08/10/2017
মাত্র ৪ হাজার টাকায় ঘুরে আসুন দার্জিলিং!
পূজার সময় দার্জিলিংয়ের স্ট্রাইক বন্ধ থাকবে ভেবে আগে থেকেই ঢাকা টু তেঁতুলিয়া টিকেট কেটে রেখেছিলাম হানিফ -এ। গাবতলী থেকে উঠলে বিকাল ৫:৩০ এ হানিফের একটা বাস পাবেন যেটা একেবারে বাংলাবান্ধা বর্ডার পর্যন্ত যায়। আমরা উত্তরা থেকে ৮:৪০ এ রওনা দিলাম আর অতিরিক্ত জ্যামের কারণে তেঁতুলিয়া পৌছালাম দুপুর ১:৩০ এ। এখানে দুপুরের খাবার খেয়ে বাসে করে বাংলাবান্ধা পৌঁছলাম যার ভাড়া ছিল ২০ টাকা। বাস একটু আগে নামিয়ে দিলে অটোতে ১০ টাকা দিয়ে আগানো লাগতে পারে।
বাংলাবান্ধা বর্ডার একেবারেই খালি থাকে। অনেক সময় দেখা যায় টুরিস্ট আসছে বলে ইমিগ্রেশন অফিসার ডেস্ক-এ গিয়ে বসেন। কিন্তু খালি থাকলেও টাকা পয়সার ডিমান্ড ঠিকই করে। প্রথমেই আপনার ডিপার্চার কার্ড ফিলআপ করে দিতে চাইবে। বলে দিবেন যে নিজের টা নিজেই করবেন। এরপর একই রুমে আপনার নাম রেজিস্ট্রি করবে একটা খাতায়। খাতায় রেজিস্ট্রি বাবদও চা-পানির খরচ চাবে। টাকা দেয়া এভোয়েড করার চেষ্টা করবেন। এরপর ৫১০ টাকা (ব্যাংকের ৫০০, ১০ টাকা চার্জ) নিবে ট্রাভেল ট্যাক্স যেটা সরকারি হিসাবে যাবে। ১০ টাকাটা আসলে কে পাবে সেটা জানা নাই কারণ এই ব্যাপারে কোনো কিছুই লিখিত নেই। এই কাজ শেষ করে ইমিগ্রেশনে গেলাম। ব্যবহার ভালো ছিল আর কাজও দ্রুত হয়েছে। তবে যারা চাকরি করেন তাদের সাথে NOC না থাকলে বিপদে পড়তে পারেন। তাই যে যা করেন, সেই রিলেটেড কাগজপত্র সাথে রাখা ভালো। এই একটা ডেস্ক যেখানে টাকা চাওয়া হয়নি। এর পর গেলাম কাস্টম্স-এ। এখানে কিন্তু তেমন কোনো কাজ নেই, এরপরেও আপনাকে খুব সমাদর করে বসাবে। খাতায় নাম এন্ট্রি করবে, সীল দিবে তারপর বলবে ১০০ টাকা দেন যেন তার কাছ থেকে আপনি লোন নিসিলেন কোনো এক সময়ে। এইটা সহজে এভোয়েড করতে পারবেন না।
আমাদের পাশেই এক লোককে সেই অফিসার বলছিলেন যে "আমার নিয়ম তাই আমি টাকা নিবো, সবাই চলে যাবে আপনার সামনে দিয়ে আর আপনি সারাদিন এখানে দাঁড়ায় থাকবেন।" মেজাজটা খুব খারাপ লাগছিলো, কিন্তু ট্রিপের শুরুতে বলে আর ঝামেলা করলাম না। টাকা দিয়ে দিলাম। এখানেই শেষ না, বাংলাবান্ধা বর্ডারে একটা এক্সট্রা ফি দেয়া লাগে ল্যান্ড পোর্টের জন্যে যেটা প্রায় ৪০ টাকা। ওই জনাবেরও চা পান করা লাগে তাই ১০/২০ টাকা এক্সট্রা নিবে।
ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে হাফ ছেড়ে বাচলাম। ডেস্ক আর ডেস্ক। অল্প হেটে চলে এলাম বর্ডারে। সেখানে পাসপোর্ট দেখানোর পর আবার নাম রেজিস্ট্রেশন। এতো রেজিস্ট্রেশন করে কি যে করে বুঝি না। তাও ভালো বিজিবি কোনো টাকা চায় না। বাংলাদেশের পার্ট এখানেই চুকিয়ে গেলো। হেটে চলে গেলাম ইন্ডিয়ার ওই সাইডে। ইন্ডিয়ার বিএসএফ পাসপোর্ট চেক করে থাইল্যান্ড, আমেরিকা আর অন্যান্য দেশের ভিসা দেখে উৎসুক হয়ে অনেক কিছুই জানতে চাইলো। ওখান থেকে হেটে গেলাম ইন্ডিয়ান ইমেগ্রশন অফিসে। ঢুকতেই ব্যাগ রাখতে বললো স্ক্যানারের সামনে আর কাজ শেষ করে আসতে বললো।
প্রথমেই ওরা আপনাকে এরাইভাল ফর্ম ফিলআপ করে দিতে চাইবে। সুন্দর করে বলতে হবে যে আপনার টা আপনিই করবেন। একটু দুঃখ পেলেও করতে দিবে। তবে একটু বেশি ঘাঁটাবে। যেখানে থাকবেন, সেখানকার হোটেলের নাম বা ঠিকানা জেনে যাবেন, কারণ সেটা লিখতে হবে। আর ওদেরকে দিয়ে লিখলে কিছু টাকা যাবে আপনার। ইমিগ্রেশন খুব তাড়াতাড়ি হলো। এরপর কাস্টমস-এ ব্যাগ স্ক্যান করার পর ৫০ টাকা করে দিতে হলো কারণ ওদেরও চা-পানির ডিমান্ড আছে। অফিসিয়াল সব কাজ এখানেই শেষ। টাকা এখন থেকেই এক্সচেঞ্জ করে নিবেন কারণ শিলিগুড়ি শহরে দাম কম পাবেন। দার্জিলিং- এ আরো কম।
