03/06/2017
কম খরচে ডাউকি, শিলং ও চেরাপুঞ্জি ভ্রমণের A to Z বিস্তারিত [১ম পর্ব]:
© সিয়াম আনোয়ার।
আমার এই পোস্টে নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এমন ভাবে শেয়ার করেছি যে কিভাবে শিলং ভ্রমণে যাবেন সেটার সম্পূর্ণ ধারনা পাবেন। ইটোকেন, ভিসা প্রসেস, বর্ডার ক্রস, যাতায়াত, হোটেল এবং স্পট কস্টিং সহ প্রায় সব কিছুর ধারনা পাবেন। তাই একটু ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইলো। ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এই অ্যালবামের সকল ছবি ঝকঝকা প্রিন্ট দেখতে নীচের এই লিঙ্কে ক্লিক করুন-> https://flic.kr/s/aHskWo3X8V
প্রথমে ইটোকেনঃ
আপনার যদি ইংরেজিতে দক্ষতা এবং ফর্ম পুরনের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে চাইলে নিজে নিজেই ভারতীয় ভিসার জন্য ফর্ম পুরন করতে পারেন। সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে অনলাইনে এপ্লাই করতে থাকলে ভাগ্য ভাল হলে ডেট পাওয়া সম্ভব।
মনে রাখবেন, যদি আপনি শিলং যেতে চান তাহলে পোর্ট এন্ট্রি এবং এক্সিট “Dawki by road” দিবেন। ডাউকি দিয়ে শুধু বাই রোড যাওয়া যায়, এয়ার কিংবা ট্রেন যায় না।
আর আপনার যদি ভিসা অলরেডি করা আছে, এবং সেটি হরিদাসপুর কিংবা চেংরাবান্ধা দিয়ে করা আছে সেক্ষেত্রে হরিদাসপুর ভিসাধারীরা কলকাতা থেকে প্লেনে কিংবা ট্রেনে গোয়াহাটি গিয়ে। সেখান থেকে ২.৩০ ঘন্টায় বাসে শিলং পৌঁছে যেতে পারবেন।
ডলার এন্ডোরসমেন্টঃ
জনতা ব্যাংক এর মতিঝিল শাখা থেকে ডলার এন্ডোরসমেন্ট সার্টিফিকেট নিতে পারেন। ভারতীয় ভিসা এপ্লাইয়ের জন্য ২০০ডলার এন্ডোরস করতে পারেন। ২০০ ডলার এন্ডোরসমেন্ট সার্টিফিকেট ফি ৩৪৫টাকা। সাথে করে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন। তবে তখনি যদি ডলার ভাংতি করে না নেন তাইলে তারা নিজেদের চা নাস্তার জন্য ৫০টাকা বেশি রাখতে পারে। আমি তখনি ডলার ভাঙ্গায়নি তাই ৪০০টাকা দিতে হয়েছিল।
ভিসা এপ্লাইঃ
এপয়েনমেন্ট ডেট পেয়ে গেলে এবার নির্দিষ্ট দিনে সব কাগজপাতি নিয়ে আইভ্যাকে চলে যান। ঢাকাবাসীরা গুলাশান আইভ্যাকে জমে দিতে পারেন। ব্যাগ নিয়ে এম্বাসির ভিতরে ঢুকতে দিবে না, তাই প্রয়োজনিয় কাগজপাতি সব স্বচ্ছ ফাইলে করে নিয়ে যান। ভিসা ফি ৬০০টাকা। প্রতিবার ভিসা এপ্লাইয়ের সময় নতুন সদ্য তোলা ছবি প্রদান করলে ভাল। তাতে ভিসা পাওয়ার চান্স বেড়ে যায়। সব কাগজপাতি ঠিক থাকলে ইনশাল্লাহ ভিসা পেয়ে যাবেন। সাধারণত নতুন পাসপোর্টে প্রথমবার আবেদনে ডাউকি পোর্টে ৬মাসের ভিসা দেয়।
ট্রাভেল ট্যাক্সঃ
ভিসা পেয়ে গেলে এবার ট্র্যাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। ট্যাক্স ফি ৫০০টাকা। সাথে করে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন। এটাও জনতা ব্যাংক এর মতিঝিল শাখায় দিতে পারবেন। এছাড়া সোনালী ব্যাংক এর নির্ধারিত কিছু শাখায় দেওয়া যায়, যেমন নিউমার্কেট শাখা। লিস্ট গুলো আমার জানা নেই। নেটে একটু খোজ করে নিতে পারেন।
