Travel Mappers Bangladesh

Travel Mappers Bangladesh ‘Travel Mappers Bangladesh’ map’s the dream you live with. If you’re open and willing, travel will make you an incredibly better-rounded human being.

And that’s really the goal, isn’t it? If you don’t know where to start, check out our “Travel Mappers Bangladesh”. Sometimes it’s only far from home that you realize you you’ve got skills you’ve never used. Its travel that brings them to the surface and makes you smile, satisfied to have reached the mountain top. The enthusiastic Mappers will be there to take you far from home to earn that experie

nce and happiness. The Mappers woks to explore the remote, less known and also well-known places within Bangladesh and beyond our country. There are many national and international trips around the year. The goal of traveling is to experience and explore the blessings and beauties of the nature. “Travel Mappers Bangladesh” believes to live with nature and to keep the nature alive. Keeping nature alive alone is the most tough thing, so we believe to work together with the people who travels with us. We are against ‘Global Warming’ and that’s why we do not support to have ‘camp fire’ in our trips. This is a little step against the global warming. The Mappers also believes that if every of ‘Our hands’ will keep the nature clean, the nature will be able to take a fresh breath and so do we. Travel is more than the seeing of sights; it is a change that goes on, deer and permanent, in the ideas of living. No one realizes how beautiful it is to travel until he comes back home and rests his head on his old, familiar pillow. So, if you planning to come back home to your old pillow after achieving a lifetime experience, ‘Travel Mappers Bangladesh’ will help you out to sn**ch some quality time from your busy life and to let you make lifetime memories. ‘Travel Mappers Bangladesh’ planes trip for your pleasure, adventure and relaxation.

02/04/2021
09/11/2019
03/11/2019

Bangladesh tour of India 2019 | LIVE 3 T20i & 2 Test

28/10/2019

I would like to say a huge thank you to all of you for all of your kind donations over the last few months. You need to know that your donation of £10 will have bought one of the carabenas that has secured our route to the summit, that your £30 will have bought us some of the rope that we needed t...

06/06/2017

কম খরচে ডাউকি, শিলং ও চেরাপুঞ্জি ভ্রমণের A to Z বিস্তারিত [২য় পর্ব]:
© সিয়াম আনোয়ার।

নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এমন ভাবে শেয়ার করেছি যে কিভাবে চেরাপুঞ্জি ভ্রমণে যাবেন সেটার সম্পূর্ণ ধারনা পাবেন। যাতায়াত, হোটেল এবং স্পট কস্টিং সহ প্রায় সব কিছুর ধারনা পাবেন। তাই একটু ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইলো। ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

কেউ যদি প্রথম পর্ব না পড়ে থাকেন তাহলে অনুরোধ রইলো প্রথম পর্বটি পড়ে নিতে।
[১ম পর্বঃ] লিঙ্ক-> https://www.facebook.com/media/set/?set=a.415684528817188.1073741850.222604781458498&type=1&l=fee634f6cc

(২য় দিনঃ চেরাপুঞ্জি,নোহকলিকাই ফলস,ডাবল ডেকার ব্রিজ,ইকো পার্ক,মৌসুমি গুহা,সেভেন সিস্টার ফলস,শিলং শহর)

সকালে ভোরে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। শিলং এ সকাল ৯টার আগে দোকান, মানি এক্সচেঞ্জ খুলে না। তাই সেভাবে পরিকল্পনা করুন। সকালেই ট্যাক্সি করে রওনা দিয়ে দিলাম চেরাপুঞ্জির পথে।
চেরাপুঞ্জির পথের বর্ণনা আর কি করবো? যতই বর্ণনা করবো তাতে, তার সৌন্দর্য ততই কম মনে হবে। স্বচক্ষে না দেখলে পৃথিবীর কোন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে সে সৌন্দর্য বুঝানো সম্ভব নয়। চেরাপুঞ্জির আগের নাম ছিল সোহরা। স্থানীয় ভাষায় সোহরা অর্থ চূড়া। কারণ এলাকাটির অবস্থান পাহাড়ের চূড়ায়। পরে নাম রাখা হয় চেরাপুঞ্জি। চেরাপুঞ্জি অর্থ কমলালেবুর দ্বীপ। কারণ এখানে কমলালেবুর চাষ বেশি হয়। চেরাপুঞ্জি একসময় মেঘালয়ের রাজধানী ছিল। ১৮৬৪ সালে চেরাপুঞ্জি থেকে শিলংয়ে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়।
মাঝে মাঝেই মেঘের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে আমাদের ট্যাক্সি। মেঘের কারণে এক হাত সামনের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ঘন কুয়াশার মধ্যে ছুটে চলছে আমাদের ট্যাক্সি।

মাউকডক ম্যাগী শপ-> https://goo.gl/maps/bXdThGMvWkK2
চেরাপুঞ্জি যাওয়ার পথে দেওয়ান সিং সায়েম ভিউপয়েন্ট/Duwan Singh Syiem Viewpoint এর পাশেই ম্যাগীর এক মস্ত বড় রেস্টুরেন্ট দেখে খাওয়ায় দাওয়া করার জন্য থামলাম। ঘড়িতে সকাল ৮টা বাজে। ইন্ডিয়ায় এসে আলু পরাটা না খেলে লস তাই আলু পরাটা অর্ডার দিলাম। প্রতি পিস আলুপরাটা ৬০রুপি।

আলু পরাটা ঠিকই ছিল, কিন্তু ঝামেলা বাধালো আলু পরাটার সাথের এক চাটনি। এমন বিটকেলে স্বাদ, মুখের স্বাদের বারোটা বাজিয়ে দিলো। ইন্ডিয়ানরা হয়তো এই চাটনি খেয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু আমরা কেউ চাটনিটার স্বাদে মজা পেলাম না, বরং খুব বিরক্ত হলাম। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, এই চাটনিটা এক ধরণের লাল পুদিনা পাতা দিয়ে বানানো হয়। কোন রকমে খেয়ে বের হয়ে গেলাম।

ওয়াহ কাবা ঝর্না-> https://goo.gl/maps/NTRdQK3Daiw
যাত্রা পথে আরেকটি ঝর্নার ভিউ পয়েন্টের কাছে এসে থামলাম। ঘড়িতে ৯টা বাজে। চেরাপুঞ্জিতে গিয়ে প্রায় সবাই নামকরা ঝর্না গুলো দেখে থাকে, কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে আরও আকর্ষণীয় ঝর্না গুলো অদেখা থেকে যায়। এবারের মেঘলয় ভ্রমণে চেস্টা করেছি সেরকম কিছু জায়গা খুজে বের করার।যেই ঝরনাটির সামনে থামলাম সেটির নাম ওয়াহ কাবা ঝর্না। এটি দেওয়ান সিং সায়েম ব্রিজ থেকে ২২কি.মি. দূরে চেরাপুঞ্জিতে অবস্তিত। শিলং-চেরাপুঞ্জি মেইন রোড দিয়ে যেতে থাকলে রাস্তার পাশেই পাওয়া যাবে এই ঝর্না দেখার ভিউ পয়েন্ট। মজার কথা হল, এই ঝর্নার একদম কাছে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি করা আছে, এই ঝর্নার একদম পাশে দাঁড়ানোর ভিউ পয়েন্ট আছে। এই ঝর্নার পানি খুব শীতল এবং পরিস্কার। স্বচক্ষে দেখলে ঝর্নাটি সবার ভাল লাগতে বাধ্য। বেশিক্ষন সময় নস্ট না করে রওনা দিলাম ডাবল ডেকার ব্রিজ দেখতে।

ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ-> https://goo.gl/maps/yhRQxvpTBLG2
এইটা ছিল আমাদের টোটাল জার্নির সব থেকে চালাঞ্জিং পার্ট। কারণ এই ডাবল ডেকার ব্রিজ দেখতে হলে ৩৫০০ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নামা এবং উঠা করতে হবে। যাই হোক আল্লাহর নাম নিয়ে রওনা দিলাম। ঘড়িতে সকাল ১০টা বাজে। যাওয়ার পথে স্থানীয় অনেকে ঘিরাও করে ধরবে তাদের গাইড হিসেবে নিওয়ার জন্য। এখানে গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। এমনকি গাইড নেওয়ার কোন কারণও আমি দেখি না। কারণ রাস্তা পাকা করা, সিঁড়ি করে দেওয়া। সবাই পাকা রাস্তা অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে থাকলেই আপনাআপনি ডাবল ডেকার ব্রিজের কাছে গিয়ে পৌঁছাবে। পথ হারানোর বিন্দু পরিমাণ সম্ভাবনাও নেই। তবে বয়স্ক কারও সাথে যদি ভারি কিছু থেকে থাকে এবং তিনি যদি সেটা গাইড কি দিয়ে বহন করাতে চায়, সে ক্ষেত্রে গাইড নিতে পারেন। এটা যার যার বাক্তিগত ব্যাপার। হাটার সুবিধার্থে লাঠি কিনতে চাইলে ২০রুপি দিয়ে লাঠি কিনতে পারেন। কিন্তু আমার ২০রুপি দিয়ে বাঁশ কিনার শখ ছিল না। তাই আমি লাঠি ছাড়াই গিয়েছি।ডাবল ডেকার ব্রিজ দেখতে যাওয়ার জন্য যেখানে পারকিং করবেন সেটার জন্য ফিরে এসে ৩০রুপি পারকিং ফি এবং আরও ৩০রুপি এরিয়া ক্লিনিং সার্ভিস ফি মোট ৬০রুপি দিতে হবে।

যাত্রা পথের বেশ কিছু জায়গার সিঁড়ির একদম খাঁড়া। নামার সময় ব্যাল্যান্স রাখা যেমনটা কঠিন, তেমনি ওঠার সময় দম রাখাও কস্ট। তবে সমম্ভব নয়। কারণ আমি বহু নারী পুরুষ, বৃদ্ধ লোক, শিশু কিশোরদের দেখেছি ঘুরে আসতে। যারা দুর্বল তারা ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে দেখে আসতে পারেন। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। যাত্রা পথের কিছু দূর পর পরই দেখা মিলবে টং দোকানের। সেখানে ডিম সিদ্ধ, কলা, মধু, পানি, জুস সবই কিনতে পারবেন। এছাড়া কিছু দূর পরপর খাবার পানির কলের বাবস্থা তো আছেই। পিপাসা লাগলে পানি পান করতে পারবেন। যাত্রা পথে দুইটি ঝুলন্ত ব্রিজ পড়বে। ব্রিজ দুইটি খুবই সরু। তাই সাবধানে পার হবেন। একসাথে বেশি সংখ্যক মানুষ ব্রিজের উপর উঠবেন না। ২/৩জন করে পার হোন। সিঁড়ি ধরে এগিয়ে যেতে থাকলে ডাবল ডেকার ব্রিজের কাছে পৌছে যাবেন।

ডাবল ডেকার ব্রিজের কাছে যখন পৌছালাম ঘড়িতে বেলা ১১.৩০বাজে। একটা ব্যাপার মনে রাখবেন যে ডাবল ডেকার ব্রিজের জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০রুপি। প্রতি মোবাইলের জন্য আবার ২০রুপি। ক্যামেরার জন্য আবার ২০রুপি। গেটে এক মহিলা বসা থাকে, উনি জিজ্ঞেস করে যে কয়টা মোবাইল আছে, তবে চেক করে না। যদি সৎ থাকতে চান তাহলে বলে দিতে পারেন যে ৪/৫টা মোবাইল আছে, তাহলে প্রতিটার জন্য ২০রুপি করে দিয়ে আসতে হবে। আর যদি টাকা বাঁচাতে চান তাহলে ১/২টা বলে পার হয়ে যেতে পারেন, যেহেতু কোন চেক হয় না। এমন ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ আসলেই বিরল। ভারতে সচরাচর সিঙ্গেল রুট ব্রিজ পাওয়া গেলেও, এমন ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ পাওয়া নজিরবিহীন। ডাবল ডেকার ব্রিজের সামনেই একটা আকর্ষণীয় ঝর্না পেয়ে গেলাম। ঝর্নার পানি বরফের মত ঠান্ডা আর একদম স্বচ্ছ। ঝর্নার সামনে পানি জমে নাচেরাল সুইমিং পুল হয়ে গেছে। পানিতে বেশ মজা করলাম, ওয়াটার প্রুফ ক্যামেরা দিয়ে পানির নিচে ভিডিও করলাম। এখানে গোসল করলে কাপড় পরিবর্তন নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। নারী পর্যটকদের কথা চিন্তা করে ড্রেস চেঞ্জ রুমের বাবস্থা আছে। বেশিক্ষন না থেকে গোসল করে রওনা দিয়ে দিলাম।
আবার সেই ৩৫০০ধাপের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে জানটা বের হয়ে গেল। বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে যতটা দ্রুত সম্ভব উপরে উঠে গেলাম। তাড়াহুড়ার কারণ আজকের মধ্যে আরও স্পট কাভার করতে হবে, তাই। এবার রওনা দিয়ে দিলাম, ইকো পার্কের উদ্দেশে।

ইকো পার্ক-> https://goo.gl/maps/Ve1PUCnhsvN2
ইকো পার্কে পৌছানোর সাথে সাথেই একরাশ মেঘ এসে ধেকে ফেল্লো আমাদের। ঘড়িতে দুপুর ৩টা বাজে। আর শুরু হল ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। তাই এর মধ্যে দুপুরের লাঞ্চটাও করে নেওয়ার সুযোগ পেলাম। খেতে বসলাম, ইকো পার্ক রেস্টুরেন্টে। ডিম ভুনা,ভাত, ডাল, সব্জি দিয়ে তৃপ্তি নিয়েই খেলাম। খাওয়া শেষে দেখি বৃষ্টি কমে গেছে, তাই পার্কের ভিতর ধুলে গেলাম। একদম শেষ দিকের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দূর পাহাড়ের উপর বাড়ি ঘর দেখতে থাকলাম। হঠাৎ করেই দেখলাম পাহাড়ের কয়েকশো ফুট নিচে মেঘের কুঞ্জি দোলা হচ্ছে।আস্তে আস্তে নিচের চারপাশ মেঘে ধেকে উপরের দিকে ধেয়ে আসছে। ধোঁয়ার মত মেঘের কুণ্ডলী উপরে উঠে দূরের পাহাড়,ঘর অদৃশ্য করে দিল। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, যা চোখে না দেখলে বলে বুঝানো যাবে না।

এই ইকো পার্কের ভিতরে কুয়ার মত চার পাশে বাউন্ডারি দেওয়া এবং এর উপরে নিরাপত্তা গ্রিল দেওয়া একটি ঝর্না আছে। এর নাম মিসিং ফলস/Missing Falls। যাতে কেউ অসাবধানতাবশত এর ভিতর পড়ে না যায় তাই এই নিরাপত্তা গ্রিল দেওয়া। এছাড়া এই পার্কের দক্ষিণ প্রান্তে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আরেকটি মনোমুগ্ধকর ঝর্না চোখে পড়বে। মজার কথা হল, সেভেন সিস্টারস ফলস (নোহসগিথিয়াং ফলস) এর অন্যতম পানির উৎস এই ঝর্না থেকেই। দেশ বিদেশের অনেক পর্যটকদের সমাগম হয় এই ইকো পার্কটিতে। মেঘের খেলা দেখা ফিরতি পথ ধরলাম। পার্ক থেকে বের হওয়ার সময়, গাড়ির জন্য ২০রুপি দিতে হল। ভাগ্য ভাল ক্যামেরা চার্জ ১৫রুপি নেয় নাই।

