25/11/2023
Copy: Shameem Sayedee শামীম সাঈদী
ইসলাম বিশ্বজনীন এক চিরন্তন ও শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা । ইসলামে রয়েছে নারীর সম্মান, মর্যাদা ও সকল অধিকারের স্বীকৃতি, রয়েছে তাদের সতীত্ব সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক কর্মসূচী । তাদের সম্মান, মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখতেই ইসলাম তাদের উপর আরোপ করেছে হিজাব বা পর্দা পালনের বিধান ।
মূলত ‘হিজাব বা পর্দা’ নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক । নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ । নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় ।
এ বিধান অনুসরণের মাধ্যমে হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব । এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেনঃ এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারন । (সূরা আহযাব: ৫৩)
ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান আরোপ করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার নিমিত্তেই করেছে । নারীদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করেনি ।
বরং তাদের পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার্থেই তাদের উপর এ বিধানের পূর্ণ অনুসরণ অপরিহার্য করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
‘আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে ।’ (সূরা আহযাব: ৩৩)
এ জন্য পর্দা-বিধান ইসলামী শরীয়তের পক্ষ থেকে সাধারণভাবে সমাজ-ব্যবস্থার এবং বিশেষভাবে উম্মতের নারীদের জন্য অনেক বড় ইহসান । এ বিধানটি মূলত ইসলামী শরীয়তের যথার্থতা, পূর্ণাঙ্গতা ও সর্বকালের জন্য অমোঘ বিধান হওয়ার এক প্রচ্ছন্ন দলিল ।
মানবসমাজকে পবিত্র ও পঙ্কিলতামুক্ত রাখতে পর্দা বিধানের কোনো বিকল্প নেই । বিশেষ করে বর্তমান সমাজের যুবক ও তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা ও নারীজাতির নিরাপত্তার জন্য পর্দা-বিধানের পূর্ণ অনুসরণ এখন সময়ের দাবি ।
★পর্দা-পরিচিতি: ‘পর্দা’ শব্দটি মূলত ফার্সী । যার আরবী প্রতিশব্দ ‘হিজাব’। পর্দা বা হিজাবের বাংলা অর্থ- আবৃত করা, ঢেকে রাখা, আবরণ, আড়াল, অন্তরায়, আচ্ছাদান, বস্ত্রাদি দ্বারা সৌন্দর্য ঢেকে নেয়া, আবৃত করা বা গোপন করা ইত্যাদি ।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনের নিমিত্তে উভয়ের মাঝে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত যে আড়াল বা আবরণ রয়েছে তাকে পর্দা বলা হয় ।
আবার কেউ কেউ বলেন, নারী তার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রূপলাবণ্য ও সৌর্ন্দয পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখার যে বিশেষ ব্যবস্থা ইসলাম প্রণয়ন করেছে তাকে পর্দা বলা হয় ।
মূলত হিজাব বা পর্দা অর্থ শুধু পোশাকের আবরণই নয়, বরং সামগ্রিক একটি সমাজ ব্যবস্থা, যাতে নারী-পুরুষের মধ্যে অপবিত্র ও অবৈধ সম্পর্ক এবং নারীর প্রতি পুরুষের অত্যাচারী আচরণ রোধের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে ।
★পর্দার বিধান: পর্দা ইসলামের সার্বক্ষণিক পালনীয় অপরিহার্য বিধান। কোরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল প্রমাণাদির ভিত্তিতে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বিধানাবলীর মতো সুস্পষ্ট এক ফরয বিধান ।
আল্লাহ তায়ালাই এ বিধানের প্রবর্তক । এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
‘যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে । এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’। (সূরা আহযাব: ৫৩)
এ বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পিত থাকাই ঈমানের দাবি । এ বিধানকে হালকা মনে করা কিংবা এ বিধানকে অমান্য করার কোনো অবকাশ নেই । কেননা ইসলামী শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধানের বিরোধিতা করার অধিকার কারো নেই ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا
‘আল্লাহ এবং তার রাসূল কোনো বিষয়ের নির্দেশ দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা কোনো মু’মিন নারীর জন্য সে বিষয় অমান্য করার কোনো অধিকার থাকে না। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে অবশ্যই প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট।’ (সূরা আহযাব: ৩৬)
★পর্দার গুরুত্ব: পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
