04/10/2019
কেমন হবে আগামী দিনের পর্যটন?
এর উত্তর খুঁজতে আমাদের দক্ষিণে যেতে হবে। চট্টগ্রাম জোন।
ছবিতে বেগুনি রঙে মার্কড পয়েন্টগুলো লক্ষ্য করুন। ঢাকা-চিটাগাং হাইওয়ের ১ নং সীতাকুন্ড পয়েন্ট থেকে হাজারিখিল রিজার্ভ ফরেস্টের মধ্য দিয়ে ফটিকছড়ির ২ নং পয়েন্ট পর্যন্ত হাইওয়ে নির্মিত হচ্ছে। যারা ভাটিয়ারিতে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের মধ্য দিয়ে নির্মিত রাস্তাটি দেখেছেন, তাঁরা ভালোই জানেন যে এই সড়কটি কতটা নয়নাভিরাম হবে। পার্থক্য একটাই। ক্যান্টনমেন্টের রাস্তাটা হবে এক্সেস কন্ট্রোল্ড, আর এটি ওপেন ফর অল।
ফটিকছড়ির ২ নং পয়েন্ট থেকে সহজেই ৩ নং পয়েন্টের খাগড়াছড়ি বা ৪ নং পয়েন্টের হাটহাজারি হয়ে ৫ নং পয়েন্টের রাঙ্গামাটি চলে যাওয়া যাবে। এর ফলে আপনি চিটাগাংকে একটি স্ট্যান্ডার্ড হাইওয়ের মাধ্যমে বাইপাস করে সরাসরি চলে যেতে পারবেন রাঙ্গামাটি অথবা খাগড়াছড়ি।
প্রশ্ন হলো, খাগড়াছড়ি গিয়ে আপনি করবেনটা কী?
এখন পর্যন্ত যারা খাগড়াছড়ি যাচ্ছেন, তাঁরা প্রধানত ট্যুরিস্ট গ্রুপগুলোর যেই প্যাকেজে যান, সেখানে ঢাকা থেকে বৃহবার রাতে রওনা দিয়ে শুক্র সকালে খাগড়াছড়ি (পয়েন্টঃ ৩)-এ পৌঁছে সকাল সাড়ে ১০টায় আর্মির প্রোটোকলে একসাথে চাঁদের গাড়ি নিয়ে ৬ নং বাঘাইহাট পয়েন্ট পার হয়ে ৭ নং সাজেকে গিয়ে লাঞ্চ করে কটেজে ঢুকে যান অথবা রুইলুইপাড়ার পাহাড়ে বেড়ান। সন্ধ্যায় গানবাজনা করে শনিবার সকালের সুন্দর সূর্যোদয় দেখে আবার সাড়ে ১০টায় আর্মির প্রোটোকলে একসাথে খাগড়াছড়ির ৩ নং পয়েন্টে ফিরে দুপুরে আলুটিলা, রিঝাং ঝর্ণা, আলুটিলা তারেং হেলিপ্যাড এবং হর্টিকালচার দেখে রাতের বাসে ঢাকায় স্টার্ট করেন। বৃহ রাত থেকে রবির সকাল এভাবেই যায়।
মজার ব্যাপার হলো, ইদানিং ওখানে ঘুরতে যায় ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের বিশাল সমাহার, কটেজে তাঁদের বিরাট অংশ হাজবেন্ড-ওয়াইফ পরিচয়ে, ভার্সিটিতে বোধহয় জাস্ট ফ্রেন্ড, জানা নাই।
আগামী ৩ বছরের মধ্যে আমরা খাগড়াছড়ির আরও ৩টা নয়নাভিরাম অ্যালাইনমেন্ট আপনাদের জন্য পুরোপুরি ওপেন করবো। বর্তমানে এগুলো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। চিত্রের ৩-৮-৯ তথা খাগ-লোগাং-দুপকছড়া, ৩-১০-১১-১২ তথা খাগ-মাটিরাঙ্গা-করল্লাছড়া-তানাক্কাপাড়া এবং ৩-১৩-১৪-১৫ তথা খাগ-দীঘিনালা-বাবুছড়া-ধনপাতা-নারাইছড়ি লিংক টু দা বর্ডার। এই ৩টি লিংক আবার সীমান্ত সড়কের সাথে ১২-৯-১৫ নং পয়েন্টে কানেক্টেড হবে। ফলে খাগড়াছড়ির উত্তরাঞ্চল দুটি কমপ্লিট লুপ নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। এক রাস্তা দিয়ে ঢুকে রাতে কোথাও থেকে আরেক রাস্তা দিয়ে আবার খাগড়াছড়ি চলে আসা যাবে। চাইলে রাতে কোথাও থাকাও যাবে।
এই স্থানগুলোর কিছু নিজস্ব ইতিহাস/ঐতিহ্য/পর্যটনমূল্য রয়েছে।
১১ নং তানাক্কাপাড়া পয়েন্টের পথে আছে তৈন্দং ইউনিয়ন। সেখানে ভগবানটিলা নামক স্থানটির ভিউ সাজেকের মতো পুরোপুরি। এখানে সাজেকের মতো আগামী দিনে গড়ে উঠবে পর্যটন কটেজের সারি।
