Sundarban Tours সুন্দরবন

Sundarban Tours সুন্দরবন Explore the Magical Sundarban with our own luxurious Vessel. We organize Exclusive & Package tour for

আচ্ছা, বাঘ কি সত্যিই বোকা? উপেন্দ্রকিশোরের বাঘ মামা আর শিয়াল ভাগ্নের গল্প পড়ে সেই ছোট বেলা থেকেই প্রশ্নটা মনের মধ্যে উঁ...
11/12/2023

আচ্ছা, বাঘ কি সত্যিই বোকা? উপেন্দ্রকিশোরের বাঘ মামা আর শিয়াল ভাগ্নের গল্প পড়ে সেই ছোট বেলা থেকেই প্রশ্নটা মনের মধ্যে উঁকি দিত। এক ধূর্ত শিয়াল কুয়োর মধ্যে মাদুর বিছিয়ে তার উপর বাঘ মামাকে বসতে দিয়েছিল। বেচারা বাঘ মাদুরে বসতে গিয়ে কুয়োর মধ্যে পড়ে জলে হাবুডুবু খেয়েছিল। অনেক বাঙালি গল্প লেখক বাঘকে গোবেচারা বানিয়ে দিয়েছেন।

'পায়ে পড়ি বাঘমামা, করো নাকো রাগ মামা, তুমি যে এ ঘরে কে তা জানত' গান শুনিয়ে বাঘকে বশে আনার কৌশল শিখিয়েছেন বরেণ্য চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। শিবরাম চক্রবর্তীর ‘আমার বাঘ শিকার’, ত্রৈলোক্যনাথের ডমরুধরের বাঘ শিকার গল্পেও বাঘকে বোকা হিসেবে চিনেছে বাঙালি। হার্পারকলিনস প্রকাশনীর বিখ্যাত শিশুদের গল্পের বই 'দ্য টাইগার হু কেম টু টি'- র লেখক জুডিথ কের এক 'দয়ালু' বাঘকে ঘরে বসিয়ে চা পর্যন্ত খাইয়েছেন। রূপকথার গল্পে শিয়াল পণ্ডিতের কাছে বারবার বোকা বনেছে বনের রাজা।

তবে অনেকের কাছেই বাঘ একটা ভয়ঙ্কর হিংস্র প্রাণী। যার সামনে পড়লে পগার পার। আবার রাজ রাজাদের কাছে বাঘ ছিল শৌর্যের প্রতীক। রাজা কিংবা জমিদাররা নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে বাঘ শিকারে বেরতেন। কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ছিলেন একজন দক্ষ শিকারি। ডুয়ার্স ও অসমের জঙ্গলে তিনি নিয়মিত শিকারে যেতেন। সেখানে যা কিছু ঘটত, সবটাই লিখে রাখতেন ডায়েরিতে। ১৯১১ সালে সেটাই বই আকারে প্রকাশিত হয়। যার নাম ‘থার্টি সেভেন ইয়ার্স অব বিগ গেম হান্টিং গল কোচবিহার, ডুয়ার্স অ্যান্ড অসম’। মোট ৪৬১ পাতার বইয়ে শিকারের বিভিন্ন রোমহর্ষক গল্প, ৩৮টি পুরনো মানচিত্র এবং ১৫৯টি দুষ্প্রাপ্য ছবি রয়েছে।

বাঘের সাতকাহন:

* রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বিড়াল প্রজাতি।
* গড় উচ্চতা ১১ ফুট।
* পুরুষ বাঘ গড়ে ২২১ কেজি ওজনের হয়, আর বাঘিনী গড়ে ১৩৭ কিলোগ্রাম ওজনের হয়।
* প্রিয় খাদ্য হরিণ, বুনো শুকর, বানর।
* দৈনিক ৫-১৫ কেজি মাংস খায়। পুরুষ বাঘ ৩০ কেজি পর্যন্ত মাংস খেয়ে নিতে পারে।
* বাঘেরা নিঃশব্দে শিকারের পিছু নেয়। অতর্কিত আক্রমণ করে। এ সময় এদের গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৫০-৬৫ কিলোমিটার। জলেও শিকার ধরতে পারে। ঘণ্টায় ৩২ কিমি বেগে সাঁতার কাটতে পারে। লঞ্চের থেকেও বেশি গতিবেগ। শরীর ঠান্ডা রাখতেও এরা জলে নামে

* বাঘ একাকি থাকতে ভালোবাসে। ব্যাঘ্র শাবকের বয়স দুবছর হলেই বাচ্চাদের থেকে আলাদা হয়ে যায়।
* বাঘের মিলন বছরের যে কোনও সময় হতে পারে। নভেম্বর-এপ্রিলের মধ্যেই সর্বাধিক মিলন ঘটে।
* বাঘিনীদের গর্ভাবস্থা ১০৩-১০৫ দিনের। এক সঙ্গে ২-৪টি বাচ্চা হয়।
* বাঘ রাতেই বেশি শিকার করে। শিকারের সময় বাঘ শ্বাসনালী কামড়ে ধরে। শিকার দমবন্ধ হয়ে না মরা পর্যন্ত বাঘ গলাটা আঁকড়ে ধরেই থাকে।
* এদের ক্যানাইন দাঁত ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়, ব্লেডের মত ধারালো বাঁকানো নখ। সামনের পায়ের নখ ৩ ইঞ্চি।
* বাঘের চোখ পিউপিল গোলাকার। কারণ বাঘ সাধারণত সকালে এবং সন্ধ্যায় শিকার করে।
* বাঘ তাদের এলাকা চিহ্নিত করে ইউরিনের মাধ্যমে যা অন্য বাঘদের সতর্ক করে। বাঘের প্রস্রাবের গন্ধ অনেকটা বাটার মাখানো পপকর্ণের মত।

* বাঘ অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের প্রথম এক সপ্তাহ পর্যন্ত বাঘের বাচ্চা পুরোপুরি অন্ধ থাকে।
* বাঘ ২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
* বাঘেরা শুধুমাত্র দূরবর্তী বাঘদের সাথে যোগাযোগের জন্যই গর্জন করে থাকে। রাতের নির্জনতায় বাঘের গর্জন ৩ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়। যখন তারা ভয় পায় বিড়ালের মতোই শিস দেয়।
* পুরুষ বাঘ উদার হয়, তারা স্ত্রী বাঘকে এবং শাবকদের আগে খেতে দেয়।

নৃপেন্দ্রনারায়ণের আমন্ত্রণে একবার লর্ড কার্জন জলদাপাড়া অরণ্যে শিকার করতে গিয়েছিলেন। কার্জন নাকি তিনটি চিতাবাঘ শিকার করেছিলেন।
মহীশূরের রাজা টিপু সুলতান ছোটবেলা থেকেই বাঘের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। কিশোর বয়সে তিনি বাঘ পুষতে শুরু করেন। তখনকার শ্রেষ্ঠ কারিগরদের দিয়ে কাঠের ফ্রেমের উপর সোনার পাত বসিয়ে তিনি একটি রত্নখচিত সিংহাসন বানিয়েছিলেন। যার নাম ছিল 'ব্যাঘ্রাসন'। আট কোণা সিংহাসনের মাঝখানে ছিলো একটি বাঘের মূর্তি। আসনটির রেলিংয়ের মাথায় বসানো ছিলো সোনা দিয়ে বানানো দশটি বাঘের মাথা। আসনের উপর ডোরাকাটা দাগ। পোশাকেও বাঘের ছবি আঁকা থাকতো।

