01/04/2023
#কাশ্মীর_লাদাখ_মানালি_দিল্লি_আগ্রা ভ্রমণ।
Courtesy by Tanvir Fuyad
সময়ঃ১৪ দিন(১৫-০৯-২২ থেকে ২৯-০৯-২২)।
১৪ দিনের এই ট্যুরে আমাদের মোট খরচ হয়েছে জনপ্রতি প্রায় ৩৯০০০ টাকা।
আমাদের রুট প্লান ছিলো এমন 👇
ঢাকা-(বাস) কোলকাতা- (এয়ার) শ্রীনগর - লাদাখ - মানালি - (বাস) দিল্লি - আগ্রা- দিল্লি - (ট্রেন) কোলকাতা -(বাস) ঢাকা।
ট্রেনে কাশ্মীর যেতে হলে এভাবে যেতে হবেঃ
কোলকাতা- জম্মু ট্রেন।জম্মু থেকে শ্রীনগর বাস বা শেয়ার ট্যাক্সি।
প্রথম পর্বঃ প্রথম পর্বে আজ কাশ্মীর ট্যুরের বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এই লেখাটা বিশেষ করে তাদের জন্য যারা মোটামুটি বাজেট ট্রাভেলার।
অনেকদিন আগে থেকেই কাশ্মীর ভ্রমণের ইচ্ছে ছিলো কিন্তু সময়,টাকাপয়সা,পার্টনার সবকিছু মিলিয়ে হয়ে উঠছিলো না। এবার লম্বা ছুটি পেয়ে কাশ্মীর ভ্রমণের পরিকল্পনা করলাম। সেপ্টেম্বর এর ১২ তারিখ Spice Jet Airlines এর কোলকাতা থেকে শ্রীনগর এর টিকিট কনফার্ম করি।আমাদের ফ্লাইট ছিলো ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৯.৪৫ এ। টিকিটের প্রাইস ৭৭৭০ টাকা। এয়ার টিকিট কনফার্ম করার পর থেকে অনেক এক্সাইটেড ছিলাম এই ট্যুর নিয়ে। ২ দিনের মধ্যে ট্রাভেল ট্যাক্স দেওয়া সহ সকল টুকিটাকি কাজ সেরে নিলাম। ১৫ তারিখ রাতে নবীনগর থেকে সোহাগ পরিবহনের বাসে বেনাপোল এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাসের টিকিটের মূল্য ছিলো ৭৫০ টাকা।
প্রথম দিনঃ সকাল ৭.৩০ এর দিকে বাস আমাদের বেনাপোল পোর্টের সামনে নামিয়ে দেয়। বাস থেকে নেমে এক মুহুর্ত ও দেরি না করে ইমিগ্রেশন এর লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। মোটামুটি ১.৫ ঘন্টা মতো সময় লাগলো বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন শেষ করতে। বাংলাদেশ অংশের কাজ দ্রুত শেষ হলেও ইন্ডিয়াতে সময় লাগলো প্রায় ৩ ঘন্টার মতো। এক প্রকার ইচ্ছে করেই তারা লেইট করে। অবশেষে দুপুর ১২.৩০ এর দিক আমরা ইন্ডিয়ায় প্রবেশ করি। ইন্ডিয়াতে গিয়েই ৩৫০ রুপি দিয়ে এয়ারটেল এর একটা সিম কিনে নেই,যেটাতে প্রতিদিন এক জিবি করে ডাটা থাকবে। সিম কেনার পর সবগুলো মানি এক্সচেঞ্জ যাচাই করে মানি এক্সচেঞ্জ করি। ১০০ টাকায় ৭১.৯০ রুপি পেয়েছিলাম 😑 মানি এক্সচেঞ্জ শেষে দুপুরের খাবার খেয়ে লন্ডন এক্সপ্রেস এর বাসে উঠে পড়ি। বাসের টিকিট ছিলো ৩৫০ রুপি। বর্ডার থেকে কোলকাতা গেলে বাসে না যাওয়া ই ভালো, অনেক সময় লাগে আবার খরচ ও বেশি। সবচেয়ে ভালো হয় জনপ্রতি ৫০ রুপি অটো ভাড়া দিয়ে বনগাও স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে করে গেলে। ট্রেন ভাড়া ২০ রুপি, ২-২.৩০ ঘন্টার মধ্যে শিয়ালদাহ স্টেশনে পৌছে যায় ট্রেন। দুপুর ২ টার সময় বাস ছাড়লো এবং ঠেলাগাড়ীর মতো চলতে চলতে আমাদের এয়ারপোর্টের পাশে নামিয়ে দেয় বিকাল ৫.