছে। ঐ জায়গাগুলোকে মীকাত বলা হয়। হারাম শরীফের চর্তুদিকেই মীকাত রয়েছে।
মীকাত কত প্রকার ও কি কি?
২ প্রকার :
সময়ের মীকাত,
স্থানের মীকাত। হজ্জের জন্য সময়ের মীকাত হল শাওয়াল, যিলকদ এবং যিলহজ্জ মাস। অনেকের মতে শাওয়াল মাস থেকে যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিন পর্যন্ত। এ সময়গুলোকে হজ্জের মাস বলা হয়। অপরদিকে উমরার সময় হল বছরের যে কোন মাস, দিন ও রাত।
স্থানগত মীকাত কয়টি ও কি কি?
৫টি মীকাত।
মদীনাবাসীদের জন্য যুল হুলাইফা ذو الحليفة
সিরিয়াবাসীদের জন্য আল-জুহফা الجحفة
নজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল قرن المنازل
ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম يلملم
ইরাকবাসীদের জন্য যাতুইরক ذات عرق
বাংলাদেশ থেকে যারা উমরা বা হজ্জে যাবেন তারা কোন স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবেন?
উপরে বর্ণিত চতুর্থ মীকাত ‘ইয়ালামলাম’ নামক স্থান থেকে। আকাশ পথে বিমান যখন উক্ত মীকাতে পৌছে তখন ক্যাপ্টেনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, তখনই ইহরাম বাধবে অর্থাৎ নিয়ত করবে। ঢাকা থেকেও ইহরামের কাপড় পরে যাওয়া যায়। তবে নিয়ত করবেন ‘মীকাতে’ পৌঁছে বা এর পূর্বক্ষণে। মনে রাখতে হবে যে, ইহরাম বাঁধা ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা যাবে না। ইহরাম বাঁধার অর্থ হল ইহরামের কাপড় পরে উমরা বা হজ্জের নিয়ত করা।

রুকনে ইয়ামেনী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানের দোয়া : রুকনে ইয়ামেনী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে নিম্নের এ দোয়াটি...
16/10/2021

রুকনে ইয়ামেনী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানের দোয়া :

রুকনে ইয়ামেনী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে নিম্নের এ দোয়াটি পড়া মুস্তাহাবঃ

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে তুমি দুনিয়ায় সুখ দাও, আখেরাতেও আমাদেরকে সুখী কর এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে বাঁচাও।[1]

তাওয়াফের সময় ভুলত্রুটিতাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের জন্য বিশেষ কোনো দোয়া নির্দিষ্ট করা ও তা পড়া।তাওয়াফের সময় একজন নেতৃত্ব দি...
12/10/2021

তাওয়াফের সময় ভুলত্রুটি

তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের জন্য বিশেষ কোনো দোয়া নির্দিষ্ট করা ও তা পড়া।

তাওয়াফের সময় একজন নেতৃত্ব দিয়ে উচ্চ স্বরে দোয়া পড়া ও অন্যরা সমস্বরে তার অনুকরণ করা।

অনেকেই মনে করেন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন না করলে হজ্জ অশুদ্ধ হবে, এ ধারণা ঠিক নয়। বরং ভিড় না থাকার হালতে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন-স্পর্শ করা সুন্নত। পক্ষান্তরে ভিড়ের সময় কেবল ইশারা করাই সুন্নত।
কেউ কেউ রুকনে য়ামেনিকে চুম্বন করে থাকে। এটা শুদ্ধ নয়। বরং সম্ভব হলে কাউকে কষ্ট না দিয়ে ডান হাত দিয়ে রুকনে য়ামেনিকে স্পর্শ করা ও স্পর্শের পর হাতে চুম্বন না করা। স্পর্শ করা সম্ভব না হলে, এ ক্ষেত্রে, হাতে ইশারা করার কোনো বিধান নেই।

তাওয়াফের সময় কেউ কেউ কাবার দেয়াল স্পর্শ করেন অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামেনি ছাড়া আর কিছু স্পর্শ করেনি।