মৌসুমী গুহা-> https://goo.gl/maps/oHJPw1cLAiQ2
ইকো পার্কের খুব কাছেই মৌসুমী গুহা। রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড় গুলোতে সাইনবোর্ড নির্দেশনা থাকায় খুজে পেতে কোন সমস্যাই হয় না। তাই কারও কাছে যদি রাস্তা অচেনা হয়, হারানোর কোন সম্ভাবনাই নেই। মৌসুমী গুহা দেখতে যাওয়ার পথে পাহাড়ের উপর কিছু একটার প্রতিকৃতি দেখে চোখ আটকে গেল। বুঝলাম পাথর কেটে হাতির প্রতিকৃতি বানানো হয়েছিল, কিন্তু কালের বিবর্তনে, অবহেলায় হাতির শুড় ভেঙ্গে পড়েছে। প্রকৃতির চারপাশ দেখতে দেখতে মৌসুমি গুহার কাছে পৌছে গেলাম। ঘড়িতে বিকাল ৪.৪০ বাজে। মৌসুমী গুহার প্রবেশ মুখে জনপ্রতি ২০রুপি দিয়ে টিকিট কাটলাম। প্রতি ক্যামেরা চার্জ ২০রুপি রাখতে পারে। গুহার প্রবেশমুখের চেকারটা বেশ মজার মানুষ। বললেন যে গুহায় একটু পানি আছে প্যান্ট একটু ভাজ করে উঠালে সবার ভাল হবে। গুহায় কিছু জাগায় কুজো হয়ে চলতে হবে এটাও অভিনয় করে দেখিয়ে দিলেন। উনার অভিনয়ে মজা পেলাম।

সবাই প্যান্ট খানিকটা ফোল্ডিং করে গুটিয়ে নিলাম। জুতা,কেডস পরে গুহায় প্রবেশ না করাই ভাল, কারণ সেটা ভিজে যাবে। এর থেকে স্যান্ডেল কিংবা খালি পায়ে যেতে পারেন। গুহায় প্রবেশ করে বুঝতে পারলাম যে এটা সাধারণ গুহা না। প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট হলেও গুহার দেওয়াল প্রাকৃতিক ভাবেই চমৎকার নৈপুণ্যতার পরিচয় দিচ্ছে। গুহার ভিতরে উজ্জ্বল এল.ই.ডি ফ্লাড লাইটের কারণে আলোক স্বল্পতা হওয়ার অবকাশ নেই। মোটামটি সব কিছু পরিস্কারই দেখা যাচ্ছে। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই ছোট্ট টানেল পড়বে, এখানে কুজো হয়ে পার হতে হবে। এই জাগাটাই কিছুটা পানি আছে। পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত আর কি। অনেকে এই টানেলের প্রবেশ মুখে স্যান্ডেল খুলে রেখে প্রবেশ করেন। এটি করবেন না। কারণ নরমালি আপনি আর এই পথেই ফেরত আসবেন না কারণ গুহা থেকে একেবারে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তা অন্যদিক দিয়ে তাই।

এই টানেলটি পার করলে দেখবেন মুখের সামনে একটা রাস্তা আছে যেখানে “এক্সিট/exit কথা লেখা আছে। আপনি যদি এখনি বের হয়ে চান তাহ্লে এই এক্সিট বরাবর কিছুদূর হেটে গেলেই গুহা থেকে বের হয়ে যাবেন। আর যদি গুহার ভিতরটা আরেকটু ঘুরতে চান তাহলে টানেলটি পার করে হাতের ডানে দেখবেন রাস্তা চলে গেছে, সেই দিকটা একটু ঘুরে আসতে পারেন, তবে মনে রাখবেন এইদিকের রাস্তা খুবই সঙ্কীর্ণ এবং এইদিক দিয়ে গুহা থেকে একেবারে বের হওয়ার কোন রাস্তা নেই। তাই আপনি একদিকে যত ভিতরেই যান না কেন আপনাকে বের হওয়ার জন্য এক্সিট সাইনবোর্ড প্রদর্শিত রাস্তা দিয়েই বের হতে হবে। গুহার ভিতর কুজো হয়ে চলার সময় দুইহাত মাথার উপর দিয়ে সাবধানে হাঁটবেন। অনেক সময় মাথায় দুর্ঘটনাবশত পাথরের সাথে বাড়ি খাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। গুহার ভিতরের তাপমাত্রা একেবারেই কম। বেশ শীত শীত লাগছিলো, এমনকি মুখ দিয়ে ভাপ বের হতে দেখছিলাম। গুহার দেওয়ালের গা থেকে চুয়ে পড়া ফোটা ফোটা পানি বৃষ্টির মত ঝরে পড়ছে। দেখতে দেখতে গুহা থেকে বের হয়ে গেলাম। বাইরে পা ধোয়ার জন্য কল রাখা আছে, চাইলে ফ্রেশ হয়ে নিতে পারেন।

সেভেন সিস্টার ফলস ভিউ পয়েন্ট-> https://goo.gl/maps/jFASBfBxo3R2
এরপর রওনা দিলাম সেভেন সিস্টার ঝর্না দেখার উদ্দেশে। সেভেন সিস্টার ফলস দেখার উপযুক্ত ভিউপয়েন্ট একেবারে রাস্তার পাশেই। ঘড়িতে ৫.২০ বাজে। রাস্তার একজাগায় পারকিং করলাম। পারকিং ফি ২০রুপি দিতে হল। ভিউপয়েন্ট থেকে সেভেন সিস্টারের সুন্দর ভিউ তো পাবেনই, সাথে দুরের আমাদের দেশের সমতল ভুমিও দেখতে পারবেন। সত্যি বলতে কি আমি সেভেন সিস্টার থেকে আমাদের দেশের সমতল ভুমির দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। কত সুন্দরই না লাগছে বাংলাদেশকে। এই কয়দিনে দেশটাকে খুব মিস করছি। আসলে দেশের মাটি, দেশের মানুষ যে কতটা আপন সেটা বিদেশের মাটিতে এসে বোঝা যায়।

সেভেন সিস্টারে ভরা বর্শায় অন্যরকম সৌন্দর্য দেখা যায়। এটার নাম কেন সেভেন সিস্টার সেটার এক অনেক গল্প লোকেমুখে শোনা যায়। অনেকে বলে, ভারতের সাতটি রাজ্যের পানি এসে মিশেছে এ ঝরনার সঙ্গে। তাই এর নাম সেভেন সিস্টার ফলস। আবার আমাদের ট্যাক্সির ড্রাইভার বলল ভিন্ন গল্প। সে বলল, অনেক আগে ওই জাগায় পাহাড়ের উপরে সাতটা বোন থাকতো। ১৮৯৭ সালের প্রবল ভূমিকম্পে সেই সাতবোন সহ তাদের বাড়ি পাহাড় থেকে পড়ে যায়। রিখটার স্কেলে ৮.৭ মাত্রার সেই ভুমিকম্প পুরো মেঘালয় জুড়ে ভৌগলিক পরিবর্তন ঘটায়। সেইখান থেকেই এই জায়গার নাম সেভেন সিস্টার হয়েছে। গল্পটা সত্যি নাকি মিথ্যা কে জানে। আবার শিলং এর পথে ফিরে চললাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। মেঘের মাঝে তলিয়ে যাবার আগে শেষ বারের মত সূর্য মামার দেখা পেলাম।

স্কাই ভিউ পয়েন্ট-> https://goo.gl/maps/EtTCdG3LnJJ2
ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যাবার আগে রাস্তার মাঝে এক ভিউপয়েন্টে থামলাম। নাম স্কাই ভিউ পয়েন্ট। ঘড়িতে সন্ধ্যা ৬টা বাজে। চেরাপুঞ্জি যাবার রাস্তায় এই ব্যাপারটাই আমার সব থেকে ভাল লাগে যে পাহাড়ের আঁকে-বাঁকে ভিউ পয়েন্ট তৈরি করা। যার যেখানে ভাল লাগছে, দাড়িয়ে দূর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। সন্ধ্যালগ্ন, তাই ভিউপয়েন্টি একেবারেই ফাকা। আমরা কজন মিলে দূরপাহাড়ের পাদদেশে মেঘ জমা দেখতে থাকলাম। অন্ধকার বাড়ার সাথে সাথে উজ্জ্বল হতে থাকলো রাস্তার সব যানবাহনের হেডলাইটের আলো। দূরপাহাড়েও দেখা যাচ্ছে আলোকরশ্মির ছোটাছুটি। রাস্তায় যাত্রা পথে এমন অনেক ভিউপয়েন্ট পাওয়া যাবে। আপনি চাইলে আপনার পছন্দমত যেকোনটিতে থামতে পারেন।