তামাবিল যাত্রাঃ
সব ফাইনাল হয়ে গেলে এবার ঢাকা থেকে সিলেটের টিকিট কেটে ফেলুন। ঢাকা থেকে সিলেটের অনেক বাস আছে। এনা, শ্যামলী, হানিফ ইত্যাদি। আমি এনাতে ৪৭০ টাকা দিয়ে গিয়েছি। রাতের বাসে উঠেলে ওরা ভোর ৫.৩০ এর ভিতর নামিয়ে দেয়। এনার সিলেট কাউন্টারের ঠিক রাস্তার অপরপাশ থেকেই জাফ্লংগামী লোকাল বাস ছাড়ে। ভাড়া ৬৫টাকা। পৌঁছাতে সময় লাগবে দেড়/দুই ঘন্টা। তামাবিল ইমিগ্রেশন অফিসের কাছে নামিয়ে দিবে।
বর্ডার ক্রস প্রসেসঃ
সকাল ৯টা থেকে ইমিগ্রেশন শুরু হয়। এর আগে পৌছায় গেলে সকালের নাস্তা করে নিন। পাসপোর্ট দেখিয়ে পুলিশ চেকপোস্ট থেকে একটা ছোট্ট ফর্ম আনতে হবে। যাবতীয় তথ্য দিয়ে সেটা পুরন করে ট্র্যাভেল ট্যাক্স এর স্লিপ সহ জমা দিন। ট্র্যাভেল ট্যাক্স এর এক কপি ওরা রেখে দিবে আর যাত্রী কপি আপনাকে দিয়ে দিবে। এখানে আপনার সাইন দিতে হবে। সব জাগায় আপনার পাসপোর্টে যেমন সাইন তেমন সাইন দিবেন। এখানের কাজ শেষে। এবার তামাবিল শুল্ক অফিসের ভিতরে গিয়ে পাসপোর্ট দেখিয়ে সাইন দিতে হবে। সাথে ল্যাপটপ, ডিএসএলআর ক্যামেরা থাকলে ওদের খাতায় এন্ট্রি করে নিন। তাতে করে ফেরত আসার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়ানো যায়। এখানের কাজ শেষে চেক পোস্ট লাইনে পাসপোর্ট জমা দিন। এখানে সুন্দরি মহিলা বিজিবি বসা থাকে। ওরা যাবতীয় তথ্য এন্ট্রি করে রাখবে। সামনে এগিয়ে যান, বিএসএফ এর দেখা মিলবে। ওরা পাসপোর্ট চেক করে দেখবে। আবার সামনে এগিয়ে গেলে ইমিগ্রেশন অফিস। এখানে ভিতরে গিয়ে পাসপোর্ট জমা দিন। ওরা সিরিয়ালি নাম ডাকবে। আপনার নাম ডাকলে ভিতরে গিয়ে নাম সাইন করে চলে আসুন। এবার বের হওয়ার সময় সাইন করে সর্বশেষ এন্ট্রি করতে হয়। এখানে ডলার চেক করে। আপনার ডলার এন্ডোরস করা ২০০ডলার। কিন্তু আপনি শো করলেন ১০০ডলার তাহলে ঝামেলা করতে পারে। তাই সাথে ডলার এন্ডোরসমেন্টের সমপরিমাণ টাকা রাখাই ভাল। যদি সেটাতে নিরুপায় হোন, তাইলে তাকে ১০০/১৫০ বাংলা টাকা দিয়ে পার হয়ে যেতে পারে। এটাও অনুচিত কাজ। তাই আমি বলবো, ডলার এন্ডোরসমেন্টের সমপরিমাণ টাকা রাখতে।
ইমিগ্রেশন থেকে বের হওয়ার পর অনেকে আপনাদের দেখে চা পানি খাওয়ার জন্য টাকা পয়সা চাইতে পারে। দিবেন না। কেন দিবেন? মামা বাড়ির আবদার নাকি? ঘুষ দেওয়া নেওয়া সমান অপরাধ।
এসব শুনার পর যাদের মনে হয়েছে এতশত ঝামেলা আপনারা নিজেরা করতে চান না, তাইলে তারা শ্যামলী বাসের ৫১০০টাকার (ভিসা ফি সহ) শিলং প্যাকেজে ঘুরে আসতে পারেন। প্রয়োজনীয় কাগজপাতি দিয়ে দিলে তারাই ভিসার সব বাবস্থা করে দেয়। এবং তিনদিনের শিলং ভ্রমণ করিয়ে এনে দেয়।
আপনি কিভাবে ভ্রমণ করবেন এবার এটা আপনার ইচ্ছা।
ভ্রমন বিস্তারিতঃ
আপনাদের সুবিধার্থে প্রতিটা স্পটের বিবরণের নিচে গুগল ম্যাপ লোকেশন লিংক দিয়ে দিলাম। আশা করি এটাই আপনার খুঁজে পেতে হেল্প হবে। লোকেশন টা মোবাইলে নিয়ে নেন তাতে করে ম্যাপ দেখে পৌঁছে যাবেন।
