Mahfuz Rahman । মাহফূয রহমান । محفوظ الرحمن

  • Home
  • Bangladesh
  • Dhaka
  • Mahfuz Rahman । মাহফূয রহমান । محفوظ الرحمن

Mahfuz Rahman । মাহফূয রহমান । محفوظ الرحمن দেশকে জানি এবং দেশকে দেখি… সুন্দরের রানী বাংলাদেশের অপরুপ চিত্রকে সারা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প খাতকে সমৃদ্ধশালী করে তোলার প্রয়াস...।

12/04/2022
নতুন প্রাণের স্পন্দন ...ছবি তুলেছেনঃ পহেলি চাকমা
06/04/2022

নতুন প্রাণের স্পন্দন ...
ছবি তুলেছেনঃ পহেলি চাকমা

হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি ও টিপ।টিপ নিয়ে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে আমাদের এই ভূমি। টিপ কোথা থেকে আসল? কোথায় উৎপত্তি হয়েছ...
04/04/2022

হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি ও টিপ।

টিপ নিয়ে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে আমাদের এই ভূমি। টিপ কোথা থেকে আসল? কোথায় উৎপত্তি হয়েছে এই টিপের? আর কিভাবে চলে আসল বাঙালি সংস্কৃতিতে। আজকে আমরা এই উত্তর খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করব।

টিপ নিয়ে ইব্রাহিমী ধর্ম বা একশ্বেরবাদী ধর্মসমূহ (ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদী)এর বর্ননা -

"কপালে টিপ স্যাইয়েদুনা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর যুগে পতিতা সনাক্তের চিহ্ন হিসাবে প্রচলন হয়, এই যুগের চরিত্রহীনারাও সেই চিহ্ন বহন করছে।

স্যাইয়েদুনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য নমরুদ একটি ১৮ মাইলের বিশাল অগ্নিকুণ্ড নির্মাণ করে। সেটি এত বড় ও ভয়াবহ উত্তপ্ত ছিল যে, কোনো মানুষের পক্ষে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে সেখানে নিয়ে নিক্ষেপ করা সম্ভব হল না।অবশেষে একটি চরক বানানো হল যার মাধ্যমে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে ছুড়ে আগুনে নিক্ষেপ করা যায়। কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশে রহমতের ফেরেশতারা চরকের একপাশে ভর করে থাকায় চরক ঘুরানো যাচ্ছিল না।

তখন শয়তান নমরুদকে কুবুদ্ধি দিল কিছু পতিতা (নগ্ন) মেয়ে এনে চরকের সামনে বসিয়ে দিতে, কারণ এ অবস্থায় ফেরেশতারা থাকতে পারবে না। তাই করা হল এবং ফেরেশতারা চলে গেল, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে আগুনে নিক্ষেপ করতে তারা সক্ষম হলেন। পরবর্তীতে ওই মেয়েগুলোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান করা হল এবং তাদের মাথায় তীলক পরানো হল। যেটা এখন আমাদের কাছে টিপ নামে পরিচিত।

সূত্রঃ তাফসীরে মা-রেফুল কোরআন, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মূলগ্রন্থ। তাবারী, তারীখ, ১খ, ১২৩-১২৪; ছালাবী আদি গ্রন্থ, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠাঃ ৮১, আদি ইসলামী ইতিহাস, ইবনে কাসীর।

ভারতীয় উপমহাদেশে টিপের প্রচলন শুরুর ইতিহাস -

এই উপমহাদেশের টিপের ইতিহাস বেশ পুরানো।
মানবসভ্যতায় বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্য ভাবনার শুরু হয়। এজন্য শুধুমাত্র নারীরাই নয় পুরুষেরাও প্রসাধন এবং সাজে যত্নশীল ছিলেন। পুরুষেরা লম্বা চুল, কোঁকড়ানো চুলে সুগন্ধি তেল মাখাতো। নখ রাঙাত পুরুষেরা।

উপমহাদেশের ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, এবং উপমহাদেশের বাইরে মৌরিতানিয়া, থাইল্যান্ডেও টিপ প্রচলিত হয়েছে। বেশ কিছু দেশে টিপকে বলা হল বিন্দি। যার আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় ফোঁটা । ঋকবেদেও টিপের উল্লেখ রয়েছে, এ থেকে বোঝা যায় প্রায় ৫০০০ হাজার বছর ধরে টিপের প্রচলন।

যখন থেকে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি জমা হতে শুরু করেছে, তখন থেকে মানুষ দলবদ্ধ অবস্থায় বসবাস করা থেকে দূরে সরে গিয়ে এক পুরুষকেন্দ্রিক পরিবার ব্যবস্থায় চলে গিয়েছে এবং পরিবারের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ণয়ে একজন নারীর জন্য একজন পুরুষের ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়ে গিয়েছে এবং এই এক পুরুষকেন্দ্রিক পরিবার ব্যবস্থার শুরুর জন্য বিবাহ ব্যবস্থার চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই সময়, নারী পুরুষের বিবাহের কোনো চিহ্ন না থাকায়, বিশেষ করে নারীদের বিয়ের কোনো চিহ্ন না থাকায়, নানা ধরণের সামাজিক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে; যেমন- না জেনে কোনো পুরুষ হয়তো কোনো বিবাহিতা নারীকে পছন্দ করে ফেললো এবং একতরফা মন দিয়ে ফেললো বা পছন্দ হওয়ায় কেউ হয়তো কোনো নারীকে জোর করে উঠিয়েই নিয়ে গেলো, উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর হয়তো সে জানতো পারলো যে সে বিবাহতা; তারপর বিবাহিতা জেনে অপহরণকারীও হয়তো তাকে আর গ্রহণ করলো না, আবার অন্যদিকে অপহৃতা হওয়ায় তার স্বামীও তাকে আর গ্রহন করলো না, এরকম নানা সামাজিক সমস্যা ঘটছিলো শুধু বিবাহের চিহ্ন না থাকায়। এই সমস্যা সমাধানে উপমহাদেশের হিন্দু ধর্মীয় গুরুরা (মুনি, ঋষি) ঋকবেদ এ বর্ণিত জ্যোতিষ শাস্ত্রের আলোকে, সংসারের সুখ, স্বামীর কল্যাণ ইত্যাদি সকল কিছু বিবেচনা করে, বিবাহিত হিন্দু নারীদের জন্য বের করে কিছু বিশেষ চিহ্ন, যে চিহ্নগুলো হলো- শাঁখা, সিঁদুর, খারু, পলা এবং ক্ষেত্র বিশেষে মঙ্গলসূত্র। তাই বলা যায় হিন্দুরা টিপ পরে, এটা তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ এবং হিন্দুধর্মে সিঁথির সিঁদুর দ্বারাও বিবাহিত নারীর কুমারীত্ব নাশের বিষয়টি ইঙ্গিত করা হয়।কপালের টিপ কিংবা তিলক এটা তাদের ধর্মীয় চিহ্ন।

ষাট সত্তরের দশকের কিংবা এরও আগে সাদাকালো সিনেমাগুলোয় স্লিভলেস ব্লাউজ, বড় খোঁপার সঙ্গে কপালের ভ্রু’র বেশ কিছুটা ওপরে মাঝারি কিংবা ছোট্ট টিপ পরতো। তবে ধীরেধীরে তাতেও আকার এবং আকৃতিতে টিপ নিয়ে পরিবর্তন এসেছে।

মুসলিম নারীদের করনীয় -

আমাদের অনেক মুসলিম মা-বোনেরা কপালে টিপ পরতে ভালোবাসেন। অথচ দ্বীনের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে তারা হয়তো জানেন না যে, এটি বিশেষ একটি ধর্মের পরিচায়ক ও সংস্কৃতির অংশ। এমনকি এ টিপ ইসলাম বিদ্বেষী অত্যাচারী নমরুদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা একটি বিশেষ চিহ্নও বটে। যেসব মুসলিম নারীরা টিপ পরে, তারা এই ঘটনা জানেনা। জেনেও যদি কেউ পরে তাহলে সেটা তার দুর্ভাগ্য। পতিতার পরিচয় বোঝানোর জন্য যে টিপ ব্যবহার করা হতো, তা আজ আমাদের উপমহাদেশে মুসলমানদের মধ্যেও ফ্যাশনে রূপান্তরিত হয়েছে !

অতএব যারা বলে— মহিলাদের সৌন্দর্য সব জায়গায় এবং এই দোহাই দিয়ে টিপ কে নিজেদের জন্য বৈধ মনে করেন, তারা যুগযুগ ধরে নিজেদের কোন পরিচয় বহন করছেন তা একবার ভেবে দেখবেন ? মুসলিম নারী এই সত্য কথাটা জানার পরও কি আপনি আপনাদের কপালে টিপ পড়বেন?

সুতরাং- কপালে টিপ দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ।

তথ্য সূত্রঃ
১. ডেইলি বাংলাদেশ (https://m.daily-bangladesh.com/religion/168305)
২. দি ডেইলি ক্যাম্পাস (https://thedailycampus.com/national/90088/%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%AA-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87?)
৩. হিন্দু নববার্তা (https://hindunobobarta.wordpress.com/2017/02/24/%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%aa-%e0%a6%93-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%81%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%9a%e0%a6%b2%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%87%e0%a6%a4%e0%a6%bf/)

04/04/2022

#এরাই_সচেতনার_কথা_বলে
#ব্যবসায়ী_সাজু

যারা নারীদের অপমান করতে দ্বিধা করে না। তারাই আবার নারী অধিকারের কথা বলে।

নতুন প্রাণের স্পন্দন...ছবি - পহেলি চাকমা
03/04/2022

নতুন প্রাণের স্পন্দন...
ছবি - পহেলি চাকমা

চট্রগ্রাম বিভাগের সর্ব উত্তরের জেলা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় মায়ের পরকীয়ার জেরে বিষ প্রয়োগে দুই শিশুকে হত্যা। হত্যাকারী প...
19/03/2022

চট্রগ্রাম বিভাগের সর্ব উত্তরের জেলা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় মায়ের পরকীয়ার জেরে বিষ প্রয়োগে দুই শিশুকে হত্যা। হত্যাকারী পরকীয়ায় আসক্ত মা নিজেই। অথচ মায়ের কাছেই সন্তান সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকার কথা ছিল। কেন এই সামাজিক অবক্ষয় হয়েছে? পরকীয়া কি? আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করব ২ পর্বে। প্রথম পর্বে থাকবে পরকীয়া কি এবং এখান থেকে বের হওয়ার উপায় নিয়ে এবং দ্বিতীয় পর্বে থাকবে এই বিষয়ে ইসলামের বিধান কি?