হে নবী ! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয় । এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে । ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না । আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু । (সূরা আহযাব: ৫৯)
এ আয়াতে পর্দার সঙ্গে চলাফেরা করার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে যে, পর্দার সহিত চলাফেরা করলে সবাই বুঝতে পারবে তারা শরীফ ও চরিত্রবতী নারী । ফলে পর্দানশীন নারীদেরকে কেউ উত্যক্ত করার সাহস করবে না ।
প্রকৃতপক্ষে যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে অধিকাংশ সময় তারাই ইভটিজিং ও ধর্ষণসহ নানা রকমের নির্যাতনের সম্মুখীন হয় এবং রাস্তাঘাটে তারাই বেশি ঝামেলার শিকার হয় । তাই নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-আবরু রক্ষার্থে পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম ।
হাদীস শরীফেও পর্দার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে মহানবী রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু । যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায় । (তিরমিযী: ১১৭৩)
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, একদা তিনি বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকটে ছিলেন । তখন আখেরীনবী রাসুলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি ? তারা চুপ হয়ে গেলেন । (কেউ বলতে পারলেন না)
অতপর আমি ফিরে এসে ফাতেমা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি ? তিনি বললেনঃ কোনো পরপুরুষ তাকে দেখবে না (অর্থাৎ নারী পর্দাবৃত থাকবে)। তারপর আমি ঐ বিষয়টি রাসুলে আকরাম ﷺ এর নিকট উল্লেখ করলাম । তিনি বললেনঃ নিশ্চয় ফাতেমা আমার অংশ, সে সত্য বলেছে)। (মুসনাদুল বাযযার: ৫২৬)
এতে পর্দার গুরুত্ব পরিস্ফূটিত হয় । আর পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় বিবেকের দাবীও তাই । এছাড়াও পরিপুর্ন পর্দা পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় ও সম্মানিত হতে পারে ।
কেননা হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা পর্দানশীনদের ভালোবাসেন । পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ
‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন।’ (সূরা হুজুরাত: ১৩)
প্রকৃত অর্থে তাকওয়া সম্পন্ন বা মুত্তাকী হলো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর নির্দেশসমূহ মেনে চলে । আর সর্বসম্মতিক্রমে পর্দা আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশ । যেহেতু পর্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশ সেহেতু পর্দা পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন হতে পারে ।
এছাড়াও পর্দা-বিধান সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, এ বিধানের পূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের নৈতিক চরিত্রের হিফাযত হয় । পারিবারিক ব্যবস্থা সুরক্ষিত ও সুদৃঢ় হয় । কারণ, পর্দা পালনের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পরকিয়াবিহীন পবিত্র জীবন গঠিত হয় এবং চরিত্রহীনতা ও অবিশ্বাস তাদের থেকে বিদায় নেয় । তাই মুসলিম উম্মাহ অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য যে, দুনিয়া ও আখিরাতে পর্দার গুরুত্ব অনস্বীকার্য ।
★পর্দাহীনতার পরিণতি: মূলত পর্দাহীনতার কারণে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, অপকর্ম ও ব্যভিচারের মতো নিকৃষ্ট পাপের সূচনা হয় । যার কারণে ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌন সন্ত্রাস প্রকট আকার ধারণ করে । ফলে নানা অঘটনসহ ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হয় । যার বাস্তব চিত্র নিত্যদিনের সংবাদপত্র খুললেই চোখে পড়ে ।
এছাড়াও পর্দাহীনতার কারণে পরকিয়া ও চরিত্রহীনতার মতো ঘৃণিত কর্মের সূত্রপাত হয় । যার ফলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস উঠে যায় । এতে পরিবারে অশান্তি ও বিপর্যয় নেমে আসে । যার বাস্তবতা আজ আমাদের নখদর্পণে ।
মূলত পর্দাহীন নারীরা হচ্ছে জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী । তাদের ব্যাপারে মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদ ﷺ বলেনঃ তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচে নিকৃষ্ট তারাই যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (বায়হাকী: ১৩২৫৬)
তাই আমরা বলতে পারি যে, সুসভ্য ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী নারী কিছুতেই পর্দাহীন হতে পারে না । এমনকী অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে দয়ালনবী রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে লা’নত দিয়েছেন ।
এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবীকরিম আহমাদে মুহাম্মাদ ﷺ লা’নত (অভিশাপ) দিয়েছেন সেসব নারীদেরকে যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে । অর্থাৎ পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে । (আবু দাউদ: ৪০৯৭)
এছাড়াও পর্দাহীনতার কারণে আল্লাহর বিধানকে অমান্য করা হয় । আর এ অবাধ্যতার কারণে আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি ।
এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সাইয়েদুল মুরসালীন মুহাম্মাদ ﷺ বলেনঃ দুই শ্রেণীর জাহান্নামীদেরকে আমি দেখিনি (অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে সমাজে তাদের দেখা যাবে)।
এক. এমন সম্প্রদায়, যাদের হাতে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, আর সেই চাবুক দিয়ে তারা (অন্যায়ভাবে) মানুষকে প্রহার করবে ।
দুই. এমন নারী, যারা পোশাক পরিধান করা সত্ত্বেও নগ্ন । তারা অন্যদেরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট হয়৷ । তাদের মাথা হবে উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো । তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায় । (মুসলিম: ৫৪৪৫)
এ হাদীসে মূলত পর্দাহীনতার ভয়াবহ পরিণতির প্রতি ইঙ্গিত করেই বলা হয়েছে যে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এমনকী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না ।
এ হাদীস থেকে পর্দাহীনতার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জানা যায় যে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি । তাই জান্নাত প্রত্যাশী কোনো নারী কিছুতেই পর্দাহীন হতে পারে না । এ হাদীস থেকে আরো জানা যায় যে, যেসব পুরুষ তাদের অধীনস্ত নারীদের পর্দায় রাখার চেষ্টা করে না, তাদের জন্যও অনুরূপ পরিণতি ।
যেভাবে পর্দা পালন করতে হবে: একজন নারীর পর্দা পালনের তিনটি পর্যায় রয়েছে । যথা- গৃহে অবস্থানকালীন পর্দা, বাইরে গমনকালীন পর্দা এবং বৃদ্ধা অবস্থায় পর্দা ।
কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেকটি পর্যায়ে পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে । সামনে পর্দার তিনটি পর্যায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা হলো ।
★গৃহে অবস্থানকালীন পর্দা: নারীর প্রধান আবাসস্থল হলো তার গৃহ । সাধারণত গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করা নারীর জন্য শোভনীয় । এ জন্য আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে তাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন ।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করো, প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রর্দশন করো না। (সূরা আহযাব: ৩৩)
মূলত নারী নিজেকে যতো সংযত ও আবৃত রাখে আল্লাহ তায়ালার কাছে সে ততোই প্রিয় হয়ে ওঠে । ইসলামের দৃষ্টিতে তার মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব ততোই উচ্চতর হয়ে ওঠে ।
তাই মু’মিন নারীদের উচিত গৃহাভ্যন্তরে এমনভাবে অবস্থান করা যাতে আত্মীয় বা অনাত্মীয় কোনো গায়রে মাহরাম বা পরপুরুষের দৃষ্টিতে সে না পড়ে । আর এভাবে গৃহে অবস্থান করার মাধ্যমেই পর্দার যথার্থতা অর্জিত হয় ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন তোমরা তাদের (নবী পত্মীদের) কাছে কিছু চাইবে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে । এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ । (সূরা আহযাব: ৫৩)
এ আয়াতে বিশেষভাবে নবী-পত্মীদের কথা উল্লেখ থাকলেও এ বিধান সমগ্র উম্মতের জন্য ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য ।
এ বিধানের সারমর্ম এই যে, নারীদের কাছ থেকে ভিন্ন পুরুষদের কোনো ব্যবহারিক বস্তু, পাত্র, বস্ত্র ইত্যাদি নেয়া জরুরী হলে সামনে এসে নেবে না, বরং পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নিবে ।
এ নির্দেশনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নারীরা তাদের গৃহে অবস্থানকালীন মুহুর্তেও গায়রে মাহরাম বা পরপুরুষ, নিকটাত্মীয় হোক বা দূরাত্মীয় সকলের কাছ থেকে সম্পূর্ণ পর্দার আড়ালে অবস্থান করবে ।
তবে প্রয়োজন হলে পর্দার আড়াল থেকেই কথা বলবে । আর পরপুরুষরাও পর্দার আড়াল থেকেই কথা বলতে হবে । এতে পর্দার অপরিহার্যতা পরিস্ফূটিত হয় ।
★আয়াতের শেষাংশে পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, পর্দার এ বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে মানসিক কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে ।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেনঃ
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে নবী ! ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত সংযত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে । তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা করে, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো । (সূরা নূর: ৩১)
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, নারীরা মাহরাম পুরুষ অর্থাৎ এমন পুরুষ যাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম বা নিষিদ্ধ, তারা ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবে না । এতে পর্দার অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয় ।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বনেতা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাক । তখন এক আনসার সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ দেবরের ব্যাপারে আপনার অভিমত কি ? তিনি বললেন, দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য । (বুখারী: ৫২৩২)
আলোচ্য হাদীসে ব্যবহৃত ‘হামউ’ শব্দের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে স্বামীর নিকটাত্মীয় । শব্দটির উদ্দেশ্য ব্যাপক । শব্দটি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, স্বামীর যেকোনো দিকের ভাই, চাচা, মামা, খালু, ফুফা এবং তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে সন্তান । যেমন: দেবর, ভাসুর, চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, তাদের প্রত্যেকের ছেলে সন্তান ইত্যাদি ।
ইমাম তিরমিযী, লাইস ইবনু সা’দ, আল্লামা কাযী ইয়ায ও তাবারী সহ বহু আলেম অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন । অর্থাৎ নারীর জন্য তার দেবর, ভাসুর, চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর ও তাদের ছেলেদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা থেকে দূরে থাকতে হবে যেভাবে মৃত্যু থেকে দূরে থাকতে চায় ।
★বাইরে গমনকালীন পর্দা: বলা বাহুল্য যে, নারীদের জন্য গৃহের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী । এজন্য ইসলাম প্রয়োজনে নারীকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন ।
এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ ﷺ তার স্ত্রী হযরত সাওদা (রা.) কে উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ প্রয়োজনে তোমাদেরকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে । (বুখারী: ৪৭৯৫)
মূলত ইসলাম একটি সর্বাঙ্গীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা । তাই মানব প্রয়োজনের সকল দিকই ইসলামে বিবেচিত হয়েছে । তবে এক্ষেত্রে পর্দাবৃত হয়েই বাইরে বের হতে হবে । কিছুতেই পর্দাহীনভাবে বের হওয়া যাবে না ।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বনবী নবীকরিম ﷺ বলেনঃ নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু, যখনই সে পর্দাহীনভাবে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি মেরে তাকায় । (তিরমিযী: ১১৭৩)
আর পবিত্র কুরআনে নারীদেরকে বাইরে গমনকালীন মুহুর্তে পূর্ণ পর্দা পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে । এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সুস্পষ্ট নির্দেশ, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা এবং মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন (প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার সময়) তাদের (পরিহিত) জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয় । এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ।’ (সূরা আহযাব: ৫৯)
এ আয়াতে নারীদেরকে বাইরে গমনের সময় তাদের পরিহিত জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
★ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, জিলবাব হলো নারীর এমন পোশাক যা দিয়ে তারা পুরো দেহ ঢেকে রাখে । অর্থাৎ বাইরে গমনের সময় দেহের সাধারণ পোশাক- জামা, পাজামা, ওড়না ইত্যাদির উপর আলাদা যে পোশাক পরিধান করার মাধ্যমে নারীর আপাদমস্তক আবৃত করা যায় তাকে জিলবাব বলা হয় । আমাদের দেশে যা বোরকা নামে পরিচিত ।
এ থেকে বুঝা যায় যে, বাইরে গমনের সময় বোরকা পরিধান করে আপাদমস্তক আবৃত করে বের হওয়া আবশ্যক । আর আয়াতে জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়ার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাথা ও মুখমণ্ডল ঢেকে নেয়া । যা সাহাবী, তাবেয়ী ও নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরদের তাফসীর থেকে প্রতিভাত হয় ।
