11/12/2023
আচ্ছা, বাঘ কি সত্যিই বোকা? উপেন্দ্রকিশোরের বাঘ মামা আর শিয়াল ভাগ্নের গল্প পড়ে সেই ছোট বেলা থেকেই প্রশ্নটা মনের মধ্যে উঁকি দিত। এক ধূর্ত শিয়াল কুয়োর মধ্যে মাদুর বিছিয়ে তার উপর বাঘ মামাকে বসতে দিয়েছিল। বেচারা বাঘ মাদুরে বসতে গিয়ে কুয়োর মধ্যে পড়ে জলে হাবুডুবু খেয়েছিল। অনেক বাঙালি গল্প লেখক বাঘকে গোবেচারা বানিয়ে দিয়েছেন।
'পায়ে পড়ি বাঘমামা, করো নাকো রাগ মামা, তুমি যে এ ঘরে কে তা জানত' গান শুনিয়ে বাঘকে বশে আনার কৌশল শিখিয়েছেন বরেণ্য চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। শিবরাম চক্রবর্তীর ‘আমার বাঘ শিকার’, ত্রৈলোক্যনাথের ডমরুধরের বাঘ শিকার গল্পেও বাঘকে বোকা হিসেবে চিনেছে বাঙালি। হার্পারকলিনস প্রকাশনীর বিখ্যাত শিশুদের গল্পের বই 'দ্য টাইগার হু কেম টু টি'- র লেখক জুডিথ কের এক 'দয়ালু' বাঘকে ঘরে বসিয়ে চা পর্যন্ত খাইয়েছেন। রূপকথার গল্পে শিয়াল পণ্ডিতের কাছে বারবার বোকা বনেছে বনের রাজা।
তবে অনেকের কাছেই বাঘ একটা ভয়ঙ্কর হিংস্র প্রাণী। যার সামনে পড়লে পগার পার। আবার রাজ রাজাদের কাছে বাঘ ছিল শৌর্যের প্রতীক। রাজা কিংবা জমিদাররা নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে বাঘ শিকারে বেরতেন। কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ছিলেন একজন দক্ষ শিকারি। ডুয়ার্স ও অসমের জঙ্গলে তিনি নিয়মিত শিকারে যেতেন। সেখানে যা কিছু ঘটত, সবটাই লিখে রাখতেন ডায়েরিতে। ১৯১১ সালে সেটাই বই আকারে প্রকাশিত হয়। যার নাম ‘থার্টি সেভেন ইয়ার্স অব বিগ গেম হান্টিং গল কোচবিহার, ডুয়ার্স অ্যান্ড অসম’। মোট ৪৬১ পাতার বইয়ে শিকারের বিভিন্ন রোমহর্ষক গল্প, ৩৮টি পুরনো মানচিত্র এবং ১৫৯টি দুষ্প্রাপ্য ছবি রয়েছে।
বাঘের সাতকাহন:
* রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বিড়াল প্রজাতি।
* গড় উচ্চতা ১১ ফুট।
* পুরুষ বাঘ গড়ে ২২১ কেজি ওজনের হয়, আর বাঘিনী গড়ে ১৩৭ কিলোগ্রাম ওজনের হয়।
* প্রিয় খাদ্য হরিণ, বুনো শুকর, বানর।
* দৈনিক ৫-১৫ কেজি মাংস খায়। পুরুষ বাঘ ৩০ কেজি পর্যন্ত মাংস খেয়ে নিতে পারে।
* বাঘেরা নিঃশব্দে শিকারের পিছু নেয়। অতর্কিত আক্রমণ করে। এ সময় এদের গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৫০-৬৫ কিলোমিটার। জলেও শিকার ধরতে পারে। ঘণ্টায় ৩২ কিমি বেগে সাঁতার কাটতে পারে। লঞ্চের থেকেও বেশি গতিবেগ। শরীর ঠান্ডা রাখতেও এরা জলে নামে
* বাঘ একাকি থাকতে ভালোবাসে। ব্যাঘ্র শাবকের বয়স দুবছর হলেই বাচ্চাদের থেকে আলাদা হয়ে যায়।
* বাঘের মিলন বছরের যে কোনও সময় হতে পারে। নভেম্বর-এপ্রিলের মধ্যেই সর্বাধিক মিলন ঘটে।
* বাঘিনীদের গর্ভাবস্থা ১০৩-১০৫ দিনের। এক সঙ্গে ২-৪টি বাচ্চা হয়।
* বাঘ রাতেই বেশি শিকার করে। শিকারের সময় বাঘ শ্বাসনালী কামড়ে ধরে। শিকার দমবন্ধ হয়ে না মরা পর্যন্ত বাঘ গলাটা আঁকড়ে ধরেই থাকে।
* এদের ক্যানাইন দাঁত ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়, ব্লেডের মত ধারালো বাঁকানো নখ। সামনের পায়ের নখ ৩ ইঞ্চি।
* বাঘের চোখ পিউপিল গোলাকার। কারণ বাঘ সাধারণত সকালে এবং সন্ধ্যায় শিকার করে।
* বাঘ তাদের এলাকা চিহ্নিত করে ইউরিনের মাধ্যমে যা অন্য বাঘদের সতর্ক করে। বাঘের প্রস্রাবের গন্ধ অনেকটা বাটার মাখানো পপকর্ণের মত।
