03/05/2024
🐬ইরাবতী ডলফিন 🐬
ইরাবতী ডলফিন হচ্ছে মহাসাগরীয় ডলফিনের লবণ সহ্যকারী একটি প্রজাতি। সমুদ্র তীর এবং বঙ্গোপসাগরের সাথে বিভিন্ন নদীর সংযোগস্থলে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বিচ্ছিন্ন ভাবে থাকতে দেখা যায়। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
১৮৫২ সালে প্রাপ্ত নমুনার ভিত্তিতে ১৮৬৬ সালে স্যার রিচার্ড ওয়েন প্রথম ইরাবতী ডলফিনের বর্ণনা দেন। এটি এর গণের দুইটি প্রজাতির একটি। জিনগতভাবে, ইরাবতী ডলফিন কিলার হোয়েল ‘অরকা’র সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এর প্রজাতি নাম brevirostris এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে যার অর্থ "ছোট ঠোঁট"। ২০০৫ সালে জিনগত বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয় যে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূলের অস্ট্রেলিয়ান স্নাবফিন ডলফিন প্রজাতিটি Orcaella গণের একটি ভিন্ন প্রজাতি।
এই ডলফিনের দেহের রং মোটামুটি ধূসর থেকে স্লেট নীলের মধ্যে সীমাবদ্ধ, নিম্নাংশ ফিকে বর্ণের এবং বিভেদ সৃষ্টিকারী কোন ভিন্ন বিন্যাস নেই। পিঠের মধ্যভাগে ছোট ও গোলাকার পৃষ্ঠ পাখনা আছে। মাথা উঁচু, গোলাকার, চঞ্চু অণুপস্থিত। দেহের সম্মুখভাগ ভোঁতা প্রকৃতির।
ধারণা করা হয়, ইরাবতী ডলফিন ৯ বছর বয়সে প্রজননের ক্ষমতা লাভ করে। উত্তর গোলার্ধে এরা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত মিলিত হয় বলে জানা গেছে। গর্ভধারণকাল ১৪ মাস। জন্মের সময় দৈর্ঘ্য থাকে ১ মিটার এবং ভর থাকে ১০ কেজি। ২ বছর বয়সে স্তন্য ত্যাগ করে। জীবনকাল ৩০ বছর। সুন্দরবনে, এই ডলফিনরা প্রাথমিকভাবে মোহনা, নদী প্রণালী এবং জোয়ার-ভাটাতে বাস করে। এই জটিল জলের সাথে তাদের অনন্য অভিযোজন তাদের সুন্দরবনের বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তোলে।
যোগাযোগ রক্ষার্থে এই প্রজাতি টিকটিক শব্দ, কিচির মিচির এবং ৬০ কিলোহার্জের শব্দ তৈরি করে যা কোন বস্তু শনাক্ত করতে ইকো-লোকেশন ব্যবহার করে থাকে বলে ধারণা করা হয়। এই ডলফিন অস্থিময় মাছ, মাছের ডিম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ইরাবতী ডলফিনের আক্রমণের শিকার জীবদের পর্যবেক্ষণ করে অণুমান করা হয় যে এটি এর শিকারকে মুখে চুষে নেয়। এরা পানির উৎস থেকে পানির ধারাকে বিচ্ছিন্ন করে ১.৫ মিটারের উপরে পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। মাছের পাল কে সুবিধাজনক এলাকায় নিয়ে শিকারের জন্যই ডলফিনরা এমন করে বলে জানা যায়। ইরাবতী ডলফিন একটি ধীর সাঁতারু। কিন্তু জলযান দিয়ে তাড়া করার সময় এর সাঁতারের গতি ঘণ্টায় ২০-২৫ কিমি. পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। ইরাবতী ডলফিন সাধারণত নৌকা থেকে দূরে থাকে। জলযানের সৃষ্ট ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এদের সাঁতার কাটতে দেখা যায় না।
এই প্রজাতির ডলফিন সাধারণত ২-৩ সদস্যের দলে থাকে। তবে গভীর জলাশয়ে ২৫ টি সদস্য পর্যন্ত একত্রে থাকতে দেখা গেছে। যদিও একে কখনো কখনো ইরাবতী নদীর ডলফিন বলা হয়, তবে এটি নদীর ডলফিন নয়, ইরাবতী ডলফিন মহাসাগরের ডলফিন। সমুদ্র উপকূলের কাছাঁকাছি, নদীর সাথে সংযোগস্থলে স্বাদু ও নোনা পানির মিশ্রণ আছে এমন এলাকায় এরা বসবাস করে। স্বাদু পানির নদীতে এদের ছোট ছোট জনসংখ্যায় দেখা যায়, উদাহরণস্বরূপ গঙ্গা নদী এবং মেকং নদী আর ইরাবতী নদী যা থেকে এর নাম হয়েছে ইরাবতী ডলফিন। এদের বিস্তৃতি বঙ্গোপসাগর থেকে নিউ গিনি এমনকি ফিলিপাইন পর্যন্ত, যদিও এরা তীর থেকে বেশি দূরে যায় না।
এদের বর্তমান জনসংখ্যা জানার জন্য ব্যাপক ভিত্তিতে কোন পরিসংখ্যান করা হয়নি। তবে বর্তমানে পৃথিবীতে এদের সংখ্যা আনুমানিক ৭০০০ এর অধিক যার ৯০ শতাংশই বাংলাদেশে বসবাস করে। বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরের জনসংখ্যাকে মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।