৩০ এর দিকে। বাস থেকে নেমে আশেপাশে হাটাহাটি করলাম,কিছু স্ট্রিট ফুড খেলাম। হাটাহাটি, খাওয়া শেষ করে ৭ টার দিকে এয়ারপোর্টে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বসে থাকলাম। ৯.৪৫ বাজতে এখনো অনেক দেরি,বসে থাকা, হাটাহাটি করা ছাড়া এখন আর কোনো কাজ নাই। ফ্লাইট টাইম ৯.৪৫ ছিলো কিন্তু ফ্লাইট ডিলে হলো প্রায় দেড় ঘন্টা মতো। অবশেষে ১১.৩০ এর দিকে কোলকাতা থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে উড়াল দিলাম। ২.২০ ঘন্টা মতো ফ্লাই করে প্রায় ২ টার দিকে দিল্লি 'ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্টে' পৌছালাম। দিল্লিতে ৮ ঘন্টা এর মতো যাত্রাবিরতি ছিলো। পরদিন সকালে যেখান থেকে বিমান শ্রীনগর যাবে তার আসেপাশে এসে ঘুম দিলাম। দিল্লি এয়ারপোর্টে ভালো ঘুমানোর ব্যাবস্থা আছে।
দ্বিতীয় দিনঃ পরদিন সকালে নির্ধারিত সময়েই বিমান শ্রীনগর এর উদ্দেশ্যে উড়াল দিলো।১.৩০ ঘন্টা ফ্লাই করে আমরা শ্রীনগর পৌছে গেলাম। শ্রীনগর এয়ারপোর্টে নেমে দেখলাম বড় স্ক্রিনে লেখা ''Welcome to paradise on earth '। দীর্ঘদিন এর লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিয়েছে,এটা ভাবতেই তখন অনেক ভালো লাগছিলো। এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পরেই অনেক ট্যাক্সি ওয়ালা ঘিরে ধরলো,কেউ কেউ তার হোটেলে উঠার প্রস্তাব দিলো। আমরা কারো কথা না শুনে সামনে এগোতে থাকলাম। এয়ারপোর্টের পাশেই একটা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড আছে কিন্তু রেট অনেক বেশি। এয়ারপোর্টের রাস্তা ধরে হেটে বের হওয়ার সময় ই অনেক ভালো লাগছিলো। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে ৬০০ রুপি দিয়ে একটা এয়ারটেল সিম কিনে নিলাম(কাশ্মীর এর জন্য আলাদা সিম লাগে)। তারপর ৩০০ রুপিতে একটা অটো ঠিক করলাম যেটা আমাদের 'ডাল গেট' নামিয়ে দিবে।দুপুর ১২.৩০ এর দিকে আমরা ডাল গেট আসি। অটো থেকে নেমে দুপুরের খাবার খেয়ে হোটেল খোঁজা শুরু করলাম। কয়েকটা হোটেল খোঁজার পর ডাল লেকের পাশে 'হোটেল ক্রিসেন্ট' এ উঠি,রুম ভাড়া ছিলো ৮০০ রুপি করে।রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে বিকাল ৪.৩০ এর দিকে বের হই।ইচ্ছা ছিলো ডাল লেকে এসে শিকারা রাইড করবো,কিন্তু ডাল লেক এর কাছে আসার পর আর ইচ্ছে করেনি।শিকারা রাইড ওভাররেটেড মনে হয়েছে আমার কাছে। যদিও এই লেখাটা লেখার সময় ডাল লেকের লোকদের বোটিং, বোটিং বলে ডাকাডাকি করা মিস করছি। ডাল গেট থেকে ৫০ রুপিতে একটা অটো ভাড়া করে লালচক আসি। লালচক গিয়ে হালকাপাতলা শপিং করি,স্ট্রিট ফুড খাই। সন্ধ্যার পর লালচক থেকে এসে ডাল লেকের পাশে হাটাহাটি করি। রাতে ডাল লেকের পাশে বসে থাকতে অনেক ভালো লাগে। ডাল লেকে হাটাহাটি শেষে রাতের খাবার খেয়ে মোটামুটি ১১ টার দিকে ঘুম দেই।