দ্বিতীয় পর্ব -

পরকীয়া নিয়ে ইসলামের আহকাম ও বিধান কি?

বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্ককে ইসলামী পরিভাষায় ‘জিনা’ (ব্যভিচার) বলা হয়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা ইসরা/বনি ইসরাঈল, আয়াত নাম্বারঃ ৩২)

কুরআনের বক্তব্য

কুরআনে সর্বপ্রথম সূরা নিসায় যিনার শাস্তি সম্পর্কিত সাময়িক অস্থায়ী নির্দেশনা অবতীর্ণ করা হয়।

“আর নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ করে রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন। তোমাদের মধ্যে যে দুজন সেই কুকর্মে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হয়, তাদেরকে শাস্তি প্রদান কর, অতঃপর তারা যদি উভয়ে তওবা (অনুশোচনা, অনুতাপ) করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তবে তাদের থেকে হাত গুটিয়ে নাও। নিশ্চই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু।” সূরা আন নিসা, আয়াত নাম্বারঃ ১৫-১৬।

কিন্তু পরবর্তীতে সূরা নূরে নবায়িত নির্দেশনা অবতীর্ণ হওয়ার পর পূর্বোক্ত আয়াতের নির্দেশনা রহিত হয়ে যায়। এছাড়াও, অধিকাংশ নিয়মকানুন যেগুলো যিনা (ব্যভিচার/পরকীয়া), স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর উপর বা সমাজের সদস্যগণ কর্তৃক সতী সাধ্বী নারীর উপর আরোপিত অভিযোগ সম্পর্কিত, সেগুলো সূরা নূর (আলো) এ পাওয়া যায়। এই সূরাটি শুরু হয়েছে যিনার শাস্তি সম্পর্কিত বেশ কিছু বিশেষ নির্দিষ্ট নিয়মকানুন প্রদানের মধ্য দিয়েঃ

"ব্যভিচারের দায়ে অভিযুক্ত পুরুষ ও নারী যারা,- তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত প্রদান কর: তাদের বিষয়ে করুণা যেন তোমাদেরকে দুর্বল না করে, এমন একটি বিষয়ে যা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয়েছে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং মহাপ্রলয় দিবসের উপর বিশ্বাস রাখো: এবং বিশ্বাসীদের একদলকে তাদের শাস্তির সাক্ষী করে রাখো।" সূরা ২৪ (আন-নুর), আয়াত নাম্বারঃ ২।

“এবং যারা নিরপরাধ নারীদের উপর অভিযোগ আরোপ করে এরপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারে না, তাদের বেত্রাঘাত কর, আঁশিটি করে, এবং এরপর কখনই তাদের কাছ থেকে কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ করো না; এবং এটি একারণে যে তারা সীমালঙ্ঘনকারী। তারা ব্যতীত যারা অনুতপ্ত হয় এবং সংশোধিত হয়, কারণ নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।” সূরা ২৪ (আন-নুর), আয়াত নাম্বারঃ ৪-৫।

হাদিসের বক্তব্য

হাদিসে যিনার শাস্তির বর্ণনা এসেছে জনসম্মুখে বেত্রাঘাত এবং পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড হিসেবে, এটি পাওয়া যায় মূলত হাদিসের "কিতাব-আল হুদুদ" নামক সংকলিত খণ্ডাংশে।

'উবাদা বিন আস-সামিত বর্ণনা করেনঃ আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি, আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর। আল্লাহ সেসব মহিলাদের জন্য আদেশ জারি করেছেন। যখন একজন অবিবাহিত পুরুষ একজন অবিবাহিত নারীর সাথে ব্যভিচার করে, তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন পেতে হবে। আর বিবাহিত পুরুষের সাথে বিবাহিত নারীর ব্যভিচারের ক্ষেত্রে, তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নাম্বারঃ ৪১৯১।

আল্লাহর রাসূল বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি প্রদান করতেন এবং, তাঁর পরে, আমরাও পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি প্রদান করতাম, আমি ভয় করি যে কালের অতিক্রমের সাথে সাথে, মানুষ হয়তবা এটি ভুলে যাবে এবং হয়তো বলবে: আমরা আল্লাহর কিতাবে পাথর নিক্ষেপের শাস্তি খুঁজে পাই নি, এবং আল্লাহর নির্দেশিত এই কর্তব্য পরিত্যাগ করে বিপথে যাবে। পাথর নিক্ষেপ হল আল্লাহর কিতাবে দেয়া ব্যভিচারী বিবাহিত পুরুষ ও নারীদের জন্য ধার্যকৃত একটি দায়িত্ব যখন তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়, অথবা যদি গর্ভধারণ ঘটে, অথবা যদি দোষ স্বীকার করা হয়। সহীহ মুসলিম, হাদীস নাম্বারঃ ৪১৯৪।

মা'য়িয মুহাম্মদের নিকট এলো এবং তার উপস্থিতিতে নিজের ব্যভিচার করার কথা চারবার স্বীকার করল, তাই মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করার আদেশ দিলেন। কিন্তু হুজ্জালকে বললেন: "তুমি যদি তাকে তোমার কাপড় দ্বারা ঢেকে দিতে, তাহলে তা তোমার জন্য ভাল হত।" সুনান আবু দাউদ, হাদীস নাম্বারঃ ৪৩৬৪।

আরেক বিশুদ্ধ নির্ভরযোগ্য হাদিস গ্রন্থ সহিহ বুখারীতে কয়েকটি ঘটনা পাওয়া যায় যেখানে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যার কথা উল্লেখ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ,

উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত: 'উতবা বিন আবি ওয়াক্কাস তাঁর ভাই সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাসকে বললেন, "জা'মার দাসীর পুত্রটি আমার থেকে আগত, তাই একে তোমার তত্ত্বাবধানে রাখো।" তাই মক্কা বিজয়ের বছরে, সা'দ তাকে নিয়ে নিলেন এবং বললেন, "(এ হল) আমার ভাইয়ের পুত্র যাকে আমার ভাই আমার তত্ত্বাবধানে রাখতে বলেছেন।" 'আব্দ বিন জা'মা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে গেলো এবং বললো, "(সে) আমার ভাই, আমার বাবার দাসীর পুত্র, এবং আমার পিতার বিছানায় তাঁর জন্ম হয়েছিল।" তাই তারা উভয়েই আল্লাহর রাসূলের সামনে তাদের মোকাদ্দমা পেশ করলেন। সা'দ বললেন, "হে আল্লাহর রাসূল! এই বালক আমার ভাইয়ের পুত্র আর তিনি একে আমার দায়িত্বে অর্পণ করেছেন।" 'আব্দ বিন জা'মা বলল, "এই বালক আমার ভাই এবং আমার পিতার দাসীর ছেলে, এবং আমার পিতার বিছানায় তাঁর জন্ম হয়েছিল।" আল্লাহর রাসূল বললেন, "এই বালকটি তোমার, হে 'আব্দ বিন জা'মা!" এরপর আল্লাহর রাসূল আরও বললেন, "উক্ত সন্তানটি বিছানার মালিকের, এবং উক্ত ব্যভিচারকারীকে পাথর নিক্ষেপ করা হোক।" যখন তিনি উতবার সাথে সাদৃশ্য দেখলেন, তখন সাওদা বিন জা'মাকে বললেন, "তোমার পর্দা তাঁর সামনে নামিয়ে দাও।" বালকটি মৃত্যুর পূর্বে আর কখনই ওই মহিলাকে দেখতে পায় নি।
— সহীহ বুখারী, ৯:৮৯:২৯৩ (ইংরেজি)

পুরুষ ও নারীর মধ্যে যিনা সম্পর্কিত আরও যে সকল হাদিস রয়েছে সেগুলো হল:

অবৈধ যৌন কর্মে লিপ্ত হওয়ার জন্য এক ইহুদি মহিলাকে পাথর নিক্ষেপ (রজম)।
আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন যে মুহাম্মদ(সাঃ) একজন যুবক এবং একজন বিবাহিত মহিলার দৈহিক মিলনের অভিযোগে মহিলাটিকে পাথর নিক্ষেপ করার আদেশ দিলেন এবং যুবকটিকে চাবুক মারতে ও এক বছরের জন্য নির্বাসন দিতে নির্দেশ দিলেন।
ওমর ইবন আল-খাত্তাব নিশ্চিত করেন যে, একটি নির্দেশ নাযিল হয়েছিল এই বিষয়ে যে, কোন মুহসান ব্যক্তি (একজন প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন, মুসলিম যে পূর্বে বৈধভাবে বৈবাহিক যৌন সম্পর্কে অংশ নিয়েছে, এবং তাঁর বিবাহ এখনো নিশ্চিতভাবে বহাল রয়েছে) যদি অবৈধ যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় তবে তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে হবে।
প্রাচীন সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুরআন এর অনুমতিক্রমে মুহাম্মদের নির্দেশানুযায়ী একজন বিবাহিত বা অবিবাহিত মুসলিম পুরুষ তার নিজ মালিকানাধীন কোন ক্রীতদাসীর সাথে উক্ত ক্রীতদাসীর সম্মতিতে অথবা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন ক্রিয়াকলাপ করতে পারত এবং এ ধরনের যৌনতা যিনা হিসেবে গণ্য হত না।