(১মদিনঃ ডাউকি ব্রিজ,বোরহিল ফলস,মাউলিনং গ্রাম,লিভিং রুট ব্রিজ,শিলং শহর)
ইমিগ্রেশন অফিস থেকে বের হয়ে ১০রুপি দিয়ে ডাউকি গিয়ে বাসে করে শিলং শহরে চলে যেতে পারেন। সেখানে গিয়ে হোটেল ঠিক করে নিতে পারেন। টাক্সি ভাড়া করে এরপর আপনার ঘুরার পরিকল্পনা অনুযায়ী সেভাবে ঘুরতে পারেন। প্রথম দিন বাদে, দ্বিতীয়,তৃতীয় দিন যেই ড্রাইভারকে নিয়ে ঘুরেছিলাম, খুবই ভাল মানুষ। নাম হোসেইন। তার বাড়ি আসামে। তাই বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, খাসিয়া। সব বলতে পারে। আপনাদের যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তার ফোন এবং ফেসবুক আইডি নিচে দিয়ে দিলাম।
ফোনঃ +91 98630 72266
ফেসবুকঃ https://facebook.com/profile.php?id=100011144147569
এবার বলি আমি কিভাবে ঘুরেছি। বর্ডার ক্রস করলে প্রথমে আপনার মোবাইলের/হাত ঘড়ির সময় আধা ঘন্টা কমিয়ে নিন। কারণ ইন্ডিয়ান সময় বাংলাদেশের তুলনায় আধা ঘন্টা পিছে। মানে বাংলাদেশি সময় সকাল ১০.৩০ মানে ইন্ডিয়ান সময়ে সকাল ১০.০০টা। এটা করলে ইন্ডিয়ার সময় ধরে আপনার চলতে সুবিধা হবে। নাহলে মাঝে মাঝে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি হতে পারে। আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় আমি ইন্ডিয়ান সময় অনুযায়ী বর্ণনা করলাম।
ইমিগ্রেশন অফিস থেকে বের হয়ে সামনে ট্যাক্সি দেখতে পেলাম। ঘড়িতে ১০.১৫ বাজে। শিলং এর মানুষজন বাংলা,হিন্দি,ইংলিশ বুঝে। সুতরাং কথা বলতে কোন সমস্যাই হবে না। ড্রাইভারকে বললাম যে কোথায় কোথায় যাব এবং যাওয়ার পথে যেখানে যেখানে থামতে ইচ্ছা হবে সেখানে থামিয়ে দেখবো। সব শুনে ড্রাইভার তিন হাজার রুপিতে যেতে রাজি হল। দলে ছিলাম চার জন। গাড়িতে উঠে পড়লাম। এখানের ট্যাক্সি গুলো একটু ছোট সাইজের। স্বাস্থ্যবান মানুষদের হলে আরাম করে তিন জন বসা যায়, একটু কস্ট করলে ৪জন বসা যায়। আর ৫জন বসা প্রায় অসম্ভব।
ডাউকি ব্রিজ-> https://goo.gl/maps/CP9ozTJ6X6o
যাত্রা শুরু হয়ে গেল। দেশের সমতল ভুমিকে বিদায় দিয়ে পাহাড়ের উপর উঠেতে থাকলাম। একেবেকে পাহাড়ি রাস্তা। কিছুদূর যেতেই ছোট ছোট ঝর্না বা ঝিরিও বলা যায় চোখে পড়তে থাকলো। বর্তমানে বৃষ্টি হওয়ায় সেগুলাতে যেন যৌবন ফিরে এসেছে। কিছুদূর যাওয়ার পর সেই ডাউকি ঝুলন্ত ব্রিজ চোখে পড়লো, যেটা বাংলাদেশের জাফ্লং জিরো পয়েন্ট থেকে দেখা যায়। ঘড়িতে ১০.৩০ বাজে। গাড়ি থামিয়ে বেশকিছু ছবি তুলে নিলাম।
বোরহিল ঝর্না-> https://goo.gl/maps/uoUESVz68sv
আবার সামনে যেতে যেতে আরও একটি নাম না জানা ঝর্না চোখে পড়লো। এখানেও গাড়ি থামিয়ে ছবি নিলাম। ঘড়িতে ১১.১৫ বাজে। পৌছেগেলাম বোরহিল ঝর্নার ব্রিজের উপর। সব থেকে আকর্ষণীয় ছিল বোরহিল ঝর্না। এটা ভারতীয় নাম। এটার বাংলাদেশি নাম হল পানতুমাই ঝর্না। বিছনাকান্দি ঘুরতে এসে দূর থেকে এই ঝর্না দেখেছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে কি কাছ থেকে না দেখলে এই ঝর্নার আসল রুপ কখনই বুঝা যাবে না। এই ঝর্নার ভয়ঙ্কর রুপ দেখে আসলেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। পানির তীব্র গর্জনে কান ঝালা পালা হয়ে যায়। এবার সোজা চললাম মাউলিনং গ্রামের দিকে।
