07/06/2024
কাশ্মীরের কিছু অফবিট জায়গা
ভ্রমন পিপাসুরা কাশ্মীরকে "জান্নাত বা ভূস্বর্গ" বলে সেটা একদমই সত্য। কাশ্মীরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন সুন্দর সুন্দর জায়গা যার অপার সৌন্দর্যকে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কাশ্মীরের যে জায়গাগুলো এখনো পর্যটকদের নজর সেভাবে পড়েনি। কলকাতা থেকে সরাসরি জম্মু যাওয়ার দুটি ট্রেন আছে। হিমগিরি ও জম্মু তাওয়াই। হিমগিরি সপ্তাহে ৩ দিন (মঙ্গল, শুক্র ও শনিবার) রাত ১১:৫০ টায় হাওড়া থেকে জম্মুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সময় লাগে ৩৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। আর জম্মু তাওয়াই প্রতিদিন চললেও সময় একটু বেশি লাগে।ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত স্লিপার,এসি থ্রি/টু টায়ার আর বাথ।জম্মু নেমে শ্রীনগর যেতে হবে বাস বা রিজার্ভ কারে করে। বাসের ভাড়া পড়বে ৮০০-১৫০০ রুপি।আর গাড়ি ভাড়া পড়বে ৫০০০-৮০০০ রুপি পর্যন্ত। গ্রুপের সদস্য সংখ্যার ওপরে নির্ভর করে গাড়ি নেবেন। জম্মু থেকে শ্রীনগর যেতে সময় লাগবে ৮-১০ ঘণ্টা।
গুরেজ ভ্যালি (Gurez Valley)
কাশ্মীরের একটা অজানা, অদেখা জায়গা নিয়ে আলোচনা করবো যার নাম হলো গুরেজ ভ্যালি, যা অবস্থিত বন্দিপোতা জেলার একদম লাগোয়া বর্ডার এলাকায় ৮০০০ ফিট উচ্চতায়। এই গুরেজ একদমই বিচ্ছিন্ন একটা এলাকা, নভেম্বর মাস থেকে একদমই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই এলাকা। মাত্র কয়েকবছর আগেও এই এলাকার নাম কাশ্মীরের বাইরের কেউই জানতো না, বর্তমানে খুব কম সংখ্যক পর্যটক এখানে আসা শুরু করেছে। সরকার থেকেও এই এলাকার পর্যটনের বিকাশের জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
গুরেজ আসলে আপনি একদিনের জন্য ট্যুর করতে পারবেন না, কারণ এই গুরেজ ভ্যালি শ্রীনগর শহর থেকে প্রায় ১৪০ কি.মি দূরে, শ্রীনগর থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে এখানে পৌঁছতে প্রায় ৫ ঘন্টা লেগে যাবে কারণ রাস্তা সব জায়গায় খুব ভালো অবস্থায় নেই। যদিও রাস্তা তৈরি হচ্ছে রাস্তায় যেতে যেতে দেখে নেবেন কাশ্মীরের বিখ্যাত উলার লেক। এখানে আপনারা ২-৩ দিন কাটিয়ে দিতে পারেন। গুরেজ ভ্যালির প্রধান শহর হলো ডেবর, এই ডেবরকে কেন্দ্র করেই এবং থেকে আপনাকে গোটা ভ্যালিটা ঘুরতে হবে, গুরেজ ভ্যালি অবস্থিত কিশনগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করেই, এই কিশনগঙ্গা নদীই পাকিস্তানে নীলম নদী নামে পরিচিত।
দুধপাথরী (Doodhpathri)