‘ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না’—এই বিধান ব্যক্তির জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমিন সমাজের জন্যও প্রযোজ্য। এটি এতটাই অশ্লীল কাজ যে তা মানুষের লজ্জা-শরম ও মনুষ্যত্ব কেড়ে নেয়। আবু উমামা (রাঃ) বলেন, এক যুবক রাসুল (সাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন। এটা শুনে চতুর্দিক থেকে লোকেরা তার দিকে তেড়ে এসে ধমক দিল এবং চুপ করতে বলল। তখন রাসূল (সাঃ) তাকে কাছে ডেকে নিয়ে বলেন, বসো। যুবকটি বসলে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে বলেন, তুমি কি এটা তোমার মায়ের জন্য পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ্ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না।
তখন রাসুলুল্লাহৃ (সাঃ) বলেন, তেমনি মানুষও তাদের মায়েদের জন্য সেটা পছন্দ করে না। তারপর রাসূল (সাঃ) বলেন, তুমি কি তোমার মেয়ের জন্য তা পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ্ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, অনুরূপভাবে মানুষ তাদের মেয়েদের জন্য সেটা পছন্দ করে না। তারপর রাসূল বলেন, তুমি কি তোমার বোনের জন্য সেটা পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ্ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসূল বলেন, তদ্রুপ লোকেরাও তাদের বোনের জন্য তা পছন্দ করে না। (এভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তার ফুফু, ও খালা সম্পর্কেও অনুরূপ কথা বলেন আর যুবকটি একই জবাব দিল) এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তার ওপর হাত রাখলেন এবং বলেন, ‘হে আল্লাহ্, তার গুনাহ ক্ষমা করে দিন, তার মনকে পবিত্র করুন এবং তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করুন।’ বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, এরপর এ যুবককে কারো প্রতি তাকাতে দেখা যেত না। (মুসনাদে অহমাদ, হাদীস নাম্বারঃ ৫/২৫৬, ২৫৭)

অনেকে ভাবতে পারে, কোনো ধরনের শারীরিক সম্পর্কে না জড়িয়ে একসঙ্গে থাকলে তা ব্যভিচারের পর্যায়ে পড়বে না বা গুনাহ হবে না। এটা ঠিক নয়। শয়তান কোনো না কোনোভাবে তাদের ব্যভিচারে লিপ্ত করবেই। শারীরিক সম্পর্কে কেউ না জড়ালেও অন্তত তারা একসঙ্গে থাকার দরুন, দেখা হবে, কথা হবে, আড্ডা হবে, গান হবে। এগুলোর মধ্যেও রয়েছে ব্যভিচারের গুনাহ। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)।’ (বুখারি, হাদিস নাম্বারঃ ৬২৪৩)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের জিনা (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের জিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের জিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের জিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের জিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের জিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত, হাদিস নাম্বারঃ ৮৬)

এরপর আশা যাক পরকীয়ার বিষয়ে। পরকীয়া সমাজে অশান্তি ও বংশের পবিত্রতা নষ্ট করার অন্যতম নীরব হাতিয়ার। এর প্রভাবে ধ্বংস হয়ে যায় হাজার পরিবার। ভেঙে চুরমার হয় লাখো স্বপ্ন। সমাজের এই পচনের জন্য যেসব বিষয় দায়ী, তার মধ্যে পরকীয়া অন্যতম। আর পরকীয়া বৃদ্ধির জন্য দায়ী পর্দার বিধানে উদাসীনতা। অথচ পর্দার বিধান ইসলামের পক্ষ থেকে সমাজব্যবস্থার এবং বিশেষভাবে উম্মতের মা-বোনদের জন্য অনেক বড় অনুগ্রহ। এই বিধানটি মূলত ইসলামের যথার্থতা, পূর্ণাঙ্গতা ও সর্বকালের জন্য অমোঘ বিধান হওয়ার এক প্রচ্ছন্ন দলিল। পর্দা মানুষের মর্যাদার প্রতীক এবং ইফফাত ও পবিত্রতার একমাত্র উপায়।

অনেকের ধারণা, পর্দার বিধান শুধু নারীর জন্য। এ ধারণা ঠিক নয়। পুরুষের জন্যও পর্দা অপরিহার্য। তবে উভয়ের পর্দার ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে। যে শ্রেণির জন্য যে পর্দা উপযোগী, তাকে সেভাবে পর্দা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরকীয়ার মূল উদ্দেশ্যই থাকে জিনা (অবৈধ সম্পর্ক)। আর তা গড়ে ওঠে সাধারণত প্রতিবেশী, অফিস কলিগ, ব্যাচমেট বা সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতজনের সঙ্গে। এটি সমাজব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য এত বড় অস্ত্র যে রাসূল (সাঃ) একে ব্যভিচারের চেয়ে ১০ গুণ বড় অপরাধ বলে আখ্যা দিয়েছেন। একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর সাহাবিদের ব্যভিচার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তাঁরা বলেন, হারাম। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তা হারাম করেছেন। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির ১০ জন নারীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া জঘন্য অপরাধ। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নাম্বারঃ ১০২)

এই পাপ বেশির ভাগ সংঘটিত হয় পরকীয়া সম্পর্কের জেরে। তাই প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক, এই জঘন্য অপরাধগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং পরিবার-পরিজনদের প্রতিও সজাগ দৃষ্টি রাখা। মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সবাইকে এই জঘন্য অপরাধগুলো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।

18/03/2022

চট্রগ্রাম বিভাগের সর্ব উত্তরের জেলা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় মায়ের পরকীয়ার জেরে বিষ প্রয়োগে দুই শিশুকে হত্যা। হত্যাকারী পরকীয়ায় আসক্ত মা নিজেই। অথচ মায়ের কাছেই সন্তান সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকার কথা ছিল। কেন এই সামাজিক অবক্ষয় হয়েছে? পরকীয়া কি? আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করব ২ পর্বে। প্রথম পর্বে থাকবে পরকীয়া কি এবং এখান থেকে বের হওয়ার উপায় নিয়ে এবং দ্বিতীয় পর্বে থাকবে এই বিষয়ে ইসলামের বিধান কি?

প্রথম পর্ব -

সামাজিক অবক্ষয় - পরকীয়া

পরকীয়া (ইংরেজি: Adultery বা Extramarital affair বা Extramarital s*x) হল বিবাহিত কোন ব্যক্তির (নারী বা পুরুষ) স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকাণ্ড। মানবসমাজে এটি লঘু বা গুরুভাবে নেতিবাচক হিসেবে গণ্য। পাশ্চাত্য আধুনিক সমাজে এর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বজায় থাকলেও এটি আইনত অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না, তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরকীয়াকারী ব্যক্তির বিবাহিত সঙ্গী তার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য কোর্টে আবেদন করতে পারেন। তবে ইসলামি রাষ্ট্রসমূহে এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যা হল পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদন্ড প্রদান। মনোচিকিৎসায় একথা স্বীকৃত যে, পিতামাতার পরকীয়া সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এবং সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সন্তানের মানসিক বিষন্নতার ও আগ্রাসী মনোভাবের জন্ম দেয়। এছাড়া পারিবারিক ও দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতিতে পরকীয়া প্রভাব রাখে।

পরকীয়া থেকে বের হওয়া যায় কি?
চলার পথে জীবনে অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। কখনো কখনো সেই পরিচয়টা গভীর সম্পর্কে মোড় নেয়। এতে করে তৃতীয় কেউ অজান্তেই আপনার দাম্পত্য জীবনে ঢুকে পড়ে। কখন, কেন, কীভাবে তার সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন, অনেক সময় তার ব্যাখ্যা আপনিও খুঁজে পান না। কিন্তু এমন সম্পর্ক শারীরিক ও মানসিকভাবে আনন্দ ও তৃপ্তি দিলেও একটা সময় তা হতে পারে আপনার মাথাব্যথার কারণ। কেননা একবার অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তা থেকে মুক্ত হওয়া সহজ কাজ নয়। সাধারণত পরকীয়ার শুরু হয় ঘর থেকে অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের সাথে বা আত্মীয় স্বজনের মধ্যে চাচাতো ভাই-বোন, মামাতো ভাই-বোন, খালাতো ভাই-বোন, ফুফাতো ভাই-বোন, শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবীর প্রণয় উল্লেখযোগ্য। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে পরকীয়া করার মূল কারণ হলো -"সন্দেহ বিহীন সম্পর্ক"।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একবার পরকীয়ায় জড়ালে সেটা থেকে মুক্ত হওয়ার সব পথ দুর্গম হয়ে যায়। আর সম্পর্ক ফাঁস হয়ে গেলে তো ক্ষণিকের ভুল সিদ্ধান্ত সারা জীবন কাঁধে বয়ে বেড়াতে হয়। তাই সুখী দাম্পত্য চাইলে পরকীয়ার সম্পর্কে না জড়ানোই ভালো। আর যে একবার পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সে কখনো পরকীয়া থেকে ফিরে আসে না, বরং সে পরকীয়ার সঙ্গী পরিবর্তন করতে পছন্দ করে। এসকল ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে "পরকীয়ায় জড়িত সঙ্গীর সাথে স্থায়ীভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা"। এতে সাময়িক সময়ের জন্য কষ্ট হলেও আপনি জীবনের অনেকটা সময় শান্তিতে থাকবেন।

নিজের সঙ্গী যদি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে করণীয় কি হতে পারে?

