23/01/2024
সময়টা সম্ভবত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী ৩ তারিখ..
দুপুরে মিনহাজ মামার ফোন..
মামা চল ক্যাম্পিং এ যাই..
আমি মাত্র দুপুরের খাওয়া শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম...
ওর কথা শুনে উঠে বসে বললাম- কোন দিন যাবি কালকে?
ওদিক থেকে মামা বলে -আজকেই চল...
আমি বললাম হুস..সময় কত দেখছস..?
মামা বলে- চল সময় হয়ে যাবে..
কে যাবে তুই আর আমি শুধু..
হ্যাঁ,দুজনেই যাবো..
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই হ্যাঁ বলে দেই, কারন ট্যুরের কথা শুনলে আর কাউকে না বলতে পারার কারনে মানা করার কোন সুযোগ পাইনি তখন।
মনে পড়ে ভাগিনা আতাউরে'র কথা..ওকে বললে হয়তো যাবে সাথে..অন্য কেউ মনে হয় না রাজি হবে হঠাৎ ক্যাম্পিং'য়ে যেতে..
ওকে ফোন দিতেই বললাম যাবি এখন ট্যুরে
ও সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেল..
মামা আমি রেড়ি হয়ে বাজারে যাচ্ছি আপনি আসেন...
যেই ভাবা সেই কাজ..আলসেমী ছেড়ে তাড়াতাড়ি আমার ট্রাভেল ব্যাগ খুঁজে বের করলাম..
একে একে সব খুঁজে খুঁজে বের করে ডুকালাম ব্যাগে..
আমার ব্যাগে একটা ছোটখাট সংসার সুন্দরভাবে এঁটে যায়..
এই যেমন-পাতিল,ছুরি,চপিং বোর্ড,চাপাতি,চা পাতা,চিনি,লবন মরিচ,মসলা,পেয়াজ রসুন থেকে শুরু করে প্লেট,বাটি,গ্লাস..
মোবাইলের চার্জার,পাওয়ার ব্যাংক,হেডফোন,টর্চ..
চাদর(তখন শীতের শেষ দিকে ছিল),গামছা,একসেট জামা,লুঙ্গি,চপ্পল..
দড়ি,সুতা,পলিথিন..আরো কিছু আছে আপতত মনে পড়ছে না এখন!
সব গুছিয়ে বাড়ি থেকে যখন বের হচ্ছি তখন সময় বিকাল চারটা ছুই ছুই..
বাজারে গিয়ে ভাগিনাকে নিয়ে সিএজিতে মহিপাল যাই..
মিনহাজ মামা তখন অপেক্ষা করছে আমার জন্য ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশে মুহুরীগঞ্জ ইকবাল পেট্রোল পাম্পে....
মহিপাল হতে চট্টগ্রামগামী লোকাল বাসে উঠলাম ধরদাম করে..জনপ্রতি ৬০ টাকা বাঁশবাড়িয়া বাজার পর্যন্ত..
কিন্তু ঠাডা পড়া বাস..একহাত সামনে যায় তো তিন হাত পিছনে আসে..
সন্ধ্যার আভাস চারদিকে দৃশ্যমান,তখন বাস ছাড়লো চট্টগ্রামের উদ্যেশে..
এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম...
মিনা উঠলো পাম্পের সামনে থেকে..
আমি আবার বাসে চড়লে ঘুমিয়ে পড়ি খুব তাড়াতাড়ি...
ওইদিন ও ব্যাতিক্রম হয়নি..
ঘুমোতে ঘুমোতে পৌঁছে যাই বাঁশবাড়িয়া বাজার..
বাস হতে নেমে বাজার সদাই করার পালা..
প্রয়োজনীয় চাল,ডাল,মুরগি আর ক্যাম্প ফায়ারের জন্য চারকোল কিনে সিএনজি নিয়ে রওনা দেই বীচের উদ্দেশ্যে..
যখন বীচে পৌঁছাই তখন ঘড়িতে সময় সাতটা বেজে ত্রিশ মিনিট..
