10/03/2024
সংক্ষিপ্তভাবে উমরা আদায়ের পদ্ধতি :
১. উমরাকারী যখন মীকাতে পৌঁছবে তখন তার জন্য মুস্তাহাব হলো গোসল করা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া; অনুরূপভাবে উমরা আদায়কারী মহিলাও গোসল করবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবে, যদিও এ সময় তার হায়েয বা নিফাস থাকে। হায়েয বা নিফাসওয়ালী মহিলা ইহরাম বাঁধতে পারবে, তবে সে তার হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া ও গোসল না করা পর্যন্ত বায়তুল্লাহ’র তাওয়াফ করবে না। ইহরামের পূর্বে উমরা পালনকারী পুরুষ গায়ে সুগন্ধি লাগাবে, তবে তার ইহরামের কাপড়ে নয়। যদি মীকাতে পৌঁছার পর গোসল করা সম্ভব না হলে তাতে দোষের কিছু নেই। মনে রাখবেন ইহরামের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সালাত নেই। তবে কোনো ফরয বা নফল সালাতের পরে ইহরাম হওয়া উত্তম। যদি সম্ভব হয় তবে তা করা যেতে পারে, নতুবা সেটাকে বাধ্যতামূলক মনে করা যাবে না।
২. পুরুষগণ সকল প্রকার সেলাইযুক্ত কাপড় (যেমন জামা, পাজামা, গেঞ্জী ইত্যাদি যা পোশাকের আকারে তৈরি তা) পরিধান থেকে বিরত থাকবে। একটি লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করবে, তার মাথা খোলা রাখবে। আর পুরুষের ইহরামের কাপড় দু’টি সাদা ও পরিষ্কার হওয়া মুস্তাহাব।
তবে মহিলা তার সাধারণ পোশাকেই ইহরাম বাঁধবে, লক্ষ্য রাখবে যাতে কোনো প্রকার চাকচিক্য ও প্রসিদ্ধি লাভ করে এমন পোশাক যেন না হয়।
৩. তারপর উমরার কাজে ঢুকার জন্য মনে মনে নিয়ত (দৃঢ় সংকল্প) করবে, আর মুখে উচ্চারণ করে বলবে,
لَبَّيْكَ عُمْرَةً
“লাব্বাইকা ‘উমরাতান”
অর্থাৎ, আমি উমরা আদায়ের জন্য আপনার দরবারে উপস্থিত হলাম।
অথবা বলবে:
اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً
“আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা ‘উমরাতান”
অর্থাৎ, হে আল্লাহ আমি উমরা আদায়ের জন্য আপনার দরবারে উপস্থিত হলাম।
৪. অন্য কারো জন্য উমরা করতে চাইলে (যদি আপনি পূর্বে আপনার উমরা আদায় করে থাকেন তবে) উচ্চারণ করবেন:
اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً مِنْ فُلانٍ
‘‘আল্লাহুম্মা লাববাইকা ‘উমরাতান মিন পুলান’’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ আমি অমুকের (তার নাম ধরে) পক্ষ হতে উমরা পালনের জন্য হাজির।
৫. যদি মুহরিম ব্যক্তি ভয় করে যে, সে রুগ্ন অথবা শত্রুর ভয়ের কারণে উমরা করতে সামর্থ্য হবে না, তবে তার জন্য ইহরামের সময় শর্ত করে নেওয়া জায়েয। সে বলতে পারবে,
«فِإِنْ حَبَسَنِيْ حَابِسٌ فَمَحَلِّيْ حَيْثُ حَبَسْتَنِيْ»
“ফায়িন হাবাসানি হাবিসুন ফামাহাল্লি হাইছু হাবাস্তানী”
অর্থাৎ, যদি কোনো বাধাদানকারী আমাকে বাঁধা দেয়, তাহলে যেখানে আমি বাধাগ্রস্ত হবো সেখানেই হালাল হয়ে যাবো।
মহিলা সাহাবী দ্বুবা‘আহ বিনতে যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আমি হজ করতে চাই তবে রোগাক্রান্ত হয়ে যাওয়ার ভয় করছি, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,
«حجي واشترطي أن محلي حيث حبستني»
“হজ করতে শুরু কর এবং শর্ত করে নাও এবং বলো, যদি কোনো বাধাদানকারী আমাকে বাধা দেয়, তাহলে যেখানে আমি বাধাগ্রস্থ হবো সেখানেই হালাল হয়ে যাবো।”
৬. তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর তালবিয়া পাঠ করবেন, আর তা হলো,
«لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ»
(লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাক।)
অর্থাৎ, উমরার জন্য আমি আপনার দরবারে হাজির। হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে হাজির, আমি আপনার দ্বারে উপস্থিত, আপনার কোনো অংশীদার নেই, আপনার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। সর্বপ্রকার প্রশংসা ও নি‘আমতের সামগ্রী তোমারই, তোমারই রাজত্ব, তোমার কোনো অংশীদার নেই।