তাওয়াফের সময় কেউ কেউ হাতীমের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে থাকে। এরূপ করলে তাওয়াফ হবে না। কেননা হাতীম পবিত্র কাবার অংশ হিসেবে বিবেচিত।

অনেক হাজি তাওয়াফের সময় সাত চক্করেই রামল করেন এরূপ করা উচিৎ নয়। কেননা নিয়ম হল কেবল প্রথম তিন চক্করে রামল করা, আর বাকি চক্করগুলোতে স্বাভাবিকভাবে চলা।

তাওয়াফের সময় অনেকেই মাকামে ইব্রাহীমিকে হাত অথবা রুমাল-টুপি দিয়ে স্পর্শ করে থাকে, এরূপ করা মারাত্মক ভুল।

বিদায়ি তাওয়াফের পর পবিত্র কাবার সম্মানার্থে উল্টো হেঁটে বের হওয়া সংগত নয়। কেননা এরূপ করা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও সাহাবাদের থেকে বর্ণিত হয়নি।

অনেকের ধারণা-মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে ছাড়া মসজিদের অন্য কোথাও তাওয়াফের দু’রাকাত সালাত আদায় করা যাবে না। এ ধারণা সঠিক নয়।

11/10/2021

হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর একটি নাম, একটি ইতিহাসঃ
হজ্ব সম্পাদনকারীগণ প্রতি বছর হজ্বের বিশ্ব সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে হজ্বের বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। তার মধ্যে হাজরে আসওয়াদ অর্থাৎ কালো পাথরে হাত স্থাপন ও চুম্বন তত্ত্বও গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। কাবা ঘরের পূর্ব কোণে ভূমি হতে প্রায় ৫ ফুট উপরে দরজায় অনতিদূরে দেওয়ালের মধ্যে কালো পাথর গাথা আছে। এই কালো পাথরের ইতিহাস সুদূরপ্রসারী।

পবিত্র কাবার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, জমিন থেকে ১.১০ মিটার উচ্চতায় হাজরে আসওয়াদ স্থাপিত। হাজরে আসওয়াদ দৈর্ঘে ২৫ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ১৭ সেন্টিমিটার।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, “হাজরে আসওয়াদ নামে কাল পাথরটি জান্নাত থেকে আসে, এটা দুধের চেয়েও সাদা ছিল, কিন্তু আদম সন্তানের পাপ এটাকে কাল করেছে”। [তিরমিজি শরীফঃ ৮৭৭, সুনানে আহমদঃ ২৭৯২ (ইবনে খুজায়মা হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ৪/২১৯)]
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোকনে আসওয়াদ অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহিম বেহেশতের দুটো ইয়াকুত পাথর।’ (তিরমিজি)


ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) ও পুত্র ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) কাবার প্রাচীর তৈরি করতে করতে যখন রুকনের স্থানে পৌঁছান তখন ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর নিবেদিত প্রাণপুত্র ইসমাঈলকে বলেনঃ “একটি সুন্দর পাথর খুঁজে নিয়ে এসো। পাথরখানা এখানে রাখবো। তাহলে মানুষের কাবা প্রদক্ষিণের চিহ্নের কাজ দেবে”। পুত্র ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) পিতাকে বলেনঃ “পিতা! আমি অত্যন্ত ক্লান্ত”। তিনি বলেনঃ “তবুও যাও”। তারপর পুত্র পাথরের সন্ধানে বের হলেন। এমন সময় জীবরাঈল (আলাইহিস সালাম) পাথরখানা নিয়ে আসেন (তারিখে মক্কা-ইবনে কাসীর)।