১৯৭৩ সালেই ইংরেজ সেনাপতি হেক্টর মুনরোর একমাত্র পুত্র সুন্দরবনের বাঘ শিকার করতে এসে বাঘের হাতে নিহত হয়েছিলেন। তার আদলে টিপু একটি খেলনা বানিয়েছিলেন। যেখানে একজন ইংরেজ সেনাকে একটি বাঘ কামড়াচ্ছে। তার জেরে সেই ইংরেজ সাহেবের মুখ থেকে গোঙানির শব্দ শোনা যেত। যা 'টিপু'স টাইগার' নামে পরিচিত। সুন্দরবন এলাকায় বাঘেদের দেবী হিসেবে পূজিত হন বনবিবি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই বনবিবি হলেন মানুষের রক্ষাকর্ত্রী। বনের বাওয়ালি-মৌলেরা বাঘের মুখে পড়লে বনবিবির নাম স্মরণ করে মন্ত্র পড়লে বাঘ দৌড়ে পালাবে। যারা সুন্দরবনে মধুর চাক ভাঙতে অথবা কাঠ কাটতে যান তাঁরা বনে কাজে যাওয়ার আগে বনবিবির পূজা করেন।

বনবিবিকে নিয়ে অনেক রূপকথার গল্প শুনতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটা গল্প বহুল প্রচলিত। গল্পটা হল এরকম:

এক সওদাগরের দুই সুন্দরী স্ত্রী ছিলেন। ছোটো বউয়ের চক্রান্তে সন্তানসম্ভবা বড়ো বউ গুলালবিবি সুন্দরবনে নির্বাসিত হন। কয়েকদিন পর সেখানেই যমজ পুত্র-কন্যার জন্ম দিয়ে তার মৃত্যু হয়। সদ্যোজাত শিশু দু'টির কান্না শুনে বনের বাঘ, কুমির, হরিণ, অজগর, বানস সবাই ছুটে আসে। তারাই দুই ভাইবোনকে লালনপালন করে বড়ো করে তোলে। ছেলেটি বড়ো হয়ে বাঘের রাজা এবং মেয়েটি বনবিবি নামে পরিচিত হয়।

আমরা শহরের লোকেরা বাঘকে মামা সম্বোধন করে আনন্দ পেলেও সুন্দরবনের মানুষের কাছে বাঘ মানেই বিভীষিকা। গল্পে বাঘকে যেভাবে নিরীহ বোকা প্রাণী হিসেবে দেখানো হয় সুন্দরবনের বাঘ মোটেও তা নয়। প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠা সুন্দরবনের বাঘ শুধু হিংস্রই নয়, তারা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। সুন্দরবনের যে অংশে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বাসভূমি তার বেশিরভাগটাই জলবেষ্টিত। চারিদিকে সমুদ্রের নোনা জল। জোয়ারে বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে যায়। জোয়ার-ভাটার খেলায় অনবরত পাড় ভাঙছে। সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে স্থলভাগ। তার সঙ্গে রয়েছে সমুদ্রের জলচ্ছ্বাস এবং ঘূর্ণিঝড়। এরকম সঙ্কটময় পরিবেশে বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় বাঘকে। বুদ্ধিও খাটাতে হয়।

সুন্দরবনের নদীগুলোয় প্রতিদিন দুবার করে জোয়ার-ভাটা হয়। জোয়ারের সময় ম্যানগ্রোভ অরণ্যের একটা বড় অংশই ডুবে যায়। তখন নিজেকে বাঁচাতে বাঘেরা দীর্ঘক্ষণ জলে ভেসে থাকে। বাঘ শুধু নিজেকে বাঁচাতেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু বাঘিনীকে তার শাসকদের কথা মাথায় রাখতে হয়। একটি বাঘিনী চারটি পর্যন্ত বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে। জোয়ারে স্থলভাগে জল উঠে গেলে বাঘিনীরা বড়জোর তার একটি বাচ্চাকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। বাকিরা জলের তোড়ে ভেসে যায়। এভাবে অনেক ব্যাঘ্র শাবকের মৃত্যু হয়।

নদীতে জোয়ার আসার আগে বাঘ ঠিক টের পেয়ে যায়। নদী-খালের ধারে অথবা বনের ভিতর বাঘের পায়ে জল লাগলেই দ্রুত হাঁটা শুরু করে। বাঘ তখন উঁচু জায়গার সন্ধান করে। অনেক সময় জোয়ারে জল এত দ্রুত বাড়তে থাকে যে বাঘ আর ডাঙায় উঠতে পারে না। তখন সে জলে গা ভাসিয়ে দেয়। বড় কোনো গাছের ডাল পেলে সেটাকে আঁকড়ে ধরে। গলাটা উঁচু করে ঝুলে থাকে।

সুন্দরবনের কালিরচর এলাকা থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি খালে দুপুরবেলা নৌকায় করে মাছ ধরছিলেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। জোয়ারের জল খুব দ্রুত বাড়ছিল তখন। জঙ্গলের ভিতর দিয়েও জোয়ারের জল বইতে আরম্ভ করে। সেই স্রোতের মধ্যেই মাথা উঁচু করে যাচ্ছিল একটি বাঘিনী। তার সঙ্গে একটি ছোট বাচ্চাও ছিল। নিজেকে বাঁচাতে বাঘটি গাছের ডাল ধরে নেয়। কিন্তু তার চোখের সামনে বাচ্চাটি জোয়ারের জলে ভেসে চলে যায়। জৈষ্ঠ মাসে জোয়ারের জল বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি বাড়ে। আশ্বিন পর্যন্ত এর রেশ থাকে। জলোচ্ছ্বাসের সময় দু'-তিন দিন পর্যন্ত জলে ডুবে থাকে সুন্দরবন।

জোয়ার শেষে ছয় ঘণ্টা পর আসে ভাটা। তখন শুরু হয় বাঘগুলোর খাবার খোঁজার পালা। তাই শিকার বা খাবারের সন্ধান করতে একটি বাঘের প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার বেশি সময় মেলে না। এ সময়ের মধ্যে শিকার, আহার ছাড়াও বাসস্থানের সন্ধান করতে হয় বাঘকে। চলে চোরা শিকারিদের সঙ্গে বাঘের লড়াই। ট্রাঙ্কুলাইজারগানে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে বাঘিনীকে অচেতন করা হয়। পরে পাচারকারীরা বাঘের দাঁতও অন্য অঙ্গ তুলে নিয়ে যায়।

এত প্রতিকূলতার মধ্যে সুন্দরবনের বাঘ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে স্রেফ উপস্থিত বুদ্ধির জেরে। সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। জঙ্গলে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে, দ্রোন উড়িয়ে বাঘেদের গতিবিধির উপর নজর রাখে বনদপ্তর। বাজারে ব্যাঘ্র প্রেমী এবং বিশেষজ্ঞের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবু সুন্দরবনের বাঘেদের সম্পর্কে কতটুকুই বা জানতে পেরেছি আমরা!

