19/12/2023
🇨🇦 কানাডায় বাংলাদেশীদের অবস্থান
শক্তিশালী হচ্ছে 🇨🇦
#দিন দিন কানাডায় বাংলাদেশীদের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। রাজনীতি, চাকরি ও ব্যবসায় বাঙালিরা নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন এবং করছেন। রাজনীতিতে বাংলাদেশী হিসেবে ডলি বেগমের সাফল্য এসেছে বেশ কয়েক বছর আগে। তার পথ ধরে অনেক বাংলাদেশী এখন কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে ফাইট দিচ্ছেন।
কেউ কেউ রাজনীতিবিদ হিসেবে সফলতার কাছাকাছি চলে এসেছেন। ফেডারেল ও প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে এখন বাংলাদেশী প্রার্থীদের দেখা মেলে। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যেও ধীরে ধীরে এগোচ্ছে বাংলাদেশীরা। কানাডার জনপ্রিয় কফিশপ, ডমিনাস পিজা, পিজা পিজাসহ বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক এখন বাংলাদেশীরা। নামি মিষ্টির দোকান প্রিমিয়াম সুইটস কানাডার অন্টারিও প্রদেশে বেশ নাম ডাক।
মোটা দাগে বলতে গেলে ব্যবসায়ী হিসেবে বাংলাদেশীরা কানাডার মূলধারার সঙ্গে বেশ ভাল ভাবেই মিশে গিয়েছেন। অনেক বাংলাদেশী কানাডার স্বাস্থ্যসেবা সেক্টরে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অন্টারিও প্রদেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী কানাডিয়ান বসবাস করেন। এর মধ্যে জিটিএ (গ্রেটার টরন্টো এরিয়া) এলাকায় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী বসবাস করেন। স্কারবরো ও ইস্ট ইয়র্কে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী বসবাস করছেন। ইস্ট ইয়র্কের বাংলা টাউন হিসেবে খ্যাত ডেনফোর্থে গেলে মনে হবে যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। সবাই বাংলায় কথা বলছেন। মারহাবা, নিশিতা ও সরকারসহ বিভিন্ন গ্রোসারিতে পছন্দের দেশী বাজার করছেন। মক্কা, ঘরোয়াসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ঝালমুড়ি, চা, চটপটি, তেহারি গিলছেন।
কানাডার সরকারি বিভিন্ন চাকরিতে বাংলাদেশীরা নিজের জায়গা বেশ পোক্ত করে ফেলেছেন। টরন্টো সিটি, মারখাম সিটি, ডারহাম রিজিয়নসহ বিভিন্ন রিজিয়নে বাংলাদেশীরা চাকরি করছেন। এর বাইরে কানাডার জনপ্রিয় টিডি, আরবিসি, স্কশিয়াসহ বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশীরা চাকরি করছেন।
কানাডার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের সংখ্যা বাড়ছে। কানাডার রাজনীতিতে এখন বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ ও সাফল্য অর্জনের পরিসংখ্যান বেশ উজ্জ্বল। স্থানীয় পর্যায়ে তো বটেই, দেশটির জাতীয় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে এসেছেন অনেকে। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ফেডারেল নির্বাচনে আটজন বাংলাদেশী-কানাডিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরা সবাই ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি, এনডিপি ও গ্রিন পার্টির সদস্য।
এ বছর জুনে অনুষ্ঠিত কানাডার প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে তিনজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এদের মধ্যে স্কারবরো সাউথওয়েস্ট থেকে ডলি বেগম টানা দুবার প্রভিন্সিয়াল সরকারের এমপি নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়, এনডিপির অন্টারিও প্রভিন্সের ডেপুটি লিডার নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশী-কানাডিয়ানরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ব্যবসায়ও এগিয়ে বাংলাদেশী-কানাডিয়ানরা। কানাডায় দিন দিন বাড়ছে অভিবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা। একসময় বিভিন্ন শহরে ভারতীয়সহ অন্য দেশের অভিবাসীরা একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও দৃশ্যপট পাল্টেছে। ব্যবসা করে অনেক বাংলাদেশী এরই মধ্যে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। বিভিন্ন মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা ছাড়াও বাংলাদেশীরা রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি, মিষ্টির দোকান, পিঠাঘর, বুটিক শপসহ নানা রকম পসরা সাজিয়ে দোকান খুলে বসেছেন।
কানাডায় বর্তমানে বাংলাদেশীর সংখ্যা কত তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারেন না। তবে সব মিলিয়ে কানাডায় বাংলাদেশীর সংখ্যা তিন-পাঁচ লাখ বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। আর এ সংখ্যা বাড়ছে। কানাডার সবচেয়ে বড় শহর টরন্টোয় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী থাকেন।
৮০ হাজার থেকে এক লাখের মতো। কানাডার ব্যবসা ক্ষেত্রে অনেক বাংলাদেশী এরই মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছেন। দোকানসহ নানা ছোট ব্যবসা তো আছেই, বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারও খুলেছেন বাংলাদেশীরা। এছাড়া ড্রাইভিং স্কুল পরিচালনা করছেন কয়েকজন বাংলাদেশী।
শুধু নিজস্ব কমিউনিটি নয়, অন্য দেশের অভিবাসীরাও এখন তাদের কাস্টমার। বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট, সুইস বেকারি অ্যান্ড ফাস্টফুড, মক্কা রেস্টুরেন্ট, রেড হট তন্দুরি কাবাব অ্যান্ড কারি, লবঙ্গ, মমস কিচেন ও আড্ডা। গ্রোসারির মধ্যে মারহাবা সুপার মার্কেট, সরকার ফুডস, নিশিতা ফার্ম ফ্রেশ, চকবাজার ও তাজমহল গ্রোসারি উল্লেখযোগ্য। বুটিক হাউসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেশী দশ ও শাড়ি হাউস।
বর্তমানে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় প্রচুর বাংলাদেশী অংশ নিচ্ছেন। কমিউনিটির অনেকেই বাড়ি কিনতে তাদের দেশীয় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। টরন্টোয় বাংলাদেশী আইনজীবীও রয়েছেন, যারা বাড়ি কেনা থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্ষেত্রে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশীদের মালিকানায় কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জও রয়েছে টরন্টোয়। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো আয়োজন করে থাকে।
অনেকেই বাংলাদেশ থেকে জনপ্রিয় শিল্পীদের নিয়ে এসে সাংস্কৃতিক আয়োজন উপহার দেন সবাইকে। বাংলাদেশী সংস্কৃতি পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে নাচ, গান, শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চার স্কুলও পরিচালনা করছেন কয়েকজন। কানাডার বড় শহরগুলো থেকে বাংলা ভাষায় সাপ্তাহিক ভোরের আলো, বাংলা মেইল, বাংলা কাগজসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র বের হচ্ছে। এছাড়া প্রবাসী টিভি, নন্দন টিভি ও এনআরবি টিভিসহ বিভিন্ন আইপি টিভি চ্যানেল রয়েছে।
সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