কাবা ঘর বহু ঘাত-প্রতিঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। তার সাথে হাজরে আসওয়াদ ও স্থানচ্যুত হয়েছে। এই কালো পাথরের সাথে বিশ্বনাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লাম) এর সম্পর্ক জড়িত। বিশ্বনাবীর নবুয়্যাত প্রাপ্তির অর্থাৎ নাবীরূপে আবির্ভাবের কয়েক বছর আগে কাবা ঘরের নির্মাণ কাজ চলছিল। কালো পাথরখানা দেওয়ালে স্থাপনের চিন্তা-ভাবনাও হচ্ছিল। তবে কে স্থাপন করবে? কোন গোত্র করবে? এ নিয়ে মক্কার অমুসলিমদের মধ্যে চরম অশান্তি, গোলযোগ, বিবাদ দেখা দেয়। কারণ তারাও পাথরখানার গুরুত্ব বুঝত। আবু উমাইয়া ঘটনার পরিণতি উপলব্ধি করে বললেনঃ তোমরা শান্ত হও। যে লোক আজ সর্বপ্রথম কাবা ঘরে প্রবেশ করবে তার উপরেই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব অর্পণ করবো। তোমরা কি এতে সম্মত আছো? বয়োবৃদ্ধ ও জ্ঞানবৃদ্ধের প্রস্তাবে সবাই সম্মত হল। দেখা গেল আরবের আল আমীন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম) কাবা ঘরে প্রথম এলেন। ঘটনা বলে সবাই তাঁর কাছেই সমাধান চাইলো। বিশ্ব সমস্যা সমাধানকারী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক গোত্রের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে পাথরের কাছে গেলেন। বিশ্ব নবী চাদর বিছিয়ে স্বহস্তে হাজরে আসওয়াদখানা তুলে চাদরের মধ্যস্থলে রাখলেন। এবার গোত্রের প্রতিনিধিদের বললেন, সবাই চাদরখানা ধরে পাথরটি যথাস্থানে নিয়ে যান। নবীর চমৎকার পদ্ধতিতে সন্তুষ্ট হয়ে সবাই তাই করল। হাজরে আসওয়াদ জান্নাতের পাথর। তাই পাথর ফেরেশতাদের স্পর্শও আদম, ইব্রাহীম, ইসমাঈল (আলাইহিমুস সালাম) দের স্পর্শ জড়িত আছে। অতএব এই পবিত্র পাথর ভাবী বিশ্বনাবীর পবিত্র হাতেই যথাস্থানে স্থাপিত হওয়া উচিত। তাই নাবী (সাল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাদরের উপর থেকে তুলে পাথরখানা যথাস্থানে স্থাপন করলেন।

বিশ্বনাবী(সাঃ)বলেনঃ আল্লাহর শপথ করে বলছি সত্যই আল্লাহ শেষ বিচারের দিন হাজরে আসওয়াদ পাথরটি পাঠাবেন। পাথরের দুটো চোখ হবে এবং দেখবে। একটি জিহবা হবে এবং কথা বলবে। যে লোক সঠিকভাবে পাথরে চুম্বন করবে ঐ পাথর সাক্ষ্য প্রদান করবে (তিরমিযী)।

মুসলমানরা কালো পাথরকে ভালমন্দের মালিক ভাবে না। উমারের(রাঃ) কথাটি বললেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি বলেনঃ “আমি স্পষ্টই জানি যে তুমি একটি পাথর মাত্র। তুমি আমাদের ভালো মন্দের, লাভ লোকসানের মালিক নও। বিশ্বনাবী (সাঃ)কে চুম্বন দিতে না দেখলে আমি তোমায় চুম্বন দিতাম না” (বুখারী)।

কালো পাথর চুম্বনের তাৎপর্য হচ্ছে-আল্লাহর প্রতি ভক্তি ও ভালবাসার নিদর্শন। পাথর চুম্বনের দ্বিতীয় তাৎপর্য হচ্ছে-একই পাথরে একই স্থানে লাখ লাখ হাজীর চুম্বনে ভেঙ্গে যায় রাজা-প্রজার, মালিক-শ্রমিকের, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের, আরব-অনারবের, কালো-সাদার,ধনী-নির্ধনের, ছুত-অছুতের বিভেদের জঘন্য প্রাচীর। এই শুভ লগ্নে বিশ্বের হাজীরা বিশ্বভ্রাতৃত্বে একত্রিত হয়। মালেকী, হাম্বলী, হানাফী, শাফেয়ী, শিয়া-সুন্নী বিভিন্ন মাজহাবের প্রাচীর খান খান হয়ে ভেঙ্গে সবার মুখ, হাত-এক মুখ, হাত হয়ে যায়। কেউ কাউকে ঘৃণা করে না। একজনের চুম্বনের জায়গায় অন্যজন চুম্বন দিতে অস্বীকার করে না।

