15/02/2022
পাঁপড়াকচা আর পাঁপড় ভাজা
হটাৎ একটা ফোন এলো ভ্রমণ পাগলীর "দাদা একটা কোথাও ঘুরে আসি চলো" বলালম পয়সা নেই খুব খারাপ সময় চলছে, একটু মিইয়ে যাওয়া মুড়ির মত একটা আওয়াজ এলো আচ্ছা। চা চুমুক দিতে দিতে ভাবছি যে জাক বাবাএই লম্বা সপ্তাহান্তে একটু শহর পরিক্রমা করে কাটিয়ে দেব ব্যাস এবার আমার গিন্নির ফোন টা বেজে উঠলো বুজলাম না এ ছাড়বার নয়।কাটা কাটা কথোপকথন এ বুজলাম যে যদি আমার পয়সার খুব অসুবিধা থেকে তাহলে ও এখন সব খরচ করে নেবে। হুম্ম বুঝেই গেলাম আমার গিন্নির কিন্তু কিন্তু থাকলেও এই টুর টা করতেই হবে, ফোন টা চেয়ে নিয়ে বললাম কাল রাতে চলে এসো পরশু ভোর ৫ টায় রহনা দেব।
আগের দিন ব্যাগ গুছিয়ে তরকা রুটি খেয়ে রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম সকালে বেরোতে হবে প্রায় ৩০০কিলোমিটার রাস্তা, ওহ্ কোথায় যাচ্ছি সেটা তো বলা হয়নি আমরা যাচ্ছি পুরুলিয়া তবে একদম একটা অচেনা গ্রামের পথে আমাদের যাত্রা।
সুপ্রভাত করে আমরা ৫জন শুরু করলাম আমাদের যাত্রা তবে ৫টা না ওটা হলো সকাল ৭টা, চকচকে করে মোছা আমাদের বাহণকে আর একটু ফিনিশিং টাচ দিয়ে আমরা ব্যাগ ট্যাগ ভালো করে ডিকি ভোরে এগিয়ে চললাম আমাদের প্রথম বিরতি জয়পুর জঙ্গল। তবে মোটেও সুখকর হলো না আমাদের সকাল বেশ কালো করে বৃষ্টি নামলো তখন আমরা ডানকুনি পার করছি ৫০ - ৫৫ কিলোমিটার মত গিয়ে অগত্যা গাড়ি দাঁড় করালাম পেটের ইদুর টাকে ঠান্ডা করার জন্যে। আর এত বৃষ্টির জন্যে জোরে গাড়ি চালানো যাচ্ছিলনা তাই গরম ঘুগনি মুড়ি ডিম ভাজা দিয়ে পেট ভরালাম, আর চা বিরতির জন্যে সন্দীপ এর ফোন এসে গেলো চাঁপাডাঙ্গা পার করে ওর ব্যাংকের সামনের চা দোকানে চা খাওয়া হবে।
আরো ১৮ কিমি পার করে সন্দীপের সাথে দেখা হলো ও সতর্ক করলো এখান থেকে আরামবাগের রাস্তা খুবই খারাপ। গরম তেলে লুচি ভাজার মত আমার গাড়ি চলল হেলে দুলে। আরামবাগ পার করে বেশ ভালো রাস্তা, এক্সসেলেটারে লোড দিলাম কোথাও না দাঁড়িয়ে আমরা ফটোগ্রাফ বিরতি নিলাম জয়পুর জঙ্গলের মধ্যে, সবুজ পাতায় জল পড়ে বেশ মায়াবী লাগছে জয়পুর, ঘন জঙ্গল উপরে কালো মেঘের ছায়া আর হালকা বৃষ্টির চাদর মনে করিয়ে দিচ্ছিল গায়ের চাদরের কথা। আর কিছুক্ষণ পড়ে আমরা পোড়ামাটির জেলা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পার করে দু - ধারে সবুজ শাল পিয়ালের জঙ্গল আর লাল মাটির উঁচু নিচু ভূমিরূপের মাঝ বরাবর ঝক ঝকে কালো রেখা ধরে এগিয়ে চললাম বলরামপুর ( বরাভূম) অভিমুখে বেলা বেড়ে কখন যে Good afternoon হয়ে গেছে লক্ষ্য করিনি। পেটের ইদুরটা খুব লাফাচ্ছে, টুকটাক খাবার চলছে তাই বেশি খিদে পাচ্ছে না, তবে গুগল বললো আর ৫০কিলোমিটার বাকি আছে আমাদের গন্তব্য মানে আমরা প্রায় ২৪০ কিমি পার করে এসেছি।