উল্লিখিত দো‘আ ইহরাম পালনকারী পুরুষগণ জোরে জোরে উচ্চারণ করবে, আর স্ত্রী লোকেরা চুপে চুপে বলবে। অতঃপর অধিক মাত্রায় তালবিয়া পড়বে এবং দো‘আ, যিকির-ইস্তেগফার করবে।
৭. পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর সম্ভব হলে গোসল করবেন, এ গোসল সুন্নাত। সেটি আপনার আবাসস্থল হোটেলেও হতে পারে।
৮. তারপর মসজিদে হারামে ঢুকার সময়ে ডান পা দিয়ে ঢুকবেন এবং মসজিদে ঢুকার দো‘আ পড়বেন, তা হলো,
«بِسْمِ اللهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلى رَسُوْلِ اللهِ، أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، اللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ»
(বিসমিল্লাহ ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ, আউযুবিল্লাহিল আযীম ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলতানিহিল কাদীম মিনাশ শায়তানির রাজীম। আল্লাহুম্মাফতাহ্ লি আবওয়াবা রাহমাতিক।)
অর্থাৎ, আল্লাহর নামে, আর তার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওপর দুরূদ পাঠ করছি, আমি বিতাড়িত শয়তান হতে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর সম্মানিত চেহারার এবং তাঁর অনাদি ক্ষমতার অসীলায় আশ্রয় প্রার্থনা করছি, হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করে দিন।
৯. তারপর যখন কা‘বার কাছে পৌঁছবেন তখনি তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবেন। এরপর যদি তাওয়াফ শুরু করতে চান তবে হাজারে আসওয়াদ বরাবর যাবেন। হাজারে আসওয়াদের কাছে যাওয়ার পর তার দিকে ফিরবেন, সম্ভব হলে ডান হাত দিয়ে তা স্পর্শ করবেন এবং চুমু খাবেন, তবে ভীড় করে মানুষকে কষ্ট দিবেন না। হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার সময়ে বলবেন,
بِسْمِ اللهِ، وَاللهُ أَكْبَرُ
(বিসমিল্লাহে ওয়াল্লাহু আকবার)
অথবা বলবেন,
اللهُ أَكْبَرُ
(আল্লাহু আকবার)
যদি হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়া কষ্টকর হয় তাহলে হাত অথবা লাঠি দিয়ে স্পর্শ করার পর যে বস্তু দিয়ে স্পর্শ করেছেন তাতে চুমু খাবেন, আর যদি স্পর্শ করা কষ্টকর হয় তবে হাজারে আসওয়াদের দিকে হাত বা হাতে থাকা কিছু দিয়ে ইশারা করবেন এবং বলবেন,
اللهُ أَكْبَرُ
(আল্লাহু আকবার)
তবে এ অবস্থায় হাত অথবা যা দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন তাতে চুমু খাবেন না।
মনে রাখবেন, তাওয়াফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো: ছোট-বড় সর্বপ্রকার নাপাকী হতে পবিত্র থাকা; কেননা তাওয়াফ সালাতের মতো, শুধুমাত্র তাওয়াফের সময় কথা বলার অনুমতি আছে।
১০. তাওয়াফ করার সময় আল্লাহর ঘর কা‘বাকে বাম পার্শ্বে রাখবেন এবং সাত চক্কর কা‘বার চারদিকে তাওয়াফ করবেন। ইচ্ছা করলে পায়ে হেঁটে, কিংবা বাহনে চড়ে তাওয়াফ করতে পারেন। যখন রুকনে ইয়ামানীর কাছে আসবেন তখন যদি সম্ভব হয় তা ডান হাতে স্পর্শ করবেন। কিন্তু রুকনে ইয়ামানীকে চুমু খাবেন না। যদি রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তবে তা ছেড়ে সামনে চলে যাবেন এবং তাওয়াফ করতে থাকবেন, কোনো প্রকার ইশারা বা তাকবীর দিবেন না; কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে তা বর্ণিত হয়নি। কিন্তু হাজারে আসওয়াদের নিকট যখনই পৌঁছবেন তখনি তা স্পর্শ করবেন এবং চুমু খাবেন এবং তাকবির বলবেন, (যেমনটি পূর্বে বর্ণিত হয়েছে), যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তবে সে দিকে ইশারা করবেন এবং তাকবীর বলবেন। এ তাওয়াফে পুরুষদের জন্য সুন্নাত হলো এদতেবা‘ করা, অর্থাৎ গায়ের চাদরের মধ্যভাগকে ডান বোগলের নিচ দিয়ে দু’পার্শ্বকে বাম কাঁধের উপর রাখা। তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করাও পুরুষদের জন্য সুন্নাত। রমল হলো ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা। তাওয়াফকালীন সময়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দো‘আ বা যিকির নেই, প্রত্যেক চক্করেই ইচ্ছা মতো শরী‘আতসম্মত যিকির ও দো‘আ পাঠ করা মুস্তাহাব। তবে তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করেই রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে নিম্নলিখিত দো‘আ সম্বলিত আয়াতটি পড়া সুন্নাত:
