03/02/2019
সিকিম ভ্রমনঃ
সিকিম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য এবং উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র। সিকিমের রাজধানী শহর গ্যাংটক। আয়তনে ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম প্রদেশ । এর উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বত, পূর্বে ভুটান, পশ্চিমে নেপাল এবং দক্ষিণে ভারতের অপর একটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। সিকিম বাংলাদেশের নিকটবর্তী ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের কাছাকাছি অবস্থিত। সিকিম ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা কম জনবহুল এবং আয়তনে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম। পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের একটি অংশ সিকিম, আল্পাইন এবং উপক্রান্তীয় জলবায়ু সহ এর জীব বৈচিত্র্যের জন্য উল্লেখযোগ্য এবং সেইসাথে সিকিমে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত শিখর এবং পৃথিবীতে তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শিখর। সিকিমের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর গ্যাংটক। রাজ্যের প্রায় ৩৫% এলাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান দ্বারা আচ্ছাদিত।
সিকিম রাজ্যটি ১৭ শতকের নামগিয়াল রাজবংশের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। রাজ্যটি চোগিয়াল নামে পরিচিত একজন বৌদ্ধ পুরোহিত রাজা দ্বারা শাসিত ছিল। ১৮৯০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অধীনে একটি জমকাল রাজ্য হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালের পরে সিকিম ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অঙ্গরাজ্য হিসাবে ছিল। হিমালয় অঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে সিকিমে সাক্ষরতার হার এবং মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৩ সালে চোগিয়ালের প্রাসাদের সামনে রাজতন্ত্র বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে জনগণ সিকিমীয় রাজতন্ত্রকে দমন করে। ১৯৭৫ সালে গণভোটের পরে সিকিম ভারতবর্ষের ২২ তম রাজ্য হিসেবে যুক্ত হয়।
আধুনিক সিকিম একটি বহুজাতিক এবং বহুভাষী ভারতীয় রাজ্য। সিকিমের ১১ টি সরকারি ভাষা রয়েছে: নেপালি, সিকিমিজ, লেপচা, তামাং, লিম্বু, নেওয়ারি, রায়, গুরুং, মগার, সুনওয়ার এবং ইংরেজী। ইংরেজি ভাষা স্কুলে পড়ানো হয় এবং সরকারী নথিতে ব্যবহৃত হয়। হিন্দুধর্ম এবং বজ্রায়ণ বৌদ্ধ ধর্ম হল সিকিমের প্রধান ধর্ম। সিকিমের অর্থনীতি মূলত কৃষি ও পর্যটনের উপর নির্ভরশীল এবং ২০১৪ সালের হিসাবে ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে এই রাজ্যটির তৃতীয়-ক্ষুদ্রতম জিডিপি ছিল,যদিও এটি বর্তমানে দ্রুত বর্ধমান অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