মাউলিনং গ্রাম-> https://goo.gl/maps/w9Uh1Ht4Lfn
মাউলিনং শব্দের অর্থ হল “সৃষ্টিকর্তার নিজের বাগান”। এই গ্রাম ২০১৬ সালে এশিয়ার সব থেকে পরিস্কার গ্রাম হিসেবে মনোনীত হয়। এই গ্রামের রাস্তার কোথাও বিন্দু পরিমাণ ময়লা, কাঁদা খুজে পাওয়া যাবে না। প্রতিটা বাড়িতেই আছে চমৎকার ফুলের বাগান। দেখলে মনে হয়ে রুপকথার কোন এক গ্রামে চলে এসেছি। মাউলিনং গ্রামে যখন পৌছালাম, ঘড়িতে ১২.৩০ বাজে। এখানের রাস্তা আসলেই অনেক পরিস্কার। এতোটাই পরিস্কার যে আপনি রাস্তায় ভাত ছিটিয়ে সেই ভাত রাস্তা থেকেই তুলে খেতে পারবেন। গ্রামের ভিতরে টুরিস্ট স্পট প্রবেশমুখে প্রতি গাড়ি ৫০রুপি দিয়ে টিকিট কাটতে হবে। ওরা বলে নিবে যে এটা ওদের গ্রামের পরিস্কার পরিছিন্নতার কাজে বায় হবে। প্রতিদিনই দেশ বিদেশ থেকে শত শত পর্যটক এই গ্রামে আসছে। এখানে ভাল মানের খাওয়ার হোটেল আছে। তবে মুসলমান ভাই বোন দের জন্য বলবো এখানে ভেজিটেবল আইটেম খেতে। কারণ এরা বেশীরভাগ খ্রিস্টান ধর্মালম্বি হওয়ায় এরা সাধারণত হালাল উপায়ে মুরগী জবাই করে না। তাই ডিম ভাজি,সব্জি ইত্যাদি দিয়ে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। এই আইটেম খেতে জনপ্রতি ১০০রুপি খরচ হতে পারে। যদিও ওদের বিভিন্ন সেট মেন্যু আইটেম আছে। চাইলে আপনি নিজের মত মেন্যু করে ওদের বলতে পারেন। এছাড়া এখানে রাতে থাকতে চাইলেও থাকার জন্য মানসম্মত অনেক হোম স্টে/কটেজ আছে।
লিভিং রুট ব্রিজ-> https://goo.gl/maps/5BoM887F9EA2
মাউলিনং গ্রাম দেখা শেষে, লিভিং রুট ব্রিজ দেখতে চলে গেলাম। মাউলিনং গ্রাম থেকে খুবই কাছে। এখানেও পারকিং রাখবে। লিভিং রুট ব্রিজ দেখতে জনপ্রতি ২০রুপি লাগবে। ক্যামেরা ফি ২০রুপি দেওয়া লাগতে পারে। ঘড়িতে ০১.৫০ বাজে। লিভিং রুট ব্রিজ দেখলে আসলেই আশ্চর্য হয়ে যাবেন। প্রাকৃতিক ভাবেই গাছের শিকড় জোড়া লেগে লেগে ব্রিজ তৈরি হয়ে গেছে। আসলে এটাকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বললে কিঞ্চিৎ ভুল হবে। এটাকে কাস্টম প্রাকৃতিক বলা যেতে পারে। নোহওয়েট গ্রামের বাসিন্দারা প্রথমে চিকন বাঁশ দিয়ে একটি পুল/ব্রিজের মত কাঠামো তৈরি করে নেন। তারপর এক জাতের আদি রাবার গাছের চারা লাগিয়ে সেগুলোর শিকড় পুলের কাঠামোর সাথে পেচিয়ে পেচিয়ে দিতেন। কালের পরিবর্তনে শেকড় গুলো হৃষ্টপুষ্ট হয়ে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে এমন লিভিং রুট ব্রিজে রুপ নেয়।
নোহওয়েট ভিউ পয়েন্টঃ
লিভিং রুট দেখার পর অপর পাশের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলে একটা সাইনবোর্ড দেখবেন যে “নোহওয়েট ভিউ পয়েন্ট/nohwet view point”