﴿رَبَّنا آتِنا فِي الدُّنْيا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنا عَذابَ النَّارِ﴾ [البقرة:201]
(রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা ‘আযাবান-নার)
অর্থাৎ, হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন। জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। [সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ২০১]
সম্ভব হলে তাকবীর সহ হাজারে আসওয়াদকে স্পর্শ করা ও চুমু দেওয়ার মাধ্যমে সপ্তম চক্কর শেষ করবেন, কিন্তু সম্ভব না হলে পূর্বের মতো শুধু ইশারা এবং তাকবীর পড়লেই যথেষ্ট।
তাওয়াফ শেষে গায়ের চাদর ভালো করে পরিধান করে নিবেন, অর্থাৎ কাঁধে এবং বুকে কাপড় দিয়ে নিবেন। ইদতেবা‘ অবস্থায় থাকবেন না। তারপর সম্ভব হলে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে কিছুটা দূরে হলেও দু’ রাকাত সালাত পড়বেন। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মসজিদের যে জায়গায় সম্ভব সেখানেই সালাত পড়বেন। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে قُلْ يا أَيُّهَا الْكافِرُونَ (সূরা কাফিরূন) এবং দ্বিতীয় রাকাতে قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (সূরা ইখলাস) পড়া উত্তম। অন্য কোনো সূরা পাঠ করলেও কোনো দোষ নেই। এ দু’রাকাত সালাতের পর যদি হাজারে আসওয়াদ চুমু দেওয়া সম্ভব হয় তবে তা করবেন।
১১. তারপর সম্ভব হলে যমযমের পানি পান করবেন। সম্ভব হলে যত ইচ্ছা তত খাবেন।
১২. তারপর সাফা পাহাড়ের দিকে যাবেন, যাওয়ার সময় আল্লাহর এ বাণী পাঠ করবেন,
﴿إِنَّ الصَّفا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعائِرِ اللَّهِ﴾ [البقرة:158]
(ইন্নাচ্ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা‘আ-ইরিল্লাহ)
অর্থাৎ, নিশ্চয় সাফা এবং মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত। [সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ১৫৮]
১৩. অতঃপর সাফা পাহাড়ের উপর আরোহণ করবেন অথবা এর নিচে দাঁড়াবেন, তবে সম্ভব হলে পাহাড়ের কিয়দংশে উঠা উত্তম। এরপর পবিত্র কা‘বাকে সামনে রেখে প্রার্থনাকারীর ন্যায় দু’ হাত উর্ধ্বে তুলে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করে তিনবার তাকবীর পড়ুন (আল্লাহু আকবার বলুন)। তিনবার করে দো‘আ করা সুন্নাত। অতঃপর তিনবার নিম্নোক্ত দো‘আ পড়ুন:
«لاَ إِلهَ إِلا اللهَ وَحْدَه لا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَه الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْر لا إِلهَ إِلا الله وَحْدَه أَنْجَزَ وَعْدَه وَنَصَر عَبْدَه وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه»
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়া‘দাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।)
অর্থাৎ, একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোনো মাবূদ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে বিজয় দিয়েছেন এবং তিনি একাই শত্রুকে পরাজিত করেছেন।
এই দো‘আর কিয়দংশ পড়লেও কোনো দোষ নেই। তবে যেহেতু শরী‘আতে এখানে বেশি বেশি দো‘আ করার কথা বলা হয়েছে সেহেতু সকল প্রকার দো‘আই এখানে করতে পারেন।
১৪. অতঃপর সাফা হতে নেমে মারওয়ার দিকে যাবেন। যাওয়ার সময় পুরুষগণ দু’ সবুজ আলোর মধ্যবর্তী স্থানে দ্রুত চলবেন, এ দ্রুত চলাকে সা‘ঈ বলা হয়। এ সময় যদি নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়েন তবে তা উত্তম,