সিকিম ভারতের বৃহত্তম এলাচ উৎপাদক রাজ্য এবং গুয়াতেমালার পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলাচ উৎপাদক। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সিকিম, তার কৃষিকে সম্পূর্ণভাবে জৈব পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করে প্রথম ভারতীয় রাজ্য হিসাবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে। এটি ভারতের সবচেয়ে পরিবেশগতভাবে সচেতন রাজ্য, যার ফলে প্লাস্টিকের জলের বোতল এবং স্টাইরোফোম ইত্যাদি পণ্য এখানে নিষিদ্ধ।
কোন পোর্ট দিয়ে যাবেনঃ
সিকিম যাবার জন্য সবচেয়ে ভাল পোর্ট দুটি হল বাংলা বান্ধা (ভারতীয় ফুলবাড়ি) ও বুড়িমারী (ভারতীয় চ্যাংড়াবান্ধা)। আপনাকে প্রথমে শিলিগুড়ি যেতে হবে আর এই পোর্ট দুটো শিলিগুড়ি থেকে কাছে। ফুলবাড়ি থেকে শিলিগুড়ি ১৩ কিমি আর চ্যাংড়াবান্ধা থেকে শিলিগুড়ি ৮০ কিমি। ফুলবাড়ি দিয়ে গেলে আপনাকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাংলাবান্ধা বর্ডারে পৌঁছাতে হবে এবং বর্ডার পার হয়ে অটোতে করে সিলিগুড়ি যেতে হবে। আর চ্যাংড়াবান্ধা দিয়ে গেলে সরাসরি ঢাকা- শিলিগুড়ি শ্যামলী পরিবহণের এসি বাসে করে যেতে পারবেন অথবা বুড়িমারি পর্জন্ত এসি/নন এসি বাসে গিয়ে ওপার থেকে বাসে করে শিলিগুড়ি যেতে পারবেন। এছাড়াও কেউ কলকাতা হয়ে যেতে চাইলে কলকাতা থেকে বাসে শিলিগুড়ি এসে বা ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি এসে শিলিগুড়ি হয়েও যেতে পারবেন।
কিভাবে যাবেনঃ
১) বাসেঃ
i) ঢাকা – শিলিগুড়ি এসি ১৫০০/- সন্ধ্যা ০৭:৩০ টা – সকাল ০৭:০০ টা > শিলিগুড়ি – গ্যাংটক শেয়ার জীপ/রিজার্ভ জীপ ২৫০ রুপি/২৭০০-৩০০০ রুপি
ii) ঢাকা – বুড়িমারী এসি ৮০০/- সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত > চ্যাংড়াবান্ধা – শিলিগুড়ি (বাস) ৭০ রুপি সময় ২ঘন্টা > গ্যাংটক শেয়ার জীপ/রিজার্ভ জীপ ২৫০ রুপি/২৭০০-৩০০০ রুপি
২) ট্রেনেঃ
ঢাকা – পঞ্চগড় (দ্রুতযান এক্সপ্রেস) >
ষ্টেশন – বাস স্ট্যান্ড (অটো)ঃ ট্রেন থেকে নেমে অটোতে ১০ টাকা পার হেড করে বাসস্ট্যান্ডে চলে যাবেন।
বাস স্ট্যান্ড - বাংলাবান্ধা (বাস) বাসস্ট্যান্ডে প্রতি ১৪ মিনিট পরপর বাংলাবান্ধার বাস ছাড়ে। বাস ভাড়া ৭০ টাকা প্রতিজন।
৩) বিমানেঃ
সিকিমের নিকটবর্তী বিমানবন্দর ছিল বাগডোগরা যা জলপাইগুড়ি তে অবস্থিত কিন্ত সিকিমে এখন নতুন এয়ারপোর্ট হয়েছে যা অনেকেরই জানা নেই। কলকাতা থেকে প্রতিদিন স্পাইস জেট এয়ার চলে সিকিমের পাকইয়ং (pakyong) এয়ারপোর্ট এ। কলকাতা থেকে সময় লাগে ৫৫ মিনিট, ভাড়া ৩৬০০ রুপি (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪০০০/-)। গ্যাংটক থেকে পাকইয়ং এয়ারপোর্ট এর দুরত্ব প্রায় ২৯ কিমি আর গাড়িতে যেতে সময় লাগে ১.৫ ঘণ্টা মত।
যাবার সম্ভাব্য সময়ঃ
