14/05/2024
২০২৪ এ যারা পবিত্র হজ্জ্ব পালন করতে যাচ্ছেন, তাদের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:
গত মাসে আমার ক্যাডেট কলেজ ও সেনাবাহিনীর এক কোর্সমেট ইন্তেকাল করেছে (ইন্না...রাজিউন)। মাত্রই ওমরাহ পালন করে এসেছিল। দেশে আসার পর জ্বর, দুর্বলতা, মাথা ব্যথা, শ্বাস কষ্ট, বমি ছিল। এক পর্যায়ে অত্যন্ত খারাপ বোধ করা শুরু করে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়ার পর জানা যায় তার নিউমোনিয়া হয়েছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ! বন্ধু সেনাবাহিনীর অত্যন্ত চৌকষ ও সম্ভাবনাময় কর্মকর্তা ছিল। বুঝতেই পারছেন শারীরিক ও মানসিকভাবে কতটা শক্তিশালী ছিল। কিন্তু সে-ই কয়েক ঘন্টার নোটিশে মৃত্যুর কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে।
গত সপ্তাহে আমার আরেক ক্যাডেট কলেজের বন্ধুর পরিচিত আরেকজন ওমরাহ করে এসে মারা গেছে। নিউমোনিয়া। লক্ষণও অভিন্ন। কোন সময়ই দেয় নি। বয়স ছিল ষাটের কাছাকাছি।
শুনেছি হজ্ব যাত্রীদের মেনিনজাইটিস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেয়ার কথা ছিল। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সবাই নিয়েছে (নিচ্ছে) কী না জানি না। কেননা, ২৭ এপ্রিল লেখা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এই ব্যাপারে সন্দেহ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। (ছবি দ্রষ্টব্য) আসলে, প্রতিটি হজ্ব যাত্রীর নিজের গরজেই এসব টিকা নেয়া উচিত। এটিই জীবন-মরণের মাঝে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
আমাদের বন্ধুর অটোপ্সি থেকে জানা গেছে ওর শরীরে একাধিক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস আক্রমণ করেছিল। এগুলোর বেশিরভাগেরই টার্গেট ছিল ফুসফুস (লিভার, কিডনি)। ফলে, ওর শরীর দ্রুত কপাপ্স করেছিল। ব্যাক্টেরিয়াগুলো ছিলঃ
1. Neisseria Meningitidis
2. Acinetobacter Baumannii
3. Pseudomonas sp
4. E. Coli
ভাইরাস ছিলঃ
1. Simbu Orthobunya virus
2. Rhino virus
হজ্বের মূল যে সমস্যা সেটি হল হিউম্যান কন্টাক্ট। উপরের বেশিরভাগ জীবাণুই এভাবে ছড়ায়। হিউম্যান কন্টাক্ট উপেক্ষা করতে না পারলেও, সাধ্যমত কিছুটা সাবধানতা অবশ্যই অবলম্বন করা উচিত।
১। মাস্ক পড়া। এটি মাস্ট। একেবারে বড় হাতে লেখা 'মাস্ট!' উপরে উল্লিখিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া হাঁচি, কাশি, থুতুর মাধ্যমে বেশি ছড়ায়।
২। সাধ্যমত নিয়মিত স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।
৩। পানি বোতলের মুখ স্পর্শ না করে পান করা। একই কারণে অন্যের ব্যবহৃত গ্লাস, প্লেট, কাপ ইত্যাদি পরিহার করা।
৪। যথা সম্ভব মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো। মশা, ছারপোকা, ডাঁসা পোকা ইত্যাদির মাধ্যমে অসুখ ছড়াতে পারে। যেখানে সেখানে ধাম করে ঘুমাবেন না।
৫। বদ্ধ জলাশয়ের পানি পান বা ব্যবহার না করা।
৬। রেসিস্ট শোনাতে পারে, তবে আফ্রিকান কাফেলা থেকে দূরে থাকা। কেননা, অনেক জীবাণুর বড় কেন্দ্রস্থল আফ্রিকা। (অবশ্য, এশিয়ার লোকজনও খুব বেশি পিছিয়ে নেই!)
৭। নিজেরা বড় দল বেঁধে চলা ফেরা করা। যাতে অপরিচিত মানুষের সংস্পর্শে কম যেতে হয়। অবশ্য, এটা পালন করা প্রায় অসম্ভব।
৮। শরীর খারাপ লাগলে অবশ্যই সেটি সাথে সাথে রিপোর্ট করা। জিহাদি জোশ দিয়ে হজ্ব শেষ করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নেবেন না।
৯। বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হজ্ব যাত্রীদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা।
১০। নিয়মিত খাবার গ্রহণ এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। প্রয়োজনে স্যালাইন, জ্যুস, এনার্জি ড্রিংক পান করা।
আল্লাহ সবাইকে সুস্থভাবে পবিত্র হজ্ব পালন শেষে নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন- এই দোয়া করি। আমিন।
তথ্যসূত্র: আমি কয়েকটা শব্দ এডিট করেছি, কিন্তু পুরো লিখাটি লিখেছে আমার ক্যাডেট কলেজের ব্যাচমেট ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের জুনায়েদ কবির।