19/02/2020
কিছু অসাধারণ ভালো অভ্যাস যা তোমাকে করে তুলবে আলাদা!
ইন্টারনেটের বদৌলতে গোল্লায় যাচ্ছে প্রজন্ম! এই হলো আমাদের অভিভাবকদের অভিযোগ। সত্যিই কি তাই? ইন্টারনেটে কি ভালো বলতে কিছুই নেই? তা তোমাদেরও কি এরকমটাই মনে হয়? যে তোমাদের গোল্লায় যাওয়ার পেছনে কলকাঠি ইন্টারনেটই নাড়ে। ইন্টারনেট হলো অজস্র তথ্যের গভীর সমুদ্র। কী নেই সেখানে? জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস, স্কিল, পড়াশোনা আর বিনোদনের অজস্র জিনিসে ভরপুর ইন্টারনেটের জগত। এত এত ভালোকে বাদ দিয়ে কেবল এর খারাপ দিকগুলোকে প্রাধান্য দেওয়াটা কি ঠিক বলো?
আজ তোমাদের সাথে শেয়ার করবো ইন্টারনেট থেকে শেখা বেশ কিছু জীবনমুখী শিক্ষা, যেগুলো আমাদের আজীবন কাজে লাগবে।
১) শোনো বোঝার জন্যে, তর্ক করার জন্যে নয়।
আমাদের অনেকেরই একটা স্বভাবজাত বদঅভ্যাস হলো আমরা মানুষের সাথে কথা বলার সময় কথা শুনি জবাব দেওয়ার বা তর্ক করার জন্যে। অথচ শোনার প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ বোঝা, জানা। কিন্তু সেটা না করে আমরা শুনি হলো তর্ক করার জন্যে। এই অভ্যাসটা ত্যাগ করা উচিৎ।
২) খাবার টেবিলে মোবাইল ফোন নয়।
কর্মব্যস্ত এ যুগে পরিবারকে দেওয়ার মতো সময় আমাদের নেই বললেই চলে। পরিবারের সবার সাথে একসাথে খাওয়ার সুযোগও খুব একটা হয় না আমাদের। আর হলেও খাবার টেবিলে বসে মুঠোফোনের মুঠোতেই আটকে থাকে আমাদের মনোযোগ। এখন থেকে খাবার টেবিলে যাবার সময় মোবাইল ফোন রেখে যাবে। খাবার সময়টা হোক শুধুই পরিবারের।
৩) নিজের মুখের একটা ক্যারিক্যাচার আঁকিয়ে ফেলো।
কেন? আমাদের প্রত্যেকের চেহারারই একটা বিশেষত্ব আছে। আর সেটা ক্যারিক্যাচারে বিশেষভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। আমার ক্ষেত্রে যেমন আমার হাসি। ক্যারিক্যাচারে সেটা ইয়া বড় করে আঁকা হয়।
৪) এস এম এস করে কোনো প্ল্যান ক্যানসেল করো না।
কারও সাথে কোথাও দেখা করার বা খেতে যাবার প্ল্যান আগে থেকে করা থাকলে সেটা কখনও মেসেজ করে ক্যান্সেল করো না। যে মানুষটা তোমার জন্যে আলাদা করে সময় বের করে রেখেছিল, তার অন্তত বিনিময়ে তোমার কাছ থেকে একটা ফোনকল পাওনা।
৫) স্পেশাল ইভেন্টের আগে চুল কাটবে না।
চুল কাটা হলে চেহারার সাথে সেটাকে মানিয়ে যেতে অন্তত কিছুদিন সময় দিতে হয়। হুট করে কোনো স্পেশাল ইভেন্টের আগে চুল কাটা হলে দেখতে বেশ অদ্ভুত লাগে।
৬) বাসের সিটটা এমন কারও জন্যে ছেড়ে দাও যার ওটা তোমার চাইতে বেশি প্রয়োজন।
গণপরিবহণে বেশিরভাগ সময়ই আসনসংকটের কারণে বাদুড়ঝোলা হয়েই আমাদের গন্তব্য পর্যন্ত যেতে হয়। তবু কেউ যখন আসন পেয়ে যায় তখন সেটা অন্য কারও জন্যে ছেড়ে দেবার কথা ভুল করেও ভাবে না। তোমার বাসের আসনটা এমন কারও জন্যে ছেড়ে দাও যার ওই আসনটা তোমার থেকে বেশি প্রয়োজন। তুমি বসে আছো অথচ তোমার সামনে একজন বয়স্ক মহিলা বাদুড়ঝোলা হয়ে যাচ্ছেন সেটা দেখতে ভালো লাগবে?