তৃতীয় দিনঃ শ্রীনগর- সোনমার্গ।
সকাল ৫ টায় ঘুমথেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে বের হয়ে গেলাম TRC স্ট্যান্ডে। TRC স্ট্যান্ড থেকে সবখানে যাওয়ার গাড়ি পাবেন। আমরা TRC স্ট্যান্ডের ভেতরে না ঢুকে বাইরে থেকে গাড়ি ঠিক করলাম। স্ট্যান্ডের ভেতর থেকে গাড়ি নিলে রেট বেশি থাকবে। ৩০-৪০ মিনিট ধরে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের আশেপাশে ঘুরে ৩২০০ রুপিতে ৭ সিটের একটা গাড়ি ঠিক করলাম। শ্রীনগর থেকে সোনমার্গ এর দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার,যেতে সময় লাগে মোটামুটি ২.৩০ ঘন্টা মতো। সকাল ৭ টার দিক আমরা সোনমার্গের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।যে রাস্তা দিয়ে আমরা সোনমার্গে যাচ্ছি এটাই লাদাখ যাওয়ার রাস্তা।এই রাস্তায় আপনি পাহাড়ের পাশ দিয়ে স্বচ্ছ নদীর বয়ে চলা দেখতে পারবেন,যেটা অসম্ভব রকমের সুন্দর। পথিমধ্যে সকালের নাস্তা করে ১০ টার দিকে আমরা সোনমার্গ চলে আসি। কাশ্মীরের মোটামুটি সব ট্যুরিস্ট স্পষ্টগুলার একটা নির্দিষ্ট অংশে গাড়ি যায়, তারপর পায়ে হেটে অথবা ঘোড়ায় চড়ে মেইন স্পটে যেতে হয়৷ গাড়িতে থাকা অবস্থায় আমাদের ড্রাইভার বললো ঘোড়া নিতে,তাছাড়া যেতে পারবো না,এই ওই বলে ভয় দেখালো। আমরা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কাশ্মীরের সবগুলো স্পটে পায়ে হেটে ঘুরবো,এজন্য কারো কথা না শুনে সোজা হাটা শুরু করলাম।অনেক ঘোড়াওয়ালা ঘিরে ধরলো,বিভিন্নভাবে রিকুয়েষ্ট করলো,ভয় দেখালো কিন্তু কারো কথা না শুনে আমরা সামনে এগোতে থাকলাম। সোনমার্গে আসার পর একটু একটু করে বুঝতে পারছি কেনো কাশ্মীর কে 'প্যারাডাইস অন আর্থ' বলা হয়। ১১ টার সময় হাটা শুরু করে দুপুর ২ টার দিক আমরা সোনমার্গ জিরো পয়েন্ট এ চলে আসি। একটানা হেটে আসলে আরও দ্রুত সময়ে আসা যায়। আমরা সোনমার্গের প্রকৃতি দেখতে দেখতে ধীরেসুস্থে ২ টায় দিকে জিরো পয়েন্ট আসি।হাটতে হাটতে বুঝলাম যতটা সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে চারিদিকে দেখে আসছি,ঘোড়ায় উঠলে এতকিছু দেখতে পেতাম না।সোনমার্গের এখানে নাকি বাজরাঙ্গী ভাইজান সিনেমার শুটিং হয়েছিলো। কাশ্মীরের অন্যতম সুন্দর স্থান এই সোনমার্গ। সোনমার্গের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। একদিকে স্বচ্ছ পানির নদী,আরেকদিকে বিশাল পাহাড়,নিচে সবুজ ঘাস 😍 সোনমার্গ জিরো পয়েন্ট এর কাছথেকে ৭০ রুপির নুডুলস খেয়ে ৩ টার দিকে আবার ফেরার পথে হাটা শুরু করলাম। বিকাল ৪.