18/01/2024
উমরাহ যাওয়ার জন্য কিছু টিপস। যা সকলের কাজে লাগতে পারে ইনশাআল্লাহ! এইগুলো যারা গ্রুপ ছাড়া নিজেরা যেতে চান, বিশেষ করে তাদের জন্য এবং কিছু বিষয় সবার ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে ইনশাআল্লাহ!
১. কোনো বিশ্বস্ত এজেন্সি থেকে শুধু টিকিট আর ভিসা করতে হবে।বাংলাদেশ থেকে বিমান বাংলাদেশ আর সৌদি এ্যারাবিয়া তে ডিরেক্ট যাওয়া যায়। এখনো পর্যন্ত আর কোনো এয়ারলাইন্স ডিরেক্ট যায়না। বাকি সব ট্রানজিট। বাচ্চা থাকলে ট্রানজিট ফ্লাইট এ্যাভয়েড করবেন। সেক্ষেত্রে যারা ডিরেক্ট ফ্লাইটে যেতে চান, সৌদি এয়ারলাইন্স বেস্ট আমার কাছে।
নোট - বাসা থেকে বের হওয়ার সময়, পাসপোর্ট ভিসা চেক করে একসাথে পরিবারের একজনের কাছে রাখুন। বোর্ডিং পাসের সময়, জানালার পাশে বসার, বা পাখা বরাবর বসতে না চাইলে,আরকিছু রিকোয়ারমেন্টস থাকলে তখনি জানাবেন।বেবি স্ট্রলার ট্যাগ লাগানোর পরও বিমান পর্যন্ত নিতে পারবেন। ( যদিও কিছু বিমানে ভেতরেও নেয়া যায়, জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন আগেই)।বেবি টিকিটের সাথে বেবি স্ট্রলার একদম ফ্রি নেয়া যায়।
২. জেদ্দা পৌছানোর পর,( সৌদির এয়ারলাইনসের আলাদা বিমানবন্দর), এয়ারপোর্টে খুব সহজেই ইমিগ্রিশনের কাজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ! তারা খুবই হেল্পফুল। এরপর এয়ারপোর্টের ভেতর থেকেই পাসপোর্ট দিয়ে টুরিস্ট সিম কিনবেন( অবশ্যই এমবি সহ)।, এবং এয়ারপোর্টের ভেতরেই ট্যাক্সি সেবা আছে। সেখান থেকে সহজেই মক্কা বা মদীনা যেখানে আগে যেতে চান সেখানের যেকোনো সাইজের গাড়ি ভাড়া নিতে পারবেন।
৩. হোটেল বুকিং টিকিট করার পরপর-ই করে ফেলুন, বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে যেমন, booking.com/agoda. Booking এর সময় খেয়াল রাখবেন, Pay at hotel option ( Free cancellation). কারন প্রিপেমেন্ট হলে কোনো কারণে যেতে পারলে বা ২/১ দিন এদিক সেদিক হলে কার্ড থেকে টাকা কেটে নিবে।যেকোনো ডেবিট কার্ড দিয়েও করা যায়।ব্যাংক/কার্ডে টাকা থাকা লাগেনা।তখন আপনি হোটেলে গিয়ে পেমেন্ট করবেন। যেই অপশন বলেছি। এছাড়াও পরিচিত কোনো মাধ্যম থাকলে ঐখানে থাকা কারো মাধ্যমেও বুক করতে পারবেন। ওখানে বাঙ্গালি অনেকেই বুকিং এর বিজনেস করেন। বিশ্বস্ত হতে হবে। ধোকাবাজ সব জায়গায় আছে।সতর্ক থাকবেন।
নোট - সৌদি বেশিভাগ হোটেলে চেক ইন টাইম শুরু হয় ঐ দেশের সময়ের বিকাল ৩/৪/৫ টায়। চেকআউট সকাল ১১/১২ টা। আর হোটেল যদি হারামের কাছে থাকে তাহলে তো ভাল, দূরে হলে শিওর হবেন যে হোটেলের শাটেল সার্ভিস (হারামে যাওয়ার জন্য হোটেলের নিজস্ব গাড়ি) আছে কিনা, থাকলে কখন কখন। তাহলে ট্যাক্সিভাড়া বেঁচে যাবে।
৪. জেদ্দা বা মক্কা মদীনা থেকে ট্রেনে যাওয়া আসা করা যায়, সেটা আরামদায়ক, এটার জন্য আগে থেকে টিকিট করতে হয়, অনলাইনেও কাটা যায়, এরজন্য HHR Train (সৌদি এ্যাপ) ডাউনলোড করুন।বা চাইলে ট্রেনস্টেশনে গিয়েও কাটা যায়। ২/১ আগে গিয়ে কাটতে পারলে ভাল।কখনো রাশ বেশি থাকলে ইনস্টান্ট পাওয়া যায়না।
৫. মোস্ট ইম্পরট্যান্ট হলো nusuk এ্যাপ ডাউনলোড করা। কারণ এই এ্যাপ ছাড়া এখন রিয়াজুল জান্নাহতে যেতে পারবেন না।এই এ্যাপ এর মাধ্যমে ভিসা, পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে একাউন্ট খুলে রিয়াজুল জান্নাহতে যাওয়ার জন্য তারিখ দিয়ে ট্রাই করতে হয়।এখন মহিলাদের জন্য পারমিশন খুব কম পাওয়া যায়। একটু পর পর অল্প কিছু টাইমস্লটে পারমিশন দেয়, এজন্য একটু পর পর চেক করতে হয়।(অনেক সময় পাওয়াও যায়না সেটা খুব কষ্টের)। উমরাহ করতে কিছুর দরকার হয়না এখন আলহামদুলিল্লাহ!