শিলং শহরঃ
আবার শিলং এর উদ্দেশে রওনা দিয়ে দিলাম। শিলং এর কাছাকাছি এসে হতভম্ব হয়ে ট্যাক্সির জানালা দিয়ে রাতের শিলং এর ঘরবাড়ির আলো দেখতে থাকলাম। পাহাড়ের গায়ে নির্মিত বাড়িগুলোর আলোতে সব কিছু এমন জ্বলজ্বল করছে দেখে যেন মনে হচ্ছে হাজার হাজার জোনাকি পোকা পাহাড়ের গায়ে বাসা বেধেছে এবং তাদের আলো মিটমিট করে ঝলছে। এমন দৃশ্য দেখতে আপনি মিস করতে চাইবেন না।

আজ শিলং ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেছে। হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেতে বের হয়ে গেলাম। কিন্তু মুসলিম হোটেলের সামনে গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে, কারণ আজকের মত তাদের খাবার শেষ। পাশেই ডমিন’স পিৎযার সাইনবোর্ড দেখে মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। সবাই ঢুকে পড়লাম ডমিন’স পিৎজায়। ওদের নাকি একটা অফার চলতেসে। অফারে ২টা মিডিয়াম সাইজ চিকেন বারবিকিউ চিজ পিৎজা ৫৩০রুপির পরিবর্তে ৫০০রুপিতে পেলাম। প্রায় ১৫মিনিট পর গরম গরম পিৎজা পেলাম। সাথে মশলার প্যাকেট, সস ইত্যাদি ইত্যাদি দেওয়া। অসাধারণ টেস্ট। এখানে না আসলে নতুন কিছু টেস্ট করা মিস হয়ে যেত। তাই চাইলে আপনারাও একবার ডমিন’স পিৎজার স্বাদ নিতে পারেন। হোটেলে ফিরে আবার ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।

কম খরচে ডাউকি, শিলং ও চেরাপুঞ্জি ভ্রমণের [৩য় পর্ব] পড়তে চাইলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
[৩য় পর্ব]-> https://www.facebook.com/media/set/?set=a.415979518787689.1073741852.222604781458498&type=1&l=587a54b06e

এই অ্যালবামের সকল ছবি ঝকঝকা প্রিন্ট দেখতে নীচের এই লিঙ্কে ক্লিক করুন-> https://flic.kr/s/aHskWo3X8V

লেখায় কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ব্যাঙ্গ,ঠাট্টা,উপহাস এর পরিবর্তে আপনার সৎ মন্তব্য,উৎসাহ কামনা করছি। সবাই ভাল থাকবেন। আপানদের ভ্রমণ সুখকর হোক।
আমার ভ্রমণ সম্পর্কিত যেকোন তথ্যের জন্য নিচে কমেন্ট করতে পারেন। এছাড়া ফেসবুকে মেসেজ করতে পারেন।
এছাড়া আমার আরও বিভিন্ন ভ্রমণের বিস্তারিত জানতে আমার এই ফেসবুক পেজে ঘুরে আসতে পারেন-> https://www.facebook.com/seamtraveler
আমার ট্র্যাভেল ভিডিও দেখতে আমার ইউটিউব (YouTube) চ্যানেলে ঘুরে আসতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল-> https://www.youtube.com/playlist?list=PLUvHR_QtK1lJ43_5eYET4fmcsyeuTeik4
এছাড়া আমাকে ইন্সটাগ্রামে (Instagram) ফলো করতে পারেন।-> instagram.com/seamanower

লেখাটি ভাল লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আমার এই লেখাটি আপনার সংগ্রহে আজীবন রাখার জন্য শেয়ার দিয়ে নিজের টাইমলাইনে রাখুন।

03/06/2017

কম খরচে ডাউকি, শিলং ও চেরাপুঞ্জি ভ্রমণের A to Z বিস্তারিত [১ম পর্ব]:
© সিয়াম আনোয়ার।

আমার এই পোস্টে নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এমন ভাবে শেয়ার করেছি যে কিভাবে শিলং ভ্রমণে যাবেন সেটার সম্পূর্ণ ধারনা পাবেন। ইটোকেন, ভিসা প্রসেস, বর্ডার ক্রস, যাতায়াত, হোটেল এবং স্পট কস্টিং সহ প্রায় সব কিছুর ধারনা পাবেন। তাই একটু ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইলো। ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এই অ্যালবামের সকল ছবি ঝকঝকা প্রিন্ট দেখতে নীচের এই লিঙ্কে ক্লিক করুন-> https://flic.kr/s/aHskWo3X8V

প্রথমে ইটোকেনঃ
আপনার যদি ইংরেজিতে দক্ষতা এবং ফর্ম পুরনের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে চাইলে নিজে নিজেই ভারতীয় ভিসার জন্য ফর্ম পুরন করতে পারেন। সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে অনলাইনে এপ্লাই করতে থাকলে ভাগ্য ভাল হলে ডেট পাওয়া সম্ভব।
মনে রাখবেন, যদি আপনি শিলং যেতে চান তাহলে পোর্ট এন্ট্রি এবং এক্সিট “Dawki by road” দিবেন। ডাউকি দিয়ে শুধু বাই রোড যাওয়া যায়, এয়ার কিংবা ট্রেন যায় না।

আর আপনার যদি ভিসা অলরেডি করা আছে, এবং সেটি হরিদাসপুর কিংবা চেংরাবান্ধা দিয়ে করা আছে সেক্ষেত্রে হরিদাসপুর ভিসাধারীরা কলকাতা থেকে প্লেনে কিংবা ট্রেনে গোয়াহাটি গিয়ে। সেখান থেকে ২.৩০ ঘন্টায় বাসে শিলং পৌঁছে যেতে পারবেন।

ডলার এন্ডোরসমেন্টঃ
জনতা ব্যাংক এর মতিঝিল শাখা থেকে ডলার এন্ডোরসমেন্ট সার্টিফিকেট নিতে পারেন। ভারতীয় ভিসা এপ্লাইয়ের জন্য ২০০ডলার এন্ডোরস করতে পারেন। ২০০ ডলার এন্ডোরসমেন্ট সার্টিফিকেট ফি ৩৪৫টাকা। সাথে করে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন। তবে তখনি যদি ডলার ভাংতি করে না নেন তাইলে তারা নিজেদের চা নাস্তার জন্য ৫০টাকা বেশি রাখতে পারে। আমি তখনি ডলার ভাঙ্গায়নি তাই ৪০০টাকা দিতে হয়েছিল।

ভিসা এপ্লাইঃ
এপয়েনমেন্ট ডেট পেয়ে গেলে এবার নির্দিষ্ট দিনে সব কাগজপাতি নিয়ে আইভ্যাকে চলে যান। ঢাকাবাসীরা গুলাশান আইভ্যাকে জমে দিতে পারেন। ব্যাগ নিয়ে এম্বাসির ভিতরে ঢুকতে দিবে না, তাই প্রয়োজনিয় কাগজপাতি সব স্বচ্ছ ফাইলে করে নিয়ে যান। ভিসা ফি ৬০০টাকা। প্রতিবার ভিসা এপ্লাইয়ের সময় নতুন সদ্য তোলা ছবি প্রদান করলে ভাল। তাতে ভিসা পাওয়ার চান্স বেড়ে যায়। সব কাগজপাতি ঠিক থাকলে ইনশাল্লাহ ভিসা পেয়ে যাবেন। সাধারণত নতুন পাসপোর্টে প্রথমবার আবেদনে ডাউকি পোর্টে ৬মাসের ভিসা দেয়।