৩০ এর দিকে আমরা সোনমার্গ ত্যাগ করি। সোনমার্গ থেকে আসার সময় ড্রাইভার ভাইকে বলি আমাদের 'হজরত বাল মসজিদ' এর সামনে নামিয়ে দিতে। শ্রীনগর সাইট সিন এর জন্য আলাদা কোনো দিন আমরা রাখিনি,প্রতিদিন এভাবেই লোকাল সাইট ঘুরেছি। ড্রাইভার ভাই আমাদের সন্ধ্যা ৭.৩০ এর দিকে হজরত বাল মসজিদ এর সামনে নামিয়ে দেয়। হজরত বাল মসজিদ এলাকায় অনেক স্ট্রিটফুড পাওয়া যায়, দাম ও তূলনামূলক কম। এখান থেকে ভরপুর খাবার খেয়ে রাত ৯.৩০ এর দিকে ১৫০ রুপিতে একটা অটো ঠিক করে হোটেলে চলে আসি। হোটেলে এসে ১১ টার দিকে দিলাম ঘুম।
চতুর্থ দিনঃ শ্রীনগর - দুধপাত্রী।
প্লান ছিলো দুধপাত্রী অথবা গুলমার্গ এর যেকোনো একটা জায়গায় যাবো। গুলমার্গ মূলত বরফ দেখার জন্য বিখ্যাত। এর আগেও যেহেতু বরফ দেখা হয়েছে দু'বার আর এখন তো গুলমার্গ বরফ ও পাবো না,এজন্য দুধপাত্রী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।আজ ও সকাল ৬ টার দিকে হোটেল থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গেলাম দুধপাত্রী যাওয়ার গাড়ি ঠিক করতে।দুধপাত্রী যাওয়া এবং আসার জন্য ২৪০০ রুপিতে একটা ৪ সিটের গাড়ি ঠিক করি। শ্রীনগর থেকে দুধ পাত্রী এর দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার, যেতে সময় লাগে মোটামুটি ২ ঘন্টা মতো। সকাল ৮ টার একটু আগে রওনা দিয়ে আমরা ১০ টার দিকে দুধ পাত্রী চলে আসি। এখনেও সেই একই অবস্থা,হেটে যেতে হবে না হলে ঘোড়ায় আসতে হবে। গাড়ির ড্রাইভার থেকে শুরু করে ঘোড়া ওয়ালা সবাই রিকুয়েষ্ট করলো ঘোড়ায় যাওয়ার জন্য। আমাদের পায়ে অনেক জোর এই বলে হাটা শুরু করলাম। পায়ে হেটে দুধ গঙ্গা নদীর দিকে যেতে থাকলাম। এখানকার রাস্তা পিচ ঢালা, হেটে যেতে খুব বেশি হলে ১.৩০ ঘন্টা লাগবে। এখানে কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষজন অনেক বেশি আসে,পিকনিক করতে। সারি সারি বিশাল পাইন গাছ,নিচে সবুজের মাঠ সবকিছু মিলিয়ে অনেক সুন্দর লাগে। সোনমার্গের তূলনায় এই দুধ পাত্রী অনেক বেশি সবুজ।চারিদিকে সবুজের সমারোহ বলতে পারেন। সারি সারি পাইন গাছ আর সবুজে ঘেরা প্রকৃতি দেখতে দেখতে দুধ গঙ্গা রিভারের কাছে চলে আসি। এখানে পাইন গাছের নিচে বসে নদীর প্রবল স্রোতের শব্দ সারাদিন ধরে শুনতেও ভালো লাগবে। ২ ঘন্টা মতো এখানে বসে আড্ডা দিয়ে দুপুর ১.৩০ এর দিকে আমরা ব্যাক করতে থাকি। ২.৩০ এর দিকে আমরা দুধ পাত্রী থেকে শ্রীনগর এর পথ ধরি। শ্রীনগর আসার পথে আমরা ড্রাইভার কে বলেছিলাম আমাদের 'নিশাত বাগ ' নামিয়ে দিতে। উনি আমাদের বিকাল ৪.৩০ এর দিকে নিশাত বাগ মুঘল গার্ডেনে নামিয়ে দেয়। শ্রীনগর ৩ টা মুঘল গার্ডেন আছে,সবগুলো মোটামুটি একই রকমের। নিশাত বাগ বা শালিমার বাগ এর যেকোনো একটা দেখে নিলেই হবে। নিশাত বাগ নেমে ডাল লেকের সামনে থেকে খাবার খেয়ে তারপর মুঘল গার্ডেনে প্রবেশ করি। এখানে প্রবেশমূল্য ১২ বছরের উপর হলে ২৪ রুপি,১২ এর নিচে ১২ রুপি। আমাদের দেশের পার্কগুলাতে যেমন বিভিন্ন রকমের ফুলগাছ থাকে,এখানেও ঠিক এমন।