Bangladesh Air Force Museum - BAF Museum
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাদুঘর
প্রাক্কথন
দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে এ দেশের আপামর বীর জনতা যখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ১৯৭১ সালের উত্তাল সেই দিনগুলোতে সীমিত সম্পদ আর জনবল নিয়ে ডিমাপুরে সম্পূর্ন বৈরী পরিবেশে পথযাত্রা শুরু করেছিল আজকের বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। অকুতোভয় কয়েক
জন বৈমানিক ও নির্ভিক কিছু বিমানসেনার অক্লান্ত পরিশ্রমে গঠিত সেদিনের সেই ‘কিলোফ্লাইট’ মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে করেছিল প্রকম্পিত আর মহান বিজয়কে করেছিল ত্বরান্বিত। বাঙালী সমগ্র বিশ্বে বীরের জাতি হিসেবে স্বীকৃতি ও পরিচিতি লাভ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এই গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস, সাফল্য ও উন্নয়নের ক্রমবিকাশকে সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে ১৭ জুন ১৯৮৭ সালে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাদুঘরের গোড়া পত্তন হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আগারগাঁও, বেগম রোকেয়া সরণী সংলগ্ন তেঁজগাও বিমান বন্দরের রানওয়ের পশ্চিম পার্শ্বে মনোরম পরিবেশে আরও সুবিন্যস্ত ও সুগঠিতভাবে পূণর্গঠন করা হয়।
পরিচিতি
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের জন্য বিমান বাহিনী যাদুঘরের প্রতিষ্ঠা গোটা জাতির জন্যই গৌরবজনক। জাতীয় সংকট কালের বিভিন্ন সময়ে ও ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাহসিকতাপূর্ণ অংশগ্রহনের ঐতিহাসিক স্মৃতিসমূহ সংরক্ষণের জন্য বিমান বাহিনী সামরিক যাদুঘরের বর্তমান অবস্থানটির পশ্চিমে রয়েছে রোকেয়া সরণী ও কম্পিউটার সিটি (আইডিবি ভবন) এবং পূর্বে রয়েছে তেঁজগাও বিমান বন্দরের সুবিশাল রানওয়ে ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার। উত্তর দিকে রয়েছে সুদৃশ্য লেক এবং দক্ষিণে মনোরম সবুজ বৃক্ষসারি ও বনানী। বিমান বাহিনী সামরিক যাদুঘরের চত্বরে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিমান বাহিনীর গৌরব তথা জাতীয় অহংকার ও স্মৃতি বিজড়িত বিমানসমুহ। যাদুঘরের বিশাল চত্বরে দর্শনাথীদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ তৈরী করা হয়েছে, যা বিমান বাহিনীর বিভিন্ন রণকৌশলের নামে নামকরণ করা হয়েছে।
চিত্ত বিনোদন
বিমান বাহিনী সামরিক যাদুঘর চত্বরে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিমান বাহিনীর গৌরব তথা জাতীয় অহংকার ও স্মৃতি বিজড়িত বিমানসমুহ। যাদুঘরের বিশাল চত্বরে দর্শনাথীদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য সুদৃশ্য ডিজিটাল ম্যাপ এর পাশাপাশি বিমান বাহিনীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন পরিভাষার নামে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ তৈরী করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের পানাহারের সুবিধার্থে যাদুঘরের দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ‘ফুড কোর্ট’। এছাড়াও বিমান বাহিনীর বিবিধ দ্রব্যাদি নিয়ে সজ্জিত হয়েছে ‘নীলাদ্রি’ নামে একটি স্যুভেনিয়র শপ। শিশুদের মনোরঞ্জন ও উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য ‘চিলড্রেন্স পার্ক’ এর পাশাপাশি ফুটপাথের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে জিরাফ, শিমপাঞ্জি, হরিণ ইত্যাদি নানান রকম পশু-পাখির প্রতিকৃতি। এছাড়াও রয়েছে সুদৃশ্য পানির ফোয়ারা ও ব্যাঙের প্রতিকৃতিসহ বিভিন্ন চিত্রকলা।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে সীমিত সম্পদ ও জনবল নিয়ে যে বিমান বাহিনীর অগ্রযাত্রা শুরু হয়, কালের পরিক্রমায় আজ তা অনেক পরিণত ও সুপরিচিত। সময়ের এ দীর্ঘ পরিক্রমায় ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি সমূহ সংরক্ষণ ও নতুন প্রজম্মের নিকট তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রয়াসেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাদুঘর এর সূচনা হয়েছে যা এখনো গড়ে ওঠার পর্যায়ে রয়েছে। ভবিষ্যতে এ যাদুঘরকে আরও সমৃদ্ধ করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।