তারপর ব্যাটারি অটোতে ১০ রুপি দিয়ে চলে গেলাম ফুলবাড়ি আর ওখানে থেকে টেম্পুতে ১৫ রুপি দিয়ে একেবারে শিলিগুড়ি। টোটাল সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো। এখন আপনার গাড়িতে করে যেতে হবে দার্জিলিং। শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে বা দার্জিলিং মোড় থেকে জিপে উঠতে হবে। ভাড়া নরমালি ১৩০ রুপি। কিন্তু শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে ১৩০ রুপির গাড়িতে উঠতে চাইলে ওরা হোটেল বুকিং সহ দিতে চাচ্ছিলো, নাহলে নিবে না। হোটেল বুকিং এর ক্ষেত্রে আগের এক্সপেরিয়েন্স খুব বাজে ছিল বলে সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম ওদের মাধ্যমে বুকিং দিবনা। ওরা হোটেলের দাম বেশি রাখবে, বাজে হোটেল দিবে আর ১৫% এর মতো একটা এক্সট্রা কমিশন নিবে। এর পর যদি আপনি হোটেল চেঞ্জও করেন, ওই কমিশন আর ভাড়া, কোনোটাই ফেরত পাবেন না। ১০ রুপি দিয়ে চলে গেলাম দার্জিলিং রোড। সেখানে ২৫০ এর কমে পাইনি তাই উঠে পড়লাম দেরি না করে। ৩ ঘন্টা পর, রাত ৮:৩০ এ গিয়ে পৌছালাম দার্জিলিংয়ে।
সময় হিসাবে এলাকা খুব শান্ত ছিল। মানুষ জন ছিলই না বলতে গেলে। স্ট্রাইকের পর মাত্র দুদিন গেলো। তাই সব খোলাও হয়নি এখনো। ট্যুরিস্টও নেই, খুলেও বা কি করবে। লুক লজে উঠলাম। দুইজনের ভাড়া ৮০০ রুপি আর ফরেনারদের রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ১০০ রুপি। পরের যতদিন থাকবেন, তারজন্যে আর এই ফী লাগবে না। তবে হোটেল চেঞ্জ করলে লাগবে। দার্জিলিং এর ফরেনার রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে আপনি এই খরচটাও বাঁচাতে পারেন তবে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যেতে পারে।
দার্জিলিংয়ের অনেক জায়গা আগে থেকেই দেখা ছিল বিধায় দূরে কোথাও আর যায়নি। শহরটাই উপভোগ করলাম দুইদিন ধরে। হেটে হেটে St . Pauls School, Darjeeling Mall এইসব জায়গা ঘুরলাম। তবে বেশি সময়টা মেঘ আর পাহাড়কে অনুভব করেই কাটিয়েছি। আমার কাছে মনে হয় দৌড়াদৌড়ির চেয়ে চুপ চাপ ভালো একটা জায়গায় বসে থাকলেই দার্জিলিংয়ের বৈশিষ্ট্যটা বেশি অনুভব করা যায়। খাবার হিসাবে ওদের লোকাল চাওমিন টাই বেশি খাওয়া হয় যার দাম ৬০ রুপি। তাছাড়া ওদের ওখানে পিৎজা হাট আর কেএফসিতে বেশ ভালো কিছু অফার ছিল, ওখানেও খেলাম।
ফেরার সময় ১৩০ রুপি দিয়েই শিলিগুড়ি আসি। আর বাকিটা যাওয়ার রাস্তার মতোই। ফেরার পথে শিলিগুড়িতে কসমস অথবা সিটি সেন্টার মলে শপিং করে যেতে পারেন। শহরের মধ্যেই পড়বে। আর অবশ্যই বাংলাদেশী টাইম ৫:৩০ তার মধ্যে ইমেগ্রশনের সব কাজ শেষ করে ফেলবেন। এর কিছুক্ষণ পর দুই পড়েই ইমেগ্রশন বন্ধ হয়ে যাবে। তারমানে দুপুর ৩ টার মধ্যে আপনার শিলিগুড়ি ত্যাগ করা উচিত। বাংলাবান্ধা থেকে হানিফের প্রথম বাস সন্ধ্যা ৬ টায় ছাড়ে আর সেই বাসটাই তেঁতুলিয়া থেকে ৭ টায় ছাড়ে। টিকেট আগে থেকেই করে যাওয়াটা ভালো হবে নাহলে ভালো সিট বা কোনো সিট নাও পেতে পারেন। শ্যামলী রিসেন্টলি বাংলাবান্ধা থেকে এসি বাসের সার্ভিসও শুরু করেছে। কারো বাংলাবান্ধা/তেঁতুলিয়ার টিকেট বুকিং কাউন্টারের ফোন নাম্বার লাগলে দিতে পারবো।
যাতায়াত, থাকা, সাধারণ খাবার আর বর্ডারের খরচপাতি মিলে টোটাল খরচ পড়েছে ৩,৯৫০ টাকার মতো। এর বাহিরে ২.৫ হাজার টাকার মতো খরচ ছিল পিৎজা, কেএফসি খাওয়া আর কিছু শপিং, যা না করলেও চলতো।
লিখেছেন- খায়রুল হাসান।
Link- বিডি২৪লাইভ/আরআই