11/09/2022
কিরীটী-জনক নীহাররঞ্জন গুপ্ত এর পৈত্রিক ভিটা, ইটনা গ্রাম, লোহাগড়া, নড়াইল
ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত (১৯১১ - ১৯৮৬) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় রহস্য কাহিনীকার এবং চিকিৎসক। তিনি বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র কিরীটী রায়ের স্রষ্টা হিসেবে উপমহাদেশে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯১১ সালের ৬ই জুন তৎকালীন যশোরের (বর্তমান নড়াইল জেলার) লোহাগড়া উপজেলার ইটনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা-মাতার নাম সত্যরঞ্জন গুপ্ত এবং লবঙ্গলতা দেবী। তিনি শৈশবকাল অতিবাহিত করেন কলকাতায়।
পিতার স্থানান্তরিত চাকুরীর কারণে তিনি অনেক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তন্মধ্যে গাইবান্দা উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম। ১৯৩০ সালে কোন্নগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন অর্জন করেন। কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজ থেকে আই.এসসি ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি কলকাতায় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ (তৎকালীন কারমাইকেল স্কুল) থেকে ডাক্তারি বিদ্যায় কৃতকার্য হন। এরপর তিনি লন্ডন থেকে চর্মরোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্রাবস্থায় তাঁর বড় বোন পোকার কামড়ে মারা যায়। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মহান পেশায় নিয়োজিত থেকে এই রোগ সারানোর জন্য স্বপ্ন দেখেন ও পরবর্তী জীবনে বাস্তবায়িত হয়।
নীহাররঞ্জনের স্ত্রী কনক এবং চার মেয়ে ছিল। তাঁর বাড়ির নাম ছিল উল্কা, তাঁরই এক কাহিনীর নামে। রবিবার ছাড়া বাকি দিনগুলো তিনি শ্যামবাজার স্ট্রিটের (পরে ধর্মতলা স্ট্রিটে) চিকিৎসকের চেম্বার, লেখালেখি, পূজা, পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া আর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গল্পগুজব নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ। প্রায় প্রতি দিন খবর শুনছেন মন দিয়ে। যুদ্ধ শুরু হলে রোজ সাহিত্যিক বন্ধুবান্ধব, সাংবাদিকদের কাছে খবর নিচ্ছেন, কত দূর সফল হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আদর্শ হয়ে ওঠেন শেখ মুজিবর রহমান। তাঁর ‘লালুভুলু’ উপন্যাসের কাহিনী নিয়ে ছবি হল। পরিচালনায় অগ্রদূত। সেই ছবি দুই বাংলাতেই বেশ জনপ্রিয় হয়। এর অনেক পরে উপন্যাসটিকে সম্মান জানাতে ঢাকা থেকে সপরিবার নিমন্ত্রণ আসে তাঁর কাছে।
বাংলাদেশের জন্মস্থানের প্রতি তীব্র ভালোবাসা কাজ করতো। বাড়ির নাম ছিল ‘আনন্দ অন্নদা কুটির’। তিনটি ভবন রয়েছে সেখানে, যার মাঝেরটি দোতলা। নীচতলার বারান্দার ভিতরের কপাটহীন দরজার উপরে দেওয়ালে বাড়ির নাম লেখা ছিল।
সত্তর শতকের মতো জায়গার ওপর দোতলা বাড়ি, পুকুর, বাগান। প্রবেশপথ দুটি। বাড়িটি বর্তমানে সরকার এর প্রত্নতত্ব বিভাগের অধীনে। নীহাররঞ্জনের আত্মীয় কেউ সেখানে থাকেন না। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের খোঁজ-খবর নিয়মিত রাখতেন। বড়দের ও ছোটদের উপযোগী - উভয় ধরনের গোয়েন্দা উপন্যাস রচনায় সবিশেষ পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন নীহাররঞ্জন। মোট দুই শতাধিক গ্রন্থ তিনি রচনা করে গেছেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রকর এস এম সুলতান ইটনায় অবস্থিত নীহাররঞ্জন গুপ্তের বাসভবনে শিশুস্বর্গ-২ প্রতিষ্ঠা করেন।