Hotels & Travel Information - Bangladesh

Hotels & Travel Information - Bangladesh Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Hotels & Travel Information - Bangladesh, Nijhum Dweep, Hatia, Noakhali, Dhaka.
(19)

সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং। অসাধারণ এক জায়গা.....কার কার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে এই নির্জন দ্বীপে???
28/12/2021

সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং।
অসাধারণ এক জায়গা.....

কার কার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে এই নির্জন দ্বীপে???

10/12/2017

ট্যাগ করুন আপনার সেই ভ্রমণপ্রিয় বন্ধুকে যে দেশের এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে কিন্তু এখনো সাঁতার জানেনা!
কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবান, সিলেট - দেশের বেশিরভাগ জনপ্রিয় পর্যটন স্পটই পানি-কেন্দ্রিক!
ঘুরাঘুরি করতে গেলে সাতার জানাটা খুবই জরুরি, যারা জানেন না শিখে নিবেন!

27/06/2017

ঘুরে আসুন ঢাকা - কলকাতা - আগ্রা - দিল্লি - মানালী - আম্রিতাসর ( পাঞ্জাব ) - কলকাতা - ঢাকা মাত্র ১৮৬ ডলার বা ১২,৬৬৭ হাজার রুপি ( রুট প্লান )
কি অবাক হচ্ছেন। ভাবছেন গাজা খুড়ি গল্প মারছি না হয় ফাউল একটা টুরের গল্প শুনাচ্ছি। না ! একটা পরিকল্পিত ভালো বা লাক্সরিয়াস টুরের গল্প বলছি। দালাল বা এজেন্সি বাদ দিয়ে নিজে নিজে ট্যুর করতে শিখুন :) । এবার নিচে পড়তে থাকুন। এই টুর দিতে হলে আপনাকে মিনিমাম ৩ জন হতে হবে এবং সময় লাগবে ১৫ দিন।
◄◄▌▌ দিন এক : ঢাকা থেকে বেনাপোল শ্যামলী , গ্রীন লাইন, সোহাগ পরিবহন ৫০০ টাকা বা ৪২০ রুপি। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে খরছ ৫০ রুপির মত। এবার সোজা চলে আসবেন বনগাঁ রেলওয়ে স্টেশনে খরছ সি এন জি ৩০ রুপি। এখান থেকে শিয়ালদাহ ট্রেনের ভাড়া ২০ রুপি। আপনি সোজা চলে এলেন শিয়ালদহ। প্রথম দিন কলকাতায় থাকবেন না। শিয়ালদহ থেকে রাতের ট্রেন ধরে চলে যাবেন আগ্রা ফোরট রেলওয়ে স্টেশন। ভাড়া নিবে স্লিপার ক্লাস ৫৬৫ রুপি মাত্র। যারা ভাবেন স্লিপার ক্লাস খারাপ তাদের জন্য এক বালটি সমবেদনা। শিয়ালদাহ রেলস্টেশনে এসে এর পিছনের গেটে চলে যাবেন। ওখানে কম দামে ভালো খাবার পাওয়া যায়। ১০০ রুপি দিয়ে ভাত আর মাছ পাবেন আর ৭ রুপির সোডা খাবেন। সোডাটা মিস করবেন না।। অস্থির জিনিস। আল ইন্ডিয়া এয়ারটেল সিম + ১ জিবি কিনবেন ৩০০ রুপি দিয়ে । ভোডা ফোনের কভারেজ কম । এয়ারটেল বেষ্ট
দিন ১ এর মোট খরছ ৪২০+৫০+৩০+২০+৫৬৫+৩০+১০০+৭ +৩০০ = ২০৩৩ রুপি
◄◄▌▌দিন দুই : ট্রেনে খাবেন আন্ডা বিরিয়ানি। প্রতি প্যাকেট ১০০ রুপি মাত্র, সাথে থাকবে ২ টা ডিম আর ফ্রাইড রাইস । ২ বেলা আন্ডা বিরিয়ানি আর সকালে নাস্তা মিলে খরছ ২৫০ রুপি। আপনার যদি চা খাবার ইচ্ছে থাকে তবে খেয়ে নিন। ১০ রুপি পার কাপ। স্লিপার ক্লাসে আপার টা নিবেন। রাতে শান্তির ঘুম আর দিনে ট্রেনের জানালা দিয়ে ভারতবর্ষ কে দেখুন। আপনি এসি কামড়ায় গেলে হয়তবা আরাম বেশী পাবেন বাট ভারতবর্ষ তো আর দেখতে পারবেন না ঠিকমত। যারা ট্রেন ভ্রমন করেছেন তারা জানেন ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে বাহিরের জগত দেখার মজাটা কিরকমের।
দিন ২ এর মোট খরছ: ২৫০+২০= ২৭০ রুপি
◄◄▌▌দিন তিন: সকাল বেলা চলে আসবেন আগ্রা ফোরট স্টাশনে। সকালে ট্রেনেই নাস্তা সেরে নিবেন। খরছ হবে ৫০ রুপি। আমরা ছিলাম স্টেশনের পাশেই অজয় ইন্টান্যাশনালে। ১ রাতের জন্য ভাড়া ৯৫০ রুপি বা পার পারসন হিসেবে ৩১৭ রুপি। এবার হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। হোটেল থেকে বেড়িয়ে হাতের ডান দিকে একটু হাটুন। ২ মিনিট হাটলেই জামা মসজিদ পাবেন । মসজিদ এর সাথে সব মুসলিম খাবারের হোটেল পাবেন। এক প্লেট কলিজা ৪০ রুপি আর তন্দুররুটি ৫ রুপি। ৩ টে খেলেই পেট ভড়ে যাবে। খাওয়া শেষ করে মোবাইলের জিপিএস অন করুন এবং বিজালি ঘর ক্রসিং ট্রাক করুন । ৫ মিনিটের হাটাপথ বিজালি ঘর ক্রসিং মোড়ে চলে আসুন। এখান থেকে তাজমহল গামী সি এন জি পাবেন, পার পারসন ১০ রুপি। সোজা গিয়ে নামবেন তাজমহল এর Western Gate। এখানে গিয়ে টিকিট কাটুন। টিকিট কাটার সময় অবশ্যই বলবেন SAARC COUNTRY. টিকিটের মুল্য হয়ে যাবে ৫৩০ রুপি মাত্র। আগে তাজমহল দেখবেন। কেন দেখবেন সেটা পরে বলছি :) । তাজমহল দেখার সময় সব সময় ফরেনার জোন ব্যাবহার করবেন। পুলিশ টিকিট দেখতে চাইলে দেখাবেন। ফরেনার টিকিটে অনেক সুবিধা। বাথরুম ফ্রি, সবার আগে যেতে পারবেন ইত্যাদি। ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় নিয়ে তাজমহল দেখুন। এর পর একটা অটো নিয়ে চলে আসুন আগ্রা ইমতি উদ দৌউলা । দাম নিবে ৮০ রুপি, পার পারসন রুপি ২৭ রুপি । আসার পথে মিনা বাজার দেখুন। এর পর সোজা চলে জান ইমতি উদ দৌউলা দেখতে। ইমতি উদ দৌউলা এর আশে পাসেই ২ টি স্থাপনা আছে বাট আমার মতে দেখার দরকার নেই খুব একটা সুন্দর না। বিকেল বেলা বেবি তাজ বা ইমতি উদ দৌউলা থেকে যমুনা নদীর উপর সূর্যাস্ত দেখুন। অনেক সুন্দর। ইমতি উদ দৌউলা প্রবেশ ফি ১৫ রুপি ( অবশ্যই SAARC বলে নিবেন ) । এবার আপনি চাইলে হেটে হেটে আপনার হোটেলে আসতে পারেন আবার অটোতেও আসতে পারেন । আগ্রা ফোরট রেলওয়ে স্টেশনে আসতে জন প্রতি ১৫ রুপি পরবে । আমরা হেটে হেটে এসেছি, আগ্রা শহর ঘুরে ঘুরে দেখছি। হোটেলে ফিরার সময় পেট ভরে খেয়ে নিন। পার পারসন খুব বেশি হলে ১০০ রুপি পরবে।
দিন ৩ এর আপনার মোট খরছ: ৫০+৩১৭+৪০+১৫+১০+৫৩০+২৭+১৫+ ১৫+১০০ = ১১১৯ রুপি
◄◄▌▌দিন চার: সকাল সোজা চলে যান আসুন বিজালি ঘর ক্রসিং । এখান থেকে আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশন ভাড়া ১০ রুপি । আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে ষ্টেশনের সামনে দাঁড়ালে আপনার হাতের ডান পাশে সেকেন্ড ক্লাস টিকিট ও লাগেজ রুম এবং বা পাশে SL , AC এর টিকিট কাউন্টার । বাম পাশে গিয়ে রাত ১ টার দিল্লী গামী ( হযরত নিজাম উদ্দিন রেলওয়ে স্টেশন , দিল্লী ) ট্রেন্রের টিকিট কাটুন, পার পারসন ১৭০ রুপি । এবার লাগেজ রুমে গিয়ে ২০ রুপি পার পারসন আপনাদের লাগেজ রাখুন (নিরাপদ) । এবার জেনারেল ক্লাসের টিকিট ঘরে গিয়ে ফতেহ পুর সিক্রি যাবার ট্রেনের টিকিট করুন , ভাড়া ১০ রুপি । ফতেহপুর সিক্রি ঢুকার এন্ট্রি ফি ৪০ রুপি ( অবশ্যই SAARC বলে নিবেন ) । ১২ টার মধ্যে আগ্রা ক্যান্টে রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসুন , ভাড়া ১০ রুপি ট্রেনে । স্টেশনে নেমেই হালকা কিছু খেয়ে নিন , খরছ ৩০ রুপি । এখান থেকে আগ্রা ফোরট পার পারসন সি এন জি তে ১৫ রুপি । আগ্রা ফোরট এ গিয়েই পুলিশকে আপনার আগের দিনের তাজমহলের টিকিট টি দেখিয়ে বলবেন আমি SAARC এর আওতায় টিকিট কাটব । পার পারসন ৩৫ রুপি , না হলে কিন্তু ৫০০ এর মত দিতে হবে :) । এবার আবার আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশনে আপনার পছন্দ মত সময়ে ফিরুন । এখানে ভারী কিছু খেয়ে নিন , খরছ ১০০ রুপি । এখানে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশনে আসার পথের স্টেশনের খুব কাছে রাস্তার দুপাশে হাতের ডান ও বামদিকে অনেক খাবারের দোকান পাবেন । বাম সাইডের গুলো কিন্তু আসলে বার আর ডান সাইডের গুলো ফ্যামেলি নিয়ে বসার জন্য :) । আপনি যখন হযরত নিজাম উদ্দিন রেলওয়ে স্টেশন, দিল্লীতে পৌঁছবেন তখন আনুমানিক রাত ৫ টা বা ৪ টা বেজে যাবে । এবার সোজা এ সি ওয়েটিং রুমে গিয়ে শুয়ে পরুন :)
