18/09/2022
পাসপোর্ট অফিস: শর্ষের ভেতরের ভূত তাড়াবে কে
পাসপোর্ট করার জন্য ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে বিশাল লাইন। চারদিকে দালাল কিলবিল করছে। লাইনে দাঁড়ানো এক ভদ্রলোককে দালাল বলছে, ‘ও ভাই, আমার সঙ্গে আসেন। দুই হাজার টাকা দিলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব কাজ শেষ করে দেব।’ ভদ্রলোক বললেন, ‘না ভাই, টাকা দিতে পারব না।’ আরেক লোক দালালকে বললেন, ‘দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। দুই হাজার টাকা দিলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ হবে তো?’ দালাল বলল, ‘চলেন ভাই, পাঁচ মিনিটের মধ্যে হয়ে যাবে।’
দালালের সঙ্গে ওই ভদ্রলোক অন্য পথ দিয়ে ঢুকলেন পাসপোর্ট অফিসে। দোতলায় এক রুমে ঢোকার আগে দালাল বলল, ‘দুই হাজার টাকা দেন, আপনি এখানে দাঁড়ান।’
ভদ্রলোক দুই হাজার টাকা দালালের হাতে দিলেন।
দালাল বলল, ‘দুই মিনিট অপেক্ষা করুন।’
দুই মিনিট যায়, পাঁচ মিনিট যায়, দশ মিনিট যায়, কিন্তু দালালের কোনো খবর নেই।
ভদ্রলোক নিরুপায় হয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখেন, ওই রুমে কেউ নেই। তিনি হায় হায় করতে করতে নিচে নেমে এসে বুক চাপড়িয়ে বলতে লাগলেন, ‘আমার আমও গেল, ছালাও গেল। দালাল আমার সর্বনাশ করে জনমের তরে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। দালাল আমার সর্বনাশ করে দিয়েছে।’
চোখের জল মুছতে মুছতে ভদ্রলোক লাইনের পাশে এসে দাঁড়ালেন।
ভোগান্তির শেষ নেই। দালাল যারা রুখবে, তারা কোথায়? যারা দালাল নির্মূল করবে, তারা কি দালালের ভায়রা!
লোকজনের প্রতিক্রিয়া, দালালেরা জোঁকের মতো পেছনে লেগেই থাকে। পুলিশ কোথায়? কেউ কেউ আবার বলল, অফিসের কর্মকর্তাদের কী বলব, তাঁরাও নাকি দালালের সঙ্গে জড়িত।
এক ভদ্রলোক বলেন, ‘অফিসের কর্মকর্তাদের কী বলব, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও ভুল আছে বলে তাঁরা অফিস থেকে বের করে দেন তা ঠিক করে আনার জন্য। তাঁরা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় মাসে মাসে বেতন–ভাতা নেন, তাহলে তো আবেদনকারীর ভুল সংশোধন করার দায়দায়িত্ব তো পাসপোর্ট অফিসে কর্মকর্তাদের ওপরই বর্তায়।’
সকাল থেকে সিরিয়ালে থেকে শেষ সময়ে যদি ভুল সংশোধন করার জন্য বাইরে চলে যেতে হয়, তখন কার না খারাপ লাগে।
যদি ভুলগুলো ঠিক করে আনা হয়, তারপরও তাঁরা বলবেন ভুল আছে। ভুল ঠিকঠাক করে আনতে আনতে সন্ধ্যা। তাঁদের জন্য খাওয়াদাওয়া ও নামাজ পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
দালালেরা কীভাবে পাসপোর্ট অফিসের সামনে ঘোরাঘুরি করে? দালালদের ধরে যায় না কেন? কেন তাদের জেলে পাঠানো যায় না?
হাসতে হাসতে এক বৃদ্ধ বললেন, ‘তা কে করবে? শর্ষের ভেতরের ভূত তাড়াবে কে?’