30/08/2021
তাওয়াফের ওয়াজিব কয়টি ও কী কী?
উঃ- ৫টি, সেগুলো হলো :
অযূ করা।
সতর ঢাকা।
হাজ্রে আসওয়াদকে বামপাশে রেখে তাওয়াফ করা।
তাওয়াফের পর দু’রাকআত সালাত আদায় করা।
তাওয়াফ কী? এটা কিভাবে করতে হয়?
তাওয়াফ হল কাবা ঘরের চারপাশে ৭ বার প্রদক্ষিণ করা। এ তাওয়াফ করার নিয়মাবলী নীচে উল্লেখ করা হলঃ
তাওয়াফ শুরু করার পূর্বেই তালবিয়াহ পাঠ বন্ধ করে দেয়া। এরপর মনে মনে তাওয়াফের নিয়ত করা। নিয়ত না করলে তাওয়াফ শুদ্ধ হবে না। নিয়ম হল প্রথমে ‘হাজারে আসওয়াদ (কাল পাথরের) কাছে যাওয়া, “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে এ পাথরকে চুমু দিয়ে তাওয়াফ কার্য শুরু করা। কিন্তু রমাযান ও হজ্জের মৌসুমে প্রচণ্ড ভীড় থাকে। বয়স্ক, বৃদ্ধ ও মহিলাদের জন্য পাথর চুম্বনের কাজটি প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের ভীড় দেখলে ধাক্কাধাক্কি করে নিজেকে ও অন্য হাজীকে কষ্ট না দিয়ে পাথর চুমু দেয়া ছাড়াই “হাজ্রে আসওয়াদ” থেকে তাওয়াফ শুরু করে দিবেন। কাবাঘরের “হাজারে আসওয়াদ” কোণ থেকে মসজিদে হারামের দেয়াল ঘেষে সবুজ বাতি দেয়া আছে। এ রেখা বরাবর থেকে তাওয়াফ শুরু করে আবার এখানে আসলে তাওয়াফের এক চক্র শেষ হবে। এভাবে ৭ চক্র পূর্ণ করতে হবে। ভীড়ের পরিমাণ যদি আরো বেশী দেখতে পান এবং গ্রাউন্ড ফ্লোরে তাওয়াফ করা কঠিন মনে করেন তাহলে দু’তলা বা ছাদের উপর দিয়েও তাওয়াফ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সময় একটু বেশী লাগলেও ভীড়ের চাপ থেকে রেহাই পাবেন। ছাদের উপর তাওয়াফ করলে দিনের প্রখর রৌদ্রতাপ ও প্রচণ্ড গরমে না গিয়ে রাতের বেলায় করবেন। বেশী ভীড়ের মধ্যে ঢুকে মানুষকে কষ্ট দেবেন না। দিলে ইবাদত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কাবাঘরকে বামপাশে রেখে তাওয়াফ করতে হয়। তাওয়াফের প্রথম চক্রে “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে নীচের দোয়াটি পড়তে পারলে ভাল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন। দোয়াটি হল :
اَللَّهُمَّ إِيْمَانًا بِكَ وَتَصْدِيْقًا بِكِتَابِكَ وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ وَاتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مَحَمَّدٍ -صلى الله عليه وسلم-
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার প্রতি ঈমান এনে, তোমার কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণের জন্য তোমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের অনুসরণ করে এ তাওয়াফ কার্যটি করছি।
প্রথম তিন চক্রে পুরুষগণ ছোট ছোট পদক্ষেপে দৌড়ের ভঙ্গিতে সামান্য একটু দ্রুত গতিতে চলতে চেষ্টা করবেন। আরবীতে এটাকে ‘রম্ল’ বলা হয়। বাকী চার চক্র সাধারণ হাঁটার গতিতে চলবেন। মক্কায় প্রবেশ করে প্রথম যে তাওয়াফটি করতে হয় শুধু এটাতেই প্রথম তিন চক্রের রম্লের এ বিধান। এরপর যতবার তাওয়াফ করবেন সেগুলোতে আর “রম্ল” করতে হবে না। মহিলাদের রম্ল করতে হয় না।
