20/11/2016
৩ জুন ২০১৪ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয় "নাটোর
রাজবাড়ি" নিয়ে এই সংবাদটি। যদি না দেখে থাকেন তাহলে এখন
পড়ে নিতে পারেন। আমাদের নাটোরের পাঠকদের জন্য
আর্টিকেলটি হুবহু তুলে দেয়া হল।
----বর্ণময় নাটোর রাজবাড়ি----
ছোট্ট মফস্বল শহর নাটোর, কিন্তু বর্ণময়। সৌন্দর্য ও ইতিহাস
মিলেমিশে আছে এখানে। চলনবিল এখানকার সৌন্দর্য৷ নাটোর
রাজবাড়ি আর দিঘাপতিয়ায় উত্তরা গণভবনে রয়েছে ইতিহাসের টান।
যাত্রা হলো শুরু
বনলতা সেনের শহর নাটোর আমার খুব প্রিয়। সময়-অসময়ে নাটোর
চলে আসি। চৈত্র মাসের খাঁ খাঁ রোদের দিনে বেরিয়ে পড়লাম নাটোরের
উদ্দেশে। পঞ্জিকায় বসন্ত বিদায় নিলেও বসন্তের সুবাতাস যেন বইছে।
বাতাসে তেমন উষ্ণতা নেই। মন ভালো করা সবকিছু, তবু বঙ্গবন্ধু সেতু
পেরিয়ে মন খারাপ হয়। সেতুর ঢাল বেয়ে নামার পর পাশের রাস্তায়
কদিন আগেও সারি সারি পলাশে মন রাঙিয়েছি, এখন পলাশগাছ ফাঁকা,
কোনো ফুল নেই, কী জানি ঋতুর পালাবদলেই হয়তো!
ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, জানি না। ঘুম ভাঙে হোটেল
ভিআইপিতে এসে। সেদিনের মতো বিশ্রামে যাই। পরদিন নয়টার
মধ্যে বন্ধু এসে হাজির। কই যাব যাব করে আমরা পচুর
হোটেলে খাওয়াদাওয়া সেরে নাটোর রাজবাড়ির পথ ধরি।
এখনকার নাটোর রাজবাড়ি
নাটোর রাজবাড়ি এখন ভঙ্গুর হলেও রাজবাড়ির বিশাল
আঙিনাজুড়ে যত সব বিস্ময় আর রহস্য পাশাপাশি লুকিয়ে। নাটোর শহর
থেকে মাদ্রাসা মোড় পেরিয়ে বগুড়া রোড ধরে যেতে হয় নাটোর
রাজবাড়ি। যেতে যেতে আপনার দৃষ্টি এড়াবে না ১৮৩৪
সালে প্রতিষ্ঠিত নাটোর মহারাজা জে এন উচ্চবিদ্যালয়টি। আমরাও
এসব দেখে দেখে জাহিদের ব্যাটারিচালিত
অটোরিকশায় চড়ে নাটোর রাজবাড়ি প্রবেশ করি। প্রত্নতত্ত্ব
অধিদপ্তরের আওতাধীন রাজবাড়িটির প্রবেশমুখে বিশাল একটি পুকুর,
সেই পুকুরের শানবাঁধানো ঘাট দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।
পুরো রাজবাড়ি ঘিরে আছে বিশাল সব গাছ। পাশেই নবনির্মিত
কমিউনিটি সেন্টার। এখানে কমিউনিটি সেন্টার কেন, তার উত্তর
পেলাম না! কমিউনিটি সেন্টার ধরে সামনে গেলে তারকেশ্বর মন্দির।
আরেকটু সামনে এগিয়ে ডান দিকে বিশাল মাঠ।
মাঠের বিশাল প্রান্তরে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে রাজবাড়ির
একতলা ভবনটি। এই অংশের নাম ছোট তরফ। এর ঠিক
উল্টো দিকে বড় তরফ। যমজ প্রায় বড় তরফের সামনে রয়েছে বিশাল
পরিখা এবং পুরো রাজবাড়িতে রয়েছে পাঁচটি পুকুর।
রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে আটটি মন্দির রয়েছে, যার প্রাণ এক বিশাল
শিবমন্দির। এখানে এখনো রীতি মেনে নিয়মিত পূজা হয়।
দৃষ্টিনন্দন মন্দিরের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
মন্দিরকে ঘিরে আছে একটি শিবমূর্তি, ফণা তোলা সাপের মূর্তি,
একজন বাউলের মূর্তিসহ নানা রকম শৈল্পিক কাজ। মন্দিরটির
দেয়ালজুড়ে টেরাকোটার শিল্পকর্ম।
আমরা মন্দিরটি দেখে রাজবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখতে বের হই,
এখানে প্রায় সব ভবনই ভেঙে পড়েছে। প্রতিটি ভবনের পাশেই
রয়েছে লোহার তৈির ঘোরানো সিঁড়ি। এমন নকশাদার সিঁড়ি ঢাকার
আহসান মঞ্জিলে দেখেছি।
রািন মহলের কাছে এসে বিশ্রামে বসি। রািন মহলটিতে রািন ভবানী বাস
করতেন। এখন রানি মহল আছে নামমাত্র। শুধু
সাইনবোর্ডে লেখা দেখে চেনা যায়। এখানে একটি অতিথিশালা আছে,
নাম মাত্র। তবু ভগ্নপ্রায় অতিথিশালা দেখে সে সময়কার নাটোর
রাজার অতিথি সেবার কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়।
চলতি পথে এখানে ছোট তরফের একটি ভবনের নাম দেখলাম
হ্যানি কুইন ভবন। এখন সেই ভবনে ভাগ্যবঞ্চিতদের বসবাস।
রাজবাড়িজুড়েই এমন ভাগ্যবঞ্চিতদের বাস, আর আছে দখলদারিত্বের
চিহ্ন।
জেনে নিন
ঢাকা থেকে ন্যাশনাল, শ্যামলী ও হানিফ পরিবহনের বাস দিন-রাত
চলে এই পথে। যেকোনো একটি বাসে চড়ে বসুন। পাঁচ ঘণ্টায় নাটোর
পৌঁছে যাবেন। তারপর ঘুরে দেখুন নাটোর রাজবাড়ি আর দিঘাপতিয়ায়
উত্তরা গণভবন। চাইলে পুঠিয়া রাজবাড়ি থেকেও
বেড়িয়ে আসতে পারেন। নাটোরে থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যাবস্থা আছে।
থাকার জন্য ভালো হোটেল ভিআইপি। আগে থেকে রুম
বুকিং দিয়ে তারপর রওনা হবেন। ভিআইপি হেটেলে খাবারের
ব্যবস্থা থাকলেও আপনি খাবারের জন্য বেছে নিতে পারেন প্রচুর
হোটেল। এখানকার খাবার জিভে জল না এনে পারে না। চাইলে নয়ন
হোটেলেও খেতে পারেন। তা ছাড়া আছে নাটোরের বিখ্যাত
মিষ্টি কাঁচাগোল্লা। খেয়ে আসুন, সঙ্গে নিয়েও আসুন!