৬. সৌদিতে মক্কা মদীনায় বিভিন্ন জায়গায় জিয়ারাহর জন্য/ঘোরার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন, ওখানে ট্যাক্সি Available সবসময়।মিটারে গেলে ভাল না গেলে, দামাদামি করবেন।ওখানে প্রচুর বাংলাদেশী ড্রাইভার ভাই আছেন।
৭.উমরাহ করার জন্য এশার পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত বেস্ট সময়। রাত ১/২ টা তে বেশি ভাল।যাদের তাওয়াফ করতে সমস্যা, তারা হুইলচেয়ারে দ্বিতীয় তলায় করতে পারবেন। তবে বিশেষ কারণ না থাকলে ক্বাবার ফ্লোরের মতো শান্তি অন্য জিনিস।সাই করার জন্যও নতুন বিল্ডিং এ ইলেক্ট্রিক স্বচলিত বাহন আছে অসুস্থ মানুষের জন্য। না চিনলে ওখানে থাকা সিকিউরিটিতে থাকা ভাই/বোনদের জিজ্ঞেস করে নিবেন। এর জন্য কিছু রিয়াল এক্সট্রা খরচ হবে।
৮. তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পানি/জুস খাবেন। খেজুর খেলে অনেক এনার্জি পাবেন।উমরাহ পালনের পর অন্য যেকোনো সময় দীর্ঘসময় ক্বাবার সামনে থাকতে চাইলে খেজুর সাথে রাখতে পারেন। আর ভেতরে জমজম পানির অনেক পয়েন্ট, এতে পানির পিপাসা জমজমের পানি দিয়ে পূরণ করুন। একদম বিনামূল্যে।
৯. হোটেল হারাম থেকে দূরে হলে জামাতে নামাজ পড়তে চাইলে ১ ঘন্টা আগেই আসবেন। জামাতের সময় অনেকটা দূর পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এবং জামাতের আগে আগে ভীড়ের কারণে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করা যায়না।বাইরে পড়তে হয়।পুরুষদের জন্য ইহরামের কাপড় ছাড়া অন্য পোষাকে ক্বাবার ফ্লোরে যাওয়া যায়না।ভেতরে নামাজ পড়তে চাইলেও ইহরামের কাপড় বাধ্যতামূলক। মহিলাদের জন্য সমস্যা নেই।
১০. খাবারের ক্ষেত্রে সবরকম খাবার পাওয়া যায় ওখানে।দাম তুলনামূলক কম।বাংলা খাবার ছাড়া খেতে না পারলে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টগুলো বা হারামের আশেপাশের কিছু গলিতে বাংলাদেশী খাবার পাবেন। আর হোটেলে খাবার নিতে ওখানে কিছু এ্যাপ আছে বাংলাদেশী ফুডপান্ডা/পাঠাও এর মতো। যেমন HungerStation - هنقرستيشن . এটা ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। সৌদির টুরিস্ট সিম এর নাম্বার দিয়ে একাউন্ট খুলবেন।
১১. হারামের বাইরে সরকারী বেশকিছু টয়লেট/বাথরুম আছে। সেখানে প্রচুর ভীড় থাকে।আর ভেজা থাকে, হারাম থেকে বের হলে মক্কা টাওয়ার বা ক্লক টাওয়ারের শপিং মলের টয়লেট অজুখানা ইউজ করতে পারেন। তুলনামূলক অনেক পরিষ্কার আর শুকনা থাকে।
১২. জিয়ারাহর স্থানগুলো সম্পর্কে জানা না থাকলে গুগল করতে পারেন। কোথায়, কি সব সহ ইনফরমেশন পেয়ে যাবেন।
এবার আসি কি কি সঙ্গে নিবেন…
যেকয়দিন থাকবেন, সেই অনুপাতে কাপড় নিবেন। ওখানে লন্ড্রীতে অনেক খরচ। আর ধুয়ে ধুয়ে শুকাতে বেশ ঝামেলা। ময়লা কাপড়ের জন্য আলাদা হালকা ওজনের ব্যাগ রাখবেন।বোরখা/ইহরামের কাপড় অবশ্যই কমপক্ষে দুই সেট রাখবেন। ময়লা বা নাপাক কিছু লাগলে যাতে অপশন থাকে।কিছু মেডিসিন নিবেন, যেমন, প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন।বেবি থাকলে ঠান্ডা লাগলে বেসিক যেই মেডিসিন গুলো লাগে সেটা নিবেন।আমাদের দেশের মেডিসিনগুলো ওখানে পাওয়া যায়না।