পুরুষেরা ইহরামের গায়ের কাপড়টির একমাথা ডান বগলের নীচ দিয়ে এমনভাবে পেঁচিয়ে দেবেন যাতে ডান কাঁধ, বাহু ও হাত খোলা থাকে। কাপড়ের বাকী অংশ ও উভয় মাথা দিয়ে বাম কাঁধ ও বাহু ঢেকে ফেলবেন। এ নিয়মটাকে আরবীতেও اضطباع (ইয্তিবা) বলা হয়। এটা শুধুমাত্র প্রথম তাওয়াফে করতে হয়। পরবর্তী তাওয়াফগুলোতে এ নিয়ম নেই, অর্থাৎ ডান কাঁধ ও বাহু খোলা রাখতে হয় না।
কাবাঘরের চারটি কোণের মধ্যে একটি কোণের নাম হল “রুক্নে ইয়ামানী”। হাজ্রে আসওয়াদ-এর কোণটিকে প্রথম কোণ ধরে তাওয়াফ শুরু করে আসলে “রুক্নে ইয়ামানী” হবে চতুর্থ কোণ। এ “রুক্নে ইয়ামানী”র পাশে এসে পৌঁছলে ভীড় না হলে এ কোণকে ডান হাত দিয়ে ছুইতে চেষ্টা করবেন। কিন্তু সাবধান, এ রুক্নে ইয়ামেনীকে চুমু দেবেন না, এর পাশে এসে হাত উঠিয়ে ইশারাও করবেন না এবং সেখানে ‘আল্লাহু আকবার’ও বলবেন না। ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন হাজ্রে আসওয়াদে পৌঁছে। তাওয়াফ শুরু করবেন “হাজ্রে আওয়াদ” থেকে এবং শেষও করবেন সেখানে গিয়েই।
রুক্নে ইয়ামেনী ও হাজ্রে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে নিম্নের এ দোয়াটি পড়া মুস্তাহাব :
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থ : হে আমাদের রব! আমাদেরকে তুমি দুনিয়ায় সুখ দাও, আখেরাতেও আমাদেরকে সুখী কর এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে বাঁচাও।[৪]
তাওয়াফের প্রত্যেক চক্রেই হাজ্রে আসওয়াদ ছুঁয়া ও চুমু দেয়া উত্তম। কিন্তু প্রচণ্ড ভীড়ের কারণে এটি খুবই দূরূহ কাজ। সেক্ষেত্রে প্রতি চক্রেই হাজ্রে আসওয়াদের পাশে এসে এর দিকে মুখ করে ডান হাত উঠিয়ে ইশারা করবেন। ইশারাকৃত এ হাত চুম্বন করবেন না। ইশারা করার সময় একবার বলবেন بسم الله الله أكبر ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’।
তাওয়াফরত অবস্থায় খুব বেশী বেশী যিক্র, দোয়া ও তাওবা করতে থাকবেন। কুরআন তিলাওয়াতও করা যায়। কিছু কিছু বইতে আছে প্রথম চক্রের দোয়া, ২য় চক্রের দোয়া ইত্যাদি। কুরআন হাদীসে এ ধরনের চক্রভিত্তিক দোয়ার কোন ভিত্তি নেই। যত পারেন একের পর এক দোয়া আপনি করতে থাকবেন। এ বইয়ের ২১ ও ২২ নং অধ্যায়ে কিছু দোয়া দেয়া আছে। এ দোয়াগুলো করতে পারেন। তাছাড়া আপনার নিজ ভাষায় আপনার মনের কথাগুলো আল্লাহ্র কাছে বলতে থাকবেন, মিনতি সহকারে চাইতে থাকবেন। দলবেঁধে সমস্বরে জোরে জোরে দোয়া করে অন্যদের দোয়ার মনোযোগ নষ্ট করবেন না। আরবীতে দোয়া করলে এগুলোর অর্থ জেনে নেয়ার চেষ্টা করবেন যাতে আল্লাহর সাথে আপনি কি বলছেন তা যেন হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারেন।