* বাঘ অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের প্রথম এক সপ্তাহ পর্যন্ত বাঘের বাচ্চা পুরোপুরি অন্ধ থাকে।
* বাঘ ২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
* বাঘেরা শুধুমাত্র দূরবর্তী বাঘদের সাথে যোগাযোগের জন্যই গর্জন করে থাকে। রাতের নির্জনতায় বাঘের গর্জন ৩ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়। যখন তারা ভয় পায় বিড়ালের মতোই শিস দেয়।
* পুরুষ বাঘ উদার হয়, তারা স্ত্রী বাঘকে এবং শাবকদের আগে খেতে দেয়।
নৃপেন্দ্রনারায়ণের আমন্ত্রণে একবার লর্ড কার্জন জলদাপাড়া অরণ্যে শিকার করতে গিয়েছিলেন। কার্জন নাকি তিনটি চিতাবাঘ শিকার করেছিলেন।
মহীশূরের রাজা টিপু সুলতান ছোটবেলা থেকেই বাঘের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। কিশোর বয়সে তিনি বাঘ পুষতে শুরু করেন। তখনকার শ্রেষ্ঠ কারিগরদের দিয়ে কাঠের ফ্রেমের উপর সোনার পাত বসিয়ে তিনি একটি রত্নখচিত সিংহাসন বানিয়েছিলেন। যার নাম ছিল 'ব্যাঘ্রাসন'। আট কোণা সিংহাসনের মাঝখানে ছিলো একটি বাঘের মূর্তি। আসনটির রেলিংয়ের মাথায় বসানো ছিলো সোনা দিয়ে বানানো দশটি বাঘের মাথা। আসনের উপর ডোরাকাটা দাগ। পোশাকেও বাঘের ছবি আঁকা থাকতো।
১৯৭৩ সালেই ইংরেজ সেনাপতি হেক্টর মুনরোর একমাত্র পুত্র সুন্দরবনের বাঘ শিকার করতে এসে বাঘের হাতে নিহত হয়েছিলেন। তার আদলে টিপু একটি খেলনা বানিয়েছিলেন। যেখানে একজন ইংরেজ সেনাকে একটি বাঘ কামড়াচ্ছে। তার জেরে সেই ইংরেজ সাহেবের মুখ থেকে গোঙানির শব্দ শোনা যেত। যা 'টিপু'স টাইগার' নামে পরিচিত। সুন্দরবন এলাকায় বাঘেদের দেবী হিসেবে পূজিত হন বনবিবি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই বনবিবি হলেন মানুষের রক্ষাকর্ত্রী। বনের বাওয়ালি-মৌলেরা বাঘের মুখে পড়লে বনবিবির নাম স্মরণ করে মন্ত্র পড়লে বাঘ দৌড়ে পালাবে। যারা সুন্দরবনে মধুর চাক ভাঙতে অথবা কাঠ কাটতে যান তাঁরা বনে কাজে যাওয়ার আগে বনবিবির পূজা করেন।
বনবিবিকে নিয়ে অনেক রূপকথার গল্প শুনতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটা গল্প বহুল প্রচলিত। গল্পটা হল এরকম:
এক সওদাগরের দুই সুন্দরী স্ত্রী ছিলেন। ছোটো বউয়ের চক্রান্তে সন্তানসম্ভবা বড়ো বউ গুলালবিবি সুন্দরবনে নির্বাসিত হন। কয়েকদিন পর সেখানেই যমজ পুত্র-কন্যার জন্ম দিয়ে তার মৃত্যু হয়। সদ্যোজাত শিশু দু'টির কান্না শুনে বনের বাঘ, কুমির, হরিণ, অজগর, বানস সবাই ছুটে আসে। তারাই দুই ভাইবোনকে লালনপালন করে বড়ো করে তোলে। ছেলেটি বড়ো হয়ে বাঘের রাজা এবং মেয়েটি বনবিবি নামে পরিচিত হয়।
আমরা শহরের লোকেরা বাঘকে মামা সম্বোধন করে আনন্দ পেলেও সুন্দরবনের মানুষের কাছে বাঘ মানেই বিভীষিকা। গল্পে বাঘকে যেভাবে নিরীহ বোকা প্রাণী হিসেবে দেখানো হয় সুন্দরবনের বাঘ মোটেও তা নয়। প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠা সুন্দরবনের বাঘ শুধু হিংস্রই নয়, তারা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। সুন্দরবনের যে অংশে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বাসভূমি তার বেশিরভাগটাই জলবেষ্টিত। চারিদিকে সমুদ্রের নোনা জল। জোয়ারে বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে যায়। জোয়ার-ভাটার খেলায় অনবরত পাড় ভাঙছে। সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে স্থলভাগ। তার সঙ্গে রয়েছে সমুদ্রের জলচ্ছ্বাস এবং ঘূর্ণিঝড়। এরকম সঙ্কটময় পরিবেশে বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় বাঘকে। বুদ্ধিও খাটাতে হয়।