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ
“আল্লাহুম্মাগফির ওয়ারহাম, ইন্নাকা আনতাল আ‘য়ায্যুল আকরাম”
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! ক্ষমা ও দয়া করুন, নিশ্চয় আপনিই অতীব পরাক্রমশালী ও সম্মানিত।
সা‘ঈ এর আগে ও পরে স্বাভাবিকভাবে চলবেন। মহিলাগণ কোথাও দ্রুত চলবেন না; কারণ মহিলাগণ পর্দা করবেন, আর দ্রুত হাঁটার কারণে তাদের পর্দা লঙ্ঘন হয়।
১৫. এরপর যখন মারওয়া পাহাড়ের কাছে যাবেন, তখন তার উপর আরোহণ করবেন অথবা নিচে দাঁড়াবেন এবং আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করবেন এবং সাফায় যেমনটি করেছেন এখানেও তেমনটি করবেন। অর্থাৎ, মারওয়ার উপরে উঠার পরে কা‘বা শরীফকে সামনে রেখে প্রার্থনাকারীর ন্যায় দু’ হাত উর্ধ্বে তুলে আল্লাহ্ তা‘আলা তা‘আলার প্রশংসা করে তিনবার (আল্লাহু আকবার) তাকবীর উচ্চারণ করবেন। অতঃপর তিনবার নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বেন :
«لاَ إِلهَ إِلا اللهَ وَحْدَه لا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَه الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْر لا إِلهَ إِلا الله وَحْدَه أَنْجَزَ وَعْدَه وَنَصَر عَبْدَه وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه»
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়া‘দাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।)
অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোনো মাবুদ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে বিজয় দিয়েছেন এবং তিনি একাই শত্রুকে পরাজিত করেছেন।
সাফার মতো মারওয়াও বেশি বেশি করে দো‘আ করার স্থান। সকল প্রকার দো‘আই এখানে করতে পারেন।
তবে এখানে পাহাড়ে উঠার সময় পূর্বে বর্ণিত সাফা পাহাড়ে উঠার আগের কুরআনের আয়াতটুকু পাঠ করবেন না; কেননা কুরআনের আয়াতটুকু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করে শুধুমাত্র সাফা পাহাড়ে উঠার আগে পড়তে হয়।
১৬. তারপর মারওয়া থেকে নামবেন এবং যেখানে স্বাভাবিকভাবে হাঁটার সেখানে স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন, আর যেখানে দ্রুত চলার সেখানে দ্রুত চলবেন। এভাবে সাফা পাহাড়ে পৌঁছবেন। এভাবে সাতবার সা‘ঈ করবেন। সাফা থেকে মারওয়া যাওয়া এক চক্কর, আবার মারওয়া থেকে সাফা পাহাড়ে আসা আরেক চক্কর ধর্তব্য হবে।
১৭. তাওয়াফের মতো যদি কেউ কোনো কিছুর উপর উঠে সা‘ঈ করে তবে তাতেও দোষ নেই, বিশেষ করে যখন তার প্রয়োজন হবে।
১৮. তাওয়াফের মতো সা‘ঈর জন্যও কোনো নির্দিষ্ট ওয়াজিব যিকির নেই। বরং যেকোনো যিকির, দো‘আ ও কুরআন তিলাওয়াতের যা তার জন্য সহজসাধ্য হবে তা-ই পাঠ করতে পারবেন। তবে এ সকল ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেসব যিকির ও দো‘আ সাব্যস্ত রয়েছে, তার প্রতি লক্ষ্য রাখা মুস্তাহাব।
১৯. অনুরূপভাবে সকল প্রকার নাপাকী হতে পবিত্র হওয়াও মুস্তাহাব। তবে যদি কেউ অপবিত্র অবস্থায়ও সা‘ঈ করে তার সা‘ঈ শুদ্ধ হবে, কোনো অসুবিধা নেই।
২০. সা‘ঈ পূর্ণ করে মাথার চুল হলক করবেন (কামাবেন) অথবা ছোট করে ছেঁটে নিবেন। তবে কামানো উত্তম। যদি হজের আগে আপনি মক্কা এসে থাকেন এবং হজের বেশি দিন বাকী না থাকে তবে উত্তম হলো উমরার পর চুল ছোট করে ছাঁটা; যাতে হজের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার সময় হলক করতে পারেন।
খেয়াল রাখবেন, আপনার চুল কাটা বা ছাঁটা যা-ই- করেন না কেন সম্পূর্ণ মাথা থেকে হতে হবে। সামান্য কিছু কাটলে বা ছাঁটলে হবে না। এটা শুধু পুরুষদের ক্ষেত্রে ।
মহিলাগণ তাদের চুল একত্র করে চুলের অগ্রভাগ থেকে এক আঙুলের অগ্রভাগ পরিমাণ কাটবেন। এভাবে আপনার উমরা পূর্ণ হয়ে যাবে এবং ইহরামের কারণে ইতোপূর্বে যা হারাম ছিল, এক্ষণে তা হালাল হয়ে যাবে।