তাওয়াফের ৭ চক্র শেষ হলে দু’কাঁধ এবং বাহু ইহরামের কাপড় দিয়ে আবার ঢেকে ফেলবেন এবং “মাকামে ইব্রাহীমের” কাছে গিয়ে পড়বেন :
وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلّىً
অর্থ : ইব্রাহীম (পয়গাম্বর)-এর দণ্ডায়মানস্থলকে সালাত আদায়ের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো।[৫]
অতঃপর তাওয়াফ শেষে এ মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে এসে দু’রাকআত সালাত আদায় করবেন। ভীড়ের কারণে এখানে জায়গা না পেলে মসজিদে হারামের যে কোন অংশে এ সালাত আদায় করা জায়েয আছে। মানুষকে কষ্ট দেবেন না, যে পথে মুসল্লীরা চলাফেরা করে সেখানে সালাতে দাঁড়াবেন না। সুন্নত হলো এ সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর প্রথম রাকআতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস পড়া।
এরপর যমযমের পানি পান করতে যাওয়া মুস্তাহাব। পান শেষে যমযমের কিছু পানি মাথার উপর ঢেলে দেয়া সুন্নাত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন। (আহমাদ)
মুস্তাহাব হলো পুনরায় হাজ্রে আসওয়াদের কাছে গিয়ে এটা স্পর্শ করা ও চুম্বন করা। সম্ভব হলে এটা করবেন। আর ভীড় বেশী থাকলে এ কাজটা করতে যাবেন না।
বেগানা পুরুষের সামনে মহিলারা হাজারে আসওয়াদ চুম্বনের সময় মুখ খোলা রাখবেন না। কাবার গা ঘেঁষে পুরুষদের মধ্যে না ঢুকে মেয়েদের একটু দূর দিয়ে তাওয়াফ করা উত্তম।
তাওয়াফ করার সময় যদি জামা’আতের ইকামত দিয়ে দেয় তখন সঙ্গে সঙ্গে তাওয়াফ বন্ধ করে দিয়ে নামাযের জামা’আতে শরীক হবেন এবং ডান কাঁধ ও বাহু চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলবেন। নামায রত অবস্থায় কাঁধ ও বাহু খোলা রাখা জায়েয না। সালাত শেষে তাওয়াফের বাকী অংশ পূর্ণ করবেন।
প্রচণ্ড ভীড়ের কারণে কোন পর মহিলার গা স্পর্শ হলে এতে তাওয়াফের কোন ক্ষতি হবে কি?
না, অযুও ছুটবে না। তবে সতর্ক থাকতে হবে।
তাওয়াফরত অবস্থায় শরীরের কোন স্থান ক্ষত হয়ে গেলে বা ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়লে এতে তাওয়াফের কোন ক্ষতি হবে কি?
উঃ- না।
বিশেষ করে মসজিদে হারামে মুসল্লীর সামনে দিয়ে কেউ হাঁটলে তার গোনাহ হবে কি?
না। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ), তবে মুহাদ্দিস আলবানী (রহ.)-এর মতে হাঁটা জায়েয নয়। সেজন্য সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।
তাওয়াফ শেষে দু’রাক’আত সালাত দিন ও রাতের যে কোন সময় এমনকি নিষিদ্ধ ও মাকরূহ ওয়াক্তেও আদায় করা যাবে কি?
হ্যাঁ। তবে নিষিদ্ধ ৩টি সময়ে নামায না পড়া উত্তম।
তাওয়াফের দু’রাক’আত সালাত শেষে হাত তুলে দোয়া করার কোন বিধান শরীয়তে পাওয়া যায় কি?
না, বরং এটা সুন্নাতের খেলাফ।
তাওয়াফ শেষে কী কী কাজ সুন্নত?