ট্রাভেল ট্যাক্সঃ
ভিসা পেয়ে গেলে এবার ট্র্যাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। ট্যাক্স ফি ৫০০টাকা। সাথে করে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন। এটাও জনতা ব্যাংক এর মতিঝিল শাখায় দিতে পারবেন। এছাড়া সোনালী ব্যাংক এর নির্ধারিত কিছু শাখায় দেওয়া যায়, যেমন নিউমার্কেট শাখা। লিস্ট গুলো আমার জানা নেই। নেটে একটু খোজ করে নিতে পারেন।

তামাবিল যাত্রাঃ
সব ফাইনাল হয়ে গেলে এবার ঢাকা থেকে সিলেটের টিকিট কেটে ফেলুন। ঢাকা থেকে সিলেটের অনেক বাস আছে। এনা, শ্যামলী, হানিফ ইত্যাদি। আমি এনাতে ৪৭০ টাকা দিয়ে গিয়েছি। রাতের বাসে উঠেলে ওরা ভোর ৫.৩০ এর ভিতর নামিয়ে দেয়। এনার সিলেট কাউন্টারের ঠিক রাস্তার অপরপাশ থেকেই জাফ্লংগামী লোকাল বাস ছাড়ে। ভাড়া ৬৫টাকা। পৌঁছাতে সময় লাগবে দেড়/দুই ঘন্টা। তামাবিল ইমিগ্রেশন অফিসের কাছে নামিয়ে দিবে।

বর্ডার ক্রস প্রসেসঃ
সকাল ৯টা থেকে ইমিগ্রেশন শুরু হয়। এর আগে পৌছায় গেলে সকালের নাস্তা করে নিন। পাসপোর্ট দেখিয়ে পুলিশ চেকপোস্ট থেকে একটা ছোট্ট ফর্ম আনতে হবে। যাবতীয় তথ্য দিয়ে সেটা পুরন করে ট্র্যাভেল ট্যাক্স এর স্লিপ সহ জমা দিন। ট্র্যাভেল ট্যাক্স এর এক কপি ওরা রেখে দিবে আর যাত্রী কপি আপনাকে দিয়ে দিবে। এখানে আপনার সাইন দিতে হবে। সব জাগায় আপনার পাসপোর্টে যেমন সাইন তেমন সাইন দিবেন। এখানের কাজ শেষে। এবার তামাবিল শুল্ক অফিসের ভিতরে গিয়ে পাসপোর্ট দেখিয়ে সাইন দিতে হবে। সাথে ল্যাপটপ, ডিএসএলআর ক্যামেরা থাকলে ওদের খাতায় এন্ট্রি করে নিন। তাতে করে ফেরত আসার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়ানো যায়। এখানের কাজ শেষে চেক পোস্ট লাইনে পাসপোর্ট জমা দিন। এখানে সুন্দরি মহিলা বিজিবি বসা থাকে। ওরা যাবতীয় তথ্য এন্ট্রি করে রাখবে। সামনে এগিয়ে যান, বিএসএফ এর দেখা মিলবে। ওরা পাসপোর্ট চেক করে দেখবে। আবার সামনে এগিয়ে গেলে ইমিগ্রেশন অফিস। এখানে ভিতরে গিয়ে পাসপোর্ট জমা দিন। ওরা সিরিয়ালি নাম ডাকবে। আপনার নাম ডাকলে ভিতরে গিয়ে নাম সাইন করে চলে আসুন। এবার বের হওয়ার সময় সাইন করে সর্বশেষ এন্ট্রি করতে হয়। এখানে ডলার চেক করে। আপনার ডলার এন্ডোরস করা ২০০ডলার। কিন্তু আপনি শো করলেন ১০০ডলার তাহলে ঝামেলা করতে পারে। তাই সাথে ডলার এন্ডোরসমেন্টের সমপরিমাণ টাকা রাখাই ভাল। যদি সেটাতে নিরুপায় হোন, তাইলে তাকে ১০০/১৫০ বাংলা টাকা দিয়ে পার হয়ে যেতে পারে। এটাও অনুচিত কাজ। তাই আমি বলবো, ডলার এন্ডোরসমেন্টের সমপরিমাণ টাকা রাখতে।
ইমিগ্রেশন থেকে বের হওয়ার পর অনেকে আপনাদের দেখে চা পানি খাওয়ার জন্য টাকা পয়সা চাইতে পারে। দিবেন না। কেন দিবেন? মামা বাড়ির আবদার নাকি? ঘুষ দেওয়া নেওয়া সমান অপরাধ।

এসব শুনার পর যাদের মনে হয়েছে এতশত ঝামেলা আপনারা নিজেরা করতে চান না, তাইলে তারা শ্যামলী বাসের ৫১০০টাকার (ভিসা ফি সহ) শিলং প্যাকেজে ঘুরে আসতে পারেন। প্রয়োজনীয় কাগজপাতি দিয়ে দিলে তারাই ভিসার সব বাবস্থা করে দেয়। এবং তিনদিনের শিলং ভ্রমণ করিয়ে এনে দেয়।
আপনি কিভাবে ভ্রমণ করবেন এবার এটা আপনার ইচ্ছা।

ভ্রমন বিস্তারিতঃ
আপনাদের সুবিধার্থে প্রতিটা স্পটের বিবরণের নিচে গুগল ম্যাপ লোকেশন লিংক দিয়ে দিলাম। আশা করি এটাই আপনার খুঁজে পেতে হেল্প হবে। লোকেশন টা মোবাইলে নিয়ে নেন তাতে করে ম্যাপ দেখে পৌঁছে যাবেন।

(১মদিনঃ ডাউকি ব্রিজ,বোরহিল ফলস,মাউলিনং গ্রাম,লিভিং রুট ব্রিজ,শিলং শহর)
ইমিগ্রেশন অফিস থেকে বের হয়ে ১০রুপি দিয়ে ডাউকি গিয়ে বাসে করে শিলং শহরে চলে যেতে পারেন। সেখানে গিয়ে হোটেল ঠিক করে নিতে পারেন। টাক্সি ভাড়া করে এরপর আপনার ঘুরার পরিকল্পনা অনুযায়ী সেভাবে ঘুরতে পারেন। প্রথম দিন বাদে, দ্বিতীয়,তৃতীয় দিন যেই ড্রাইভারকে নিয়ে ঘুরেছিলাম, খুবই ভাল মানুষ। নাম হোসেইন। তার বাড়ি আসামে। তাই বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, খাসিয়া। সব বলতে পারে। আপনাদের যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তার ফোন এবং ফেসবুক আইডি নিচে দিয়ে দিলাম।
ফোনঃ +91 98630 72266
ফেসবুকঃ https://facebook.com/profile.php?id=100011144147569

এবার বলি আমি কিভাবে ঘুরেছি। বর্ডার ক্রস করলে প্রথমে আপনার মোবাইলের/হাত ঘড়ির সময় আধা ঘন্টা কমিয়ে নিন। কারণ ইন্ডিয়ান সময় বাংলাদেশের তুলনায় আধা ঘন্টা পিছে। মানে বাংলাদেশি সময় সকাল ১০.৩০ মানে ইন্ডিয়ান সময়ে সকাল ১০.০০টা। এটা করলে ইন্ডিয়ার সময় ধরে আপনার চলতে সুবিধা হবে। নাহলে মাঝে মাঝে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি হতে পারে। আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় আমি ইন্ডিয়ান সময় অনুযায়ী বর্ণনা করলাম।
ইমিগ্রেশন অফিস থেকে বের হয়ে সামনে ট্যাক্সি দেখতে পেলাম। ঘড়িতে ১০.১৫ বাজে। শিলং এর মানুষজন বাংলা,হিন্দি,ইংলিশ বুঝে। সুতরাং কথা বলতে কোন সমস্যাই হবে না। ড্রাইভারকে বললাম যে কোথায় কোথায় যাব এবং যাওয়ার পথে যেখানে যেখানে থামতে ইচ্ছা হবে সেখানে থামিয়ে দেখবো। সব শুনে ড্রাইভার তিন হাজার রুপিতে যেতে রাজি হল। দলে ছিলাম চার জন। গাড়িতে উঠে পড়লাম। এখানের ট্যাক্সি গুলো একটু ছোট সাইজের। স্বাস্থ্যবান মানুষদের হলে আরাম করে তিন জন বসা যায়, একটু কস্ট করলে ৪জন বসা যায়। আর ৫জন বসা প্রায় অসম্ভব।