সুন্দরবনের বাঘেদের চরিত্র যে ক্রমশ বদলাচ্ছে সেটা নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারছেন আশপাশের গ্রামবাসীরা। ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার আশপাশে যারা থাকেন তারা নিয়মিত বাঘেদের গতিবিধির খবর রাখেন। সুন্দরবনের বহু মানুষ জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল। মধু সংগ্রহ কিংবা কাঁকড়া ধরতে তাদেরকে বাঘের ডেরায় ঢুকতেই হয়। বাঘের মনের খবর তাদের কাছ থেকেই সবথেকে ভাল জানা যায়। গোসাবার সাতজেলিয়া দ্বীপের চরঘেরি এলাকার পাশেই সংরক্ষিত এলাকা শুরু হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই এখানে বাঘ হানা দেয়। এই গ্রামেরই বাসিন্দা উমাশঙ্কর মণ্ডল। মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন দিন ধরেই লড়াই চালাচ্ছেন। ছোট বেলা থেকে ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন। বহু লোককে বাঘের হাতে মরতে দেখেছেন। কিছুদিন আগে তাঁর এক নিকটাত্মীয়কে বাঘে তুলে নিয়ে যায়। এরকম বহু ঘটনার সাক্ষী তিনি।

উমাশঙ্কর জানাচ্ছেন, সুন্দরবনের বাঘ আর আগের মতো নেই। তারা এখন খুব চালাক হয়ে গিয়েছে। আগে বাঘ যেখানে কাউকে আক্রমণ করতো সেখানে আবার শিকার পাওয়া যাবে, এই আশায় বেশ কিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকতো। ফলে মৌলিরা সাবধান হয়ে যেতো। সেদিকে কেউ ভিড়তো না। কিন্তু এখন বাঘেরা এক জায়গায় মানুষকে আক্রমণ করার পর পরের দিন আবার অন্য জায়গায় হানা দিচ্ছে। ফলে জঙ্গলে যারা যায় তারাও বাঘেদের গতিবিধি বুঝতে পারছে না।

সুন্দরবনের বাঘেদের সঙ্গে মানুষের সংঘাত নিয়ে গবেষণা করছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সোমা সরখেল। তার জন্য সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আশপাশের গ্রামে যারা বাঘের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন তাদের থেকে তথ্য জোগাড় করেছেন। বাঘ বিধবা এবং আশপাশের গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, মানুষ বাঘেদের খাদ্য তালিকার মধ্যে নেই। বরং মানুষই তাদের ডেরায় ঢুকে সুন্দরবনের বাঘকে নরখাদক করে তুলছে।

তাঁর ব্যাখ্যা, সুন্দরবনের সব বাঘ কিন্তু মানুষ খেকো নয়। এখানে দু'ধরণের বাঘ রয়েছে। কিছু বাঘ 'ডেজিগনেটেড ম্যান ইটার'। কেউ 'অ্যাগ্রেসিভ ম্যান ইটার'। তবে বারবার মানুষ যদি তাদের সংস্পর্শে আসে তাহলে বাঘ একদিন মানুষ খেকো হয়ে উঠতে পারে। সোমার কথায়, 'ব্যক্তিগত জগৎ আর নিজের উঠোন সকলেরই ব্যক্তিগত। বাঘের ব্যক্তিগত পরিসরকে গুরুত্ব দিতে হবে।' তাঁর সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৯ সালের মে মাসে আইলার পর জঙ্গল থেকে বসতিতে বাঘের অনুপ্রবেশ যথেষ্ট বেড়ে যায়। ২০০৮-'০৯ সালে সুন্দরবনের লোকালয়ে মোট ১২ বার বাঘ ঢুকেছিল ২০০৯-'১০ সালে ২৪ বার এবং আয়লার পর ২০১০-'১১ সালে সেটা হয়ে যায় ২৭ বার। তরুবালা মন্ডল নামে একজন মহিলাকে রান্নাঘরে ঢুকে আক্রমণ করে বাঘ। আইলার পরপরই বাঘের হানায় মৃত্যুও বেড়ে গিয়েছিল।

২০০৮-'০৯ এ বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় চার জনের। ২০০৯-'১০ সালে সেটা বেড়ে হয় আটজন এবং ২০১০-'১১ সালে মোট ১০ জন বাঘের হানায় প্রাণ হারান। আয়লার মতো উম্পুনের প্রভাবে সুন্দরবনে বাঘের হানা বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরাও স্বীকার করে নিচ্ছেন, উম্পুনের পর সুন্দরবনে বেআইনি অনুপ্রবেশ ঠেকানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। লকডাউন এবং উম্পুনের ধাক্কায় সুন্দরবনের মানুষের আয়ের বিকল্প রাস্তাগুলি সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ অবস্থায় বাঁচার জন্য তারা জঙ্গলের উপর আরও বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হবেন। মধু সংগ্রহ, কাঁকড়া ধরা, জ্বালানি কাঠের জন্য জঙ্গলে ঢোকার প্রবণতা বাড়বে। ফলে বাঘেদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। সুন্দরবনের পরিবেশের উপরও তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।

জীবিকার মাধ্যম যখন সুন্দরবনবৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা আমাদের সুন্দরবন। বাহারি গাছপালা, বন্য পশুপাখি ও জীবজন্তু...
10/12/2023

জীবিকার মাধ্যম যখন সুন্দরবন

বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা আমাদের সুন্দরবন। বাহারি গাছপালা, বন্য পশুপাখি ও জীবজন্তু ঘেরা গা ছমছম পরিবেশে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ এই বনভূমি।

১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবন সুন্দরী গাছের ম্যানগ্রোভের জঙ্গল নয়, এটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবেও স্বীকৃত। দুই বাংলার মানুষ এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের উপর নির্ভরশীলও বটে।

সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এক বিরাট আয়ের উৎস। এ বনের আশপাশ ঘিরে ৪৫০টির মতো নদী, খাল যেখান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি, সাদা মাছ, কাঁকড়া আহরণ করে হাজার হাজার জেলে পরিবার জীবন-জীবিকা চালাচ্ছে।

এছাড়াও বনের হাজার হাজার মন শুকনা কাঠ, পাতা সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণ। সুন্দরবনের গোল পাতা আরও একটি আয়ের উৎস। সুন্দরবন একদিকে যেমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক আয়ের উৎস অন্যদিকে সরকারি রাজস্ব আয়েরও উৎস।
তাছাড়া সুন্দরবনের মধুর খ্যাতি বিশ্ব জোড়া। প্রতিবছর এ বন থেকে ১৫ থেকে ১৬ হাজার মণ মধু আহরিত হয়। যা সারাদেশ থেকে আহরিত মধুর অর্ধেকেরও বেশি। এক তথ্য অনুযায়ি, প্রায় ১০ হাজার মানুষ মধু সংগ্রহের কাজে সুন্দরবনে নিয়োজিত থাকে। এ বন অসুস্থ মানষের জীবন বাঁচাচ্ছে তার বুকে ধারণ করা ৩৩৪ প্রজাতির বনজ বৃক্ষ, বিভিন্ন প্রজাতির গুল্ম, লতার মাধ্যমে সৃষ্টি ভেষজ ঔষধের মাধ্যমে।

বর্তমানে দেশ বিদেশে আধুনিক বিশ্বের মানুষের কাছে ভেষজ ঔষধ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর গ্রহণ যোগ্যতা ও চাহিদা বেড়েই চলছে। শরীরের জন্য বেশ উপযোগী মনে করছেন চিকিৎসকরা। সুন্দরবনের গহীন থেকে গহীনে জন্ম নেয়া লতা, পাতা, গুল্ম, বৃক্ষ থেকে মানুষের জীবন রক্ষাকারী মহামূল্যবান ভেষজ ঔষধ উদ্ভাবন সম্ভব। প্রয়োজন গবেষক এবং গবেষণাঘার।

চিরসবুজের এই সুন্দরবন সৌন্দর্য, রূপ মাধুর্যে যেন অনন্ত যৌবনা। এত সৌন্দর্য মণ্ডিত সুন্দরবন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ তথা বিনোদন পিপাসুদের অতীত থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সে ডাকে সাড়া দিয়ে সুন্দরবন সম্পর্কে জানতে, চিনতে এর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি, বিদেশি পর্যটক আসছে। অনুকূল পরিবেশ পেলে পর্যটক খাতসহ অন্যান্য খাত থেকে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি সরকারি রাজস্ব আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। সব মিলিয়ে সুন্দরবনের গুরুত্ব, প্রয়োজন, অবদান বলে শেষ করা অসম্ভব।