সামনে একটা পাহাড় আছে,মোটামুটি ভালোই লাগে।যদিও আমার এমন পার্ক টাইপ জায়গা খুব একটা ভালো লাগে না। মুঘল গার্ডেন এর মধ্যে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে বের হয়ে ডাল লেকের আশেপাশে হাটাহাটি করি। এদিক থেকে ডাল লেক দেখতে ভালো লাগে। ডাল লেকে সূর্যাস্ত দেখে ১৫০ রুপিতে একটা অটো নিয়ে ডাল গেট চলে আসি। ডাল গেট এসে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে আসি। পরদিন পেহেলগাম যাবো এজন্য ব্যাগ গুছিয়ে হোটেল মালিক আংকেল এর কাছে ব্যাগ রেখে ঘুম দেই।
পঞ্চম দিনঃ শ্রীনগর-পেহেলগাম।
সকাল ৬ টার দিকে হোটেল থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে চলে আসি। ডাল গেট ব্রিজ থেকে সোজা হাটলে Govt chest disease hospital এর পাশে একটা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড আছে। এখানথেকে খুব সহজে শেয়ার ট্যাক্সিতে পেহেলগাম যাওয়া যায়। প্রথমে শ্রীনগর থেকে ট্যাক্সিতে অনন্তনাগ, তারপর অনন্তনাগ থেকে আরেকটা ট্যাক্সিতে পেহেলগাম। শ্রীনগর থেকে অনন্তনাগ এর ভাড়া জনপ্রতি ১২০ রুপি,এবং অনন্তনাগ থেকে পেহেলগাম এর ভাড়া ১১০ রুপি। সকাল ৭ টায় রওনা দিয়ে মোটামুটি ৯.৩০ এর দিকে পেহেলগাম চলে আসি। ট্রেনে করে যারা যাবেন তারা প্রথম পেহেলগাম ঘুরে তারপর শ্রীনগর আসবেন। পেহেলগাম জম্মু আর শ্রীনগর এর মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত। শ্রীনগর থেকে পেহেলগাম এর দূরত্ব প্রায় ৯৮ কিলোমিটার এর মতো। পেহেলগাম গিয়ে সোজা চলে গেলাম ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। এখানকার ভাড়া ফিক্সড,দামাদামির কোনো সুযোগ নাই। বাইরের থেকে গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে পেহেলগাম ঘুরতে পারবেন না,এখানকার গাড়ি নিতে হবে। প্লান ছিলো আরু ভ্যালি আর বেতাব ভ্যালি ঘুরবো,কিন্তু রাস্তার কাজের জন্য আরু ভ্যালি বন্ধ ছিলো ওইদিন 😥 ১৫০০ টাকার একটা ট্যাক্সি নিলাম,যেটা আমাদের চান্দনওয়ারি আর বেতাব ভ্যালি ঘুরাবে। এখানকার সিস্টেম হলো প্রতিটি স্পটে ১ ঘন্টা করে সময় দেয়,আর এক্সট্রা সময় নিলে ঘন্টাপ্রতি ৪০০ রুপি দেওয়া লাগবে। ড্রাইভার প্রথমে আমাদের চান্দনওয়ারি নিয়ে গেলো। এখানে দেখারমত তেমন কিছু নাই,কিন্তু যাওয়ার রাস্তাটা একটু বেশিই সুন্দর। চান্দনওয়ারি ঘুরে চলে আসি বেতাব ভ্যালিতে। জনপ্রতি ১০০ রুপি এন্ট্রি ফি লাগে এখানে প্রবেশের জন্য। কাশ্মীরের অন্যতম সুন্দর জায়গা এই বেতাব ভ্যালি। সারাদিন এখানে বসে থাকলেও আপনার ক্লান্তি লাগবে না। বেতাব ভ্যালি ঘুরে এসে আমরা ৬০০ রুপিতে একটা হোটেল ঠিক করে হোটেলে উঠে পড়ি। পেহেলগাম আসলে অন্তত এক রাত পেহেলগাম থাকা উচিৎ। ব্যক্তিগতভাবে পেহেলগামকে আমার কাছে কাশ্মীরের সবচেয়ে সুন্দর স্থান মনে হয়েছে। হোটেল থেকে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু ঘুমিয়ে নেই। বিকালের দিকে আশেপাশে ঘুরে দেখি। পেহেলগামের বুকে বয়ে চলা লিডার নদীর পাশে বসে অনেকটা সময় কাটাই। সন্ধ্যায় আশেপাশে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে এসে ঘুম।
