27/04/2024
I feel very much proud to be the owner of ISHARA HOMESTAY KALIMPONG
GUEST REVIEW
বসন্তের কোকিলের কুহু, সমুদ্রের সীমাহীন ঢেউ, গাছ ভর্তি লাল কৃষ্ণচূড়া, শরতের নীল আকাশ--- প্রকৃতির এই রূপকে সবাই ভালোবাসে। শীত আর বসন্তে মনটা ছুটে যায় ঘরের বাইরে। এবার কটা দিন কাটিয়ে এলাম কালিংপং থেকে মিনিট কুড়ি গাড়িতে করে "মহাকাল দারা" নামে এক পাহাড়ি গ্রামে। যেখানে ইশারা হোমস্টের ঘরে ভোরবেলা ঘুমিয়ে থাকলে, অবশ্যই নাম না জানা হলুদ নীল কালো সাদা অজস্র পাখি, তোমার বিছানার পাশের কাচের জানালায় এসে, প্রতিদিন তোমার ঘুম ভাঙিয়ে দেবে। ওরা ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়ে একটাই কথা বলতে আসে "আমাদের এই প্রকৃতি কত সুন্দর, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সেটা একবার তাকিয়ে দেখো!"
ঘুম চোখে ঠান্ডার ভেতরে গায়ে হালকা চাদর চড়িয়ে, চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে বসলে, মেঘ এসে তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ওই প্রকৃতির রূপে তুমি চা পান করতে ভুলে যাবে। মেঘেদের কি ভীষণ ব্যস্ততা পাহাড়ের সংসারে ছুটে বেড়াবার!অফুরন্ত রংবেরঙের ফুলেদের কুয়াশা যখন তখন ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে । মুঠোফোনে এই প্রকৃতিকে এখানে বেঁধে রাখতে পারবে না। এখানকার প্রকৃতি তোমার হৃদয়ে আত্মীয়তার বন্ধনে বাসা বেঁধে থেকে যাবে চিরদিন।
ভোরবেলা থেকে পাহাড়ের গায়ে স্কোয়াস, বিনস্, সরষে শাক, ছোট লাল আলু, ওখানকার মানুষেরা গান গাইতে গাইতে চাষ করছে। আর তোমার দুপুরের, রাতের খাবারে গরম গরম সেসব দিয়ে পরিবেশন করবে ইশারার টিকারাম। হাসিমুখে সন্ধ্যের কফির সাথে পাবে ওদের ক্ষেতের সম্পূর্ণ কেমিক্যাল হীন সবজির পকোড়া। ভোরবেলা চা খেয়ে হেঁটে এসো সামনের রাস্তায়। আর বুক ভরে টেনে নাও বিশুদ্ধ অক্সিজেন। ব্যালকনিতে দাঁড়ালে তিস্তা নদী দূরে তোমাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে। প্রকৃতিকে ভালোবেসে তুমি হয়তো নেমে গেছো একটু নিচে কোন স্কোয়াসের ক্ষেতে, শুনতে পাবেই অনেক পাখিদের গান। অসম্ভব ভদ্র বাচ্চা ছেলে আমাদের ড্রাইভার পূর্না লেপচার কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ওরা শুধু চায় একটু ভদ্র ব্যবহার। ওদের ভেতরে এখন শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। তাই খারাপ ব্যবহারে ওরা কিন্তু প্রতিবাদ করতে জানে।
ধারে কাছে দেখবার মত অনেক কিছু আছে। সব বলে দিলে আকর্ষণ হারিয়ে যাবে তোমাদের। সকালবেলার জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে পরো পূর্নার টাটা সুমোতে। ফিরে আসতে একটু বেশি বেলা হলেও, তোমার জন্য গরম গরম খাবার নিয়ে টিকারাম হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।
বুকে একরাশ ভালো লাগাকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল চারটেয় টিকারাম কে বললাম "ঘরে বসে থাকতে মন চাইছে না ভাই।"
"তাহলে এক কাজ করুন এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে পাহাড়ের উপরে একটা শিব মন্দির আছে দেখে আসুন। বেশি সময় লাগবে না।"
পাহাড়ি পথে ওরা চলতে অভ্যস্ত। আমাদের দম বেরিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি, আবার হাঁটছি। খুব সুন্দর মহাদেবের মন্দির। অত উঁচুতে সামান্য কিছু মানুষের বাস, যেখানে কত সুন্দর শ্রদ্ধায় সেখানকার মানুষ মন্দির বানিয়েছে, দেখে খুব ভালো লাগলো। ওই বাচ্চা মেয়েটি আমাদের মন্দিরে পৌঁছে দিয়ে ওর বাড়িতে ফিরে গেল। কিছুক্ষণ মন্দির প্রাঙ্গণে বসে নেমে আসতে হল।
ঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে ওই গ্রাম কিন্তু তোমাকে ঘরে বন্দী করে দেবে। বাইরে বেরোতে তোমার গা ছমছম করবে। ধারে কাছে একটাও দোকান নেই। রাস্তায় লাইট নেই। কত রকম পোকা মাকড়ের ডাক! রাত পাখিদের রাজত্ব! মেঘ কুয়াশার অন্য রূপে অদ্ভুত এক পরিবেশ! দূরে পাহাড়ের আলোগুলো পাহাড়ি মানুষের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
বাড়ির মত ভেতো বাঙালির মাছ ভাতের আশা না রেখে, দু তিনটে দিনের জন্য প্রকৃতিকে ভালোবেসে ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে এসো মহাকাল দারা।
জরুরী:- প্লাস্টিক বোতল, কাঁচের বোতল, চিপস্, কুরকুরে, বিস্কুটের প্যাকেট, পাতলা প্লাস্টিক ব্যবহার করে পাহাড় কে নোংরা করবেন না।