29/11/2022
গত বছর হজ্জ শেষ করে বেশ কিছু আজওয়া খেজুর সাথে নিয়ে আসলাম । যথাসম্ভব আত্নীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবদের দিয়ে আমি একটা জার ভর্তি করে নিজের জন্য রেখে দিলাম খুব যত্ন করে । ঐ খেজুর নিয়ে আমি মিশর যাই । তারপর আমেরিকা, সাথে আমার সেই আজওয়া খেজুর ।
একদিন এক বাসায় বেড়াতে গেলাম । সে বাসার আন্টি রান্না করতে করতে গল্প করছিলেন । তার পাশেই কিচেনে বসে ছিলাম । এক পর্যায়ে হজ্জের প্রসঙ্গ , তারপর আন্টি আজওয়া খেজুর নিয়ে বলতে গিয়ে খুব ইমোশনাল হয়ে গেলেন । তিনি খুব শুনেছেন কিন্তু আজ অবধি খেতে পাননি । এক পর্যায়ে কাঁদছেন, যদি হজ্জে যেতে পারতেন, যেতেন যদি মদীনা । ইচ্ছেমত যদি আজওয়া খেতে পারতেন ।
সেদিনের মত আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিলাম । বাসায় ফিরে ফ্রীজ খুলে আমার আজওয়া খেজুরের জারটা হাতে নিয়ে বসে আছি । আন্টির কান্না ভেঁজা মুখ আর তার আফসোসটা মন থেকে সরছে না । আন্টিকে দিতে ইচ্ছে করছে, আবার তিন দেশ বয়ে বেড়ানো নিজের জন্য রেখে দেওয়া এত প্রিয় জিনিসটা দেই কি করে ।
পরদিন সকালে বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে সোজা আন্টির বাসায় । হ্যান্ড ব্যাগ খুলে আজওয়া জারটা আন্টির হাতে দিয়ে বললাম ‘পুরোটাই আপনার’ । কিছু অনুভুতি বলে বুঝানো যায় না। আমি বুঝাতে পারবো না তারপর সেখানে কি আবেগঘন মুহূর্ত হলো ।
একটা চরম উপলব্ধি বাসায় ফিরলাম । খুব যত্ন করে তিন দেশ বয়ে সুদুর আমেরিকাতে নিয়ে যাওয়া আজওয়ার জারটা আসলে আমার না; আমাকে দিয়ে আল্লাহ সুবহানুওয়াতায়ালা সেটা যার জন্য বরাদ্দ তার হাতে পৌছে দিয়েছেন ।
রিজিক যেটা আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটা আসবেই,সাত সমুদ্র তোর নদী পেরিয়েও ।
ঘটনা এখানেই শেষ নয় । এর সপ্তাহ খানেক পর আমার ঘনিষ্ট বন্ধু ওমরা করে ফিরল । আমি দেখা করতে গেলাম । বিদায় নেয়ার সময় বন্ধু বললো ‘তোর জন্য খুব দামী গিফট্ আছে ।’
সারাটা রাস্তা ঝাপসা চোখে ড্রাইভ করে বাসায় ফিরছি । আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় চোখ ভিঁজে যাচ্ছে বারবার । ঠিক এক জার আজওয়া নিয়ে বাসায় ফিরেছি, যেমনটা দিয়েছিলাম আন্টিকে ।
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী ।।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا
‘‘এবং তিনি প্রত্যেক জিনিস সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তার একটি তাকদীর বা পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন’’।
(সূরা ফুরকান: ২)
কালেক্টেড