মানুষের বেঁচে থাকার এক অনন্য মৌলিক উপাদান অক্সিজেন যা ৬০১৭ বর্গ কি.মি. জায়গা জুড়ে সুবিস্তৃত বিশাল বনবৃক্ষ অক্সিজেন দিচ্ছে। এ দিক দিয়ে এ বনের গুরুত্ব অবদান অপরিসীম।

সুন্দরবন বাংলাদেশের রক্ষাকবচও বটে। ঝড়-ঝঞ্জা, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিরূপ প্রভাবের হাত থেকে রক্ষা করতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরবন প্রতিনিয়ত প্রকৃতির বিরুদ্ধে নীরবে লড়াই করে যাচ্ছে।

পুরো পৃথিবীতেই আমাদের এই বনের সুখ্যাতি রয়েছে । প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ। বিশেষ করে আমাদের দেশের সকলের উচিত বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন আরও জোরদার ও কঠোর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সুন্দরবন ভ্রমণে পরবর্তি প্যাকেজের তারিখঃ ডিসেম্বর ১৫-১৬-১৭ এবং ২২-২৩-২৪ আপনার বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01711-938204  ★...
10/12/2023

সুন্দরবন ভ্রমণে পরবর্তি প্যাকেজের তারিখঃ ডিসেম্বর ১৫-১৬-১৭ এবং ২২-২৩-২৪ আপনার বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01711-938204
★★ ১৫/২২ ডিসেম্বর (১ম দিন): নির্ধারিত দিনে বাস কাউন্টার/ট্র্রেন স্টেশন থেকে আপনাকে আমাদের ট্যুর গাইড রিসিভ করে শীপে নিয়ে আসবে। তারপর ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা পরিবেশন। জাহাজ মংলা পোর্টে পৌঁছানোর পূর্বে রুপসা ব্রীজ, খুলনা শীপ ইর্য়াড ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখা যাবে। দুপুর ১ টা থেকে ২টার মধ্যে আমরা চাঁদপাই ফরেস্ট অফিস পৌছাবো। বন-বিভাগের অনুমোদনপত্র ও গার্ড নিয়ে বিকাল ৩/৪ টার মধ্যে হাড়বাড়িয়ায় পৌছানো যেখানে বন বিভাগের ইকো ট্যুরিজম স্পট দেখতে পাওয়া যাবে। এরপর বনের ভিতর দিয়ে ছোট ছোট ক্যানেল পার হয়ে কটকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে আনুমানিক রাত ১০ টায় পৌছানো এবং রাতে জাহাজে অবস্থান।
★★ ১৬/২৩ ডিসেম্বর (২য় দিন): ভোরে ট্রলারে করে কটকার আশেপাশে ক্যানেল ক্রুজিং। তারপর ওয়াচ টাওয়ার হয়ে জামতলা সীবিচে গহীন বনের মধ্যে দিয়ে পায়ে হেটে ভ্রমন, ফিরে এসে ব্রেকফাস্ট করে কটকার অফিস পার নামবো ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে সেখানে প্রচুর হরিন দেখা পেতে পারে, সেখান থেকে ঘুরে আমরা লঞ্চে ফিরবো, লাঞ্চ করে আমরা হিরণ পয়েন্ট/কচিখালীর দিকে রওনা করবো। বিকালে হিরণ পয়েন্ট/কচিখালীতে ঘুরাঘুরি করে সূর্যাস্তের পরে শীপে এসে বার-বি-কিউ ডিনার করে জাহাজে রাত্রি যাপন।
★★ ১৭/২৪ ডিসেম্বর (৩য় দিন): সকালের নাস্তা খেয়ে করমজল ইকো ট্যুরিজম স্পট পরিদর্শন। সকাল ১০টায় করমজলে কুমিরের প্রজননকেন্দ্র দেখে দুপুরের দিকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা। বিকালে/সন্ধায় খুলনা পৌছে আনুমানিক ৭/৮টায় রাতের বাসে/ ট্রেনে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া হবে। ট্রিপ বুকিংঃ 01711-938204
বুকিং মানি জমা দেওয়ার পদ্ধতিঃ
১. সরাসরি অফিসে এসে জমা দেওয়া যাবে।
২. বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।
৩. ব্যাংক ডিপোজিট- DBBL, IBBL & PUBALI Bank
যোগাযোগ:- ঢাকা অফিস "01711938204"
৫১/১ ভি, আই, পি টাওয়ার নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ *[email protected]*
খুলনা অফিস- "01717456856"
এ-৯, মজিদ স্বরণী, শিববাড়ী, খুলনা।
ুন্দরবনভ্রমণজাহাজেরতথ্য

সুন্দরবনসুন্দরবন  বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম জোয়ারধৌত গরান বনভ...
09/12/2023

সুন্দরবন
সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম জোয়ারধৌত গরান বনভূমি (mangrove forest)। কর্কটক্রান্তির সামান্য দক্ষিণে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূল ধরে বিস্তৃত ২১°৩০´-২২°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০০´-৮৯°৫৫´ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যবর্তী স্থানে এ বনের অবস্থান। নানা ধরনের গাছপালার চমৎকার সমারোহ ও বিন্যাস এবং বন্যপ্রাণীর অনন্য সমাবেশ এ বনভূমিকে চিহ্নিত করেছে এক অপরূপ প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসেবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের একটি উলে­খযোগ্য কেন্দ্র হিসেবেও এটি বিবেচিত; এখান থেকে সংগৃহীত হয় নানা কাজে ব্যবহার উপযোগী বনবৃক্ষ, আহরিত হয় প্রচুর পরিমাণ মধু, মোম ও মাছ। সাতক্ষীরা, খুলনা এবং বাগেরহাট জেলার অংশবিশেষ জুড়ে বাংলাদেশের সুন্দরবন বিস্তৃত। পরস্পর সংযুক্ত প্রায় ৪০০ নদী-নালা, খালসহ প্রায় ২০০টি ছোট বড় দ্বীপ ছড়িয়ে আছে সুন্দরবনে।

আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর পূর্বেও মূল সুন্দরবনের এলাকা ছিল প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কিমি। বর্তমানে সংকুচিত হয়ে প্রকৃত আয়তনের এক-তৃতীয়াংশে পৌঁছেছে। ব্রিটিশ ভারত বিভাগের পর বনের দুই-তৃতীয়াংশ পড়েছে বাংলাদেশে, বাকিটা ভারতে। এই বনভূমির বর্তমান আয়তন হবে প্রায় ৪,১১০ বর্গ কিমি, এর প্রায় ১,৭০০ বর্গ কিমি জলাভূমি। গোটা সুন্দরবন দুটি বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। এখানে আছে চারটি প্রশাসনিক রেঞ্জ- বুড়িগোয়ালিনি, খুলনা, চাঁদপাই এবং শরণখোলা; আর ১৬টি ফরেস্ট স্টেশন। ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য সুন্দরবনকে নয়টি ব­ক (block) এবং ৫৫টি কোম্পার্টমেন্ট-এ (compartment) ভাগ করা হয়েছে। ১৮৭৫ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বনভূমির প্রায় ৩২,৪০০ হেক্টর এলাকাকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ১৯৯৯ সাল থেকে UNESCO World Heritage Site-এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আদেশ (সংশোধন), ১৭৭৪-এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৭ সালে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যগুলি (sanctuaries) প্রতিষ্ঠিত হয়।