দিন 8 এর আপনার মোট খরছঃ১০+১৭০+২০+১০+৪০+১০+৩০+১৫+৩৫+১০০ = ৪৪০ রুপি
▌▌◄◄ দিন পাঁচঃ সকাল ৯ টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পরুন । এবার ফ্রেশ হয়ে মোবাইলের জিপিএস অন করে হুমায়ূনের কবর দেখতে বের হউন । যাবার পথে ছোট একটা বাস স্ট্যান্ড পরবে সেখান থেকে হালকা নাস্তা করে নিন, খরছ পার পারসন ৫০ রুপি । এবার সকালের দিল্লির রুপ দেখতে দেখতে হুমায়ূনের কবর দেখে ফেলুন , এন্টি ফি ৩০ রুপি । এবার একটা সি এন জি নিয়ে রেড ফোরট চলে আসুন ভাড়া পার পারসন ৩৫ রুপি । রেড ফোরট প্রবেশ ফি ৩৫ রুপি। রেড ফোরড দেখে ভারী কিছু খেয়ে নিন , ১০০ রুপিতেই হয়ে যাবে । রেড ফোরট দেখেই ের সামনে অনেক টুরিস্ট বাস পাবেন পার পারসন ১৩০ থেকে ১০০ রুপি নেবে পুরো দিল্লীর সব ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো ঘুরে দেখাবে । বিকেল ৫ টার মধ্যেই কাশ্মীর গেট বাস স্টেশনে চলে আসুন । ষ্টেশনের সাথেই মেট্রো রেল স্টেশন ওখানেই ম্যাক ডোনাল পাবেন । পার পারসন ২৫০ রুপি খরছ করলেই পেট ভরে যাবে । এবার শীতকাল হলে মানলী যাবার জন্য ভলভো এর গরমের দিন হলে সাধারন HRTC গাড়ির টিকিট কাটুন । ভল্ভো ১৪১২ রুপি এর সাধারন ৬৭৫ রুপি । সারাদিনের ক্লান্তিদুর করার জন্য ভল্ভোর টিকিট কাটুন । মানলী যাবার সময় চান্ডিগড় সহ অনেক কিছুই দেখতে থাকুন এর বোনাস হিসেবে রাতের দিল্লী তো থাকছেই । দিল্লী জামা মসজিদের কাছেই মুসলিম কম দামের খাবারের হোটেল আছে ।
দিন ৫ এর আপনার মোট খরছঃ ৫০+৩০+৩৫+৩৫ +১০০+১৩০+১৪১২+২৫০ = ২০৪২
◄◄▌▌ দিন ছয়ঃ মানলী ঢুকার সাথে সাথেই OYO , MAKE MY TRIPS এর অ্যাপ মোবাইলে নামিয়ে নিন । OYO ভালো , অনেক অফার দেয় । সবাই আপনাকে মল রোডে থাকার পরামর্শ দিবে আমি বলব না । আপনি যদি মানলীর সৌন্দর্য দেখতে চান তবে লজ হাট এরিয়া বা অল্ড মানলী বা সার্কিট হাউজ এরিয়ায় থাকবেন । আমরা লজ হাট এরিয়াজ মানলীর সব থেকে উঁচুতে সুন্দর একটা হোটেলে ছিলাম । OYO অ্যাপ এর মাধ্যেমে ৬৯% ডিস্কাউন্ট পাইছি ( অফ সিজেন ছিল বলে ) । মল রোড বা বাস স্ট্যান্ড থেকে লজ হাট যেতে জেকোন সি এন জি খুব বেশী পার পারসন ২৫ রুপি নেবে । আমাদের হোটেলে ৬৯% ডিস্কাউন্টে মাত্র ২ রাত ৩ দিন + ফ্রি ব্রেকফাস্ট সহ ২৫০০ নিয়ে ছিল । আমাদের ৩০০ রুপি বেশী নিয়েছে কারন আমাদের আর্লি চেক ইন ছিল , সে হিসেবে পার পারসন ৮৩৪ রুপি মাত্র  । ভুলেও মল রোডে খাবেন না । লজ হাট এরিয়ায় কিছু নেপালী থাবা পাবেন ১০০ রুপিতে মুরগীর মাংস সহ ভাত একজন খেয়ে শেষ করতে পারবেন না । লজ হাট এরিয়ার কাছেই হাডিম্বা দেবীর মন্দির । মন্দির দেখে সোজা পাহাড় দেখতে চলে যান । এলাকাটা ধুরে ঘুরে দেখুন । অনেক সুন্দর । সারাদিনের খাবার করছ মাত্র ২০০ রুপি । মল রোডে থাকলে ২০০০ এও কিছু করতে পারবেন কিনা আল্লাহ জানে । পাহড়ি এলাকা খুব তাড়াতাড়ি রাত নামে এর সব কিছু ফাকা হয়ে যায় । রাত ৭টার মধ্যে খেয়ে দেখে হোটেলে ফিরে আসুন ।
দিন ৬ এর আপনার মোট খরছঃ ২৫+ ৮৩৪+ ২০০ = ১০৫৯ রুপি
◄◄▌▌দিন সাতঃ সি এন জি ভাড়া করে শহরের সব গুলো জায়গা বা আপনার পছন্দের বাকি ভ্রমণ প্লেস গুলো দেখে নিন । সবার শেষে দিন জন্য সোলাং ভ্যালি রাখবেন । সারা দিনের সি এন জি ভাড়া ৮০০ রুপি এর বেশী হবেই না, পার পারসন ২৬৭ । ভুলেও ক্যাব নিবেন না । তা হলে ধরা । সারা দিনের খাওয়া খরছ ২০০ রুপি ।
দিন ৭ এর আপনার মোট খরছঃ ২৬৭+ ২০০ = ৪৬৭ রুপি
◄◄▌▌দিন আটঃ সকালে হোটেল থেকে চেক আউট করে বেড়িয়ে পড়ুন । মল রোডে গিয়ে সোলাং ভ্যালী যাবার জন্য সি এন জি ঠিক করুন । ভাড়া নিবে ৭০০ এর মত সাথে ৩ থেকে ৪ টা স্থানো দেখবেন । জন প্রতি হিসেবে সি এন জি ভাড়া পরবে ২৩৪ রুপি । ৩ টের মধ্যে মল রোডে চলে আসুন । ভারী কিছু খেয়ে নিন । পার পারসন ১০০ হলেই হবে । এবার আম্রিতাসর , পাঞ্জাব যাবার জন্য HRTC এর সাধারন গাড়ির টিকিট কাটুন, পার পারসন ৫৫০ রুপি । গাড়ি ছাড়বে ৩.৩০ মিনিটে । ভুলেও ৬.৩০ এর ভল্ভো গাড়ির টিকিট কাটবেন না । কেন কাটবেন না ? নিচের কথা গুলো পড়লেই বুঝবেন । গাড়ি ছাড়বে ৩.৩০ মিনিটে । গাড়ি যখন পাহাড়ের গা বেয়ে কুলু বাস স্ট্যান্ডের দিকে আসতে থাকবে আপনি দুরের পাহাড় গুলো দেখে অন্য এক জগতে হাড়িয়ে যাবেন । সন্ধ্যার সময় কুলু বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে যাবেন । চারদিকে পাহাড় ঘেরা অসম্ভব সুন্দর কুলু বাস স্ট্যান্ড । এবার সারা রাত পাহাড়ের গায়ে মিট মিট করে জলতে থাকা ঘর বাড়ি দেখতে দেখতে চলে আসবেন আম্রিতাসর , পাঞ্জাব । পথে পার পারসন ১০০ রুপি দিয়ে কিছু খেয়ে নিন।
দিন ৮ এর আপনার মোট খরছঃ ২৩৪+১০০+৫৫০+১০০ = ৯৮৪ রুপি
◄◄▌▌দিন নয়ঃ বাসে ঘুমাতে ঘুমাতে সকালে আম্রিতাসর বাস স্ট্যান্ডে চলে আসবেন । এখান থেকে ১০ রুপি ভাড়া আম্রিতাসর রেলওয়ে স্টেশন । ওখানে গিয়ে এসি বা ফার্স্ট ক্লাস ওয়েটিং রুমে গিয়ে গোসল সেরে নিন । লাগেজ রুমে ২০ রুপির বিনিময়ে আপনার লাগেজ রাখুন । স্টেশনের সামনে ১৫০ রুপি দিয়ে ভরা পেটে মুরগী বিরিয়ানি খেয়ে নিন । এবার জন প্রতি ১৫ রুপি দিয়ে গোল্ডেন টেম্পেল্ট চলে যান । গোল্ডেন টেম্পেল্টর কাছেই জালিওয়ানওলা বাগ । সব কিছু দেখা শেষ হলে গোল্ডেন টেম্পেল্ট সংলগ্ন মার্কেটে শপিং করুন কারন এখানে অনেক কম দাম জিনিস পত্রের । অবশ্যই লাচ্ছি আর আইস্ক্রিম খাবেন , ২৫+৩০ রুপি । অনেক কম দাম । এবার ৬.৩০ এর মধ্যে ১৫ রুপি পার পারসন আম্রিতাসর রেলওয়ে স্টেশন চলে আসুন । ১ দিনের আম্রিতাসর দেখা শেষ, বর্ডারে যাবার দরকার নেই । অহেতুক এক দিন থাকতে হবে তাহলে । রাত ৬.৩০ মিনিটে আম্রিতাসর , পাঞ্জাব থেকে হাওড়া , কলকাতা ট্রেন । আবার মুরগী বিরিয়ানি বা অন্য কিছু খান , ১৫০ রুপিতেই হয়ে যাবে । আম্রিতাসর টু কলকাতা ট্রেন ভাড়া ৭৬৫ রুপি ।
দিন ৯ এর আপনার মোট খরছঃ ১৫+১০+২০+১৫০+ ১৫+১৫০+২৫+৩০ +৭৬৫ = ১১৮০রুপি