৮ নং পানছড়ির পথে আছে সাজানো গোছানো মায়াবিনী লেক। এর পর লোগাং পয়েন্টের কাছাকাছি হয়েছিল কুখ্যাত পানছড়ি গণহত্যা। ঘটনাটি ১৯৮৬ সালের। দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য অনুযায়ী, সে বছর ২৯ এপ্রিল শান্তিবাহিনীর সদস্যরা বাঙালিদের উপর হত্যা চালায়। এক দিন পর ১ মে এই লোগাং গ্রামের পাশাপাশি কয়েকটি ইউনিয়নে পাহাড়িদের জবাই করা হয়। শেষ তথ্যটি দিয়েছেন বর্তমান সাংসদ বাসন্তী চাকমা। প্রতিক্ষেত্রে নিহতের সংখ্যা শত শত। সময়টা এরশাদের। যারা তাঁকে হিরো মনে করেন, তাঁরা তার আমলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অদ্ভুত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
১৪ নং ধনপাতার পথে আছে ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা রাজার খননকৃত মাইনি দীঘি। বর্তমানে এটি চাকমা রাজার অধীনে। দীঘিতে বোট রাইড করা যায়। খানাপিনার জায়গাও আছে।
সীমান্ত সড়কের কনসেপ্ট খুব সহজ। পুরো সীমান্ত ঘিরে সড়ক হবে। তবে আসল কৌশল লুক্কায়িত আছে সড়কটিকে স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনগুলোতে কানেক্ট করার মাধ্যমে। চলুন, দেখে আসি।
শুরুটা হবে ১৬ নং পয়েন্টে ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে। চলে যাবে ১৭-১১-১২-৯-১৫-১৮-১৯-২০-২১ নং পয়েন্ট পর্যন্ত। অর্থাৎ ছাগলনাইয়া-রামগড়-তানাক্কাপাড়া-দুপকছড়া-নারাইছড়ি-তেজকাছড়া-গোবিন্দবাড়ি-বেতলিং-উদয়পুর।
এই ২১ নং পয়েন্টের উদয়পুর থেকে সাজেক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের কাজ চলছে। যারা রিসেন্টলি সাজেক যাবেন, কটেজের ৯ কিলোমিটার আগে ডানদিকে চলে যাওয়া রাস্তা দেখলেই বুঝবেন।
আবার সাজেক যাওয়ার পথে ৬ নং পয়েন্টের বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প সোজা উত্তরে সংযুক্ত হবে সীমান্তের ১৯ নং পয়েন্টের গোবিন্দবাড়ির সাথে। ফলে সীমান্তে কোনো আনরেস্টের বিপরীতে প্ল্যাটুন মুভমেন্ট সহজ হবে।
৬ নং বাঘাইহাট থেকে ২২ নং মারিশ্যা লঞ্চঘাট পর্যন্ত বর্তমানে সড়ক আছে। মারিশ্যা থেকে একটি সড়ক সীমান্তের দোকানঘাটে ২৪ নং পয়েন্টে মিলবে, আরেকটি সড়ক চলে যাবে লংগদু উপজেলার দিকে। ২৩ নং লংগদু পয়েন্টে একটি সেতু নির্মাণ করে চলে যেতে হবে ২৫ নং নানিয়ারচর পয়েন্টে। এই নানিয়ারচর উপজেলা সকল ইন্সার্জেন্সির মাদার। শান্তি বাহিনী, জনসংঘতি, জেএসএস, ইউপিডিএফ-যেই নামেই ডাকেন না কেন, সকল বড় বড় নেতাদের জন্মস্থান এই নানিয়ারচর উপজেলা। এখন পর্যন্ত এটা পুরোপুরি এক্সেসেবল না। মোটর সাইকেলে এই ২৩-২৫ রুটে চলাচল করা যায়, তবে চড়তে হবে পাহাড়ি মোটরসাইকেলের পিছে। বাঙালি রাইডার অ্যালাউড না। চিন্তা করেন অবস্থা। একটা স্বাধীন দেশে এখনো আমরা কোন অবস্থায় আছি। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে ২৩ নং নানিয়ারচর পয়েন্টে একটা ব্রিজ নির্মাণ চলছে। শেষ হবে ডিসেম্বর, ২০২০ সালে।
সাস্টেইনেবল ট্যুরিজমের অন্যতম প্রধান শর্ত মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি। শুধু সড়ক নিয়ে থাকলে হবে না, নদী, লেক, রেলকেও এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে। ২০৪৫ সালে ৬৩ জেলা রেলের আওতায় আসার কথা। রেল ক্যাডারের বন্ধুগণ ভালো বলতে পারবেন যে কিভাবে এই কানেকশন আরও ভালো হবে। আপাতত লেক আর নদী নিয়েই থাকি।
