03/11/2024
★৫৮ সেকেন্ড এর গল্প (৯৫)★
"আনন্দ বেদনা পাশাপাশি চলে।"
মিশর সফর করছি। এ সফরে ফেরাউনদের সম্পর্কে জেনেছি। মিশরের প্রতিটি পদক্ষেপে মনে হয় যেন, রামাসেস ২ মানে ফেরাউন, যিনি মুসা আ: এর সাথে আল্লাহ তালার বিরুদ্ধে কট্টর ভূমিকায় ছিলেন। তিনি এখনো জীবিত কারন, দেশের স্থানে স্থানে রয়েছে তার স্ট্যাচু। মোসা আঃ লোহিত সাগরের অলৌকিক রাস্তা অতিক্রম করলেন দলবল সহ, আর ফেরাউন সাগরের ওই রাস্তায় ডুবে মারা গেলেন। লুক্সরে যেখানে তার জন্মভূমিতে কবর খোঁড়া হয়েছিল, দেখলাম।কিন্তু তিন হাজার বছর পর্যন্ত লাশ খুজে পাওয়া যায়নি। সমুদ্রে পরে পাওয়া যায়, বর্তমানে তার মমি রয়েছে,মিশর মিউজিয়ামে।
লোক্সরে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ রাজপ্রাসাদ, পৃথিবীর দীর্ঘতম নীলনদ রাস্তার দু'ধারে অববাহিকা অঞ্চলে, কৃষি ভূমি মিশরকে সকল আফ্রিকার দেশ থেকে আলাদা করেছে। এই নদের তীরে বিশ্বের সবচাইতে প্রভাবশালী রানী ক্লিপেট্রার প্রাসাদ, পানির নিচে এবং উপরে এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
পবিত্র কোরআনে হযরত ইউসুফ আ: এর স্মৃতি বিজড়িত দেশ মিশর, প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি দেখা, অতি সৌভাগ্যের বিষয়।
অনেকবার মিশরকে দেখেছি। প্রতিবারই নতুনভাবে দেখেছি, মিশরের পিরামিড সপ্তম আশ্চর্যের একটি। এর কাহিনী ছোট্ট পরিসরে লেখা সম্ভব নয়। ফারাও যুগের রাজাদের নাম সংরক্ষনে এই পিরামিড নির্মিত হয়েছিল। আলেকজান্দ্রিয়ায় কোথাও কোথাও মাটির নিচে প্যাঁচানো সিঁড়ি বেয়ে, অনেক নিচ পর্যন্ত তাদের স্মৃতি ধারণ করা আছে। রোমান থিয়েটার আশ্চর্য এক নিদর্শন। বিশ্বের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় আছে আল আজহার এবং বিশ্বের বৃহত্তম লাইব্রেরী শোভা পাচ্ছে ভূমধ্যসাগর তীরে।
আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাচীন বাতিঘর, ক্যান্টনমেন্ট ভূমধ্যসাগরকে অলংকৃত করেছে। আলেকজান্দ্রিয়ার মুরতাজা গার্ডেন দেখতে আসেন প্রতি বছর বিশ্ব নেতৃ বৃন্দ। আলেকজান্ডার দি গ্রেট এর লুক্কায়িত কবর, আলেকজান্ডারীয়ায়। আসুয়ান ডাম, কায়রো, মিশরের রাজধানী এবং সুয়েজ খাল দেখে দেশের ফেরার কথা ভাবছি।
রওনা হবার দুই দিন আগে ঢাকায় খবর পেলাম, আমার স্ত্রী সাবেক বিএনপি'র এমপি নূর আফরোজ জ্যোতির বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে বগুড়া কোর্টে মামলা করা হয়েছিল। মামলাটিতে তিনি জামিনে ছিলেন। রাজনীতি বিদদের মতে ফর্মাইসি আদালত জামিন বাতিল করলেন। আদালতে সময় চাওয়া হলেও, না মঞ্জুর হল । সাফাই সাক্ষী চাওয়া হল, নামঞ্জুর হল।নিজে সাক্ষী দিতে চাইলেন, তাও না মঞ্জুর হলো।
ঢাকা থেকে উকিল নেয়া হল। তারিখের দিন উকিল কে, কোন কিছু বলতে অনুমতি দেয়া হলো না। তারিখের দিন আমাদের টিম কায়রো থেকে শারজাহ হয়ে ঢাকা পৌঁছে। এর মধ্যে টিমের কেউ বুঝতে পারেনি আমার বিষয়টি, আমার উপর দিয়ে প্রবাহিত ঝড়ের গতি।
এয়ারপোর্ট থেকে টিম চলে গেলেন, নিজ নিজ বাড়িতে। আমি স্ত্রীর খোঁজখবর নিতে বাসায় গিয়ে জানতে পারলাম, স্ত্রী জেলে। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা করা সম্ভব নয়, প্রস্তুতি নিলাম হাইকোর্টে আপিল করতে। বগুড়ায় চেষ্টা নিলাম এমপি হিসেবে ভিআইপি মর্যাদা পাবার। প্রশাসন থেকে বলা হল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে, ইতোমধ্যে ভিআইপি আসনটি দেয়া হল এক হিজরাকে। আর ভি আই প্রাপ্যকে দেয়া হলো মেঝেতে। খামাখা সময় নষ্ট না করে হাইকোর্টে জামিনের চেষ্টা করি।