যে তিনটি এলাকা এতে অন্তর্ভুক্ত সেগুলি হচ্ছে: সুন্দরবন পশ্চিম (৯,০৬৯ হেক্টর), সুন্দরবন দক্ষিণ (১৭,৮৭৮ হেক্টর) এবং সুন্দরবন পূর্ব (৫,৪৩৯ হেক্টর)।

‘সুন্দরবন’ নামটি সম্ভবত সুন্দরী বৃক্ষের আধিক্যের কারণে (সুন্দরী-বন) অথবা সাগরের বন (সমুদ্র-বন) কিংবা এ বনভূমির আদিবাসী চন্দ্রবেদে থেকে উদ্ভূত। সাধারণভাবে গৃহীত ব্যাখ্যাটি হলো এখানকার প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী বৃক্ষের (Heritiera fomes) নাম থেকেই এ বনভূমির নামকরণ।

ভূতত্ত্ব উৎপত্তির দিক থেকে সুন্দরবনের ভূভাগ সাম্প্রতিককালের এবং হিমালয় পর্বতের ভূমিক্ষয়জনিত জমা পলি থেকে এর সৃষ্টি। ভূগঠন প্রক্রিয়াটি সাগরের জোয়ারের কারণে ত্বরান্বিত হয়েছে। এর নিম্নস্তর প্রধানত কোয়াটারনারি যুগের (Quaternary) তলানিতে গঠিত, যার সংমিশ্রণ ঘটেছে বালি, পলি, সামুদ্রিক লবণ এবং কাদামাটির সঙ্গে। ভূতত্ত্ববিদগণ এখানকার ভূগঠনবিন্যাসে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সামান্য ঢালের সন্ধান পেয়েছেন এবং সেসঙ্গে টারসিয়ারি সময়ে সংঘটিত বাংলার অববাহিকার (Bengal Basin) ঝুকানো অবস্থা শনাক্ত করেছেন। দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে সংঘটিত নব্য-ভূগঠনিক আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বেঙ্গল বেসিন পূর্বমুখে ঝুঁকে পড়ে। সন্ধানমূলক কূপ খনন (borehole) গবেষণা থেকে প্রতীয়মান হয় যে সুন্দরবনের পশ্চিম এলাকা অপেক্ষাকৃত সুস্থিত হলেও দক্ষিণ-পূর্ব কোণার অংশ একটি সক্রিয় পলিজ এলাকা এবং ক্রমে তা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।

সুন্দরবনের জলপ্রবাহ
মৃত্তিকা বাংলাদেশের অভ্যন্তরভাগের অন্যান্য মৃত্তিকার তুলনায় সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনভূমির মৃত্তিকা পৃথক ধরনের এবং এ বনভূমিতে জোয়ারভাটার কারণে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার প্রভাব সুস্পষ্ট। মাটির এ ধরনের অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানকার উদ্ভিদকুলও বৈশিষ্ট্যময়। জোয়ারধৌত এ বনের কোন কোন স্থানের মাটি আধাশক্ত এবং তেমন সুদৃঢ় নয়; pH মানের ব্যাপ্তী ব্যাপক, ৫.৩ থেকে ৮.০। যদিও সুন্দরবনের মাটি মধ্যম বুননের এবং বালিময় দোঅাঁশ, পলিযুক্ত দোঅাঁশ অথবা কাদাযুক্ত দোঅাঁশ প্রকৃতির, মাটির দানার আকার ও বিস্তৃতিতে প্রচুর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পলিযুক্ত দোঅাঁশ এখানকার মাটির প্রধান গঠন উপাদান।

সোডিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা প্রতি ১০০ গ্রাম শুষ্ক মৃত্তিকায় ৫.৭ থেকে ২৯.৮ meq এবং এ মাত্রা সাধারণত বনভূমির পূর্বাঞ্চলে কম এবং ক্রমান্বয়ে পশ্চিম দিকে বেশি। পটাসিয়ামের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম, প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা মাটিতে ০.৩ থেকে ১.৩ meq। এখানকার শুকনা মাটির জৈব উপাদানের মাত্রা শতকরা ৪ থেকে ১০ ভাগ। মাটির লবণাক্ততা পূর্ব এলাকায় সামান্য থেকে পরিমিত, কিন্তু ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে পশ্চিম অঞ্চলে যথেষ্ট বেশি। সমগ্র বনভূমিতেই উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকের ভূভাগের লবণাক্ততার মধ্যে কোন সঙ্গতি নেই।

জলবায়ু যেহেতু সুন্দরবন কর্কটক্রান্তির দক্ষিণে অবস্থিত এবং বঙ্গোপসাগর-এর উত্তর দিকের সীমা বরাবর বিস্তৃত, এ বনকে তাই উষ্ণমন্ডলীয় আর্দ্র বনভূমি (tropical moist forest) হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়। বনসংলগ্ন ভূখন্ডের তুলনায় সুন্দরবনের তাপমাত্রা মোটামুটি সুষম। এর বিভিন্ন এলাকার বাৎসরিক গড় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩১° সে থেকে ২১° সে-এর মধ্যে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মধ্য-জুন পর্যন্ত সময়ে তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে কম ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসে। সুন্দরবনের পূর্ব দিকে পটুয়াখালী এলাকায় উষ্ণ মাসগুলিতে তাপমাত্রা ৩২.৪° সে পর্যন্ত পৌঁছয়।

গড় বাৎসরিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা (relative humidity) সাতক্ষীরায় ৭০% থেকে পটুয়াখলীতে ৪০%-এর মধ্যে উঠানামা করে। জুন থেকে অক্টোবর মাসগুলিতে আপেক্ষিক আর্দ্রতা সবচেয়ে বেশি এবং ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে কম। সুন্দরবনের বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ১৬৪০-২০০০ মিমি; বনের পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে বেশি। অধিকাংশ বৃষ্টিপাত হয় বর্ষা মৌসুমে, মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে। মধ্য-জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় কখনও কখনও ভারী বৃষ্টিপাত হয়। ঝড় এবং সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস অনেক সময় বনের ব্যাপক এলাকা প্লাবিত করে এবং এতে গাছপালা ও প্রাণীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।

উদ্ভিজ্জ সুন্দরবনের গাছপালার অধিকাংশই ম্যানগ্রোভ ধরনের এবং এখানে রয়েছে বৃক্ষ, লতাগুল্ম, পরগাছা এবং আরোহী উদ্ভিদসহ নানা ধরনের উদ্ভিজ্জ। অধিকাংশই চিরসবুজ হওয়ার কারণে এদের সবার শারীরবৃত্তিক ও গঠনগত অভিযোজন কমবেশি একই রকম। অধিকাংশ বৃক্ষের আছে ঊর্ধ্বমুখী শ্বাসমূল (pneumatophore), যার সাহায্যে এরা শ্বসনের জন্য বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। এ বনের প্রধান বৃক্ষ প্রজাতি সুন্দরী এবং গেওয়া (Excoecaria agallocha)। ১৯০৩ সালে ডি. প্রেইন সুন্দরবনের গাছপালার উপর লিখিত তাঁর গ্রন্থে ২৪৫ গণের অধীনে ৩৩৪টি উদ্ভিদ প্রজাতি লিপিবদ্ধ করেছেন; এর মধ্যে ১৭টি ফার্নজাতীয় (pteridophytes), ৮৭টি একবীজপত্রী (monocotyledons) এবং অবশিষ্ট ২৩০টি দ্বিবীজপত্রী (dicotyledons)। প্রজাতিগুলির মধ্যে ৩৫টি শিমগোত্রীয়, ২৯টি তৃণজাতীয়, ১৯টি হোগলাজাতীয় এবং ১৮টি সিজজাতীয় (euphorbias) উদ্ভিদ অন্তর্ভুক্ত। আজ পর্যন্ত জানা প্রায় ৫০টি প্রকৃত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে কেবল সুন্দরবনেই আছে ৩৫টি প্রজাতি। অধিকাংশ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ চিরসবুজ, খাটো, গুল্মজাতীয় অথবা লম্বা বৃক্ষজাতীয়। এদের অনেকেই বনের তলদেশ খালি না রেখে সাধারণত দলবদ্ধভাবে জন্মায়।