পর্যটকরা কাশ্মীরে এসে গুলমার্গ, শোনমার্গ থেকে প্যাহেলগাম গেলেও এই জায়গাটিকে বাদ দিয়ে কিন্তু খুব ভুল করে। এই সুন্দর জায়গাটির নাম হলো দুধপাথরী বা দ্যা ভ্যালি অফ মিল্ক। এই জায়গার সৌন্দর্য্য কিন্তু কোনো মতেই বাকি জায়গা গুলো থেকে কম না। চারদিক পাহাড় ও পাইন গাছ দিয়ে ঘেরা, বিশাল বিস্তৃত সবুজের গালিচা, এবং তার মধ্যেই শয়ে শয়ে ভেড়ার পাল সত্যি দেখে অবাক হয়ে যাবেন। আপনি এখানে পৌঁছনোর পর আরো কিছু স্পটে ঘুরে নিতে পারেন কিন্তু তার জন্য আপনাকে হেঁটে অথবা ঘোড়া ভাড়া করতে হবে। দেখার মত কিছু ঝর্ণা, দুধগঙ্গা নদী প্রভৃতি দেখতে পাবেন। শ্রীনগর থেকে মাত্র ৪০ কি.মি দূরে এই জায়গাটি অবস্থিত।
ইউসমার্গ (Yousmarg)
ইউসমার্গ নামটা এসেছে যীশু খ্রিস্টের প্রকৃত নাম Yashua থেকে। যার অবস্থান কাশ্মীরের বডগাম জেলায়, কাশ্মীরের আরো একটি অসাধারণ সুন্দর অপরিচিত একটি জায়গা। ইউসমার্গ এমন একটা জায়গা যেখানে না আছে কোনো কোলাহল, না যানবাহনের শব্দ। শুধু আছে নিস্তব্ধতা, শান্তির পরিবেশ। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত সবুজ চারনভূমিতে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারেন। ইউসমার্গ থেকে কয়েকটি ছোটো এবং বড় ট্রেক রুটও আছে। একটি হল দুধগঙ্গা ট্রেক, মোটামোটি দুঘন্টা সময় লাগে, এবং নীলনাগ ট্রেক যেটি করতে মোটামোটি ৩-৪ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এই দুটি ট্রেক ছাড়া বাকি ট্রেকগুলি করতে আপনাকে এখানে থাকতে হবে, কিন্তু এখানে থাকার অপশন একদমই নেই, একটি খালি গেস্ট হাউস আছে।
ইউসমার্গ হল একদিনের ট্যুর জন্য ঠিক আছে, এখানে রাত্রিবাসের একদমই প্রয়োজন নেই। শ্রীনগর থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে দিনে দিনে ঘুরে নিতে পারেন, শ্রীনগর থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৫০ কি.মি। সবচেয়ে ভালো সময় এখানে আসার এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর।
লোলাব ভ্যালি ও কালারুশ দুর্গ (Lolab Valley)
কাশ্মীরের কূপওয়ারা জেলায় অবস্থিত কাশ্মীরের অন্যতম সুন্দর জায়গা এই লোলাব ভ্যালি যাকে স্থানীয়রা বাদি-এ-লোলাব বলে থাকে। লোলাব ভ্যালি বিখ্যাত তার সুন্দর সুন্দর সবুজ তৃণভূমি অঞ্চল, বিভিন্ন ঝিল (উলার হৃদ ট্রেক) এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন ধরণের ফলের গাছের জন্য। এই ভ্যালিতে আরু, খোয়ানী, চেরি, আপেল, আখরোটের মত ফলের গাছ খুব বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এই জায়গাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ও সম্পদে ভরপুর , তাই আপনি ভিড় থেকে মুক্ত হয়ে শান্ত পরিবেশে এক থেকে দু দিন কাটাতে পারেন।
শ্রীনগর থেকে প্রায় ৮৫ কি.মি দূরে অবস্থিত এই কূপওয়ারা,আর কূপওয়ারা থেকে ৮-৯ কি.মি দূরে এই লোলাব ভ্যালি। আপনি চাইলে শ্রীনগর থেকে গাড়ি ভাড়া করে এখানে পৌঁছে যেতে পারেন খুব সহজে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টার কিছু বেশি। এছাড়া আপনি চাইলে বাসে ও আসতে পারেন কূপওয়ারা, তারপর কূপওয়ারা শহর থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসে পাশে ঘুরে নিতে পারেন। থাকার অপশন খুব কম এখানে।