এ প্রসঙ্গে আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা (এ আয়াতে) মুমিন নারীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রয়োজনে তারা যখন বাইরে যাবে তখন তারা যেন জিলবাব দিয়ে (পুরো দেহ আবৃত করার পর) তাদের মাথার উপর দিক থেকে তাদের মুখমণ্ডলও আবৃত করে নেয় । তবে তারা (চলাফেরার সুবিধার্থে) দুটি চোখ খোলা রাখবে। (ইবনে কাসীর: ৬/৪৮২)
সাহাবী ও তাবেয়ীগণের পরবর্তী মুফাসসিরদের ব্যাখ্যার দিকে তাকালেও দেখা যায় যে, ইবনে জারীর তাবারী, ইবনে কাসীর, বায়যাবী, বাগভী, নাসাফী, সুয়ূতি, আবু বকর জাসসাস, মুফতি মুহাম্মদ শফিসহ সব তাফসীরকারকগণ এ আয়াতের অনুরূপ ব্যাখ্যাই করেছেন ।
অর্থাৎ সকলে একমত পোষণ করেছেন যে, এ আয়াতে নারীদেরকে তাদের চেহারাসহ আপাদমস্তক আবৃত করে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে । এতে বাইরে গমনকালীন পর্দার অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয় ।
আর এ ব্যাপারে সর্বোপরি কথা হলো, কোনো প্রয়োজনে নারীকে বাইরে যেতে হলে তখন তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে চেহারাসহ গোটা দেহ আবৃত করে পূর্ণ পর্দার সঙ্গে বের হওয়া । যা সর্বসম্মতিক্রমে ফরয ।
এক্ষেত্রে জিলবাব বা বোরকা পরিধানের মাধ্যমে আপাদমস্তক আবৃত করে নিবে । প্রয়োজনে চেহারা বা মুখমণ্ডলের জন্য আলাদা নিকাব ব্যবহার করবে । আর হাতের কব্জি ও পায়ের গোড়ালীর জন্য মোজা পরিধান করবে । তবে চলাফেরার সুবিধার্থে রাস্তা-ঘাট দেখার জন্য শুধু চোখ খোলা রাখবে ।
★বৃদ্ধা অবস্থায় পর্দা: বয়স্ক নারীদের জন্য পর্দা পালনের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা গ্রহণেন অবকাশ রয়েছে । এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘অতিশয় বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ নেই, যদি তারা তাদের সৌর্ন্দয প্রদর্শন না করে তাদের অতিরিক্ত বস্ত্র খুলে রাখে । তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম । আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ ।’ (সূরা নূর: ৬০)
আয়াতের নির্দেশনা হল, যে বৃদ্ধা নারীর প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না এবং সে বিবাহেরও যোগ্য নয় তার জন্য পর্দার বিধান শিথিল করা হয়েছে । গায়রে মাহরাম ব্যক্তিও তার কাছে মাহরামমের ন্যায় হয়ে যায় । মাহরামদের কাছে যেসব অঙ্গ আবৃত করা জরুরী নয় । বৃদ্ধা নারীদের জন্য গায়রে মাহরাম পুরুষদের কাছেও সেগুলো আবৃত করা জরুরী নয় ।
এরূপ বৃদ্ধা নারীর জন্য বলা হয়েছে, মাহরাম পুরুষদের সামনে যেসব অঙ্গ খুলতে পারবে, গায়রে মাহরাম পুরুষদের সামনেও সেগুলো খুলতে পারবে । (তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন: ৬/৪৩৯)
এ ব্যাপারে সর্বোপরি কথা হলো, চরম বার্ধক্যে পৌঁছার কারণে যেসকল নারী বিবাহের উপযুক্ত নয় এবং যাদের প্রতি কারো আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না, এ ধরনের বৃদ্ধা নারীর জন্যই এ বিধান । তাদেরকে এই সুবিধা দেয়া হয়েছে যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে অন্যান্য নারীদেরকে যেমন আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হয়, তাদের জন্য তা জরুরী নয় ।
এ রকম বৃদ্ধা নারীগণ তা ছাড়াই পরপুরুষের সামনে যেতে পারবে । তবে শর্ত হল, তারা তাদের সামনে সেজেগুঁজে যেতে পারবে না । এর সঙ্গে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিধানের এ শিথিলতা কেবলই জায়েয পর্যায়ের ।
সুতরাং তারা যদি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে এবং অন্যান্য নারীদের মত তারাও পরপুরুষের সামনে পুরোপুরি পর্দা রক্ষা করে চলে তবে সেটাই তাদের জন্য উত্তম । (তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন: ২/৪৬৮)
—★পরিশেষে বলছি, এ বিধানের ব্যাপারে সারকথা হলো, কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সর্বসম্মতিক্রমে হিজাব বা পর্দা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নারী জাতির জন্য এক ফরয বিধান । সর্বাবস্থায় এ বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পিত থাকা অপরিহার্য ।
তবে চিকিৎসা ইত্যাদি বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন মাফিক শিথিলতা গ্রহণের অবকাশও অবশ্যই রয়েছে । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সকলকে যথাযথভাবে এ বিধান পালনের তাওফীক দান করুন, আমিন ইয়া রব !