তারপরও যারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন আবার এ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে সুখী দাম্পত্য জীবনে ফিরে যেতে চাইছেন। কিন্তু পারছেন না। এ ক্ষেত্রে সুখী দাম্পত্যে ফিরতে আপনাকে সাহায্য করবে পাঁচ পরামর্শ -

১. কারণ বোঝার চেষ্টা করুন -
পরকীয়ার সম্পর্কে কেন জড়িয়ে পড়েছিলেন আগে সেই কারণটা বোঝার চেষ্টা করুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, দাম্পত্য জীবনে বিশেষ কোনো সমস্যা এবং বিবাদের জেরেই অন্য সম্পর্কে পা রাখেন কোনো নারী বা পুরুষ। সে ক্ষেত্রে দুজনে আলোচনার মাধ্যমে সেই বিশেষ সমস্যাটি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। এতে সুখী দাম্পত্য সহজেই ফিরে আসবে।

২. সঙ্গীকে পরকীয়ার বিষয়টি জানান -
অনেকেই পরকীয়ার বিষয়টি সঙ্গীকে জানাতে চান না। তারা মনে করেন, এ ক্ষেত্রে বিবাদ আরও বাড়বে। এতে কিন্তু ভবিষ্যতে ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হয়। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো থাকলে স্থান-কাল-পাত্র বুঝে সঙ্গীকে গোটা বিষয়টি খুলে বলে দিতেই পারেন। কারণ অন্য কারও থেকে ব্যাপারটা জানলে তা আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।

৩. পরকীয়ায় জড়ানো ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুন -
একবার পরকীয়া থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে সেই নারী বা পুরুষের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে অবশ্যই সম্পর্কে ইতি টানার কথা তাকে সোজাসুজি জানিয়ে দিন। আবেগপ্রবণ হয়ে কোনোভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা না করাই ভালো। বরং সংসার ও কাজে মন দিন। কাজটি কঠিন হলেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু আপনিই সফল হবেন।

৪. ঠাণ্ডা মাথায় বিষয়টি সামলান -
স্ত্রী অথবা স্বামীর মধ্যে যিনি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন, তাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। অন্য সম্পর্কে জড়ানোর সমস্ত দায় তার ওপরেই চাপিয়ে দেওয়া হয়। এমনটা হলে কিন্তু পরকীয়ায় ইতি টানার উদ্দেশ্যই পূরণ হবে না। বরং কেন পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন, সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা প্রয়োজন। দুজনকেই ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিষয়টি সামলাতে হবে।

৫. বিশ্বাস রাখুন ও উপহার দিন -
অনেক সময় দেখা যায়, পরকীয়া সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পরও সঙ্গীর প্রতি সেই বিশ্বাসটা আর ফেরে না। তাই উলটো দিকের মানুষটার মনে সারাক্ষণ সন্দেহ থেকে যায়। তাই নতুন করে তার বিশ্বাস অর্জন করা জরুরি। স্ত্রী বা স্বামীকে নানা ধরনের সারপ্রাইজ দিয়ে, ভালোবাসায় ভরিয়ে সেই ভাঙা মনকে জোড়া দেওয়ার কাজটিও করতে হবে অত্যন্ত নিপুণ হাতে। এতে করেই সুখী দাম্পত্য আবারও ফিরে আসবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আবেদনের বিভিন্ন ক্যাটাগরিঃ  কেউ যখন অনলাইনে বা সংস্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে তার জাতীয় পরি...
08/03/2022

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আবেদনের বিভিন্ন ক্যাটাগরিঃ

কেউ যখন অনলাইনে বা সংস্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের কোনো আবেদন করেন, প্রথমে সেই সংশোধন আবেদনটি ক্যাটাগরি হওয়ার জন্য ঢাকার নির্বাচন কমিশনের NID Wing এর হেড অফিসে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের কাছে ডিজিটালি চলে যায়। উক্ত অফিসার প্রতিটি সংশোধন আবেদনের ধরন অনুযায়ী প্রতিটি আবেদনের ক্যাটাগরি করেন এবং প্রতিটি সংশোধন আবেদন নিষ্পত্তির জন্য সংস্লিষ্ট অফিসারের কাছে ডিজিটালি প্রেরন করেন। "ক" ক্যাটাগরির সংশোধন আবেদনের নিষ্পত্তি করেন সংস্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার, "খ" ক্যাটাগরির সংশোধন আবেদনের নিষ্পত্তি করেন সংস্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিসার, "গ" ক্যাটাগরির সংশোধন আবেদনের নিষ্পত্তি করেন সংস্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার এবং "ঘ" ক্যাটাগরির সংশোধন আবেদনের নিষ্পত্তি করেন নির্বাচন কমিশনের NID Wing এর মহাপরিচালক।

সাইফুল আজমঃ দি ঈগল হু লিভডSaiful Azam: The Eagle Who Lived গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম, কেউ কেউ তাকে চিনে থাকতে পারেন। বা...
05/03/2022

সাইফুল আজমঃ দি ঈগল হু লিভড
Saiful Azam: The Eagle Who Lived


গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম, কেউ কেউ তাকে চিনে থাকতে পারেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছেই তিনি অজানা। তিনি কে, কি তাঁর কীর্তি কেউ কেউ (যাদের প্রায় অধিকাংশই আবার সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত) তার বর্ণনা দিয়েছেন। অনেকে লিখেছেন তাঁর কীর্তিময় জীবন নিয়ে, অনেকে তাঁকে এতদিন না চিনতে পারার আক্ষেপ নিয়ে। একজন মানুষও যদি সাইফুল আজমের মত একজন কীর্তিমান মানুষ সম্পর্কে জানতে পারে (যতটুকু সম্ভব আবেগবর্জিত সত্যবর্ণনা) সেটাই হবে প্রাপ্তি।

সংক্ষেপে সাইফুল আজমের কীর্তিগুলো নিম্নরুপঃ

১। তিনি স্বাধীনতাপূর্ববর্তী অখন্ড পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ফাইটার পাইলট ছিলেন। মৌলিক প্রশিক্ষণে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের কারনে তাঁকে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা রাজ্যের লুক এয়ারফোর্স বেসে প্রেরণ করা হয়। সেখানেও তিনি ১৯৬১ সালে স্ট্র্যাফিং ও বোম্বিং (Strafing and Bombing) এ শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচিত হন এবং “টপ গান” (Top Gun) সার্টিফিকেট অর্জন করেন। তবে এটা টম ক্রুজ অভিনীত “টপ গান” সিনেমার “টপ গান” নয়। সিনেমার সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট নৌবাহিনীর পাইলটদের নিয়ে নৌবাহিনীর ফাইটার ওয়েপন স্কুল, মিরামার, ক্যালিফোর্নিয়ায়।

২। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তিনি এফ-৮৬ স্যাবর (F-86 Sabre) যুদ্ধবিমানের পাইলট ছিলেন। তাঁর পদবী তখন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। সেই যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক (সম্ভবত ১২টি) গ্রাউন্ড এটাক পরিচালনার পাশাপাশি তিনি এরিয়াল কমব্যাটে [যাকে সাধারনত ‘ডগ ফাইট’ (Dog Fight) বলা হয়] ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি ফল্যান্ড ন্যাট (Folland Gnat) বিমান ভূপাতিত করেন। তাঁর এই বীরত্বের জন্য সেই যুদ্ধ শেষে তাঁকে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ (জীবিতদের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ) সাহসিকতা খেতাব ‘সিতারা-এ-জুরাত’ – এ ভূষিত করা হয়। এখানে বলে রাখা ভাল, সেই যুদ্ধে তাঁর পাশাপাশি আরও ছয়জন বাঙালি ফাইটার পাইলট/ ন্যাভিগেটর এই খেতাব পেয়েছিলেন [যাঁদের একজন ডাবল খেতাব পেয়েছিলেন ‘হিলাল-এ-জুরাত’ (জীবিতদের জন্য সর্বোচ্চ খেতাব) সহ]। তাঁদের মাঝে দুজন এই যুদ্ধে শহীদ হন।

৩। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে তাঁর অসামান্য বীরত্বের জন্য পরের বছর ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে তাঁকে জর্ডানের রাজকীয় বিমান বাহিনীর একজন প্রশিক্ষক/ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় (যেকোন দেশের সামরিক বাহিনীর অফিসারের জন্যই সাধারনত এধরনের নিয়োগ অনেকটাই ‘প্রাইজ পোস্টিং’ হিসেবে গণ্য করা হয়)। জর্ডানে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ৫-১০ জুন ইসরায়েলের সাথে তার আরব প্রতিবেশী (মিশর, সিরিয়া ও জর্ডান) রাষ্ট্রগুলোর ছয়দিনব্যাপী একটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেই যুদ্ধে ইসরায়েল Pre-emptive Strike এর মাধ্যমে তার আরব প্রতিবেশীদের বিমান বাহিনীগুলো মাটিতেই ধ্বংস করে দেয়। আধুনিক সমরকৌশল যেহেতু অনেকাংশেই বিমান বাহিনী নির্ভর, তাই এই যুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলো একতরফাভাবেই পরাজিত হয়। তবে এরই মাঝে সম্ভবত একমাত্র ব্যতিক্রমী ঘটনাটি ঘটান সাইফুল আজম।