মার্চ – মেঃ
মার্চ থেকে মে মাস সিকিম ভ্রমনের জন্য সবচেয়ে ভাল সময়। এ সময় শীত একটু কম থাকে আবার রাস্তা-ঘাট ও ক্লিয়ার থাকে। এটা বসন্ত কাল কাজেই প্রকিতি অনেক সুন্দর থাকে এ সময়।
অক্টোবর – মধ্য ডিসেম্বরঃ
হিমালয়ের ক্লিয়ার ভিউ পেতে চাইলে আর কাঞ্চনজংঘা কে কাছে থেকে দেখতে হলে এটি সবচেয়ে ভাল সময়।
ঢাকা থেকে সিকিম যাবার জন্য সধারনত সবাই ৬ দিনের প্ল্যান করে।
কোথায় কোথায় যাবেনঃ
১) গ্যাংটক
২) সাঙ্গু লেক
৩) লাচেন
৪) লাচুং
৫) ইয়ামথাং ভ্যালী
৬) জিরো পয়েন্ট
কোথায় কোথায় যেতে পারবেন নাঃ
বিদেশীদের জন্য নাথুলাপাস, বাবা মন্দির, গুরুদংমার লেক, কালাপাথর যাবার পার্মিশন নাই।
ইনার লাইন পার্মিটঃ
সিকিম এ যাবার জন্য ভিসার পাশাপাশি স্পেশাল পার্মিশন নিতে হয় যাকে “ইনার লাইন পার্মিট” বলে।
“ইনার লাইন পার্মিট” কোথা থেকে নিবেনঃ
i) আইভ্যাক বিডি (IVAC-BD)থেকেঃ ৭-১৪ দিন সময় আর ৩০০ টাকা খরচ হবে।
ii) শিলিগুরি জাংশনে এসএনটি (SNT-Sikkim National Transport)থেকেঃ ১০ মিনিটে বিনা খরচে।
iii) সিকিমে ঢোকার চেকপোস্ট রাংপো (Rangpo)থেকেঃ ১০ মিনিটে বিনা খরচে।
এ সকল জাইগা থেকে ইনার লাইন পার্মিট নিতে পারবেন।
*** ইনার লাইন পার্মিট যেখান থেকেই নেন না কেন, রাংপো দিয়ে ঢোকার বা বেরোবার সময় অবশ্যই অবশ্যই ‘ফরেনার রেজিস্ট্রেশন অফিসে’ নাম এন্ট্রি করে পাসপোর্টে সিল মেরে নিবেন। রাংপোতে চেকিং এর সময় আর্মি পারসনরা এ বিষয়ে কিছু বলবে না। তাই নিজ দায়িত্বে এন্ট্রি করে নিবেন।
কতজন যাবেন ও কিভাবে যাবেনঃ
গ্যাংটক বাদে অন্যান্য যায়গাগুলোতে যেতে ১দিন আগে আলাদা আলাদা পার্মিশন নিতে হয় এবং সেটা এজেন্সীর মাধ্যমে । প্লাস সাথে একজন গাইড থাকা বাধ্যতামূলক। কাজেই এই জায়গাগুলোতে যাবার আগেই একজন গাইড নিয়ে তার মাধ্যমে পার্মিশন আগের দিন নিয়ে রাখতে হবে। পার্মিশন এর জন্য ছবি, পাসপোর্ট এর কপি, ভিসার কপি ও ইনারলাইন পার্মিট এর কপি লাগবে। কাজেই এই কাগজ গুলো অন্তত ১০ কপি করে অবশ্যই সাথে রাখতে হবে।
পাহাড়ি এলাকা গুলোতে বেড়াতে গেলে একা একা না গিয়ে একসাথে কয়েকজন গ্রুপ করে যাওয়া সবচেয়ে ভাল। এতে সিকিউরিটি ও পাওয়া যায় নিজেদের আর খরচ ও অনেক কম হয়। সিকিমে বেশিরভাগ যায়গায় ঘুরতে হয় গাড়ি নিয়ে। যেহেতু পাহাড়ি এলাকা এখানে অন্যকোন লোকাল ট্রান্সপোর্ট নাই আর হেটে হেটে যাওয়া ও যায়না না। সো আপনি একজন হোন অথবা ৬ জন,একটা গাড়ির ভাড়া আপনাকে বহন করতে হবে। সিকিমের উচ্চবর্তী যে জায়গা গুলো আছে সেগুলোতে ছোট গাড়ি যেতে দেয় না। বড় গাড়ি নিতে হয়। এই গাড়িগুলোর সামনে এক সিট আর পিছনের দুই সারিতে ৩+৩=৬ সিট। মানে গাইডসহ ৭ জন সদস্য হলে গাড়ির সঠিক ব্যাবহার হবে। গাইডরা অনেকসময় ওই ৩ সিটে চারজন বসানোর কথা বলে। কিন্তু মোটা মোটা জামা পরে ৪ জন ওই ৩ সিটে বসে পাহাড়ে ৩/৪ ঘন্টার জার্নী করা মোটেও আরামদায়ক না। তাই