বন্ধুদের অনুরোধে, আমি টোয়াব নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য আবেদন করেছিলাম। প্রতিদিন নির্বাচন ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে হয়। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংহ প্রতিটি অঞ্চলে সফর করতে হচ্ছে। সপ্তাহে একদিন বগুড়ায় জেলখানায় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। ঈদে চোখের পানিতে পরিবারকে নিয়ে কোরবানির মাংস খেতে বসি। প্রত্যেকের চোখের পানিতে খাওয়া হয় না। জেল খানায় মাংস পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলেও তা ঠিকমতো পৌঁছেনি। অফিস, নির্বাচন, জেলখানায় খোঁজখবর, হাইকোর্ট সব জায়গায় দায়িত্ব পালনের জন্য শারিরীক অবস্থা অসহনীয়, খারাপ আকার ধারণ করে। তবু যেন কিছু হয়নি। নিকটতম বন্ধুরা জানলেও কিছুই তাদের করার ছিল না তাদের মুখে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা ছিল না। তারাও ভীষণভাবে মর্মাহত। হৃদয়বিদারক ঘটনা, সান্তনা দেবার ভাষা নেই বলে, তারাও স্বাভাবিক।
নির্বাচনে ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলাম।
আমার স্ত্রী বগুড়ায় একটি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০১০ সালে সাসপেন্ড করা হলো। কোন কারণ দর্শানো হয়নি। হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের রায় গুলো আমাদের পক্ষে, কিন্তু কলেজে যেতে দেয়া হয়নি গুন্ডাবাহিনী দিয়ে। ন্যায় সঙ্গত অধিকার আদায়ে বারবার গিয়েছেন, বারবার অন্যায় ভাবে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। কলেজের বেতন ব্যক্তিগত হিসাব থেকে অন্যায় ভাবে তুলে নেয়া হয়েছে।
প্রশাসন সরকারি মদদে প্রমোশন এর আশায় যা তা খারাপ ব্যবহার করেছে। আইন আদালত কিছুই মানেনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরকে মিথ্যা ভাবে কাগজপত্র দেখিয়ে হয়রানি চরম সীমায় পৌছে। মাঝে মাঝেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন আদেশ কে জালিয়াতি করে আমল আসল সত্যকে গোপন করা হয়। শিক্ষা অধিদপ্তরের আদেশে পাওনা বেতন আনতে গেলে কলেজ থেকে বিল করতে দেওয়া হয়নি। এমন অনেক অত্যাচারের কাহিনী যা সইতে হয়েছে।
মামলায় হাইকোর্টে জামিন হল। বিচারপতি শুনানিতে বলেন, শুধু কি বিএনপি বলেই ! ........।
৮৩ দিন জেলে থাকার একটি নির্মম বর্ণনা। এ ঘটনা শুধু বগুড়া, রাজশাহী নয়, পুরো দেশ জানে। এসব পত্রপত্রিকা টেলিভিশনেও সম্প্রচারিত হয়েছে। আজকে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা আল্লাহ পরম শত্রুকেও এমন শাস্তি যেন না দেন।
মিশর ভ্রমণ পুরোপুরি আনন্দদায়ক হয়েছে। মানুষ নামে অমানুষের জুলুম বেদনাদায়ক হলেও আনন্দ ও বেদনা পাশাপাশি চলে। যারা বোঝে না, তারা ভুল করে।
পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো ভ্রমন সংক্রান্ত প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন -
০১৭১৪৩৯৫১৯৫ / ০১৯৭৪৩৯৫১৯৫