সুন্দরবনের নদীগুলোয় প্রতিদিন দুবার করে জোয়ার-ভাটা হয়। জোয়ারের সময় ম্যানগ্রোভ অরণ্যের একটা বড় অংশই ডুবে যায়। তখন নিজেকে বাঁচাতে বাঘেরা দীর্ঘক্ষণ জলে ভেসে থাকে। বাঘ শুধু নিজেকে বাঁচাতেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু বাঘিনীকে তার শাসকদের কথা মাথায় রাখতে হয়। একটি বাঘিনী চারটি পর্যন্ত বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে। জোয়ারে স্থলভাগে জল উঠে গেলে বাঘিনীরা বড়জোর তার একটি বাচ্চাকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। বাকিরা জলের তোড়ে ভেসে যায়। এভাবে অনেক ব্যাঘ্র শাবকের মৃত্যু হয়।
নদীতে জোয়ার আসার আগে বাঘ ঠিক টের পেয়ে যায়। নদী-খালের ধারে অথবা বনের ভিতর বাঘের পায়ে জল লাগলেই দ্রুত হাঁটা শুরু করে। বাঘ তখন উঁচু জায়গার সন্ধান করে। অনেক সময় জোয়ারে জল এত দ্রুত বাড়তে থাকে যে বাঘ আর ডাঙায় উঠতে পারে না। তখন সে জলে গা ভাসিয়ে দেয়। বড় কোনো গাছের ডাল পেলে সেটাকে আঁকড়ে ধরে। গলাটা উঁচু করে ঝুলে থাকে।
সুন্দরবনের কালিরচর এলাকা থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি খালে দুপুরবেলা নৌকায় করে মাছ ধরছিলেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। জোয়ারের জল খুব দ্রুত বাড়ছিল তখন। জঙ্গলের ভিতর দিয়েও জোয়ারের জল বইতে আরম্ভ করে। সেই স্রোতের মধ্যেই মাথা উঁচু করে যাচ্ছিল একটি বাঘিনী। তার সঙ্গে একটি ছোট বাচ্চাও ছিল। নিজেকে বাঁচাতে বাঘটি গাছের ডাল ধরে নেয়। কিন্তু তার চোখের সামনে বাচ্চাটি জোয়ারের জলে ভেসে চলে যায়। জৈষ্ঠ মাসে জোয়ারের জল বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি বাড়ে। আশ্বিন পর্যন্ত এর রেশ থাকে। জলোচ্ছ্বাসের সময় দু'-তিন দিন পর্যন্ত জলে ডুবে থাকে সুন্দরবন।
জোয়ার শেষে ছয় ঘণ্টা পর আসে ভাটা। তখন শুরু হয় বাঘগুলোর খাবার খোঁজার পালা। তাই শিকার বা খাবারের সন্ধান করতে একটি বাঘের প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার বেশি সময় মেলে না। এ সময়ের মধ্যে শিকার, আহার ছাড়াও বাসস্থানের সন্ধান করতে হয় বাঘকে। চলে চোরা শিকারিদের সঙ্গে বাঘের লড়াই। ট্রাঙ্কুলাইজারগানে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে বাঘিনীকে অচেতন করা হয়। পরে পাচারকারীরা বাঘের দাঁতও অন্য অঙ্গ তুলে নিয়ে যায়।
এত প্রতিকূলতার মধ্যে সুন্দরবনের বাঘ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে স্রেফ উপস্থিত বুদ্ধির জেরে। সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। জঙ্গলে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে, দ্রোন উড়িয়ে বাঘেদের গতিবিধির উপর নজর রাখে বনদপ্তর। বাজারে ব্যাঘ্র প্রেমী এবং বিশেষজ্ঞের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবু সুন্দরবনের বাঘেদের সম্পর্কে কতটুকুই বা জানতে পেরেছি আমরা!
