06/05/2022
একজন ট্যুর অপারেটর ও সিলেটের সন্তান হিসেবে গতকালের জাফলং এর বিষয়ে কয়েকটা কথা বলতে চাই...
জাফলং সিলেটের পর্যটনের পরিচায়ক, সিলেট চিনেন আর জাফলং চিনেন না এমন বোধহয় কেউ নেই। তাই এক কথায় জাফলং কে সিলেটের ব্রান্ডিং বলা যায়।
প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষাধিক পর্যটক জাফলং ঘুরতে আসেন।
এবার আসি একটু বিশ্লেষনে, জাফলং মুলত দুটো পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আন্তদেশীয় নদী যার বাংলাদেশ পার্টের নাম পিয়াইন, ভারত অংশের নাম উমংগাট। এই নদীকে কেন্দ্র করে দু দেশেই পর্যটন শিল্প বিকশিত হয়েছে।
কিন্ত যারা ইন্ডিয়া সাইট ভিজিট করেছেন তারা জানেন আমাদের আর তাদের পর্যটনের কোয়ালিটি তে কত আকাশ পাতাল পার্থক্য।
মেঘালয় টুরিজম বোর্ড নামক রাজ্য সরকারের সেন্ট্রাল ব্যবস্থাপনায় প্রতিটা পর্যটন স্পট দারুন ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, প্রতি বছর আভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক লক্ষ লক্ষ পর্যটক আসেন জাফলং এর পাশ্ববর্তী ভারতীয় ডাউকি এলাকায়।
আমি একাধিকবার মেঘালয় ভ্রমন করেছি, তাদের প্রতিটা পিকনিক স্পটে ১০/২০ রুপির টিকেট কেটে ঢুকতে হয়, তার বিপরীতে তারা ও পর্যটকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার ট্রাই করে।
পক্ষান্তরে আমাদের জাফলং এর অবস্থা দেখুন, এখন ত নীচে নামার সিড়ি করে দিছে এইত দু বছর আগেও কাদা ভেংগে নীচে নামতে হত। ছিল না কোন ওয়াশ ব্লক, কাপড় চেঞ্জ করার জায়গা টুকুন।
একটি প্রমিনেন্ট পর্যটন স্পটের নুন্যতম যে সুবিধা থাকা দরকার তা ও নাই জাফলং এ।
তাই গতবছর পর্যটন রিলেটেড সকল মহল, স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি সবার মিলিত বৈঠকে সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নাম মাত্র এই ১০ টাকা প্রবেশ ফি নির্ধারন করা হয়, যা থেকে প্রাপ্ত ফান্ডের মাধ্যমে আল্টিমেটলি পর্যটকদের ই স্বার্থ সংরক্ষন করার জন্য।
কিন্ত এখন যে সমস্যা কাল হলো এবং এর ফলে এখন যে সাবাই বলছেন কেন "চাদা" নেয়া হচ্ছে তাদের জন্য বলি...
আমাদের দেশ আগাগোড়া জবাবদিহিতা হীন একটা রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্য দিয়ে চলছে, আর এমন সমাজে সকল স্তরে তখন সেচ্ছাচারিতা ও জবরদস্তির কালচার গড়ে উঠে।
তার ই প্রেক্ষাপটে গতকালের পরিস্থিতি, কালকের ঘটনা টা দু দিক থেকে চিন্তা করুন, প্রশাসন নির্ধারিত মাত্র ১০ টাকা এই প্রবেশ মুল্য যদি পর্যটক রা দিয়ে দিতেন তাহলে এই সমস্যা ও হত না, আর না দেয়ার ফলে উদ্ভুদ্ধ পরিস্তিতি যদি সেচ্চাসেবকরা প্রফেশনালি ডিল করতে পারত তাহলে এত বড় ন্যাক্কারজনক ঘটনা ও ঘটত না।
এর মুল কারন প্রশাসন ও কাঠামো ব্যবস্থার প্রতি সাধারন মানুষের আস্থার অভাব এবং আমাদের টিপিকাল মানুষিকতা। অমরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে ঘুরতে যেতে পারি কিন্ত ১০ টাকার জন্য ঝামেলা করি।
তার মানে আমি এটা কোন ভাবেই নুন্যতম সমর্থন করছিনা যা গতকাল ঘটেছে, আমি এটাই বলতে চাচ্চি জবাবদিহিতা না থাকায় এবং সামান্য উর্দির গরমে কাল পর্যটকদের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ট ও উপযুক্ত বিচার হোক।
সাথে এই দাবী ও জানাই শিক্ষিত, প্রফেশনাল মানুষদের কে এসব কাজে নিয়োগ করা হোক এবং ক্রমান্বয়ে দেশের সকল পর্যটন স্পটে নামমাত্র মুল্যে প্রবেশ ফি নিয়ে পর্যটন স্পট ও পর্যটকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যায় করা হোক। প্রয়োজনে পর্যটন কর্পোরেশন কে বেসরকারি খাতে একটি দক্ষ ব্যবস্থাপনার আন্ডারে দিয়ে দেয়া হোক, তবুও বাচুক আমাদের পর্যটন শিল্প টা।
সাথে সাথে এ ও বলতে চাই, আমাদের মানুষিকতার ও বদল হোক, পর্যটনের উন্নয়নে আমরা ও ভুমিকা রাখি। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয় দেশের সেটা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করিনা, ১০/- কেন দেব?
এইটা নিয়ে আমরা ক্যাচাল করি।
আমাদের একটা কমন ট্রেন্ড হলো কোথাও কোন অকারেন্স হলে বয়কট অমুক জায়গা....
এটা কিরকম কথা বুঝে আসেনা 😱
মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা এই বয়কট সেই বয়কট বলেন তারা সুযোগ পাইলে সবার আগেই আবার ঐসব জায়গায় যান 🤪
ভাইরে মাথা ব্যাথা মাথা ব্যাথা কমার ঔষধ খেতে হয়, মাথা কাটতে হয় না।
কেন সমাজে অন্যায় হচ্ছে, কেন জুলুম হচ্ছে, কেন মানুষ সেচ্চাচারি হচ্ছে, কেন জবাবদিহিতা নাই, এগুলা নিয়া চিন্তা করেন
নিজের অবস্থান থেকে তার এগেইন্সটে কাজ করেন
খামাখা পর্যটন রিলেটেড় লক্ষ লক্ষ মানুষের পেটে লাথি মারিয়েন না।
সিলেট আধ্যাত্মিক নগরী৷ সিলেট ভালোবাসার শহর, সিলেট চোখ এর শান্তি পাওয়ার, মনের প্রশান্তির শহর, সিলেটে বেড়াতে আসলে আপনি মনে প্রশান্তি পাবেন।
তাই সিলেট বেড়াতে আসুন,প্রকৃতি কন্য জাফলং এ আসুন, পর্যটন তথা দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখুন।
Ali Haydar Misbah
CEO
Explore Sylhet
(বিঃদ্রঃ এই বিষয়ে স্থানীয় UNO র বক্তব্য শুনুনঃ
https://fb.watch/cQD4oguM2q/