এটি দেখতে চাইলে নির্দেশনা অনুসরণ করে সেই রাস্তা ধরে এগিয়ে যাবেন। বেশ খানিকটা ভিতরে, হেটে পৌছাতে ১৫মিনিটের মত লাগবে। যদিও রাস্তা চিনতে অসুবিধা হয়, স্থানীয় মানুষদের ভিউ পয়েন্ট বলে জিজ্ঞাস করলে দেখিয়ে দিবে। ভিউপয়েন্টের প্রবেশ মুখে এন্ট্রি ফি জনপ্রতি ৩০রুপি দেখবেন। প্রথমে মনে হতে পারে ৩০রুপি গচ্চা যাচ্ছে। কিন্তু একবার ভিতরটা ঘুরে আসুন। আপনার ধারণা পাল্টে যাবে। ভিতরে ধুকতেই পরিচয় হল এক ভিউপয়েন্টের মালিক “ড্রংওয়েল খংক্রম/Drongwell Khongkrom” এর সাথে। বাংলা না বুঝলেও হিন্দি,ইংলিশ বলতে পারেন।
ড্রংওয়েলের ফোন নাম্বার আর ফেসবুক আইডি আপনাদের দিয়ে দিলাম। আসা করি আপনাদের যোগাযোগ করতে সুবিধা হবে।
ফোনঃ +91 81320 01225
ফেসবুকঃ https://facebook.com/profile.php?id=100007146196602
ড্রংওয়েল আমাদের স্বাগতম জানালো। আমাদের কই যেতে হবে সেই পথ দেখিয়ে দিল। বাঁশ দিয়ে রাস্তা করা একটি জায়গা দিয়ে হাঁটতে থাকলাম। চমৎকার ডিজাইনের রাস্তা। কিছুদূর সামনে এগিয়ে যেতেই বুঝলাম যে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের কিনারা ঘেঁষে নির্মাণ করা এক সুউচ্চ মাচার উপর দারিয়ে আছি। চার পাশে বাউন্ডারি দেওয়া। পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মাচার উপর বসার জন্য বেঞ্চও আছে। তবে যেই দৃশ্য আমার মাথা নস্ট করে দিল সেটা হল, চার পাশের পাহাড়ের দৃশ্য। চোখের সামনে বিশাল বড় বড় পাহাড় আর পাহাড়ের খাঁজ। আর সেই সব পাহাড়ের উপর থেকে বেয়ে পড়ছে ঝর্না। একটি দুইটি ঝর্না নয়, গুনে গুনে ৭টি ঝর্না পেলাম। আর ঝর্নার পানি গুলো, নিচে মিলিত হয়ে এক নদীতে পরিণত হয়েছে। পাহাড়ের খাঁজের শেষ দিকে সমতল ভুমি, মানে আমাদের বাংলাদেশের এক অংশ দেখা যাচ্ছে। এমন দৃশ্য দেখে সত্যিই চোখে পানি চলে এলো। ড্রংওয়েল, আমাদের বলল এই জায়গা থেকে ইকো/প্রতিধ্বনি তৈরি করা যায়। আমরা বিভিন্ন সিনেমায় দেখেছি যে পাহাড়ের উপর থেকে জোরে চিৎকার করলে বা কিছু বললে সেটা পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হতে থাকে। সেই প্রতিধ্বনি এখান থেকে করে শোনা যায়। বেশ মজা পেলাম এই ব্যাপারটিতে। ড্রংওয়েল আমাদের দেখালো, তার এই মাচার আশে পাশে সে অনেক রাবার গাছ লাগিয়েছে।
এখান থেকে বের হয়ে এখানের ভিতরেই বাঁশ দিয়ে একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। সেটার উপরে উঠলাম। নিচে নেমে একটি গোল ছাউনির ভিতরে ঢুকে ড্রংওয়েলের সাথে আড্ডা দিতে থাকলাম, হঠাৎ করেই ড্রংওয়েল তার মোবাইলে একটা ঝর্নার ছবি আমাকে দেখালো। নাম নিরিয়াং ফলস। সে বল্লো, ঝর্নাটি এখনো এটি টুরিস্ট স্পট হিসেবে চালু হয় নি, বিধায় এখনো টুরিস্টে জমেনি। এই ঝর্না টা দেখতে হলে একঘণ্টা পায়ে হেটে ট্রেকিং করে যেতে হবে, আবার আসতে ১ঘন্টা। খুবই সুন্দর লাগলো ঝর্নাটা, কিন্ত আমাদের সময় স্বল্পতার কারণে আর এইখানে যাওয়া হয়নি। তাই পরে আবার গেলে এই জায়গা অবশ্যই দেখতে যাবো।