◄◄▌▌দিন দশ + এগারো + বারোঃ লক্ষ্য করুন আপনি যে পথে গেছেন সে পথে কিন্তু ফিরেন নি । ফিরেছেন অন্য পাশ দিয়ে । ফেরার পথে অনেক নতুন নতুন জায়গা পাবেন । তিন দিনে খাওয়া খরছ ৬০০ রুপির বেশী হবেই না । এই তিনদিন আপনি আম্রিতাসর থেকে কলকাতা আসার ট্রেনে থাকবেন । সো অনলি খাওয়া খরছ
দিন ১০ + ১১ +১২ মোট খরছঃ ৬০০ রুপি
◄◄▌▌দিন তেরঃ সকালে বা ১০ টার দিকেই হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যাবেন । সেখান থেকে সাব ওয়েতে চলে আসুন । ১২৯/C বাসে করে ৬ রুপি ভাড়া দিয়ে পার্ক স্ট্রিট । আসার পথে হাওড়া ব্রিজ দেখুন । পার্ক স্ট্রিট থেকে ১৫ মিনিট হাটলেই মির্জা গালিব স্ট্রিট । ওখানে এসে ২০০০ এর মধ্যে ২ রাতের জন্য হোটেল পেয়ে যাবেন , সে হিসেবে পার পারসন ৬৬৭ রুপি । মির্জা গালীবেই হোটেল খাজা হাবিবের পাশেই ইসলামিক নামের একটা মুসলিম খাবারের হোটেল আছে , নাম মনে আসছে না । ওখানে ৬০ রুপি দিয়ে গরুর মাংশ আর ২ প্লেট ভাত পাবেন । পরিমানে অনেক বেশী দেয় ওরা আবার চাইলে এক্সট্রা ঝোলও দেয় । হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিকেলে জি পি এস ট্রাক করে ইডেন গার্ডেন , মিলেনিয়াম পার্ক , JAMES PRINSER GHAT , দ্বিতীয় হুগলী ব্রিজ দেখুন । সন্ধ্যাটা অবশ্যই JAMES PRINSER GHAT এর সামনের মাঠেও বসে কাটাবেন । রাতে ৬০ রুপি দিয়ে খেয়ে হোটেলে ফিরুন ।
দিন ১৩ মোট খরছঃ ৬+৬৬৭+৬০+৬০ = ৭৯৩ রুপি ।
◄◄▌▌ দিন চোদ্দঃ মোটা মুটি পার পারসন ৭০০ রুপি খরছ করলেই সায়েস সিটি , গড়ের মাঠ সহ কলকাতার সব কিছুই দেখতে পারবেন । কলকাতা সম্পর্কে বেশী কিছুই লিখছি না । বাংলা ভাষাভাষীদের জায়গা , সো কারো কোন সমস্যা হবে না । সারাদিনে তিন বেলা খেতে ১৮০ রুপি খরছ হবে । বিকেলে নিউমার্কেটে ফিরে কেনা কাটা করুন । রাতে কলকাতা শহর ঘুরে দেখুন ।
দিন ১৪ এর খরছঃ ৭০০+১৮০ = ৮৮০ রুপি
◄◄▌▌দিন পনেরোঃ সকালে পার পারসন ৪০রুপি দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে শিয়ালদাহ রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসুন । এবার বনগাঁ যাবার ট্রেনের টিকিট ২০ রুপি দিয়ে কেটে ফেলুন । বনগাঁর মানুষ যশোরের ভাষায় কথা বলে । এবার ৩০ রুপি দিয়ে হরিদাশ পুর বর্ডার বা বেনাপোলে চলে আসুন । ৫০০ টাকা বা ৪২০ রুপি দিয়ে ঢাকা । খাওয়া খরছ সারা দিনে ২৫০ রুপি
দিন ১৫ এর খরছঃ ৮০+ ২০ + ৩০ + ৪২০+২৫০ = ৮০০ রুপি
১৫ দিনের ট্যুরে মোট খরছঃ ১২,৬৬৭ বা ১৮৬ ডলার ( পার ডলার ৬৮.৩০ রুপি রেট হিসেব)
◄◄▌▌১৫ দিনে আপনি অতিক্রম করবেন ভারতের ওয়েস্ট বেঙ্গল , উত্তর প্রদেশ ( EAST ) , উত্তর প্রদেশ ( WEST ) , দিল্লী , হিমাচল প্রদেশ আর পাঞ্জাব প্রদেশ ।
আর যাত্রা পথে ট্রেন থেকে দিনের আলোতে দেখতে পারবেন ঝারখান্ড , বানারাস , কানপুর ( উত্তর প্রদেশ) , হারিয়ানা , চান্ডিগর , এলাহবাদ , লুডাইয়ানা , কুলু , জালান্দার , দুর্গাপুর , বারাসাত , ২৪ পরগণা , আসানসোল , লাখনো আর অতিক্রম করবেন মোটা মুটি ৫০১০ কিঃমিঃ :P
◄◄▌▌কিছু অভিজ্ঞতাঃ আমার একটা নেশা আছে , সেটা হলো ভ্রমনের নেশা । আমি বদ্ধ এসি কামরায় বা বিমানে উরে গিয়ে কিছু দেখে আসতে ভালো বাসি না । আমার মতে ভ্রমণ হবে নিরাপদে অনেক কিছু জানার । ভারত ভ্রমণ যদি ট্রেনে না করেন তবে ভ্রমনের ৫০% অপূর্ণ থেকে যাবে । ট্রেনের দরজার পাশে দাড়িয়ে দুরের পাহাড় , ভারতবর্ষের গ্রাম দেখা , নতুন নতুন জায়গার উপর দিয়ে যখন ট্রেন যাবে তখন উপভোগ করা এসব কিছুর মাঝেই আছে আনন্দ । আমি আমার ভ্রমনে পুরোটাই মোবাইলের জি পি এস নির্ভর ছিলাম । আমরা হেটে বেড়িয়েছি ভারতের শহরের অলিতে গলিতে ।
ভারতের রেলওয়ে স্টেশন গুলোতে গোসল , বাথ্রুমের ভালো ব্যাবস্থা আছে । শুধুমাত্র নিশ্চিত টিকিটের PNR নাম্বার দিয়ে আপনি এগুলোতে আক্সেস নিতে পারবেন । স্টেশনে আছে গুগলের হাই স্পিড ফ্রি WiFi ( মোবাইল নাম্বার না হলে কাজ করবে না ) । ট্রেনে মোবাইল চার্জ দেওয়ার ব্যাবস্থা আছে । কিছু অ্যাপ এর ঠিকানা দিচ্ছি এগুলো মোবাইলে অবশ্যই রাখবেন । অনেক গুলো বাংলাদেশের আইপি দিয়ে আক্সেস পাবেন না ইন্ডিয়া গিয়েই মোবাইলে ইন্সটল দিয়ে নিবেন । এগুলো দিয়ে হোটেল , ট্রেনের স্থান, কোন স্টেশনে থেকে কোন স্টেশনে ট্রেন যাবে তার তথ্য পাবেন ।
১. OYO (Best)
২. Make My Trips
৩. Goibibo
৪. Ixigo Train
৫. Uber / Ola Cabs
৬. enquiry.indianrail.gov.in এর অ্যাপ
৭. Google Map
দালাল এড়িয়ে চলবেন । পাসপোর্ট কাউকে দিবেন না । নিজের পাসপোর্ট + ভিসা + কয়েক কপি ছবি নিজের কাছে বাংলদেশে থেকে নিয়ে যাবেন । ওখানে ফটোকপি বলে না যেরকক্স বলে । ডলার ভাঙাবেন কলকাতায় । বেনাপোলে বা হরিদাশপুরে ৫০০ টাকার মত ভাঙিয়ে নিবেন ।
ইন্ডিয়াতে SAARC COUNTRY ( বাংলাদেশ + পাকিস্তান + শ্রীলংকা + নেপাল + ভুটান + আফগানিস্তান + মালদ্বীপ ) এর ফরেনারদের জন্য অন্য ফরেনারদের তুলুনায় কম টিকিটের দাম রাখা হয় । অনেক ক্ষেত্রে ঈন্ডিয়ান্দের টিকিটের মুল্যে SAARC COUNTRY এর লোকেরা টিকিট কাটতে পারে । আপনাকে শুধু মেনশন করতে হবে আপনি SAARC COUNTRYএর লোক ।
◄◄▌▌ কিছু চিকন পিনের কথা ( ভালো না লাগলে এড়িয়ে যান )ঃ কলকাতা বাদে যেখানেই যাবেন হোটেল বুকিং বা ভ্রমনের স্থান ছাড়া সকল ক্ষেত্রে বলবেন আপনি কালকাতা থেকে এসেছেন । হিন্দি বলতে পারলে ভালো , অনেক ঝামেলা থেকে বেচে যাবেন । হিন্দি ভালো পারলে কলকাতায় হিন্দিতে কথা বলবেন এতে আপনি সঠিক দামে জিনিস কিনতে পারবেন । বর্ডার পার হবার সময় ডলারের সাথে শুধু মাত্র ২০ টাকার ৮ + ১০ টাকার ৪ টি নোট রাখবেন । কোথাও চাইলে ২০ টাকা দিবেন খুব বেশী হলে ৩০ টাকা দিবেন । অবশ্যই মোবাইলে ইন্টারনেট আর জি পি এস অন রাখবেন । কারন আপনার জি পি এস আপনাকে কখনোই ভুল তথ্য দিবে না :) । আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা " মানুষ শক্তের ভক্ত নরমের যম " কথাটা ইন্ডিয়ায় গেলে মাথায় রাখবেন :)
NOTE: আমার এই ভ্রমনে ট্যুর প্লানে শুধুমাত্র ভারত ভ্রমনের কথাই বলা আছে । ভিসা ফি , ট্র্যাভেল ট্যাক্স বা অন্যান্য কিছু নিয়ে লিখি নাই যেটার জন্য আপনাদের খুব বেশী হলে ১২০০ টাকা খরছ হবে । আমি যে রুট প্লান দিয়েছি সেটা ভারতে গিয়ে অনেক ধাক্কা খেয়ে খুঁজে বের করা :) আশা করছি আপনাদের হেল্প হবে । তবে আপনারা অবশ্যই কিছু টাকা এক্সট্রা ব্যাকআপ নিয়ে যাবেন , কারন সবার ভ্রমনের অভিজ্ঞতাটা সবার থেকে আলাদা । অনেক বড় লিখা সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ :)
কিভাবে বাংলাদেশে বসে দালাল ছাড়া নিজে নিজেই ইন্ডিয়ান রেলওয়ের টিকিট কাটবেনঃ https://www.facebook.com/groups/mail.tob/permalink/10154048594591790/