৭) নতুন কোনো আসরে নিজেকে চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করতে চাও?
তাহলে শিখে রাখতে পারো কিছু জোকস, যাতে করে সেখানে সবার সামনে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরতে পারো। মনে রেখো, First Impression matters the most. তাই, নতুন জায়গায় নিজের First impression টাকে বেটার করতে নিজের পকেটে কিছু জোকস রেডি রেখো।
৮) আমরা অনেকেই মানুষের খাওয়ার কিংবা ঘুমের বা হাই তোলার অথবা হাঁচি দেওয়ার মতো মুহূর্তের ছবি অনুমতি না নিয়েই তুলে ফেলি। ব্যাপারটা ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও না হয় মানা যেত। সেসব ছবি ছড়িয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। এই জিনিসটা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিৎ। মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে সম্মান করো।
৯) আমাদের অনেকেরই মানুষকে তার দুর্বলতার ওপর ভিত্তি করে তাকে হেয় করার বদঅভ্যাস আছে। আজকে যে মানুষটাকে তুমি মঞ্চে উঠে ঠিক করে কথা বলতে পারছে না বলে ছি! ছি! করছো, সেই একই মানুষটার মতো অবস্থা কিন্তু তোমারও হতে পারে। তাই, কখনও কাউকে হেয় করো না।
১০) আমাদের অনেকেই ঝগড়া কিংবা তর্কে নিজেদের যুক্তিটাকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলতে পারে, গর্বে আর দম্ভে আরও কিছুক্ষণ গজগজ করতে থাকি। অযথা পুরো ব্যাপারটাকে টেনে লম্বা করি। যেটাতে তুমি ইতিমধ্যে জিতে বসে আছো, সেটাকে অযথা টেনে লম্বা করে কী লাভ? তাই, তর্কে জিতে যাবার পর আর প্রসঙ্গকে প্রসারিত করো না।
১১) সবসময় সবাইকে সব ভালো কাজের জন্যে কৃতিত্ব দেবে। মনে রেখো, সফলতার কৃতিত্ব সকলের, ব্যর্থতার দায়ভার কেবলই নিজের। তাই এখন থেকে মানুষজনকে ভালো কাজের কৃতিত্ব দিতে অভ্যাস করো, আর ভুল-ভ্রান্তির দায়গুলো নিজে নিতে শেখো।
১২) তুমি যদি কখনও কারও কাছ থেকে টাকা ধার করে থাকো তাহলে সেটা পরিশোধ করাটা তোমারই দায়িত্ব। অপরপক্ষের স্বভাবতই বারবার টাকার জন্যে তাগাদা দিতে অস্বস্তি হবে। টাকাটা যেহেতু তুমি নিয়েছ সেহেতু সময় বাড়াতে হলে তোমারই উচিৎ তাকে ফোন করে ব্যাপারটা জানানো। ধার পরিশোধ করা তোমার কর্তব্য।
১৩) আমাদের সবার কাছেই একখানা লুকায়িত হাতিয়ার রয়েছে যেটা দিয়ে আমরা সবাইকে আপন করে নিতে পারি আবার প্রয়োজনে কাউকে ঘায়েলও করতে পারি। ঠিক ধরেছো। হাসির কথা বলছি। সবসময় হাসো। মন-প্রাণখুলে হাসো। হাসি সংক্রামক। তোমার হাসি ছড়িয়ে যাবে তোমার আশেপাশে! তাই, সবসময় হাসো।
১৪) নিজের ভুল মন থেকে স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া আর সত্যি সত্যি মন থেকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন আবার একইসাথে সবচেয়ে সুন্দর দুটো কাজ। ক্ষমা একটা অমায়িক আর মহান ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। নিজের ভুলের জন্যে ক্ষমা চাইতে আর অন্যের ভুলের জন্যে ক্ষমা করতে কখনও দ্বিধা করবে না। ক্ষমা চাইবে, ক্ষমা করবে!