মহিলাদের জন্য ইহরাম বাধা অবস্থায় মুখে কাপড় লাগানো যায়না। এর মানে এই না যে, মুখ খুলে রাখতে হবে। পর্দা করা ফরজ। এরজন্য বিশেষ ক্যাপ নিকাব পাওয়া যায়। বাইতুল মোকার্ররাম মার্কেটে যেসব পাওয়া যায় ঐগুলিতে ফেইস হালকা দেখা যায়।তাই বানিয়ে নিতে পারলে ভাল, না হয় অনলাইনের কোনো পেজ থেকে নিতে পারেন।বেশকিছু অনলাইন পেইজে পাওয়া যায়।
উমরাহর শেষ ধাপ চুল কাটা। মহিলাদের জন্য সাথে কেচি রাখলে খুব ভাল। নিজে বা পরিবারের যে কেউ আগা সমান করে কেটে দিতে পারবে। নোট- কেচি দেশ থেকে নেয়ার সময় অবশ্যই হ্যান্ড ক্যারী করবেন না। এটা নিষেধ।
বাচ্চার নির্দিষ্ট খাবার থাকলে যেটা রান্না করতে হয় এমন হলে মিনি সাইজের ইলেক্ট্রিক কুকার নিয়ে যেতে পারেন। হোটেলে রান্না করতে পারবেন। এরজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হলো অবশ্যই মাল্টিপ্লগ/থ্রীপ্লগ দেশ থেকেই নিয়ে যাবেন। ওখানে হোটেল গুলোর পয়েন্ট আমাদের দেশের মতো নয়। বাচ্চার জন্য মাস্ট বেবি স্ট্রলার নিবেন।অনেক হাটাহাটি করতে হয়, বাচ্চা কোলে নিয়ে সামলানো প্রায় অসম্ভবের মতো কষ্ট। এটা লাগবেই।সহজে ফোল্ডেবল, এবং হালকা হলে ভাল।
দেশে আসার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন ওভারওয়েট না হয়। ওজন বেশি হলে এয়ারপোর্টে ফেলে দিতে হবে বা অনেক টাকা খরচ করে আনতে হবে।যাওয়ার সময় ওভারওয়েট একদম ছাড় দেয়না। তাই যত কম জিনিস দেশ থেকে নেয়া যায়। যাতে ফেরার সময় যথেষ্ট স্পেস থাকে।
জমজম পানি একটি পাসপোর্টে একটি ফ্রি আনা যায়। বেশি আনতে চাইলে, এয়ারপোর্ট থেকে বক্সসহ কিনে, লাগেজে আনা যাবে ইনশাআল্লাহ! (আমি এনেছি কয়েকবার সমস্যা হয়নি)। সেক্ষেত্রে ওজন যেন বেশি না হয় খেয়াল করবেন। এবং অবশ্যই বোর্ডিং এ পাসপোর্টের সাথে যেই পানি পাবেন (সেটাও কিনতে হয়), ঐটাতে ব্ল্যাক মারকার বা কিছু দিয়ে নিশানা দিবেন, যাতে দেশে যখন লাগেজ, পানি কালেক্ট করবেন তখন সহজেই চোখে পড়ে।অনেকে অন্যের পানি নিয়ে চলে যায়। কারন ছোট করে পানির বক্সে পাসপোর্ট নাম্বার লেখা থাকে। অনেকে পানি পায়না এই কারণে (আমি নিজেও একবার একটা বোতল পাইনি)।
আর হারামে যেহেতু বেশিরভাগ সময় থাকা হয় তাই একটা ব্যাকপ্যাক খুব জরুরী। সেখানে জুতা, ফোন, টাকা, খেজুর,দরকারী জিনিসপত্র নিতে পারবেন। হাতে আলাদে বড় ব্যাগ হলে ক্যারি করতে কষ্টদায়ক এবং অনেকসময় নিতেও দেয়না। গ্রুপ ছাড়া গেলে নিজের মতো করে নিজের সময় বুঝে যেকোনো কিছু করা যায়।
অবশ্যই ছোট একটা উমরাহ পালনের নিয়মকানুনের বই সাথে রাখবেন।যেখানে প্রয়োজনীয় মাসাআলা ও সব নিয়মকানুন, কখন কি করবেন সব জানতে পারবেন।
[লিখা সংগ্রহীত ও সংযোযিত]