ডাউকি ব্রিজ-> https://goo.gl/maps/CP9ozTJ6X6o
যাত্রা শুরু হয়ে গেল। দেশের সমতল ভুমিকে বিদায় দিয়ে পাহাড়ের উপর উঠেতে থাকলাম। একেবেকে পাহাড়ি রাস্তা। কিছুদূর যেতেই ছোট ছোট ঝর্না বা ঝিরিও বলা যায় চোখে পড়তে থাকলো। বর্তমানে বৃষ্টি হওয়ায় সেগুলাতে যেন যৌবন ফিরে এসেছে। কিছুদূর যাওয়ার পর সেই ডাউকি ঝুলন্ত ব্রিজ চোখে পড়লো, যেটা বাংলাদেশের জাফ্লং জিরো পয়েন্ট থেকে দেখা যায়। ঘড়িতে ১০.৩০ বাজে। গাড়ি থামিয়ে বেশকিছু ছবি তুলে নিলাম।

বোরহিল ঝর্না-> https://goo.gl/maps/uoUESVz68sv
আবার সামনে যেতে যেতে আরও একটি নাম না জানা ঝর্না চোখে পড়লো। এখানেও গাড়ি থামিয়ে ছবি নিলাম। ঘড়িতে ১১.১৫ বাজে। পৌছেগেলাম বোরহিল ঝর্নার ব্রিজের উপর। সব থেকে আকর্ষণীয় ছিল বোরহিল ঝর্না। এটা ভারতীয় নাম। এটার বাংলাদেশি নাম হল পানতুমাই ঝর্না। বিছনাকান্দি ঘুরতে এসে দূর থেকে এই ঝর্না দেখেছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে কি কাছ থেকে না দেখলে এই ঝর্নার আসল রুপ কখনই বুঝা যাবে না। এই ঝর্নার ভয়ঙ্কর রুপ দেখে আসলেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। পানির তীব্র গর্জনে কান ঝালা পালা হয়ে যায়। এবার সোজা চললাম মাউলিনং গ্রামের দিকে।

মাউলিনং গ্রাম-> https://goo.gl/maps/w9Uh1Ht4Lfn
মাউলিনং শব্দের অর্থ হল “সৃষ্টিকর্তার নিজের বাগান”। এই গ্রাম ২০১৬ সালে এশিয়ার সব থেকে পরিস্কার গ্রাম হিসেবে মনোনীত হয়। এই গ্রামের রাস্তার কোথাও বিন্দু পরিমাণ ময়লা, কাঁদা খুজে পাওয়া যাবে না। প্রতিটা বাড়িতেই আছে চমৎকার ফুলের বাগান। দেখলে মনে হয়ে রুপকথার কোন এক গ্রামে চলে এসেছি। মাউলিনং গ্রামে যখন পৌছালাম, ঘড়িতে ১২.৩০ বাজে। এখানের রাস্তা আসলেই অনেক পরিস্কার। এতোটাই পরিস্কার যে আপনি রাস্তায় ভাত ছিটিয়ে সেই ভাত রাস্তা থেকেই তুলে খেতে পারবেন। গ্রামের ভিতরে টুরিস্ট স্পট প্রবেশমুখে প্রতি গাড়ি ৫০রুপি দিয়ে টিকিট কাটতে হবে। ওরা বলে নিবে যে এটা ওদের গ্রামের পরিস্কার পরিছিন্নতার কাজে বায় হবে। প্রতিদিনই দেশ বিদেশ থেকে শত শত পর্যটক এই গ্রামে আসছে। এখানে ভাল মানের খাওয়ার হোটেল আছে। তবে মুসলমান ভাই বোন দের জন্য বলবো এখানে ভেজিটেবল আইটেম খেতে। কারণ এরা বেশীরভাগ খ্রিস্টান ধর্মালম্বি হওয়ায় এরা সাধারণত হালাল উপায়ে মুরগী জবাই করে না। তাই ডিম ভাজি,সব্জি ইত্যাদি দিয়ে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। এই আইটেম খেতে জনপ্রতি ১০০রুপি খরচ হতে পারে। যদিও ওদের বিভিন্ন সেট মেন্যু আইটেম আছে। চাইলে আপনি নিজের মত মেন্যু করে ওদের বলতে পারেন। এছাড়া এখানে রাতে থাকতে চাইলেও থাকার জন্য মানসম্মত অনেক হোম স্টে/কটেজ আছে।

লিভিং রুট ব্রিজ-> https://goo.gl/maps/5BoM887F9EA2
মাউলিনং গ্রাম দেখা শেষে, লিভিং রুট ব্রিজ দেখতে চলে গেলাম। মাউলিনং গ্রাম থেকে খুবই কাছে। এখানেও পারকিং রাখবে। লিভিং রুট ব্রিজ দেখতে জনপ্রতি ২০রুপি লাগবে। ক্যামেরা ফি ২০রুপি দেওয়া লাগতে পারে। ঘড়িতে ০১.৫০ বাজে। লিভিং রুট ব্রিজ দেখলে আসলেই আশ্চর্য হয়ে যাবেন। প্রাকৃতিক ভাবেই গাছের শিকড় জোড়া লেগে লেগে ব্রিজ তৈরি হয়ে গেছে। আসলে এটাকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বললে কিঞ্চিৎ ভুল হবে। এটাকে কাস্টম প্রাকৃতিক বলা যেতে পারে। নোহওয়েট গ্রামের বাসিন্দারা প্রথমে চিকন বাঁশ দিয়ে একটি পুল/ব্রিজের মত কাঠামো তৈরি করে নেন। তারপর এক জাতের আদি রাবার গাছের চারা লাগিয়ে সেগুলোর শিকড় পুলের কাঠামোর সাথে পেচিয়ে পেচিয়ে দিতেন। কালের পরিবর্তনে শেকড় গুলো হৃষ্টপুষ্ট হয়ে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে এমন লিভিং রুট ব্রিজে রুপ নেয়।

নোহওয়েট ভিউ পয়েন্টঃ
লিভিং রুট দেখার পর অপর পাশের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলে একটা সাইনবোর্ড দেখবেন যে “নোহওয়েট ভিউ পয়েন্ট/nohwet view point”
এটি দেখতে চাইলে নির্দেশনা অনুসরণ করে সেই রাস্তা ধরে এগিয়ে যাবেন। বেশ খানিকটা ভিতরে, হেটে পৌছাতে ১৫মিনিটের মত লাগবে। যদিও রাস্তা চিনতে অসুবিধা হয়, স্থানীয় মানুষদের ভিউ পয়েন্ট বলে জিজ্ঞাস করলে দেখিয়ে দিবে। ভিউপয়েন্টের প্রবেশ মুখে এন্ট্রি ফি জনপ্রতি ৩০রুপি দেখবেন। প্রথমে মনে হতে পারে ৩০রুপি গচ্চা যাচ্ছে। কিন্তু একবার ভিতরটা ঘুরে আসুন। আপনার ধারণা পাল্টে যাবে। ভিতরে ধুকতেই পরিচয় হল এক ভিউপয়েন্টের মালিক “ড্রংওয়েল খংক্রম/Drongwell Khongkrom” এর সাথে। বাংলা না বুঝলেও হিন্দি,ইংলিশ বলতে পারেন।
ড্রংওয়েলের ফোন নাম্বার আর ফেসবুক আইডি আপনাদের দিয়ে দিলাম। আসা করি আপনাদের যোগাযোগ করতে সুবিধা হবে।
ফোনঃ +91 81320 01225
ফেসবুকঃ https://facebook.com/profile.php?id=100007146196602