সুন্দরবনের বাঘেদের চরিত্র যে ক্রমশ বদলাচ্ছে সেটা নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারছেন আশপাশের গ্রামবাসীরা। ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার আশপাশে যারা থাকেন তারা নিয়মিত বাঘেদের গতিবিধির খবর রাখেন। সুন্দরবনের বহু মানুষ জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল। মধু সংগ্রহ কিংবা কাঁকড়া ধরতে তাদেরকে বাঘের ডেরায় ঢুকতেই হয়। বাঘের মনের খবর তাদের কাছ থেকেই সবথেকে ভাল জানা যায়। গোসাবার সাতজেলিয়া দ্বীপের চরঘেরি এলাকার পাশেই সংরক্ষিত এলাকা শুরু হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই এখানে বাঘ হানা দেয়। এই গ্রামেরই বাসিন্দা উমাশঙ্কর মণ্ডল। মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন দিন ধরেই লড়াই চালাচ্ছেন। ছোট বেলা থেকে ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন। বহু লোককে বাঘের হাতে মরতে দেখেছেন। কিছুদিন আগে তাঁর এক নিকটাত্মীয়কে বাঘে তুলে নিয়ে যায়। এরকম বহু ঘটনার সাক্ষী তিনি।
উমাশঙ্কর জানাচ্ছেন, সুন্দরবনের বাঘ আর আগের মতো নেই। তারা এখন খুব চালাক হয়ে গিয়েছে। আগে বাঘ যেখানে কাউকে আক্রমণ করতো সেখানে আবার শিকার পাওয়া যাবে, এই আশায় বেশ কিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকতো। ফলে মৌলিরা সাবধান হয়ে যেতো। সেদিকে কেউ ভিড়তো না। কিন্তু এখন বাঘেরা এক জায়গায় মানুষকে আক্রমণ করার পর পরের দিন আবার অন্য জায়গায় হানা দিচ্ছে। ফলে জঙ্গলে যারা যায় তারাও বাঘেদের গতিবিধি বুঝতে পারছে না।
সুন্দরবনের বাঘেদের সঙ্গে মানুষের সংঘাত নিয়ে গবেষণা করছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সোমা সরখেল। তার জন্য সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আশপাশের গ্রামে যারা বাঘের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন তাদের থেকে তথ্য জোগাড় করেছেন। বাঘ বিধবা এবং আশপাশের গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, মানুষ বাঘেদের খাদ্য তালিকার মধ্যে নেই। বরং মানুষই তাদের ডেরায় ঢুকে সুন্দরবনের বাঘকে নরখাদক করে তুলছে।
তাঁর ব্যাখ্যা, সুন্দরবনের সব বাঘ কিন্তু মানুষ খেকো নয়। এখানে দু'ধরণের বাঘ রয়েছে। কিছু বাঘ 'ডেজিগনেটেড ম্যান ইটার'। কেউ 'অ্যাগ্রেসিভ ম্যান ইটার'। তবে বারবার মানুষ যদি তাদের সংস্পর্শে আসে তাহলে বাঘ একদিন মানুষ খেকো হয়ে উঠতে পারে। সোমার কথায়, 'ব্যক্তিগত জগৎ আর নিজের উঠোন সকলেরই ব্যক্তিগত। বাঘের ব্যক্তিগত পরিসরকে গুরুত্ব দিতে হবে।' তাঁর সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৯ সালের মে মাসে আইলার পর জঙ্গল থেকে বসতিতে বাঘের অনুপ্রবেশ যথেষ্ট বেড়ে যায়। ২০০৮-'০৯ সালে সুন্দরবনের লোকালয়ে মোট ১২ বার বাঘ ঢুকেছিল ২০০৯-'১০ সালে ২৪ বার এবং আয়লার পর ২০১০-'১১ সালে সেটা হয়ে যায় ২৭ বার। তরুবালা মন্ডল নামে একজন মহিলাকে রান্নাঘরে ঢুকে আক্রমণ করে বাঘ। আইলার পরপরই বাঘের হানায় মৃত্যুও বেড়ে গিয়েছিল।
২০০৮-'০৯ এ বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় চার জনের। ২০০৯-'১০ সালে সেটা বেড়ে হয় আটজন এবং ২০১০-'১১ সালে মোট ১০ জন বাঘের হানায় প্রাণ হারান। আয়লার মতো উম্পুনের প্রভাবে সুন্দরবনে বাঘের হানা বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরাও স্বীকার করে নিচ্ছেন, উম্পুনের পর সুন্দরবনে বেআইনি অনুপ্রবেশ ঠেকানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। লকডাউন এবং উম্পুনের ধাক্কায় সুন্দরবনের মানুষের আয়ের বিকল্প রাস্তাগুলি সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ অবস্থায় বাঁচার জন্য তারা জঙ্গলের উপর আরও বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হবেন। মধু সংগ্রহ, কাঁকড়া ধরা, জ্বালানি কাঠের জন্য জঙ্গলে ঢোকার প্রবণতা বাড়বে। ফলে বাঘেদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। সুন্দরবনের পরিবেশের উপরও তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।