খরচ বাচাতে চাইলে ৬ জনের গ্রুপ করে যাওয়া বেস্ট। দেশ থেকেই গ্রুপ করে যাবেন। কেউ সিকিমে গিয়ে কোন গ্রুপের সাথে যুক্ত হবার প্লান করে যাবেন না। কারন দেশের বাইরে গ্রুপ হওয়া ঝামেলা ও সময় সাপেক্ষ। মনে রাখবেন আপনি শুধু ফরেনারদের সাথে গ্রুপ করতে হবে, কারন বাংলাদেশি ব্যাতিত অন্য ফরেনাররা আসলে আপনাকে নিতে চাইবে না। আর ইন্ডিয়ান্দের সাথে গ্রুপ করে যেতে পারবেন না। কারন তাদের সিকিম যেতে কোন পার্মিশন লাগেনা। কাজেই যে সকল জাইগা থেকে পার্মিশন লাগে সেসব জাইগা দিয়ে তারা যাবেনা।
ট্যুর প্ল্যানঃ
ঢাকা টু শিলিগুড়িঃ
বাজেট ট্রাভেল (ট্রেন), পোর্ট বাংলাবান্ধাঃ
ধরে নিচ্ছি আপনাদের ৬ জনের গ্রুপ এবং সবার ভিসা ফুলবাড়ি পোর্ট দিয়ে করা। ভ্রমন শুরুর পুর্বেই ইমিগ্রেশনে ঝামেলা এরানোর জন্য সোনালী ব্যাংক(মতিঝিল হেড অফিস বা নিউ মার্কেট শাখা) থেকে প্রত্যেকের ৫০০ টাকা করে ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করে যাবেন। ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোদের জন্য সবাইকে যেতে হবে না। যেকোন একজন সবার পাস্পোর্টের ফটোকপি ও টাকা নিয়ে ব্যাংকে গেলেই হবে। ভ্রমন শুরুর ৫ দিন আগেই ঢাকা-পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস(ঢাকা থেকে রাত ৮ টায়) এর টিকেট কিনে ফেলবেন। শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫৫০ টাকা। ফেরার দিন ফিক্সড থাকলে ফিরতি টিকিটও(একতা এক্সপ্রেস- পঞ্চগড় থেকে রাত ৯ টায় ছাড়ে) কেটে ফেলুন। বাসেও যেতে পারেন। বাস তেতুলিয়া পর্যন্ত যায়। বাস ভেদে বিভিন্ন ভাড়া।
মনে রাখবেন, অনলাইনে ঢাকা-পঞ্চগড়ের টিকিট পাওয়া গেলেও পঞ্চগড়-ঢাকার টিকিট অনলাইনে পাওয়া যায় না।
(পার্বতীপুর থেকে পাওয়া যায়। এই দুটি ট্রেনের ক্ষেত্রে পঞ্চগড় ডেস্টিনেশন যুক্ত হয়েছে রিসেন্ট। তাই এখনো অনলাইন হয় নাই।)।
এবার চলুন যাত্রা শুরু করি।
রাতের পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসে উঠে পরুন। সবকিছু ঠিক থাকলে ট্রেন পরদিন সকাল ৬:৩০ টায় পঞ্চগড় পৌছানোর কথা।
খরচঃ ৫৫০ টাকা(ট্রেন) + ৫০০ টাকা (ট্রাভেল ট্যাক্স)=১০৫০ টাকা।
ট্রেন থেকে নেমে অটোতে(১০ টাকা পার হেড) করে বাসস্ট্যান্ডে চলে যাবেন। বাসস্ট্যান্ডে প্রতি ১৪ মিনিট পরপর বাংলাবান্ধার বাস ছাড়ে। বাস ভাড়া ৭০ টাকা প্রতিজন। বাস থেকে নেমে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন সেন্টার। এখানে ৪০.৬৯ টাকার একটা প্যাসেঞ্জার স্লিপ দিবে। সেটা পরিশোধ করবেন। এছাড়া স্লিপ ছাড়া কোন টাকা চাইলে দিবেন না । টাকা চাইলে স্লিপ চাইবেন। জেনে রাখা ভালঃ আপনি সরকারি নিয়ম অনুযায়ি বৈধভাবে টাকা ১০০০০ এবং ইউএসডি ৫০০০ সাথে রাখতে পারবেন ইন্ডিয়া ভ্রমনের সময়।