ষষ্ঠ দিনঃ বাইসারন ভ্যালি(মিনি সুইজারল্যান্ড)।
সকাল ৬ টার দিকে 'বাইসারন ভ্যালির' উদ্দ্যেশ্যে হাটা শুরু করি। বাইসারন ভ্যালি যাওয়ার রাস্তাটা অনেক সুন্দর, পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে সকাল সকাল হাটতে খুব ভালো লাগছিলো। হাটতে হাটতে স্থানীয় কিছু লোকের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। উনারা আমাদের শর্টকাট রাস্তা দিয়ে বাইসারন ভ্যালি নিয়ে আসে। ১.৪৫ ঘন্টা হাটার পর আমরা বাইসারন ভালি চলে আসি। আজকের দিনে আমরা ই সবার আগে এখানে এসেছি। বাইসারন ভ্যালির প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৩০ রুপি,কিন্তু আমরা যখন এসেছি তখন টিকিট কাউন্টার ওপেন হয়নি এজন্য ফ্রিতে ঘুরে এসেছি 😁 বাইসারন ভ্যালিকে মিনি সুইজারল্যান্ড বলা হয়। অসম্ভব রকমের সুন্দর এই বাইসারন ভ্যালি। আমরা যেদিন আসি ওইদিন আকাশে হালকা মেঘ মেঘ ছিলো,এজন্য আরও ভালো লাগছিলো। বাইসারন ভ্যালি দেখা শেষ করে আমরা ৯.৩০ এর দিকে হাটা শুরু করি। ১১ টার দিকে হোটেল চেক আউট করে শেয়ার ট্যাক্সিতে উঠে পড়ি। পেহেলগাম থেকে অনন্তনাগ এর দিকে অনেক আপেল বাগান পাবেন। ড্রাইভার ভাইকে বলি একটা আপেল বাগানের সামনে আমাদের নামিয়ে দিতে। একটা বড় আপেল বাগানের সামনে উনি আমাদের নামিয়ে দেয়। গাড়ি থেকে নামার পর এক চাচার সাথে পরিচয় হয়,উনার নিজস্ব আপেল বাগানে উনি আমাদের নিয়ে যায়। অনেকদিনের ইচ্ছা ছিলো নিজ হাতে কাশ্মীরের আপেল পেড়ে খাবো, ওই চাচার কল্যাণে এই ইচ্ছাটাও আজ পূরন হলো। আপেল বাগান ঘুরে দুপুর ৩ টার দিক আমরা আবার শ্রীনগর চলে আসি এবং আগে যে হোটেলে ছিলাম ওখানে উঠি। ফ্রেশ হয়ে একটা অটো নিয়ে চলে আসি লালচক,উদ্দ্যেশ্যে শপিং করা ও কাশ্মীরের বিখ্যাত 'ওয়াজওয়ান' খাওয়া। শপিং শেষ করে রাতে রেসিডেন্সি রোডের 'করিমা রেস্টুরেন্ট' থেকে ওয়াজওয়ান খেয়ে হোটেলে চলে আসি। আজ সবার একটু মন খারাপ কারন আগামীকাল সকালে কাশ্মীর ছেড়ে লাদাখের দিকে যাবো। আগামীকাল খুব সকালে উঠতে হবে,এজন্য তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।
লাদাখ ভ্রমনের খুটিনাটি পরবর্তী পর্বে লিখবো ইনশাআল্লাহ।
কাশ্মীর ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন যারা তাদের জন্য হালকা পাতলা হিসাবনিকাশ করবো এখনঃ
ধরলাম আপনি ঢাকা থেকে নন এসি বাসে বেনাপোল যাবেন ও কোলকাতা থেকে জম্মু এসি ট্রেনে যাবেন।ধরে নিলাম আপনার গ্রুপের মেম্বার ৪ জন সেক্ষেত্রে হিসাব হবে এমন👇