রাঁতের আধাঁরে তড়িগড়ি করে তাঁবু খাটিয়ে,শুরু করি ছোলামুড়ি মাখানো...
ক্ষিদায় পেট ছোঁ ছোঁ করছিল তখন..
মুড়ি মাখা খেয়ে আবার কাজ শুরু রান্নার..
প্রথমে মুরগি কেটে নিলাম সাথে পেয়াজ,আদা,রসুন..
কিন্তু সমস্যায় পড়লাম অন্য জায়গায়..
নেই কেরোসিন.. ভুলে গিয়েছিলাম একদম ওটা নিতে..
ভাগ্যিস আমাদের মত ক্যাম্পিং করতে আসা ভাইদের থেকে পেয়ে গেলাম সাহায্য..
আগুন ধরিয়ে রান্না ছড়িয়ে দিলাম..
কিন্তু আশে পাশে মিনা নাই..
আমি ভাবলাম সে প্রেম করতে ব্যস্ত কিন্তু না..সে খেজুরের রস চুরি করতে চলে গেছে ততক্ষনে..
রান্না যখন মাঝ পথে হুড়মুড়িয়ে মিনা হাজির..
এসেই বলে--মামা,রস তো অনেক..একটা পাতিল দে কিছু নিয়ে আসি..বোতলের জন্য এতটুকুও আনতে পারি নাই..ব আকার ল
আমি ওকে রাতের খাবার শেষ করা পর্যন্ত সবুর ধরতে বললাম...কাজ হলো তাঁতে..
রান্না শেষ করে এবার খাবার পালা...
রাত তখন ১২ টার বেজে গ্যাছে।পেটে ইঁদুর দৌঁড়াছিল মনে হচ্ছে..
ঝাল মাংশের সাথে খিঁছুড়ি আর সালাদ.
আহ এ যেন অমৃত..
শীতের রাতে ক্যাম্প ফায়ারের আলোতে সাগরের গর্জন শুনতে শুনতে রাতের ভোজ..
কল্পনা করুন একটু..চোখ বন্ধ করে.!
খেয়েধেয়ে মিনার তাঁড়াহুড়ো শুরু.. রস খাবে..
কি করা.ওর আবদার রক্ষার জন্য তিনজন হাঁটা শুরু করলাম বাঁধের দিকে..
চারদিকে শুনশান নিরবতা..বাঁধের দিকে যত এগুছি নিশাচর বাঁদুড় গুলোর উড়াউড়ি নিস্তব্দ রাতকে আরো মোহনীয় করে তুলছিল..
প্রায় ৫-৬ টা গাছ থেকে ৩-৪ লিটার রস সংগ্রহ করে তাঁবুর কাছে ফিরে আসলাম...
সতর্কতার জন্য রস সেদ্ধ করে ঠান্ডা করে খেলাম..কারন যে পরিমানে বাঁদুড় চারপাশে নিপা ভাইরাসের শংকা এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
জোয়ার নামে রাত তিনটার দিকে,ততক্ষন বসে ছিলাম তাঁবুর বাহিরে..
চাঁদনি রাতে সাগর পাড়ে বসে এমন কত শত রাত পার করে দিতে ইচ্ছা করে..
শেষ রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে তাঁবুতে ঘুমাতে গেলাম...তবে মিনা তখনো প্রেমে ব্যস্ত..
ও কখন ঘুমায় তা দেখার সুযোগ হয়নি আমার..
সকালে ঘুম ভাঙ্গে কাঁকের ডাকে..রাতের খাবারের উচ্ছিষ্ট গুলো কাঁড়াকাড়ি করে খাচ্ছে....
লম্বা ঘুম দিয়ে সতেজ লাগছিল শরীর..
সব গুছিয়ে নিলাম সময়ক্ষেপণ না করে...
এবার বাড়ি ফেরার পালা...
এর মাঝে পরের ট্যুরের জন্যও প্ল্যান শেষ করে ফেলছিলাম...
সেটার গল্প না হয় অন্যদিন......