গোলাপাতা, সুন্দরবন
সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার লবণাক্ত পানির বনভূমিতে গেওয়া (E. agallocha), গরান (Ceriops decandra), কেওড়া (Sonneratia apetala), ওড়া (S. caseolaris), পশুর (Xylocarpus mekongensis), ধুন্দুল (X. granatum), বাইন (Avicennia alba, A. marina, A officinales) এবং অন্যান্য ঠৈসমূলবাহী উদ্ভিদ প্রধান। হেন্দালও (Phoenix pelludosa) এ এলাকার অন্যতম প্রধান উদ্ভিদ প্রজাতি। বনের মধ্যভাগে ম্যানগ্রোভ বনের বৈশিষ্ট্যমূলক বৃক্ষ প্রজাতির প্রাধান্য বেশি। খুলনা ও বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ অংশের অধিকাংশ এলাকা পরিমিত লবণাক্ত পানির বনে ঢাকা, আর এখানকার মুখ্য উদ্ভিদ প্রজাতি সুন্দরী।

প্রায় সব খালের পাড়েই ঘনভাবে জন্মে নিপা পাম বা গোলাপাতা (Nipa fruticans)। পশুর, হরিণঘাটা এবং বুড়িশ্বর নদী দিয়ে প্রবাহিত প্রচুর স্বাদুপানি লবণাক্ততা কিছুটা হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী এলাকায় সহনীয় স্বাদুপানির বন এলাকা গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে।

সুন্দরবনে স্পষ্টত কিছুটা উদ্ভিদ পর্যায় লক্ষ্য করা যায়, যেখানে নবগঠিত ভূমিতে কতক অগ্রগামী প্রজাতি, যেমন আরালি (Leersia hexandra) ও বুনো ধানের (Potresia sp) পরে জন্মায় বাইন (Avicennia), কেওড়া (Sonneratia) এবং খুলশী (Aegiceras)। দ্বিতীয় উদ্ভিদ পর্যায়ে আছে গরান (Ceriops), গেওয়া (Excoecaria), তুনশা (Bruguiera), সুন্দরী (Heritiera), পশুর (Xylocarpus), এবং ঝানা (Rhizophora)। টাইগার ফার্ন (Acrosticum aureum) জন্মে লবণাক্ত ও কম লবণাক্ত এলাকায় প্রায় ভূমি ঘেঁষে। গা-ঢাকা দেওয়ার জন্য বাঘ এসব ঝোপ ব্যবহার করে।

প্রাণী সুন্দরবনে নানা ধরনের প্রাণীর বাস। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের (Panthera tigris) সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আবাস এখানেই। অধিকন্তু এ বনভূমিতে আছে প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩২০ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি, প্রায় ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর এবং প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়া সুন্দরবনের উলে­খযোগ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ (Cervus axis), মায়া হরিণ (Muntiacus muntjak), রেসাস বানর (Macaca mulatta), বন বিড়াল (Felis chaus), লিওপার্ড (Prionailurus), সজারু (Hystrix indica), উদ (Lutra perspicillata) এবং বন্য শূকর (Sus scrofa)। হরিণ ও বন্য শূকর বাঘের প্রধান শিকার। বাঘসহ এখানকার আরও কতক প্রজাতি বিপন্নপ্রায়।

চিত্রা হরিণ, সুন্দরবন
বাস্ত্তসংস্থানিক বৈচিত্র্য সুন্দরবনকে দান করেছে নানাবিধ পাখির এক অপরূপ আবাসস্থান। এখানে বসবাসকারী অধিকাংশ পাখিই স্থানীয় বা আবাসিক (resident), প্রায় ৫০ প্রজাতি অনাবাসিক (non-resident) বা পরিযায়ী (migratory) এবং এদের অধিকাংশই হাঁসজাতীয়। বক, সারস, হাড়গিলা, কাদা-খোঁচা, লেনজা ও হট্টিটিসহ অসংখ্য উপকূলীয় পাখি এখানকার নদীনালার কিনারায় বিচরণ করে। সমুদ্র এবং বড় বড় নদীর উপকূলভাগে দেখা যায় বহু প্রজাতির গাংচিল, জলকবুতর, টার্ন (terns) ইত্যাদি। Accipitridae গোত্রের চিল, ঈগল, শকুন ইত্যাদির প্রায় ২২ প্রজাতির প্রতিনিধি এখানে রয়েছে।

এ বনে মাছরাঙা আছে ৯ প্রজাতির। পাখি সম্পদে উৎকর্ষ সুন্দরবনে কাঠঠোকরা, ভগীরথ, পেঁচা, মধুপায়ী, বুলবুল, শালিক, ফিঙে, বাবুই, ঘুঘু, বেনে বৌ, হাঁড়িচাঁচা, ফুলঝুরি, মুনিয়া, টুনটুনি ও দোয়েলসহ রয়েছে নানা ধরনের ছোট ছোট গায়ক পাখি।

প্রায় ৫০ প্রজাতির সরীসৃপের মধ্যে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় সদস্য মোহনার কুমির (Estuarine crocodile, Crocodylus porosus); এদের কোন কোনটির দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ৭ মিটার। ম্যানগ্রোভ পরিবেশে এক সময় এদের প্রচুর দেখা গেলেও এখন সেখানে এদের সংখ্যা মাত্র ২৫০ হবে বলে মনে করা হয়। গুইসাপসহ (Varanus spp) টিকটিকিজাতীয় সরীসৃপ, কচ্ছপ এবং সাপের প্রতিনিধিত্ব সন্তোষজনক। সাপের মধ্যে উলে­খযোগ্য রাজগোখরা (King cobra, Ophiophagus hannah), রাসেলস ভাইপার (Vipera russellii), অজগর (Python molurus), ব্যান্ডেড ক্রেইট (Bungarus fasciatus) এবং কয়েক প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ।

সুন্দরবন থেকে মাত্র ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বর্ণনা হয়েছে। সবুজ ব্যাঙ (Euphlyctis hexadactylus) বেশি দেখা যায় চাঁদপাই এলাকায়। এ বন অঞ্চলের অন্যান্য উভচরের মধ্যে রয়েছে স্কিপার ফ্রগ (E. cyanophlyctis), ক্রিকেট ফ্রগ (Limnonectes limnocaris), গেছো ব্যাঙ (Polypedates maculatus) এবং সাধারণ কুনো ব্যাঙ।

সুন্দরবনের নদীনালা ও অন্যান্য জলাশয়গুলিতে বাস করে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ; এর মধ্যে একদিকে যেমন আছে পানির বিভিন্ন স্তরে বিচরণশীল মাছ, অপরদিকে আছে পানির তলদেশে বাস করে এমন কিছু মাছ প্রজাতি। অনেক মাছ ম্যানগ্রোভ পরিবেশের জলাশয়কে ব্যবহার করে তাদের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে। মাছের খামার স্থাপন বা মাছ চাষ করার অনুমতি নেই সুন্দরবনে। সমগ্র এলাকাতেই মাছ আহরণ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রিত হয় বনবিভাগ কর্তৃক।