কাপ্তাই লেক। পাকিস্তান সরকার ১৯৫৬ সালে আমেরিকার অর্থায়নে এই বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। ১৯৬২ সালে নির্মাণ শেষ হয়। ফলে ২৬ নং পয়েন্টের থেগামুখ দিয়ে আসামের লুসাই পাহাড় থেকে যেই কর্ণফুলী নদী আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে, তা রূপ নেয় কাপ্তাই লেকে।
২২ নং মারিশ্যা থেকে ৫ নং রাঙ্গামাটি পর্যন্ত বর্তমানে লঞ্চ চালু আছে। ওদিকে থেগামুখে ইন্ডিয়ান অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে ব্রিজ। সেই ব্রিজের স্বদেশি মাথা থেকে কর্ণফুলী নদীর এমন একটা পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে, যার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির মালামাল কিছুদূর সড়কে নিয়ে তারপর নৌপথে নেয়া যাবে। এটা শুকনা মৌসুমে ট্রলারেও নেয়া যাবে। সেই সাথে গতিময় হবে পর্যটনও।
রাঙ্গামাটির বড়কল উপজেলার ২৭ নং পয়েন্টে ব্রিটিশ আমলের বাজার রয়েছে একটা। এখান থেকে সীমান্তে সড়কপথে যাওয়ার উপায় নেই। এর সাথে সীমান্তের ২৮ নং লৈতংপাড়া পয়েন্ট কানেক্ট করা হবে। একই কথা ২৯ নং পয়েন্টের জুরাইছড়ি উপজেলার জন্য প্রযোজ্য। একে আমরা ৩০ নং পয়েন্টে সীমান্ত সড়কের থাচ্চির সাথে কানেক্ট করে দেবো।
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলায় মাসখানেক আগে ইনসার্জেন্টদের সাথে আমাদের সেনাবাহিনীর এনকাউন্টার হয়েছিল। ফলাফলঃ আমাদের নিহত এক, ওদের কয়েক। এই রাজস্থলী থেকে ব্রিটিশ আমলের আরেক বাজার ফারুয়া হয়ে যাওয়া হবে সীমান্তের দুমদুমিয়ায়, ৩১-৩২ কানেকশনের মাধ্যমে।
স্টাডি করা হবে ফারুয়া-বিলাইছড়ি উপজেলা-জুরাইছড়ি ৩১-২৯ কানেকশন। সব ঠিক থাকলে রাঙ্গামাটির বিচ্ছিন্ন সব উপজেলা যেমন কানেক্টেড হবে, তেমনি দুর্গম বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলাও সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। বিলাইছড়িতে আছে নকাটা, মুপ্পাছড়া, ধুপ্পানি ঝর্ণা যা রিসেন্টলি পর্যটকদের প্রবল আকর্ষণ করছে। বোটে যেতে হয়, এখনো হাইওয়ে কানেকশন নেই।
এবারে বান্দরবান। বর্তমানে ঢাকা থেকে চিটাগাং হয়ে বান্দরবান যাওয়ার জন্য কেরানীরহাট-বান্দরবান ৩৩-৩৪ রুটটি ব্যবহৃত হয়। এই রাস্তাটি প্রশস্ত করার জন্য বর্তমানে প্রকল্প চলছে। এর পাশাপাশি আমাদের টার্গেট খানহাট-ধোপাছড়ি-দুলুপাড়া ৩৩-৩৪ রুট চালু করা। ফলে সাতকানিয়ার যানজট বাইপাস করেই আমরা খুব সহজে বান্দরবান পৌঁছাতে পারবো। পথে খাল আছে একটা বড়, আছে পাহাড়। এগুলো অতিক্রম করে যেতে হবে আমাদের। তবে প্রকল্পটি পাস হয়ে যাবে। কারণ আগেই এই বিষয়ে প্ল্যানিং কমিশনের গ্রিন সিগন্যাল রয়েছে। সরকারি ভাষায়, সবুজ পাতায় অন্তর্ভুক্ত আছে।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার ৩৭ নং পয়েন্ট পর্যন্ত বর্তমানে সড়ক রয়েছে। এই সড়ক ৩৮ নং পয়েন্টের রুমা পর্যন্ত নির্মাণ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন পরিষদ। ৩ বছরের মধ্যে এই সড়ক কমপ্লিট হয়ে যাবে। ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ১০ কিলোমিটার ডান। এর ফলে একদিকে যেমন তিনাপ সাইতার ঝর্ণা আরেকটু সুগম হবে পর্যটকদের জন্য, তেমনই তৈরি হবে আরেকটি কার্যকর লুপ নেটওয়ার্ক।
বর্তমানে যারা বগালেকে ঘুরতে বা কেওকাড়াডং ট্রেকিং করতে যান, তাঁরা আসলে কিভাবে যান?