বাংলাদেশ পার্টের ইমিগ্রেশোনের কাজ শেষ হলে সোজা হেটে জিরো পয়েন্ট পার হয়ে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশোনে চলে যাবেন। এখানেও প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে বের হয়ে যাবেন। ইন্ডিয়ান পার্টে কিছু টাকা দিতে হতে পারে । এরা আরো বড় ছ্যাঁচড়া। ইমিগ্রেশন অফিসের উলটা পাসেই কিছু মানি এক্সচেঞ্জের দোকান আছে। আপনার বাংলা টাকা এখান থেকে রুপি করে নিন। বাংলাদেশ থেকে যাবার সময় কারো কাছে ভারতীয় সিম থাকলে সংগ্রহ করে নিন। সিম না পেলে এখান থেকে একটা সিম কিনে নিন এবং একটা ভালো টকটাইম ও নেটওয়ার্কের প্যাকেজ এক্টিভেট করে নিন। টাকা ভাঙ্গানো শেষে শিলিগুরি জাংশন পর্যন্ত একটা অটো ভাড়া করুন।ডিরেক্ট কেউ যেতে রাজি না হলে অটোতে করে ফুলবাড়ি বাজার পর্যন্ত চলে আসুন। দেন বাজার থেকে শীলিগুরি জাংশনের গাড়ি/অটো/ভটভটি পাবেন। পারহেড ৪০ রুপির মত খরচ হবে।
নরমাল ট্রাভেল (এসি/নন এসি বাস), পোর্ট বুড়িমারীঃ
ঢাকা শিলিগুড়ি শ্যামলী পরিবহণের ডিরেক্ট এসি বাস সন্ধ্যা ৭:৩০ এ কল্যানপুর থেকে ছেড়ে যায় ভাড়া ১৫০০/- টাকা। সকাল ৭টা নাগাদ আপনি বুড়িমারী পোর্ট এ পৌঁছে যাবেন। এছাড়া বিভিন্ন এসি ও নন এসি বাস বুড়িমারী পর্জন্ত চলে এসি ৮০০/- টাকা নন এসি ৬০০/- টাকা ভাড়া। ডিরেক্ট শিলিগুড়ির বাসে গেলে বাস থেকে নামার আগেই আপনার পাসপোর্ট ও ট্রাভেল ট্যাক্স এর টাকা + ১০০/- টাকা বোকশিস বাসের সুপারভাইজার এর হাতে দিয়ে দিন সে ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশনের বাকি সব কাজের জন্য আপনাকে সব ধরনের সহায়তা করবে। আপনার কোন ঝামেলাই পোহাতে হবেনা।
বুড়িমারী নেমে বাস কাউন্টার এর নিজস্ব কিছু রেস্ট রুম থাকে সেগুলোতে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ফ্রেস হয়ে নিন। এরপর বুড়ির হোটেলে সকালের নাস্তা, চা। ৯টায় পোর্ট ওপেন হলে ইমিগ্রেশন শেষ করে নো ম্যান্স ল্যান্ড দিয়ে হেটে ওপারের চ্যাংড়াবান্ধা পোর্ট এ চলে যান ইমিগ্রেশন এর জন্য। সেখানে ১৫-২০ মিনিটের ভিতরেই আশা করি ইমিগ্রেশন হয়ে যাবে। এবার আপনার সাথে থাকা বাংলা টাকা বা ডলার রুপিতে ভাঙ্গিয়ে নিন শ্যামলীর কাউন্টার থেকে। কাজ আপাতত শেষ। মনে রাখবেন টাকা এখান থেকেই রুপি করে নিবেন। পরে রুপি করতে অনেক ঝামেলা হবে, রেটও কম পাবেন। এবার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামলীর এসি বাসে উঠে পড়ুন।
যারা ডিরেক্ট বাসে যাবেন না তারা চ্যাংড়াবান্ধা থেকে বাসে বা জীপে করে শিলিগুড়ি জংশনে চলে আসুন।
শিলিগুড়ি টু গ্যাংটকঃ
শিলিগুরি জাংশন এ পৌছে এসএনটি তে যাবেন। ইনার লাইন পার্মিট বাংলাদেশ থেকে করা না থাকলে এখান থেকে করে ফেলতে পারেন।এখানে এক কপি ছবি,পাসপোর্ট ও ভিসার ১ কপি করে জেরক্স কপি দিতে হবে এবং ১ টা ফর্ম পুরন করতে হবে। এখানে কর্মরত ব্যাক্তিরা অনেক হেল্পফুল। পার্মিশন পেয়ে গেলে শেয়ার্ড জীপের টিকিট কেটে ফেলুন। ২৫০ রুপি করে টিকিট।