৫ জুন সকালেই সমগ্র মিশরীয় এবং সিরিয়ান বিমান বাহিনীকে মাটিতেই ধ্বংস করে প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে দুপুরের দিকে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী জর্ডানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জর্ডানের বিমান বাহিনীই সবচেয়ে দুর্বল ছিল, যাদের তখন মাত্র ২৪টি পুরাতন ব্রিটিশ হকার হান্টার (Hawker Hunter) ছিল এবং সেগুলো চালানোর মত যথেষ্ট পাইলটও ছিল না। তখনই জর্ডানের বাদশাহ হুসেইন বিন তালালের অনুরোধে মাফরাক বিমান ঘাঁটি থেকে ৪টি বিমানের একটি স্কোয়াড্রন নিয়ে ২৬ বছরের তরুণ সাইফুল আজম উড়ে গেলেন। মাফরাক ছিল জর্ডানের সবচেয়ে বড় বিমান ঘাঁটি। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর আক্রমনের মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে একমাত্র সাইফুল আজমের স্কোয়াড্রনটিই আকাশে উড়তে পারে। আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা ইসরায়েলি পাইলটরা সম্পূর্ণ যুদ্ধের প্রথম হোঁচট এখানেই খায়। ‘ডগ-ফাইট’ এ সাইফুল আজম ইসরায়েলিদের একটি ফরাসি সুপার মিস্টেয়ার (Super Mystere) ভূপাতিত করেন। একটি বিমান হারিয়ে ৬টি বিমানের সেই ইসরায়েলি স্কোয়াড্রন যখন ফিরে যাচ্ছে, তখন সাইফুল আজমের স্কোয়াড্রন তাদের পিছু ধাওয়া করে। এই ‘ডগ-ফাইট’ এও তিনি আরেকটি সুপার মিস্টেয়ার ভূপাতিত করেন এবং তাঁর জর্ডানিয়ান উইংম্যান ইহসান শুর্দম (যিনি ১৯৮৩-৯৩ পর্যন্ত জর্ডান বিমান বাহিনীর প্রধান ছিলেন) আরও একটি বিমান ভূপাতিত করেন। কিন্তু ততক্ষণে মাফরাক বিমান ঘাঁটির যথেষ্ঠ ক্ষতি সাধিত হয়ে গেছে। তাই তিনি আম্মানে গিয়ে ল্যান্ড করেন। সাইফুল আজমের স্কোয়াড্রন ব্যতীত বাকি প্রায় সম্পূর্ণ জর্ডানিয়ান বিমান বাহিনীও মাটিতেই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই পরের দিনই (৬ জুন) তাঁকে ইরাকে প্রেরণ করা হয় যেহেতু ইজরায়েলিদের পরবর্তী সম্ভাব্য টার্গেট তখন ইরাক।

ইরাকে আসার একদিন পরেই তিনি আবারও সেই একই শত্রুর মুখোমুখি। ৭ জুন সকালেই খবর আসে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ইরাকের দিকে এগুচ্ছে। আবারও তিনি তাঁর হকার হান্টার সহ ৪টি ফাইটারের একটি স্কোয়াড্রন নিয়ে উড়াল দিলেন। । অবিশ্বাস্য একটি ‘ডগ-ফাইট’ এ তিনি সাব-সনিক হকার হান্টার নিয়ে সেই সময়কার অত্যাধুনিক একটি ফরাসি সুপার-সনিক ফাইটার মিরাজ-৩ (Mirage III) ফেলে দিলেন। তার একটু পরেই ভূপাতিত করলেন একটি ভাতুর-২ (Vatour II) বোম্বার। কোন সন্দেহ নেই এই যুদ্ধে ইসরায়েলের হাতে আরব বাহিনীগুলোর শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল। তবে এই বিশাল গ্লানির মাঝেও হাতেগোনা যে কয়টি সাফল্য আছে, নিঃসন্দেহে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজমের এরিয়াল কম্ব্যাটের জয় দুটি তার মধ্যে পড়বে। আর এজন্যই উভয় দেশ থেকেই তিনি আরও দুটি সাহসিকতা খেতাব অর্জন করেন- জর্ডান তাঁকে ‘উইসাম-আল-ইসতিকলাল’ এবং ইরাক তাঁকে ‘নওত-আস-সুজাত’ খেতাবে ভূষিত করে।

৪। ১৯৬৯ পর্যন্ত জর্ডানে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন, স্কোয়াড্রন লীডার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং ফ্লাইট কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন বেসে তাঁর নৈমিত্তিক দায়িত্ব পালন করে যান। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি করাচীর মৌরিপুর এয়ার ফোর্স বেসে কর্মরত ছিলেন। ঠিক একই বেসে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানও কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা অনেকের মনেই হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে যে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর তো মাসরুর বেস থেকে বিমান ছিনতাই করেছিলেন। তাদের জ্ঞাতার্থে, মৌরিপুরের এই বেসটিই ১৯৬৭ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত এই বেসের বেস কমান্ডার এয়ার কমোডোর মাসরুর হুসেনের নামানুসারে নামকরন করা হয় পিএএফ বেস মাসরুর। সুতরাং, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর এবং সাইফুল আজম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একই বেসে কর্মরত ছিলেন। ২০ আগস্ট ১৯৭১ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর বিমান ছিনতাই করার পর বিমান সহ বিধ্বস্ত হলে পরের দিন ২১ আগস্টেই সাইফুল আজমকে আটক করা হয় এবং যুদ্ধের বাকি সময়টা তিনি পিএএফ বেস লোয়ার টোপা (Lower T**a) তে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের হেফাজতে অন্তরীণ ছিলেন। মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের হাতে যুদ্ধ চলাকালীন বন্দি থাকলে কেউ যে খুব সুখে থাকে না, সেটা বলাই বাহুল্য। যুদ্ধ শেষে তিনি তাঁর পরিবারের কাছে ফিরতে পারেন। ১৯৭২ এর এপ্রিলে তাঁকে সপরিবারে পেশোয়ারের ওয়ারসাক বন্দি শিবিরে পাঠানো হয় যেখান থেকে তাঁরা ১৯৭৪ এর ৯ জানুয়ারি দেশে ফেরত আসেন।

৫। দেশে ফিরে তিনি বিমান বাহিনীর ডিরেক্টর ফ্লাইট সেফটি, ডিরেক্টর অপারেশন এবং ঢাকা বেসের বেস কমান্ডারের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৮ সালে বিমান বাহিনী থেকে তিনি অবসর নেন এবং পরবর্তীতে দুই দফায় সিভিল এভিয়েশন অথোরিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এবং এফডিসি এর এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন।

৬। Gathering of Eagle Foundation নামক একটি মার্কিন বেসরকারি সংস্থা আছে যা কিনা ইউএস এয়ার ফোর্সের সাথে কোলাবরেশনে প্রতি বছর এয়ার কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কোর্সের একটা প্রোগ্রাম আয়োজন করে যেখানে খ্যাতিমান পাইলটদের সাথে তাদের বর্তমান পাইলটরা এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করেন। অভ্যাগতদেরকে এই অনুষ্ঠানে লিভিং ঈগল বলে অভিহিত করা হয়। ২০০০ সালের এই আয়োজনে আমন্ত্রিত ২২ জনের একজন ছিলেন সাইফুল আজম।

এই ছিল গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমের সংক্ষিপ্ত জীবনী। এখানে যা যা লেখা হয়েছে, তার অধিকাংশই ইন্টারনেটে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলে যে কেউই জানতে পারবে। অনেকে হয়ত এসব নিয়ে লিখেছেও।

পূর্বের অংশে সাইফুল আজমের সংক্ষিপ্ত জীবনী আলোচনা করেছিলাম।
১। কেউই দাবি করে নাই যে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফাইটার পাইলট। এটাও কেউ দাবি করে নাই যে তিনি “ইসরাইলীদের জঙ্গী বিমান সব ধ্বংস করেছেন”। ফাইটার পাইলটদের শ্রেষ্ঠত্ব সাধারনত বিচার করা হয় তাদের ব্যক্তিগত “এরিয়াল কম্ব্যাট ভিক্টরি” বা “ডগ ফাইট”এ বিজয়ের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে। এবং এই জন্য গুগল করলেই দেখা যাবে পৃথিবীর সব সেরা ফাইটার পাইলটরা হয় প্রথম অথবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার। কেননা, সেই সময়ে তখনও সুপারসনিক (শব্দের চেয়েও অধিক গতিসম্পন্ন) ফাইটার বিমান আবিস্কৃত হয় নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একদম শেষের দিকে অল্প কিছু ট্রান্সসনিক (শব্দের সমান গতিসম্পন্ন) বিমান মাত্র সার্ভিসে এসেছে। তো সেইসব অল্প গতির বিমান নিয়ে এরিয়াল কম্ব্যাট করাটাও সহজ ছিল এবং শত্রু বিমান ঘায়েল করার সম্ভাবনাটাও অনেক বেশি ছিল। এই জন্য সেরা ফাইটার পাইলটদের তালিকা প্রায় পুরোটাই বলতে গেলে প্রথম/ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মান পাইলটদের দখলে; সাথে কিছু মার্কিন, ব্রিটিশ অথবা সোভিয়েত পাইলটের নামও পাওয়া যাবে (এরকমই একটা লিস্টঃ is.gd/3qEaee, একই রকম লিস্ট গুগলেই অনেক পাওয়া যায়)। তবে, সাইফুল আজমের যে কীর্তি সেটা হচ্ছে, তিনি একাই ৪টি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করেছিলেন (যাদের বিরুদ্ধে আজ অবধি সাফল্যের সংখ্যা খুবই কম) এবং এই কীর্তিটি তাঁর মৃত্যুর পর ইসরায়েলি পত্রিকাও ছেপেছে (is.gd/yYgHWP)। তাঁর কীর্তি তিনি পৃথিবীর ৪টি দেশের বিমান বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর কীর্তি তিনি তিনটি দেশের হয়ে দুটি দেশের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন ৪টি মডেলের (ন্যাট, সুপার মিস্টেয়ার, মিরাজ-৩ ও ভাতুর-২) ৫টি বিমান ভূপাতিত করে ‘এরিয়াল কম্ব্যাট ভিক্টরি’ অর্জন করেছেন এবং তিনটি দেশ থেকেই সাহসিকতা খেতাব অর্জন করেছেন। ট্রান্সসনিক/ সুপারসনিক ফাইটারের জমানায় সম্মিলিতভাবে এতগুলো কীর্তি পৃথিবীতে বিরল।

ডকুমেন্ট ছাড়া নাকি তারা এগুলো মানবেন না। তারা সম্ভবত যুদ্ধের “সাহসিকতা খেতাব” বা “Gallantry Award“কে রাজনীতিবিদদের “জনবন্ধু”, “গণনেত্রী” জাতীয় উপাধির সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন; যা কিনা যে কেউই যে কাউকে হাজারখানেক মানুষের জমায়েতের সামনে দিয়ে দিতে পারে! পৃথিবীর প্রায় সকল সামরিক বাহিনীতেই “সাহসিকতা খেতাব” দেওয়ার একটা সুবিন্যাস্ত নীতিমালা / ফরম্যাট থাকে। একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহীর দফতর থেকে তা অনুমোদন করা হয়। এটাকে সেনা পরিভাষায় আমরা সাইটেশন (Citation) বলে থাকি। তাদের খুব বেশি জানতে ইচ্ছা হলে তারা যেন বিমান বাহিনী সদরে যোগাযোগ করে সাইফুল আজমের সার্ভিস রেকর্ড থেকে সাইটেশনগুলো দেখে নেন। আর খুব বেশি “হ্যাডম” থাকলে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে তাদের রেকর্ড থেকেও দেখে নিতে পারেন; আর তারপর না হয় “হড়হড় করে বমি করে” “টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে ফেললেন”!