31/03/2017

স্বর্গ ঘুরে এলাম! আনন্দ বিপদ হাসি কান্না মিলিয়ে অসাধারন একটা ট্যুর!

কলকাতা - শিমলা - মানালি - ধর্মশালা - ডালহৌসি - অমৃতসর - কলকাতা।

স্বর্গ ঘুরে এলাম! আনন্দ বিপদ হাসি কান্না মিলিয়ে অসাধারন একটা ট্যুর!

কলকাতা - শিমলা - মানালি - ধর্মশালা - ডালহৌসি - অমৃতসর - কলকাতা।
ব্যাপ্তিঃ ১১দিন।
বাহনঃ ট্রেন এবং গাড়ি

শুরুতেই বলে নেই, আমি বাজেট ট্রাভেলার নই। বছরে একবারই বড় ছুটি কাটাই বিধায় একটু আরাম আয়েশে কাটাই। সুতরাং আমার খরচ একটু বেশি হয়েছে, আমি বলে দিব কিভাবে কম খরচে আপনারা ঘুরে আসতে পারেন।

আমরা ছিলাম মোট ৬.৫ জন, মানে ৬ জন আর সাথে ৩ বছরের একটা মেয়ে, ওকে নিয়েই আমরা বেশি টেনশনে ছিলাম বাট শি ওয়াজ স্ট্রং!!

এবার আমাদের ঘুরতে যাবার একটাই উদ্দেশ্য ছিল - শুধুমাত্র স্নো দেখা। যারা প্রকৃতি দেখতে যাবেন, তাদের এই সময়ে না যাওয়াই শ্রেয়।

কলকাতা থেকে আমাদের ট্রেন ছিল ৪ তারিখ বিকেল ৬.৪০ এ, হাওড়া স্টেশন থেকে কালকা। আমরা ৬ জন ৪ যায়গা থেকে রওয়ানা দিব। এর মধ্যে আমিই হাওড়া থেকে সব থেকে দূরে ছিলাম, জেমস লং সরনী। বিকেল ৫টায় আমি উবার ডেকে গাড়িতে উঠলাম, ড্রাইভার জাস্ট ট্রিপ অন করল - আর সাথে সাথে এক দাদার ফোন - বাপ্পী বের হয়ো না, ট্রেন ডিলে হয়েছে! গাড়িতে উঠেই নেমে গেলাম আর ৮০ টাকা বেইজ ফেয়ার দিতে হল! কিছুক্ষন পর জানা গেল যে ট্রেন পরদিন সকাল ৮.৪০এ। যেমন তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমেছিলাম, তেমনই আস্তে আস্তে উপরে উঠে আসলাম মন খারাপ করে। আমাদের সমস্ত গাড়ী আর হোটেল আগে থেকেই বুকিং দেয়া ছিল, তাই টেনশন বেড়ে গেল।