যদি এখনে রাতে থাকতে চান তাহলে এইখানে থাকার বাবস্থা আছে। ভিউ পয়েন্ট থেকে মাত্র ২মিনিটের দূরত্বে আর লিভিং রুট ব্রিজ থেকে ১০মিনিটের দূরত্বে এই কটেজটি। ডাবল বেড, সোফা, টিভি, টাইলস এবং গিজার/ওয়াটার হিটার বাথরুম আছে। খরচ পড়বে প্রতি রাত ২০০০রুপি। কটেজের নাম “না ই মেই হোমস্টে”। এর মালিক “হালি খংসদাম/Hali Khongsdam”। তার ফোন ও ফেসবুক আইডি নিচে দিয়ে দিলাম।
ফোনঃ +918974591430
ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/hali.khongsdam
এখানের সব থেকে ভাল ব্যাপার হল, জাগায় জাগায় স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণ করা আছে। পাহাড়ের যত চিপায় ঘুরতে যাই না কেন, প্রতিটা টুরিস্ট স্পটে ভাল মানের টয়লেট দেখেছি। যেটা শিশু, নারী ট্রাভেলারদের জন্য অনেক সহায়ক।
শিলং সিটি-> https://goo.gl/maps/rJKmHvz1K812
এবার ফিরে এসে ট্যাক্সিতে উঠে সোজা শিলং এর রাস্তা ধরলাম। পাহাড়ি উঁচুনিচু রাস্তা একে বেকে চলে গেছে। দূর দূরান্তে যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। কোনটা পাথুরে পাহাড় তো কোনটা সবুজে ঢাকা পাহাড়। কিছু কিছু পাহাড়ের উপর দেখি খ্রিস্টানদের ক্রস ফলক বসানো। বুঝলাম এগুলো, খ্রিস্টানদের কবরস্থান। এমন খবরের পাহাড় বেশ চোখে পড়বে। মাঝে মাঝে সবুজের সমারোহ এতোটাই বেড়ে যাচ্ছে যে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে ছিলাম। আসলেই মেঘালয়কে কেন প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড বলা হয়, এবার বুঝলাম। আমার তোলা ছবি গুলোতে ১০০ভাগের মাত্র ১ভাগ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। এর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে স্বচক্ষে দেখতে হবে।
শিলং এ থাকার হোটেলঃ
শিলং পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা ৬টা বেজে গেল। এবার হোটেল খোঁজার পালা। শিলং এ কম খরচে থাকার জন্য আমার কাছে সব থেকে ভাল মনে হয়েছে হোটেল হিল স্টার। এখানের সিঙ্গেল বেড রুম ৬৫০রুপি, ডাবল বেড রুম ৭৫০ রুপি, দুইটা ডাবল বেডের চার পারসন রুম ১৩২০ রুপি। (ওয়াই ফাই সুবিধা নেই) তবে এই হোটেলে থাকতে হলে আপনাকে এককপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং পাসপোর্ট এবং ভিসার ফটোকপি দিতে হবে। তাই এগুলো দেশ থেকে সাথে নিয়ে গেলেই ভাল, নাহলে ওইখানে ৪কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি শুধু প্রিন্ট করতে ৫০ রুপি দেওয়া লাগবে। শিলং এর কম দামি, বেশি দামি প্রায় প্রতিটা হোটেলের ওয়াশরুমে গিজার/ওয়াটার হিটার আছে। সুতরাং ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে না চাইলে গিজার চালু করে গরম গরম পানিতেই গোসল করুন, সমস্যা নেই।
হিল স্টার হোটেলের ফোন নাম্বার এবং লোকেশনঃ
ফোনঃ +91-8191900057 , +91-8266012340
হোটেল হিল স্টার-> https://goo.gl/maps/UsV7x6xVc482