বৃহ রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে শুক্র সকালে ৩৪ নং পয়েন্টের বান্দরবান। তারপর শুক্রবার ৩৯ নং চিম্বুক পয়েন্টে আর্মি ক্যাম্পে হাজিরা দিয়ে হয় সাইরু রিসোর্টে/নীলগিরিতে একদিন থেকে শনিবার রাতে ঢাকার বাস; অথবা ৩৯-৩৮-৪০ রুটে চিম্বুক থেকে বগালেক পর্যন্ত চাঁদের গাড়িতে গিয়ে সেখানে এক রাত স্টে, দেন ব্যাক। অথবা ৪০ নং বগালেক থেকে হেঁটে কেওকাড়াডং।
আমরা এই বগালেক থেকে কেওকাড়াডং পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করে তাকে বর্ডারের ৪১ নং পয়েন্টের দুপানিছড়ায় নিয়ে যাবো। এই দুপানিছড়া হলো দেশের একমাত্র পয়েন্ট যেখানে ইন্ডিয়া, মিয়ানমার সীমান্ত বাংলাদেশের সাথে মিলিত হয়েছে। এখানে প্রায় ৩০ কিলোমিটার অঞ্চলের উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মিয়ানমার তাদের দুর্বৃত্তদের এদিকে পাঠানোয় ওরা এই অঞ্চলে স্যাঙ্কচুয়ারি বানিয়ে বসেছে। তবে খুব একটা বেশিদিন এই অবস্থা আর থাকবে না।
ট্রেকারদের আরেকটা পছন্দ থানচির রাস্তাটা। ৪২ নং পয়েন্টের নীলগিরি থেকে ৪৩ নং বলীপাড়া বিজিবি ক্যাম্প হয়ে থানচির ৪৪ নং পয়েন্টে ডিসকভারি হোটেলে খানাপিনা করে নদীপথে তাঁরা চলে যান ৪৫ নং পয়েন্টের রেমাক্রি বাজার। সেখান থেকে হেঁটে নাফাকুম, আমিয়াখুম অথবা ৪৬ নং পয়েন্টের তাজিনডং পাহাড়।
এই ৪৪-৪৫-৪৬-৪৭ পয়েন্টগুলোকে হাইওয়ের মাধ্যমে কানেক্ট করা হবে। অর্থাৎ থানচি থেকে রেমাক্রি-তাজিনডং হয়ে বঙ্কুপাড়ায় দেখতে পাবেন দেশের সর্বোচ্চ পাহাড় সাকা হাফং।
এর ফলে কী হবে?