মুসলিম বিশ্বের কোন মুসলিমও মানুষকে ঘৃণা করে না। সারা বিশ্ব তাদের স্বদেশ। তাই আল্লামা ইকবাল বলেনঃ “মুসলিম হ্যাঁয় হাম ওয়াতান হ্যাঁয় সারা জাঁহা হামারা” (আমি মুসলিম, সারা পৃথিবী আমার স্বদেশ)। এধরনের অন্তরের সম্প্রসারণ এবং দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হচ্ছে হজ্বের তথা বিশ্ব সম্মেলনের লক্ষ্য।

শুরুতে হাজরে আসওয়াদ একটুকরো ছিল, কারামিতা সম্প্রদায় ৩১৯ হিজরীতে পাথরটি উঠিয়ে নিজেদের অঞ্চলে নিয়ে যায়। সেসময় পাথরটি ভেঙে ৮ টুকরায় পরিণত হয়। এ টুকরোগুলোর সবচেয়ে বড়োটি খেজুরের মতো। টুকরোগুলো বর্তমানে অন্য আরেকটি পাথরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে যার চার পাশে দেয়া হয়েছে রুপার বর্ডার। রুপার বর্ডারবিশিষ্ট পাথরটি চুম্বন নয় বরং তাতে স্থাপিত হাজরে আসওয়াদের টুকরোগুলো চুম্বন বা স্পর্শ করতে পারলেই কেবল হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ করা হয়েছে বলে ধরা হবে।

এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, হযরত নূহ (আ•) এর তুফানের সময় হযরত জিবরাইল (আ•) পাথরটি আবু কুবাইস পাহাড়ে লুকিয়ে রাখেন হযরত ইব্রাহিম (আ•) কতৃর্ক কাবাঘর নির্মিত হলে তাওয়াফ শুরু করার স্থান চিহ্নিত করার লক্ষ্যে হযরত ইসমাইল (আ•) একটি পাথর তালাশ করার সময় হযরত জিবরাইল (আ•) ওই পাথরটি এনে দেন। অতঃপর হযরত ইব্রাহিম (আ•) তা বাইতুল্লাহ শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে স্থাপন করেন।

হযরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের শাসনামলে মক্কায় ৭৫৬ সালে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হলে এটা কয়েক টুকরা হয়ে যায় ফলে রূপার আধারে সাজিয়ে সংযুক্ত করা হয়। ৯৩০ সালের প্রথমদিকে শিয়াদের একটি গ্রুপ কারমাতিরা এই পাথর চুরি করে বাহরাইনে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের নেতা আবু তাহের আল কারমাতি তার গড়া মসজিদ মাসজিদ আল দিরারে স্থাপন করেন হজ্জের স্থান পরিবর্তন করার দুরাশায়। আব্বাসীয় বংশীয় নেতারা বিপুল টাকার বিনিময়ে পাথরটি ৯৫২ সালে মক্কায় ফিরিয়ে আনেন।

মোদ্দাকথা হাদিস শরিফে হাজরে আসওয়াদকে বেহেশতি পাথর বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোকনে আসওয়াদ অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহিম বেহেশতের দুটো ইয়াকুত পাথর।’ (তিরমিজি) হাজরে আসওয়াদের স্থাপনের সাথে হযরত ইব্রাহিম(আঃ) ও তার পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) এর নাম জড়িত। বিভিন্ন ভাবে বর্ননা থাকলেও তারাই এই পাথরকে কাবায় স্থাপন করেছেন। হযরত মোহাম্মদ(সাঃ) এই পাথরকে চুম্বন করেছিলেন বলে তার উম্মতরা হজ্জে সরাসরি বা ইশারা করে চুম্বন করে থাকে।

এই পাথরের ভাল মন্দের কোন ক্ষমতা নাই। সুন্নতের অংশ হিসেবেই চুম্বনের রেওয়াজ জারী হয়েছে। হযরত উমর(রাঃ) এর বাণী। তিনি বলেছেন-"আমি জানি, তুমি একখানা পাথর, তোমার উপকার ও ক্ষতিসাধন করার কোনো ক্ষমতা নেই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে তোমার গায়ে চুম্বন করতে না দেখতাম, তাহলে আমি কখনো তোমাকে চুমু দিতাম না"

আমাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা বায়তুল্লাহ তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করেন। এভাবে ধাক্কাধাক্কি করে লোকদের কষ্ট দিয়ে তাওয়াফ করা ঠিক নয়। যদি চুম্বন দেয়া সম্ভব না হয়, ডান হাত দিয়ে ইশারা করলেও হবে। এর দিকে সম্প্রসারিত করে স্বীয় হস্তে চুম্বন করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে এবং আল্লাহপাক হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের বরকত দান করবেন।

রাহমানুর রাহিম আল্লাহতায়ালার কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছি তিনি যেন আমাদের স্মৃতিবিজড়িত পাথরটিকে চুম্বন করার তাওফিক দান করেন।
আমিন

11/10/2021

যেমন ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী-রাসুল (সা.) ❤️

১/ তিনি দীর্ঘ সময় নীরব থাকতেন।
২/ তিনি কম হাসতেন।
৩/ তিনি মুচকি হাসতেন, হাসি ওনার ঠোঁটে লেগে থাকতো।
৪/ তিনি অট্টহাসি হাসতেন না।
৫/ তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ ত্যাগ করতেন না।
৬/ তিনি দৈনিক শতবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
৭/ তিনি কখনোই প্রতিশোধ নিতেন না।
৮/ তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া কাউকেই আঘাত করেননি।
৯/ তিনি বিপদে পড়লে তাৎক্ষনিক নামাজে দাঁড়িয়ে পড়তেন।
১০/ তিনি অসুস্থ হলে বসে নামাজ পড়তেন।
১১/ তিনি শিশুদের সালাম দিতেন।
১২/ তিনি সমাবেত মহিলাদের সালাম দিতেন।
১৩/ তিনি শিশুদের পরম স্নেহ করতেন।
১৪/ তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে কোমল আচরণ করতেন।
১৫/ তিনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন।
১৬/ তিনি ঘুম থেকে জেগে মেসওয়াক করতেন।
১৭/ তিনি মিথ্যাকে সার্বাধিক ঘৃণা করতেন।
১৮/ তিনি উপহার গ্রহণ করতেন।
১৯/ তিনি সাদকাহ (দান) করতেন।
২০/ তিনি সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করতেন।
২১/ তিনি আল্লাহকে সব সময় ভয় করতেন
২২/ হাতে যা আসতো তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিতেন।
২৩/ কেউ কথা বলতে বসলে সে ব্যক্তি উঠা না পর্যন্ত তিনি উঠতেন না।
২৪/ বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না।
২৫/ কথা বলার সময় সুস্পষ্টভাবে বলতেন যাতে শ্রবণকারী সহজেই বুঝে নিতে পারে।
২৬/ কথা, কাজ ও লেন-দেনে কঠোরতা অবলম্বন করতেন না।
২৭/ নম্রতাকে পছন্দ করতেন।
২৮/ তাঁর নিকট আগত ব্যক্তিদের অবহেলা করতেন না।
২৯/ কারো সাথে বিঘ্নতা সৃষ্টি করতেন না।
৩০/ শরীয়তবিরোধী কথা হলে তা থেকে বিরত থাকতেন বা সেখান থেকে উঠে যেতেন।
৩১/ আল্লাহ তায়ালার প্রতিটি নিয়ামতকে কদর করতেন।
৩২/ খাদ্যদ্রব্যের দোষ ধরতেন না। মন চাইলে খেতেন না হয় বাদ দিতেন।
৩৩/ ক্ষমাকে পছন্দ করতেন।
৩৪/ সর্বদা ধৈর্য্য ধারণ করতেন।

রাসুল (সা.) এর গুণাবলি বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নবী (সা.) এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার তাওফীক দান করুন। সবাইকে হেদায়ত দান করুন।🤲

আমিন❤ সংগৃহীত পোস্ট

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Baitullah Hajj Umrah posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Baitullah Hajj Umrah:

Share

Category



You may also like