চটপল (Chatpal)
দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছোট্ট সুন্দর একটি গ্রাম চটপল। এই গ্রামে যদি আপনি আসেন তাহলে পর্যটকদের একদমই দেখতে পাবেন না, একদমই অপরিচিত একটি জায়গা এই চটপল তার সাথে বরফাবৃত সব সুউচ্চ পর্বত, সবুজে ঢাকা পুরো এলাকা, চারনভূমি ভেড়ার পাল, পরিষ্কার নদীর ধারা যা আপনাকে একটি আলাদাই জগতের অনুভব করাবে। এখানে এসে আপনার যা ইচ্ছা, সেটাই করতে পারবেন, যেমন খুশি তেমন ভাবে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারবেন এতোটাই নিরিবিলি জায়গা এই চটপল। এখানে মোটামোটি ২,৩ ঘন্টা ঘুরলেই যথেষ্ট, আপনি চাইলে এখানে থাকতেও পারেন একটা রাত যার জন্য JKTDC এর কটেজ পেয়ে যাবেন কমের মধ্যে। শ্রীনগর থেকে এই চটপলের প্রায় ৮৫-৯০ কিমি,পাবলিক বাসে না এসে সবচেয়ে ভালো একটা গাড়ি রিজার্ভ করে নিয়ে শ্রীনগর থেকে যেতে পারবেন।
দাচিগাম ন্যাশনাল পার্ক (Dachigram National Park)
শ্রীনগরের খুব কাছেই কাশ্মীরের আরো একটি অদেখা জায়গা হলো এই দাচিগাম ন্যাশনাল পার্ক। এই ন্যাশনাল পার্ক প্রধানত বিখ্যাত হাঙ্গুল বা কাশ্মীরী হরিন এর জন্য, এবং হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার I এছাড়াও এখানে অনেক ধরণের পাখিও পেয়ে যাবেন। এখানে আসার সবচেয়ে ভালো সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট এমনি আপনি সারাবছরই এখানে আসতে পারেন। শ্রীনগর থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে সোজা এখানে চলে আসতে পারেন।
ওয়ারয়ান ভ্যালি ট্রেক (Warwan Valley Trek)
কাশ্মীরের আরো একটি খুবই সুন্দর ট্রেক রুট হল এই ওয়ারয়ান ভ্যালি ট্রেক। ১৪০০০ ফিট উচ্চতার এই ট্রেক প্রায় ৭৪ কিমি দীর্ঘ। এই ট্রেকে চলতে চলতে একসাথেই উপভোগ করতে পারবেন - বিস্তৃত সবুজ বেলাভূমি, ঝর্না, হিমবাহ, বরফে ঢাকা সুউচ্চ পর্বত, খরস্রোতা বয়ে চলা নদী, বিভিন্ন আঞ্চলিক ফুলের সমারোহ প্রভৃতি, আর সবচেয়ে ভালো ব্যাপার এই ট্রেক পর্যটকদের সংখ্যার একদমই কম অনেকটা নির্জন শান্ত পরিবেশ পেয়ে যাবেন।
কাশ্মীরের কিস্তওয়ার জেলায় অবস্থিত এই ওয়ারয়ান ভ্যালি, শ্রীনগর থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিমি। এই ট্রেকে যাওয়ার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম পৌঁছতে হবে পানিখারে, সেখানে একদিন বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন থেকে আপনাদের ট্রেক শুরু হবে। এই ট্রেকটি 8-9 দিন লাগে এই ট্রেকে আসার আদর্শ সময় হলো বর্ষাতে আগস্ট, সেপ্টেম্বর কারণ এই সময়ে বরফে ঢাকা সুউচ্চ পর্বত গুলো দেখতে পাবেন, এছাড়াও সবুজে মোড়া সতেজ -সবুজ কাশ্মীরকে দেখতে পাবেন।