এখানে সুন্নাত হল যমযম পান করতে চলে যাওয়া, কিছু পানি মাথায় ঢেলে দেয়া, অতঃপর সম্ভব হলে পুনরায় হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করা। এরপর সাফা-মারওয়ায় সাঈ করতে চলে যাওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই করেছেন।
রুকনে ইয়ামানী কি চুম্বন করা যাবে?
না, এটা কখনো চুম্বন করবেন না। তবে “রুক্নে ইয়ামানী” স্পর্শ করা মুস্তাহাব।
তাওয়াফের ৭ চক্রের মধ্যে এক চক্র কম হলে তাওয়াফ কি শুদ্ধ হবে?
না।
পরবর্তী দু’রাক’আত সালাত কি তাওয়াফের অংশ?
না। এটা পৃথক ইবাদত।
বহিরাগত লোকদের জন্য হারামে কোনটিতে সাওয়াব বেশী?
নফল নামায নাকি নফল তাওয়াফ?
তাওয়াফ। কারণ তাওয়াফের সুযোগ এখানে ছাড়া দুনিয়ায় আর কোথাও নেই।
নামাযীদের সামনে দিয়ে তাওয়াফরত পুরুষ-মহিলারা হাঁটলে কি তাতে মাকরূহ হবে?
না। এ বিধান মক্কার জন্য খাস।
যে তিন ওয়াক্তে সালাত আদায় নিষিদ্ধ সে সময়ে তাওয়াফ করা কি জায়েয?।
হাঁ। জায়েয।
হায়েয বা নেফাসওয়ালী মহিলারা পবিত্র হওয়ার আগে তাওয়াফ করতে পারবে কি?
না।
যদি তাওয়াফ শেষ করার পর সাঈ শুরু করার পূর্বে কোন মহিলার হায়েয শুরু হয়ে যায় তাহলে কী করবে?
সাঈ করে ফেলবে। কারণ সাঈতে পবিত্রতা অর্জন শর্ত নয়, বরং মুস্তাহাব।
তাওয়াফুল কুদুম বা উমরার তাওয়াফ ছাড়া বাকী সব তাওয়াফ কী পোষাকে করব?
স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করেই করবেন।
“হাজারে আসওয়াদ” ও ‘রুক্নে ইয়ামেনী” স্পর্শ করার ফযীলত জানতে চাই?
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“হাজ্রে আসওয়াদ” ও “রুক্নে ইয়ামেনী”র স্পর্শ গুনাহগুলোকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলে দেয়। (তিরমিযী)
নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা “হাজ্রে আসওয়াদ”কে কিয়ামতের দিন উত্থিত করবেন। তার দু’টি চক্ষু থাকবে যা দ্বারা সে দেখতে পাবে, একটি জিহ্বা থাকবে যা দ্বারা সে কথা বলবে এবং যারা তাকে স্পর্শ করেছে সত্যিকারভাবে এ পাথর তাদের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (তিরমিযী)
তাওয়াফে হাজীদের সাধারণত কী কী ভুলত্রুটি লক্ষ্য করা যায়?
হাজারে আসওয়াদের কাছে এসে দু’হাতে ইশারা দেয়। এটা ভুল। শুদ্ধ হলো এক হাতে দেয়া।
রুক্নে ইয়ামানী হাত দিয়ে ইশারা করে। এটা করা ঠিক নয়।
কিছু লোক তাওয়াফের সময় কাবার চার কোণই স্পর্শ করে। এরূপ করতে যাওয়া ঠিক না।
তাওয়াফের সময় কেউ কেউ কাবাঘর বা এর গেলাফ মুছে। এ মুছার মধ্যে কোন ফযীলত নেই।
কিছু লোক তাওয়াফের সময় দল বেঁধে যিক্র ও দোয়া করে। এটা করবেন না।
এক শ্রেণীর লোক বেরিকেড দিয়ে দল বেঁধে তাওয়াফ করে। অন্যদেরকে কষ্ট দিয়ে এভাবে তাওয়াফ করা উচিত না।
কেউ কেউ মাকামে ইব্রাহীম চুমু দেয় এবং এটাতে হাত দিয়ে মুছে। এসব ভুল কাজ।