২। তাদের প্রশ্ন লিভিং ঈগল নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীগুলোর বেসামরিক সমাজে সম্পর্কের ব্যাপ্তি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। বেসামরিক সমাজ তাদের সামরিক বাহিনীকে মোরাল, পলিটিক্যাল, ফিন্যান্সিয়াল ও কোলাবোরেশান সাপোর্ট দিয়ে থাকে। গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমকে ‘লিভিং ঈগল’ সম্মাননা দিয়েছিল গ্যাদারিং অফ ঈগল নামক একটি বেসামরিক প্রতিষ্ঠান যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর কোলাবোরেশানে কাজ করে। ইউ এস এয়ারফোর্স পরিচালিত এয়ার কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কোর্সের একটা প্রোগ্রাম হচ্ছে খ্যাতিমান পাইলটদের সাথে বর্তমান পাইলটদের এক্সপেরিয়েন্স শেয়ারিং। ১৯৮২ সাল থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক এই অনুষ্ঠানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে নিয়ে আজ অবধি অর্থ্যাৎ একশ ছয় বছরে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী এভিয়েশন জগতের প্রায় সাড়ে চারশত মানুষকে সম্মানিত করা হয়েছে। সাইফুল আজমের সাথে একই বছরে সম্মানিত বাকি ২১ জনের মধ্যে “সাউন্ড ব্যারিয়ার” ভাঙ্গা প্রথম ফাইটার পাইলট চার্লস ইয়েগারও ছিলেন! একশত ছয় বছরে সমগ্র পৃথিবীর সাড়ে চারশত মানুষের একজন হতে পারাটা যদি তাদের কাছে সম্মান বা অর্জন না মনে হয়, তাহলে আর কিছু বলার নাই!

এই গ্যাদারিং অফ ঈগলস সংস্থাটি খ্যাতিমান পাইলটদের একটি প্লাটফর্মে এনেছে যাতে তাদের মাধ্যমে ইউএস এয়ারফোর্স কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কলেজ তাদেরকে আমন্ত্রন জানিয়ে এক্সপেরিয়েন্স শেয়ারিংকে ফ্যাসিলিটেট করে। তারা সরাসরি ডাকতে পারে না কেননা এই লিজেন্ডদের বেশীরভাগই অবসরপ্রাপ্ত এবং তারা সরকারের অধীনে কাজ করেন না। ইউএস এয়ারফোর্স তাদেরকে সরাসরি ডাকতে চাইলে সরকারের মাধ্যমে ডাকতে হবে। কিন্তু একটা প্লাটফর্মের মাধ্যমে ডাকলে বিষয়টি সহজতর হয়। ইন্টারনেটে Gathering of Eagles Foundation লিখে সার্চ দিয়ে যে কেউই তা দেখতে পারেন। সাইফুল আজমের সাথে একই কাতারে সম্মানিত মানুষগুলো কারা ছিলেন, তাদের কীর্তি লিখে লেখা আরও বড় করতে চাই না। তাদের ওয়েবসাইটে (is.gd/J7XWKD) সাল ধরে দেওয়া আছে, যে কেউই দেখে নিতে পারেন।

৩। ১৯৭১ সালে দেশ যখন শত্রু কবলিত, তখন তিনি পাকিস্তান থেকে আসতে পারেন নি। সেই সময়ে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া অফিসারের সংখ্যা খুব বেশি না। এদেরই একজন আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। তবে পালিয়ে আসার সুযোগ সবার জন্য সমান ছিল না। যুদ্ধের শুরু থেকেই বাঙালি অফিসারদের তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রাখা হয়। নজরদারি বা সারভেইল্যান্স (Surveillance) শব্দটার ব্যাপ্তি বা মাত্রা কতটুকু আমাদের অনেকেই সম্ভবত সেই ধারনা রাখি না। সারভেইল্যান্স হলো একটা মানুষ বা বস্তু বা এসেটকে ২৪/৭ খেয়াল রাখা। উন্নত ও আর্থিকভাগে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা গুলো সারভেইল্যান্স এর জন্য মানুষ এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের আমেরিকান দুতাবাসে ইটে মাইক্রোফোন, বিড়ালের শরীরে চিপ লাগানোর গল্প নিশ্চয়ই শুনেছেন? সারভেইল্যান্স সেই রকম একটা বিষয় যা অত্যন্ত খরুচে এবং ক্লান্তিকর কিন্তু ইন্টারেস্টিং বিষয়। আপনি সবাইকে সারভেইল্যান্স এর আওতায় আনতে পারবেন না। তাই আপনি হাতে গোনা কয়েকজন কী পার্সোনেলকে (Key Personnel) সারভেইল্যান্স করবেন। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে সাইফুল আজম যে-সে কেউ ছিলেন না, He was THE SAIFUL AZAM! তিনি একজন ব্যাটল প্রুভেন / হার্ডেন্ড ফাইটার পাইলট যিনি আকাশে উড়লে যুদ্ধের হিসাব ওলট-পালট করে দেওয়ার সক্ষমতা রাখতেন। অতএব, উনাকে যে মাত্রার সারভেইল্যান্সে রাখার কথা তা অন্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। লেঃ জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিনও একই মাত্রার সার্ভেইল্যান্স এর অধীনে থাকার কথা। উনাদের পক্ষে পালানো সম্ভব ছিলো না। কোনভাবেই না।

৪। যুদ্ধ শেষে আটকে পড়া বহু বাঙালি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আফগানিস্তান হয়ে দেশে ফিরেছেন, তিনি ফিরতে পারেন নাই। জানি না, তাদের ব্যবহৃত এই ‘বহু’ শব্দের ব্যাপ্তি কত বড়। এদের কথা শুনলে মনে হয় “বন্দি শিবির” বা “কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প” থেকে পালানো মনে হয় স্কুল-কলেজের দেয়াল টপকে পালানোর মত সহজ কোন কাজ। জাতীয় কবির কথায়, “লাথি মার ভাঙরে তালা, যত সব বন্দী শালায় আগুন-জ্বালা, আগুন-জ্বালা, ফেল উপাড়ি” শুনতে যত ভাল লাগে বা বলতে যত সহজ মনে হয়, আসলেই কি তা এত সহজ? মুক্তিযুদ্ধের পরে বন্দিশিবিরে আটক বাঙালি অফিসার এবং তাঁদের পরিবারগুলোর জীবন কেমন ছিল এসম্পর্কের বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের (বিশেষ করে এই “চেতনা পার্টি”র মানুষদের) তেমন কোন ধারনা নেই। তাদের অনুরোধ করব প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুবায়ের সিদ্দিকী (অবঃ) এর লেখা “স্মৃতির অলিন্দে” বইটা পড়ে দেখার জন্য। সেটা না পাওয়া গেলে অভিনেতা ও পরিচালক তৌকির আহমেদের কাছ থেকেও জেনে নিতে পারেন (তিনিও সপরিবারে বন্দি শিবিরে ছিলেন)।

Partial Script Courtesy: He who does not wish to be named 😎. I know you are reading it too :D

১। ১৯৭৭ সালে সাইফুল আজম বিমান বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নাকি বিপুল সংখ্যক বিমান সেনাকে হত্যা করেছেন এবং এই বিদ্রোহের পরেই নাকি তিনি পদোন্নতি পান! এখানে কয়েকটা এংগেল থেকে আর্গুমেন্ট ক্লিয়ার করা প্রয়োজন।

প্রথম এংগেলটা দালিলিক। সস্তা আবেগ ঝেড়ে আগে তাহলে একটু দেখি দলিল কি বলে। কোন এক সৌভাগ্যজনক মুহূর্তে আমার একবার সুযোগ হয়েছিল সাইফুল আজমের সার্ভিস রেকর্ডের সার-সংক্ষেপ (Extract) দেখার। যেহেতু, একজন সামরিক অফিসারের সার্ভিস রেকর্ড এমনকি তার অবসরের পরেও গোপনীয় (Confidential) থেকে যায়, সুতরাং সেটা তো এখানে দেখানো যাবে না। কিন্তু আমার নিজের চোখে দেখা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের পর তাঁর দুটো পদোন্নতির তারিখ হচ্ছে যথাক্রমে ২৬ জুন ১৯৭৪ (উইং কমান্ডার) এবং ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭৬ (গ্রুপ ক্যাপ্টেন)। অথচ, কি অবলীলায় এই মিথ্যুক “সহমত ভাইয়া/আপু”র দল বলে বেড়াচ্ছেন যে, ১৯৭৭ সালের বিমান বাহিনী বিদ্রোহের পর তিনি পদোন্নতি পান!