ঢাকা থেকে বৃহ রাতে বান্দরবান রওনা দিয়ে সকালে নাস্তা করে চাঁদের গাড়িতে চিম্বুকে চেকিন। তারপর বগালেক, কেওক্রাডং দেখে দুপানিছড়া দিয়ে বর্ডারে সর্বোচ্চ সাকা হাফং। তারপর তাজিনডং দেখে বাকলাইপাড়া হয়ে থানচিতে ফিরে লেটলাঞ্চ এবং ব্যাক টু চিম্বুক।
থানচির পর বলীপাড়া চেকপোস্ট বন্ধ হয় ৬টায়, চিম্বুক চেকপোস্ট রাত ৭টায়।
তাই আর্লি মর্নিঙে বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়িতে স্টার্ট করলেই দেশের সর্বোচ্চ ৩ শৃঙ্গ দেখা যাবে একদিনেই, শুক্রবারে। রাতের বাসে ঢাকা, শনিবার অফিস।
তবে চাপ পড়ে যাবে শরীরে। কারণ পুরো জার্নিটাই টানা গাড়িতে। মাঝখানে একরাত থাকার ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত থানচি আর বগায় আছে। এই ক্ষেত্রে প্রাইভেট অর্গানাইজেশন সমূহকে এগিয়ে আসতে হবে, নইলে সম্ভব না।
ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন হওয়ার পর আড়ং ছাড়া খুব কম প্রাইভেট অর্গানাইজেশন ময়মনসিংহে আউটলেট দিয়েছিল। ধীরে ধীরে অন্যেরা এসেছে। জামালপুর আর নেত্রকোণার লোকজন ময়মনসিংহে বাড়ি করা শুরু করেছে।
সব কিছু সরকারের পক্ষে করে দেয়া সম্ভব না। সরকার ইউটিলিটি এনসিওর করতে পারে, বাকিটা প্রাইভেটকেই করতে হবে। যদিও সরকার এখন পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে আপটুদা ইন্টারন্যাশনাল মার্ক ইউটিলিটি সার্ভিস দিতে পারে নি, তথাপি একটা কথা আজীবন মনে রাখতে হবে যে, আমাদের মতো রাষ্ট্রকাঠামোয় প্রাইভেট আর পাবলিক সেক্টরকে হাতে হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটতে হবে। একটা আরেকটা চেয়ে বেশি এগিয়ে গেলে সমাজে নানা সমস্যার উদ্ভব হবে। মিয়ানমারে এরকম হয়েছিল। ওখানে গভমেন্ট অনেক এগিয়ে গিয়েছিল প্রাইভেটের চেয়ে।
সরকারের টার্গেট বার্ষিক উন্নয়নের ৩০% পিপিপি-তে নেয়ার। অর্থাৎ প্রাইভেট সেক্টরও বিনিয়োগ করবে, টোল বসাবে, লাভও নিবে। একপর্যায়ে সরকারকে ফেরতও দিবে, যেমন যাত্রাবাড়ি ফ্লাই।
যাই হোক, ম্যাপে ফিরে যাই। বাইকারদের পছন্দ থানচি-আলীকদম রাস্তা, ৪৪-৪৫। এটা দেশের সর্বোচ্চ অলটিট্যুডে অবস্থিত। আলীকদম থেকে একটা রাস্তা আগামী ২ বছরে বর্ডারের পোয়ামুহুরী (৪৯) পর্যন্ত জনতার জন্য ওপেন করা হবে। পুরোদমে কাজ চলছে।
বান্দরবানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা লামা (৫০)। এখানের ইউএনও অফিসের সামনের রাস্তাটা প্রতিবছর বর্ষায় ডুবে যায় যা কংক্রিট রিজিড পেভমেন্টের মাধ্যমে উন্নয়ন করা হবে। ফলে জনভোগান্তি কম হবে।
লামার সাথে অবশ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের লোহাগড়া উপজেলাস্থ ৫১ ও ৫২ নাম্বার পয়েন্টের আজিজনগর আর বড়আউলিয়া এখনো পুরোপুরি কানেক্টেড না। এগুলো নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
৫২ আর ৫৩ নং পয়েন্টের বাইশারিবাজার এবং নাইক্ষ্যংছড়ি এখন পর্যন্ত আলীকদম (৪৮) থেকে বিচ্ছিন্ন। মাঝে পাহাড়। এই জায়গাগুলো স্টাডি করা দরকার। এ মাসেই যাওয়ার ইচ্ছা, দেখা দরকার কেমনে কী।
এক সময় প্রায় প্রতি সপ্তাহে অস্ত্র উদ্ধার হতো এই নাইক্ষ্যংছড়িতে। একে মেইনস্ট্রিমে আনার জন্য সীমান্ত সড়কের ৫৪ নং আশারতলী পয়েন্টে কানেক্ট করা হবে।