ড্রংওয়েল আমাদের স্বাগতম জানালো। আমাদের কই যেতে হবে সেই পথ দেখিয়ে দিল। বাঁশ দিয়ে রাস্তা করা একটি জায়গা দিয়ে হাঁটতে থাকলাম। চমৎকার ডিজাইনের রাস্তা। কিছুদূর সামনে এগিয়ে যেতেই বুঝলাম যে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের কিনারা ঘেঁষে নির্মাণ করা এক সুউচ্চ মাচার উপর দারিয়ে আছি। চার পাশে বাউন্ডারি দেওয়া। পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মাচার উপর বসার জন্য বেঞ্চও আছে। তবে যেই দৃশ্য আমার মাথা নস্ট করে দিল সেটা হল, চার পাশের পাহাড়ের দৃশ্য। চোখের সামনে বিশাল বড় বড় পাহাড় আর পাহাড়ের খাঁজ। আর সেই সব পাহাড়ের উপর থেকে বেয়ে পড়ছে ঝর্না। একটি দুইটি ঝর্না নয়, গুনে গুনে ৭টি ঝর্না পেলাম। আর ঝর্নার পানি গুলো, নিচে মিলিত হয়ে এক নদীতে পরিণত হয়েছে। পাহাড়ের খাঁজের শেষ দিকে সমতল ভুমি, মানে আমাদের বাংলাদেশের এক অংশ দেখা যাচ্ছে। এমন দৃশ্য দেখে সত্যিই চোখে পানি চলে এলো। ড্রংওয়েল, আমাদের বলল এই জায়গা থেকে ইকো/প্রতিধ্বনি তৈরি করা যায়। আমরা বিভিন্ন সিনেমায় দেখেছি যে পাহাড়ের উপর থেকে জোরে চিৎকার করলে বা কিছু বললে সেটা পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হতে থাকে। সেই প্রতিধ্বনি এখান থেকে করে শোনা যায়। বেশ মজা পেলাম এই ব্যাপারটিতে। ড্রংওয়েল আমাদের দেখালো, তার এই মাচার আশে পাশে সে অনেক রাবার গাছ লাগিয়েছে।

এখান থেকে বের হয়ে এখানের ভিতরেই বাঁশ দিয়ে একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। সেটার উপরে উঠলাম। নিচে নেমে একটি গোল ছাউনির ভিতরে ঢুকে ড্রংওয়েলের সাথে আড্ডা দিতে থাকলাম, হঠাৎ করেই ড্রংওয়েল তার মোবাইলে একটা ঝর্নার ছবি আমাকে দেখালো। নাম নিরিয়াং ফলস। সে বল্লো, ঝর্নাটি এখনো এটি টুরিস্ট স্পট হিসেবে চালু হয় নি, বিধায় এখনো টুরিস্টে জমেনি। এই ঝর্না টা দেখতে হলে একঘণ্টা পায়ে হেটে ট্রেকিং করে যেতে হবে, আবার আসতে ১ঘন্টা। খুবই সুন্দর লাগলো ঝর্নাটা, কিন্ত আমাদের সময় স্বল্পতার কারণে আর এইখানে যাওয়া হয়নি। তাই পরে আবার গেলে এই জায়গা অবশ্যই দেখতে যাবো।

যদি এখনে রাতে থাকতে চান তাহলে এইখানে থাকার বাবস্থা আছে। ভিউ পয়েন্ট থেকে মাত্র ২মিনিটের দূরত্বে আর লিভিং রুট ব্রিজ থেকে ১০মিনিটের দূরত্বে এই কটেজটি। ডাবল বেড, সোফা, টিভি, টাইলস এবং গিজার/ওয়াটার হিটার বাথরুম আছে। খরচ পড়বে প্রতি রাত ২০০০রুপি। কটেজের নাম “না ই মেই হোমস্টে”। এর মালিক “হালি খংসদাম/Hali Khongsdam”। তার ফোন ও ফেসবুক আইডি নিচে দিয়ে দিলাম।
ফোনঃ +918974591430
ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/hali.khongsdam

এখানের সব থেকে ভাল ব্যাপার হল, জাগায় জাগায় স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণ করা আছে। পাহাড়ের যত চিপায় ঘুরতে যাই না কেন, প্রতিটা টুরিস্ট স্পটে ভাল মানের টয়লেট দেখেছি। যেটা শিশু, নারী ট্রাভেলারদের জন্য অনেক সহায়ক।

শিলং সিটি-> https://goo.gl/maps/rJKmHvz1K812
এবার ফিরে এসে ট্যাক্সিতে উঠে সোজা শিলং এর রাস্তা ধরলাম। পাহাড়ি উঁচুনিচু রাস্তা একে বেকে চলে গেছে। দূর দূরান্তে যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। কোনটা পাথুরে পাহাড় তো কোনটা সবুজে ঢাকা পাহাড়। কিছু কিছু পাহাড়ের উপর দেখি খ্রিস্টানদের ক্রস ফলক বসানো। বুঝলাম এগুলো, খ্রিস্টানদের কবরস্থান। এমন খবরের পাহাড় বেশ চোখে পড়বে। মাঝে মাঝে সবুজের সমারোহ এতোটাই বেড়ে যাচ্ছে যে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে ছিলাম। আসলেই মেঘালয়কে কেন প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড বলা হয়, এবার বুঝলাম। আমার তোলা ছবি গুলোতে ১০০ভাগের মাত্র ১ভাগ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। এর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে স্বচক্ষে দেখতে হবে।

শিলং এ থাকার হোটেলঃ
শিলং পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা ৬টা বেজে গেল। এবার হোটেল খোঁজার পালা। শিলং এ কম খরচে থাকার জন্য আমার কাছে সব থেকে ভাল মনে হয়েছে হোটেল হিল স্টার। এখানের সিঙ্গেল বেড রুম ৬৫০রুপি, ডাবল বেড রুম ৭৫০ রুপি, দুইটা ডাবল বেডের চার পারসন রুম ১৩২০ রুপি। (ওয়াই ফাই সুবিধা নেই) তবে এই হোটেলে থাকতে হলে আপনাকে এককপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং পাসপোর্ট এবং ভিসার ফটোকপি দিতে হবে। তাই এগুলো দেশ থেকে সাথে নিয়ে গেলেই ভাল, নাহলে ওইখানে ৪কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি শুধু প্রিন্ট করতে ৫০ রুপি দেওয়া লাগবে। শিলং এর কম দামি, বেশি দামি প্রায় প্রতিটা হোটেলের ওয়াশরুমে গিজার/ওয়াটার হিটার আছে। সুতরাং ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে না চাইলে গিজার চালু করে গরম গরম পানিতেই গোসল করুন, সমস্যা নেই।

হিল স্টার হোটেলের ফোন নাম্বার এবং লোকেশনঃ
ফোনঃ +91-8191900057 , +91-8266012340
হোটেল হিল স্টার-> https://goo.gl/maps/UsV7x6xVc482

এবারে মুসলমান ভাইদের নামাজের স্থান এবং হালাল খাবার কোথায় পাবেন সেটা জেনে নেই।
শিলং শহরে মসজিদ আছে। তাই চাইলে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদের লোকেশন-> https://goo.gl/maps/2WBHxe5iLvE2