যাই হোক, ৪ তারিখের ট্রেন পরদিন সকালে ছাড়ল। ইন্ডিয়ান রেলওয়ের একটা বড় সমস্যা হল ওরা ট্রেনের টাইম খুব ভাল ভাবে মেইনটেইন করে। তাই যখন একটা ট্রেন ডিলে হয়, তখন বাকি ট্রেনগুলোর শিডিউল ঠিক রাখার জন্য এই ট্রেন আরো ডিলে করে। প্রতিটা সিগনালে রেগুলার ট্রেন অগ্রাধিকার পায়। এমনকি লোকাল ট্রেনও। আমাদের কালকা পৌছানোর কথা ছিল ৬ তারিখ ভোরে, সেখান থেকে টয় ট্রেনে শিমলা। কিন্তু আমাদের ট্রেন যখন দিল্লী আসল তখনই বুঝে গেলাম, টয় ট্রেন মিস করব। এজেন্সীকে ফোন করে শিডিউল চেইঞ্জ করতে বলা হল। কিছুক্ষন তারা আমাদেরকে আম্বালা নামতে বলল। সেখান থেকে একই গাড়িতে পুরো ট্যুর হবে। মোটের উপর আমাদের ট্রেন ২৩ ঘন্টা ৫০ মিনিট ডিলে হল আমরা যখন আম্বালা পৌছালাম। ৭ তারিখ রাত ২টার দিকে আমরা আম্বালা নামলাম - যেই রাতে আমাদের শিমলাতে থাকার কথা ছিল।

আমরা ট্রেনে থাকাকালীনই কুরুক্ষেত্র আর পানিপথ পার হবার সময় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। এটা ভাল লক্ষন। আপনি যদি ট্রেনে যান আর কুরুক্ষেত্র পার হবার পরে বৃষ্টি পান, মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে স্নো দেখতে পাবেন :D রাত ২টায় আমরা গাড়িতে উঠলাম এবং শিমলার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। ভোর ৪.৩০ এ একটা ধাবা থেকে নাস্তা করে নিলাম। তাপমাত্রা তখন প্রায় ৫-৬ ডিগ্রী। আর সাথে ঠান্ডা বাতাস। ভরপেট নাস্তা করে আবার শুরু। একদম ভোরের দিকে আমরা স্বর্গের দরজায়! ধাবাতেই শুনেছিলাম যে আগের দিন বিকেল ৫টা থেকে তুষারপাত হয়েছে শিমলায়। ভোরের মৃদু আলোয় রাস্তার দু পাশের শুভ্র সাদা বরফ আমাদের গেট করে স্বাগত জানাচ্ছে। সে এক অসাধারন অনুভূতি। যেদিকে তাকাই শুধু সাদা আর সাদা। দুনিয়ার কোনো ক্যামেরায় এই সৌন্দর্য্য তুলে ধরা যাবে না। গাড়ির মধ্যের সবাই বাচ্চাদের মত চিৎকার শুরু করে দিয়েছে। ইচ্ছে করে নেমে এক দৌড়ে হারিয়ে যাই সাদার মধ্যে। রাস্তার ২ পাশে উচু উচু পাহাড়, পুরোটাই সাদা। ভোর ৭টার দিকে আমরা শিমলা পৌছালাম। যে হোটেল থেকে আর ৪ ঘন্টা পরে আমাদের চেক-আউট! শিমলাতে আমাদের ১রাত থাকার প্লান ছিল। যাই হোক সকালে নেমে ফ্রেশ হতে গিয়ে দেখি কারেন্ট নেই। গিজার, রুম হিটার কিছুই চলবে না। পরে কিচেন থেকে একটু গরম পানি চেয়ে নিয়ে ফ্রেশ হলাম সবাই। জাস্ট নাস্তা করতে নিচে নামব, আর সেই মুহুর্ত! আবার স্নোফল!! বৃষ্টির মত আকাশ থেকে তুষার পরছে। এই সৌন্দর্য্য ভাষায় বর্ননা করা যায় না। মাথা খারাপ হয়ে গেল সবার। তাপমাত্রা তখন -২ডিগ্রী। আবার এজেন্সীকে ফোন। মানালীতে আমাদের ২ রাত থাকার কথা ছিল, ওখানে ১রাত করে আমাদের যেন শিমলাতে আর ১ রাত দিয়ে দেয়। তারা বলল জানাবে। কিন্তু এবার বিধি বাম। শিমলাতে ঐ হোটেলে রুম খালি নেই। একটু পরে আরো খারাপ সংবাদ এল। হিমাচল রাজ্যের ৭টি জেলায় পুরো ব্লাকআউট। বেশিরভাগ ন্যাশনাল হাইওয়ে বন্ধ। আমি মনে মনে খুশি। দরকার হলে কিচেনে থাকব রাতে, তবু এই সুখ উপভোগ করতে চাই :D কিন্তু ১১টার দিকে খবর এল যে বরফ কাটার কাজ শুরু হয়ে গেছে, আমাদের এখনি বের হতে হবে, নইলে মানালি পৌছাতে পারব না।

ড্রাইভার আমাদেরকে বলল হেটে কিছুদুর এগোতে, গাড়ি স্লিপ করতেছে। আমরা প্রায় ৩০ মিনিটের মত হাটলাম হাইওয়ে পর্যন্ত। তারপরে গাড়িতে উঠলাম। শুরু হল মানালির উদ্দেশ্যে যাত্রা। পুরো রাস্তায় বরফ আর বরফ। অনেক সাবধানে গাড়ি চালাতে লাগল আমাদের ড্রাইভার। সে রেগুলার রাস্তা ধরে না গিয়ে অনেক নিচে নেমে পাহাড়ি রাস্তা ধরল যাতে বরফ এড়িয়ে তাড়াতাড়ি কুল্লু যাওয়া যায়। কিন্তু, সন্ধ্যার একটু আগে আর একটা দুঃসংবাদ। মানালিতে ভয়াবহ স্নোফল হইছে আবার, আমরা যেন রাতটা কুল্লুর আগে কোথাও থেকে যাই। কুল্লু থেকে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। পরে আমরা মান্ডিতে একটা হোটেলে ঐ রাতটা কাটাই, যে রাতটা আমাদের মানালিতে থাকার কথা ছিল। পরদিন ভোরে নাস্তা সেরেই আবার যাত্রা শুরু করলাম। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে কুল্লু পৌছে গেলাম। Hanging bridge, rafting point, Sams lake, Honuman temple, 3 idiots tunnel ইত্যাদি দেখে দেখে মানালি পৌছাতে সন্ধ্যা হল। 3 idiots টানেল মানে যেই টানেলে 3 idiots মুভির অল্প একটু শ্যুটিং হয়েছে। প্রায় ৫কিমি লম্বা টানেল। পাহাড়ের পেটেরে মধ্যে থাকার অনুভূতি ফিল করবেন ঐ সময়ে, হেহে। মানালিতে পৌছানোর কিছু আগে থেকেই আবার রাস্তার ২ধারে বরফ। আবার রাস্তায় গাড়ি স্লিপ করা শুরু হল। হঠাৎ করে আমাদের গাড়ির পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা। পিছনের গাড়িটা ব্রেক করে সামলাতে পারেনি, স্লিপ করে আমাদের গাড়িতে এসে লাগিয়েছে। বড় কিছু হয়নি যদিও। মানালি পৌছে মল রোডের কিছু আগে পুলিশ গাড়ি আটকে দিল, রাস্তা বন্ধ! হোটেলে ফোন দিলাম, লোকেশন জানার জন্য। ওরে বাব্বা, হোটেল প্রায় ৫কিমি দুরে! এত দুরে ব্যাগ আর ৩ বছরের একটা বাচ্চা নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আবার এজেন্সীতে ফোন। ওরা ১০ মিনিটের মধ্যে হোটেল চেঞ্জ করে কিছুটা নিচে একটা হোটেলে দিল, তাও প্রায় ২ কিমি। শুরু হল হাটা। এবার, ওখানে ব্যাগ নেবার লোক পাওয়া গেল। ৫০০টাকায় লাগেজ হোটেলে পৌছে দিবে। একজন ঐ লোকের সাথে সাথে গেল। জাস্ট মল রোডটা পার হয়েই সবাই খুশি। রাস্তা ভর্তি হাটু সমান বরফ, আর মাথার উপরে চাদের আলো। সেই আলো আবার বরফে প্রতিফলিত হয়ে কত রংয়ের যে সাদা রং দেখাল। হাতে মোবাইলে গুগল ম্যাপ বের করে হোটেলের দিকে হাটছি, কখনো বরফে শুয়ে পড়ছি, চিৎকার-চেচামেচি, ছোটাছুটি, তুষার ছোড়াছুড়ি - উফ্ফ্ফ। প্রায় ২ ঘন্টা হেটে আমরা ১.৫ কিমি রাস্তা পার হয়েছি, কিছু মনেই হয়নি। আরো ২-৪ কিমি হাটা যেত ওভাবে, হা হা হা। যখন হোটেলে গেলাম, রাত তখন প্রায় ৯টা। একই অবস্থা - বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। রাতে শুধু খাবার জন্য গরম পানি দিল। সেই পানি ১৫ মিনিটও গরম থাকে না। তাপমাত্রা তখন -১ডিগ্রী। দ্রুত আমরা রাতের খাবারের অর্ডার দিলাম। সাথে ২টা বোতলের অর্ডার দেয়া হল। যে যে খায় আর কি।