৫৪-৫৫ আশারতলী-ঘুনধুম রাস্তাটা খুব ঝামেলাদায়ক, এখানে মিয়ানমারের ইন্সার্জেন্ট গ্রুপ আরাকান আর্মির ঘাঁটি। এদের উচ্ছেদ করা কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। কারণ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সেই সময়টা ২০৩০ সাল। সেই দিন আমরা কেউ আমাদের ডেস্কে থাকবো না। তবে মাস্টারপ্ল্যানের অনেকাংশই বাস্তবায়িত হয়ে যাবে। সেনাবাহিনীর ফোর্সেস গোল, জাতিসংঘের এসডিজি সবকিছুর মেয়াদ ২০৩০।
এর জন্য পলিটিকাল স্ট্যাবিলিটি খুব প্রয়োজন। সিপরির গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্সে আমাদের সেনাবাহিনী ৪৫ তম, ইন্ডিয়া চতুর্থ, মিয়ানমার ৩৭তম।
প্রতিবেশীদের সাথে তালে তালে না আগালে উন্নয়ন সাস্টেইনেবল হয় না। আমাদেরও সাবমেরিনে, হাইওয়েতে আগাতে হবে। বিদ্যমান ১১% চরম দারিদ্র বিমোচন যেমন টার্গেট, একইভাবে ফিজিকাল উন্নয়নও দরকার শুধু প্রতিবেশীদের সাথে পাল্লাপাল্লিতে টিকে থাকার নিমিত্ত।
কক্সবাজার-টেকনাফ ৫৫-৫৬ রাস্তায় এডিবির অর্থায়নে কাজ চলছে। এখনো অবস্থা অনেক খারাপ, তবু ধীরে ধীরে আগাচ্ছি আমরা।
৫৬-৫৭ শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত সরকারি অর্থায়নে প্রোজেক্ট চালু হয়েছে। এখানের রাস্তাটা আগে একবার নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু সাগর এসে সব ছিনিয়ে নিয়েছে। বে-অব-বেঙ্গল এর Bay বা উপসাগর উপকূলবর্তী অংশে এভাবেই আক্রমণ করে।
মেরিন ড্রাইভে সাইমন হোটেলের সামনে দিয়ে উঠা যায় না কেন? কেন পৌরসভার চিপা একটা রাস্তা দিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার গিয়ে উঠতে হয়?
কারণ সাইমনের পরের এই অংশটাও শাহপরীর মতো একই ধরণের। সাগর এই দুই অংশে খুবই ডেঞ্জারাস। বাকি অংশে নমিনাল, যতক্ষণ না জলোচ্ছ্বাস হয়।
বিদ্যমান মেরিন ড্রাইভটা ৫৭-৫৮ লাইনে অবস্থিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একে নিচদিকে শাহপরীর দ্বীপ (৫৮) এবং উপরের দিকে সীতাকুণ্ড (১ নং পয়েন্ট) পর্যন্ত নিয়ে যেতে অনুশাসন দিয়েছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেছেন বিদ্যমান মেরিন ড্রাইভের প্রশস্ততা বাড়িয়ে পুরো মেরিন ড্রাইভের পাশের বিচ আলোকিত করতে, করা হবে। ফিজিবিলিটি চলছে।
সীমান্ত সড়কের সকল অংশ বিজিবির সাথে কানেক্টেড। ফলে যে কোনো প্রয়োজনে বিজিবির প্ল্যাটুন মুভ করানো যাবে। গুনধুম-শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্তও সীমান্ত সড়কের স্টাডি করা হচ্ছে, কারণ বিদ্যমান রাস্তাটা এই যাত্রা রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে পারেনি। প্রয়োজনে আরও পূর্বদিকে রাস্তা ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হবে।
এই যে সাইমনের সানসেট ক্যাফেতে বৃহবার সন্ধ্যায় এটাসেটা খেয়ে, সেই রাতেই ওশান প্যারাডাইজের পাইরেটস ক্যাফেতে অর্ধরাত নাচাগানা ডিজেমিজে করে আমরা সরকারকে তিনবেলা গালিগালাজ করি, আমরা নিজেরাই বা আমাদের দেশ সম্পর্কে কতটুকু জানি?
চারদলীয় সরকারের আমলে শুধু টাকার অভাবে মেরিন ড্রাইভ প্রোজেক্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, বর্তমান সরকার রিভাইভ করে কমপ্লিট করেছে। গত ১০ বছরে একটা প্রকল্পও টাকার অভাবে বন্ধ হয় নাই। অর্থনীতির প্রতিটা গ্লোবাল ইন্ডিকেটর আমাদের উন্নয়নের কথা বলে, আমরাও পলিটিকাল স্ট্যাবিলিটির কথা বলি,
কারণ সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের…
collected Mahabub