শিলং শহরে ২টা মুসলিম হোটেল পেয়েছি। মসজিদের গলির মধ্যেই দুটির অবস্থান। একটি ক্যাফে সাভেরো, আরেকটি পুলিশ বাজার হোটেল। ক্যাফে সাভেরো এর পরিবেশ ভাল, একেবারে রাস্তার পাশে অবস্থান বলে খুজে পাওয়া সহজ তাই খাবারের দামটা একটু বেশি। ক্যাফে সাভেরো ছাড়িয়ে আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে ডমিনস পিৎজার পাশের গলিতে ঢুকলে হোটেল পুলিশ বাজার পাওয়া যাবে। হালাল উপায়ে জবাই করা গরু, মুরগী পাবেন। গরু ভুনা ফুল বাটি ১০০টাকা। খাবার সমস মনে রাখবেন প্রথমে যেই বাটিতে গরু ভুনা দিবে সেটা কিন্তু হাফ পরিমাণ বাটি। বাকি হাফ আবার চেয়ে নিবেন। নাহলে কিন্তু হাফ খেয়ে মনের ভুলে ফুলের দাম দিয়ে চলে আসতে পারেন। হোটেলের মালিকের ব্যবহার অমায়িক। বাঙালি শুনলে অনেক সাহায্য করেন। এছাড়া এদের পার্সেল সুবিধা আছে। চাইলে খাবার কিনে এনে হোটেলে বসেও খেতে পারেন। মুসলিম খাবার হোটেলের লোকেশন লিঙ্ক, (হোটেল পুলিশ বাজার)-> https://goo.gl/maps/Zw4mazvicEE2

দেশে ফোন সার্ভিসঃ
এবার বলি দেশে ফোন কিভাবে করবেন। এই মসজিদের গলিতেই পি.সি.ও দোকান পাবেন। যেকোন দোকানে জিজ্ঞেস করলে পি.সি.ও দোকান দেখিয়ে দিবে। এক ভদ্রমহিলা দোকান চালান। দোকানে ঢুকে বুথে বসে বাংলাদেশ ফোন দিতে পারবেন। মনে রাখবেন, আপনি যদি বাংলাদশের কোন মোবাইল নাম্বারে ফোন দেন তাহলে ফোন নাম্বারের পূর্বে ০০৮৮ সংযোজন করে এর পর আপনার কাঙ্ক্ষিত মোবাইল নম্বরটি দিয়ে ডায়াল করলেই ফোন চলে যাবে। কল রেট ফিক্সড করা। 4সেকেন্ড পালস। প্রতি মিনিটে রেট ২২+ রুপির মত উঠে।

চাইলে আপনি ইন্ডিয়ান “আইডিয়া” সিম কিনে নিতে পারেন। জিএস রোডের হোটেল ব্রডওয়ের বিপরীত দোকানটাতে বা শিলং সেন্টার থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলে একটা মোবাইল রিচারজের দোকান আছে। সেখানে প্রতি নতুন “আইডিয়া” সিম ১০০রুপি। সিম কিনার পর এক্টিভেট হতে ১২ঘন্টা+ মত সময় লাগবে। আর আপনি চাইলে ওদের থেকে এক্টিভেট করে সিম কিনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ হবে। প্রতি “আইডিয়া” এক্টিভেট সিম ৩০০ রুপি দিয়ে কিনতে হবে। কোন বালন্স থাকবে না, আলাদা করে বালন্স ভরে নিতে হবে। সিম কিনার সময় আপনার ২কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং পাসপোর্ট এবং ভিসার ফটোকপি লাগবে। এগুলো সাথে রাখবেন। সিম কিনার সময় ইন্ডিয়ার লোকাল কার রেফারেন্স দিতে হয়। ইন্ডিয়ার লোকাল কেউ পরিচিত থাকলে তার নাম্বার দিতে পারেন।

শিলং স্টিট ফুডঃ
শিলং এর রাস্তার স্টিট ফুড টেস্ট করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না। শিলং সেন্টারের সামনে পাবেন এই স্টিট ফুডগুলো। শিলং এর প্রায় সব গুলো স্টিট ফুডের ছবি ফেসবুক এ্যালবামে আছে। স্টিট ফুড গুলোর মধ্যে যেমন চিকেন মম আছে। ২পিস ২০ রুপি। বেশ ঝাল। যদিও ফ্রি খাবার পানি ওদের কাছে পাবেন। এরপর আছে এগ রোল। ডিম ভেজে সেটা একটা রুটি দিয়ে মুড়িয়ে ভিতরে, পেয়াজ,মরিচ, মশলা, চাটনি এবং হরেক রকম সস মিশিয়ে দেয়। দাম প্রতি পিস ২০রুপি। এরপর আছে ভেজিটেবল নুডুলস। এটা অবশ্যই টেস্ট করবেন। দাম ২০রুপি। আর সাথে একটা ডিম দিয়ে নিলে ৩০রুপি। এটাও একটু ঝাল। টমেটো সস এবং খাবার পানি ওদের কাছেই পাবেন। এছাড়া আরও দেখবেন, রুটি, ডাল/সব্জি কিংবা এগ ফ্রাইড রাইস।

তবে মুসলমান ভাই বোনদের একটা জিনিস খেতে সাবধান করে দিব। সেটা হল, স্টিট ফুড গুলোর মধ্যে চিকেন বারবিকিউ দেখবেন। এটা খাবেন না। তারপর চিকেনের সাথে চাকা চাকা মাংসের বারবিকিউ দেখবেন। ওদের জিজ্ঞেস করলে বলবে “পর্ক/pork” মানে শুকরের মাংস। সুতরাং এটি ভুলেও খাবেন না। এমনকি ওদের চিকেনও খাবেন না। কারণ হালাল উপায়ে চিকেন জবাই হয় না।যেই শিক দিয়ে চিকেন গাথে সেই শিক দিয়ে ঘুরে ফিরে পর্কও গাথে। তাই মুসলমান ভাই বোনদের বাইরের এই চিকেন না খাওয়ার অনুরোধ রইলো।

চাইলে সবাই ডমিনস পিৎজা ট্রাই করতে পারেব। মিডিয়াম সাইজ চিকেন বারবিকিউ চিজ পিৎজা ২৬৫ টাকা। ওদের একটা অফার চলতেসে যে একসাথে ২টা পিৎজা নিলে ৩০রুপি কম, ৫০০রুপি রাখবে। টেস্ট আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। অবশ্যই ট্রাই করে দেখতে পারেন।
রাত ৯টার মধ্যেই শিলং এর প্রায় সব দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। আর রাত ১০টার দিকে একদম নীরব। যদিও শিলং বেশ নিরাপদ শহর, তবুও রাত ১০টার ভিতরে হোটেলে ফিরে যাওয়া ভাল।

কম খরচে ডাউকি, শিলং ও চেরাপুঞ্জি ভ্রমণের [২য় পর্ব:] পড়তে চাইলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
[২য় পর্ব:]-> https://www.facebook.com/media/set/?set=a.415975132121461.1073741851.222604781458498&type=1&l=1d35e61922

লেখায় কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ব্যাঙ্গ,ঠাট্টা,উপহাস এর পরিবর্তে আপনার সৎ মন্তব্য,উৎসাহ কামনা করছি। সবাই ভাল থাকবেন। আপানদের ভ্রমণ সুখকর হোক।
আমার ভ্রমণ সম্পর্কিত যেকোন তথ্যের জন্য নিচে কমেন্ট করতে পারেন। এছাড়া ফেসবুকে মেসেজ করতে পারেন।
এছাড়া আমার আরও বিভিন্ন ভ্রমণের বিস্তারিত জানতে আমার এই ফেসবুক পেজে ঘুরে আসতে পারেন-> https://www.facebook.com/seamtraveler
আমার ট্র্যাভেল ভিডিও দেখতে আমার ইউটিউব (YouTube) চ্যানেলে ঘুরে আসতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল-> https://www.youtube.com/playlist?list=PLUvHR_QtK1lJ43_5eYET4fmcsyeuTeik4
এছাড়া আমাকে ইন্সটাগ্রামে (Instagram) ফলো করতে পারেন।-> instagram.com/seamanower

লেখাটি ভাল লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আমার এই লেখাটি আপনার সংগ্রহে আজীবন রাখার জন্য শেয়ার দিয়ে নিজের টাইমলাইনে রাখুন।

Address

1439
Dhaka
1236

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Travel Mappers Bangladesh posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category