রাত ১০.৩০ এর মধ্যে খেয়েদেয়ে সবাই শুয়ে পড়লাম। আমি একটু পরপর ওয়েদার আপডেট চেক করছিলাম, কতটা ড্রপ করে তাপমাত্রা দেখার জন্য। রাত ১২টার দিকে আমার ঠান্ডায় ঘুম ভেংগে গেল। তাপমাত্রা দেখলাম -৬ তখন। আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার মুখে বরফ চেপে ধরেছে। গায়ে ছিল ২টা ফুল উলের ইনার-ওয়ার এর সেট, ফুল ট্রাউজার, জিন্স প্যান্ট, ২টা টি-শার্ট, স্লিভলেস সোয়েটার, জ্যাকেট আর উপরে ২টা মোটা কম্বল। কিছুতেই আমার কাজ হচ্ছে না। ভয় পেয়ে গেলাম - হাইপোথার্মিয়া হবে না তো আবার। এবার উঠে মুড়ি দিলাম, কম্বল দিয়ে রোল বানালাম নিজেকে, নিজের শ্বাস ছেড়ে ছেড়ে ভিতরে গরম করার চেষ্টা করলাম। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর ৫.৩০ এ ঘুম ভাংগল আবার। এবার দেখি তাপমাত্রা -১০ ডিগ্রী!!! আমি আর ডানে বামে না তাকিয়ে আবার ঘুমানোর ট্রাই করলাম। সকাল ৭.৩০ এ যখন ঘুম ভাংগল তখন মনে হল আবারো স্বর্গে চলে এসেছি। জানালা দিয়ে তাকিয়ে পৃথিবীতে বসে স্বর্গের রূপ দেখে নিলাম। একদম নীল আকাশ, সাথে পরিষ্কার রোদ। একটুও কুয়াশা নেই। একদম ঝকমকে রোদ। আর নিচে শুধু সাদা আর সাদা। দালানের ছাদে, মাঠে, রাস্তায় সব জায়গায় শুধু সাদা আর সাদা। চোখ মনে হচ্ছে ঝলসে যায় এরকম। কেউ যদি কবি হয়, ২-৪টা কবিতা বের হয়ে যেত। যদি লেখক হয়, তবে ২-১টা উপন্যাস লিখে ফেলত। আমি ভাই প্রোগ্রামার মানুষ, সারাক্ষনই জট আটকে থাকে মাথায়, আমি বরং জটটাই ছাড়িয়ে নিলাম :D

তবে এখানে হল আরেক ঝামেলা। সকালে বাথরুমের গরম পানি দিতে পারছে না কারন ট্যাংকির পানি নাকি বরফ হয়ে গেছে। পরে আমাদের রুমের পানি নিয়ে আবার গরম করে দিল। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। আমাদের তো এখনই আবার বের হতে হবে ধর্মশালার উদ্দেশ্যে। এবার লাগেজ নেবার লোক পাওয়া গেল না। নিজেরাই যার যার লাগেজ ধরে নামতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর পর থেমে থেমে ফটোসেশন আর বরফের মধ্যে দাপাদাপি। মাঝে পেলাম বরফের মাঠ। হাটতে নিলেই হাটু সমান দেবে যায়। শুয়ে গড়াগড়ি করলাম, ছোড়াছুড়ি করলাম, দৌড়াদৌড়ি করলাম - কি যে করি নাই। বুড়া বুড়া মানুষগুলো কিভাবে যে পোলাপাইন হয়ে যায়, এখানে আসলে দেখা যায়। এরপরে শুরু হল ঢাল বেয়ে নামা। রোদ পরে বরফের উপরের স্তর গলে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। প্রতিটা পা অনেক সাবধানে ফেলতে হয়। আমি আর একজন বাদে সবাই ৪-৫বার করে পড়ে গেছে। একজনের দেখলাম মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে, তাকে হাসপাতাল নেয়া হচ্ছে। অনেক সাবধানে গাড়ির কাছে এসে দেখি আরেক বিপদ। গাড়ি রাস্তার পাশে বরফ কেটে গর্তে পড়ে আছে। কোনোভাবেই উঠাতে পারছে না, স্লিপ করতেছে। অনেক চেষ্টার পর প্রায় ৮-১০ জন মিলে গাড়ি ধাক্কা দিয়ে উঠানো হয়েছে। তত ক্ষনে কাদা-পানিতে সবার নেয়ে একাকার।

পরের গন্তব্য ধর্মশালা। এবারো ড্রাইভার পাহাড়ি রাস্তায় শর্টকাট ধরল। কিন্তু চালালো অনেক ভাল। যাবার পথে আমরা কয়েকটা জায়গায় সাইট সিয়িং করলাম। ধর্মশালা যখন পৌছাই, শহরটা খুবই ভাল লাগল। মনে মনে খুবই খুশি হতে লাগলাম যে একটু নরমাল ওয়েদারে ২দিন থাকব। তখনই আমাদের ড্রাইভার অনেক উপরে একটা আলো দেখিয়ে বলল, "ঐ যে আলোটা দেখতে পাচ্ছেন, ওটাই আপনাদের হোটেল!" - হায় হায়, আবার হাটা না লাগলে হয়। হোটেলে ফোন দেবার পর তারা জানাল হাটতে হবে না - গাড়ি হোটেল পর্যন্তই যাবে। তাইলে তো ভালই। ধর্মশালার সুন্দর রাস্তা ধরে যেতে যেতে হটাৎ পাহাড়ি রাস্তা শুরু হল। এবার মনে হল রাস্তা পুরো ৬০ডিগ্রী বাকানো! এক একটা মোড় যেন মৃত্যুখাদ! ২টি গাড়ি পাশাপাশি যেতে অনেক সময় লাগে। এর মধ্যে আবার বৃষ্টি হয়েছে এবং রাস্তাও মাটির। আনন্দ উত্তেজনা তখন শেষ। ২-১ টা মোড়ে মনে হয় যে আর রাস্তা নেই তো, ড্রাইভার যায় কই?? এরকম আরো মিনিট ত্রিশ চলার পর, অবশেষে হোটেল পেলাম। জায়গাটার নাম ম্যাকলিওডগঞ্জ। খুবই সুন্দর একটা জায়গা, যেটা বুঝলাম পরদিন সকালে। আমরা পৌছিয়েছিলাম রাত ১১.৩০ এ। রেস্টুরেন্ট নাকি ৮টার দিকেই বন্ধ হয়ে যায়। পরে হোটেলের মালিকের বাসায় ডাল, ভাত আর ডিম রান্না হল, খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে ঘুমে ভেংগে আমরা আবার স্নো-ফল পেলাম। এবার আসলে স্নো-ফল না, এটা স্নো-বৃষ্টি। বৃষ্টির মত আকাশ থেকে তুষার পড়ছে। ভিজলাম কতক্ষন। পরে নাশতার উদ্দেশ্যে বের হলাম। নাশতা করে চলে গেলাম ভাগসুনাগ ঝর্না (আমি আসলে নামটা ১০০% নিশ্চিত নই) দেখতে। ওখানেও একটা টেম্পল আছে। ভিতর থেকে অনেকটা পাহাড়ি সিড়ি বেয়ে হেটে উপরে উঠতে হয়। অনেক উপর থেকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। যদিও এই সিজনে ঝর্নাটা তেমন দেখা যায় না। বের হয়ে দুপুরে লাঞ্চের পর গেলাম তপোবনে। সেখানেই হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা। তার ঠিক পাশেই বিশাল এক বন - এটারই নাম তপোবন। বনের শুরুতেই হনুমান মন্দির, ওখানে বাজরঙ্গী মন্দির বলে। পাশেই আবার রাম-মন্দির আছে। তপোবনের ভিতরে যে জিনিস আমার বেশি নজর কেড়েছে, তা হল পাহাড়ি লেবু। দেখে মনে হবে যে কমলা, আসলে না। সাইজে অনেক বড় হয় এগুলো, যদিও খেতে তেমন স্বাদ হয় না। সন্ধ্যেতে ফেরার পথে একটা পাহাড়ি রেষ্টুরেন্টে নুডল্স খেলাম সবাই মিলে। এখানে আমাদের হোটেলটা ছিল চিলেকোঠার মত। মানে ছাদের উপরে আমাদের রুম, কিন্তু বাইরে অর্ধেক খোলা। ঐ জায়গায় আমরা রাতে বারবিকিউ করলাম। কনকনে ঠান্ডার মধ্যে বারবিকিউ এর মজাই আলাদা। পাশে বরফ পড়ে আছে, তার পাশে আমরা আগুন জালিয়ে তাপ পোহাচ্ছি :D