এবারে মুসলমান ভাইদের নামাজের স্থান এবং হালাল খাবার কোথায় পাবেন সেটা জেনে নেই।
শিলং শহরে মসজিদ আছে। তাই চাইলে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদের লোকেশন-> https://goo.gl/maps/2WBHxe5iLvE2
শিলং শহরে ২টা মুসলিম হোটেল পেয়েছি। মসজিদের গলির মধ্যেই দুটির অবস্থান। একটি ক্যাফে সাভেরো, আরেকটি পুলিশ বাজার হোটেল। ক্যাফে সাভেরো এর পরিবেশ ভাল, একেবারে রাস্তার পাশে অবস্থান বলে খুজে পাওয়া সহজ তাই খাবারের দামটা একটু বেশি। ক্যাফে সাভেরো ছাড়িয়ে আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে ডমিনস পিৎজার পাশের গলিতে ঢুকলে হোটেল পুলিশ বাজার পাওয়া যাবে। হালাল উপায়ে জবাই করা গরু, মুরগী পাবেন। গরু ভুনা ফুল বাটি ১০০টাকা। খাবার সমস মনে রাখবেন প্রথমে যেই বাটিতে গরু ভুনা দিবে সেটা কিন্তু হাফ পরিমাণ বাটি। বাকি হাফ আবার চেয়ে নিবেন। নাহলে কিন্তু হাফ খেয়ে মনের ভুলে ফুলের দাম দিয়ে চলে আসতে পারেন। হোটেলের মালিকের ব্যবহার অমায়িক। বাঙালি শুনলে অনেক সাহায্য করেন। এছাড়া এদের পার্সেল সুবিধা আছে। চাইলে খাবার কিনে এনে হোটেলে বসেও খেতে পারেন। মুসলিম খাবার হোটেলের লোকেশন লিঙ্ক, (হোটেল পুলিশ বাজার)-> https://goo.gl/maps/Zw4mazvicEE2
দেশে ফোন সার্ভিসঃ
এবার বলি দেশে ফোন কিভাবে করবেন। এই মসজিদের গলিতেই পি.সি.ও দোকান পাবেন। যেকোন দোকানে জিজ্ঞেস করলে পি.সি.ও দোকান দেখিয়ে দিবে। এক ভদ্রমহিলা দোকান চালান। দোকানে ঢুকে বুথে বসে বাংলাদেশ ফোন দিতে পারবেন। মনে রাখবেন, আপনি যদি বাংলাদশের কোন মোবাইল নাম্বারে ফোন দেন তাহলে ফোন নাম্বারের পূর্বে ০০৮৮ সংযোজন করে এর পর আপনার কাঙ্ক্ষিত মোবাইল নম্বরটি দিয়ে ডায়াল করলেই ফোন চলে যাবে। কল রেট ফিক্সড করা। 4সেকেন্ড পালস। প্রতি মিনিটে রেট ২২+ রুপির মত উঠে।
চাইলে আপনি ইন্ডিয়ান “আইডিয়া” সিম কিনে নিতে পারেন। জিএস রোডের হোটেল ব্রডওয়ের বিপরীত দোকানটাতে বা শিলং সেন্টার থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলে একটা মোবাইল রিচারজের দোকান আছে। সেখানে প্রতি নতুন “আইডিয়া” সিম ১০০রুপি। সিম কিনার পর এক্টিভেট হতে ১২ঘন্টা+ মত সময় লাগবে। আর আপনি চাইলে ওদের থেকে এক্টিভেট করে সিম কিনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ হবে। প্রতি “আইডিয়া” এক্টিভেট সিম ৩০০ রুপি দিয়ে কিনতে হবে। কোন বালন্স থাকবে না, আলাদা করে বালন্স ভরে নিতে হবে। সিম কিনার সময় আপনার ২কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং পাসপোর্ট এবং ভিসার ফটোকপি লাগবে। এগুলো সাথে রাখবেন। সিম কিনার সময় ইন্ডিয়ার লোকাল কার রেফারেন্স দিতে হয়। ইন্ডিয়ার লোকাল কেউ পরিচিত থাকলে তার নাম্বার দিতে পারেন।
শিলং স্টিট ফুডঃ
