20/08/2023
প্রায় একশো বছর আগে, ১৯১৮-র ৯ জুলাই তোশিকো-রাসবিহারীর গোপন বিয়ের সাক্ষী থাকলেন গুটিকয় মানুষ। জাঁকজমকে যে বিয়ের সাড়া ফেলার কথা, সেখানে বর বা কনে কোনও পক্ষের কোনও আত্মীয়-বন্ধু পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন না...💫🌻
তোশিকোর মা কোকো তখনও শয্যাশায়ী। দোতলা থেকে দেখলেন, অতি সাধারণ পোশাকে তাঁর মেয়ে চলেছেন বাবার হাত ধরে। ট্রেনে চড়ে টোকিয়ো, তোয়ামার বাড়ি। সেখানে তোশিকোর বিয়ের পোশাক কিনে রেখেছিলেন তোয়ামার স্ত্রী। তিনিই সাজালেন কনেকে। অনুষ্ঠানে পিতার ভূমিকায় রইলেন তোয়ামা। তোশিকো সোমা হয়ে উঠলেন তোশিকো বসু। পরবর্তী কালে জাপানে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন ‘ দ্য লিভিং ফ্লেশ শিল্ড টু দি ইন্ডিয়ান ইন এগজাইল ’ নামে।
🇮🇳 #স্বাধীনতার_নায়করা পর্ব ~ ১৮ 🇮🇳
বিয়ের পর শিবা অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় ভাড়াবাড়িতে উঠলেন নবদম্পতি। কিছু দিনের মধ্যেই গোয়েন্দারা টের পেল। শুরু হল বাড়ি বদল। আয়োমা মিনামি মাচি সেখান থেকে আয়োমা তাকাগি মাচি— কোথাও দু’মাস, কোথাও তিন। এমন বাড়ি বাছা হত যেগুলো হয় জঙ্গলের মধ্যে, নয়তো সমুদ্রের পাড়ে বা কাদাজমির ধারে। অধিকাংশ বাড়িতে ভাল করে সূর্যের আলো ঢুকত না। দিনের বেলাতেও অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকত ঘর।
ভিতরে-ভিতরে অনুতাপে দগ্ধ হচ্ছিলেন রাসবিহারী। তাঁর জীবনের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছেন বলেই না এমন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন তোশিকো। আর এই জীবনের সঙ্গে জীবন মেলানোটাও হয়তো চাপে পড়ে, বড়দের কথা রাখতে। রাসবিহারী তোশিকোকে ভালবেসেছেন, কিন্তু তাঁর মনের তল পাননি এখনও। এই মেয়ে সব দায়িত্ব পালন করছেন মুখ বুজে। আবেগের বহিঃপ্রকাশেও অতি সংযমী নববধূটি।
তখন তাঁরা চিবায় সমুদ্রের ধারের একটি বাড়িতে। এক দিন প্রশ্নটা করেই ফেললেন রাসবিহারী, ‘‘তুমি আমাকে বিয়ে করেছ, কিন্তু আমায় ভালবেসেছ কি? আমি সত্যিটা জানতে চাই।’’ প্রশ্নের আকস্মিকতায় নিষ্পলকে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকেন তোশিকো। চোখের জল এসে দুই গাল ভিজিয়ে দেয়। অস্থির রাসবিহারী তখন বেপরোয়া, উত্তেজিত। বলছেন, ‘‘বলো, তুমি কি আমার জন্য জীবন দিতে পারো?’’ কথা শেষ না হতেই তিরবেগে খোলা জানালার দিকে ছুটলেন তোশিকো। ঝাঁপ দিতে যাবেন, পিছন থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন রাসবিহারী।
এ এক আশ্চর্য প্রেমকাহিনি। সরল হিসেবে মাত্র আট বছর তার মেয়াদ, কিন্তু তোশিকোর অকালমৃত্যুর পর বাদবাকি জীবন সেই ভালবাসার মধ্যেই থেকেছেন রাসবিহারী বসু। তোশিকোর মা কোকো তাঁকে আবার বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।