02/05/2024
আমার আজকের লেখার শিরোনামটি আসলে একটি অতি প্রচলিত প্রবাদবাক্য “পিপীলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে” থেকে নেয়া। এই প্রবাদবাক্যটি প্রাচীনকাল থেকে আমাদের মৌখিক এবং লিখিত সাহিত্যে ব্যবহূত হয়ে আসছে। মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চন্ডীমঙ্গল কাব্যে প্রবাদটির ব্যবহার আছে। চন্ডীদেবী যখন অপরূপ সুন্দরী নারী মূর্তি ধারণ করে কালকেতুর কুঁড়েঘরটি আলোকিত করে বসে থাকলেন, কালকেতুর স্ত্রী ফুল্লরা এই নারীকে দেখে স্বামীকে সন্দেহ করলো। তার সে সন্দেহ দৃঢ়মূল হলো যখন মেয়েটি জানালো বনের মধ্যে তিনি একা একা বিচরণ করছিলেন, ফুল্লরার স্বামী কালকেতুই তাঁকে ধরে নিয়ে এসেছে। মেয়েটির কথা শুনে ফুল্লরার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল। মেয়েটি ফুল্লরার কথায় গৃহত্যাগ করতে রাজি নয়। কালকেতু তাঁকে নিয়ে এসেছে, কাজেই কালকেতুর নির্দেশ ছাড়া তিনি গৃহত্যাগ করবেন না। কালকেতু তখন হাটে গেছে মাংস বিক্রি করতে। ফুল্লরার ধারণা, ঘরে তার সতীন এসেছে। রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে অভিমানে ফুল্লরা হাটের দিকে যায় স্বামীকে মোকাবিলা করতে। স্বামীকে পেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে উচ্চারণ করে:“পিপীলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে /কাহার ষোড়শী কন্যা আনিয়াছ ঘরে?”প্রবাদবাক্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে পণ্ডিতগণ বলতে চেয়েছেন-দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত প্রকাশ ঘটে প্রবাদবাক্যে। সমাজ জীবনে প্রবাদবাক্যগুলো পরীক্ষিত সত্য বলে বিবেচিত। আমাদের চোখের সামনে নানা জাতের পিপীলিকা আমরা দেখতে পাই। অধিকাংশ পিপীলিকার পাখা নেই অর্থাত্ পাখা গজায় না। কিন্তু ব্যতিক্রম কিছু আছে। কিছু কিছু পিপীলিকার পাখা গজায়। যে সমস্ত পিপীলিকার পাখা গজায়, সেগুলোর বাড়াবাড়ির সীমা থাকে না। পাখা গজালে আগুনকে পর্যন্ত সে ভয় পায় না। আগুনে ঝাঁপ দিলে যে মৃত্যু ঘটবে, সে তাল জ্ঞানও পাখা গজানো পিপীলিকা হারিয়ে ফেলে। আগুনে ঝাঁপ দেয়ার পর বুঝতে পারে কী ভুল সে করে ফেলেছে। সে ভুল সংশোধনের আর কোন পথ থাকে না। মৃত্যুই তার শেষ পরিণতি।