দ্বিতীয়ত, ১৯৭৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর “জাপানিজ রেড আর্মি” নামক একটি কমিউনিস্ট জঙ্গী গ্রুপের ৫ জন জঙ্গী জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করে ঢাকা পুরাতন বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। ২ অক্টোবর এই ঘটনার অবসান হয়। সরকারের সব মহল যখন এই সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই ঢাকায় বিমান বাহিনীর কিছু এয়ারম্যান একটি বিদ্রোহ সংঘটিত করেন। খেয়াল রাখতে হবে, এটা ছিল “বিদ্রোহ’ যেখানে ১১জন সিনিয়র বিমান বাহিনী অফিসার নিহত হন। আমাদের এই “সামরিক আইন বিশেষজ্ঞ”গণ এবং তাদের সমমনা কিছু মিডিয়া/ লেখক তাদের ভ্রষ্ট বামঘেঁষা ও ভন্ডামিমার্কা চিন্তা-ভাবনা দিয়ে সব সময়ই সেনা বিদ্রোহগুলোকে খুব “রোমান্টিসাইজ” করে থাকেন এবং সবসময়ই এগুলো নিয়ে আহ্লাদিমার্কা লেখা লিখে থাকেন। সেটা ১৯৭৫ এর ৭-৮ নভেম্বরে কর্ণেল আবু তাহের, বীর উত্তমের বিদ্রোহ হোক, ১৯৭৭ এর বিমান বাহিনীর বিদ্রোহ হোক অথবা ২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ হোক।
সামরিক আইনে সামরিক পরিসরে সংঘটিত অপরাধ সমূহকে ৩২টি সেকশনে (২৪-৫৫) ভাগ করা হয়, যার অষ্টমটি হচ্ছে সেকশন ৩১ যেখানে বিদ্রোহ এবং এর শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলা আছে। এই সেকশন অনুযায়ী কেউ বিদ্রোহ করলে, অথবা বিদ্রোহে সহায়তা করলে অথবা বিদ্রোহ দমনে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা না করলে অথবা বিদ্রোহের ব্যাপারে কোন তথ্য জানার পর সেটা কর্তৃপক্ষকে না জানালে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আর তার সাথে যদি “হত্যা’ জড়িত থাকে, সেই অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সামরিক বাহিনীর প্রতিটি সদস্য প্রশিক্ষন শুরুর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই এই আইনের আওতায় চলে আসে এবং প্রত্যেককে এই ব্যাপারে অবগত করা হয়। সমগ্র পৃথিবীতে যত দেশে এখনও মৃত্যুদন্ড বহাল আছে, অধিকাংশ দেশেই আমার জানা মতে সামরিক আইনে বিদ্রোহের শাস্তি একইরকম। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর যে সমস্ত বাঙালি সদস্য বিদ্রোহ করে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা সবাই এটা জেনেই যুদ্ধে গিয়েছিলেন যে যুদ্ধে হেরে গেলে সবাইকেই ফাঁসির দড়ি/ ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রাণ দিতে হবে। এখন কথা হচ্ছে, আপনি বিদ্রোহের শাস্তির কথা জেনেও বিদ্রোহ করবেন, বেঘোরে কিছু মানুষকে মেরেও ফেলবেন, চে গেভারার মত একটা ‘রোমান্টিক বিপ্লবী’ ভাবও নিবেন, কিন্তু বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর আইন অনুযায়ী তার জন্য নির্ধারিত শাস্তি দিতে গেলে তখন গাল ফুলিয়ে অভিমান করবেন, ত্যানা পেঁচিয়ে বলবেন, ‘মানি না, খেলব না’, আবেগি বই লিখবেন আর নাটক-সিনেমা বানাবেন, এটা কেমন কথা?

আমি জানি না ঠিক কত সংখ্যার জন্য “বিপুল সংখ্যক” কথাটা ব্যবহার করা যায়। তবে ১৯৭৭ এর এই বিদ্রোহ নিয়ে খুবই কমন কিছু মীথ, “এই বিদ্রোহের পর ‘হাজারো’ বিমান সেনার মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়”, “সারারাত জেগে প্রেসিডেন্ট জিয়া মৃত্যুদন্ডের পরোয়ানায় সই করতেন” এসবেরও কিন্তু কোন দালিলিক ভিত্তি নাই! ওহ স্যরি আছে; আনিসুল হক এর লেখা কল্প-কাহিনী আর ফারুকির বানানো নাটক/টেলিফিল্ম! সেই সময়ে আমাদের বিমান বাহিনীর মোট জনবল সাকুল্যে হয়ত হাজারের কিছু বেশি ছিল! তাদের ভাষ্যমতে এই “হাজারো” মানুষের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলে আমাদের বিমান বাহিনী প্রায় জনশুন্য হয়ে যাওয়ার কথা ছিল! এই মীথগুলো মানতে অবশ্য তাদের তথ্যপ্রমাণ লাগে না! এগুলোর জন্য এসব গল্প-নাটক-সিনেমা অথবা তাদের মুখের কথাই রেফারেন্স!

তৃতীয়ত, এদের ভাষ্যমতে ১৯৭৭ এ বিমান বাহিনীর যে কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেই বা ১৯৭৭ এ বিমান বাহিনীতে পদোন্নতি পেলেই আপনার হাতে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিতদের রক্ত লেগে গেল! বাহ! কি চমৎকার এই “সামরিক আইন বিশেষজ্ঞ”দের বিশ্লেষণ। পদায়ন (Posting) এবং পদোন্নতি (Promotion) দুটোই সামরিক বাহিনীর একেবারেই নৈমিত্তিক ঘটনা, যেটা যুদ্ধ বা শান্তিকালীন সারা বছর জুড়েই চলতে থাকে। এখানে আবারও একটু দলিলের সাহায্য নেই তাহলে! সাইফুল আজম ঢাকা বেসের বেস কমান্ডারের দায়িত্ব নেন ১৯৭৭ এর ৩ অক্টোবর, অর্থ্যাৎ সেই জিম্মি নাটক এবং বিদ্রোহের ঠিক পরপরই। কেন নিলেন? তিনি কার স্থলাভিষিক্ত হলেন? তিনি স্থলাভিষিক্ত হলেন আগের বেস কমান্ডার গ্রুপ ক্যাপ্টেন আনসার আহমেদ চৌধুরীর যিনি বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হয়েছিলেন।

২। “সাইফুল আজম ১৯৭১ এ পাকিস্তানে গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতিত হচ্ছিলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমানের সাথে তিনিও পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চেয়েছিলেন”- এইসব রূপকথা নাকি তারা মানবেন না। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর আর এই ভদ্রলোক সেসময় নাকি দুই আলাদা শহরের বিমান ঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। সাইফুল আজম নাকি সে সময়ে সারগোদা বেসে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে নাকি এখন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের সমকক্ষ করা হচ্ছে! ১৯৬৫ এর পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তিনি সারগোদা বেসে পোস্টেড ছিলেন। আগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ এ তাঁরা উভয়েই সে সময়ে করাচীর মৌরিপুর (পরবর্তীতে মাসরুর নামকরণকৃত) এয়ার বেসে কর্মরত ছিলেন (সাইফুল আজমের স্ত্রীর মুখেই শোনা যাবে, ২০.৩১ মিনিট থেকেঃis.gd/NSYv53)। “মৌরিপুর” আর “মাসরুর” নাম নিয়ে যাদের সন্দেহ হচ্ছে তাদের জন্য প্রথমে ইন্টারনেটভিত্তিক একটি সামরিক বিশ্লেষণ সাইট globalsecurity.org থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি (যেহেতু “পাইক্কা”দের সাইটের উপর তাদের ভরসা নাই) -

“In 1967, Air Commodore Masroor Hosain, a brilliant officer of the PAF who was then the base commander of Mauripur, was killed in a tragic bird strike accident during an operational exercise, in a B-57 he was flying in the vicinity of Karachi: subsequently the base was named after him.”

যে কেউ Google Maps এ সার্চ দিয়ে দেখে নিতে পারেন মৌরিপুর কোথায় আর মাসরুর বেস কোথায়। সুতরাং, তাঁরা দুইজন একই বেসে কর্মরত ছিলেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সেক্ষেত্রে, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের সাথে তাঁর এধরনের কোন পরিকল্পনার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে, সাইফুল আজম যে পর্যায়ের বিনয়ী এবং নিরহংকারী ছিলেন, এইসমস্ত বিষয় নিয়ে তিনি কোন দিনই কোন আলগা ক্রেডিট নিতে যান নাই। আর তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে, তিনি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের সাথে এরকম কোন পরিকল্পনা করেন নাই, তাতে কি সমস্যা হল এইটা আমার বোধগম্য নয়। তাঁর মত টপ র‍্যাংকিং একজন পাইলটের উপর যে মাত্রাতিরিক্ত নজরদারি থাকবে সেটা তো বলাই বাহুল্য। আবেগ দিয়ে সবকিছুকে না মেপে প্র্যাক্টিকালি চিন্তা করলেই মনে হয় এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, সাইফুল আজমকে কোন অবস্থায়ই বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের সমকক্ষ করা হচ্ছে না। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর যা করে গিয়েছেন, সেটা আর কেউ করতে পারেন নাই। বীরদের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দেখেই তিনি বীরশ্রেষ্ঠ, পিরিয়ড। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।

রইল বাকি তাঁর গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতিত হওয়ার কথা। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের বিমান ছিনতাইয়ের পরের দিনই তিনি আটক হন এবং তাঁকে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিটি আর কেউ নন, স্বয়ং তাঁর কোর্সমেট স্কোয়াড্রন লীডার (পরবর্তীতে গ্রুপ ক্যাপ্টেন) সেসিল চৌধুরী (Cecil Chaudhry) যিনি নিজেও পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন দুর্ধর্ষ পাইলট ছিলেন (একই ভিডিও দ্রষ্টব্য)। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন পারভেজ মাহমুদ ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট লাহোর ভিত্তিক পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত ইংরেজি সাপ্তাহিকী “THE FRIDAY TIMES” এ “AS EVERYTHING FELL APART” শীর্ষক একটি স্মৃতিচারনমূলক কলাম লেখেন (is.gd/E77IQn) যেখানে তিনি ১৯৭১ এর যুদ্ধ চলাকালীন তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তাঁর কলাম থেকে একটি অংশ এখানে উদ্ধৃত করছিঃ

“Pro-independence Bengalis were initially taken off duty, and interred when the war broke out. Some of them were kept at Lower T**a. They had to be guarded so that they could not escape. Some of us were deployed to guard them, which basically amounted to being with them wherever they went within the Mess area. Of course, they were not allowed to venture any further. It was a melancholy exercise as some of those officers had been well respected and admired members of the service.
Some Bengali officers had opted to continue serving and there were two who were on the training and medical staff at Lower T**a. In general, some officers fought against India with the PAF, including the legendary MM Alam. Others such as Sqn. Ldr. Saiful Azam, a decorated war hero of 1965, were found to be Bangladesh loyalists. He was from my school, from a very senior entry. Saiful had earned the highest gallantry awards from his deployment to Jordan and Iraq in the 1967 war. He has shot down more Israeli aircraft than any other aviator. He continues to be remembered as a hero in the PAF. Seeing him inactive against India, and in confinement, was sickening to say the least.”