অমেরুদন্ডী প্রাণীর মধ্যে কতিপয় মোলাস্কা এবং ক্রাসটেসিয়ান গুরুত্বপূর্ণ মাৎস্যসম্পদ হিসেবে বিবেচিত। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতিগুলির মধ্যে তালিকাবদ্ধ হয়েছে প্রায় ২০ প্রজাতির চিংড়ি, ৮ প্রজাতির লবস্টার, ৭ প্রজাতির কাঁকড়া, কয়েক প্রজাতির শামুক এবং ৬ প্রজাতির ঝিনুক। চিংড়ির মধ্যে বাগদা চিংড়ি (Penaeus monodon) ও হরিণা চিংড়ি (Metapenaeus monoceros) এবং কাঁকড়ার মধ্যে মাড ক্রাব (Mud crab, Scylla serrata) বাণিজ্যিকভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনের কীটপতঙ্গের বৈচিত্র্য সীমাহীন। এখানকার অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি মৌমাছি (Apis dorsata)। স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘মৌয়াল’দের পেশা মধু সংগ্রহ করা। তারা বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে ফুলের মৌসুমে তিন চার মাস বন থেকে মধু সংগ্রহ করে। সুন্দরবনে মাকড়সার (Araneae) প্রাচুর্য রয়েছে। এখান থেকে ২২টি গোত্রের অধীনে প্রায় ৩০০ প্রজাতির মাকড়সা তালিকাবদ্ধ হয়েছে।

জোয়ারধৌত বন, সুন্দরবন
অর্থনৈতিক মান, পর্যটন ও বাসিন্দা সুন্দরবনের সবচেয়ে উলে­খযোগ্য গুরুত্ব এর সংরক্ষণমূলক ভূমিকা। এ বন উপকূলভাগের ভূমিক্ষয় রোধ করে, উপকূলীয় এলাকা পুনরুদ্ধার করে এবং নদীবাহিত পলি স্তরীভূত করে। এর মোহনা অঞ্চল বহু ধরনের মাছের প্রজনন কেন্দ্র। সুন্দরবনের বনসম্পদকে কেন্দ্র করে কয়েকটি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এগুলির মধ্যে উলে­খযোগ্য খুলনার নিউজপ্রিন্ট মিলস এবং হার্ডবোর্ড মিলস; প্রথমটির কাঁচামাল গেওয়া এবং দ্বিতীয়টির সুন্দরীবৃক্ষ। উদ্ভিদনির্ভর অন্যান্য শিল্প-কারখানার মধ্যে রয়েছে দিয়াশলাই ও নৌকা তৈরির কারখানা। এ বনভূমি জ্বালানি, ট্যানিন, ঘরের ছাউনি তৈরির উপকরণ, কাঠজাত দ্রব্য, ভেষজ উদ্ভিদ এবং পশুখাদ্যের অন্যতম প্রধান উৎস ও যোগানদার। দেশের অধিকাংশ মধু ও মোম (bee wax) সংগৃহীত হয় সুন্দরবন থেকেই। এখানে রয়েছে Aegiceras corniculatum, Ceriops decandra, Nipa spp, Derris spp এবং Hibiscus tiliaceus-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক মধুপ্রদায়ী উদ্ভিদ প্রজাতি।

প্রমোদ ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের এক আকর্ষণীয় স্থান সুন্দরবন। এখানকার কটকা, হিরণ পয়েন্ট (সাধারণভাবে নীলকমল নামে পরিচিত), দুবলার চর এবং টাইগার পয়েন্ট (কচিখালী)-এ প্রতিবছর পর্যটকদের প্রচুর সমাগম ঘটে। কটকার অনবদ্য প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং বন্যপ্রাণী ভ্রমণকারীদের জন্য অতি আকর্ষণীয়। এখানে বনবিভাগ পরিচালিত একটি ডাকবাংলো এবং একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার (observation tower) আছে। হিরণ পয়েন্ট-এও আছে পর্যটকদের জন্য অতিথি ভবন এবং একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। দুবলার চর একটি ছোট দ্বীপ, এর সমুদ্র সৈকত অতি মনোরম। এর অন্য আরেকটি আকর্ষণ মাছ ধরার কর্মকান্ড, যা প্রতিবছর মধ্য-অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলে। এ সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে আসে শত শত জেলে। এখানে তারা মাছ ধরে এবং রৌদ্রোজ্জ্বল বেলাভূমিতে তা শুকায়। মধু সংগ্রাহক মউয়ালরা সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে বনের গভীরে ঢুকে মৌচাক খোঁজে।

সুন্দরবন বা সুন্দরবনের সংলগ্ন এলাকাতে খুব কম মানুষজনই স্থায়িভাবে বসবাস করে। স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে রয়েছে বাওয়ালি (যারা গোলপাতা সংগ্রহ করে), মউয়াল এবং কাঠুরে। বনের ধার ঘেঁষে ৩-৫ মিটার উঁচুতে কাঠ বা বাঁশের মঞ্চ তৈরি করে তার উপর তারা ঘর বাঁধে। কতক লোক, বিশেষ করে বেদেরা নৌকায় যাযাবর জীবন কাটায়।

সুন্দরবন বনভূমির পুনরুৎপাদন বনাঞ্চলের গাছপালার পুনরুৎপাদন হয় স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অথবা বীজ বপন বা চারা রোপণের মাধ্যমে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ বহুলাংশে প্রাকৃতিক পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। বনের অধিকাংশ এলাকায় আহরিত-বৃক্ষ প্রতিস্থাপনের জন্য প্রচুর বীজ সংগৃহীত হয়। দেখা গিয়েছে প্রতিবছর হেক্টর প্রতি গড়ে প্রায় ২৭,৭৫০ চারা উৎপন্ন হয়, যদিও বনভূমির এলাকাভেদে এর ঘনত্বে তারতম্য হয়। সুন্দরী, গেওয়া এবং অন্যান্য বৃক্ষ প্রজাতি একত্রে যথাক্রমে প্রায় ২৪, ৫৪ এবং ২২ শতাংশ চারা (তিন মাস বয়সের) উৎপন্ন করে।

বন এলাকার লবণাক্ততা বস্ত্তত পুনরুৎপাদন ঘনত্বকে প্রভাবিত করে, বেশি লবণাক্ততা ঘনত্ব কমায়। সরবরাহকৃত চারার পরিমাণ বিভিন্ন বছরে কমবেশি হয়, তবে এ ক্ষেত্রে লবণাক্ততার প্রভাব সামান্যই। সুন্দরবনের লবণসৃমদ্ধ তিনটি এলাকায় চারা উৎপাদনের মাত্রার বৈষম্য লক্ষণীয়। সুন্দরী, গেওয়া এবং অন্যান্য বৃক্ষ প্রজাতির চারা উৎপাদনের তারতম্য বিভিন্ন বছরে বিভিন্ন পরিমাপের হয়। এ পার্থক্য সম্ভবত উদ্ভিদ প্রজাতিতে বিদ্যমান পর্যাবৃত্তির কারণে ঘটে থাকে।

মধু হল এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ, যা মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে তৈরি করে এবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে।...
07/12/2023