পরদিন সকালে খুবই সুন্দর রোদ উঠেছিল। অপূর্ব সুন্দর এক দৃশ্য দেখলাম। ছাদে দাড়িয়ে চারপাশের তুষারে ভরা উচু উচু পাহাড় দেখে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়া যায়। ভোরে আমরা একবারে বের হয়ে গেলাম হোটেল ছেড়ে। ডালহৌসি যাবার আগের গন্তব্য স্টেডিয়াম - ধর্মশালা স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপের সময় যখন বাংলাদেশের খেলা হয় তখন থেকেই আমি এই স্টেডিয়ামের প্রেমে পড়ে যাই। শুধু চিন্তায় ছিলাম যে ভিতরে ঢুকতে দেয় কিনা। গিয়ে দেখি ভিজিটরদের জন্য ওরা একটু জায়গা খুলে রাখে। ভিতরে ঢুকেই আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। ওখানে খেলে কিভাবে মানুষ! এত সুন্দর দৃশ্য! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ১টা ঘন্টা যে কিভাবে কেটে গেল ওখানে বুঝলামই না। বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারও ওখানে ভাল খেলতে পারবে না আমি শিওর। যেদিকেই তাকাবে দৃষ্টি আটকে যাবে। সেখান থেকে বের হয়ে আমরা লাঞ্চ করলাম।

তখন শুরু হল ডালহৌসির উদ্দেশ্যে যাত্রা। ওদিকের রাস্তা আরো বেশি ভয়ংকর। অনেক বেশি আকাবাকা, আর রাস্তা সরু। আমরা যখন ডালহৌসী থেকে প্রায় ৮০-৯০ কিমি দূরে, তখন ডালহৌসীর হোটেল থেকে ফোন। আজ নাকি সেখানে মারাত্মক স্নোফল হয়েছে। আমরা যখন যাব তখন যেন হাটু অবদি যে স্নো-সু আছে (কি যেন একটা নাম আছে, ভূলে গেছি), ঐ গুলো নিয়ে যাই। আমাদের গতানুগতিক জুতো ওখানে চলবেই না একদম। সবার মাথায় হাত, টেনশন - তবু যাব। জানলাম, ঐ জুতো ভাড়া পাওয়া যায় - সেটাই করব। তবু যাবই। তখনই ড্রাইভার বলল, গাড়ি কতদুর যাবে সেটা জিজ্ঞেস করেন তো। আবার ফোন - এবার সর্বনাশের ষোলোকলা!! হোটেলের ৮কিমি আগে গাড়ি থামিয়ে দিবে পুলিশ - রাস্তা বন্ধ। এবার আর কারো মন সায় দেয় না। লাগেজ নিয়ে ৮কিমি হাটা - অসম্ভব। আমাদের বলতেছে, একদিন পরে ঢুকতে। কিন্তু সম্ভব না। সবই আগে থেকে ঠিক করা। আর পরদিনই আমাদের কলকাতা ফেরার টিকেট। আবার এজেন্সীকে ফোন। ডালহৌসীর বদলে আমরা অমৃতসরে একরাত থাকব। ব্যবস্থা করেন। ১০মিনিটের মধ্যে তারা কনফার্ম করে দিল অমৃতসরের হোটেল। গাড়ি ঘুরিয়ে সোজা অমৃতসর!!

যেতে যেতেই অনেক রাত হল। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে গোল্ডেন টেম্পল যেতে হবে, রাতে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। এটা শিখ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রধান মন্দির। এর আসল নাম হল "শ্রী হরমন্দির সাহিব" - মানে হল ঈশ্বরের ঘর। এটাকে গুরুদয়ারও বলা হয়। শিখ ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে দুনিয়ার সবাই সমান। ধনী, গরিব, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধর্ম-কর্ম করা না করা লোক, সবাই-ই সমান। এইটাই ওদের মূলনীতি। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন ওদের প্রধান প্রার্থনা চলছে। ঐ টেম্পলে একটা লংগরখানা আছে, যেখানে দিন রাত ২৪ ঘন্টা সবাইকে ফ্রী খাওয়ানো হয়। যে কেউ, যখন তখন গিয়ে সেখানে খেতে পারবে। আমরা সেই রাতে ওখানেই খেয়েছিলাম। তবে শীতের রাতে একটু কষ্ট হয়, কেননা আপনাকে জুতা খুলে পা ধুয়ে ওখানে যেতে হবে। জুতা রাখার খুবই সুন্দর সিস্টেম আছে। "রাব নে বানা দে জোড়ি" মুভির একটা গানের শ্যুটিং ওখানে হয়েছিল। গেলে খুবই ভাল লাগবে।

পরদিন সকালে বেরিয়ে পরলাম জালিয়ানওয়ালা বাগের উদ্দেশ্যে। ১৯১৯ সালে বৈশাখী উৎসবের আগের দিন অনেক মানুষ সেখানে জড়ো হয়। তারা জানত না যে তখন মার্শাল ল চলছিল। সেখানে ব্রিটিশ সেনারা টানা দশ মিনিট এলোপাথারি গুলিবর্ষন করে। পরে একটা কুয়োর ভিতরে হাজারখানেক লাশ পাওয়া যায়। এরিয়াটা অনেক বড় এবং খুবই সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে। এর পরে গেলাম লাঞ্চ করতে, খেলাম পাঞ্জাবী আর সাউথ ইন্ডিয়ান থালি। ফেরার পথে কুলফি আর লাচ্ছি খেলাম। কুলফিটা মনে হল পুরাই দুধের ক্ষীর! মাত্র ৩০টাকা দাম। আর লাচ্ছিটা ছিল ২৫টাকা কিন্তু একদম অরিজিনাল টক দই। আমার সুগার থাকা সত্বেও পরপর দুবার খেলাম! এখনো স্বাদ মুখে লেগে আছে।

সেখান থেকে বের হয়ে আমরা চলে গেলাম ওয়াগা বর্ডারে, যেখান থেকে লাহোর মাত্র ২৩ কিমি দূর। সেখানে প্রতিদিন বিকেলে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি কিছু সেনা মিলে কুচকাওয়াজ করে। এটাকে ওরা ফ্রেন্ডলি এক্টিভিটি বলে। বছরের ৩৬৫ দিনই এটা চলে। এই বর্ডার দিয়েই লাহোর দিল্লী বাস যাতায়াত করে। ফিরে একটু মার্কেটে ঢুকলাম। এবার আরো অবাক হলাম। অকল্পনীয় কম দাম। আমি মার জন্য আর এক ছোটো ভাইয়ের জন্য একটা চাদর নিলাম। দাম এত কম চাইবে যে আপনার দরদাম করতে লজ্জা লাগবে। বিখ্যাত পৌষমিনার চাদর পাবেন মাত্র ৬০০-৮০০ টাকায়, যেটা ঢাকার কোথাও কোথাও ১৪০০০/- পর্যন্ত নেয়!!! যাদের কেনাকাটার বাহানা আছে, এদের জন্য মাস্ট ভিজিট প্লেস। জায়গাটা অনেকটা আমাদের পুরান ঢাকার মত, একটু ঘিঞ্জি আর অনেক জ্যাম। কিন্তু মানুষগুলো অনেক ভাল। খুবই ফ্রেন্ডলি এবং হেল্পফুল।

সেখান থেকে চলে এলাম স্টেশনে। সন্ধ্যায় ট্রেন ধরে ২দিন পর কলকাতার হাওড়া স্টেশন। এবার মোটের উপর ট্রেন ছিল ৭ঘন্টা ডিলে।

এত বড় ট্যুর কিন্তু অনেক সহজে হয়েছে শুধুমাত্র রাজু-দার কল্যানে। কলকাতা থেকে সমস্ত প্লান তিনিই করে দিয়েছেন। খুবই অল্প সময়ে ২বার হোটেল চেঞ্জ, গাড়ি চেঞ্জ, ট্রেন ডিলে হওয়া সত্বেও খুবই সহজে সব কিছু ম্যানেজ করে দিয়েছেন তিনি - এক কথায় অসাধারন। গত বছর দার্জিলিং ট্যুরও আমরা তার মাধ্যমে করি। বেচে থাকুক রাজু দা আর তার চলন্তিকা :)