তাঁর বন্দি থাকা অবস্থায় এই সময়ে করাচীতে তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীও কম ভোগান্তিতে ছিলেন না। পুরোটা সময় তাঁকে জানতেও দেওয়া হয় নি তাঁর স্বামী কোথায় আছেন, কি অবস্থায় আছেন। তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন, যে সন্তানটি ডাক্তার/নার্সদের অবহেলায় হাসপাতালেই মারা যায় (ভিডিও দ্রষ্টব্য)। এতকিছুর পরেও নাকি সাইফুল আজমের গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতিত হওয়াটা তাদের কাছে রুপকথা!

সাইফুল আজম ১৯৭৪ এ দেশে ফেরার পর তাঁর জীবদ্দশায় ২ বার পাকিস্তান গিয়েছেন। প্রথমবার যান ১৯৯০ এ তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাকিমুল্লাহ খান দুররানীর আমন্ত্রণে, যেখানে সাইফুল আজমকে ১৯৬৫ ও ১৯৬৭ তে তাঁর “এরিয়াল ভিক্টরি” বা “Kills” এর উপর গ্রুপ ক্যাপ্টেন হুসাইনীর আঁকা কয়েকটি চিত্রকর্ম উপহার দেওয়া হয়। দ্বিতীয় এবং শেষবারের মত তিনি পাকিস্তান যান ২০০৩ এ তাঁর কৈশোরের বিদ্যাপীঠ পিএএফ পাবলিক স্কুল, সারগোদার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত রি-ইউনিয়নে। এখানে বলে রাখা ভাল, পারভেজ মাহমুদ নিজেও একজন “এক্স-সারগোদিয়ান”। ২০০৫ এ সাইফুল আজম নিজে ঢাকায় “এক্স-সারগোদিয়ান”দের আরেকটি রি-ইউনিয়ন আয়োজন করেছিলেন।

সাইফুল আজমের মৃত্যুতে শুধু পাকিস্তান না, জর্ডান (is.gd/OJDta2) ও নির্যাতিত স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনের (is.gd/h5psRz) মানুষরাও শোক প্রকাশ করেছেন। তার মৃত্যুর পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর খোলা ভার্চুয়াল শোক বইয়ে এমনকি তিনি যাদের বিমান ভূপাতিত করেছিলেন, সেই ভারত ও ইসরায়েলের নাগরিকরাও এসে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে গিয়েছেন (স্ক্রিনশট দেওয়া আছে)। এমনকি, ইসরায়েলের বহুল প্রচারিত পত্রিকা ইসরায়েল হায়োমও যথেষ্ঠ গুরুত্বের সাথে তাঁর মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ করেছে (is.gd/yYgHWP)। এটাকে আমি তাদের বড় মনের পরিচয়/ উদারতা হিসেবেই দেখব। “It takes one brave man to acknowledge another.”। এই “চেতনা সৈনিক”দের সংকীর্ণ মনে কোনদিনই এটা ঢুকবে না! আর পাকিস্তানের শোক প্রকাশ? ফাইটার পাইলট হিসেবে তাঁর যত কীর্তি সেটা পাকিস্তান বিমান বাহিনীতেই। সেখানে আজ অবধি তিনি অন্যতম সেরা পাইলটের মর্যাদায় আসীন। স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের বিমান বাহিনীর ইতিহাসের অন্যতম সেরা পাইলটের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করবে। একটা পেশাদার সামরিক বাহিনীর জন্য এটা করাই স্বাভাবিক।

৩। এসমস্ত ব্যাপারে সাধারনত কেউ কথা বলার সাহস করে না, আজ আমি করব। হয়ত এই পয়েন্টটা একটু বড় হয়ে যাবে, কারো ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। বিশ্বজুড়েই পেশাদার সামরিক বাহিনীগুলোর সদস্যদের মাঝে একটা অন্যরকম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন কাজ করে। শুনতে অবাক লাগলেও, যুদ্ধচলাকালীন মুখোমুখি দুই পক্ষের সৈনিকদের সম্পর্কটা শুধু বুলেটেরই নয়, একই সাথে শ্রদ্ধারও। সামরিক প্রশিক্ষণ আমাদের শুধু অস্ত্র চালনা আর “লেফট-রাইট” করা শেখায় না। আমাদের প্রশিক্ষণ আমাদের শেখায় ডিসিপ্লিন (Discipline), অনার কোড (Honour Code), শিভালরি (Chivalry) জাতীয় শতাব্দী-প্রাচীন কিছু ঐতিহ্যবাহী সংস্কার বা আচরন। আমরা যেমন দেশের প্রয়োজনে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি, একে অপরের প্রাণ সংহার করতে পারি, তেমনই যুদ্ধ সমাপ্তির পরের মুহূর্ত থেকে আমরা আবারও “Brothers in Arms” হয়ে একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতাও প্রকাশ করতে পারি। “করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা” – কাজী নজরুলের কবিতায় সবাই হয়ত পড়েছেন, কিন্তু আমরা সৈনিকরা তা হৃদয়ে ধারন করি। এটা এমন একটা অনুভূতি যেটা একজন পেশাদার সৈনিক যেভাবে উপলব্ধি করবে, একজন সাধারন অসামরিক ব্যক্তি তা পারবে না। আর ‘চেতনা’র আফিমে বুঁদ হয়ে থাকলে তো সেটা বোঝা অসম্ভব! এটা জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণ গন্ডিকেও ছাড়িয়ে যায়। প্রাচীন হোক, মধ্যযুগীয় হোক, কি আধুনিক হোক, সব জমানাতেই সামরিক ইতিহাসে এরকম প্রচুর উদাহরন আছে যেখানে জাতীয়তাবাদের সীমানা পেরিয়ে সৈনিকেরা এমনকি শত্রুর প্রতিও সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে। এখানে আমি ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের তিনটি বাস্তব উদাহরন দেওয়া যেতে পারে।

ক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের অন্যতম সেরা ফাইটার পাইলট ছিলেন ম্যানফ্রেড ভন রিখটোফেন। তার এরিয়াল ভিক্টরি ছিল ৮০টি। তিনি একবার ব্রিটিশ একজন প্রতীথযশা পাইলটের বিমান ভূপাতিত করার পর সেই ব্রিটিশ পাইলট নিহত হন। যখন সীমানার অন্যপাশে সেই ব্রিটিশ পাইলটের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হচ্ছে, খবর পেয়ে রিখটোফেন তখন তাঁর নিজের স্কোয়াড্রন নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের উপর দিয়ে সম্মানসূচক ফ্লাইপাস্ট করেছিলেন। রিখটোফেনের এই সমস্ত গূণাবলীর এমনকি তাঁর শত্রু ব্রিটিশ ও ফরাসিরাও তারিফ করত। যুদ্ধের শেষের দিকে যখন রিখটোফেন নিজেও এরিয়াল কম্ব্যাটে নিহত হন, তার বিমান মিত্র বাহিনীর সীমানায় ভূপাতিত হয়। ব্রিটিশ/ অস্ট্রেলিয়ানরা তখন পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। তাকে সমাধিস্থ করার পর সেখানে তারা একটি পুষ্পস্তবকও রাখে যেখানে লেখা ছিল, "To Our Gallant and Worthy Foe"। রিখটোফেনের জীবনীর উপর নির্মিত “The Red Baron” সিনেমাতেও এরকম একটা ঘটনা দেখানো হয়েছে। সেই সিনেমার একটি ক্লিপ এবং তাঁর সত্যিকারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের নির্বাক (১৯১৮ সালের) একটি ভিডিও ক্লিপ এই পোস্টের সাথে দিয়ে দিচ্ছি।

খ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত কামালপুরের যুদ্ধের কথা কেউ কেউ শুনে থাকবেন। এটি ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রথাগত আক্রমণ যেটা শেষ পর্যন্ত সফল হয় নি (অল্প বিদ্যাধারী কিছু “চেতনাযোদ্ধা” অবশ্য এই ব্যর্থতা নিয়েও ত্যানা প্যাঁচান, যেহেতু এই আক্রমনটা “জেড ফোর্স” এর একটি ইউনিট পরিচালনা করেছিল)। ব্যর্থ অভিযান হলেও আমাদের সেনাবাহিনীর অফিসার ক্যাডেট থেকে শুরু করে এমনকি “মিড-ক্যারিয়ার” মেজররাও এখনও যথেষ্ঠ গুরুত্বসহকারে “ব্যাটল অব কামালপুর” স্টাডি করেন। কারন, এই অভিযানেই পাকিস্তানীরা টের পায় যে মুক্তিবাহিনী এখ

Address

Dhaka
1000

Website

Products

Tourism Industry

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Mahfuz Rahman । মাহফূয রহমান । محفوظ الرحمن posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Mahfuz Rahman । মাহফূয রহমান । محفوظ الرحمن:

Videos

Share

Category