মধু
হল এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ, যা মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে তৈরি করে এবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে। এটি উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল ; এটি সুপেয়। বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতিতে এর ব্যবহারে চিনির চেয়ে এর অনেক সুবিধা রয়েছে। এর বিশিষ্ট গন্ধের জন্য অনেকে চিনির চাইতে মধুকেই পছন্দ করে থাকেন। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু স্বাদ, রং, হালকা সুগন্ধ এবং ঔষধিগুণাবলীর জন্য প্রসিদ্ধ। সুন্দরবনের বেশিরভাগ মধু কেওড়া গাছের ফুল থেকে উৎপন্ন। সুন্দরবনের মাওয়ালী সম্প্রদায়ের লোকেরা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রয় করে জীবন নির্বাহ করে। মধুর অন্য একটি গুণ হল এটি কখনো নষ্ট হয় না৷ হাজার বছরেও মধুর গুণাগুণ নষ্ট হয় না।

রাসায়নিক উপাদান
মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনজাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি। মধুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান।

ভৌত বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের জাতীয় মধু বোর্ডের সংজ্ঞা অনুযায়ী "মধু হল একটি বিশুদ্ধ পদার্থ যাতে পানি বা অন্য কোন মিষ্টকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় নাই।"[৫] মধু চিনির চাইতে অনেক গুণ মিষ্টি। তরল মধু নষ্ট হয় না, কারণ এতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। প্রাকৃতিক বায়ুবাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় হতে পারে না, কারণ মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প। প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রতা থাকে। আর্দ্রতা মাত্রা ১৮% এর নিচে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। পাস্তুরাইয্ড মধুতে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়।

ব্যবহার
প্রাচীন গ্রিসের খেলোয়াড়েরা মধু খেয়ে মাঠে নামতো ; কারণ মধুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ যা যকৃতে গ্রাইকোজেনের রিজার্ভ গড়ে তোলে। রাতে ঘুমানোর আগে মধু খেলে মস্তিষ্কের ক্রিয়াক্ষমতা ভালো থাকে। নিয়মিত মধু পানে রোগ-বালাই হ্রাস পায় কেননা মধু মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঠাণ্ডায় মধু ভালো কাজ করে ; পেনসিলভেনিয়া স্টেট কলেজের পরীক্ষায় দেখা গেছে বাজারে যত ঔষধ পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর এক চামচ মধু। মধুর ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা উচ্চ। মধু হজমে সাহায্য করে। পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারী।[৯] প্রাচীন কাল থেকে গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৭-এ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে মধু ডাক্তারী ড্রেসিং-এর চেয়েও বেশি কার্যকর। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী।

মালয়েশিয়ার তুয়ালাং মধু (Tualang honey) স্ট্যাফ (Staph) রোধে এবং পেপটিক আলসার ও এইচ পিলরি (H. pylori) ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করতে পারে।

মধুর গুণাগুণ ও উপকারিতা
সাধারণভাবে বলা যায়- মধু হলো লাখ লাখ মৌমাছির অক্লান্ত শ্রম আর সেবাব্রতী জীবনের দান। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের রেণু ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করে পাকস্থলীতে রাখে। তারপর সেখানে মৌমাছির মুখ নিঃসৃত লালা মিশ্রিত হয়ে রাসায়নিক জটিল বিক্রিয়ায় মধু তৈরি হয়। এরপর মুখ হতে মৌচাকের প্রকোষ্ঠে জমা করা হয়।

ধর্মীয় তাৎপর্য
প্রাচীন গ্রীক ধর্মে, জিউস এবং অলিম্পাসের বারো দেবতার খাদ্য ছিল অমৃত এবং অমৃত আকারে মধু।

হিন্দু ধর্মে, মধু জীবনের পাঁচটি অমৃতের মধ্যে একটি (পঞ্চামৃত)। মন্দিরে, মধু অভিষেক নামক একটি রীতিতে দেবতাদের উপর মধু ঢেলে দেওয়া হয়। বেদ এবং অন্যান্য প্রাচীন সাহিত্যে মধুর ব্যবহার একটি মহাঔষধি এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[১২]

আরবি পরিভাষায় মধুপোকা বা মৌমাছিকে ‘নাহল’(نحل) বলা হয়। পবিত্র কোরআনে এই নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা বিদ্যমান আছে। সূরা নাহল এর আয়াত ৬৯-এ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন--
"তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।"[১৩]

মধু হচ্ছে ওষুধ এবং খাদ্য উভয়ই। মধুকে বলা হয়- বিররে এলাহি ও তিব্বে নব্বী। অর্থাৎ খোদায়ী চিকিৎসা ও নবী করীম (সা.)- এর বিধানের অন্তর্ভুক্ত। সূরা মুহাম্মদ- এর ১৫ আয়াতে আল্লাহ তায়ালার এরশাদ হচ্ছে- “জান্নাতে স্বচ্ছ মধুর নহর প্রবাহিত হবে।”[১৪]

খাদ্য ও ঋতুর বিভিন্নতার কারণে মধুর রঙ বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণেই কোন বিশেষ অঞ্চলে কোন বিশেষ ফল-ফুলের প্রাচুর্য থাকলে সেই এলাকার মধুতে তার প্রভাব ও স্বাদ অবশ্যই পরিলক্ষিত হয়।

মধুর পুষ্টিগুণ
Honey
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান
শক্তি ১,২৭২ কিজু (৩০৪ kcal)
শর্করা
৮২.৪ g
চিনি ৮২.১২ g
খাদ্য আঁশ ০.২ g
স্নেহ পদার্থ
০ g
প্রোটিন
০.৩ g
ভিটামিন পরিমাণদৈপ%†
রিবোফ্লাভিন (বি২) ৩%০.০৩৮ মিগ্রা
নায়াসিন (বি৩) ১%০.১২১ মিগ্রা
প্যানটোথেনিক
অ্যাসিড (বি৫) ১%০.০৬৮ মিগ্রা
ভিটামিন বি৬ ২%০.০২৪ মিগ্রা
ফোলেট (বি৯) ১%২ μg
ভিটামিন সি ১%০.৫ মিগ্রা
খনিজ পরিমাণদৈপ%†
ক্যালসিয়াম ১%৬ মিগ্রা
লৌহ ৩%০.৪২ মিগ্রা
ম্যাগনেসিয়াম ১%২ মিগ্রা
ফসফরাস ১%৪ মিগ্রা
পটাসিয়াম ১%৫২ মিগ্রা
সোডিয়াম ০%৪ মিগ্রা
জিংক ২%০.২২ মিগ্রা
অন্যান্য উপাদান পরিমাণ
পানি ১৭.১০ g
একক
μg = মাইক্রোগ্রাম • মিগ্রা = মিলিগ্রাম
IU = আন্তর্জাতিক একক
†প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।
মধুতে রয়েছে ৪৫টিরও বেশি খাদ্যগুণ। তার মধ্যে কয়েকটি হল[১৫]

১। মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ,

২। ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ,

৩। ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ

৪। ৫ থেকে ১২ শতাংশ মন্টোজ

৫। ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড

৬। ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ

৭। ১১ শতাংশ এনকাইম

৮। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ৩০৩ ক্যালরি।

৯। ভিটামিন বি১

১০। ভিটামিন বি২

১১। ভিটামিন বি৩

১২। ভিটামিন বি৫

১৩। ভিটামিন বি৬

১৪। আয়োডিন

১৫। জিংক

১৬। কপার

১৭। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান

১৮। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান

Address

51/1 VIP Tower, Naya Palton
Dhaka
1000

Telephone

+8801711938204

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sundarban Tours সুন্দরবন posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Sundarban Tours সুন্দরবন:

Videos

Share

“We arrange Holiday Package Tour”

“Explore Sundarban with our Luxurious Tourist Ship”


Other Boat Tour Agencies in Dhaka

Show All