04/10/2020
ড্রাই ফ্রুটস বা শুকনো ফল; শিশুর শরীরে উপকারিতা ও সহজ-সাধারণ রেসিপি
ড্রাই ফ্রুটস কী? (What Are Dry Fruits?)
ড্রাই ফ্রুটস খাওয়ানোর আগে এর সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। এই ফল তৈরি হয় সাধারণ জলীয় ফল থেকেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অথবা প্রাকৃতিক উপায়ে ফলগুলোর থেকে জল বের করে এগুলোকে শুকোনো হয়। শুকনোর ফলে এতে শুধু পুষ্টিদ্রব্যগুলোই থাকে। সাধারণ ফলে জলীয় অংশ থাকায় তা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। ড্রাই ফ্রুটস-এর ক্ষেত্রে তেমন কোনও সমস্যাই নেই। এগুলো যতদিন ইচ্ছে সংরক্ষণ করা যায়।
শীতকালেই কেন? (Why Dry Fruits Good in Winter?)
ড্রাই ফ্রুটস শীতকালে খেলে বেশি উপকারি। এই কথা চিকিৎসক বলতেই, অমৃতার মনে প্রশ্ন জাগে এমনটা কেন? চিকিৎসক তার উত্তরও দেন। ড্রাই ফ্রুটস-এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এসেনসিয়াল অয়েল আর ভিটামিন। শীতকালে আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ড্রাই ফ্রুটস থেকেই মেলে। এছাড়া শীতকালে সর্দি কাশি ইত্যাদির প্রবণতা বেড়ে যায়। শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলেই এই রোগগুলো চেপে বসে। ড্রাই ফ্রুটস-এ রয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এগুলোই শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ড্রাই ফ্রুটস (Some Essential Dry Fruits)
অনেক ড্রাই ফ্রুটস রয়েছে। কেনাকাটার সময় অনেকেই ধন্দে পড়ে যান, কোন কোন ড্রাই ফ্রুটস খুদের জন্য উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমন্ড, কিসমিস, ওয়ালনাটস্, খুবানি বা অ্যাপ্রিকট, খেজুর খুদের বেড়ে ওঠার জন্য উপকারী।
ড্রাই ফ্রুটস বেছে নেবেন কেন? (Why Will You Choose Dry Fruits?)
চিকিৎসক অমৃতাকে বুঝিয়ে দিলেন ড্রাই ফ্রুটস কেন শীতে খাওয়া প্রয়োজন। তা শুনতে শুনতেই ওর কৌতুহল হল। ড্রাই ফ্রুটস-এর এতো গুণ! অমৃতার অবাক হওয়া দেখে চিকিৎসক এর উপকারিতা নিয়ে আরও কয়েকটি তথ্য জানালেন ।
#1. অ্যানিমিয়া: বেশিরভাগ শিশুই সরাসরি স্তন্যপান করে বড় হয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, এমন শিশুদের অ্যানিমিয়া (Anemia) হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় বেশি। খেজুর, কিসমিস, খুবানি ইত্যাদি শুকনো ফলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। খুদেকে নিয়মিত শুকনো ফল খাওয়ানো হলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকে। অ্যানিমিয়ার আশঙ্কাও দূর হয়।
#2. এনার্জি জোগায়: খুদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে বাড়তে থাকে তার দুষ্টুমি। নানারকম দুষ্টুমির জন্য ওর প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালোরি। শুকনো ফলে যেমন আমন্ড, ওয়ালনাট, খেজুর ইত্যাদিতে রয়েছে ছোট্ট শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ, প্রোটিন ও জিংক। ছোট্ট সোনাকে এগুলোই সারাদিন হইচই করার শক্তি জোগায় (Boost Energy)।
#3. রোগপ্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে: শুকনো ফল যেমন বাদাম জাতীয় ফলের মধ্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে (Build Immunity)। সিজারিয়ান সন্তানদের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নর্ম্যাল ডেলিভারির শিশুদের তুলনায় কম হয়। মায়ের দুধ খাওয়ার পর ছোট্ট খুদে শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। এই সময় বিশেষজ্ঞরা খুদেকে আমন্ড, বাদাম ইত্যাদি শুকনো খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।
#4. স্ট্রেস কমায়: ছোট্ট বলে ওর যে স্ট্রেস হয় না, তা নয়। বরং চারপাশের চেঁচামেচি বা অশান্তি ওর মনে সহজেই প্রভাব ফেলে। যা থেকে ওর ভিতরে স্ট্রেস তৈরি হয়। শুকনো ফল যেমন আমন্ড ওয়ালনাট, খেজুর ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Reduce Stress)। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টই ছোট্ট সোনার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
#5. ডিএনএ-কে বাঁচায়: ছোট্ট সোনা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্লেটে খাবারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এই খাবারের অনেকগুলোই খুদের ডিএনএ-এর ক্ষতি করতে পারে, এমনকী ক্যান্সারের আশঙ্কাও বাড়াতে পারে। শুকনো বাদামজাতীয় ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই আশঙ্কা অনেকটা কমিয়ে দেয়।
#6. চোখ ও হাড়কে সবল করে: শুকনো ফল যেমন খেজুর, খুবানি, কিসমিস ইত্যাদি ফলে রয়েছে ভিটামিন এ । এছাড়া বাদামজাতীয় ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ভিটামিন এ খুদের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে (Improve Bone and Eye Health)। ক্যালসিয়াম ওর ছোট্ট হাড়গুলোকে মজবুত করে তোলে।
#7. কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়: ছোট্ট সোনার ক্ষেত্রেও অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়। ওয়ালনাট, আমন্ড ইত্যাদি বাদাম জাতীয় শুকনো খাবারে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার। ফাইবার অন্যান্য খাবার হজমের কাজকে সহজ করে দেয় (Prevent Constipation)। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে যায়।
#8. মস্তিষ্কের বিকাশ: খুদের মস্তিষ্কের বিকাশেও সমান গুরুত্বপূর্ণ শুকনো ফল। বাদাম জাতীয় ফল বিশেষত ওয়ালনাটে রয়েছে এসেনসিয়াল অয়েল, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড খুদের মস্তিষ্কের উন্নতিতে (Brain Development) সাহায্য করে।