বাসেও যাওয়া যায়। তবে বাসে অনেক সময় লাগে। জীপে করে রওনা দেবার আগে বলে রাখবেন আপনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন এবং রাংপোতে কিছুক্ষন দাড়াতে হবে। রাংপো চেকপোস্টে পৌছালে আর্মিকে ইনার লাইন পার্মিট শো করুন এবং জীপ থেকে নেমে বাম পাশে ফরেনার রেজিস্ট্রেশন অফিসের দোতলায় গিয়ে এন্ট্রি করে পাস্পোর্টে সিল মেরে নিন। যারা ঢাকা অথবা শিলিগুরি থেকে ইনার লাইন পার্মিট নেননি তারা এখান থেকে তা সংগ্রহ করতে পারেন। প্রসিডিউর একি। রাংপোতে কাজ শেষ হলে আবার জীপে করে সোজা গ্যাংটক। গ্যাংটকে নেমে প্রথমেই ইনার লাইন পার্মিটের ১০ কপি করে জেরক্স করে নিন।
আমরা মোটামুটি ভালো মানের হোটেলে থাকবো। এমন একটা হোটেল নরইয়াং(Hotel Noryang)।পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হোটেল।এই হোটেল এর বড় সুবিধা হচ্ছে এটি গ্যাংটকের সেন্টার এমজি মার্গের একদম কাছে। এখানে ১০০০/- টাকার ভিতরে আরো অনেক ভাল ভাল হোটেল আপনারা পাবেন।
হোটেল ঠিক হয়ে গেলে আপনাদের ঘুরাঘুরির জন্য এজেন্সির শরণাপন্ন হতে হবে। আর এজেন্সির ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে যোগাযোগ করতে পারেন সোনম ওরফে ম্যাজিক ম্যানের সাথে। খুব ভালো ছেলে। চোস্ত ইংলিশ বলে। ও আপনাদের সব ধরনের হেল্প করতে পারবে। সোনমের ফোন নাম্বারঃ +৯১৮০০১৬৩০৪৭৫। ওকে ফোন দিয়ে বলবেন পরের দিন গ্যাংটকের আশেপাশে যে ১০ টা সাইট আছে সেগুলো ঘুরতে চান। তাহলে সে পরের দিন আপনাদের জন্য একটা গাড়ীর ব্যাবস্থা করে রাখবে। খরচ পরবেঃ ২৫০০-৩০০০ রুপি।
দিন ০২ঃ
সিকিমে ২য় দিন সকালে সাইট সিয়িং এ যাবার আগে পরের দিনের ইস্ট সিকিমে ছাঙ্গু লেকে ভ্রমনের পার্মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ সোনমকে দিয়ে দিন। সিকিমে বিদেশীদের ঘুরার নিয়ম হচ্ছে পরের দিন ঘুরার পার্মিশনের জন্য আগের দিন দুপুর ১ টার আগেই সকল কাগজ জমা দিতে হবে।
পার্মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজঃ
১) ৩ কপি ছবি
২) পাসপোর্ট ও ভিসার ২ কপি করে ফটোকপি
৩) ইনার লাইন পার্মিটের ১ কপি করে ফটোকপি
খরচঃ ৫০০(ঘুরাঘুরি)+৫০০(হোটেল)=১০০০ রুপী
দিন ৩ঃ
সিকিমে ৩য় দিন সকালে সাঙ্গু লেক ভ্রমনের পুর্বে পরের দুই দিন ইয়ামথাং ভ্যালী ভ্রমনের পার্মিশনের জন্য কাগজ গাইডের কাছে জমা দিয়ে যাবেন। সাঙ্গু লেক ভ্রমনের খরচ পরবে ৪৫০০-৫০০০ রুপী । ছাঙ্গু লেকে গেলে অবশ্যই কেবল কারে উঠবেন। খরচ পরবে ৩২৫ রুপী।
খরচঃ ৮৬০(ঘুরাঘুরি)+ ৫০০(হোটেল) +৩২৫(রোপ কার)=১৬৮৫ রুপী
দিন ৪ + ৫ঃ