মানবাজার সিন্দ্রি মেদিনিতার বড়বাজার বাঁশগড় বড়াভূম রেল স্টেশন পার করে আমরা চললাম আমাদের Homestay গর্গাবুরু ইকো Stay এর উদ্দেশ্যে। এখন ৩:৩০ বেজে গেছে এদিকে মেঘ জমতে শুরু করেছে homestay এর দিদি বার বার ফোন করে জানতে চাইছিলেন আমাদের অবস্থান যায় হোক এবার ফাইনালি উনি বললেন যে বাঁশিতাঁর দিয়ে যেনো আমরা আসি কারণ ওই রাস্তাটা একটু ভালো। বাঁশিতাঁর থেকে ডানদিকের জঙ্গলের পথে ঢুকে গেলাম,বেশ ঘন জঙ্গল আর কালো মেঘে ঢাকা আছে প্রকৃতির রূপালী সৌন্দর্য , ছোট ছোট নালা আর ভাঙ্গা চোরা পিচ আর কংক্রিট পথ পার করে কোনো ছোট্ট আধিবাসী গ্রাম পাবো ভাবিনি, আর সেই অবাক করা মুহূর্ত গুলো সামনে এলো আবার, পরম আতিথেয়তায় ভরা চোখগুলো তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে বাচ্চা গুলো এক দৌড়ে মায়ের পা জড়িয়ে উকি দিচ্ছে আমাদের দিকে, কালো মুখের ভিতর থেকে ফুটে ওঠা রূপ আর একগাল হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে কিছু মেয়ে বৌ রা, পরনের জির্ণ শাড়ির একটু ঘোমটা টেনে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে আলতো ভাবে আমাদের দেখে নিল একজন, পাড়ার বয়স্ক কিছু মানুষ বিকেলের আড্ডা জমাতে বসছে খাটিয়া পেতে।
আমরা আমাদের গর্গবুরু ইকো স্টে পৌঁছালাম তখন ৩:৪৫ পড়ন্ত বিকেলের কোনো চিহ্ন নেই পাহাড় জঙ্গল জুড়ে কালো মেঘের আনাগোনা। কিছুটা লাগেজ নামিয়ে আমরা সবাই আগে খেতে বসবো ঠিক করলাম ,আরো একদল পর্যটক তখন বেরিয়ে যাচ্ছে রুম ছেড়ে। আমাদের রুম দেখিয়ে দিদি আমাদের ওয়েলকাম কিট ও ওয়েলকাম ড্রিংকস দিয়ে গেলেন রুমে। একদম পুরনো ঘরানার মাটির বাড়ি মাটির মেঝে পুরনো দিনের সবুজ রং করা কাঠের জানালা দরজা, অর্ধ বৃত্তাকার টালির ছাউনি দেওয়া ঘরের ভিতর চাঁদোয়ার নিচে মাটির তৈরি খাটের উপর সুন্দর মোটা বিছানা পাতা বেশ একটা সঠিক পুরনো গ্রামের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। গামছা কাপড়ের ব্যাগ এর ভিতর সুন্দর বাঁশের তৈরি টুথ ব্রুস আর কিছু সাবান সম্পু, বাঁশের ঝুড়ির ভিতর রাখা আছে টাওয়েল একদমই গ্রাম্য বাড়ির রূপ ফুটে উঠেছে। অনেক্ষন খালি পেটে থেকে সামনে সাজানো রাজভোগ খেতে বসলাম খড়ের চাউনি দেওয়া ডাইনিং এ, খাবার সাজানোর ফাঁকে আমি আর শীর্ষেন্দু হেঁটে এলাম পাদ্রী লেকের সামনে থেকে l সবুজে ঘেরা গর্গবুরুর পাদদেশে সবুজ জলের একটা প্রাকৃতিক জলাধার উপরে কালো মেঘের চাদর, এই আধো আলো আঁধারির মধ্যে লেকের জলে দেখা যাচ্ছে কেউ মাছ ধরছে ছোট্ট টিউবের নৌকা করে। হালকা হওয়ায় ছোট ছোট ঢেউ এর মাথায় ফুটে উঠেছে দুটো পাহাড়ের মাথায় প্রতিচ্ছবি। প্রকৃতি তার আপন স্নেহে লুকিয়ে রেখেছে তার অনন্য রূপ। দুর থেকে গিন্নির গলা পেলাম খেতে এসো , কিছুক্ষনের জন্যে টাটা করে আমি ফিরে এলাম লাঞ্চ করতে।
বাসমতি চালের ভাতের উপর ঘি সাথে ডাল সবজি মাছের ঝাল আলু ভাজা চাটনি পাঁপড় ভাজা আর মিষ্টি দহি সাজানো আছে টেবিলে স্বাদে একদম রাজভোগ, টেনে দিলাম বেশ অনেকটা খিদের পেটে।
আঁধার নামার পর কি হলো সেটা জানতে ইচ্ছা করছে কি???
হা আমরা রাত ১০টার সময় পাঁপড়াকচা গেছিলাম ,,,,,,,,,,,,
খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি ,,,,,,,
ধন্যবাদ বৈরাগী মন
For Booking
Contact with us
CHUTIRDES Chutir Desh
www.chutirdesh.com
Debmalya 90384 14117
Subhadip 9062926879