যারা নিজেরা ট্যুর করতে চানঃ
১। ২-৩জন ওখানে না যাওয়াই ভাল, গ্রুপে গেলে মজা পাবেন। যদি কাপল হয়, তাও বলব ৩-৪টি কাপল একসাথে যেতে। কিন্তু যদি ২-৩ জনেই যেতে হয়, তবে কলকাতা থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস (খাওয়া সহ) এ দিল্লী আসবেন, পরে সরকারী গাড়িতে কম খরচে শিমলা চলে যেতে পারবেন। হিমাচলে মোটামুটি সব রুটেই সরকারী বাস চলে, খরচ অনেক কম।
২। যদি অন্তত ৭-৮ জনের গ্রুপ হয়, তাহলে কলকাতা থেকে ট্রেনে সরাসরি কালকা বা চন্ডীগড় চলে যাবেন। কলকাতা থেকে চন্ডিগড় পর্যন্ত ৬ জনের ভাড়া পড়বে ১২০০০/- এর একটু কম - এসি থ্রী টায়ারে। আসতে যেতে ২৪০০০/- আরো কমে যেতে পারেন যদি নন-এসি স্লীপারে যান। কালকা গেলে টয় ট্রেনে করে শিমলা ঢুকতে পারবেন। তা না হলে গাড়িতে করে ঘুরবেন। গাড়ি আগে থেকেই রিজার্ভ করে নিলে ভাল, দেরী কম হবে। আমরা ঘুরেছি ৭সিটের জাইলো গাড়িতে। ওরা ভাড়া নেয় দিন প্রতি ৩৫০০/- করে। একটু দরদাম করলে কমেই পাবেন হয়তো। তো যদি ৮দিন থাকেন তবে খরচ পড়বে ২৮০০০/-
৩। হোটেল আগে থেকে বুকিং না করে গেলে, গিয়ে দরদাম করে কমে থাকতে পারবেন। যদি ৬ জন হয় সেখানে ৩টা রুম দিন প্রতি পড়বে ৪৫০০/- ৮ দিনে হবে মোট ৩৬০০০/-। ১৫০০ টাকা করে অনেক ভাল মানেরই রুম পাবেন। আপনি চাইলে ৭০০-৮০০ টাকায়ও রুম নিতে পারেন।
৪। ৮দিন দুপুরে এবং রাতে জন-প্রতি খেতে যদি ১৫০/- লাগে, তবে প্রতি দিন ৬জনের লাগবে ১৮০০/- করে। ৮দিনে মোট লাগছে ১৪৪০০/-
৫। মোট হল ২৪০০০ + ২৮০০০ + ৩৬০০০ + ১৪৪০০ = ১০২৪০০/- মানে জন-প্রতি ১৭০৬৬/- এর একটু বেশি। এটা কলকাতা থেকে ঘুরে আবার কলকাতা পর্যন্ত। এবার আপনি হোটেল এবং ট্রেনের মানটা একটু কমালে আরো কমে ঘুরে আসতে পারেন।

উপরের সমস্ত হিসেব রুপিতে, বাংলাদেশী টাকা তে না।

একটু সমস্যা হল, আপনি যদি না চিনেন বা না জানেন, তাহলে আপনি অনেক জায়গা কভার করতে পারবেন না। কারন অনেক কিছু খুজেই আপনার সময় চলে যাবে। তাই আমি সাজেস্ট করব, যাদের বাজেট একটু বেশি, তারা কোনো ট্রাভেল এজেন্সীর মাধ্যমে যান। এতে অন্তত আপনি যাবার আগেই ঠিক করে নিতে পারেন, কোথায় কোথায় যাবেন। আপনার কাজ শুধু স্টেশন আর হোটেল থেকে গাড়িতে উঠে বসা। গাড়ি সব সময় আপনার দরজায়ই থাকবে সব-সময়। এতে খরচ একটু বেশি পড়লেও ট্যুরটা আরামদায়ক হয়।

এটা আমরা যে গাড়িতে ঘুরেছি, তার ড্রাইভারের নম্বরঃ +৯১ ৮২৯৫১ ৭৩৮৭৬ আর নাম হল জয়। আপনারা ওর সাথে সরাসরি কথা বলে নিতে পারেন।

আর যদি কেউ এজেন্সীর মাধ্যমে যেতে চান, আমাকে ইনবক্স করলে আমি যাদের মাধ্যমে গিয়েছি, তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারব।

আমি এখনো কলকাতায়ই আছি। ট্রেনে করে এবার যাতায়াত করছি ঢাকা থেকে। কলকাতা এসে অনেকগুলো জায়গা ঘুরলাম। আমি কলকাতেতে থাকি আমার পরিচিত একজনের বাসায়। তার এখানে দুটি রুম তিনি ভাড়া দেন। নরমালি ফ্যামিলির জন্য। আমার আগে থেকেই পরিচিত বলে আমি ফ্রেন্ডদের নিয়ে গেলে ওখানে উঠি। ওনারা খুবই আন্তরিক। খাওয়া দাওয়া ওনার ওখানেই। আমাদের ৩বেলা খাওয়া সহ ওখানে খরচ পড়েছে ১৭০০/- এর মত জনপ্রতি দিনপ্রতি। খাওয়া খুবই ভাল মানের। প্রতিদিন ৩-৪টা আইটেম। তিনি নিজেই রান্না করেন। ওনার রান্না অসাধারন। আপনি যা খেতে চাইবেন বললেই রান্না করে দিবে। খাওয়ার সময় আপনার সাথে বসে গল্পও করবেন। পুরো পারিবারিক একটা পরিবেশ। আমাকে ছোটো ভাইয়ের মত স্নেহ করেন। বাসাটা হল জোকা, ঠাকুরপুকুরে। কোনো ফ্যামিলি যদি থাকতে চান, আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি ব্যবস্থা করে দিতে পারব। তবে হ্যা, সবাই ওনার মত ভাল মানুষ না। সুতরাং, যার সাথেই বিজনেস করবেন, নিজে পরখ করে নিবেন আগে।

কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে বা ইনবক্স করতে পারেন।

কিছু কথাঃ
১। ভারতে ট্রেনে ধুমপান নিষেধ। কেউ দয়া করে ধুমপান করবেন না, এমনকি বাথরুমেও না। ধরা পড়লে জরিমানা তো হবেই, দেশের নাম খারাপ হবে। ট্রেনে করে মদ বহন করাও নিষেধ।
২। এটিএম থেকে টাকা তোলা ঝামেলা। অনেক বুথেই টাকা থাকে না, আর থাকলে লাইন থাকে। কোনো ব্যাংক আবার চার্জ কাটে ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের জন্য।
৩। আমি ডলারের রেট পেয়েছি ৬৮.৭০ করে। টাকার রেট আরো একটু কম (১লা জানুয়ারীর রেট)। তবে আমি বলব ডলার এন্ডোর্স করে নিয়ে আসতে। টাকা আনাটা বেআইনী ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। এত টাকা খরচ করে ঘুরবেন, আর হাজার-খানেক টাকা সরকারকে ট্যাক্স দিতে ক্ষতি কি বলুন?
৪। যেখানেই যাবেন আগে থেকে ওখানকার ম্যাপ মোবাইলের গুগল ম্যাপে সেভ করে নিবেন। গুগল ম্যাপ এখন অনেক স্মার্ট। যখন নেভিগেশন ব্যবহার করবেন, 3G অফ করে রাখবেন, জাস্ট জিপিএস অন করে রাখবেন।
৫। ভারতের নেটওয়ার্কে চার্জ বেশি খরচ হয়, সাথে একটা পাওয়ার ব্যাঙ্ক রাখা ভাল।
৬। পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালাবার সময় ড্রাইভারের সাথে হালকা হালকা কথা বলবেন। নিজে ঘুমাবেন না। আর ড্রাইভারের সাথে রাগারাগি করবেন না। বুঝিয়ে বলবেন।
৭। আমি Airtel সিম নিয়েছি, মোটামুটি সব জায়গায়ই 3G পেয়েছি। কিন্তু Vodafone এর মনে হয় রেটটা কম একটু। পাসপোর্ট দেখিয়ে সিম নিলে পরদিনই চালু হয়ে যায়।

হ্যাপী ট্রাভেলিং

কার্টেসী- বাপ্পি দ্য গ্রেট

Address

Nijhum Dweep, Hatia, Noakhali
Dhaka
4210

Telephone

+8801812585757

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Hotels & Travel Information - Bangladesh posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share