সিকিমে ৪র্থ দিন নর্থ সিকিম ভ্রমণের পুর্বে হোটেল থেকে চেক আউট করতে হবে। কারন নর্থ সিকিমে ইয়ামথাং ভ্যালী ভ্রমণের জন্য এক রাত মাঝরাস্তায় লাচুং নামক গ্রামে কাটাতে হবে। এই প্যাকেজে ডিনার, ব্রেকফাস্ট ও হোটেলভারা ইঙ্কলুডেড থাকবে। টোটাল খরচ পরবে ১৯০০০-২০০০০ রুপী। নর্থ সিকিমে যাবার পথে বেশ কিছু ঝরনা ও সাইট সিয়িং পরবে। ভাগ্য ভালো থাকলে কাঞ্চনঝঙ্গার দেখা পেতে পারেন। ৫ম দিন ইয়ামথাং ভ্যালি ঘুরার পর একি রাস্তায় জিরো পয়েন্টো ঘুরে আস্তে পারেন। সেক্ষেত্রে ড্রাইভারকে অতিরিক্ত ৩০০০ রুপী দিতে হবে। তবে জিরো পয়েন্টে ঘুরার ডিসিশন নেবার পুর্বে অবশ্যই জেনে নিবেন জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তা ক্লিয়ার আছে কিনা। কারন বছরের বেশীরভাগ সময় এই রাস্তা বরফে আচ্ছাদিত থাকে। ড্রাইভাররা বারবার যাবার জন্যে প্ররোচিত করবে। কিন্তু অর্ধেক রাস্তায় যেয়ে বলবে আর যাওয়া যাচ্ছে না। তাই আগেই কনফার্ম হয়ে নিবেন।
খরচঃ (জিরো পয়েন্ট বাদে) ৩৩৩৪(ইয়ামথাং ভ্যালী)+ ৫০০(৫ম দিন রাত হোটেল)=৩৮৩৪ রুপী
দিন ৬ঃ
ষষ্ঠ দিন গ্যাংটক থেকে দেশের পথে ব্যাক করতে পারেন আবার কেউ ওয়েস্ট সিকিমে পেলিং ঘুরে একদিন পরে দেশে রওনা দিতে পারেন। আকাশ ক্লিয়ার থাকলে পেলিং থেকে কাঞ্চনঝঙ্গার সবচেয়ে সুন্দর ভিউ দেখা যায়। পেলিং গ্যাংটক থেকে ফেরার পথে পড়ে। পেলিং এ যেতে কোন পার্মিশোন লাগে না, কোন গাইডও লাগে না। পেলিং নিজেরা গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন। খরচ পরবে ৩৫০০ রুপী। যারা পেলিং যাবেন না তারা সকালে গ্যাংটকে শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেয়ার্ড জীপের টিকিট কাটবেন। ভাড়া ২৫০ রুপী। ফেরার পথে যথারীতি রাংপোতে গাড়ি থামিয়ে ফরেইনার রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে পাসপোর্টে এক্সিট পাস নিয়ে নিন। শিলিগুরি পৌছে হাতে সময় থাকলে কসমস মল ও হংকং মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় শপিং করে নিতে পারেন।
দুপুর ০২:৩০ এর মধ্যে শিলিগুড়িতে শ্যামলীর এসি বাস কাউন্টারে চলে আসুন। যারা নন এসি বাসে বুড়িমারি বা বাংলাবান্ধা থেকে যাবেন তারাও আসার সময় যেভাবে এসেছেন একিভাবে বর্ডার ক্রস করে বাসে উঠে পড়ুন। এছাড়া ট্রেনে গেলে ফুলবাড়ি পৌছে যতদ্রুত সম্ভব ইমিগ্রেশন শেষ করে ৫ টার মাঝেই দেশে প্রবেশের চেষ্টা করবেন। দেশে প্রবেশ করে বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন এর কাজ শেষ করবেন। এখানে পুর্বের ন্যায় ৪০.৬৯ টাকা পরিশোধ করতে হবে। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হলে ইমিগ্রেশোন অফিসের সামন থেকেই পঞ্চগড়ের বাসে উঠে পড়ুন। দেড় থেকে দুই ঘন্টার মধ্যেই পঞ্চগড় বাসস্ট্যান্ডে পৌছে যাবেন। সেখান থেকে অটোতে করে স্টেশন। ট্রেন রাইট টাইম থাকলে রাত ৯ টার একতা এক্সপ্রেসে উঠে পড়ুন। সব ঠিক থাকলে ৭ম দিন সকাল ৬:৩০ টায় ঢাকা পৌছে যাবার কথা।
সর্বমোট খরচ ১৪০০০-১৫০০০ টাকা। আরো কম খরচে যেতে পারবেন যদি ডাবল বেডে ৩ জন থাকতে পারেন আবার গাড়িতে ৩ জনের সিটে ৪ জন যেতে পারেন(ইন্ডিয়ানরা এভাবে যায়)। তবে এ ধরনের লম্বা ট্যুরে যেটা অল্মোস্ট রোডট্রিপ, সেখানে গাড়ীতে মোটামুটি রিলাক্সে না বসতে পারলে কস্ট হয়ে যাবে।