১৫) রান্না হলো গিয়ে একটা বিরাট বড় লাইফ স্কিল। রান্না জানা মানুষগুলোকে কখনও হোস্টেল লাইফ কিংবা প্রবাসে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় না। তাই অন্তত একটা হলেও রান্না শিখে ফেলো। বলা যায় না, কখন কাজে লেগে যায়!
১৬) অপরিচিত কাউকে ফোন করার আদবকায়দা নিয়ে তো আগেই অন্য আরেকটা লেখায় কথা বলেছি। একটা ব্যাপার ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও। রাত ৯ টার পর আর সকাল ৯ টার আগে ভুল করেও প্রয়োজন ছাড়া কোনো অপরিচিত কাউকে ফোন করবে না। এটা বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়।
১৭) আমরা অনেক সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ, গার্ডের ওপর রেগে যাই। “এখনই কেন সিগন্যালটা দিতে হলো?” “কেন আমাকে লাইনে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো?”- এরকম অসংখ্য অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আমাদের। অথচ আমরা আসলে ভুলে যাই এই মানুষগুলো তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্বটুকুই পালন করছে, ওরা যা করছে সেগুলো ইচ্ছাকৃত নয়। তাই কর্তব্যরত কারও ওপর বিরক্ত হয়ে কখনও তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না।
১৮) যুগ ডিজিটাল, আমাদের কাজকর্ম ডিজিটাল। আর সব ডিজিটালের চক্করে পড়ে আমাদের জীবনও হয়ে গেছে যান্ত্রিক। বছরে অন্তত একটা দিন এই ডিজিটাল দুনিয়া থেকে ছুটি নাও। মুঠোফোন কিংবা ডেস্কটপের চৌকো জগতের বাইরেও একটা বর্ণিল জগত আছে। সেটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করো। দেখবে শান্তি পাবে।
১৯) জীবনে চলার জন্যে শিখে ফেলো তিনটি লাইফ স্কিল। সাঁতার কাটা, গাড়ি চালানো আর সাইকেল চালানো এই তিনটি লাইফ স্কিল জানা থাকলে তুমি এগিয়ে থাকবে অনেকের চেয়ে। আর তোমার জীবনটাও হবে তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ।
২০) তোমার জন্মদিন তুমি বাদে আর যার কাছে জীবনের সবচেয়ে বিশেষ দিন সেটা কি জানো? ঠিক ধরেছো। তোমার মায়ের কাছে তোমার জন্মদিনটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বিশেষ দিন। নিজের জন্মদিনে তাই বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি আর আড্ডার ফাঁক থেকে কিছুটা সময় বাঁচিয়ে নিজের মায়ের জন্যে রেখো। তোমার জন্মদিনে তোমার মাকে সময় দাও।
২১) ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করতে শেখো নিজেই। ছোটখাটো সমস্যা বলতে, বাল্ব লাগানো কিংবা খোলা, মেইন সুইচ চেকিং এর মতো ব্যাপারস্যাপার আর কী। ইলেক্ট্রিসিটি আর গ্যাসের তো ভরসা নেই। ধুপধাপ গণ্ডগোল পাকিয়ে বিপদে ফেলায় এরা আবার বেশ পটু।
দেখলে তো, ইন্টারনেট থেকেই কতগুলো লাইফ হ্যাক শিখে গেলে। এরপর থেকে বাবা-মা যখন তোমার গোল্লায় যাওয়ার অপরাধে ইন্টারনেটকে আসামী বানাবে তখন এইরকম কয়েকটা ট্রিক কাজে লাগিয়ে দেখিয়ে দিও।
নেভার স্টপ লার্নিং (বেস্টসেলার | ২০১৮)
- আয়মান সাদিক