শিলং এর রাস্তার স্টিট ফুড টেস্ট করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না। শিলং সেন্টারের সামনে পাবেন এই স্টিট ফুডগুলো। শিলং এর প্রায় সব গুলো স্টিট ফুডের ছবি ফেসবুক এ্যালবামে আছে। স্টিট ফুড গুলোর মধ্যে যেমন চিকেন মম আছে। ২পিস ২০ রুপি। বেশ ঝাল। যদিও ফ্রি খাবার পানি ওদের কাছে পাবেন। এরপর আছে এগ রোল। ডিম ভেজে সেটা একটা রুটি দিয়ে মুড়িয়ে ভিতরে, পেয়াজ,মরিচ, মশলা, চাটনি এবং হরেক রকম সস মিশিয়ে দেয়। দাম প্রতি পিস ২০রুপি। এরপর আছে ভেজিটেবল নুডুলস। এটা অবশ্যই টেস্ট করবেন। দাম ২০রুপি। আর সাথে একটা ডিম দিয়ে নিলে ৩০রুপি। এটাও একটু ঝাল। টমেটো সস এবং খাবার পানি ওদের কাছেই পাবেন। এছাড়া আরও দেখবেন, রুটি, ডাল/সব্জি কিংবা এগ ফ্রাইড রাইস।
তবে মুসলমান ভাই বোনদের একটা জিনিস খেতে সাবধান করে দিব। সেটা হল, স্টিট ফুড গুলোর মধ্যে চিকেন বারবিকিউ দেখবেন। এটা খাবেন না। তারপর চিকেনের সাথে চাকা চাকা মাংসের বারবিকিউ দেখবেন। ওদের জিজ্ঞেস করলে বলবে “পর্ক/pork” মানে শুকরের মাংস। সুতরাং এটি ভুলেও খাবেন না। এমনকি ওদের চিকেনও খাবেন না। কারণ হালাল উপায়ে চিকেন জবাই হয় না।যেই শিক দিয়ে চিকেন গাথে সেই শিক দিয়ে ঘুরে ফিরে পর্কও গাথে। তাই মুসলমান ভাই বোনদের বাইরের এই চিকেন না খাওয়ার অনুরোধ রইলো।
চাইলে সবাই ডমিনস পিৎজা ট্রাই করতে পারেব। মিডিয়াম সাইজ চিকেন বারবিকিউ চিজ পিৎজা ২৬৫ টাকা। ওদের একটা অফার চলতেসে যে একসাথে ২টা পিৎজা নিলে ৩০রুপি কম, ৫০০রুপি রাখবে। টেস্ট আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। অবশ্যই ট্রাই করে দেখতে পারেন।
রাত ৯টার মধ্যেই শিলং এর প্রায় সব দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। আর রাত ১০টার দিকে একদম নীরব। যদিও শিলং বেশ নিরাপদ শহর, তবুও রাত ১০টার ভিতরে হোটেলে ফিরে যাওয়া ভাল।
কম খরচে ডাউকি, শিলং ও চেরাপুঞ্জি ভ্রমণের [২য় পর্ব:] পড়তে চাইলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
[২য় পর্ব:]-> https://www.facebook.com/media/set/?set=a.415975132121461.1073741851.222604781458498&type=1&l=1d35e61922
লেখায় কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ব্যাঙ্গ,ঠাট্টা,উপহাস এর পরিবর্তে আপনার সৎ মন্তব্য,উৎসাহ কামনা করছি। সবাই ভাল থাকবেন। আপানদের ভ্রমণ সুখকর হোক।
আমার ভ্রমণ সম্পর্কিত যেকোন তথ্যের জন্য নিচে কমেন্ট করতে পারেন। এছাড়া ফেসবুকে মেসেজ করতে পারেন।
এছাড়া আমার আরও বিভিন্ন ভ্রমণের বিস্তারিত জানতে আমার এই ফেসবুক পেজে ঘুরে আসতে পারেন-> https://www.facebook.com/seamtraveler
আমার ট্র্যাভেল ভিডিও দেখতে আমার ইউটিউব (YouTube) চ্যানেলে ঘুরে আসতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল-> https://www.youtube.com/playlist?list=PLUvHR_QtK1lJ43_5eYET4fmcsyeuTeik4
এছাড়া আমাকে ইন্সটাগ্রামে (Instagram) ফলো করতে পারেন।-> instagram.com/seamanower
লেখাটি ভাল লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আমার এই লেখাটি আপনার সংগ্রহে আজীবন রাখার জন্য শেয়ার দিয়ে নিজের টাইমলাইনে রাখুন।