*ঢাকা-বেনাপোল ৭৫০+৭৫০=১৫০০ টাকা।
*বর্ডার -কোলকাতা ১০০+১০০=২০০ রুপি।
*কোলকাতা একদিন থাকা খাওয়া=৮০০ রুপি।
*কোলকাতা-জম্মু ট্রেন ২৫০০+২৫০০=৫০০০ রুপি।
(ট্রেনের টিকিটের মূল্য ২০০০-২৩০০ রুপি মতো)
*যাওয়া আসা মিলিয়ে ৪ দিন ট্রেনে খাওয়ার খরচ ১৫০০ রুপি।
*জম্মু থেকে শ্রীনগর -১১০০+১১০০=২২০০ রুপি।
*শ্রীনগর-সোনমার্গ ট্যাক্সি ভাড়া ৮০০ মতো।
*শ্রীনগর-গুলমার্গ=৭০০ রুপি।
*শ্রীনগর-দুধপাত্রী=৬০০ রুপি।
*শ্রীনগর-পেহেলগাম(আপ ডাউন)=৫০০ রুপি।
*পেহেলগাম ট্যাক্সি-৫০০ রুপি,এন্ট্রি ফি ২০০ রুপি।
*লোকাল সাইট সিন(অটো)-৫০০ রুপি।
৬ দিনের মোট হোটেল ভাড়া ৩০০*৬=১৮০০ রুপি হয় । ৬ দিনের মোট খাবার খরচ =২৫০০ রুপি।
মোট=১৭৮০০ রুপি, ১৮০০০ ধরলাম। যেটা বাংলা টাকায় প্রায় ২৫০০০ টাকা,সাথে ঢাকা থেকে বেনাপোল বাসের ভাড়া যোগ করলে আসে ২৬৫০০ টাকা। এই টাকায় খুব ভালোভাবে কাশ্মীর ঘুরে আসতে পারবেন।
এখন আপনি যদি এসি ট্রেনে না গিয়ে স্লিপারে যান সেক্ষেত্রে যাওয়া আসার খরচ আরও ৩০০০ রুপি কমে যাবে। স্লিপারে গেলে মোটামুটি ২২০০০ টাকায় কাশ্মীর ট্যুর শেষ করতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় কিছু টিপসঃ
*ট্রেনে গেলে অবশ্যই ১-১.৫ মাস আগেই টিকিট কনফার্ম করে নিবেন।
*৬/৭ জনের গ্রুপ করে গেলে খরচ কম হবে।
*এয়ারপোর্ট এরিয়া থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি নিলে খরচ কম পড়বে।
*হোটেল,ট্যাক্সি ঠিক করবেন নিজে নিজে,অন্যকারো সহায়তা নিলে এক্সট্রা টাকা লাগবে। ট্যাক্সি বা রুম লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করলে বলবেন নেওয়া হয়ে গেছে।
* TRC স্ট্যান্ডের বাইরে থেকে ট্যাক্সি ঠিক করবেন।হোটেল থেকে বা অন্যকোথাও থেকে গাড়ি নিলে বেশি টাকা গুনতে হবে।
* হোটেল/ট্যাক্সি ঠিক করার সময় জিজ্ঞেস করে নিবেন অতিরিক্ত আর কোনো চার্জ লাগবে কিনা।
* ২ কপি ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট সাথে রাখবেন,বর্ডারে লাগবে।
* কাশ্মীরে গিয়ে বাংলাদেশী পরিচয় দিয়ে সন্মান পাবেন।
* পায়ে হেটে টুরিস্ট স্পটে যাওয়ার সময় হাতে একটা পানির বোতল রাখবেন।
* শপিং করলে অবশ্যই লালচক থেকে করবেন।
****কিছু অনুরোধঃ
কাশ্মীরের মানুষজন অনেক ভালো,কারো সাথে খারাপ ব্যাবহার করবেন না। অনেকে হয়তো শিকারা রাইড বা ঘোড়া নেওয়ার জন্য বারবার রিকুয়েষ্ট করবে। অনেকসময় বিরক্ত লাগতে পারে আপনার কিন্তু এটা উনাদের রুটি রুজির উৎস। বিরক্ত না হয়ে ভালোভাবে না করবেন।পানির বোতল,চিপস/খাবারের প্যাকেট সহ অপচনশীল জিনিসপত্র যেখানে সেখানে ফেলবেন না,নির্ধারিত স্থানে ফেলুন।এমনকিছু বলবেন না যাতে কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে।এমন কোন কাজ করবেন না যেন আপনার জন্য বাংলাদেশীদের বদনাম হয়।